ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-১২

0
222

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ১২
লেখক ঃ অভ্র নীল

আমরা শুয়ে আছি। হঠাৎ,,কে যানি আমাদের ডাকতে লাগলো। আমি চোখ খুলে দেখি সানজিদা আমার বুকে আর লিজা আমাদের সামনে দাড়িয়ে আছে। সে বলল–

লিজা– কি রে তোরা আর প্রেম করার জায়গা পাইলি না? এই সানজিদা তুই প্রেম করবি ঠিক আছে। কিন্তু দরজাটা ত বন্ধ করে আসবি।

তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– সরি রে ভুলে গেছিলাম।

লিজা– রাখ তোর সরি! আমি না দেখে যদি অন্য কেও যদি দেখে নিতো, তাহলে কী হয়ে যেত ভাবতে পারছিস?

আমি সানজিদা আর লিজার কথোপকথন শুনছি। এখানে আসলে কী হচ্ছে সেটা আমি বোঝার চেষ্টা করছি। তখন লিজা আমায় বলল–

লিজা– কি রে তুই এইভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন? কিছু বলবি?

অভ্র– আরে আমি কী বলব? এখানে কী হচ্ছে আমিতো সেটাই বুঝতাছি না!

লিজা– এ্যাঁ ঢং!

সানজিদা– সত্যিই ও কিছু জানে না। আমি যখন আসছি তখন দেখি অভ্র ঘুমিয়ে ছিল৷ আর তখন আমি,,,,

অভ্র– কী হলো আটকে গেলে কেন? তারপর কী বলো?

সানজিদা– কিছু না!

এটা বলে সে দিল এক ভোঁ দৌড়। আমি লিজার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকলাম৷ তখন লিজা বলল–

লিজা– তুই তাহলে শেষমেশ আমার বান্ধবীকে পটিয়েই নিলি। যাক আমার বিয়ে শেষে তোদের বিয়ে হবে টেনশন করিস না।

এটা বলে লিজাও সেখান থেকে চলে গেল৷ এখানে আসলে কই থেকে কী হয়ছে আমি কিছুই বুঝলাম না। এক কথায় এখানকার সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে গেল৷

যাইহোক, আজকে লিজার বিয়ে।

বিয়ের সকল কাজ শেষ করে। আমরা বিকেলে বাসায় চলে আসি।
এই দুইদিন আমি মজায় ছিলাম না কী প্যারার ভেতরে ছিলাম, সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।

আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।

তারপর মাগরিবের আযান শুনে উঠে পড়লাম। তারপর নামাজ পড়ে, পড়তে বসলাম। কারণ আর মাত্র ১ সপ্তাহ পর আমাদের পরীক্ষা। আমার পিপেরেশন আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি বসে থেকে পড়ছি, তখন সানজিদা আমার রুমে আসলো। আর বললো–

সানজিদা– এই যে! কী করেন?

অভ্র– কেন দেখতাছো না পড়তাছি।

সানজিদা– আরে রাখতো এতো পড়ে কী করবে? আসো আমরা দুজনে মিলে গল্প করি।

অভ্র– সমানে আমাদের পরীক্ষা ভুলে গেলে না কী?

সানজিদা– না!

অভ্র– তাহলে তুমি পড়া বাদ দিয়ে এখানে কী করছো। যাও গিয়ে পড়তে বসো!

সানজিদা– আমি এতো পড়ে কী করবো?

অভ্র– মানে?

সানজিদা– আমিতো তোমার বউ হবো। আমার এতো পড়াশোনার দরকার নেই। আর পরীক্ষাতেও তো তুমি আমার পাশেই বসবে, আমি তোমার খাতা দেখে দেখেই লিখবো। হি হি হি!

আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে বললাম–

অভ্র– তাহলে তোমার এই চিন্তা ভাবনা হু!

সানজিদা — হুম! কেন তুমি দেখতে দিবা না?

অভ্র– না দিবো না! তুমি কী করবা?

সানজিদা — তোমায় দিতেই হবে।

অভ্র — দিবো কিন্তু একটা শর্তে!

সানজিদা তখন ভ্রু কুঁচকে বলল–

সানজি — কী শর্ত?

অভ্র — এখন গিয়ে পড়তে বসো যাও।

সানজিদা — যাবো না!

অভ্র — যাবা না! দাড়াও মজা দেখাচ্ছি!

এটা বলে আমি সানজিদার দিকে ধিরে ধিরে এগোতে লাগলাম। আর সানজিদা পিছনে যেতে লাগলো। একপর্যায়ে সানজিদা দেওয়ালের সাথে লেগে গেল। আমরা দুজন এতটাই কাছাকাছি চলে আসছি, যে আমরা একে অপরের গরম নিশ্বাস অনুভব করতে পারছি। আমি সানজিদার দিকে তাকিয়ে আছি। আর সানজিদা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। তখন পিছন থেকে কে যেন বলল–

__ ভাইয়া ভাইয়া! আম্মা তোমায় খাবার খেতে ডাকেছে! চলো!

তখন আমি চমকে গেলাম আর সানজিদার থেকে দূরে সরিয়ে দাড়ালাম৷ আমি তাকিয়ে দেখি জান্নাত। আমি বললাম–

অভ্র– তোকে এখনি আসতে হলো?

জান্নাত — কেন কী হয়ছে?

অভ্র — কিছু না! এই সানজিদা তুমি ওকে নিয়ে যাও! আমি একটু পর যাচ্ছি যাও!

সানজিদা তো মুখ টিপেটিপে হাসছে। সে বলল–

সানজিদা — আচ্ছা যাচ্ছি!

অভ্র — যাহ্, যে সুন্দর একটা রোমান্টিক মুডে ছিলাম সেটাও নষ্ট হয়ে গেল। ধুরর ভালো লাগে না।

তারপর আমি খাবার খেয়ে আসলাম। খাবার খেয়ে আবারও পড়তে বসলাম।
এরপর পড়াশোনা শেষ করে শুয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খাচ্ছি। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– অভ্র, তোমাদের পরীক্ষার আর কয়দিন বাকি?

অভ্র– এইতো আঙ্কেল সামনের সপ্তাহে!

আঙ্কেল– তোমাদের পরীক্ষা শেষ হলে আমরা সানজিদার জন্য ছেলে দেখা শুরু করবে। কী বলো তুমি?

ছেলে দেখার কথা শুনে আমার বুকটা ধুপ করে উঠলো। আমি বললাম–

অভ্র– কেন আঙ্কেল ছেলে দেখে কী করবেন?

আন্টি– তুমিও না, ছেলে দেখে কী করে? আমরা সানজিদার বিয়ের কথা বলছি। এবার বুঝছো?

অভ্র– হুম আন্টি! (গম্ভীর গলায়)

আঙ্কেল– আর শোনো এই কথা যেনো সানজিদা কে বলো না! সানজিদা জানলে আবারও চিল্লাচিল্লি শুরু করবে।

অভ্র– আচ্ছা আঙ্কেল!

এরপর আমি খাওয়াটা অনেকটা কষ্ট করেই শেষ করলাম। খেতে মন চাইছিল না কিন্তু জোর করেই খেলাম।

আমি যেই জিনিসটার ভয় করতাম তাহলে সেটাই কী হতে চলেছে? তাহলে আমি কী সানজিদা কে হারিয়ে ফেলবো।

আমি এসব চিন্তার ভিতরে ডুবে ছিলাম। তখন সানজিদা আমার রুমে এসে বলল–

সানজিদা– ওই ভাসিটি যাবে না?

অভ্র– হুম যাবো। আচ্ছা সানজিদা আমি তোমায় একটা প্রশ্ন করি?

সানজিদা তখন আমার পাশে এসে বসলো। আর বলল–

সানজিদা– কী ব্যাপার তোমায় এই রকম চিন্তামগ্ন লাগছে কেন? আর কী বলবে বলো?

তখন আমি একটা লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বললাম–

অভ্র– আচ্ছা তুমি আমায় কোনোদিন ছেড়ে যাবে না তো? আমি তোমায় ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারি না। প্লিজ তুমি আমায় কোনোদিন ছেড়ে দিও না! আমি এই কয়দিনে তোমায় এতোটায় ভালোবেসে ফেলেছি, যে আমি তোমায় ছাড়া না কিছু করতে পারি, না কিছু ভাবতে পারি।

এটা বলে আমি সানজিদা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দিলাম। তখন আমার শান্তনার সুরে বলল–

সানজিদা– আরে পাগল এটা আমি তোমায় বলছি না। আমি তোমায় কোনোদিন ছেড়ে যাবো না। তুমি এতো চিন্তা করো কেন? আর তোমার মাথায় এসব চিন্তা আসে কই থেকে হু? তুমি কী আমায় বিশ্বাস করো না?

অভ্র– হুম আমি তোমায় নিজের থেকেও বিশ্বাস করি। তুমি আমায় মরতে বললেও আমি হাসিমুখে আমার এই জীবনটা দিয়ে দিবো। বিশ্বাস না হলে তুমি বলেই দেখো?

আমি মরার কথা বলতেই সানজিদা আমায় চড় মারলো। তবে এইবার চড়টা এতটাও জোড়ে মারে নি। সে আমাকে চড় মেরে নিজেই এবার কান্না করে দিল। এটা দেখে আমি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কোথায় কান্না করার কথা আমার, আর এখানে সে কান্না করছে বাহ্ খুব ভালো। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– এই আর একদিন যদি তোমার মুখে মরার কথা শুনেছি তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে। আর তুমি মারা গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো? তুমি মারা গেলে আমিও মারা যাবো।

অভ্র– আচ্ছা বাবা আর কোনোদিন বলবো না। এবার খুশি?

সানজিদা– হুম খুশি।

অভ্র– চলো এইবার ভাসিটি যাওয়া যাক!

তারপর আমরা দুজনে ভাসিটি চলে গেলাম,,,,,,,,,,,,

চলবে……?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।