#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৭
শুভ্রতা আর ওর মা নানারকম খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে ফেলল। শাবরিণ বেগম প্লেটে ভাত বাড়তে বাড়তে বলল
-“যা গিয়ে কাব্যকে ডেকে আন।”
শুভ্রতা চলে গেল রুমে। রুমে বারান্দায় খুজে কাব্যকে না দেখে পরে বুঝতে পারলো এখনো সে ওয়াশরুমে আছে। শুভ্রতা খাটে বসে পা দুলাতে লাগল।
কিছুক্ষণ বাদেই চুল মুছতে মুছতে কাব্য বের হলো। শুভ্রতা কাব্যের দিকে তাকাতেই ওর চোখ আটকে গেল। কাব্যের চশমা ছাড়া মুখটা অন্য রকম লাগছে শুভ্রতার কাছে। ফর্সা মুখে বিন্দু পানি ফোঁটা কাব্যের সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ভেজা চুলগুলো লেপটে আছে সারা কপালে।হাসোউজ্জ্বল চোখগুলো যেন বারবার আর্কষণ করছে শুভ্রতাকে। গালে থাকা কালো কুচকুচে চাপ দাড়িতে আরো পরিপূর্ণ লাগছে কাব্যকে। শুভ্রতা ভাবতে লাগলো সব গল্প কবিতায় তো শুধু মেয়েদের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়া থাকে কিন্তু ওরা কি ছেলেদের সৌন্দর্য দেখে না। নির্ঘাত ওদের চোখ নাই। না হয় ওরা বলদ।
শুভ্রতা হা করে এগুলোই ভাবছিল। কাব্য ওকে ডাকতেই। ও ঘোরের মধ্যেই বলে উঠলো
-“আচ্ছা ছেলেদের সৌন্দর্য কেন কবিরা বর্ণনা দেয়না।”
কাব্য মুচকি হাসলো। কাব্য ধীর পায়ে এগিয়ে গেল শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা হা করে তাকিয়েই আছে।
নিজের কোমরে ঠান্ডা হাত অনুভব হতেই কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। মুহূর্তেই ভাবনার তার ছিড়ে গিয়ে অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল সে।
শুভ্রতার মুখের উপর পড়ে থাকা অবাধ্য চুলগুলো আলতো হাতে কানের পিছনে গুজে দিয়ে নেশালো কন্ঠে কাব্য বলে উঠলো
-“কারণ মায়াবতী শুধু মেয়েদেরই বলা হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে তেমন কিছু নেই। মায়া এক অদ্ভুত জিনিস জানো তো।”
কাব্যের এমন কাছে আসায় হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে শুভ্রতার। শুভ্রতা কাব্যের হাত থেকে ছোটার জন্য অস্থির হয়ে গেল। শুভ্রতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“ছাড়ুন মিয়া। আমার হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসবে।”
কাব্য শুভ্রতাকে না ছেড়ে গালে একটা চুমু দিতেই। শুভ্রতা হা হয়ে গেল। কাব্য ছেড়ে দিতেই শুভ্রতা বলল
-“মিয়ার মিয়া খাইতে আসুন।
বলেই দৌড়ে চলে গেল শুভ্রতা। কাব্য শয়তানী হাসি দিয়ে রুমে থেকে বাইরে এলো।
কাব্য খাবার খাচ্ছিল এমন সময় টিভিতে একটা নিউজ দেখে শুভ্রতা অবাক হয়ে গেলো।
খবরে দেখাচ্ছে শিশির নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। সে আগের রাতে একশ নারী পাচারের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলো তখন অপরিচিত কেউ তাদের আটাকায়। তাদের গুলি বিদ্ধ করে মেরে ফেলে। এমনকি রাতের মধ্যেই মেয়েগুলোকে তারা বাসায় বাসায় পৌঁছে দেয়। পুলিশ সেই অপরিচিত লোকদের সন্ধান করছে। দেশের মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে ওদের। জানা গেছে দলটির আসল নেতাকে এখনো খুজে পাওয়া নি। শিশির ওই লোকের ডান হাত ছিলো। শিশিরকে গুলি করা হয়েছে একাধিক বার।
খবরটা শুনে থমকে গেল শুভ্রতা। শাবরিণ বেগম আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া আদায় করলো যে তার মেয়ের সঙ্গে এমন একটা ছেলের বিয়ে হয় নি বলে।
কাব্য নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে। কাব্য ফিসফিসিয়ে বলল
-“পাপ বাপকেও ছাড়েনা।”
কাব্য শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আমাকে আরেকটু গরুর মাংস দেও তো।”
শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে কাব্যের দিকে তাকালো। মাংস তুলে দিতে দিতে বলল
-” এই খবর কি শুনছেন আগে!”
কাব্য ভাবলেশহীনভাবে খেতে খেতে বলল
-“না শুনিনি আগে। কেবলি শুনলাম।”
শুভ্রতা ছোট করে বলল
-“ওও”
———————–
বিকেলে কাব্যদের বাসায় চলে এলো শুভ্রতা আর কাব্য।
সকালেই কাব্যের বাবা মা চলে গেছে কাব্যের দাদু বাসায়। কাব্যরা পরের দিন সকালে যাবে।
শুভ্রতা রাতের খাবার গরম করছে। কাব্য পাশেই পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর বকবক করছে। খাবার গরম করতে করতে শুভ্রতা ঘেমে শেষ। চোখের সামনের ছোট চুলগুলো খুব বিরক্ত করছে শুভ্রতাকে। বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে আছে। হুট করেই কাব্য শুভ্রতাকে বলল
-“এই দিকে একটু তাকাও তো।”
শুভ্রতা তাকাতেই ফট করে একটা ছবি তুলে ফেলল সে শুভ্রতা। শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে কোমরে হাত রেখে বলল
-“এটা কি করলেন আপনি। পিক তুললেন কেন এখন। দেখছেন না আমাকে কামের বেডির মতো লাগছে গরমে ঘেমে।”
কাব্য দাঁত বের করে বলল
-“তো কি হয়েছে। এখন আমি এই পিক সবাইকে দেখাবো।”
শুভ্রতা রাগান্বিত কন্ঠে বলল
-“খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”
বলেই মুখ ফুলিয়ে রাখলো সে। কাব্য বাঁকা হাসি দিয়ে উঠে এসে শুভ্রতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“তুমি যদি আমার চোখে নিজেকে দেখতে তাহলে বুঝতে পারতে তুমি আসলে কত সুন্দর। সে তুমি যে রূপেই থাকো।”
শুভ্রতা ভ্রু কুচকে বলল
-“পাম মারছেন।”
কাব্য শুভ্রতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
-“পাম মারবো কেন। আমার চোখের দিকে তাকাও। দেখ তো পাম মারছি নাকি সব বুঝে যাবে।”
শুভ্রতা রিনরিনে কন্ঠে বলল
-“আপনি কেমন জানি বদলে গেছেন!”
কাব্য বাঁকা হাসি দিয়ে শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে যেতে বলল
-“খাবার টেবিলে দেও আমি আসছি।”
শুভ্রতা কিছু সময় কাব্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
খাবার খেতে খেতে কাব্য বলল
-“শুভ্রতা আজ একটু খাওয়া শেষে শাড়ি পড় তো।”
শুভ্রতা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকাতেই কাব্য বলল
-“রাতে একসঙ্গে চন্দ্র বিলাশ করতে যাবো।”
শুভ্রতা খুশি হয়ে বলল
-“সত্যি”
কাব্য শুভ্রতার হাতে চিমটি কেটে বলল
-“এখন কি মনে হচ্ছে।”
শুভ্রতা আউ করে উঠলো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল
-“এটা কি করলেন আপনি।”
কাব্য ভাবলেশহীন ভাবে বলল
-“তুমিই তো বিশ্বাস করছিলেনা।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কাটলো।
——————–
খাওয়া শেষে দুইজন মিলে রেডি হয়ে নিলো। শুভ্রতা সাদা রঙের শাড়ি আর কাব্য সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে।
ফুটপাতের নিশব্দ রাস্তায় দুইহাত পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে। পাশেই বাগান বিলাশের ঝাড় দেখে থেমে গেল শুভ্রতা। কাব্য শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো। মুচকি হেসে কাব্য এগিয়ে গেল ফুল ছিড়ে শুভ্রতার হাতে দিলো। পকেট থেকে ফোন বের করে একসঙ্গে কয়েকটা পিক তুলে নিলো। শুভ্রতাকে আর পায় কে সে তো সেই খুশি।
কাব্য আইসক্রিম কিনে দিলো শুভ্রতাকে। কিছুটা সামনে এগোতেই কাব্য আম গাছের দিকে তাকিয়ে বলল
-“হাত ধরে জোরে দৌড়াতে পারবে।”
শুভ্রতা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো কাব্যের দিকে। কাব্য আম গাছের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ফিসফিসিয়ে বলল
-“আম নিয়ে দুইজন মিলে দিবো দৌড় তাছাড়া আবার বাড়ির মালিক টাকলা আবার রাতেও পাহারা দেয়।”
শুভ্রতা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে রইলো। মুহূর্তের মধ্যেই কাব্য লাফ দিয়ে আম নিয়ে শুভ্রতার হাত শক্ত করে দিলো এক দৌড়। পিছন থেকে বাড়ির মালিক কেরে কেরে করছে।
অনেকটা দূর পযর্ন্ত আসার পর দুইজনই হাটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগল। কাব্য শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতাও কাব্যের দিকে তাকালো। দুইজনই হাসতে লাগল।
কাব্য এবার শুভ্রতাকে বলল
-“চলো এখন বাসায় যাই তাহলে। অনেক ছোটাছুটি হয়েছে।”
শুভ্রতা কাব্যের হাত ধরে বলল
-“ধন্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর একটা রাত উপহার দেওয়ার জন্য।”
কাব্য চুলের পিছনে হাত রেখে মুচকি হাসলো। শুভ্রতা বলল
-“চলুন তাহলে যাই।”
কাব্য হাঁটতে হাঁটতে বলল
-“মনে হচ্ছে সময় থমকে যাক। আমি আর তুমি ঠিক এইভাবে পার করে দিই সারাটা জীবন একসঙ্গে হাত ধরে পাশাপাশি।”
শুভ্রতা শুধু লজ্জা মেশানো মুচকি হাসি দিলো।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ। )