#খুশবু🌼।২।
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
সব যেনো খুব দ্রুতই ঘটলো। খুশবু ও ইমতিয়াজের বিবাহের দিন তারিখ ঠিক হলো। শুক্রবার বাদ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।
বাড়ির হল রুম মেহমানে পরিপূর্ণ। ইতোমধ্যে
মৌলভি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে । রজনীগন্ধা ফুলের পর্দার এপাশে ইমতিয়াজ, এবং অন্য পাশে খুশবু।
“দুই লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া মরহুম এক্রাম রহমানের একমাত্র পুত্র সন্তান ইমতিয়াজ রহমানের সাথে ইলিয়াস মাহমুদের একমাত্র কন্যা মেহরিন খুশবু যদি এই বিয়েতে রাজি থাকিয়া থাকেন তাহলে বলুন কবুল।”
মৌলভির কথার প্রতিউত্তরে খুশবু ধীর গলায় কবুল বলল।
ইমতিয়াজকে মৌলবি সাহেব কবুল বলতে বললে ইমতিয়াজ কবুল বলে দিলো।
এই দৃশ্য যেনো মুরতাকিবের সহ্য হলো না।
মুরতাকিব দূর হয়ে খুশবুর বিয়ে দেখছে। মুরতাকিব নিজের মনে কথা আওরাতে থাকে।
“বিয়ে করে বড় ভুল করে ফেললে খুশবু।এর পরিনাম কতটা খারাপ হবে তুমি নিজেও জানো না। তোমাকে আমার করে ছাড়বোই।তাবিজ দিয়ে এতাদিন আমায় তোমার কাছে আসতে দেয় নি। আশেপাশে থেকেই দেখেছি কিন্তু ছুতে পারি নি। এতোদিন কারো ক্ষতি করি নি। কিন্তু এখন থেকে শুরু হবে মুরতাকিবের ধ্বংসলীলা। এখন একটা সুযোগের অপেক্ষা, তারপর আমি কি করতে পারি দেখবে সবাই।খুশবু তোকে আমি যদি না পাই তাহলে তোর স্বামিকেও পেতে দেবো না। তাতে যদি তাকে মারতেও হয় তাই আমি করবো।। ”
ইমতিয়াজ আর খুশবুর বিয়ে হওয়ার সাথে সাথেই যেনো মুরতাকিবের রাগের প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো।হাওয়ার বেগে মুরতাকিব বিয়ের হল রুমের সজ্জিত ফুলদানি ভেঙে দিয়ে বের হয়ে গেলো।
হঠাৎ হাওয়ার বেগ বেড়ে যাওয়ায় ফুলদানি ভেঙে যাওয়ার কারণ কেউ তেমন বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষনের মাঝেই সব স্বাভাবিক হওয়ার পরে,সবাই মিষ্টি মুখ করে খুশবুকে বিদায় জানালো।কিন্তু ইলিয়াস মাহমুদের চিন্তার শেষ হলো না। আদৌ কি ছোট বেলার সেই জ্বীন কি খুশবুর পিছন ছেড়ে দিয়েছে, নাকি এখনও খুশবুর জীবনের সাথে ছায়া হয়ে ঘিরে আছে। ইলিয়াস মাহমুদের মনে এখনও এই প্রশ্নের দাগ কাটে।
.
.
গোলাপ ও রজনীগন্ধার মিলনে সাজানো হয়েছে খুশবু ও ইমতিয়াজের বাসরঘর।ফুলের বাগিচার ন্যায় দেখতে লাগছে কক্ষটাকে।সেই কক্ষে বধু সাঝে বসে আছে খুশবু নামে অপরুপ এক গোলাপ।বেনারসিতে নব বধু কাবু করতে পারে তার স্বামিকে।অধর্ঘোমটা টেনে ইমতিয়াজের অপেক্ষায় খুশবু।কিছুক্ষন বাদেই ইমতিয়াজ কক্ষে প্রবেশ করে ধীর পায়ে।দরজার উল্টো পাশ ফিরে লাগিয়ে দেয় ছিটকানি। ধীর পায়ে এগোতে থাকে খুশবুর নিকট।গিয়ে বসে পড়ে খুশবুর সম্মুখে। ইমতিয়াজ তার দুই হাত দ্বারা অর্ধঘোমটাকে টেনে উপরে তোলে,ইমতিয়াজ বলে উঠল,
“মাশাল্লাহ, আপনার মতো সুন্দরী রমনী আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য লিখে রেখেছেন।”
এমন কথায় খুশবু মৃদু হেসে ইমতিয়াজের অবয়বের পানে তাকায়।ফের ইমতিয়াজ খুশবুকে বলে,
“আপনার কোনো সমস্যা হলে আমায় নিদ্বিধায় বলতে পারেন খুশবু।”
খুশবু ইমতিয়াজের পানে চেয়ে বলতে লাগলো কাপা গলায়,
“ইমতিয়াজ আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন।”
ইমতিয়াজ হাসে, খুশবুর কথায় জবাব দেয়,
“তুমিও আমাকে তুমি বলতে পারো।এভাবেই কথা বলতে বলতে কেটে যায় কিছু সময়।”
ওদিকে দূর থেকে মুরতাকিব সব কিছু দেখছে।ইমতিয়াজ খুশবুকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য দেখে মুরতাকিবের আর সহ্য হলো না।
সে নিজের সাথে নিজে কথা আওরায়,
“সব কিছু ধ্বংস করে দিবো,আমি মুরতাকিব ছাড়া তোকে কেউ ছুতে পারবে না খুশবু,কেউ না।”
কথাটার প্রতিক্রিয়া যেন দেখা যায় ইমতিয়াজদের পাশের বাসায় আগুন জ্বলে ওঠার কারণে।
আগুন, আগুন,বলে সবাই চেচাচ্ছে।প্রতিবেশীদের এমন গোলাগোলির আওয়াজে ইমতিয়াজ খুশবুকে নিজের তনু থেকে আলাদা করে। খুশবুকে বসিয়ে রেখে চলে যায় দরজার নিকট।ছিটকানি খুলে বাইরে যায় ইমতিয়াজ।আগুনে পুড়তে থাকা বাড়ি থেকে সবাইকে উদ্ধার করে, ইমতিয়াজ ও আরো অনেকে।ইমতিয়াজ আসতে দেড়ি হওয়ায় খুশবু ও যেন ঘুমিয়ে পড়ে।
মধ্যরাতে ইমতিয়াজ বাড়ি ফেরে।খুশবুর ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে হালকা হেসে ফ্রেশ হয় ইমতিয়াজ। ঘড়িতে চোখ স্থির করে দেখে নেয় কয়টা বাজে।একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ইমতিয়াজ ও ঘুমিয়ে পড়ে।
_____
খুশবু নাশতা রেডি করছে, প্রতিবেশীরা নতুন বউ দেখতে এসেছে তাই ।ইমতিয়াজের মা তাদের সাথে বৈঠক খানায় গল্প করছে।খুশবু ধীর পায়ে চায়ের ট্রে টেবিলে রেখে ফের নাশতা আনতে গেলো।
প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলতে লাগলো ইমতিয়াজের মাকে,ইলিয়াস সাহেবের মেয়ে খুশবুকে আপনার ছেলের বউ করে নিয়ে এসেছেন।ইয়ানা রহমান হাসি মুখে জবাব দেয় ❝হ্যা, ❞।ছেলেটা খুব পছন্দ করে বিয়ে করেছে।
তাদের কথার মাঝেই আবার খুশবু নাশতা নিয়ে এসে টি-টেবিলে রেখে চলে গেলো, সে আর দাড়ালো না। খুশবু কক্ষ ত্যাগ করতেই ইমতিয়াজের আম্মা গর্জে ওঠে,
“কি বলছেন কি আপা?”
“হ্যা আপা সত্যিই বলছি।খুশবুর উপর জ্বীনের ছায়া আছে ছোট বেলা থেকেই,আপনার ছেলেকে সাবধানে থাকতে বলবেন। আমার কথা না বিশ্বাস হলে আপনি আরো খোজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন, তাহলেই সত্যিটা জানতে পারবেন।”
ইমতিয়াজের আম্মা চিন্তিত হলেন। সে সিদ্ধান্ত নিলো খুশবুর ব্যাপারে খোজ খবর নিবে। অতঃপর একদিনের মধ্যেই যেনো ইমতিয়াজের মা, খুশবুর অতীত, বর্তমানের সব খোজ পেয়ে গেলো।বিষিয়ে গেলো ইমতিয়াজের মায়ের মন। সে পণ করলো প্রান থাকতেও ওই মেয়ের সাথে ছেলের জীবন জড়াতে দিবে না।
তারপর থেকেই ইমতিয়াজের মা নিত্যদিনের রুটিন করে নেয় খুশবুর সাথে খারাপ ব্যবহার করার।
যতবার খারাপ ব্যবহার পেতো ইমতিয়াজের মায়ের কাছ থেকে খুশবু,ততবার খুশবু কেদে ফেলতো।দরজাবন্ধ করে কাদতো।খুশবু নিজেই বুঝতে পারতো সে নিজের কাছেই খুব অসহায়।
খুশবু আজকেও খুব কাদছে।
এমন সময় ইমতিয়াজ কক্ষে প্রবেশ ঘটলো ।ইমতিয়াজকে দেখতে পেয়ে চোখের অশ্রু মোছে খুশবু।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে খুশবু।ইমতিয়াজ খুশবুর পাশে এসে বসে। খুশবুকে নিজের দিকে ফিরায় ইমতিয়াজ এবং সে বলে ওঠে,
“কি হয়েছে খুশবু আমাকে বলো।আমার কি কোনো ভুল হয়েছে।”
খুশবু ইশারায় না সুচক মাথা নাড়ায়।ইমতিয়াজ হাসি হাসি কন্ঠে বলে ওঠে,
“হুম বুঝতে পেরেছি, ভুল করেছে অন্য জন আর মুখ ফুলিয়ে বসে আছো আমার উপর। এটা কিন্তু খারাপ খুশবু। ”
এবার ইমতিয়াজ খুশবুর কাধে হাত বাড়িয়ে খুশবুকে কাছে টেনে নিয়ে বলতে থাকল,
“জানো খুশবু কি ভাবলাম। ”
খুশবু জবাব দিলো,
” কি ভাবলেন?”
“এই যে ভাবলাম, তোমায় একটু কাছে টেনে নেই, এই বাহানায় তোমার মন ভালো করাও হলো আর আমার পাওনাটাও পূরন হলো।”
ইমতিয়াজের এমন কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো খুশবু।ফের ইমতিয়াজ খুশবুকে অবোলোকন করে মুচকি হাসল।এমন সময় খুশবুর গলার তাবিজটা ইমতিয়াজের চোখে পড়ল।
“এইগুলা কি পড়ে আছো খুশবু।”
খুশবু তাবিজে হাত দেয় আর ইমতিয়াজকে বলে,
” এটা মৌলভি হুজুর দিয়েছে। এটা আমার রক্ষা কবচ, হুজুর বলেছে কখনও যেনো না খুলি।”
“খুশবু আজকালকার সময়ে কেউ এই তাবিজ বিশ্বাস করে?এটা খুলে ফেলো”।
এই বলে ইমতিয়াজ তাবিজ খুলতে হাত বাড়ায়।খুশবু ইমতিয়াজকে আটকায়,এটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই তাবিজটা আমার জীবেন সাথে মিশে আছে।
~চলবে।