কুঞ্জলতার মায়ায় পর্ব-০৪

0
139

#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪

কাব‍্য একটা সস্থির নিশ্বাস ছেড়ে শুভ্রতাকে বলল
-“দেখছো আমি ম‍্যাথ করাইছি দেখেই তুমি এতো বেশি নাম্বার পেয়েছো। দেখতে হবে কে করিয়েছে কাব‍্য চৌধুরী।”

শুভ্রতা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“এমন ভাব নিচ্ছেন মনে হয় আপনি আমার পরীক্ষাটা দিয়ে দিছেন।”

কবিতা বেগম শুভ্রতাকে বলল
-“শুভ্রতা মা তুই যা তো চোখমুখ পানি দিয়ে আয়। আর কাব‍্য এখন মেয়েটার পিছু ছাড় তো। সকাল থেকে মেয়েটা কিছু মুখে দেয়নি।”

শুভ্রতা উঠে গেল রুমের দিকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। এখন অনেকটা শান্তি লাগছে ওর। বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে।

কবির চৌধুরী বৃষ্টির মধ্যেই চলে গেছে মিষ্টি কিনতে। আজ সে অফিসে যায়নি। মেনেজারকে সব কাজ বুঝিয়ে দিছেন। অন‍্যদিকে খুশি মনে কবিতা বেগম কল করে সবাইকে জানাচ্ছেন শুভ্রতার রেজাল্টের কথা। কিরণ আজ স্কুলে যাবেনা বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে তাই।

কাব‍্য খাবার হাতে নিয়ে রুমে একটা টুকি দিলো। দেখলো শুভ্রতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কাব‍্য খাবারটা বেড সাইট টেবিলে রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। ধীর কন্ঠে শুভ্রতাকে ডেকে বলল
-“খাবারটা খেয়ে নেও।”

শুভ্রতা কিছু না বলে রুমে চলে এলো। সোফায় বসে খেতে লাগলো।

কাব‍্য ‍টাউজারের পকে‍টে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো বৃষ্টির দিকে। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।

শুভ্রতা খাবারটা শেষ করে রান্না ঘরে গেল। আমতা আমতা করে কবিতা বেগমকে বলল
-“আম্মু আমি মার কাছে যেতে চাই একটু।”

কবিতা বেগম হেসে বললেন
-“আরে আমি ও এটাই ভাবছিলাম। বিকালে কাব‍্যকে নিয়ে যেতে বলবোনা।”

শুভ্রতার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। কবিতা বেগম বললেন
-“যা কাব‍্যের সাথে গিয়ে গল্প কর। আমি এই দিকটা সামলে নিচ্ছি।”

শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
-“এখানেই থাকিনা আম্মু। তোমার কাজে সাহায্য করি।”

কবিতা বেগম শুভ্রতার কাছে এসে বলল
-“যা ওর কাছে। এখন ওর তোকে প্রয়োজন। গিয়ে কথাবার্তা বল ভালো লাগবে।”

শুভ্রতা আর না করতে পারলোনা। ধীর পায়ে চলে গেল রুমের দিকে। রুমে গিয়ে দেখলো কাব‍্য এখনো ‍বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো কাব‍্যের পাশে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল
-“মন খারাপ”

কাব‍্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
-“না তেমন কিছু না।”

শুভ্রতা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“বৃষ্টি কারো জন‍্য আনন্দের আবার কারো কাছে কষ্টের। আপনার মনে আছে আমরা ছোটবেলায় দুইজন মিলে কাঁদায় খেলতাম। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে বৃষ্টির সঙ্গে। স্কুলজীবনের কত স্মৃতি।”

কাব‍্য হেসে বলল
-“তুমি কি এখন বড় হয়ে গিয়েছো নাকি। আসছে স্মৃতিচারণ করতে। নাক টিপ দিলে এখনো দুধ বের হবে আসছে ছোটবেলার কথা বলতে।”

শুভ্রতা নাকের পাটা ফুলিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল
-“আপনি কি জানেন। আপনি কিছু জানেনা। আমার বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ে ভেঙে আবার আপনার সঙ্গে বিয়ে হলো। মানুষ কি উল্টাপাল্টা কথা বলে। সেগুলো সহ‍্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমি কেমন মানুষিক যন্ত্রণায় আছি আপনি কেমনে বুঝবেন। আপনি তো সামান্য ছেঁকা খেয়ে বেঁকা হয়ে দেবদাস হয়ে বসে আছেন। কোথায় আমি আসলাম আপনার মন ভালো করতে। আর আপনি আমার মুডটাই বিগড়ে দিলেন। এগুলোর জন‍্যই আপনাকে আমার ভালো লাগে না।”

কথাগুলো বলেই হনহন পায়ে রুমে চলে গেল শুভ্রতা। কাব‍্য হা হয়ে আছে। শুভ্রতা যে এতো ক্ষেপে যাবে তা ‍বুঝতে পারেনি কাব‍্য।

কাব‍্য কপাল চাপরালো। কাব‍্য রুমে এসে কার্বাট খুলে একটা বক্স বের করে ধীর পায়ে শুভ্রতার পাশে সোফায় গিয়ে বসলো।

শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে রেখেছে। শুভ্রতার এমন ফেস দেখে হাসি পেলো কাব‍্যের। সে জানে কিভাবে এই রাগ গলে যাবে। কাব‍্য নিজের হাসি কন্টোল করে বলল
-“সরি”

বলেই হাতে থাকা বক্সটা শুভ্রতাকে দিলো। শুভ্রতা মুখ ঘুরিয়ে ‍বলল
-“আপনার গিফট আপনিই রাখুন। আমাকে কেন দিতে আসছেন।”

কাব‍্য হাসলো। গিফট বক্সটা সরিয়ে নিয়ে বলল
-“তুমি যখন নিবেই না তখন আর কি করার। আমি না হয় এই গিফটা অন‍্য কাউকে দিয়ে আসি।”

শুভ্রতা আড়চোখে তাকালো কাব‍্যের দিকে। কাব‍্য ঠিকই বুঝতে পারছে। কাব‍্য উঠে যাবে তার আগেই শুভ্রতা খপ করে গিফটটা কেড়ে নিলো। কপাল কুচকে বলল
-“আমার গিফট আপনি কোন সাহসে অন‍্য কাউকে দিতে যান।”

কাব‍্য চুল‍টা পিছনে ঠেলে ঠোঁট টিপে হাসলো। শুভ্রতা মুখ ভেংচি দিয়ে গিফট বক্সটা খুললো।

একবক্স চকলেট দেখে শুভ্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। খুশিতে কাব‍্যের হাত ধরে বলল
-“ধন‍্যবাদ আপনাকে। আমি তো ভাবতেও পারিনি। আপনি এমন গিফট দিবেন আমাকে। আই এম সো হ‍্যাপি।”

কাব‍্য নিজের হাতের দিকে তাকাতেই শুভ্রতা কাব‍্যের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো কাব‍্যের দিকে। শুভ্রতা বুঝতে পেরে হাতটা ছেড়ে দিয়ে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে দিলো দৌড়।

শুভ্রতার এমন কান্ডে জোরেই হেসে দিলো কাব‍্য। আর বলল
-“আস্তে দৌড়াও পড়ে যাবে তো।”

শুভ্রতা দৌড়ে রান্নাঘরে যেতেই কবিতা বেগম বললেন
-“তোর মা ফোন করেছিল। তোকে কল করতে বলল।”

শুভ্রতা কল দিলো ওর মা শাবরিন বেগমকে। শুভ্রতা বলল
-“আসসালামু আলাইকুম,মা। তুমি কেমন আছো? আর বাবা কেমন আছে?”

শাবরিন বেগম বললেন
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। হুম রে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে। তোর বোন তো অস্থির হয়ে গেছে তোর সঙ্গে দেখা করার জন‍্য।

শুভ্রতা বলল
-“ও এই কথা আমি বিকালে আসছি ওই বাসায়। উনি রাখতে যাবেন ওখানে।”

শাবরিন বেগম খুশি হয়ে গেল মেয়ের কথা শুনে। আরো কিছু কথা বলে শাবরিন বেগম কল কেটে দিলেন।

——————–

বিকালের আবহাওয়াটা বেশ ভালো লাগছে কাব‍্যের। কাব‍‍্য বাইকে বসে অপেক্ষা করছে শুভ্রতার। গেটের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল ওর।

নীল শাড়ি পরিহিত শুভ্রতাকে এক অন‍্যরকম সুন্দর লাগছে। কালো ঘন লম্বা চুল কোমর পযর্ন্ত ছড়িয়ে আছে। মৃদু বাতাসে চুলগুলো আপন গতিতে খেলছে। কানের পাশে থাকা বেলীফুল দেওয়াতে শুভ্রতার সৌন্দর্য যেন আরো ফুটে উঠেছে। শ‍্যামবর্ণে মায়াবী চোখে কাজল দেওয়াতে। চোখগুলো যেন আরো আর্কষনীয় লাগছে। মেকআপ ছাড়া চেহারায় যেন কোনো কমতি নজরে আসছে না কাব‍্যের।

কাব‍্যের হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। বেশ কয়েকবার ডাকার পরও কাব‍্যের কোনো হেলদোল না দেখে শুভ্রতা কাব‍্যের হাতে একটা চিমটি কেটে দিলো।

কাব‍্য লাফিয়ে উঠলো। শুভ্রতা হেসে উঠলো। শুভ্রতার হাসিতে কি যেন ছিল। কাব‍্যের মনে হলো শুভ্রতাকে সারাজীবন সামনে বসিয়ে হাসাতে। শুভ্রতা কপাল কুচ করে বলল
-“এমন হিরো সেজে হা করে আমার নিকে তাকিয়ে না থেকে চলুন যাই। সবাই আমাদের অপেক্ষা করছে।”

কাব‍্য বাইকে উঠে বসলো। শুভ্রতা তাকালো কাব‍্যের দিকে। ফর্সা মুখের চাপ দাড়ি। চিকন ফ্রেমের চশমায় খারাপ লাগছে না। সাদা শার্ট নেভিব্লু রঙের জিন্সে হিরোর থেকে কিছু কম লাগছে না কাব‍্যকে।

কাব‍্য বাইকের সামনে গ্লাসে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
-“এমন করে তাকিয়ে থেকোনা আমার আবার নজর লেগে যাবে।”

শুভ্রতা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“আমার ঠেকা পড়েছে আপনার দিকে নজর দিতে। আপনি যে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন তখন। আমার যদি এখন শরীর খারাপ হয়।”

কাব‍্য কিছু বললো না। হুট করেই আবহওয়াটা খারাপ হয়ে গেল। কাব‍্য চিন্তিত কন্ঠে বলল
-“এখন বাইক থামিয়ে ছাউনিতে দাড়াতে হবে। বৃষ্টি হবে এখন।”

বলতে বলতেই বৃষ্টি চলে এলো। কাব‍্য তাড়াতাড়ি করে বাইক থামিয়ে শুভ্রতার হাত ধরে দৌড়ে ছাউনিতে গিয়ে দাড়ালো।

শুভ্রতা মুখ ছোট করে বলল
-“একটু কি বৃষ্টিতে ভেজা যায় না।”

কাব‍্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“না যায় না এখন। কেবল জ্বর থেকে উঠলে। এখন আবার বৃষ্টিতে ভিজতে লজ্জা করে না।”

শুভ্রতা কাব‍্যের কথায় গাল ফুলিয়ে রইলো।

#চলবে