#খড়কুটোর_বাসা
#সূচনা_পর্ব
#Jhorna_Islam
প্রবাস থেকে নিজের বউয়ের জন্য আনা গয়না ছোট ভাইয়ের বউরা ভাগাভাগি করে সব নিয়ে নিয়েছে। ইরহান শুধু দেখেছে কিছুই বলেনি।মুখ দিয়ে বলতেও পারে নি এগুুলো আমার বউয়ের তোমাদের তো অনেক দিলাম।এগুলো নিও না।তাদের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনি।থাক নিয়ে নেক তার বউকে নাহয় আবার এনে দিবে।
দীর্ঘ বারো বছর পর দুই দিন হলো সৌদি আরব থেকে দেশে আসে ইরহান।
টাকা কামাতে কামাতে নিজের দিকে নজর দেয়নি। বাড়ি,গয়না, জায়গা,জমি সব করলো।
ছোট ভাইয়ের বউরা যখন গয়না গা’টি ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত ইরহান তখন নিজের রুম থেকে মায়ের রুমের দিকে যেতে থাকে। তখনই তার বউয়ের ফোন আসে। কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় মায়ের রুমের দিকে। দেশে আসার পর ভালো করে কথা হয়নি মায়ের সাথে।
————————————-
বারো বছর আগে ইরহান নিজের দেশ ছেড়ে টাকা কামানোর ও নিজের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি দেয় নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে। কিশোর ছেলেটা নিজের সব শখ আ’ল্লা’দ ভুলে যায় নিজের পরিবার কে ভালো রাখতে।এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই পাড়ি জমায় সুদূর প্রবাস।
এই বারো বছরে আর দেশে আসেনি ইরহান।নিজের শরীরের র/ক্ত পানি করে একমনে কাজ করে গেছে।মানুষ ভাবে প্রবাস জীবন কতোইনা সহজ।বসে বসেই বুঝি টাকা পাওয়া যায়। যে কাজ করে সে জানে কতোটা কঠিন।ইরহান কঠোর পরিশ্রমে আস্তে আস্তে সফল ও হয়েছে। হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা বেতনে গেছে। এখন বিদেশি সেই কোম্পানিতে ভালো বেতনে কাজ করে। খারাপ দিন ঘুরে এসে ভালো দিনের দেখা মিলেছে।নিজের জন্য শুধু খাওয়ার টাকা রেখে সব দেশে পাঠিয়ে দিতো।
সে নিজে যা ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি তার ভাইরা যেনো করতে পারে। সব টাকা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতো।মা কে জায়গা জমি কিনে বড় করে বাড়ি করতে বলেছে।মায়ের নামে বলেছে জায়গা কিনতে।
নিজের জন্য কিছুই রাখেনি সব পরিবার আর মা,ভাইদের জন্য করেছে।
নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে বলতে মায়ের রুমের সামনে এসে চলতি পা থেমে যায় রুমের ভিতর অবস্থিত মা আর ভাইদের কথা শুনে।
ইরহানের দুই ভাই ইমন ও ইশান মায়ের সঙ্গে তাকে নিয়েই কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে।টাকা পয়সা জায়গা জমি ভাগাভাগি করছে তারা।
দুইজন কে যেনো সমান ভাগ করে দেয় একটুও কম বেশি না দেয় কারণ দুইজনেরই সমান অধিকার।
তোরা চুপ করতো দুইজন। সমান সমানই পাবি।তোদের জন্যইতো এতো কিছু করলাম।টাকা পয়সা,জমি,গয়না সব নিজের নামে করলাম যেনো তোরাই পাস।
আমি তো তোদের মা।আমার নামের সব কিছু তোরাই পাবি ঐ ইরহান না।কয়েকটা দিন যেতে দে তারপর ইরহানকে এই বাড়ি থেকে ও বিদায় করবো। আমার ছেলে দুটো রাজার হালে থাকবে।
এই পুরো বাড়িটা অনেক চেষ্টা করে ও নিজের নামে লিখতে পারিনি ঐ বুড়োর কাছ থেকে। নয়তো এই বাড়িটা ও তোদের হতো বুঝলি? এখনতো এ ইরহান ও ভাগ পাবে।
সে যাই হোক এখান থেকে কতটুকুই বা পাবে? সব তো আমাদের নামে লিখে নিয়েছি।বোকা ইরহান নিজের নামে টাকা পয়সা জায়গা জমি না করে আমার নামে করেছে সব।
ইরহান এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।তার মুখ ভঙ্গি নির্বাক।কোনো পতিক্রিয়া নেই।চোখ দুটো মা আর ভাইদের হাসি মাখা মুখের উপর নিবদ্ধ।
আহারে আমার বোকা বড় ছেলেটা মায়ের কথায় উঠে বসে।টাকা চাইতে দেরি দিতে দেরি হয় না।চুপচাপ দিয়ে দেয়।জায়গা আমার নামে রাখতে বললাম চুপচাপ তা মেনে নিয়ে তাই করলো।
মা পা’গল ছেলে আমার কথাটা বলেই মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে কয়েক বার।তারপর খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।
ইরহান এক দৃষ্টিতে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। তাকে ঠকাতে পেরে কি খুশি। অথচ তার মা মুখ ফোটে একবার বললে সে নিজেই সব দিয়ে দিতো এতোদিন যেমন দিতো।এতো ছলচাতুরী করার কোনো প্রয়োজন ও ছিলো না।
—————————————
ইরহানের মা ইরহানের যখন পাঁচ বছর তখনই মারা যায়।ইরহানের দেখাশোনা ও ওর মায়ের অভাব পূরণ করার জন্য আবার বিয়ে করেন তার বাবা। ইরহান তাছলিমা বানুকেই নিজের মায়ের আসনে বসায়। অথচ তাছলিমা বানু সেই প্রথম থেকেই ইরহানের প্রতি উদাসীন। ছেলেটা কে না ভালোবেসে কাছে টানে না দূরে সরায়। ইরহান তাও সব মেনে নিতো। তারপর দুই ভাই হয়।
ইরহানের প্রতি তাছলিমা বানুর বিরক্ততা আসে তাও কিছু বলে না। ইরহান এইচএসসি দেওয়ার পরে তার বাবা ও চলে যায়। নিজেদের স্বচ্ছতার জন্য ইরহানকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেয় তাছলিমা বানু।অথচ ইরহান পড়াশোনায় অনেক ভালো কতো স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় কিছু করবে।সেই স্বপ্ন ও মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে মায়ের জন্য। হয়তো এইবার মা তাকে একটু ভালোবাসা দিবে।ইরহান বড্ড ভালোবাসার কা’ঙাল।
আরো আগে দেশে আসতে চেয়েছিলো ইরহান।তাছলিমা বানু নানান বাহানা এটা দরকার ওটা দরকার বলে আসা আঁটকে দিতো।ইরহান চুপচাপ মেনে নিতো।
বোকা ইরহান এদের কাছে ভালোবাসা চাইতো।অথচ এরা টাকা কামানোর মেশিন ছাড়া আর কিছুই ভাবতো না। ছোট দুই ভাই ইরহানের আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।দুই ভাই ই অনেক বড় জায়গায় বিয়ে করেছে।ইরহান কে তাছলিমা বানু গরিব জায়গায় বিয়ে করিয়েছে। যার পরিবার বলতে এক দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন আনে দিন খায়। ইরহান চুপচাপ মায়ের পছন্দ মেনে নিয়েছে। বুঝতে ও পারলোনা ওদের চা’লাকি।
কয়েক মাস আগে ফোনে বিয়ে পরিয়েছে।কথা হয়েছে ইরহান দেশে আসলে দুই একজন গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবে নতুন বউকে।
————————————————-
তিনজন মিলে যখন ইরহানের সম্পত্তির ও টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত ইরহান তখন চুপচাপ তার মায়ের রুমের দরজার পাশ থেকে নিজের রুমে চলে আসে।
ভাইয়ের বউরা গয়না গাটি নিয়ে চলে গেছে। মনে মনে হাসে ইরহান বাড়িতে সকলে ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত।
লোকে মনে হয় ঠিকই বলে পর কখনো আপন হয় না। তাছলিমা বানু যদি আজ ইরহানের নিজের মা হতো তাহলে কি এমন ভাবে পারতো তাকে ঠকাতে? জীবনে ও না। নিজের দুই ছেলের জন্য কতো চিন্তা। ইরহান কে ঠকাতে ও একবার বিবেকে বাধলোনা। এই ছেলে টা যে মা মা বলে মুখে ফেনা তুলে সেই মর্যাদা টা ও রাখলোনা।
মাথায় তার নানান চিন্তা। যাদের সে আপন ভাবতো তারা তার আসলে আপন নয়। শুধু টাকার জন্য তার সাথে ওমন ভালো ব্যবহার করে গেছে। আজ ইরহানের কাছে কিছু নেই।
হাত খরচের কয়েকটা টাকা ছাড়া সে এখন নিস্ব। এই নিয়ে তার চিন্তা ছিলো না সব নিয়ে গেছে নিয়ে যাক।কিন্তু আর কয়েক মাস আগে ওদের রুপটা সামনে আসলে হয়তো ভালো হতো।একটা জীবন বেঁচে যেতো।
এখন তো ইরহান একা নয় তার সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে আছে। নয়তো আবার দেশ ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যেতো আর এই দেশে ফিরতো না সে। এখন তো কোনো উপায় নেই। মেয়েটা তো তার সাথে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে গেছে।
মানুষের মুখের বিষাক্ত ভাষায় যে মেয়ে টা কে বাঁচতে দিবে না।যদি ইরহান মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়।
সেই মনে হয় একমাত্র স্বামী প্রবাস থেকে এতোকিছু এনেও নিজের বউকে একটা সুতো ও দিতে পারলোনা।পারবেও হয়তো না।
ইরহান অনেক ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় আবার প্রবাস পাড়ি জমাবে।তবে এইবার ঐ মানুষ গুলোর জন্য না।এইবার তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ঐ অসহায় মেয়েটার জন্য। এই বার নিজের জন্য কিছু করবে।অনেক তো হলো ওদের জন্য করা।
ইরহান নিজের রুমে বসে চারিপাশে চোখ বুলায়।তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।এটা আর তার রুম নয়।নামে মাত্র তার।হয়তো কয়দিন পর এই রুম থেকে বিতাড়িত করবে।
———————————
ইরহান হয়তো জানে ও না যে মেয়েটার জন্য সে চিন্তা করছে। নিজে নতুন করে সব গড়ার স্বপ্ন দেখছে ঐসময় মোবাইলের ঐপাশ থেকে সব শুনে তারপরই কল কেটেছে।
মনেমনে তার বউ ও অনেক কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
যুথি তার দাদিকে ডাকতে থাকে,,,,
দাদি এই দাদি কই তুমি?
যুথির ডাক শুনে তার দাদি ঘরে ঢুকে। কিরে কি হইছে? এমনে চিল্লাস কেন?
আমি কল লাগায় দেই তোমার জামাইরে কও আমারে এখনই ঐ বাড়িতে আইসা নিয়ে যাইতে।
কি কস ছেরি?
যা বলছি তাই করো।
শরমের ব্যাপার আছে না? তোর কি তর সইতাছে না? জামাইর বাড়ি যাওয়ার লাই এমন পা’গল হয়নি কেউ? মাইনষে কি কইবো?
বিয়ে করছি জামাইর বাড়ি যাওয়ার জন্য পা’গল হবোনা?
ধুর তোমার বলা লাগবো না। এমনিতেই আমি চলে যাচ্ছি। তারপর তারাতাড়ি গিয়ে পরার জন্য যেই দুটো জামা আছে তা একটা শপিং ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে পরে যুথি তার স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।
#চলবে,,,,,,,
#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam
যুথি বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তা ধরে। গ’ন্তব্য তার স্বামীর বাড়ি।
পিছন থেকে যুথির দাদি তাকে অনবরত ডাকতে থাকে। যুথি পাত্তাই দেয় না সে বড় বড় হাটা দিয়ে এগিয়ে চলল।
যুথি ওরে যুথি,,,,,বু ও বু যাইসনা আমার কথাডা শোন বু!
যুথি দাদির ডাক শুনে দাড়িয়ে যায়।তারপর ঘুরে দাদির দিকে তাকায়। তার দাদি প্রায় দৌড়ে এসে যুথির কাছে থামে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,, এই বু’ই’ড়া বয়সেও তুই আমারে দৌড়ানি দেওয়াস বু।
উফফ দাদি দেখতে পাচ্ছো না একটা জায়গায় যাচ্ছি? তোমার পিছন ডাকতে হইলো? কি কইবা কও দেখি।
এমন কইরা যাইস না বু।মাইনষে কি কইবো? আমি নাত জামাইর সাথে কথা কই তুই যাইস না।
বাড়ি ফিরে যাও বুড়ি।আমাকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না আল্লাহ চাইলে বিকেলেই আমি শ্বশুর বাড়ি থাকবো।
তর মাথাডা একেবারে গেছে ছে’রি যা করার কর কিছুই আমি আর বলমুনা। তারপর নিজের কাঁধ থেকে যুথির বোরখাটা নিয়ে যুথির হাতে দিয়ে চলে যেতে যেতে বলে এইবার যেইহানে যাওয়া যা তুই।
যুথি বোরখাটা দেখে জি’বে কামড় মারে। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার তারায় বোরখা পরতে সে একদম ভুলে গেছে। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে রাস্তায়ও কোনো মানুষ আছে কিনা। রাস্তা এখন পুরাই ফাঁকা। তাই তারাতাড়ি বোরখাটা পরে ওড়না দিয়ে মুখে মুখোশ বেঁধে তারপর আবার হাটা দেয়।
যেতে যেতে দাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,, বুড়ি তুমি ভালো থাইকো।তোমার নাত জামাইরে নিয়া খুব শীঘ্রই আসবো।
যুথির দাদি ছলছল চোখে যুথির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। মনে মনে ভাবে আজ যদি মেয়েটার বাবা মা জীবিত থাকতো কতো আয়োজন করে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি পাঠাতো। মেয়েটার ভাগ্য আসলেই সেই সুখ টা নেই।তাইতো নিজের স্বামীর বাড়িতে এই প্রথম পা রাখবে সেটা ও আবার একা একাই।নিজে ও টাকা পয়সা না থাকার জন্য মেয়েটাকে কিছু দিয়ে পাঠাতে পারলো না। খালি হাতে দুইটা পুরাতন জামা নিয়ে যেতে হচ্ছে।
———————————————
যুথির দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। অনেক ছোট থাকতে বাবা মা পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।দাদি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। সবটুকু দিয়ে আগলে রেখেছে।
মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে টাকা রোজগার করে দুইজনের সংসার চালিয়ে নিয়ে গেছে। একদিন যুথির দাদি যেই বাসায় কাজ করে ঐ বাসার মহিলা যুথির জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলের বাড়ি বড় লোক।ছেলে বিদেশ থাকে।অনেক টাকা পয়সার মালিক কিন্তু ওরা গরিব ঘরের মেয়ে চায়।
যুথির দাদি দুইদিন সময় নিয়ে ভেবে রাজি হয়ে যায়। মেয়েটা তো সারাজীবন কষ্টই করে গেলো এই বাড়িতে নিশ্চই সুখে থাকবে। যুথিও দাদির উপর কোনো কথা বলেনি। এই মানুষ টা এতো বছর ধরে যুথি কে বুকে আগলে রেখেছে। তাই যা করার ভালো কিছুই করবে তার জন্য।
যুথির দাদি পাশের বাড়ি থেকে আরো দুইজন লোক নিয়ে ইরহানের বাড়িতে যায়।উনারা জানায় ফোনে বিয়ে পরানো হবে। তারিখ দিয়ে দেয় ঐ তারিখে গিয়ে ওরা বিয়ে করাবে। পরে ছেলে দেশে আনলে দুই একজন গিয়ে উঠিয়ে আনবে।
তারপর বিয়ে টা ফোনেই হয়।বিয়ের দিন শুধু এক পলকের৷ জন্য যুথি ইরহান কে দেখেছে তার ভাই ইশানের ফোনে। তাও এক পলকের জন্য একটু। ভালো করে সবার সামনে তাকিয়ে দেখতেও পারে নি। সেই সুদূর প্রবাসে থাকা লোকটাকে এক পলক দেখেই নিজের মনে জায়গা দিয়েছে। আর ইশান ও যুথির একটা ছবি ইরহান কে পাঠিয়ে ছিলো।
যুথির কাছে কোনো এন্ড্রয়েট ফোন নেই । একটা ছোট মোবাইল তার কাছে ঐটা দিয়েই ইরহানের সাথে কথা হতো। মন চাইতো ইরহান কে দেখতে কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না।
—————————————
প্রায় আধা ঘন্টা একটানা হাঁটার জন্য হাঁপিয়ে ওঠে যুথি।তাই একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট জিরিয়ে নেয়।আরো পনেরো মিনিটের মতো হাঁটতে হবে। টাকা থাকলে অটো দিয়ে শুধু পনেরো মিনিটের ও কম সময়ে পৌছে যেতো। কিন্তু টাকা নেই টাকা থাকলেও যুথি আসতো না হেঁটেই আসতো। দুইটা টাকার ও যে কি মূল্য সেটা যুথি খুব ভালো করে জানে। বিকেলের দিকে রাস্তা ঘাটে মানুষের আনাগোনা বেশি হয় তাই দ্রুত পা চালায় সে।
মিনিট পনেরো পর যুথি তার গন্তব্যে এসে পৌছায়। বাড়ির সামনে এসে চোখ বুলায় পুরো বাড়িটা তে।
একদিন এই পথ দিয়ে শহরে যাওয়ার সময় যুথির দাদি বলেছিলো,,, ওরে যুথি এইটাই নাত জামাইর বাড়ি।যুথি তখন এক পলক বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এখনো মনে আছে সেই দিনের কথা। এক পলকের দেখায় চিনে আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি যুথির।যুথির মাথা আবার খুব ভালো এক পলকের দেখায় অনেক কিছু সে মনে রাখতে পারে । যেমনটা সে এখন এই একতালা বিশিষ্ট চারিদিকে ইটের দেওয়াল দেওয়া বাড়িটা চিনে ফেলেছে।
টিনের গেইট পেরিয়ে যুথি ধীর গতিতে বাড়ির উঠোনে প্রবেশ করে। চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে বাড়িটা একটা ছাদ দেওয়া দালান ঘর ভিতরে কয়টা রুম আছে জানা নেই যুথির। তবে বেশ বড় সরোই বাড়িটা। গেইট দিয়ে ঢুকতে একটা ছোট ঘর ও চোখে পরলো।টিনের দো’চালা ঘর তবে বেশ পুরোনো । ধারণা করলো ভিতরে হয়তো দুইটা রুম।
আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে এগুলো যুথি।বাড়িটা অনেক জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। চারপাশে অনেক গাছগাছালি আছে। ঝোঁকের বসে তো এসে পরলো এখন চিন্তায় আছে ঘরে ঢুকা নিয়ে। এমন সময় যুথির পাশ দিয়ে একটা বাচ্চা যেতে দেখলো হাতে বল। হয়তো খেলতে গিয়ে এসে পরেছে নিতে এসেছে। তাছাড়া যুথির জানা মতে এ বাড়িতে কোনো বাচ্চা নেই।
যুথি বাচ্চাটাকে কাছে ডাকে।বাচ্চা টা যুথির ডাকে থেমে যুথির দিকে তাকায়।
কিছু বলবেন খালা?
ছেলেটার খালা ডাকে যুথি আ’হা’ম্ম’ক হয়ে যায়। তারপর বলে আমি তোর কোন জনমের খালারে? আমার বয়স জানিস কতো?
নাহ্ জানিনা।দেখলে বলতে পারতাম ধারণা করে।কিন্তু আপনিতো মুখ ঢেকে রেখেছেন তাই বয়স বোঝা যায় না। দেখতে কেমন খালা খালা লাগছে।
ছেলেটাকে কয়েকটা কথা শোনাতে গিয়ে ও চুপ হয়ে যায় যুথি।এখন ঝামেলা করে লাভ নেই।যে জন্য ডেকেছে সেই কাজটা আগে সেরে নেওয়া যাক।
এই বাড়ির বড় ছেলে আছে না? ঐ যে বিদেশ থেকে যে দুই দিন আগে আসলো।উনাকে একটু ডেকে দে।
ইরহান ভাইয়ের কথা বলতেছেন?
যুথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
উনিতো পুকুর পাড়ে বসে আছেন। ঐযে দেখা যাচ্ছে বলেই ছেলে টা হাত দিয়ে পুকুর পাড় দেখিয়ে দিল।
যুথি পুকুর পাড়ে এগিয়ে যেতে থাকে। ইরহানের পিঠটা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গভীর ভাবনায় মগ্ন সে। যুথি কাছাকাছি গিয়ে পিছন থেকে ইরহানকে ডেকে উঠে,,,,,,
“ওও বোকা পুরুষ। ”
ইরহানের ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে কারো কন্ঠ স্বর শুনে কিছু টা হকচকায়। তারপর পিছনে ঘুরে তাকায়। একটা বোরখা পরা মেয়ে দাড়িয়ে আছে চোখ গুলো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ইরহান চেনার চেষ্টা করে। তারপর মাথায় আসে বোকা পুরুষ নামে একজন ই তাকে ডাকে সেটা হলো তার বউ যুথি।
ইরহান জানে না কেন তার বউ তাকে বোকা পুরুষ ডাকে।তবে মেয়েটার মুখে এই নাম টা শুনতে ও তার ভালো লাগে। ইরহানের আর বুঝতে বাকি নেই এটা যুথি।গলার স্বর শুনে ও চিনতে পারেনি কারণ ফোনের সাথে বাস্তবের গলার স্বর খুব একটা মিল পাওয়া যায় না।
যুথি?
যুথি মুখের মুখোশ টা খুলে ধপ করে ইরহানের পাশে গিয়ে বসে পরে। তারপর ইরহানের দিকে তাকিয়ে ইরহান কে দেখতে থাকে। ইরহান এতোটা স্বাস্থ্যবান ও না আবার এতোটা চিকন ও না একদম ঠিকঠাক। বসা অবস্থাতে বুঝতে পারলো লম্বা ও বেশ আছে। শ্যামবর্ণের পুরুষটির মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি কি যে ভালো লাগছে। হুট করে ইরহানের কথায় যুথির হুঁশ আসে।
তুমি এখন এখানে? দুপুরে না কথা হলো? জানালে না কেনো আসবে? একাই এসেছো? আমার না গিয়ে আনার কথা?
উফফ চুপ করেনতো বোকা পুরুষ। এতো প্রশ্ন একসাথে কেউ করে?
আর বিয়ে বসেছি কি বাপের বাড়ির ভাত খেতে? বাপের বাড়ির ভাত আর ভালো লাগছিলো না তাই জামাইর বাড়ি নিজে নিজে চলে এসেছি। আপনার অপেক্ষায় থাকলে এই জনমে আর সংসার করা হতো না।
কিন্ত,,,,,,,,,
কোনো কিন্তু নয়।পুরোটা রাস্তা হেঁটে এসেছি হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে। পরে না হয় সব বলবো আগে ঘরে নিয়ে চলুন।
ইরহান যুথির মুখের দিকে ভালো করে তাকায়।এই প্রথম সামনাসামনি দেখা।শুধু একটা ছবি ছিলো যুথির। প্রথম প্রথম ফোনে কথা বলতে কতো জড়তা কাজ করতো যুথির মাঝে। ধীরে ধীরে জড়তা কাটিয়েছে।অথচ এখন এমন ভাবে কথা বলছে যেনো সামনাসামনি কতোবার দেখা হয়েছে।
এইই বোকা পুরুষ সারাজীবন আমাকে দেখার সুযোগ পাবেন। এখন চলুন।
ইরহান আর কথা বাড়ায় না। সত্যি মেয়েটার মুখে ক্লান্তির ছাপ।পরে না হয় সব জেনে নিবে।তারপর যুথি কে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে ইরহান।সেখানে তাছলিমা বানু আর তার দুই পুত্র বধূ টিভি তে সিরিয়াল দেখছে।
হঠাৎ করেই যুথিকে দেখে সকলেই ভূ’ত দেখার মতো চমকায়।
যুথি মুখে হাসি ফুটিয়ে তাছলিমা বানুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারপর হাত দিয়ে সালাম করার ভঙ্গিতে বলে উঠে,,,,,,,,,
“আসসালামু আলাইকুম নকল শ্বাশুড়ি আম্মা ।”
#চলবে,,,,,,,,,,,