কুড়িয়ে পাওয়া ধন পর্ব-২৬+২৭

0
297

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_২৬
জাওয়াদ জামী

আজ কান্তা ভিষণ খুশি। অবশেষে ও আরমানের কাছে আসতে পেরেছে। থেকে থেকেই হাসছে ও।যেটা আরমানের নজর এড়ায়নি।
ও আর খালা মিলে ফ্ল্যাট সাজিয়েছে। আজকে রান্নার ঝামেলা ওকে করতে হয়নি। আরমানের রাঁধুনিই সব রান্না করেছে। তবে কান্তা তাকে বলে দিয়েছে আজকের পর থেকে ও নিজেই রান্না করবে। তবে রাঁধুনি সহায়ক হিসেবে ওর সাথে থাকবে। আরমান চায়না খালা এই বয়সে আর কোন কাজ করুক।
আজকে কান্তার নিজেকে রঙিন প্রজাপতি মনে হচ্ছে। কতদিনের স্বপ্ন ছিল পাহাড় দেখবে। আজ ওর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ওর বেডরুমের জানালা দিয়ে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। এই পাহাড়ের বুকে সে এক জনম অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবে। কান্তা জানালার কাঁচ সরিয়ে তাকিয়ে থাকে সারি সারি পাহাড়ের দিকে।এ যেন সবুজের সমারোহ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

” কি হয়েছে? এত উদাস নয়নে কি দেখছ? ” কান্তার কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুঁতনি রেখেছে আরমান।
হঠাৎই আরমানের এমন কাজে হকচকিয়ে যায় কান্তা। একটু লজ্জাও পায়। মানুষটা দিনদিন বড্ড বেয়ারা হচ্ছে। শুধু ওকে ছোঁয়ার তালে থাকে। তবে আরমানের ছোঁয়া ওর কাছে মন্দ লাগেনা। কান্তা বুঝতে পারে এই ছোঁয়ায় মিশে আছে অনেক আবেগ, ভালোবাসা আর কান্তার প্রতি শ্রদ্ধা। কান্তা আরমানের কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ অনুভব করতে থাকে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থেকে সদ্য পূর্ণ হওয়া অতীতের অপূর্ণতা।

” কথা বলছনা যে। এতক্ষণতো ঠিকই হাসছিলে। নাকি আমাকে দেখে সব কথা হাওয়া হয়ে গেছে! ”
কান্তা এবারও আরমানের কথার জবাব দেয়না। বরং নিজের শরীর এলিয়ে দেয় আরমানের শরীরে। আরমান কান্তার মনোভাব বুঝতে পেরে ওকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। ওর কামিজের ওপর দিয়েই পেটে হাত রাখে। আরমানের এমন স্পর্শে শিউরে ওঠে কান্তা।

” এই, তুমি শাড়ি পরতে জানোনা? সব সময় এসব কি পরে থাক? জানোনা শাড়িতেই, নারী। ” আরমানের কোমল গলায় যেন নেশা চুঁইয়ে পরছে।

” জানিতো। কিন্তু আমার সুতি শাড়ি নেই। তাই পরতে পারিনা। আপনি বিয়েতে সব জর্জেট, কাতান, বেনারসি শাড়ি দিয়েছিলেন। সেগুলো কি বাসায় পরে থাকা যায়। ”

” আমাকে আগে বলনি কেন? তুমি কালকেই আমার সাথে শপিংয়ে যাবে। পছন্দমত শাড়ি কিনবে। তারপর বাসায় এসব পরে থাকা চলবেনা। ”

” শুধু বাসায়! বাইরে নয় কেন? ”

” আমার বউকে শুধু আমি দেখব। এটা আমার স্বামীগত অধিকার। যেটা আমার সেটা একান্তই আমার। আর আমার জিনিস আমি ঠিক আগলে রাখতে জানি। ” আরমানের ফিসফিসানি কথা শুনে কান্তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে। আরমানের নিঃস্বাস ওর উন্মুক্ত গলায় আছড়ে পড়ছে।
হঠাৎই আরমান ওর কানের লতিতে গভীরভাবে চুমু দেয়। কান্তা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ও আরমানের দিকে ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরমানের বুকে। আরমানও ওকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে।

” এখন মাত্র সন্ধ্যা। এখনই এভাবে আমাকে পাগল করছ কেন? রাত আরও গভীর হোক, তখন না-হয় পাগল কর। ”

” আপনি এমন অ’স’ভ্য কথা বলছেন কেন! আমার ভিষণ লজ্জা লাগছে। ” আরমানের বুকে মুখ গুঁজে বলে কান্তা।

” লজ্জা পেলে আমার বউকে দেখতে কিন্তু বেশ লাগে। ঠিক যেন রসমালাইয়ের মত। আর রসমালাই আমার পছন্দের মিষ্টি। তাছাড়া সব সময় পছন্দের জিনিসের স্বাদই আলাদা মনে হয়, তাইনা? ”
কান্তা বুঝতে পারে এর সাথে কথা বললেই আরও লজ্জা পেতে হবে। তাই চুপ করে থাকে। আরমানও ওকে জড়িয়ে রেখেছে ভালোবাসার চাদরে।

দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেছে। কান্তা অ্যাডমিশন দিতে আরমানের সাথে ঢাকায় এসেছে। ওরা আরমানের খালার বাসায় উঠেছে। সেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে দুইদিন ঢাকায় থেকে আবার চিটাগং ফিরে। এবার ওদের সাথে শ্রীজা চিটাগং এসেছে।
ওরা বেশ কয়েকদিন আনন্দে কাটায়। সাতদিন পর শ্রীজাকে ঢাকায় দিয়ে আসে আরমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছে কান্তা। ওর খুশি যেন বাঁধ ভেঙেছে । একে একে অধরা স্বপ্ন পূরনের সুযোগ আসছে ওর। প্রথমেই ও খরবটা শ্রীজাকে জানায়। শীজাও শুনে খুব খুশি হয়। সে তার বাবাকে জানায়। শহিদ আহমেদ সব শুনে ছেলের বউকে অনেক দোয়া করলেন। তবে আফসোস একটাই, তার ছেলে ও ছেলের বউ আজ তার কাছে নেই। আরমান সেই-যে গেছে, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তার খবর নেয়নি। অবশ্য এসবের জন্য তিনি নিজেকেই দায়ী করেন সব সময়।

খালা আজ কান্তার জন্য অনেক কিছু রান্না করেছে। আরমান সন্ধ্যার পরপরই বাসায় এসেছে। তার দু হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ। কান্তার জন্য সে নিজের পছন্দমত শপিং করেছে। অবশ্য খালাও বাদ যায়নি। তার জন্যও কয়েকটা শাড়ি কিনেছে।

কান্তা খালার সাথে কথা বলছে আর হাসছে। কারনে-অকারনে আজ বারবার ও হেসে উঠছে। রাতের খাবার পর ও অনেকক্ষণ খালার সাথে গল্প করে রুমে আসে। রুমে ঢুকেই ওর কপাল কুঁচকে আসে। আরমান ওর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পলক পড়ছেনা।
কান্তা একটু থতমত খেয়ে যায়। ও এদিক-ওদিক অযথাই হাঁটাহাঁটি করে, এটা-সেটা নাড়তে থাকে। আর সেই ফাঁকে আঁড়চোখে আরমানের দিকে তাকায়। কিন্তু মহাশয়ের কোন হেলদোল নেই। সে একইভাবে কান্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

” কি হল! এভাবে কি দেখছেন? এমন ভূতের মত তাকিয়ে আছেন কেন? ”

” তোমাকে দেখছি। আর ভাবছি আজ এত খুশির কারন কি? ”

” কিহ! আপনি বুঝি জানেননা, আমার খুশির কারন! ”

” জানি, আমি সবই জানি। কিন্তু আমি ভাবছি কোন কারনে তুমি বেশি খুশি। ”

” কোন কারনে মানে? আর কি কারন আছে! ”

” সত্যি করে বল, তুমি ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে বেশি খুশি? নাকি আজ তোমার বাসররাত এজন্য বেশি খুশি? ” আরমানের চোখেমুখে দুষ্টুমির ছাপ। হাসিতেও তাই।

তার প্রশ্নের উত্তর কি দেবে কান্তা! এই লোক যে মোক্ষম চাল চেলেছে!
আরমান ততক্ষণে কান্তার কাছে এসেছে।

” কি, আমার কথার উত্তর দিলেনা? আমি কিন্তু সত্যিটা জানতে চাই। কোন কারনে তুমি বেশি খুশি? আমি আবার এসব বিষয়ে ভিষণ উদার। বিয়ের রাতে কি বলেছিলাম, তা কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে। ”

” আপনি আবারও শুরু করলেন। আমি কিন্তু সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি। ” লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে কান্তা।

” আমিও সত্যি বলেছি। এবার তোমার উত্তরও শুনি। ”

কান্তা নিশ্চুপ। ও বুঝে গেছে আরমান কি চায়। আর এ-ও বুঝে গেছে, মহাশয় সেই কথাটা কান্তার মুখ থেকে শুনতে চায়।

” আজকের দিনে তুমি এই পুরোনো শাড়ি পরে আছ কেন? তোমার জন্য কয়েকটা নতুন শাড়ি আনলাম, কিন্তু তুমি সেগুলো খুলেও দেখনি! সত্যিই কি তুমি আমার সেই কথা ভুলে গেছ? ” আরমান কান্তার কোমর ধরে ওকে কাছে টেনে নেয়।

কান্তা মাথা নাড়িয়ে বোঝায় ও আরমানের কথা ভোলেনি।

আরমান অপলক নয়নে কান্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। আরমান ওর বাম হাত দিয়ে কান্তার কোমর পেঁচিয়ে নেয়, আর ডান হাত দিয়ে ওর চুল থেকে হেয়ার ব্যান্ড খুলে ছুঁড়ে ফেলে। আলতোভাবে আঙুল চালায় চুলের ভেতর। কান্তা ঠোঁট কামড়ে, চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আরমান মৃদু হেসে ওর কপালে চুমু দেয়। চুলের মধ্যে একটু চাপ দিয়ে কান্তার মুখ ওপরে তোলে। কান্তা তখনও ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
আরমান কান্তার চোখেমুখে হালকা করে ফুঁ দেয়। ওর এমন কান্ডে শিউরে ওঠে কান্তা। কিন্তু চোখ খোলেনা।
আরমানও ঠোঁট কামড়ে হেসে এক ঝটকায় কান্তাকে কোলে তুলে নেয়।
কান্তা এবার চমকে উঠে চোখ খোলে।

” কি করছেন আপনি? আমি….. ” কান্তা কথা শেষ করতে পারেনা। ওর ঠোঁটে চুমু দেয় আরমান।

” কোন কথা নয়। আমি আমার কথা রেখেছি। এবার তুমি স্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন কর। ” আরমান কান্তাকে নিয়ে সোজা বিছানায় যায়।

চলবে…

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_২৭
জাওয়াদ জামী

আরমান কান্তাকে ভর্তি করিয়ে, ভার্সিটির এলাকায় একটা এক রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া করেছে। কান্তা মাঝেমধ্যে ক্লাস করতে আসলে এখানেই থাকবে।
তবে প্রথম একমাস কান্তাকে নিয়মিত ক্লাস করতে বলল আরমান। কান্তাও রাজি হয়। এরপর কান্তার সাথে খালাকে ঢাকায় রেখে যায়।

আজ দীর্ঘ একমাস দশদিন পর কান্তা চিটাগং যাচ্ছে। এই একমাসে আরমান ঢাকা আসেনি। সে নাকি কোন একটা কাজ নিয়ে ভিষণ ব্যাস্ত আছে। কান্তা ভিষন উত্তেজিত। কতদিন পর মানুষটাকে সে দেখবে। যেখানে একটা দিন তাকে না দেখলে কান্তার ভালো লাগেনা, সেখানে একমাস দশদিন তাকে না দেখে থাকা যে ভিষণ কষ্টের তা কান্তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে। আজকে পথ যেন শেষই হচ্ছেনা।

ওদের চিটাগং পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়ে ওরা বাসায় আসে। আরমান তখন বাসায় ছিলনা।

দেয়াল ঘড়িতে রাত একটার ঘন্টা বাজল। কান্তা আরমানের অপেক্ষায় ঘরময় অস্থির পায়চারি করছে। আরমানকে কয়েকবার ফোনও করেছে। কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ পেয়েছে।
কান্তা চিন্তায় কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারছেনা।
অপেক্ষায় রাতের প্রহর কাটল কান্তার। ভোর হল, সূর্য উঁকি দিল পুব আকাশের কোনে। সারারাত জানালার গ্রীল ধরে ঠাঁয় বসে থেকেছে কান্তা। চোখ রেখেছে আরমানের আসবার পথে।

খালা সকালে যখন শুনল আরমান রাতে আসেনি, তখন থেকেই সে একমনে দোয়াদরুদ পাঠ করছে। চিন্তায় অস্থির দুজন মানুষ রান্না, খাওয়ার কথা ভুলে যায়।

ঠিক বেলা এগারোটায় কলিং বেল বেজে ওঠে। কে আসল এখন! কান্তা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলেই ক্লান্ত আরমানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর বুকের ভিতর থেকে কান্নারা উথলে বেরিয়ে আসে। ও তৎক্ষনাৎ আরমানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।

” এই মেয়ে, এভাবে কাঁদছ কেন! আগে আমাকে ভেতরে আসতে দাও। এরপর আমাকে বকা দাও, মা’রো, যা খুশি তাই কর। তবুও এভাবে কেঁদনা। তোমার এক এক ফোঁট চোখের পানি আমার বুকের ওপর পাথরের ন্যায় আঘাত হানে। প্লিজ, বউ আমার, এভাবে কেঁদনা। ” স্পষ্ট পুরুষালী গলায় আরমান কথা বলে। বিভিন্নভাবে শান্ত করতে থাকে কান্তাকে। কান্তা শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ পর কান্তা শান্ত হলে ওকে নিয়ে ভেতরে আসে।

এতক্ষণ খালা ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনকে দেখছিল। দুজনের মধ্যে এত ভালোবাসা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যায়।
সে মনে মনে ভাবে, তার স্বামী যদি আরমানের মত হত, তবে তার জীবনটাও অন্যরকম হত। জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় এভাবে অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে কাটাতে হতনা। একটা সন্তান থাকলে, সেও আরমানের মতই ভালোবাসত। আরও একবার তার ভেতরের সুপ্ত মাতৃত্ব হাহাকার করে উঠে।
আবার পরক্ষণেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, এক জীবনে সবাই সবকিছু পায়না।
এরপর চোখ মুছে এগিয়ে যায় আরমানের দিকে।

” ও বাপজান, তুমি কই আছিলা? নতুন বউ কাঁইন্দা বুক ভাসাইতাছে। আমি সকালে শুনছি, তুমি রাইতে আহোনাই। তহন থাইকাই তোমার জন্য পরানডা পুড়তাছিল। তুমি ভালো আছতো, বাপজান? ”

মমতাময়ী খালার কথা শুনে আরমানের চোখের কোনে পানি জমা হয়। ও কান্তাকে ছেড়ে খালার দিকে এগিয়ে আসে।

” খালা, একটা জরুরি কাজে আটকা পরেছিলাম। তাই রাতে আসতে পারিনি। দেখ, আমি একদম ঠিকঠাক আছি। ফোনে চার্য ছিলনা, তাই তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ও খালা, খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে খাব। ”

আরমানের কথা শুনে কান্তা ও খালা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।

” বাপজান, তোমার চিন্তায় আমগোরে রান্ধনের কথা মাথায় আছিলনা। তুমি যাইয়া গোসল কর, আমি কিছু রানতাছি। ”

এবার আরমান অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকায়।
এরপর কান্তাকে নিয়ে রুমে আসে।
কান্তা রুম ঢুকতেই আরমান ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

” আমার বউটা দেখি আগের থেকেও সুন্দরী হয়েছে! ঘটনা কি? যে সারাক্ষণ ফোনে আপনাকে ছাড়া ভালো লাগছেনা, আপনাকে ছাড়া ভালো লাগছেনা বলে মুখে ফেনা তুলছিল, সেই মেয়েই এই একমাস দশদিনে এত পরিবর্তন হয়েছে! এটা কিন্তু ভাববার বিষয়। তুমি কি বল? ”

” আমি আপনার জন্য নামমাত্র মুখে ফেনা তুলেছি। ভালোবেসেছি অন্যজনকে। এবার শান্তি পেয়েছেন? ”

” আজকে যা বলার বলেছ। আজ প্রথমবার জন্য ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে কখনও যদি এই কথা শুনেছি, তবে সেখানেই মে’রে মাটির নিচে পুঁ’তে রেখে দিব। তোমার সর্বাঙ্গ, মন, তোমার ভাবনা, কল্পনা সবকিছুতেই শুধুই আমি থাকব বুঝেছ? ঘুমের ঘোরেও তোমার ঠোঁটে আমার নামই থাকবে। যদি সেগুলো আপোসে না হয়, তবে বাধ্য করব আমি। ” আরমানের চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা দেখে কান্তা ভয় পায়।

” আমিতো এমনিই বলেছি। আপনি এতেই রে’গে গেলেন! ঠিক আছে এইযে নাক,কান মলছি। জীবনে আর কোনদিনও এভাবে বলবনা। তবুও আপনি রা’গ করবেননা। ”

” গুড। সারাজীবন এমনই থাকবে। আমি আবার বেশি ত্যা’ড়া বউ পছন্দ করিনা। এখন কিছুক্ষণ বুকে থাক। বুকে কান পেতে রাখ। ভালো করে শোন, আমার হার্ট প্রতিটা বিটেই তোমার নাম নিচ্ছে। এই একমাস দশদিন ওরা খুব অস্থিরতায় কাটিয়েছে। তাই এমন পা’গ’লা ঘোড়ার মত ছুটাছুটি করছে। তুমি ওদের এই অস্থিরতায় একটু প্রলেপ লাগাবে, বউ। তোমার আদরের প্রলেপ ছাড়া ওরা শান্ত হবেনা। ” আরমানের গলায় কামার্ত আহ্বান।
কোন নারীই তার পুরুষের এমন আহ্বানে ঠিক থাকতে পারবেনা। কান্তাও পারেনা। ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার একান্তই এই পুরুষকে। তার ইউনিফর্মের বোতাম খুলে, লোমশ বুকে পরপর কয়েকটা গভীর চুমু খায়। এরপর মুখ গুঁজে তার পুরুষের বুকে।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কাটানোর পর কান্তা আরমানকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠায়। এরপর ওর পোশাক বের করে খাটে রেখে, রান্নাঘরে খালার কাছে যায়।
খালা ততক্ষণে রাইসকুকারে ভাত বসিয়েছে। এখন সে পেঁয়াজ, মরিচ কা’ট’ছে। এই বেলায় আলু ভর্তা আর ডিম ভাজা দিয়ে খেতে হবে।

আরমান অনেকক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করে। সারারাতের ক্লান্তি সে ঝরনার পানির সাথে বিসর্জন দেয়।
গোসল সেরে বাইরে এসে দেখল কান্তা রুমে নেই। ও মৃদু হেসে ট্রাউজার আর টি শার্ট শরীরে জড়ায়। এরপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্তার ফোন নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে শুরু করে। কান্তা রুম থেকে যাওয়ার আগে বোধহয় ওর ফোন চার্যে দিয়ে গেছে।

কান্তা রুমে এসে দেখল আরমান মনযোগ দিয়ে ভিডিও দেখছে। সে-ও এসে একটু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই আরমান ওকে টেনে নেয় নিজের বুকের মধ্যে।

” এভাবে উঁকিঝুঁকি না মে’রে সরাসরি বললেইতো পার, আমার বুকে আসতে চাও। আমি কি কখনও না করব। আমি সব সময়ই চাই, বাসায় যতক্ষণ থাকব, ততক্ষণ তুমি আমার বুকের মাঝে লুটোপুটি করবে। এই বাসায় তোমার কাজই দুইটা। এক, আমি বাসায় থাকা অবস্থায় আমার কলিজার ভেতরে লেপ্টে থাকা আর দুই, মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা। বুঝলে আমার সোনা বউ? ”

” খুব বুঝেছি। এবার খেতে চলুন। খালা রান্না শেষ করেছে। খাওয়া শেষ হলে যতখুশি তত বাচ্চাদের ভিডিও দেখবেন। ” কান্তা কথাগুলো বলেই বাঁকা হাসে যা আরমানের চোখে ঠিকই পরে যায়।

” তুমি কি আমাকে অ্যাডাল্ট ভিডিও দেখতে ইন্সপায়ার করছ? তবে দেরি কেন, এস দু’জনে একসাথে দেখি। এতে দু’জনেরই লাভ। ” আরমানের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি।

” এই না। আপনাকে কিছুই দেখতে হবেনা। আপনি খেতে চলুন। আমারও খুব ক্ষুধা লেগেছে। আর বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে নির্ঘাত
সংজ্ঞা হারাব। ” কান্তা আরমানের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বিছানার একপাশে রেখে দেয়।
আরমান আর কথা না বাড়িয়ে কান্তার সাথে খেতে যায়।

খাওয়া শেষ করে আরমান রুমে এসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। গতরাতে ঘুম হয়নি বিধায় মাথা ভার হয়ে আছে।
খালাও কান্তাকে ঠেলে রুমে পাঠায়। কান্তা খালার সাথে দুপুরের রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু খালার একটাই কথা, কতদিন পর দুজন একসাথে হয়েছ, আজ কোন কাজ করতে হবেনা। তাই বাধ্য হয়ে কান্তা রুমে আসে।
আরমান চোখে ডান হাত রেখে শুয়েছিল। রুমে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে হাত সরিয়ে কান্তাকে দেখে ওকে ইশারায় কাছে ডাকে। কান্তাও হাসিমুখে আরমানের কাছে এগিয়ে যায়।

কান্তার ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে আরমানের বুকে আবিষ্কার করল। সে বেচারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই কান্তা তাকে না ডেকে ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ঘড়ির কাঁটা ততক্ষণে দুপুর দুইটার দিকে নির্দেশ করছে। কান্তা ঝটপট করে বিছানা থেকে নেমে আসে।

আরমানের ঘুম ভাঙ্গে বিকেল পাঁচটায়। সময় দেখেই তার মাথায় হাত। তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নাকেমুখে খাবার গুঁজে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। যাবার সময় বলে যায় ফিরতে দেরি হবে।

কান্তা কয়েকদিন থেকে লক্ষ্য করেছে, আরমান আজকাল কেমন যেন চিন্তিত থাকে। জিজ্ঞেস করলেও ঠিকঠাক জবাব দেয়না। শুধু বলে, পরে সব জানতে পারবে।
কান্তাও বুঝতে পারে আরমানের মুখ থেকে কোন কথা বের করা যাবেনা। তাই ও আর তাকে ঘাঁটায়না।

বই নিয়ে বসে বসে কান্তা দুনিয়ার সব আজেবাজে চিন্তা করছে। এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে নম্বর দেখেই ও হতবাক। বড় ভাইয়ার ফোন! রিসিভ করবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়। এরপর ওকে অবাক করে আবার ফোন বেজে ওঠে। এবার আর কান্তা দেরি না করে রিসিভ করে।

” হ্যাঁ ভাইয়া, বল। হঠাৎ এই বেয়াদব মেয়েকে ফোন করলে যে! তোমার সম্মান যাবেনা এতে? ”

” কেমন আছিস? আরমান কেমন আছে? ” কান্তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করে জাবেদ।

” আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি। কিন্তু তুমি কি মনে করে ফোন দিলে? ”

” অনেকদিন যাবৎ তোর খোঁজ নেয়া হয়না। তাই ফোন দিলাম। আরমান কি ভার্সিটিতে আছে? তুই কি করছিস? তোর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ভালো আছে? ”
জাবেদের প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে গেছে কান্তা। ওর ভাই ওর কোন খবরই জানেনা! ফুপুর কাছ থেকেও কিছুই শোনেনি!

” আমরা এখন চিটাগং থাকি ভাইয়া। আরমান এখন আর ভার্সিটিতে নেই। সে এখন এখানকার এএসপি। আর শ্বশুর বাড়ির সবাই ভালো আছে। ”

” কি বলিস! আরমান এএসপি হয়েছে! ও বিসিএস দিয়েছিল! বাহ্ খুব ভালো লাগল শুনে। তুই কি পড়াশোনা করছিস? এইচএসসি দিয়েছিলি? ”

” এইচএসসি তে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলাম। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে আছি। এসব কথা বাদ দাও আরাফ কেমন আছে? ”

” আরাফ ভালোই আছে। তবে তোর জন্য খুব কষ্ট পায়। অনেকদিন তোকে দেখেনি। শুধু তোকে দেখতে চায়। সময় করে এসে বেরিয়ে যাস। আরমানের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। তুই ওর নম্বর এসএমএস করে দিস। আমি ওকে এখানে আসতে বলব। ” বোনের অর্জন শুনে জাবেদের চোখে পানি এসেছে। আবেগে ভারি হয়েছে গলা। এই বোনকে তার সংসারে থাকতে কত নিগৃহীত হতে হয়েছে। একটু লজ্জাও পায়।

” সে আমাকে গ্রামে যেতে দিবেনা ভাইয়া। ভুল বললাম, গ্রামে যেতে দিবে কিন্তু তোমার বাড়িতে যেতে দিবেনা। আর আমিও সেখানে যেতে চাইনা। তারচেয়ে বরং তোমরাই এসে বেরিয়ে যাও। আরাফকে নিয়ে এস। ছেলেটাকে কতদিন দেখিনা। ও বুঝি অনেক বড় হয়েছে? তোমার পাশে আছে? থাকলে একটু দাও, কথা বলি। ”

বোনের কথা শুনে জাবেদ কেঁদে ফেলে। একটাই বোন তার। অথচ তার কোন যত্ন নেয়া হয়নি। বিয়ের পর কোন খোঁজ নেয়নি। এ নিয়ে হয়তো শ্বশুর বাড়িতে ওকে কথা শুনতে হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে আরাফের হাতে ফোন দেয়।

দীর্ঘদিন পর ফুপুকে ফোনে পেয়ে আরাফ ভিষণ খুশি। ও ফুপুর সাথে নানান গল্পে ব্যস্ত হয়ে পরে। যত অভিযোগ, অভিমান তুলে ধরে ফুপুর কাছে। কান্তাও মনযোগ দিয়ে আরাফের প্রতিটি কথা শোনে।

সেদিন রাতে আরমান বাসায় এসে জানায়, ওরা আগামীকাল আরমানের গ্রামে যাবে। ওর এক চাচা ওদের যেতে বলেছে। কান্তা বেশ অবাক হয়ে আরমানের দিকে তাকায়। ও আরমানের চোখে কোন উচ্ছ্বাস কিংবা খুশি দেখেনা। বরং সেখানে ভর করেছে কোন কিছু হারানোর ভয়।

বিঃদ্রঃ গত দুইদিন আগে আমার আইডিতে রিপোর্ট করা হয়। তাই আইডিতে ঢুকতে পারিনি। তাই গল্প দিতে পারিনি। অনেক চেষ্টার পর সন্ধ্যায় আইডি ফিরে পেয়েছি। তাই দয়া করে কোন অভিযোগ রাখবেননা।

চলবে…