গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-২১+২২

0
193

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২১
#Raiha_Zubair_Ripti

পিনপিনে নীরবতা বাড়ি জুড়ে। সবাই ঘুমে বিভোর। শুধু ঘুমন্ত নেই রুয়াত শাফায়াত। তারা বেরিয়েছে এই সাতসকাল গ্রামের রাস্তায়। গ্রামের স্নিগ্ধ সকাল টা একান্ত ভাবে উপভোগ করছে তারা। রুয়াতের পড়নে নেভি ব্লু কালারের সেলোয়ার-কামিজ আর শাফায়াত এর শরীর টিয়া রঙের শার্ট। রুয়াত শাফায়াত এর হাত ধরে হেঁটে চলছে গ্রামের এই আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে। দু একজনের দেখা মিলছে চলন্ত রাস্তায়। শাফায়াত চেনা কাউকে দেখলে হাসি মুখে কুশলাদি করছে আর রুয়াতের পরিচয় জানাচ্ছে। পাশের রাস্তা দিয়ে শাফায়াত তার ফুফা কে হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসতে দেখলো। জবার বাবা শফিকুল শাফায়াত এর দিকে এগিয়ে এসে বলল-
-“ আরে শাফু বউমা রে নিয়ে এইখানে ক্যান?
-“ একটু ঘুরতে বের হলাম ফুপা। আপনি এতো সকালে বাজারে গিয়েছিলেন নাকি?
-“ হ আসলে জবারে আজ দেখতে আইবো ছেলের বাড়ি থিকা। তো ভালোমন্দ বাজার করে নিয়ে আসলাম।
-“ ওহ্ ছেলে কি করে?
-“ তোমার মতই স্কুলের মাস্টার। সরকারি স্কুলের।
-“ ভালোই তো। ছেলে ভালো হলে দিয়ে দেন।
-“ হ। এহন আসি। তাড়াতাড়ি আইয়া পইড়ো বাড়ি। আমি চললাম।

রুয়াত চুপচাপ এতক্ষণ কথা গুলো শুনলো। হেঁটে কিছুটা দূরে আসতেই একটা খোলা বিস্তার মাঠের দেখা মিললো। পুরো মাঠ ঘাসে বিস্তৃত। শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে এই মাঠে বসলো। রুয়াত ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনার কি খারাপ লাগতেছে?
শাফায়াত বলল-
-“ খারাপ লাগবে কেনো?
-“ না মানে এই যে জবার বিয়ে হয়ে যাবে শুনে।
-“ খুশির খবর শুনে খারাপ লাগতে যাবে কেনো।
-“ তারমানে আপনি খুশি?
-“ অবশ্যই।
-“ খুশি কেনো?
-“ আশ্চর্য বিয়ের খবর শুনলে কে না খুশি হয়।
-“ আমি যপ শুনলাম জবা আপনাকে পছন্দ করতো।
-“ হ্যাঁ তো?
-“ আপনি করেন নি কেনো পছন্দ?
-“ ভালো লাগে নি তাই।
-“ ভালো কেনো লাগে নি?
শাফায়াত হতাশার শ্বাস ফেললো।
-“ সেটা মনই ভালো বলতে পারবে তাকে জিজ্ঞেস করো। আমাকে আর করো না জিজ্ঞেস। তুমি ভীষণ জেলাস মেয়ে। এতো জেলাস হও কেনো জবা কে দেখলে? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ওর পছন্দ করায় আর না করায় কিছু যায় আসে না। আমি তো তোমার নামেই দলিল করা তবুও মিছে রাগ করো।
রুয়াত মুখ বাঁকালো। শাফায়াত সেটা দেখে বলল-
-“ মুখ বাঁকাবা না রুয়াত। ভালো দেখায় না।
-“ কি ভালো দেখায় তাহলে বলেন।
-“ বলবো?
-“ হু বলেন।
-“ এখানেই?
-“ হু।
-“ ওকে তাহলে বলছি। খারাপ ভাবে নিও না।
-” আচ্ছা বলেন।
-“ যখন গোসল শেষ করে ওড়না ছাড়া মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হও। তখন এতো হটটটট লাগে তোমায় যা বলার বাহিরে।

রুয়াত মাথা টা ঝুঁকে বেঁকিয়ে বলে-
-“ আপনি তখন তাকায় থাকেন আমার দিকে!
-“ তাকাতে না চাইলেও চোখ চলে যায়।
-“ অস্বস্তি হয় আপনার?
মজার ছলে বলল রুয়াত। শাফায়াত রুয়াত কে দেখতে দেখতে বলে
-“ হওয়াটাই স্বাভাবিক না? আফটার অল অ্যা’ম অ্যা স্ট্রং ইয়াং ম্যান। এন্ড অ্যা’ম অলরেডি ফিলিং হর্নি।
রুয়াত লজ্জা পেলো। কথাটা শুনে ভালোও লাগলো। রুয়াত তো চাইছিলো রসকষহীন কাঠখোট্টা মানুষ টা তার প্রতি আকর্ষিত হোক। রুয়াত চোখ টিপে বলল-
-“ এখন থেকে আর রুমে তাহলে ওড়নাই নিবো না।
শাফায়াত বাঁকা হাসলো।
-“ সাথে জামা টা না থাকলেও চলবে। তাহলে আমাকে কষ্ট করে খোলার জন্য অযথা টাইম ওয়েস্ট করতে হবে না।

রুয়াত এবার কেশে উঠলো। ও তো ভেবেছিলো শাফায়াত মানা করবে। কিন্তু এই লোক তো কয়েক ধাপ এগিয়ে।
-“ চলুন বাসায় যাওয়া যাক।
শাফায়াত রুয়াত কে রাগানোর জন্য বলল-
-“ কেনো তর সইছে না? এখনই করার জন্য বাসায় যেতো চাইছো! এখন করলে তো ফিল আসবে না। রাত হোক। গভীর রাতে কাছে টানলে ফিল পাবা।

রুয়াত রেগে তাকালো।
-“ আর একবার এভাবে বলবেন তো মাথার চুল গুলো সব টেনে ফেলবো। অসভ্য পুরুষ।
-“ কিছু না করেও না ধরেও অসভ্য বলতে পারো না আমায়।
-“ উঠবেন আপনি? নাকি আমি একাই হাঁটা ধরবো?
শাফায়াত উঠে দাঁড়ালো। রুয়াতের হাত ধরে হাঁটা ধরলো।

জবা সকাল থেকে রেগে রয়েছে। তার বাবা মা তাকে না জানিয়েই বিয়ের বন্দোবস্ত করতেছে। বিয়েটা ভাঙার জন্য জবা উঠানে পায়চারি করছে। হঠাৎ সদর দরজায় চোখ যেতেই শাফায়াত আর রুয়াত কে এক সাথে ভেতরে আসতে দেখে রাগ টা তরতর করে আরো বেড়ে গেলো। রুয়াত জবার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য শাফায়াত কে টেনে জবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আগাম বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা রইলো তোমার আপু। আমি আর শাফু তো মনে হয় থাকবো না বিয়েতে তবুও মন থেকে আমি আর শাফু দোয়া করি তুমি বিয়ে করে তারপর সুখী হও। তার আগে আর সুখী হইয়ো না।
জবা দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা হজম করে চলে যায়। রুয়াত দাঁত কেলিয়ে শাফায়াত এর দিকে তাকায়। শাফায়াত রুয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“ দেখলেন আপনাকে এক তরফা পছন্দ করা এক্স রেগে চলে গেলো।
-“ তুমি কি চুলোচুলি করতে চাও নাকি তার সাথে?
-“ মোটেও না। তবে আপনার সাথে আমাকে দেখলে ও রেগে উঠবে কেনো? ওর ঐ রাগ টাকে আমি আরো বাড়িয়ে দিব। এখন চলুন রুমে।

বিকেলের দিকে জবা কে দেখতে আসলো পাত্রপক্ষ। জবা যাবে না পাত্র পক্ষের সামনে। সেজন্য জবার মা এসেছে রুয়াতের কাছে। বাড়ির বউ হিসেবে তো তারই থাকার কথা পাশে। রুয়াত সুন্দর করে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে জবার রুমে আসলো। জবা নীল রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে। পাশেই আছে শরবতের আর মিষ্টির ট্রে টা। রুয়াত সেটা হাতে নিয়ে জবার সামনে ধরে বলে-
-“ তুমি কি আইবুড়ো থাকার ভাবনা নিয়ে বসে আছো নাকি? নাকি ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস হবে ভাবছো কোনটা?
-“ এই তুমি যাবে আমার রুম থেকে।
রুয়াত জবার কথা কে পাত্তা দিলো না। হাতের ট্রে টা জোর করে জবার হাতে ঠেসে দিয়ে বলে-
-“ এটা নাও আর চুপচাপ ওখানে গিয়ে বসো। তোমার এই দেখাদেখির চক্করে আমার জামাইয়ের সাথে আমার একান্ত ভাবে সময় কাটাতে দিচ্ছে না। তাড়াতাড়ি গিয়ে বসো।

জবার মা চলে আসলো। মেয়েকে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেগে বলল-
-“ মাইর কতগুলো খাবি নাকি চুপচাপ যাবি কোনটা বল?
জবা রেগে তাকালো রোয়াতের দিকে। রুয়াত হাসছে। মা কে ভীষণ ভয় পায় জবা। এখন না গেলে সত্যি সত্যি রুয়াতের সামনে পিটানি দিবে। ট্রে টা হাতে নিয়ে চলে গেলো।

রুয়াত উঠানে চলে আসলো। রজনী দাঁড়িয়ে আছে বেলি গাছের নিচে। সাদমান বেলকনি থেকে দেখে চলছে রজনী কে। রুয়াত দেখলো সেসব। তাই সোজা চলে গেলো সাদমানের কাছে। দরজায় টোকা দিয়ে বলল-
-“ ভাইয়া আসবো?
সাদমান বেলকনি থেকে রুমে আসতে আসতে বলল-
-“ আরে রুয়াত যে আসো।
রুয়াত ভেতরে ঢুকলো।
-“ ফ্রী আছেন?
-“ হু কিছু বলবে?
-“ হ্যাঁ।
-“ বলো।
“ আপু কে কি সত্যি ভালোবাসেন?
-“ এতোদিনে কি কিছুই বুজো নি?
-“ অনেক কিছুই তো বুঝে নিয়েছি ভাইয়া। তবে একটা কথা বলতে চাই। পুরুষ মানুষ বিয়ে কেনো করে জানেন?
-“ অবশ্যই জানি। নিজের একাকিত্ব কে দূরে সরাতে। ভরসা বিশ্বাস যোগ্য একটা নিজের মানুষ পেতে। হাসি খুশি দূঃখ গুলো ভাগ করে নিতে। কিছুটা শারীরিক চাহিদা ও আছে সেটা করতে। সবার উর্ধ্বে সুন্দর একটা সংসার পাততে।
-“ হুমম বুঝলাম। আচ্ছা একটা পুরুষের কাছে সবচেয়ে সুখকর ডাক কোনটা?
সাদমান চোখ বুজে নিলো। ভেসে উঠলো ফুটফুটে তার আর রজনীর অংশ এক নরম তুলতুলে ছোট্ট মুখশ্রী।
-“ বাবা ডাক।
-“ সেটাই যদি কখনও শুনতে না পান তাহলে কেমন হবে?
সহসা চোখ মেলে তাকালো সাদমান।
-“ কেনো শুনবো না বাবা ডাক?
-“ খোলামেলা বলছি। আমার আপাই বাচ্চা জন্ম দিতে অক্ষম। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না এমন মেয়েকে সঙ্গী করতে? তাই বলে দিলাম। এবার যা করবেন ভেবে চিন্তে করবেন।
সাদমান রুমের জানালা দিয়ে তাকালো বেলি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা রজনীর দিকে। কি আশ্চর্য সব অপূর্ণতা কি এই মেয়েটা কে ঘিরেই পাঠিয়েছে উপরওয়ালা? আচ্ছা মেয়েটা এতো অপূর্ণতা কিভাবে বয়ে বেড়াচ্ছে? কষ্ট হয় না? অবশ্যই হয় এরজন্যই বুঝি মাঝে মাঝে নিজের এমন ক্ষতি করে বসে। বাচ্চা দিতে পারবে না। বিজ্ঞান তো অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো সলিউশন বের করবে তারা। আমেরিকা নিয়ে যাবে সে রজনী কে। সর্বোচ্চ চিকিৎসা করাবে। যদি ফেইল ও হয় তাহলে টেস্টটিউব পদ্ধতি অনুসরণ করবে। এই মর্ডান যুগে এসে জাস্ট বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না শুনে ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো ছেলে এই সাদমান না। বাহিরের দেশে বেড়ে উঠেছে পড়াশোনা করেছে।

-“ তোমার কি ধারণা রুয়াত। এটা শোনার পর আমার ভালোবাসা কে অস্বীকার করবো আমি?
-“ করতেও পারেন। যেখানে বিয়ের পর সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হওয়ায় নওফিল আপাকে ডিভোর্স দিয়ে সব কিছু অস্বীকার করেছিলো৷ সেখানে আপনি ও করবেন নিশ্চয়ই।
-“ আমি নওফিল না রুয়াত। আমি সাদমান। আর সাদমান রা জানে ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো অনুভূতি না। যারা করে তারা তো কখন ভালোই বাসে নি প্রকৃতপক্ষে। বিজ্ঞানের অনেক পদ্ধতি আছে বাচ্চা নেওয়ার আমরা সেটা অবলম্বন করবো। তা না হলে কোনো এতিমখানা থেকে বাচ্চা এডপ্ট করবো। তুমি জাস্ট তোমার বোন কে বুঝাও। আমার বাবা মায়ের কাছে এসব সমস্যা কোনো ম্যাটার করে না। উনার বাহিরের দেশে থেকে অভ্যস্ত সেখানে প্রতিনিয়ত এমন হচ্ছে। এসবের জন্য কখনও কেউ নিজ থেকে দায়ী থাকে না। আমার মা বুঝবে এটা।

-“ তারমানে আপনি সব জেনেও এগোতে চাইছেন?
সাদমান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
-“ হ্যাঁ। আই নিড রজনী। আমার আপত্তি না থাকলে নিশ্চয়ই উনার ও আপত্তি থাকার কথা না।
-“ আপনি আবেগে ভেসে এসব বলছেন ভাইয়া। দুটো দিন ভাবুন। সময় নিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানান। আসছি।

রুয়াত চলে গেলো। সাদমান ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। তার মোটেও নিজের জন্য চিন্তা হচ্ছে না। তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে বাচ্চা ছাড়াও কাটিয়ে দিতে পারবে রজনী কে পাশে পেলে। আচ্ছা রজনী পারবে না সাদমানের হাত টা ধরে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে? দুই টোনাটুনির সংসার পাতবে৷ স্বপ্নে দেখা সেই সংসার এর মতো।

#চলবে?

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২২ — প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত
#Raiha_Zubair_Ripti

গোধূলি বিকেল সূর্যর রশ্মির তেজস্বী কমে কোমলতা ছড়িয়েছে চতুর্দিকে। শাফায়াত এর ছোট চাচি মরিয়ম উঠানে বসে ছোট মেয়ে ময়নার মাথা থেকে উঁকুন আনছে। পাশেই বেলি ফুলের গাছের তলায় বসে দেখছে রজনী। মরিয়ম উঁকুন আনার সময় আড়চোখে একটু পর পর রজনী কে দেখছে। রজনীর চোখে পড়লো বিষয় টা। মরিয়ম বেগম হয়তো রজনীর সাথে কথা বলতে চাইছে। ইতস্তবোধ থেকে হয়তো বলতে পারছে না। সেজন্য রজনী নিজেই আগ বাড়িয়ে বলল-
-“ আপনার মেয়ে কিসে পড়াশোনা করে আন্টি?
মরিয়ম বেগম সাথে সাথে উত্তর দিলো-
-“ নাইনে পড়ে।
রজনী ময়না কে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কোন গ্রুপে পড়ো বাচ্চা?
ময়না রাগান্বিত হয়ে তাকালো। নাইনে পড়া মেয়েকে কেউ বাচ্চা বলে? রজনী হকচকিয়ে গেলো ময়নার এমন চাহনি দেখে।
-“ আমি বাচ্চা না আন্টি।
এই মেয়ের মা কে সে আন্টি বললো। আর এই মেয়ে তাকে পাল্টা আন্টি বলছে! রজনী মুচকি হেসেই বুঝানোর ছলে বলল-
-“ আপু হই আমি তোমার বাচ্চা মেয়ে।
ময়না মরিয়ম বেগম এর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে করতে বলল-
-“ আমাকে তাইলে বাচ্চা বলবেন না। আমি বাচ্চা না। ময়না কইবেন।
রজনী আচ্ছা বলল। রুয়াত কে নিচে নামতে দেখে বসা থেকে উঠে রুয়াতের কাছে চলে গেলো। সাদমান ও এসেছে পেছন পেছন। সাদমান একপলক রজনীর দিকে তাকিয়ে রুয়াত কে বলল-
-“ আসছি তাহলে রুয়াত।
রুয়াত মাথা কাত করলো। সাদমান চলে গেলো। রজনী সাদমান এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কোথায় যাচ্ছে?
রুয়াত বোনের হাত ধরে বাড়ির বাহিরে এসে বলে-
-“ বাজারে যাচ্ছে।
-“ কেনো?
-“ কারন আজ বারবিকিউ পার্টি হবে। সেজন্য যা যা লাগে সব আনতে গিয়েছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা।
-“ তুমি যাবা সাথে?
-“ না না থাক।
-“ ঘুরে আসো ভালো লাগবে। সাদমান ভাই আপু কে নিয়ে যান সাথে।

চিৎকার করে ডাকলো সাদমান কে। সাদমান ডাক শুনে পেছন ফিরলো। তারপর এগিয়ে আসলো। রুয়াত রজনী কে ঠেলে দিয়ে বলল-
-“ যাও আপু।
রজনী যাবে কি যাবে না দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো। সাদমান সেটা বুঝে বলল-
-” আসুন রজনী।
প্রথম সাদমান এর মুখ থেকে রজনী মিস সিনিয়র এর বদলে রজনী শুনছে। কেমন একটা হলো হৃদয়ে। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। সাদমান রজনীর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো। রুয়াত নির্নিমেষ চেয়ে থাকলো। যতক্ষন দৃষ্টি সীমার বাহিরে না চলে যায়। সীমার বাহিরে চলে যেতেই রুয়াত ভেতরে আসলো। সর্বপ্রথম চোখ গেলো জবা আর জবার মায়ের দিকে। জবেদা বেগম এর দিকে তাকিয়ে রুয়াত জানতে চাইলো-
-“ বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে ফুপি?
জবেদা খুশি মনে বলল-
-“ হ রুয়াত। সামনের মাসে বিয়া।
-“ ওহ্ হো দারুন সুখবর এটা। সেই খুশিতে আজ একটা ছোটখাটো আয়োজন তো করতেই হবে।
-“ তা তো করাই যায়। তা কও কি খাইবা। আমি রান্না করে দিব নিজ হাতে।
-“ আপনার ঝামেলা পোহাতে হবে না। সব ব্যবস্থা আমরাই করবো। সাদমান ভাই বাজারে গেছে।

কথাটা বলতে বলতে রুয়াতের চোখ যায় শাফায়াত এর দিকে। সে দু তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তারই দিকে। রুয়াত চোখ টিপ দিলো। শাফায়াত সেটা দেখে মুচকি হাসলো। জবা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে প্রস্থান করলো। রুয়াত সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। তারপর সোজা বেলকনিতে চলে আসলো যেখানে শাফায়াত দাঁড়িয়ে আছে। শাফায়াত পাশে রুয়াতের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে ভাবুক হয়ে বলল-
-“ বউ আজকাল একটু বেশিই রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে না?
রুয়াত হাসলো শাফায়াত এর কথা শুনে। শাফায়াত এর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এক হাত শাফায়াত এর বুকে রেখে বলে-
-“ দেখতে হবে না বউ টা কার? আফটার অল শাফায়াত ইমতিয়াজ নোয়াস এর বউ বলে কথা। তার বিপরীত তো হবোই।
-“ উমম কথাটা খুব একটা মন্দ না।
-“ জানেন এতো চেষ্টা করেও সফল হই না।
-“ কিসে?
-“ এই যে আপনাকে এতো ভাবি সিডিউস করার ট্রাই করছি কিন্তু আপনি এখনও ঠিক আছেন কি করে বলুন তো দেখি? তা এখন কি হুজুরের থেকে বশীকরণ শিখতে হবে? নাকি তাবিজ করা শিখবো কোনটা বলেন?
শাফায়াত রুয়াতের গাল টেনে বলে-
-“ খুব শখ বুঝি স্বামীর আদর পাওয়ার?
রুয়াত দাঁত বের করে হেঁসে টানা সুরে বলে-
-“ অননননননেক। ড্রিম তার আদর পাওয়া।
-“ লোকে এটা জানলে কি বলবে জানো?
-“ কি?
-“ জামাই পাগল মেয়ে।
-“ অবশ্যই আমি জামাই পাগল মেয়ে। জামাই ছাড়া জীবনে কি আছে বিয়ের পর আর?এখন আপনার ও উচিত বউ পাগল হওয়া।
শাফায়াত রুয়াতের কোমড় এক হাত দিয়ে জড়িয়ে কাছে টেনে একদম শরীরের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মুখ টা একদম রুয়াতের মুখের সামনে নিয়ে বলে-
-“ আজ রাতেই না হয় তোমার মনের বাসনা পূরণ করে দিব।
রুয়াত উৎফুল্ল হয়ে বলে-
-“ সত্যি?
-“ হু।
-“ তাহলে একটা চুমু খান আমার গালে।
শাফায়াত রুয়াতের কথামতো গালে চুমু খেতে নিবে এমন সময় জবা তার রুমের বেলকনি থেকে জোরে জোরে ডেকে উঠলো ময়না কে। শাফায়াত ঘাড় ঘুরালো। জবার দৃষ্টি তাদের দিকেই। রুয়াতের ইচ্ছে করলো জবা কে বেলকনি থেকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিতে। সে তার জামাই কে একটু রোমান্টিক হতে বলছে আর এই অসভ্য মেয়ে তাদের রোমান্টিকে পানি ঢেলে দিচ্ছে। রুয়াত শাফায়াত কে এখনও চুমু দিতে না দেখে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ চুমু টা কি ঐ বাড়ির বেলকনিতে থাকা ঐ চু’ন্নি মেয়েকে দিতে চান?
শাফায়াত রুয়াতের কন্ঠ শুনে বুঝে গেলো মেয়ে টা রেগে গেছে। তাই গালে চুমু খাওয়ার সাথে সাথে হাল্কা করে রুয়াতের ওষ্ঠেও নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো। তারপর বেলকনি থেকে রুমে আসতে আসতে বলে-
-“ তোমার দু’জন চোখের ইশারায় চুলোচুলি মারামারি করবে আর আমি সাহেব হয়ে দেখবো ওক্কে?
রুয়াত পাত্তা দিলো না কথাটা। সে রুমে ঢুকে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল-
-“ এটা চুমু হলো? এভাবে চুমু খায় কেউ?
-“ তাহলে কিভাবে খায়? শিখিয়ে দাও। শিখে নিচ্ছি নেক্সট টাইম সেভাবে খাবো।
-“ সেদিন রিসোর্টে যে খেলেন সেভাবে।
-“ অন্ধকারের জন্য ঠিক মনে নেই কিভাবে খেয়েছি। তোমার মনে থাকলে প্লিজ দেখিয়ে উপকার করো।

রুয়াত শাফায়াত এর দিকে তেড়ে আসলো। বসে থাকা শাফায়াত কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে তার উপর উঠে বসে বলে-
-“ একদম জা’নে মে’রে ফেলবো বলে রাখলাম। বুঝেন না কিছু? ইউ কিস মি রাইট নাউ।

শাফায়াত এর পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু পারছে না। এ কেমন বউ তার। সব মেয়ে লজ্জায় নুইয়ে যায়। আর এই মেয়ে থ্রেট দিয়ে আদায় করে সব। শাফায়াত রুয়াতের গালে দু হাত রেখে টেনে নিজের মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসলো। তারপর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ডুবিয়ে দিলো। রুয়াত ভেসে গেলো অনুভূতির জোয়ারে। স্বামীর ভালোবাসা মানেই তো এক স্বর্গীয় সুখ। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো অথচ শাফায়াত ছাড়ছে না। রুয়াতের এবার দম কেমন বন্ধ হয়ে আসলো। লোকটা ইচ্ছে করেই ছাড়ছে না রুয়াত ঢের বুঝে গেলো। রুয়াত এবার মুখ নিজ থেকে সরিয়ে আনতে চাইলে শাফায়াত সরিয়ে নিতে দেয় না। আরো চেপে ধরে ঠোঁট। ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে আসে রুয়াতের। রুয়াত ব্যথা সহ্য করতে না পেরে এবার শাফায়াত এর বুকে খামচি বসিয়ে দেয়। মুখ দিয়ে উমম শব্দ করছে যাতে শাফায়াত ছেড়ে দেয়। কিন্তু নাহ্ শাফায়াত এর ছাড়ার কোনো লক্ষণ রুয়াত দেখতে পাচ্ছে না। তাই এবার শাফায়াত এর মাথার চুল টেনে ধরলো। মিনিট কয়েক পর ছেড়ে দিলো শাফায়াত রুয়াত কে। রুয়াত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। চুমু খাওয়ার স্বাদ তার মিটে গেছে। ঠোঁট টা জ্বলে উঠায় তড়িঘড়ি করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে গেছে। সাইড দিয়ে র’ক্ত ও বের হচ্ছে। রুয়াত ঠোঁটে হাত দিয়ে রাগ কান্না দুটো একত্রে মিশিয়ে বলল-
-“ কি করলেন এটা? আমার ঠোঁট টা কে’টে দিলেন! অসভ্য পুরুষ। ইচ্ছে করে করেছেন এটা জানি তো। ইশ কি অবস্থা। এখন বাহিরে যাব কি করে?

শাফায়াত এলোমেলো করে দেওয়া মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে-
-“ ইডিয়ট এর মতে এতো নাড়াচাড়া করছিলে কেনো?
-“ সাধে নাড়াচাড়া করেছি? এতোক্ষণ কেউ ধরে রাখে?
-“ তোমার না সহ্য ক্ষমতা অনেক। সেদিনই না বললা। এই সেই সহ্য ক্ষমতা? সামান্য ঠোঁটে পাওয়া ব্যথাই সহ্য করতে না পেরে কেঁদে দেওয়ার অবস্থা। আর সে কি না আস্ত আমি টাকে সামলাবে!
-“ আবার ওটাকে টানছেন কেনো?
-“ কারন ওটা এর চাইতেও কষ্টকর।

রুয়াত টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে শাফায়াত এর দিকে ছুঁড়ে মারে। শাফায়াত ক্যাচ করে ধরে নেয়। তারপর হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

শাফায়াত চিরুনি টা জায়গা মতো রেখে দেয়।

সাদমান আর রজনী উঠেছে রিকশায়। রিকশা চলছে, রজনী গ্রামের এই সুন্দর প্রকৃতি কে চোখ ভরে দেখছে। আর সাদমান চোখ ভরে দেখছে রজনী কে।

সে পারবে। হ্যাঁ পারবে বাবা ডাক না শুনেও এই মেয়েটা কে নিয়ে বাকি জীবন এক সাথে পাড় করতে। তবে একার চাওয়ায় তো আর সেটা সম্ভব না। তার জন্য রজনী কেউ রাজি করাতে হবে।

-“ রজনী শুনুন।
রজনী তাকালো।
-“ হু বলুন।
-“ জীবন কে কি দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া যায়?
-“ হয়তো যায়।
-“ তো আপনার জীবনে সেই দ্বিতীয় সুযোগ আসলে দিবেন না?
-“ ভেবে দেখি নি তো কোনোদিন।
-“ আপনাকে যে সেদিন বললাম ভাবতে। ভাবেন নি কেনো? আর কত অপেক্ষা করবো?
-“ আপনি আমার পেছনেই কেনো পড়ে আছেন সাদমান? পৃথিবীতে অনেক মেয়ে আছে। তাদের কাউকে কেনো পছন্দ করলেন না?
-“ উমম গুড কুয়েশ্চন। কাউকে মনের মতে লাগে নি। আর না কাউকে দেখে মনে ফিলি হয়েছে।
-“ আমিই কি তাহলে প্রথম?
-“ স্কুলে থাকা কালীন রিলেশন করেছি। যা প্রায় সকলেই করে থাকে। তবে বিয়ে শাদি করা নিয়ে আপনাকেই নিয়েই ভেবেছি।
-“ প্লেবয় ছিলেন?
-“ না। আমাকে দেখে মনে হয় আমি প্লে বয়?
-“ সেভাবে খুঁটিয়ে কখনও দেখি নি।
-“ দেখেন না কেনো? আজ থেকে আমাকে খুঁটিয়ে দেখবেন। আমাকে নিয়ে একটু ভাববেন কেমন? ট্রাস্ট মি আপনাকে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ দিবো না। আপনার হৃদয়ে জাস্ট একবার আমার প্রবেশপথ তৈরি করে দিন।

রজনী চুপ রইলো। একসময় তো নওফিল ও তো এমন কিছুই বলেছিলো। কই সে তো পারলো না তার কথা রাখতে। মাঝপথে ভেঙেচুরে যাওয়া রজনী কে একা ফেলে চলে গিয়েছিল। তার প্রতি জমে থাকা অভিযোগ, রাগ, ঘৃণা সব মিলিয়ে হিমালয়ের সেই পর্বত কেউ পিছু ফেলে দিবে।
পুরুষ মানুষ আজকাল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সেখানে অল্প দিনের চেনা এই ছেলেকে কি করে বিশ্বাস করবে সে? যখন জানতে পারবে সে সন্তান দিতে অক্ষম তখন নিশ্চয়ই তার ভালোবাসা ভালো লাগা এক মূহুর্তে উবে যাবে কর্পূরের মতো। ঠকে যাওয়া নারী রা খুব সহজে দ্বিতীয় বার কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই রজনী কোনো জবাব দিলো না। রিকশা থামতেই পাশ ফিরে দেখলো বাজারে এসে গেছ তারা। তাই রিকশা থেকে নামতে নামতে বলল-
-“ এটাই বোধহয় বাজার।

সাদমান অধীর আগ্রহে ছিলো রজনী থেকে কিছু একটা উত্তর পাওয়ার। অথচ রজনী এভয়ড করে গেলো। সাদমান ভাঙা হৃদয় নিয়েই রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে রজনী কে নিয়ে বাজারের ভেতরে ঢুকলো। প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুলো কিনে ফুচকার স্টল দেখেই সাদমান জিজ্ঞেস করলো রজনী কে ফুচকা খাবে কি না। সব মেয়েই তো পছন্দ করে এসব খাবার। অথচ রজনী না করলো। তার ফুচকা পছন্দ না। সাদমান ফের জিজ্ঞেস করলো-
-“ তাহলে ভেলপুরি?
এবার রজনী রাজি হলো। সাদমান দোকানদার কে এক প্লেট ভেলপুরি দিতে বললো। দোকানদার এক প্লেট ভেলপুরি রজনীর হাতে ধরিয়ে দিলো। রজনী প্লেট টা হাতে নিয়ে মুখে তুলে নিতেই হাতে থাকা ফোন টা বেজে উঠলো। সাদমান হাত বাড়িয়ে দিলো প্লেট টা ধরার জন্য। রজনী প্লেট টা সামানের হাতে তুলে দিলো। তারপর ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ ডক্টর উমর বলুন।

উমর নাম টা শুনেই সাদমানের কপালে আপনা-আপনি দু ভাজ পড়লো। ওপাশ থেকে কি বললে শোনা যাচ্ছে না তবে রজনী বলল-
-“ আমি তো এখন গ্রামে। কবে ফিরবো তা তো জানি না। তবে হয়তো ২৭ তারিখের আগেই ফিরবো। যদি ফিরতে পারি তাহলে অবশ্যই আসবো।…..

ওপায় থেকে কিছু বলল উমর। রজনী রিপ্লাই দিলো-
-“ আমিও মিস করতেছি। খুব শীগ্রই দেখা হবে।

রজনী ফোন কেটে দিলো। সাদমান এর হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। সাদমান আকাশকুসুম ভাবতে লাগলো।

খাওয়া শেষে বিল মিটিয়ে চলে আসলো। সন্ধ্যা হতেই ছাঁদে ফের পাটি বিছিয়ে বসলো সকলে। পাশেই বারবিকিউ তে মাংস বসানো। নাইমুর রান্নার কাজে। সে বেশ ভালো রান্না করতে পারে। রান্না নিয়ে সানজিদার কোনো প্যারা নেই। সামনেই ছোট্ট টেবিলের উপর নানান রকমের জুশের বোতলের বাহার। জবার উপস্থিতি একটু ভালো লাগছে না রুয়াতের। তবুও দাঁত চেপে সহ্য করছে। সাদমান জুশ,কোল্ড ড্রিংকস এর সাথে মহুয়া ও এনেছে। সেটা টেবিলের তলায় লুকিয়ে রেখেছে। কারন এগুলো তারা ছেলেরা খাবে। বারবিকিউ টা সম্পূর্ণ হতেই নাইমুর নিজেই সবাই কে সার্ভ করে দিলো। সাথে এক এক গ্লাস করে সবাইকে জুশ কোল্ড ড্রিংকস দিচ্ছে। রুয়াত মাংসের চাইতে বেশি কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছে বেশি। তাই অলরেডি ড্রিংস তার শেষের পথে। ময়না আর রুনার খাওয়া সবার আগে শেষ। তারা আরো জুশ,কোল্ড ড্রিংকস খাবে। শাফায়াত তাই বললো টেবিলের উপর রাখা আছে নিয়ে নিতে। ময়না রুনা টেবিলের কাছে এসে দেখে জাস্ট একটা বোতল টেবিলের উপর। সেজন্য রুনা ময়না ঐ বোতল পুরো টাই নিয়ে চলে যায়। সাদমান আগেভাগে খেয়ে একটা মহুয়ার বোতল নিয়ে সাইডে চলে এসেছে খেতে। হটাৎ পকেটে থাকা ফোন আসায় ফোন কল টা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপর পাশের ব্যক্তির কোনো কথা বুঝতে পারে না। নেটওয়ার্ক সমস্যা। তাই বোতল টা টেবিলের উপর রেখে অন্য পাশে চলে গেলো।

এদিকে রুয়াতের ও ড্রিংকস ফুরিয়ে এসেছে। তাই ড্রিংকস নেওয়ার জন্য বসা থেকে উঠে টেবিলের কাছে আসতেই দেখে টেবিলে একটা বোতল আছে। সেজন্য সেই বোতল টা কাত করে গ্লাসে ঢেলে নিলো কোল্ড ড্রিংকস ভেবে মহুয়া। মুখে নিতেই অদ্ভুত এক টেস্ট পেলো রুয়াত। কিন্তু খাওয়ার পর ভালোই লাগলো। সেজন্য বোতলে যেটুকু আছে সব টুকু খেয়ে নিলো। তারপর নিজের জায়গায় এসে বসলো। সাদমান ফোনে কথা বলে ফের টেবিলের সামনে এসে মহুয়ার বোতল নিতে আসলে দেখে বোতল নেই। সাইডে মৃদুল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলো মৃদুল খেয়ে নিয়েছে। তাই সেখান থেকে চলে এসে পাটির উপর এসে বসলো। সবাই গল্প গুজবে মেতে উঠলো। প্রথম দিকে রুয়াত মেতে উঠলেও এখন রুয়াতের কেমন যেনো লাগছে। চোখ ঝিমিয়ে আসতেছে। সবাই গল্প করছে অথচ তার অদ্ভুত রকম লাগছে নিজেকে। শাফায়াত এর হাত টেনে রুয়াত তার কাঁধে মাথা রাখলো। শাফায়াত জিজ্ঞেস করলো-
-“ খারাপ লাগছে?
রুয়াত উপর নিচ মাথা ঝাকালো।
-“ রুমে যাবে?
-“ হু।

শাফায়াত রুয়াতকে বসা থেকে উঠিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে-
-“ রুয়াতের ভালো লাগছে না। তোরা গল্প কর আমরা আসছি।
সাদমান বলে উঠলো-
-“ ব্রো পরে কিন্তু এসো। এনেছি খাবা না?
শাফায়াত না বলে চলে গেলো রুয়াত কে নিয়ে। রুমে এসে রুয়াত কে বিছানায় বসিয়ে দেয়। রুয়াতের শরীর কেমন মনে হচ্ছে জ্বালা করছে। গরম লাগছে ভীষণ। বিরক্ত নিয়েই বলল-
-“ উফ এতো গরম ক্যান? ফ্যান ছাড়েন।
শাফায়াত তাকালো ফ্যানের দিকে। ফ্যান তো চলছেই। আর আজ তো যথেষ্ট বাতাস বাহিরে। তবুও রুয়াত এতো ঘামছে কেনো? রুয়াতের সহ্য হচ্ছে না গরম। শাড়ির সেফটিপিন খুলতে গিয়ে আরেক জ্বালা অনুভব করলো। সেফটিপিন খুলতে পারছে না। রুয়াত মাথা ঝাকিয়ে শাফায়াত কে ডেকে বলল-
-“ সেফটিপিন টা খুলে দেন না। আমার গরম লাগতেছে। আমি শাড়ি খুলবো।
শাফায়াত এগিয়ে আসলো। সেফটিপিন টা খুলে দিলো। রুয়াত একটানে শরীর থেকে শাড়ি টা খুলে ফেললো। তারপর ব্লাউজের হুক খুলতে নিলে শাফায়াত বলে উঠে –
-“ ব্লাউজ খুলছো কেনো?
রুয়াত রেগে বলল-
-“ দেখছেন না আমার গরম লাগছে। আমি ব্লাউজ খুলবো। একটু খুলে দিন না।
-“ ব্লাউজ খুলতে হবে না। ফ্যান তো ছাড়াই। এতো গরম কেনো লাগছে তোমার?
-“ জানি না শরীর চুলকাচ্ছে, জ্বলছে৷
-“ তাহলে গোসল করে আসো। ভালো লাগবে।
রুয়াত ওয়াশরুমে চলে গেলো। দরজা বন্ধ করে গোসল করে নিলো। গোসল শেষে জামা পড়ার জন্য পাশে তাকাতেই দেখে সে পোষাক নিয়ে আসে নি। রুয়াত দরজা খুলে শাফায়াত এর কাছে জামা চাইলো। শাফায়াত সোফায় বসে ছিলো। রুয়াতের কতাগুলো শুনে আলমারি থেকে এক সেট জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমের সামনে এসেই শাফায়াত এর চোখ গেলো আটকে রুয়াতের মাঝে। ভেজা শরীর পড়নে শুধু একটা পেটিকোট আর ইনার। শাফায়াত ঢোক গিললো। দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে বাড়িয়ে দিলো পোষাক। রুয়াত পোষাক টা নিয়েই দরজার সিটকানি না লাগিয়ে জাস্ট চাপিয়ে দিয়ে পোষাক বদলে নিলো। তারপর ভেজা চুলেই বেরিয়ে আসলো।
শাফায়াত এখনও একটা ঘোরের মধ্যে। রুয়াত কে ঐ অবস্থায় দেখে মাথা ক্ষনিকের জন্য হ্যাঙ হয়ে গিয়েছিলো। রুয়াত এলোমেলো পায়ে সোফার কাছে চলে গেলো। যেখানে শাফায়াত ভাবুক হয়ে বসে আছে। শাফায়াত এর কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো। ভেজা চুলের পানি শাফায়াত এর মুখ শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে। রুয়াত শাফায়াত এর গলায় ছোট্ট ছোট্ট চুমু খেলো। শাফায়াত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। কেমন কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যাচ্ছে সে। রুয়াত শাফায়াত এর শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে নিলে শাফায়াত বাঁধা দেয়। রুয়াত রাগী চোখে তাকায়। শাফায়াত এর হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে আবার গলা জড়িয়ে নেশালো গলায় বলে-
-“ আর কত অপেক্ষা করাবেন আমায়? আমার ভালো লাগছে না এতো অপেক্ষা। কাছে নেন না কেনো?
শাফায়াত কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার নিজের শরীরের অবস্থা ও তার কাছে ভালো লাগছে না। মেয়েটা তাকে নাজেহাল করেই ছাড়বে। তাই কথা টাকে এড়িয়ে বলল-

-“ এখন ভালো লাগছে?
-“ হু। আমার ঐ ড্রিংকস টা আরো খেতে ইচ্ছে করছে। এনে দিবেন? অনেক টেস্ট ওটার।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিসের ড্রিংকস?
-“ ঐ যে টেবিলের সামনে যেটা ছিলো ওটা।
-“ তুমি কি মহুয়া খেয়েছো রুয়াত? বিস্ফোরিত হয়ে বলল শাফায়াত।
-“ জানি না ওটার নাম কি। এনে দিবেন আরেক বোতল?
শাফায়াত মনে মনে সাদমান কে গালি দিতে ভুললো না। বেয়াদব ছেলে ওটা টেবিলের উপর রাখলো কখন। এ মেয়ে তো সারা রাত টা জ্বালিয়ে ছাড়বে শাফায়াত কে। এটার নেশা আরো বেড়ে যাবে। তখন কি করে সামলাবে?

#চলবে?