খড়কুটোর বাসা পর্ব-৩৪+৩৫

0
244

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩৪
#Jhorna_Islam

তাছলিমা বানু দুই ছেলে কে সব টাকা ভা’গ করে দেওয়ার আগে নিজের জন্য কিছু রেখেছিলো।

সেই টাকা ইশানের পিছনে খরচ করেছে।বাড়িতে ইশানের ভাগের নগদ যা টাকা পয়সা গয়না ছিল সব দিনা নিয়ে চলে গেছে।

ইশান কে হাসপাতালে রাখতে অনেক খরচ নিজের কাছে ও টাকা নেই তাই ইশানের ভাগের সম্পত্তি যা আছে বাইরে দিয়ে তা বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু একটু জায়গা আছে বাইরে এখন।

তাছলিমা বানুর টাকা ইশানের পিছনে খরচ করায় অন্য দিকে ইমন খে’পে’ছে।ইশান ঐ টাকা পেলে সেখান থেকে সে ও পায়।

কই ইমনের অসুস্থতার সময় তো তাছলিমা একদম নিজের থেকে একটা টাকা ও দেয়নি।এখন ঠিকই নিজের ছোটো ছেলের জন্য খরচ করছে।

তাছলিমা বানু আসলে তাকে ভালোইবাসেনি।এতো এতো ভালোবাসা দেখাইছে শুধু শুধু। এসব আসলে নাটক। সব ভালোবাসা টাকা পয়সা তো ইশানের জন্য।

তাছলিমা বানু শত চেষ্টা করে ও ইমনকে বোঝাতে পারে না। নিজের ভাইয়ের সাথে কেউ এমন করে? তবুও যদি সে সুস্থ থাকতো তাহলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু ছেলেটা তো ম’রা’র মতো পরে আছে। এমন কারো উপর হিংসে করে?

ইমনের মাথায় ভূ”ত চেপেছে।সে তাছলিমা বানুর একটা কথা শুনে নি।বলে দিয়েছে এমন মায়ের তার দরকার নাই। সে আর এইখানে আসবে ও না লিমাকে নিয়ে সে শ্বশুর বাড়িতেই থাকবে।

তাছলিমা বানু যেনো ইশান কে নিয়েই পরে থাকে।ইমনের কথা ভাবতে হবে না। সে ও মায়ের কথা ভাববে না

ইমন যেহেতু এখানে আর ফিরে আসবে না তাই সে সব তার নামে লিখা জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে দিবে।

তাছলিমা বানু হাজার বারণ করেছে এরকম করিস না। নিজের ভি’টে বাড়ি মানুষ বি’ক্রি করে? তাছলিমা বানু তো বিপদে পরে ইশানের জায়গা বেঁচেছে।নয়তো জীবনে ও বেচতো না।

ইমন সত্যি সত্যিই ঐ খানে বসে জায়গা বেচার জন্য লোক লাগিয়ে দেয়।পেয়েও যায়। কিন্তু জায়গা কে কিনবে তা ইমন জানে না। প্রথমে জানতে চেয়েছিলো লোকটা বলেনি।

এরপর আর ইমন তেমন মাথা ঘামায়নি।কে কিনলো সেটা বড় কথা না।তার টাকা পেলেই হলো।

ইমন তার সব জায়গা সম্পত্তি বেচে একে বারের জন্য শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। ঐখানেই থাকবে।এই দিকে আর সে মুখ ও দেখাবে না।

তাছলিমা বানু কে বলে দিয়েছে তিনি যেন তার ছোট ছেলেকে নিয়েই থাকে। বড় ছেলের কথা যেনো ভুলে যায়।

——————————-

এরমধ্যে একদিন হুট করেই ইশানের জ্ঞান ফিরে। তাছলিমা বানু ঐদিন বাড়িতে ছিল। ইশান কে হাসপাতালে রাখলেও তাছলিমা বানু বেশির ভাগ বাড়িতে এসে পরে।

ঐদিন ও বাড়িতে ছিলো।নার্স ফোন দিয়ে জানায় ইশানের জ্ঞা’ন ফিরার কথা।

তাছলিমা বানু শুনে খুব খুশি হয়। এতোদিনে ছেলেটার জ্ঞা’ন ফিরেছে।কতো দোয়া করেছে ছেলেটার জন্য। কতো কতো টাকা খরচ করেছে ইশানের পিছনে।সব কিছু প্রায় শেষ করে ফেলেছে।

যতোটা খুশি নিয়ে তাছলিমা বানু হাসপাতালে এসেছেন ততোটাই নি”রাশ হয়েছেন ইশানের খবর শুনে।

ইশান কো’ মা থেকে বের হয়ে আসলেও তার কোনো বোধ শক্তি নেই। কাউকে চিনতে পারে কি না এটাও বলা যায় না। শুধু কেমন প্র’তি’ব’ন্ধী’দে’র মতো তাকিয়ে রয়।

একটা কথা ও বলে না। যেই দিকে তাকাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। তাছলিমা বানু ছেলের এই অবস্থা দেখে একেবারে ভেঙে পরে।।

কি হয়ে গেলো।তার সুখের সংসার টা শেষ হয়ে গেছে।

বড় ছেলে নিজের মায়ের সাথে সব শেষ করে নিজের শ্বশুর বাড়ি কে আপন করে নিয়েছে। আর ছোট ছেলের এই পরিণতি।

ইশানের বিষয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার জানায়।ইশানের মাথায় প্রচন্ড আ’ঘাত পাওয়ায় এই অবস্থা হয়ে গেছে।

————————————–

যুথির দিন যেমন কাটেই না। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে এক প্রকার ক্লান্ত সে। কিছুই ভালো লাগে না।

সেই চঞ্চল মেয়েটা কে কতোটা শান্ত হয়ে থাকতে হয়।প্রতিটা কদম বুঝে শুনে ফেলতে হয়। নয়তো এই বুঝি ব্যাথা পেলো।তার বাবুটা বুঝি ব্যাথা পাবে।নিজেকে তাই আগলে রাখার চেষ্টা করে। নিজের পেটে হাত বোলায়। এখানে তার আর তার বোকা পুরুষের ভালোবাসার চিহ্ন।

ছোট একটা প্রানের অ’স্তি’ত্ব রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সে পৃথিবীর আলো দেখবে।হাত পা ছড়িয়ে খেলা করবে।ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদবে।

নিজের পেটে নিজেরই চুমু খেতে ইচ্ছে করছে যুথির। ইশশশ পারছে না। বোকা পুরুষ টা থাকলে কতো ভালো হতো তার ইচ্ছে না হয় ঐ লোকটাই পূরণ করে দিতো।

একজন পিতার স্বার্থকতাই হলো সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর তাকে কোলে নেওয়া। কিন্তু ইরহান নিতে পারবে না। তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা আনতে গিয়ে লোকটা তার সব স্বপ্ন আশা বি’স’র্জন দিচ্ছে।

মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো যুথির। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।কতোদিন হয়ে গেলো বকুল ফুল এনে মালা গাঁথা হয় না।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো গিয়ে ফুল কুড়াতে।কিন্তু দাদির বকুনি খাওয়ার ভ’য়ে যেতো না।

আর এখন নিজেই যায় না।

যুথির নানান ভাবনার মাঝেই যুথির দাদি ডেকে বলে,,,,,
যুথিরে দেখ কে এসেছে।

যুথি ভাবনা থেকে বের হয়ে দরজার দিকে দৃষ্টি দেয়। দরজার সামনে দাড়াতে থাকা মানুষ টা কে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠে।

মন খারাপের রেশ নিমিষেই কেটে গেছে। ঠোঁটে দখল করে নিয়েছে এক টুকরো হাসি।

প্রফুল্ল মনে যুথি কিছু বলার আগেই এসে যুথিকে ঝাপটে ধরে খুব সাবধানে । যুথি ও ধরে।

আমার কথা মনে আছে? ভেবেছি হয়তো মেয়েটা আমায় ভুলেই বুঝি গেছে।।।

মোটেও না। সংসারের কাজে ইচ্ছে থাকলেও সময় হয়ে উঠেনি।তাই বলে আমার বান্ধবী কে ভুলে যাবো?

কেমন আছিস সীমা?

এইতো ভালো আমার বান্ধবী কে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।

সীমা কে দেখে যুথির মনে ইচ্ছে জাগলো পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে একটু গল্প করতে। অনেক দিন হয়ে গেলো মন খুলে সীমার সাথে কথা বলা হয় না। সব কথা তো আর দাদি আর ইরহান কে বলতে পারে না।

তাই সীমা কে বলল আয় আমরা গিয়ে পুকুর পাড়ে খোলা জায়গাটায় গিয়ে বসি।ঘরের ভিতর কেমন দ’ম বন্ধ লাগছে।আজকে একটু বেশিই অ’স্ব’স্তি হচ্ছে আমার।খোলা জায়গায় গিয়ে বসলে একটু ভালো লাগবে।প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারবো।

সীমা যুথির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। যুথিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর বেশি সময় নেই ডে’লি’ভা’রি’র।

সীমা খুব সাবধানে যুথিকে ধরে নিয়ে যায় তারপর দুইজন পুকুর পাড়ে বসে। বাতাস টা খুবই ভালো লাগছে যুথির। চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে শ্বাস টেনে নেয়।দুই বান্ধবি নানান কথা জুড়ে দেয়।

কতো শতো কথা তাদের। এতোদিনের জমানো সব কথা বলতে থাকে একজন আরেকজন কে।

সীমা তার সংসার জীবনের নানান কথা বলছে।শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কেমন তার স্বামী নামক লোকটা কেমন তাও বলছে।

জানিস যুথি আমি মনে মনে চাইতাম ইরহান ভাইয়ের মতো যেনো একটা জীবন সঙ্গী পাই।তোদের ভালোবাসা দেখতে কি যে ভালো লাগে রে।ভাই দূর থেকে তোর কতো খেয়াল রাখে।এমন কয়জন পায়?

আল্লাহ আমার ইচ্ছে টা পূরণ করেছে।পেয়েছি আমিও।হয়তো ইরহান ভাইয়ের মতো ততোটা অন্য কেউ পারবে না। তবুও আমার জন আমায় অনেক ভালোবাসে।

একেকজনের ভালোবাসা একেকরকম সীমা। মানুষ আলাদা ভালোবাসার ধরণ ও আলাদা।

হুম।

সীমা আরো অনেক কথা বলতে থাকে।অনেক মজার কথাও বলে,,,যা শুনে যুথি খিলখিলিয়ে হাসে।

সীমা যুথির দিকে তাকিয়ে যুথির হাসি দেখে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটা কে।ফোলা শরীরে আরো কয়েকগুণ সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। ইরহান ভাই সামনাসামনি দেখলে হয়তো আবার ও যুথির প্রেমে পরতো নতুন করে।

যুথির হাসির মাঝেই পেটে চিনচিনিয়ে ব্যাথা অনুভব করে। পেটে হাত রাখে যুথি।ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। স’হ্য করার মতো না।

নিজের পাশে বসে থাকা সীমার হাতটা খা’মচে ধরে। সীমা আ’ৎকে উঠে। কি হয়েছে যুথি ঠিক আছিস?

সী-সীমারে,,,

চোখ মুখ র’ক্তি’ম বর্ণ ধারণ করছে যুথির।

সীমা ভ’য় পেয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে কি হয়েছে যুথি? ঠিকইতো ছিলি।কষ্ট হচ্ছে তোর?

যুথি চোখ মুখ কোচকে মাথা উপর নিচ নাড়ায়।তার কষ্ট হচ্ছে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

সীমা যুথিকে ছেড়ে উঠতে ও পারছে না। যুথি তার হাত সারছে না। সীমা এখান থেকেই দাদিকে জোরে ডাকতে থাকে।

যুথি ব্যাথাতুর মুখে একটা কথাই বলছে সীমারে আমার বোকা পুরুষ কে একটা কল দে।আমার বোকা পুরুষ কে আমি এক ন’জর দেখবো।আমার খুব ভ’য় করছে।আমাকে একটু ব্যবস্থা করে দে উনাকে দেখার।

#চলবে,,,,,,,,,,,

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩৫
#Jhorna_Islam

তাছলিমা বানু তার কর্ম’ফল পাচ্ছে। অন্যর ক্ষ’তি করে কেউ কখনো পার পেয়ে যায় না। হয় কিছু দিন আগে নয়তো কিছু দিন পরে ঠিকই শাস্তি পেতে হয়।

ঐ স্বপ্ন টাই সত্যি হলো। ইরহানের বাবা এসে স্বপ্নে ঠিক কথাই বলে গেছে। সে তার পাপের শাস্তি পাচ্ছে। শান্তি নেই। অশান্তির জোয়ারে ভাসছে প্রতিনিয়ত।

যাদের জন্য অন্যায় করেছে তারা আজ উনাকে ফেলে রেখেছে ফিরেও তাকায় না। বড় ছেলে টা একবার জানতে চায় না মা তুমি কেমন আছো? তোমার শরীরটা ভালো আছে? একটা খোঁজ ও নেয় না।

আর ছোট টা সেই যে হাসপাতাল থেকে যেরকম এনেছে সেরকমই আছে।গত কয়েক বছরে ও কোনো পরিবর্তন নেই।

কোন কথা বলে না। যেইদিকে তাকাবে বোকার মতো সেইদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রবে।

কারো কথাতে কোন সারা শব্দ করে না।কারো কথা সে বুঝল কি-না তা ও বোঝার উপায় নেই।

জায়গা সম্পত্তি টাকা পয়সার জন্য যাকে তিনি ঠ’কিয়ে নিজের করেছেন আজ উনার কিছুই নেই।সব শেষ।শুধু বাড়িটা আর বাইরে একটু জায়গা রয়েছে।সব বিক্রি করে শেষ। রোজগার করার মানুষ নেই।উনারই বা কি করার আছে। বুকে পাথর চেপে জায়গা জমি বিক্রি করেই দিয়েছেন।সাথে ঘরের জিনিস পত্র ও বিক্রি করে।

তাছলিমা বানু এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। নিষ্পাপ ছেলেটা কে উনার ঠ’কানো ঠিক হয়নি।একদম ঠিক হয়নি।পাপ করেছেন তা শাস্তি পাচ্ছেন। কয়েক বার যুথির কাছে যেতে চেয়েছিলো মাফ চাইতে।গিয়ে ও আবার ফেরত এসেছে সাহসে কুলোয় নি।কম অন্যায় তো করেনি।কি অপমান করেছে।কি অহংকার দেখিয়েছে অথচ সব ওদের ই ছিলো।

তাছলিমা বানু ঠিক করে নিয়েছে ইরহান আসলে মাফ চেয়ে নিবে।নিশ্চয় মাফ করে দিবে ইরহান। ইরহানের মন অনেক বড়।উনাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আর যদি মাফ না করে দরকার পরলে ইরহানের পায়ে ধরবে।

পাপের ফলে সুখের সংসার শেষ। কি সুখের সংসার ছিলো আর এখন? অহংকার পতনের মুল।

———————————–

দেখতে দেখতে দীর্ঘ সাত বছর পাড় হয়ে গেছে ইরহান দেশে নেই। সময় তার নিজ গতিতে বয়ে গেছে। ইরহান এখনো দেশে আসেনি।

এর মধ্যে রাস্তার পাশে সুন্দর বড় একটা বাড়ি হয়েছে।লোক লাগিয়ে ইরহান ই করিয়েছে । দু-তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে করিয়েছে। অবশ্য উপর তালার কাজ করেনি।ঐটা ভবিষ্যতের জন্য করে রাখছে।অনেক সুন্দর করে বাড়িটা করেছে।রাস্তা দিয়ে লোক যাবার সময় একবার হলেও নীল রঙা বাড়িটার দিকে ন’জর পরে।

সব সময় সবার খারাপ দিন থাকে না। ভালো দিন ঠিক আসে শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ইরহান অক্লান্ত পরিশ্রমে এই কয়েক বছরে প্রচুর টাকা কামিয়েছে। যেই টাকার জন্য ইরহান এক সময় পা’গলের মতো এদিক সেদিক ঘুরতো আজ আল্লাহর রহমতে তার টাকা হয়েছে, সুন্দর একটা বাড়ি হয়েছে।

যুথিকে ইরহান মাথা থেকে হাত। কতো কতো গয়না গড়িয়ে দিয়েছে। ইরহান তার কথা রেখেছে। যুথি কিছু বলেও থামাতে পারে না। কিছু দিন পর পরই এটা ওটা গয়না গাটি পাঠাতে থাকে। যুথির বারণ শুনে না।তার এক কথা আমার বউকে আমি দিবো তুমি চুপ থাকো মেয়ে তুমি বলার কে?

ইরহান বাড়ি করলেও এখনো যুথি নতুন বাড়িতে উঠে নি।উঠবেও না বলে ঠিক করে রেখেছে। ইরহান আসলে একেবারে উঠবে।এই ঘরেই এখন থাকবে।এখানে যে ইরহানের ছোঁয়া লেগে আছে । ইরহান কে ছাড়া নতুন ঘরে উঠলে শান্তি পাবে না।

যুথি বকুল গাছের নিচে বসে ফুল কুড়ায় আর অতীতের কথা ভাবে।

ঐদিন সীমার ডাকে যুথির দাদি দৌড়ে এসেছিলো।এসে দেখে উনার নাতনি ব্যাথায় ছটফট করছে। বুঝে গেছেন নতুন সদস্য আসার সময় হয়ে গেছে।

সীমা আর দাদি দুইজন মিলে হাত ধরে যুথিকে উঠিয়ে অনেক কষ্টে ঘরে নিয়ে যায়। যুথি ব্যাথায় বার বার আ’র্তনাদ করছে আর সীমাকে অনুরোধ করছে যেনো তার বোকা পুরুষ টা কে একটা কল দেয়।এই সময়ে যে তার পরান টা পুরছে মানুষ টা কে একবার দেখার জন্য। মনে হচ্ছে ইরহান কে এক ন’জর দেখলে সব সেড়ে যাবে।

সীমা যুথির ফোন নিয়ে ইরহান কে কল লাগায়।তারপর যুথির অবস্থা সব খুলে বলে। সব শুনে ইরহান অস্থির হয়ে পরে।দাদি আর সীমা কে অনুরোধ করে যুথিকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। ইরহান নাকি যাওয়ার আগেই গাড়ি ঠিক করে কথা বলে গিয়েছিল। একটা কল দিলেই নাকি আসবে।

যুথির দাদি ইরহান কে বারণ করেছে এসব করতে।বাড়িতেই নাকি চেষ্টা করবে আগে। যুথির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে নরমাল ভাবেই হবে।

যুথির কষ্ট ইরহান কিছুতেই স’হ্য করতে পারছে না। যুথির ব্যা’থাতুর মুখটা দেখেই কলিজা টা যেমন ছিঁড়ে যাচ্ছে ইরহানের।

বো-বোকা পুরুষ!

খুব কষ্ট হচ্ছে না? একটু স’হ্য করে নাও যুথি রানী । ইরহানের গলাটাই যেনো কেমন ধরে আসছে।যুথিকে কি বলে সান্তনা দিবে ইরহান? সে তো নিজেই তার বউয়ের কষ্টে প্রায় কেঁদে দেয়।

যুথির দাদির কথায় সীমা গিয়ে তার দাদিকে ডেকে আনে। একা সবকিছু করা সম্ভব নয়।তার উপর সীমার দাদির অভিজ্ঞতা আছে এসব বিষয়ে।

দুইজন ঘরে ঢুকে। তারপর সীমা মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে আসে।ইরহান কে জানায় চিন্তা না করতে।

চিন্তা না করার কথা বললেই কি চিন্তা না হবে নাকি।ইরহান সীমা কে খুব করে অনুরোধ করে যেনো এভাবে না পারলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। তারপর কল কেটে ইরহান ঐ গাড়ির ড্রাইভার কে কল দিয়ে বলে,,বাড়ির সামনে যেনো এসে দাঁড়ায়। সব খুলে বলে, গাড়ির দরকার না পরলেও ইরহান সারাদিনের ভাড়া দিবে।তবুও যেনো যায়।

তারপর ইরহান তারাতাড়ি ওযু করে নামাযে দাঁড়ায়। তার যুথি রানী আর বাচ্চা টা যেনো সুস্থ থাকে তার জন্য দোয়া করে।

নামাজ শেষেই ইরহানের ফোনে আবার কল আসে।কল রিসিভ করতে ইরহানের হাত কাঁপছে। মনে মনে এটাই চাইছে যেনো সব ঠিক থাকে।

কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যুথির দাদি খুশি মনে বলে উঠে,, নাত জামাই,, তোমার তো রাজকন্যা হইছে।আমার নাতনির ঘরে মেয়ে হইছে।তুমি মেয়ের বাবা হইছো।

ইরহান কথাটা শুনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। যুথি কেমন আছে জানতে চায়। যুথি ভালো আছে।

তারপর সীমা ভিডিও কল দিয়ে ইরহান কে তার মেয়ে কে দেখায়।ইরহান এইবার আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে।তার মেয়ে কি আদুরে মুখ খানি।ছোট ছোট হাত পা।ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে দিতে।মেয়েটা কে চুমু খেতে।

সেই থেকে বাবা মেয়ের কি মিল। ইরহান মেয়ের নাম রেখেছে জুই। মেয়ে যখন কান্না করে ফোনে ইরহানের গলা শুনলেই থেমে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে বাবা কে খোঁজে। বাবার আদুরে কথা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে।

এখন মেয়ে বড় হয়ে গেছে। স্কুলে ভর্তি করিয়েছে যুথি।পড়াশোনায় খুব ভালো মেয়েটা।বাবার বাধ্য সন্তান। বাবা যা বলবে তাই করবে।একটুও এদিক ওদিক করবে না।

বাবা মেয়ের কি মিল। যুথি কথা গুলো ভেবে আপন মনেই হাসে। এর মধ্যে জুই হাতে ফোন নিয়ে দৌড়ে আসে।

হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,, আম্মু কখন থেকে তোমায় খুঁজছি।আব্বু ফোন দিয়েছে কথা বলো।

তুই কথা বল তোর বাপের সাথে। কাল সারাদিন কই ছিল? একটা কল ও করেনি।এখন আসছে ঢং করতে সর।

আমি কথা বলেছি তুমি কথা বলো।আমার পড়া বাকি আছে। আব্বু বলেছে সব পড়া শেষ করতে বিকেলের মাঝেই। রাতে তাহলে আমার জন্য নাকি একটা বড় উপহার আছে। আমি গেলাম বলেই যুথির হাতে ফোন দিয়ে দৌড়ে চলে যায় জুই।

যুথি ফোন কানে ধরতেই বলে,,,,আমার যুথি রানী কেমন আছে?

এএএ ঢং! কাল কেউ আমার খুঁজ নেয়নি।

একটা জরুরি কাজ ছিল তাই নেইনি।

আর এদিকে যে আমি আর মেয়ে কতো মিস করেছি।

আমিও তোমাদের অনেক মিস করি যুথি রানী।কিন্তু কি করবো বলোতো? তাও তোমার কাছে দিন শেষে নিজেকে ঠিক রাখার জন্য আমাদের কলিজাটা আছে।কিন্তু আমি? আমার দুইটা জান ই তো আমার কাছে নেই।আমার অবস্থা টা একবার ভাবো তো।

যুথি আসলেই ভাবে। তবুও দিন শেষে মেয়ের মুখ দেখে সব কষ্ট ভুলে যায়।কিন্তু তার বোকা পুরুষ টা তো ঐ দূর দেশে একা বড্ড একা।

ইরহান ভালো করে কথা না বলেই ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেয়। কাটার আগে বলে একটা বড় ধরনের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে যুথি রানী তোমাদের মা মেয়ের জন্য। যুথি কিছুই বুঝলো না।

রাতে দুই মা মেয়ে বসে বসে গল্প করছে।যুথির দাদি আজ একটু তারাতাড়ি ই ঘুমিয়ে গেছে।

হঠাৎ করেই দরজায় টোকা পরে।যুথি জানতে চায় কে? কোন উত্তর আসে না।তাই নেমে হাতে ব’টি’টা নিয়ে দরজা খুলতে যায়।জুই ও মায়ের সাথে নামে।মা কে সে একা যেতে দিবে না।

দরজা খুলে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখে দুইজন ই কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ৷ হয়ে যায়। যুথির হাত থেকে ব’টি’টা অনেক আগেই পরে গেছে।

মা মেয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে রয়।

#চলবে,,,,,,,