#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪১
#Raiha_Zubair_Ripti
মেঘলা দিন..আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা। সাথে তুমুল বাতাস। সাদমান রজনী কে নিয়ে এসেছে রজনীর আমেরিকার সকল ভিসা পাসপোর্ট বানাতে। খুব একটা বেশি সময় লাগবে না হাতে পেতে। বাহিরে বাতাস দেখে সাদমান রজনী কে নিয়ে একটা ক্যাফে তে আসলো সকল কাজ কমপ্লিট করে। ক্যাফে টা বেশ সুন্দর। ক্যাফের ঠিক পাশেই আছে একটা পুকুর। পুকুরের উপর দিয়ে একটা কাঠের ব্রীজ। রজনী জানালার পাশে বসলো। সাদমান দুটো কফি অর্ডার দিলো। রজনী মুগ্ধ হয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেলো৷ রজনী সাদমান কফি টা খেয়ে চলে আসলো বাসায়।
রুয়াত ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। শাফায়াত পাশেই ল্যাপটপে কাজ করছে। সাদমান রজনী কে বাসার ভেতর ঢুকতে দেখে রুয়াত সেদিকে তাকালো। এক গাল হেসে বলল-
-“ হয়ে গেছে সব কাজ?
রজনী সোফায় বসতে বসতে বলল-
-“ হু। এখন শরীর কেমন?
শাফায়াত ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে বলল-
-“ ভালো না। একটু আগেই বুমি করে ভাসিয়ে ফেলছিল ফ্লোর।
-“ ডক্টর দেখানো উচিত।
-“ হু কাল যাব। অ্যাপয়েন্ট নিয়ে রেখেছি।
সাদমান রজনী রুমে চলে গেলো পোশাক বদলাতে। রজনী পোশাক বদলে এসে রাতের রান্না করতে রান্না ঘরে আসলো। রুয়াত আসলে রুয়াত কে পাঠিয়ে দেয়। রুয়াত ফের সোফায় এসে বসে।রজনী ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে ধুয়ে সেটা ভাজতে শুরু করে। মাছ ভাজার ঝাঁজ রুয়াতের নাকে আসলে পেট মোচড় দিয়ে উঠে। দু হাত দিয়ে মুখ চেপে ওয়াক করে উঠে। শাফায়াত তাকায় রুয়াতের দিকে। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি হয়েছে?
রুয়াত উঠে দৌড়ে বেসিনে গিয়ে গড়গড় করে বুমি করে দেয়। শাফায়াতের এবার সত্যি ভয় হতে থাকে। বসা থেকে উঠে রুয়াতের পাশে দাঁড়ায়। রুয়াত বুমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে রুমে আসে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পারিবারিক ডক্টর কে ফোন করে। ডক্টর আসছে বলে জানায়।
মিনিট বিশেকের মধ্যে ডক্টর আসে। ডক্টর কে আসতে দেখে রজনী ও উপরে চলে আসে। ডক্টর রুয়াতের হাত চেক করে। কিছু একটা সন্দেহ করে। তারপর বুমি কমার জন্য মেডিসিন দেয়। শাফায়াত কে সাইডে টেনে নিয়ে যায়। শাফায়াত একটু ঘাবড়ে যায় সাইডে ডেকে নেওয়ায়।
-“ ডক্টর সব ঠিক আছে তো?
-“ আরেহ্ ঘাবড়াচ্ছ কেনো? ঘাবড়িয়ো না। কাল বরং একটু হসপিটালে গিয়ে চেক-আপ করিয়ে এনো। আর পারলে আজ একটা প্রেগ্ন্যাসির কিট এনে রুয়াত কে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিও।
-“ প্রেগ্ন্যাসির কিট কেনো? হুট করে কথাটা বলে নিজেই বেকুব হয়ে যায় শাফায়াত। কথাটার মানে বুঝে উঠতেই চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
ডক্টর চলে যায়। শাফায়াত ফার্মেসী তে আসে কিট নিতে। তারপর বাসায় চলে আসে। শাফায়াত এর জানামতে এই কিট টেস্ট করতে হয় সকালে। তাই রাতে এ ব্যপারে রুয়াত কে কিছুই বললো না। সকাল হলে হাতে দিয়ে টেস্ট করতে বলবে। আজ রাত টা শাফায়াত এর যুদ্ধ করে পাড় করতে হবে।
রোহান নেহাল গিয়েছে কুমিল্লা আজ দুদিন হলো। নীতি নিজেকে আগের থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। খুব একটা কথা বলে না প্রয়োজন ছাড়া। বিষয় টা বেশ ভাবাচ্ছে সাইফুল ইসলাম কে। মেয়ে তার বেশ বদলে গেছে হুট করে। তাই নীতি কে আলগোছে ডাক দিয়ে পাশে বসালো। মাথায় হাত রেখে বলল-
-“ নীতি কিছু হয়েছে মা?
নীতি বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ না আব্বু। কি হবে? কিছু হয় নি।
-“ চুপচাপ যে? শরীর ঠিক আছে?
-“ হু ঠিক আছে। চিন্তা করো না। আসলে ভার্সিটিতে পড়ার খুব চাপ তো সেজন্য আর কি এমন দেখাচ্ছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা। তোমার কি প্লাবনের কথা মনে আছে?
-“ কোন প্লাবন?
-“ পাভেলের ছেলে।
-“ হ্যাঁ মনে পড়েছে।
-“ প্লাবন কে কেমন লাগে তোমার?
-“ বেশ ভালোই তো দেখেছিলাম।
-“ তারা আজ রাতে আসবে তোমাকে দেখতে। তোমার অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু হবে না। তুমি রাজি থাকলেই বিয়ের দিকে আগাবো। দেখতে আসলে তো আপত্তি নেই তাই না?
নীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
-“ তুমি যা ভালো বুঝ করো।
নীতি রুমে চলে আসলো। নীতির মা নীতি কে একটু পরিপাটি হয়ে থাকতে বলল। সন্ধ্যার দিকে চলে আসলো পাভেল তার ছেলে কে নিয়ে। প্লাবন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আর্থিক অবস্থা তাদের বেশ ভালো। নীতি কে নিয়ে আসলো নীতির মা। প্লাবনের পছন্দ আগে থেকেই নীতি কে। নীতি ও দেখলো প্লাবন কে। যথেষ্ট সুদর্শন প্লাবন। সাইফুল ইসলাম জিজ্ঞেস করলো মেয়েকে বিয়েতে আপত্তি আছে কি না?
নীতি অগোচরে বিষাদে ভরা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। চোক বন্ধ করে একবার রোহান কে কল্পনা করে বলল-
-“ আপত্তি নেই।
সাইফুল ইসলাম বিয়ের দিকে আগালো। নীতি কে রুমে নিয়ে গেলো নীতির মা। নীতি রুমে এসে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আহ্ বুকটায় খুব ব্যথা হচ্ছে। রাত নয়টার দিকে প্লাবন রা চলে গেলো। সাইফুল ইসলাম নেহাল কে ফোন করে এ বিয়ের বিষয় টা বলল।
রোহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। নেহাল কে খুশি হতে দেখে বলল-
-“ এতো খুশি যে..ব্যপার কি?
-“ বাসায় বিয়ের তোড়জোড় চলছে খুশি হবো না?
রোহান ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কার বিয়ের?
-“ আমার বোন নীতির।
রোহান চমকিত হলো।
-“ নীতির! কার সাথে?
-“ প্লাবনের সাথে।
-“ নীতি রাজি?
-“ হু৷ ও রাজি না থাকলে এতদূর আগাতো নাকি?
রোহান পেছন ফিরলো। এজন্য ই বুঝি নীতি রোহানের ফোন ধরছিল না! কতবার ফোন করলো মেয়েটাকে, টেক্সট দিলো। আসার পথে দেখাও করতে চাইলো কিন্তু কোনো কিছুই হয়ে উঠলে না। ভালোবাসা কি গায়েব হয়ে গেলো তাহলে? রোহান পকেট থেকে ফোন বের করে নীতির নম্বরে কল লাগায়। নেহাল রোহানকে কাউকে ফোন করতে দেখে বলল-
-“ কাকে ফোন করছিস?
-“ তোর বোন কে।
-“ কেনো?
-“ কেনো তুই জানিস না? নীতি কি করে পারে হ্যাঁ করে দিতে বিয়ে তে?
-“ তো কি করবে। তোর পেছন পড়ে থাকবে? দেখ একদম নীতি কে ফোন করবি না। আমার বোন কে এখন ভালো থাকতে দে। কোনো ঝামেলা বাঁধাবি না।
রোহানের ফোন টা কেঁড়ে নিলো নেহাল। এতেই রোহান রেগে উঠলো। নেহালের কলার ধরে বলল-
-“ আই নিড নীতি এট অ্যানি কস্ট। বিয়ে ঠিক হয়েছে। হয়ে যায় নি। বিয়েটা ভাঙতে আমার পাঁচ সেকেন্ড ও লাগবে না।
কথাটা বলে রোহান চলে যেতে নিলে নেহাল পেছন থেকে বলে উঠে-
-“ আমার বোন কে তোর দরকার কেনো? ভালো তো বাসিস না। ভালো তো বাসিস ঐ রুয়া…
রোহান রক্ত চোখে তাকালো। বলল-
-“ ঐ নাম টা মুখে নিবি না। আর ফারদার রুয়াত কে সব বিষয়ে টানবি না।
-“ বিষয় টা যখন আমার বোনের তখন আমি টানবোই।
-“ রুয়াতের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? রুয়াত অন্য এক পুরুষের স্ত্রী। তাকে কেনো টানছিস? আর নীতি কে আমার চাই মানে চাই। বারবার মানুষ কেনো আমি হারাবো? এবার হারাতে রাজি নই। এবার ছিনিয়ে হলেও আমি আমার করে ছাড়বো।
-“ ভালোবাসিস?
-“ তোকে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। বা’লের প্যাচাল পেড়ে আমার সময় নষ্ট করিস না।
-“ যাচ্ছিস কোথায়?
-“ তোর বোনের কাছে।
-“ এতো রাতে! সকালে যাস।
-“ তুই যাস সকালে আর বকবক করে মাথা খাস না। আসছি।
রোহান এই রাতেই ড্রাইভ করে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসে। প্রায় চারটা বেজে যায়। রোহান সোজা কলিংবেল চেপে বসে নীতি দের বাড়ির। এতো রাতে হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ শুনে চমকায় নীতি। নীতি জেগে ছিল পড়ার টেবিলে। ক্রমাগত কলিংবেলের আওয়াজে রুমে থেকে বেরিয়ে আসলো। দরজা না খুলে রেগে বলল-
-“ এই কে রে অসভ্যের মতন বেল চাপছেন?
রোহান দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠল-
-“ তোর জামাই। এবার দরজা খোক।
নীতি ভরকে গেলো রোহানের গলার আওয়াজ শুনে। এতো রাতপ রোহান তাদের বাসায়! সম্ভব কি করে? ওরা তো কুমিল্লা। নীতি ড্রয়িং রুমের লাইট জ্বালালো। আস্তে আস্তে দরজা খুলে দেখলো রোহান দেওয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রেহান নীতি কে টোটালি ইগনোর করে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে বলল-
-“ তোর বাপ কে ডাক কথা আছে।
সাইফুল ইসলাম কলিংবেলের আওয়াজে বাহিরে এসে দেখে রোহান কে। ভ্রু কুঁচকে আসে।
-“ এই তুই এতো রাতে এ বাসায় কেনো? তোরা না কুমিল্লায় গেছিস?
-“ হু গেছিলাম। এখন চলে আসছি। বসুন তো আপনার সাথে হিসেব নিকাশ আছে।
-“ কিসের?
-“ বসুন তো আগে।
সাইফুল ইসলাম বসলেন।
-“ বল।
-“ আপনার মেয়ের বলে বিয়ে ঠিক করছেন শুনলাম?
-“ হু।
-“ কেনো ঠিক করছেন?
-“ আশ্চর্য মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিব না আমি?
-“ হু দিবেন বাট ছেলে প্লাবন কেনো?
-“ কারন ওকেই আমার মেয়ে পছন্দ করেছে সেজন্য।
-“ আপনার মেয়ে তো আমাকেও পছন্দ করে। তো আমার সাথে কেনো ঠিক করলেন না?
সাইফুল ইসলাম মেয়ের দিকে তাকালেন। নীতি মুখ শক্ত করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সাইফুল ইসলাম জিজ্ঞেস করলেনন-
-“ সত্যি তুই রোহান কে পছন্দ করিস নীতি?
রোহানের মুখে হাসি ফুটলো। তার ধারনা নীতি বলবে তাকে তার পছন্দ আর ভালোও বাসে। কিন্তু
নীতি শক্ত মুখেই জবাব দিলো-
-“ করতাম বাবা একটা সময়ে। তবে এখন আর করি না।
রোহানের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। অবিশ্বাসের চোখে তাকালো।
-“ এখন করিস না মানে কি?
-“ মানে টানে কিছু নেই রোহান ভাই। আমি আপনাকে পছন্দ করি না। আপনি প্লিজ আমার বিয়েতে কোনো সিনক্রিয়েট করবেন না।
-“ মিথ্যা বলছিস তুই নীতি।
-“ আমার চোখের দিকে তাকান। দেখুন সেই আগের অনুভূতি গুলো কি আছে? আছে সেই ভালোবাসা ভালো লাগা? নেই তাই তো?
রোহানের আজ এই চোখ দুটে ভীষণ অচেনা লাগলো। হুট করে কি হয়ে গেলো যে নীতি এমন করছে?
-“ বিশ্বাস করি না তোর এই চোখ কে। আমি জানি এখনও তুই আমাকেই ভালোবাসিস। প্লিজ অভিনয় করা বন্ধ কর। তোর বাবা কে বলে দে তুই আমাকে পছন্দ করিস।
-“ না রোহান ভাই। আমি আপনাকে পছন্দ করি না। আমার আবেগ ছিলো ওটা। যা চলে গেছ। এখন আর নেই। আব্বু তুমি উনাকে চলে যেতে বলো। আমি আমার বিয়েতে কোনো গণ্ডগোল চাই না।
নীতি রুমে চলে আসলো।রোহান সাইফুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল –
-“ আপনার মেয়ে মিথ্যা বলতেছে স্যার। আমি কিন্তু বিয়ে টা হতে দিব না স্যার। আই নিড ইউর ডটার। আই রিয়েলি ব্যাডলি নিড হার। বুঝতে পারছেন আমার কথাটা? আমি কিন্তু সব উলোটপালোট করে ফেলবো। মেয়েকে বুঝান।
রোহান রেগে চলে আসলো। নীতি রুমে এসে কান্না করে দিলো। সে আর এই ছেলের মায়ায় পড়বে না। এই ছেলে কে ভালোবাসলে শুধু কষ্টই পেতে হয়।
নীতির মা রুমের বাহিরে ছিলেন। মেয়েকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতে দেখে রুমে আসলেন। মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই নীতি মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। এলোমেলো কন্ঠে বলল-
-“ আচ্ছা যে কোনো দিনও আমাদের হবে না,আমরা কেন শুধু তাদেরকেই ভালোবেসে যাই মা? মানুষ ছাড়াও তো নিজেকে নিয়ে সুন্দর ভাবে বাঁচা যায় অথচ আমরা নিজেদের কেই হারিয়ে মানুষ খুঁজি।
-“ রোহান কে চাইলেই তুই পাবি নীতি। আজ দেখলাম রোহানের চোখ মুখে অসহায়তা। তোকে হারানোর ভয়ে মুখে যা এসেছে সব বলে ফেলছে। একটা সিদ্ধান্ত.. যার উপর তোর সব কিছু নির্ভর করে আছে। রাগে জিদে এমন হুটহাট ডিভিশন খুবই বিপর্যয়কর। সময় আছে এখনো ভাব। সব মানুষ ভুল মানুষকে ভালোবাসে না। সঠিক মানুষকেও ভালোবাসে মানুষ।
—————–
সারা রাত টা হাসফাস করেই কাটিয়েছে শাফায়াত। রুয়াতের আগেই সে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বিছানায় বসে অপেক্ষা করে রুয়াতের ঘুম ভাঙার। রুয়াত ঘুম থেকে উঠে শাফায়াত কে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। চুলগুলো হাত খোপা করে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য ওা বাড়ালে পেছন থেকে শাফায়াত ডেকে বলে-
-“ রুয়াত শুনো।
রুয়াত পেছন ফিরে। শাফায়াত প্রেগন্যান্সির কিট টা রুয়াতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
-“ টেস্ট করে দেখো তো।
রুয়াত কিট টার দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎ ক্ষন। অবিশ্বাস্য লাগছে কিছুটা। তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে টেস্ট করিয়ে নিলো। শাফায়াত বাহিরে পায়চারি করতে লাগলো। রুয়াত কে এতো টাইম নিতে দেখে বলল-
-“ আর কতক্ষণ লাগবে রুয়াত? বের তো হও।
রুয়াত কিট টা নিয়ে বের হলো। শাফায়াত এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ আমার পেট, আমার শরীর,আমার বাচ্চা। আমি বুঝলাম না আপনি কি করে বুঝলেন?
শাফায়াত কিট টার দিকে তাকায়। স্পষ্ট দুটো লাল দাগ দেখাচ্ছে পজিটিভ। তারমানে রুয়াত প্রেগন্যান্ট! শাফায়াত কিট টা টেবিলে রেখে আগে রুয়াত কে জড়িয়ে ধরলো৷ কপালে, গালে অসংখ্য চুমু দিয়ে বলল-
-” আমরা বাবা মা হতে চলছি রুয়াত ভাবতে পারছো! গুটিগুটি পায়ে একটা বাচ্চা আমাদের বাড়িতে টইটই করে ঘুরে বেড়াবে। আদো আদো গলায় বাবা মা বলে ডাকবে।
রুয়াত বিষয় টা কল্পনা করে মুচকি হাসলো। কেমন চোখ জোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসছে। আলতো করে পেটের উপর হাত রাখলো। এই খান টায় আছে তাদের দুজনের অংশ। খুশি খুশি লাগছে। জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা নেই তাহলে!
#চলবে?
#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪২
#Raiha_Zubair_Ripti
সারা বাড়ি জুড়ে মিষ্টির সমাহার। রুয়াত কে সামনে বসিয়ে একের পর একজন মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। রুয়াত পারছে না তো এখনই উল্টি দিয়ে সব বের করে দিত৷ রুয়াতের মা মিষ্টি তুলে খাইয়ে দিতে চাইলে রুয়াত পাশে থাকা শাফায়াত এর হাত খামচে ধরে অসহায় চোখে তাকায়। ইশারায় বুঝায়- আপনার জন্য এসব সহ্য করতে হচ্ছে আমায়।
শাফায়াত ইশারায় লাস্ট মিষ্টি টা মুখে তুলে নিতে বলে। রুয়াত নিঃশ্বাস বন্ধ করে মিষ্টি মুখে তুলে নেয়। তারপর আর এক মুহূর্ত ও বসে থাকে না৷ হন্তদন্ত হয়ে রুমে চলে আসে। শাফায়াত ও রুয়াতের পেছন পেছন চলে আসে। রুমের ভেতর ঢুকে দেখে রুয়াত শরীরের ওড়না ফেলে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে। শাফায়াত পাশে বসে বলল-
-“ খারাপ লাগছে এখনও?
রুয়াত কিছু বললো না। শাফায়াত রুয়াতের মাথয় হাত বুলিয়ে দিলো। রুয়াত বালিশ থেকে মাথা তুলে শাফায়াতের কোলে রাখলো। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-
-“ ফাস্ট টাইম আজ এতো মিষ্টি খেলাম। ফিলিংস টা ভীষণ বাজে লাগছে।
-“ কত বড় খুশির খবর বলো৷ মিষ্টি মুখ করাবে না?
-“ আপনাকে করাতো৷ আপনি তো বাবা।
-“ বাচ্চা টা বুঝি আমার পেটে আছে?
-“ না আমার পেটে। কিন্তু তাতে কি? বাবা হন তো আপনি। আর আমি আপনি তো একই আত্মা এক প্রাণ। তাই না?
শাফায়াত রুয়াতের গাল টেনে বলল-
-“ হু। তোমার না শরীর খারাপ লাগছে? চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
রুয়াত ভালো করে শুয়ে বলল-
-“ বাবুর জন্যই এতো এক্সট্রা কেয়ার বুঝি তো।
-“ বাহ্ আস্তে আস্তে বড় হচ্ছো। সব বুঝো দেখছি গুড!
রুয়াত মুখ গুমরো করে বলল-
-“ তারমানে সত্যি! কথাই নেই আপনার সাথে হু। রুয়াত শাফায়াতের কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিতে চাইলে শাফায়াত টেনে আগের জায়গায় নিয়ে এসে বলে-
-“ চুপচাপ শুয়ে থাকো। বিকেলে কিন্তু হসপিটালে যাব।
-“ আপনি যে চেক-আপ করার আগেই মিষ্টি খাওয়ালেন সবাই কে। চেক-আপ করার পর ডক্টর যদি বলে আমি প্রেগন্যান্ট না তখন কি হবে?
-“ আরে তুমি প্রেগন্যান্ট। দেখলে না দুটো দাগ উঠেছিল। আর তোমার শরীর তুমি বুঝো না?
-“ বুঝতে পারলে তো ঘটা করে রোমান্টিক হয়ে বলতাম।
-“ হয়েছে হয়েছে চোখ বুজো ভালো লাগবে।
রজনী সাদমান নিজেদের রুমের বেলকনিতে বসে আছে। রজনী বেশ খুশি রুয়াত মা হচ্ছে শুনে। আচ্ছা রুয়াত কি তাকে দিবে তার বাচ্চা টা? রুয়াত তো বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল বাচ্চা হলে তাকে দিবে। কথাটা মনে আসতেই মুখে আধার নেমে আসলো। চিন্তিত হলো মুখমণ্ডল। সাদমান হটাৎ রজনীর মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যেতে দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে রজনী?
রজনী তাকালো সাদমানের দিকে। বলল-
-“ আপনাকে একটা কথা বলি?
-“ হু বলুন।
-“ রুয়াত বিয়ের আগে বলেছিল বাচ্চা টা আমাকে দিয়ে দিবে। আচ্ছা ও কি সত্যি দিবে বাচ্চা টা আমায়?
সাদমান ভ্রু কুঁচকালো।
-“ রুয়াত কেনো তার বাচ্চা আপনাকে দিবে?
-“ আমি তো মা হতে পারবো না। রুয়াত সেজন্য বলেছিল তার বিয়ের পর বেবি হলে তাকে আমায় দিবে।
-“ এটা হয় না রজনী। ব্রো তার বাচ্চাকে ভীষণ ভালোবাসে। দেখছো না নিউজ টা শোনামাত্র ই কতটা খুশি। যখন পৃথিবীতে আসবে তখন না জানি তার খুশির পরিমান বেড়ে যায়। আর আমরা তো আমেরিকা চলে যাচ্ছি। বেস্ট চিকিৎসা আপনার করাবো। আমরা অবশ্যই বাবা মা হবো। তবে অন্য কারো কোল খালি করে নয়। রুয়াতে পৃথিবী তখন আপনি ছিলেন। তাই এটা বলে ফেলেছে। তবে এখন তার স্বামী সংসার আছে। এই কথাটা মনে করাবেন না তাকে। মনে থাকবে?
-“ হু মনে থাকবে।
——————
-“ তোর বোন কিন্তু একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে নেহাল। হুট করে এমন বদলে গেলো কেনো? ভাই দোষ টা কি আমার সেটা তো বলুক। তারপর দেখুক আমি নিজেকে বদলে ফেলি কি না ফেলি। তা না করে কি শুরু করছে তোর বোন এসব?
নেহাল চুপচাপ রোহানের কথা শুনে যাচ্ছে শুধু। রোহান নেহাল কে কিছু বলতে না দেখে নেহালের মাথার চুল টেনে ধরে বলল-
-“ শা’লা বোবার মতো বসে আছিস কেনো? মুখে বুলি কই? কিছু বল।
নেহাল রোহানের হাত মাথা থেকে সরাতে সরাতে বলল-
-“ কি বলবো আমি? নীতি এমন করছে কেনো সেটা নীতি কে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। আমাকে করছিস কেনো?
-“ তোরই তো বোন।
-“ সো হোয়াট? তুই গিয়ে কথা বল।
-“ নিয়ে আয় তোর বোন কে।
-“ বিকেলে আনবো নি। এখন একটু মা’ল টাল বের কর। খেয়ে টাল হই।
-“ টয়লেট থেকে এনে দেই হারা’মজাদা খেয়ে টাল হয়ে থাক। তুই বন্ধু নাকি শত্রু বল তো। দেখছিস চিন্তায় আমার অবস্থা যাচ্ছে তাই। আর তুই নীরব!
-“ চিন্তা তোর মাথা তোর। আমার কি করার তাতে? কথা কম বলে নিয়ে আয়। তা না হলে কিন্তু নীতি কে আনবো না।
-“ ব্ল্যাকমেইল করছিস এখন আবার?
-“ না সু্যোগে সৎ ব্যবহার শুধু। যা নিয়ে আয়।
রোহান ড্রিংকস এনে নেহালের সামনে রাখলো। নেহাল গ্লাসে ঢেলে খেতে লাগলো। বিকেল হলে নীতি কে ফোন করে বাইপাসে আসতে বলে সাথে এটাও বলে রোহান অসুস্থ । নীতি কথাটা শোনামাত্র ই ছুটে চলে আসে। বাইপাস এসে নেহাল কে ক্রমাগত ফোন করলে হুট করে পেছন থেকে কেউ ফোন টা টেনে নিয়ে যায়। নীতি পেছন ফিরে। রোহান কে দেখে বলে-
-“ আ…আপনি ঠ..ঠিক আছেন তো? আবার জ্বর বাঁধিয়েছেন নিশ্চয়ই?
রোহান পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে। এই তো সেই চেনা চোখ। এই তো সেই অস্থিরতা তাকে ঘিরে। এই তো সেই চোখ যে চোখ বলছে তার ভালোবাসার কথা। রোহান ঠান্ডা কন্ঠে বলল-
-“ আমি ঠিক আছি। অস্থির হোস না। ভালোবাসিস আমায় বল। ট্রাস্ট মি আমি তোর মনের মতো হয়ে যাব।
নীতি সম্বিৎ ফিরে পেলো। তার মানে মিথ্যা কথা বলে তাকে ডেকে আনা হইছে!
-“ সত্যি টা শুনতে চান?
-“ হু।
-“ আমি আপনাকে ভালোবাসি, কিন্তু আপনি আমাকে কষ্ট দেন অনেক। আপনার আচরণ আমাকে খুব বাজে ভাবে আঘাত করে। আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেই অনেক সময় কিছু বলতে পারি না। আপনাকে ভালোবেসে আমিই বেশি কষ্ট পাই। আপনাকে ভালোবাসার শাস্তি আপনি শুধু আমাকেই দেন। আমি তো ভালোবাসতে গিয়েছিলাম, কষ্ট পেতে না। ভালোবাসতে থাকি। আপনার কারণেই আপনার থেকে আমার মন উঠে গেছে। তাই এখন আর আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
-“ মিথ্যা বলছিস।
-“ মিথ্যা কেনো বলবো?
-“ অভিমানে।
-“ অভিমান কেনো হবে? কার উপরই বা হবে?
-“ আমার উপরে।
-“ হু আর ইউ? নিজেকে এতোটা গুরত্বপূর্ণ ভাববেন আমার লাইফে।
-“ ভেবে বসে আছি অলরেডি। তাই বলছি বিয়ে টা ভেঙে দে। চল আমরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। সাক্ষী হিসেবে তোর ভাই থাকবে।
-“ আমি আসছি।
-“ সমস্যা টা কি সেটা তো বল।
নীতি পেছন ফিরে বলল-
-“ ভালোবাসেন আমায়?
রোহান থমকে গেলো। ভালোবাসা! শব্দ টা তো অনেক পরিচিত। বের হচ্ছে না কেনো মুখ থেকে? নীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যেতে নিলে রোহান পেছন থেকে বলে উঠে –
-“ শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয়। তাহলে আমি প্রতি মুহূর্তে তোকে ভালোবাসি। কারন আমি প্রতি মূহুর্তে তোকে অনুভব করি। আর ভালোবাসার মানুষটাকে অনুভব করবো এটাই তো সত্যিকারের ভালোবাসা।
নীতি আর তাকালো না দাঁড়িয়ে পরেছিল। তবে যেতে যেতে বলে গেল-
-“ এখন আর কিছু হবার নয় আপনার আর আমার মধ্যে ।
রোহান এবার রেগে বলল-
-“ ভালো হইছিলাম না? ঠিক যতটুকু ভালো হইছিলাম ততটুকু খারাপ হবো এখন আমি। তুই কি ভাবছিস এতো সহজ? তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি আর আমি তাকায় তাকায় দেখবো?এতো সোজা? দেখি তোকে অন্য জায়গায় কি করে বিয়ে দেয়। তুই আমার ছিলা না? তুই আমারই থাকবি।
নীতি প্রতিত্তোরে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি রোহান কে উপহার দিয়ে চলে গেলো।
#চলবে?