খড়কুটোর বাসা পর্ব-৩২+৩৩

0
214

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩২
#Jhorna_Islam

ইশানকে দিনা ইচ্ছে মতো মা’রতে থাকে আর মুখে যতো গালাগাল আসে সব বলেছে।এই লোকটা তার জীবন টা শেষ করে দিয়েছে। এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকে একদিন ও শান্তি পায়নি। প্রতিদিন অ’শান্তির আ’গুনে জ্ব’লেছে।

মানুষের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করলে কি হবে সেতো ভালো ছিল না।কোনো একটা বিষয় নিয়ে গা’লা’গা’ল আর মারামারি করতো।

শুধু মাত্র নিজের বাপের বাড়ির লোকজনের জন্য সে মুখ বুঁ’জে এই বাড়িতে পরেছিলো।

মা ছেলে তাকে শান্তি দেয়নি।আর স’হ্য করবে না। স’হ্যর বাদ ভেঙে গেছে। এইবার সব সুধে আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।

ইশান মা’র স’হ্য করতে না পেরে দিনা কে থামতে বলছে।দিনা তা শুনছেই না।একের পর এক আ’ঘাত করে চলেছে।

প্রথম বারি যাও কম ছিলো কিন্তু দ্বিতীয় বারিতেই ইশানকে দিনা কু’প’কা’ত করে ফেলেছে। ইশানের আর পাল্টা কিছু করার বা নিজেকে রক্ষা করার এক বিন্দু শক্তি ও নেই।

তোর মেয়েদের প্রতি খুব নে’শা তাই না রে? আজকে আমি তোর এমন অবস্থা করবো তুই মেয়েদের দেখলেও ভ’য় পাবি। চোখ নামিয়ে নিবি।চোখে মেয়ে দেখলেও তোর আর নেশা লাগবে না।

ইশান এমনিতেই মাথা ধরে ব্যাথায় কা’ত’রাচ্ছে। র/ক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে।

দূ’র্বল গলায় বলে দিনা আমি তোর স্বামী হই।কিছু করিস না তোর পা’প হবে।

ইশানের কথায় দিনা শব্দ করে হেসে দেয়।যেনো কোন মজার কৌতুক শোনেছে সে।

আয় হায় কার মুখে কি শুনছি আমি? তুই ইশান পা’প পু’ন্যের হিসাব রাখিস? ওমা কবে থেকে হুু?

ইশান ব্যাথায় চোখ মুখ কোচকাচেছ।মনে মনে এইটাই চাচ্ছে তাছলিমা বানু যেনো আসে নয়তো সব শেষ।

তুই আমার স্বামী তাই না? কথাটা বলেই নিচে বসে ইশানের চুল জোরে টেনে ধরে।

আহ্ ম’রে গেলাম দিনা!

যাহ্ তুই ম’রে।তোর মতো কী’টের বেঁচে থাকার দরকার নেই। তুই শুধু পৃথিবীর ময়লা আর কিছুই না।

তোকে আমি জীবিত আমার মনে কবেই ক’ব’র দিয়েছি।তোকে আমি এখন স্বামী হিসাবে মানি না।তোর মতো স্বামী আমার দরকার নেই। কারোই দরকার নেই। তোর এই সুন্দর মুখটা দেখলেও আমার ঘৃ’ণা লাগে।বলেই এক দলা থু থু ছুড়ে মারে ইশানের মুখে।

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ইশানের গোপন অঙ্গে বার কয়েক লা’থি মারে।

ইশান আর স’হ্য করতে না পেরে দিনার পায়ে দরে মাফ চাইতে থাকে।

আ-আমায় ছেড়ে দে দিনা।ভুল হয়ে গেছে মাফ কর।স’হ্য করতে পারছি না। ছেড়ে দে আমায় দিনা।

ছেড়ে দিতে বলছিস?

হুু ছেড়ে দে আমায়।

কিন্তু ছেড়ে দিলে ভালো হয়ে তো তুই আবার এমনই করবি।

ক-করবোনা।

তোর কথা বিশ্বাস করবো তাও আমি? কখনো না।কারণ কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। কথাটা বলে লাঠি টা শক্ত করে ধরে ইশানের মাথায় সজোরে এক বা’রি মারে।

ইশান মাগোওও বলে এক চিৎকার করে চুপ হয়ে যায়।

দিনা ইশানের দিকে তাকিয়ে লাঠিটা নিচে ফেলে দেয়। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। হাঁপিয়ে গেছে সে।কোমড়ে রাখা তার ফোনটা বেজে চলেছে। হয়তো তার ভালোবাসার মানুষ টা এখনো সে যাচ্ছে না বলে অধৈর্য হয়ে কল দিচ্ছে।

দিনা চলে যাওয়ার জন্য উঠে ও কি মনে করে ফিরে আসে। আলমারির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে ইশানের ভাগের যতো টাকা পয়সা আছে সব একটা ব্যাগে নিয়ে নেয়।নিজের জামা কাপড় গয়না সব নিয়ে নেয়। কিছু রেখে যাবে না। সব নিয়ে যাবে সব।

সব নিয়ে আরও একবার ইশানের দিকে তাকায়। তারপর দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে তার মধ্যে কারো চিৎকার আর আর্তোনাদ শুনে পা থমকে যায়। গলা শুকিয়ে যায় দিনার।

তাছলিমা বানু বাড়িতে এসে পরেছে। ইশানের চিন্তায় থাকতে পারে নি। মায়ের মন ছেলের জন্য কু গাইছে।তাই রাত হয়ে গেছে মাথায় রাখেনি এসে পরেছে।বাড়িতে ঢুকে দরজা ঐরকম হা করে খোলা দেখে বেশ অবাক হয়। পরে ভাবে ইশান হয়তো দিতে ভুলে গেছে। তাই বেশি মাথা ঘামায়নি।

ঘরে ঢুকে হাতের ব্যাগটা বসার ঘরে রেখেই নিজের রুমে না গিয়ে ইশানের রুমে আসে।দিনা এতো সময় আলমারির পাশে ছিল বলে দেখতে পায় নি।প্রথমেই মেঝেতে পরে থাকা র’ক্তা’ক্ত ইশানের দিকে চোখ যায়।

যা দেখে মাথা চ’ক্কর দিয়ে উঠে। হুঁশ হারিয়ে নি’র্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। দিনা সামনে আসায় হুঁশ আসে।

বুঝতে আর বাকি নেই এই কাজ কে করেছে।আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না ক্ষি’প্ত হয়ে দিনার উপর চ’ড়াও হয়।

দিনা এই সময়ে তাছলিমা বানু কে মোটেও আশা করে নি।মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে করেই হোক এখন এখান থেকে পালাতে হবে। নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।

তাছলিমা বানু এসেই দিনার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে একটা গা’লি দিয়ে বলে উঠে তুই কি করেছিস? আমার ছেলেকে তুই মেরে দিলি? তোকেও আমি ছাড়বো না। বলেই এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে। তারপর নিচে র”ক্তে মাখামাখি একটা লাঠি দেখতে পায়। বুঝতে পারে ঐটা দিয়েই তার ছেলেকে এই ডা*ই*নী মেরেছে। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরেই নিচে পরে থাকা লাঠি টা তুলতে যায়।

নিচে ঝুঁকতে গিয়ে দিনার চুল ধরে রাখা হাতের বাঁধন টা কিছুটা আলগা হয়ে যায়। এই সুযোগে দিনা নিজের শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে তাছলিমা বানুকে ধা”ক্কা মারে।

তাছলিমা বানু দূরে ছিটকে পরে।খাটের পায়ার সাথে সজোড়ে বা’রি খায়।

দিনা আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক টা দূর চলে আসে। নিজেকে এখন মুক্ত মনে আছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের পথে চলতে থাকে।

তাছলিমা বানু বোঝে গেছে দিনা কে সে ধরতে পারবে না। অনেক কষ্টে উঠে এসে ইশানের পাশে বসে। ইশানের মাথা টা কোলে তুলে নেয়।

বাপ ও বাপ আমার তোর একি অবস্থা হলোরে? আব্বা চোখ খোল। মা ডাকছিতো শুনতে পাচ্ছিস না? এই ইশান আল্লাহ আমার ছেলেটা কে শেষ করে দিয়ে গেছে গো।আমার ইশান কে মে’রে ফেলেছে। নিজের সন্তানের এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছে না তাছলিমা বানু। নানান আহাজারি করে চলেছে।

ইশান কে নিয়ে কিছু একটা করতে হবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে সেটা মাথায়ই আসছে না। অনেক সময় পর খেয়াল হয়।ইশানের বুকে মাথা রেখে দেখতে থাকে শ্বাস চলছে কি না।

শ্বাস চলছে বুঝতে পেরে কলিজায় পানি আসে।তবে খুবই ধীরে বেশি সময় এমন ভাবে থাকলে ছেলে কে আর বাঁচাতে পারবে না বুঝে গেছে।

কাকে ডাকবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। ছেলেকে ধরে নিজে নিয়ে যাওয়ার ও ক্ষ’মতা নেই। হুট করেই মাথায় ইশানের বন্ধুদের কথা মাথায় আসে। দুইটা কে ফোন লাগিয়ে তারাতাড়ি আসতে বলে।

তাছলিমা বানুর কথায় ইশানের দুই বন্ধু আসে।এসে এতোসব কিছু দেখে আ’ৎকে উঠে। ইশানের পরিস্থিতি ভালো না বুঝতে পারে। হয়তো ডাক্তার ও কিছু করতে পারবে না। তবুও তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে থাকে ইশানকে।

—————————–
যুথি ঘরে ঢুকেই দুই গ্লাস পানি নিমিষেই শেষ করে ফেলে।তবুও যেনো তার তে’ষ্টা মিটছে না। হাত পা কাঁ’পুনি থামছেই না।

যুথির দাদি প্রথমে কয়েকবার প্রশ্ন করেও যখন কোনো উত্তর পায়নি তখন আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।যুথির পরিস্থিতি দেখে সময় দিয়েছে।মেয়েটা ঠিক নেই। সময় দেওয়া দরকার। স্বাভাবিক হলে নিজে থেকেই বলবে।

দাদিকে বলে যুথি শুয়ে পরে।নিজেকে স্বাভাবিক করা দরকার। যুথির দাদি যুথিকে তার ফোন দিয়ে ইরহানের সাথে কথা বলতে বলে,, ছেলেটা হয়তো চিন্তায় ঐদিকে পা’গল হয়ে গেছে।

যুথির ও ইরহানের কথা মাথায় আসে।লোকটা হয়তো কল দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে।

ফোন হাতে নিয়ে চালু করে। ইরহান কে কল লাগায়। যুথি কল দিতে দেরি কিন্তু ইরহানের রিসিভ করতে দেরি হয় না।

যুথি মুখ খুলে ইরহান কে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইরহান বলে উঠে,, আমি কি দেশের বাইরে এসে ভু’ল করলাম?

ইরহানের গলাটা কি রকম শোনালো।যুথির চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে নীরবে।

নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নেয়। তারপর বলে,,এসব কেমন কথা?

তুমি ঠিক আছো?

হুম একদম ঠিক আছি।আসলে সীমা এসেছিলো অনেক দিন পর ওর সাথে কথা বলতে ছিলাম।ফোন টা কখন বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।

ইরহান কিছু সময় নীরব থেকে বলে,,,,

“তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো তাই না যুথি রানী? ”

“হুম”

#চলবে।

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩৩
#Jhorna_Islam

প্রবাস জীবন আমরা মনে করি খুব সহজ তাই না? শুধু টাকা আর টাকা। একটা মানুষ তার সব ছেড়ে পরিবার, আত্নীয় স্বজন নিজের জন্মভূমি চেনা সব কিছু ছেড়ে অন্য অচেনা দেশে পাড়ি জমায়।যেখানে তার নিজের বলতে কেউ নেই। শুধুমাত্র পরিবারের সুখের কথা ভেবে।নিজেদের আর্থিক ভাবে সফল করতে। আপনজনদের চা’হিদা পূরণ করতে।

কোনো উৎসবে নিজের আপনজনদের পাশে পায় না। না পায় কোন আনন্দের মুহূর্তে। উৎসব মুখর দিন গুলোতেও মাঝে মাঝে কেউ নিজের জন্য আলাদা করে কিছু কিনে না বা কেনার প্রয়োজন মনে করে না।ভাবে যেই টাকা দিয়ে আমি আলাদা করে এসব করবো ঐ টাকা গুলো আমার পরিবার তাদের প্রয়োজনে খরচ করবে। তারা অনেক অনেক ত্যা’গ করে তবুও সবাই তাদের বুঝতে পারে না। খুব কম সংখ্যক মানুষ ই আছে যারা তাদের ত্যা’গটা বুঝতে পারে।

আর সব থেকে বড় ত্যা’গটা স্বী’কার করে প্রবাসীদের বউরা।কোনো আনন্দের দিনেও নিজের একান্ত প্রিয় মানুষ টা কে কাছে পায় না। কাঁধে মাথা রেখে দুইটা সুখেের দুঃখের কথা বলতে পারে না। কোনো বি’পদে আ’পদে হাতে হাত রেখে ভরসা দিতে পারে না। সেই দূর থেকে দেখেই চোখ মন জুড়াতে হয়। পাশে পাওয়া যে বড় দু’স্ক’র।

একা একটা পরিবার কে সামলাতে হয়।নিজেকে ঠিক রাখতে হয়। একটা মেয়ের সবচাইতে আনন্দের প্লাস কষ্টের মুহূর্ত হলো প্রে’গ’ন্যা’ন্সি’র সময় যেই সময় টা তে নিজের একান্ত মানুষ টা কে কাছে দরকার সবচেয়ে বেশি তখন তাকে কাছে পায় না। ভ’য় পেলেও মানুষ টা কাঁধে হাত রেখে ভরসা দেওয়ার জন্য থাকে না। এই কঠিন মুহূর্ত টা তাকে সেই মানুষ টা ছাড়াই পাড় করতে হয়। একা একা সব করতে হয়।নিজের সন্তান কে মানুষ করতে হয়।

একজন প্রবাসী আর তার বউ জীবন যুদ্ধে তারাও যুদ্ধা।

যুথির এখন নয় মাস চলে। ভরা পেট নিয়ে হাটা চলা করতে পারে না। হাতে পায়ে পানি নেমে গেছে। কিছু খেতে পারে না এখন আগের মতো। প্রথম যেরকম খাওয়ার প্রতি আগ্রহ ছিলো এখন একটা দা’না কাটতে ও ইচ্ছে করে না দাঁত দিয়ে। সারাক্ষণ ছ’ট’ফ’ট ছ’ট’ফ’ট করে। কি যে অ’সহ্য য’ন্ত্র’না। দ’ম ব’ন্ধ লাগে। তার বোকা পুরুষ কে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। ভিতরে তার ভ’য় ঢুকে গেছে।

যদি কিছু হয়ে যায়। ঐ মানুষটা কে যদি আর না দেখতে পায় কখনো।সারাক্ষণ আজে বাজে চিন্তা মাথায় আসে।

তার কিছু হয়ে গেলে ঐ মানুষ টার কি হবে? কি করবে মানুষ টা। হয়তো ম’রেই যাবে।

এখন মাথায় একটা কথাই ঘুরছে সে হয়তো বাঁচবে না।লোকটার কি হবে এটা ভেবে কান্না জুড়ে দেয়। যে সে কান্না না হি’চ’কি তুলে কাঁদতে থাকে। নাকের জলে চোখের জলে এক করছে।

অমন সময় ইরহান কল করছে।যুথি বালিশের নিচে থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে ইরহান কল করেছে। যুথি কাঁদতে কাঁদতে ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এক হাতে ফোন আরেক হাত দিয়ে গলায় থাকা মোটা চেইন টা পেঁচাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার চোখের পানি ও মুছে নিচ্ছে। ইরহান যুথির জন্য স্বর্নের চেইন পাঠিয়েছে। আরো কতো কি পাঠিয়েছে। এই কয়েকমাসে নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনেকটাই লা’ঘব হয়েছে।

যুথি ম’রে গেলে ইরহানের কি হবে সেইটা ভেবে কাঁদছে মেয়েটা।অথচ লোকটা যে ফোন দিচ্ছে সেই দিকে তার খেয়াল নেই। সে তো দুঃখ বিলাস করতে ব্যস্ত।

ইরহান বার কয়েক কল দিয়েও সাড়া পেলো না। তখন মাথায় চিন্তা ঢুকে যায়। এমনিতেই শান্তিতে থাকতে পারে না এখন ইরহান।যতদিন ঘনিয়ে আসছে ততো চিন্তা বাড়ছে।

মেয়েটা ফোন না তোলায় কয়েকমাস আগের সেই সন্ধার কথা মনে পরে গেলো।বুকে অজান্তেই বুঝি হালকা ব্যাথা অনুভব হলো।

ঐদিন কি হয়েছিল যুথি ইরহানকে জানায় নি।শুধু এটুকুই বলেছিলো ইরহান কে যে বলেছে সীমার সাথে গল্প করেছিলো সেটা মিথ্যা। ইরহান আর জোর করেনি।পরে অবশ্য ইরহান দাদিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো। উনিও কিছু বলতে পারেনি।বলবে কি করে উনি শত চেষ্টা করেও বলাতে পারেনি।তাই ইরহান ই বারণ করেছে জোর না করতে।

ঐ ঘটনার পর যুথি রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারতো না। মাঝরাতে হুট করেই স্বপ্নে এসে দৃ’শ্য গুলো হানা দিতো।ভাবতেই শরীর শি’উ’রে উঠতো।

যুথি কে আর কল দিলো না ইরহান।

তারাতাড়ি কল লাগালো দাদি কে দাদি তখন রান্না ঘরে বসে তরকারি কাটছে।রাতের রান্নার জন্য।

যুথির ফোন সাইলেন্ট হলেও ওর দাদির বাটন ফোন টা সাইলেন্ট না।ইরহান কল দেওয়া মাত্র তা বি’কট শব্দে বেজে উঠে। এর এতোই তীব্রতা একজনের কান আর মাথা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এতক্ষনে যুথি তার কান্না থামিয়ে ফেলেছে।এখন শুধু মাঝে মাঝে হিচকি তুলছে।

দাদির ফোনের আওয়াজে বেশ বিরক্ত হয়ে যায়। চোখ মুখ কোঁচকায়। আস্তে করে বলে,, এই বুড়িকে কতোবার বলছি এই সাউন্ড বক্স টা সাইলেন্ট রাখতে কিন্তু শুনে না একটা কথাও।

দাদি এই দাদি তোমার ফোন বাজতাছে ঐ রুমে ধরো গিয়ে। আমার মাথা ধরছে।

যুথির দাদি তরকারি কাটা রেখে তারাতাড়ি ঘরে ঢুকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইরহান কল করেছে। কল রিসিভ করতেই বলে,,দাদি সব ঠিক আছে? যুথি ঠিক আছেতো? ফোন কেন ধরছে না।

দাদি যুথির কাছে এসে যুথির দিকে ব্রু কোচকে তাকিয়ে বলে,, সবই তো ঠিক আছে নাত জামাই। তোমার বউ ও ঠিক আছে। এই নাও কথা কও বলেই যুথির দিকে ফোন টা দিয়ে তরকারি কাটতে চলে যায়। চলে যেতে যেতে বলে,,, এই মেয়েটা কি যে করে না।শুধু শুধু আমার চান্দের লাহান নাত জামাই কে চিন্তায় রাখে।

যুথি ফোন হাতে নিয়ে কানে ধরে।

ঐপাশ থেকে ইরহানের কন্ঠ স্বর ভেসে আসে। আমার যুথি রানী কি আমার উপর কোনো কারণে রে’গে আছে?

———-

কথা বলবে না? সেকি জানে না তার কন্ঠ স্বর না শুনলে তার বোকা পুরুষ কতোটা কষ্ট পায়।

আমি কারো উপর রে’গে নেই।

অভিমান করেছো?

উহুু।

তাহলে শরীর খারাপ লাগছে?

আমি ঠিক আছি।

কান্না কেন করেছো তুমি?

ক-কই নাতো।কান্না করবো কেন?

আমি আমার বউয়ের গলার স্বর ভালো করে চিনি।তোমার কান্নার স্বর, আমি খুব ভালো করেই চিনি।
কি হয়েছে যুথি রানী আমাকে বলবানা?

আমার কিছু ভালো লাগে না।শুধু মনে হয় আমি হয়তো আর বা-,,,,,,

খবরদা’র মুখ দিয়ে উচ্চারণ ও করবানা।এখানেই থেমে যাও।ঐ ফোনে ভিডিও কল দিতেছি রিসিভ করো।

কল কেটে ইরহান আবার যুথির ফোনে ভিডিও কল দেয়।

এতো টেনশন করো কেন তুমি? আ’জে বা’জে চিন্তা মাথায় আনবানা একদম।তোমাকে বা’চতে হবে।আমার জন্য তোমাকে বাঁ’চতে হবে। মনে সাহস রাখো।যখন তোমার বেশি চিন্তা হয় তখন আমার কথা মনে করবে।আমার এই দুনিয়ায় তুমি ছাড়া কেউ আপন না। তুমি ছাড়া আমি কিছুই না। অন্তত আমার জন্য নিজেকে ঠিক রাখো খাওয়া দাওয়া করো। কোনো দুশ্চিন্তা করো না।

আমার কথা রাখবে তো?

হুম।

ইরহান আরো নানান ধরনের কথা বলতে থাকে। যুথির মন ভালো হয়ে যায় কথা বলতে বলতে।

ইরহানের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হাসে।ইরহান অপলক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে তার যুথি রানীর সেই হাসি উপভোগ করে।

——————————————

ইশান কে ঐদিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক হ’য়রানি তে পরতে হয়েছিলো। কিছুতেই ডাক্তার রাখতে চাইছিল না। বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিল না।মাথায় খুবই বা’জে ভাবে আ’ঘাত পেয়েছে।

ডাক্তাররা বলেই দিয়েছিলো চিকিৎসা করেও কোনো লাভ নেই। কোনো আশাই দিতে পারবে না। তাছলিমা বানু অনেক বলে কয়ে হাতে পায়ে ধরে ডাক্তারদের রাজি করিয়েছে।যতো টাকা লাগে তার ছেলেটা কে যেনো বাচিয়ে দেয়।

ইশানের অপারেশন হয়।কিন্তু কোনো আশাই দেয়নি ডাক্তার রা। ইশান কো’মা’য় চলে যায়। হাসপাতালে রাখতে অনেক টাকা। তাছলিমা বানু কি করবে বুঝতে পারছিলো না। এর মধ্যে ইমনের পা ঠিক হয়নি।একবার ও ইশান কে লিমা ও দেখতে আসেনি। ইশানের বন্ধুরাও ইশান কে সেই যে হাসপাতালে দিয়ে গেছে আর আসেনি।

এই বয়সে এসে তাছলিমা বানু হা’পিয়ে উঠেছে।ছেলেটা ম’রার মতো পরে আছে। ইশান একটা খোঁজ খবর ও নেয় না ভাইটা কেমন আছে।

এর মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে ইশানের বউ ইশান কে মে’রেছে।পুলিশ খুঁজেও দিনা কে কোথাও পায়নি। ইরহান আর যুথির দাদি এসব শুনে বেশ অবাক হয়ে ছিলো।ইরহান অনেক কষ্ট ও পেয়েছে।তবে কারো কাছে সেটা স্বীকার করে নি।

আশ্চর্যের বিষয় হলো ইশানের সাথে এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও যুথি ছিলো নির্বাক।ভালো মন্দ কিছুই বলেনি।যুথির এমন ব্যবহারে দাদি বেশ অবাক হয়। কারণ যতই ওদের সাথে খারাপ করুক না কেন ধোকা দিয়ে সব নিয়ে যাক না কেন।যুথি মুখে হলেও অসুস্থ মানুষের প্রতি কিছু টা দুঃখ প্রকাশ করতো।

কিন্তু কেউতো জানে না যুথির সাথে ইশান কি করতে চেয়েছিল।

#চলবে,,,,,,,,,,