গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৪৩+৪৪

0
203

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪৩
#Raiha_Zubair_Ripti

ভরা সন্ধ্যায় প্লাবনের সাথে নীতি এসেছে শপিংমলে হাতের মাপ দিয়ে আংটি কিনতে। নীতিদের ঠিক পেছনের দোকানটায় আছে রোহান। হোয়াইট কালারের শার্ট চোখে সানগ্লাস। একদম বখাটে বখাটে হাবভাব। নীতি এখনও খেয়াল করেনি রোহান কে। দোকান থেকে আংটি টা কিনে প্লাবন কে নিয়ে পেছন ফিরলেই চোখ যায় রোহানের দিকে। নীতি রোহান কে উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে রোহান বলে উঠে –
-“ কিরে চলে যাচ্ছিস কেনো? আমাকে দেখিস নি নাকি এখনও?
নীতি দাঁড়িয়ে গেলো। প্লাবন বলল-
-“ রোহান এসেছে দেখছি।
নীতি পেছন ফিরলো। বলল-
-“ আপনি কোনো বিলগেটস বা আম্বানি পরিবারের সদস্য নন যে আপনাকে দেখতে হবে আমার।
-“ আজকাল ভালোই চাপা নাড়তে শিখেছিস। নাইস চোপা! বিয়েটা কি আদৌও হবে তোর? আমি ভীষণ আশংকায় আছি তোর বিয়ে নিয়ে।
-“ আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে আমার বিয়ে নিয়ে। আপনি আপনাকে নিয়ে ভাবুন।
-“ ইয়েস আমি নিজেকে নিয়েই ভাবছি এখন। বিকজ কথায় আছে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আর প্লাবন শুনুন।
প্লাবন ভ্রু কুঁচকালো। বলল-
-“ জ্বি বলুন।
-“ বিয়ের দিন হিন্দুদের মতো আপনি লগ্নভ্রষ্ট হলে কিন্তু তার দায়ভার আমি নিব না।
-“ লগ্নভ্রষ্টা কেনো হবো আমি?
-“ কারন আপনি যাকে বিয়ে করছেন তাকে আমি বিয়ে করে ফেলবো সেজন্য।
-“ কিন্তু নীতি তো আমাকে বিয়ে করবে।
-“ স্বাধীন দেশে বাকস্বাধীনতা থাকলেও নীতির নেই। নীতি বাকস্বাধীনতা অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করে। শপিং শেষ তো? এখন বাসায় যান। নীতি কে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
নীতি দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ আমি আপনার সাথে যাব না। আমি প্লাবনের সাথে যাব।
রোহান কথাটা শুনে ধমকে বলল-
-“ চ’ড়িয়ে দাঁত ফে’লে দিব বে’য়াদব মেয়ে। প্লাবন তোর ছোট না বড়? নাম ধরে ডাকছিস কেনো? ভাইয়া ডাক। আর প্লাবন আপনি দাঁড়িয়ে কেনো এখনও? যেতে বলছি না? আর তুই আয় আমার সাথে।
রোহান নীতির হাত টেনে চলে আসলো। গাড়ির সামনে আসতেই নীতি ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-
-“ এভাবে টেনে নিয়ে আসার মানে কি?
রোহান নীতির গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বলল-
-“ মানে কি তুই বুঝিস না? প্রথমে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পেছন পেছন ঘুরলি। আমাকে তোর প্রতি দূর্বল করে এখন আরেক পুরুষের কাছে যাচ্ছিস? আমি মোটেও তা হতে দিব না। ভালো মানুষি দেখিয়েছি এখন খারাপ কত প্রকার ও কি কি তা দেখাবো। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস।

নীতি ভয়ে উঠে পড়লো গাড়িতে। রোহানের রাগ সম্পর্কে নীতি অবগত। এখন কথা না শুনলে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চ’ড় বসিয়ে দিতেও দু বার ভাববে না।
রোহান নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। জোরে শ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সোজা নীতি দের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল-
-“ যা বাসায় যা।
নীতি গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতর হাঁটা ধরলো। রোহান পেছন থেকে বলে উঠল-
-“ ঐ নীতি।
নীতি পেছন ফিরলো। রোহান বলল-
-“ আমাকে ভালোবাসিস বল একবার।
নীতি মুখ বাঁকিয়ে হাঁটা ধরলো।
বেলকনি থেকে নেহাল সবটা দেখলে। নীতি ভেতরে আসতেই নেহাল বলে উঠল-
-“ তুই না প্লাবনের সাথে গিয়েছিলি? রোহানের সাথে আসলি কি ভাবে?
-“ পেছন পেছন গিয়েছিল নজরদারি করতে।
-“ শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস রোহান কে।
নীতি ভ্রু কুঁচকালো। বলল-
-“ মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হচ্ছে বুঝি? কই আমার কষ্ট তোমার চোখে পড়েনি তখন? যখন তোমার বন্ধু আমাকে কথায় কথায় হার্ট করতো? এখন আমি রিভেঞ্জ নিচ্ছি বলে কষ্ট হচ্ছে?.
-“ আহ্ ব্যপার টা সেরকম না৷ তোকে তো একটা কথা বলিই নি।
-“ কি?
-“ রোহান আমাদের ভার্সিটির একটা মেয়েকে ভালোবাসতো৷ আমাদের স্যারের ওয়াইফ সে।
নীতি বাঁকা চোখে তাকালো।
-“ তারপর?
-“ তারপর আর কি রুয়াত কে জানানোর আগেই রুয়াতের বিয়ে হয়ে গেলো স্যারের সাথে। বেচারা রোহান বেশ ভেঙে পড়েছিল সেসময়।
-“ মেয়েটার নাম রুয়াত?
-“ হু৷ তবে চিন্তা করিস না। রুয়াত পছন্দ করতো না রোহান কে। আর রোহান রুয়াত কে ভীষণ রেসপেক্ট করে। প্রথম ভালোবাসা বুঝিসই তো।
-“ আচ্ছা আসছি। ভীষণ টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।

নীতি রুমে এসে কাধ থেকে ব্যাগ টা বিছানায় রেখে বসে পড়ে। তারপর কিছু একটা নিয়ে ভাবনায় মশগুল হয়।

শাফায়াত রুয়াত হসপিটালে গিয়েছিল চেকআপ করতে সেদিন। ডক্টর জানায় রুয়াত প্রেগন্যান্ট। শাফায়াত রুয়াত কে একটা কাজ ও করতে দেয় না। বাসায় একটা কাজের লোক রাখার চিন্তা ভাবনা করছে। ক’দিন পর সাদমান রজনী ও চলে যাবে। শাফায়াত রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে। রুয়াতের নাকি ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। শাফায়াত রুয়াতের জন্য চা আর নিজের জন্য কফি বানিয়ে রুমে আসলো। রুয়াত বেলকনিতে বসে ছিল। শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিলো। রুয়াত চায়ের কাপ টা নিয়ে তাতে চুমুক বসিয়ে বলল-
-“ চা টা বেশ ভালোই বানান।
শাফায়াত কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ তোমার জন্য।
-“ আপুরা যাবে কবে?
-“ এই তো দু তিনদিনের মধ্যে।
-“ ওহ্।
কফি চা খাওয়ার শেষে শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে রুমে চলে আসলো। রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে।

সারা রাত নীতি নির্ঘুমে কাটালো। অনেক কিছু ভাবলো। ভোর হতেই প্লাবন কে ফোন করলো। প্লাবন ফোন রিসিভ করলে নীতি বলে উঠল-
-“ বিয়ে নিয়ে আমাদের আর এগোনো উচিত না ভাইয়া। এখনই থেমে যাওয়া উচিৎ। আপনি জানেন আমি রোহান ভাই কে ভালোবাসি। তাকে গিল্টি ফিল আর তাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতেই এটা করা। আই থিংক এখন থেমে যাওয়া উচিৎ।
প্লাবন ওপাশ থেকে বলল-
-“ ভেবে বলছো তো? তাকে বিয়ে করলে সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে। কারন রোহান ছন্নছাড়া।
-“ আমি সব মানিয়ে নিব। আমি শুধু চাই সে আমাকে ভালোবাসুক। আমার জন্য ডেস্পারেট হোক।
-“ আচ্ছা। শুভ কামনা রইলো।
-“ ধন্যবাদ।
নীতি ফোন টা কেটে বেলকনিতে আসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আমি জানি, আমাকে সারাজীবন কাদতে হবে। কারণ আমি আপনাকে চেয়েছি। তবে আপনার সাথে কথা হোক বা না হোক, মনে রাখবেন আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

হঠাৎ মুঠো ফোন টা বেজে উঠতেই নীতি ফোনের দিকে তাকায়। রোহান ফোন করেছে। নীতি রিসিভ করলো ফোন টা। রোহান বলে উঠলো-
-“ কি করছিস?
নীতি শান্ত কন্ঠেই বলল-
-“ বসে আছি।
-“ আমার মামু কে আজ তোদের বাসায় পাঠাবো।
নীতি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কেনো?
-“ বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
-“ কার?
-“ তোর আর আমার।
-“ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-“ তাতে আমার কি? আমার ও বিয়ে ঠিক করতে হবে। আমারও বিয়ে করতে হবে। বউ ছাড়া আর কতকাল একা একটা বিছানায় ছটফট করবো? বয়স তো হয়েছে বউকে ছটফট করানোর। সেই বয়সে আমি নিজে একাই করছি ছটফট। দ্যিস ইজ নট ফেয়ার।
-“ লাগাম টানুন কথায়।
-“ আমার কথায় লাগাম আবার ছিলো কোন কালে শুনি? সুন্দর করে শাড়ি পড়ে পরিপাটি হয়ে থাকিস। একেবারে কাজি ডেকে বিয়ে পরিয়েও আনতে পারি। আমাকে দিয়ে ভরসা নেই। রাখছি এখন শোনা। দেখা হচ্ছে।

#চলবে?

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪৪
#Raiha_Zubair_Ripti

আজ রজনী দের আমেরিকা চলে যাবার দিন। সকাল থেকে বেজার মন খারাপ রুয়াতের। বোন কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সত্যি বলতে রজনীর ও ইচ্ছে করছে না যেতে। কিন্তু যেতে তো হবেই। রুয়াত কে ছাড়িয়ে ল্যাগেজ টা গুছিয়ে নিজেও রেডি হয়ে বলল-
-“ নিজের খেয়াল রাখবি রুয়াত। ঠিকমতো খাবার খাবি। আমি রোজ ফোন দিব।
রুয়াত এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। রজনী রুয়াতের চোখের পানি মুছিয়ে কপালে চুমু খেলো। নিচ থেকে সাদমান এর কন্ঠ পেতেই রুয়াতের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। এয়ারপোর্টে রুয়াত কে নিয়ে যাবে না শাফায়াত। গাড়িতে উঠলেই রুয়াত এখন বমি করে অবস্থা গুরুতর করে ফেলে। এয়ারপোর্টে শাফায়াত যাচ্ছে শুধু। সাদমান দের ঠিক টাইমে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে চলে আসলো। রজনী প্লেনে বসে শেষ বারের মতো নিজের জন্মভূমি কে পাখির চোখে দেখে নিলো। তারপর লম্বা শ্বাস টেনে সাদমান এর কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বুঝে ফেললো।

শাফায়াত বাসায় এসে দেখে রুয়াত মন খারাপ করে শুয়ে আছে। শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে রুয়াতের মাথায় হাত বুলালো। রুয়াত শাফায়াতের কোলে মাথা রেখে বলল-
-“ আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে শাফু। আপা চলে গেলো তো।
-“ কষ্ট পেয়ো না রুয়াত। রজনীর ভালোর জন্যই তো যাচ্ছে। আর রোজ ফোনে কথা বলে নিবে ভালো লাগবে তাহলে।

রোহান তার মামু কে নিয়ে নীতি দের বাসায় এসে দেখে নীতি শাড়ি পড়া তো দূরে থাক সে টি-শার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে। রোহানের ইচ্ছে করলো কয়েক টা চ’ড় বসিয়ে দিতে গালে। প্লাবন বিয়ে টা ভেঙে দিয়েছে এটা জেনে গেছে পুরো ফ্যামেলি। এও জানে এটা রোহানেরই কাজ। রোহান তার মামার দিকে তাকালো। এসে বিয়ের কথা না বলে তারা তাদের ছোট বেলার সুখ দুঃখের কথা বলছে! রোহান বিরক্তের সহিত বলল-
-“ সুখ দুঃখের কথা তো পরেও বলতে পারবে মামু। বিয়ের কথা বলতে আসছো। বিয়ে নিয়ে আগাও।
রোহানের মামা বিয়ের দিকে আগালো। বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো সামনের মাসে। সেটা শুনে রোহানের কপালে দু ভাজ পড়লো। পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে আসতে বললো। মিনিট ত্রিশের ভেতর সাদা পাঞ্জাবি পড়া এক কাজি এসে হাজির। সবাই হতবাক। নেহাল বলে উঠল-
-“ কাজি কেনো এখানে? এই কাজি সাহেব ভুল বাড়িতে ভুলে ঢুকে পড়েছেন নাকি?
রোহান গম্ভীর মুখে বলে উঠল-
-“ না ঠিক বাড়িতে সঠিক বাড়িতেই তিনি এন্ট্রি নিয়েছে। উনাকে আমিই আসতে বলছি।
-“ কিন্তু কেনো?
-“ কাজি ছাড়া বিয়ে হয় নাকি?
-“ কার বিয়ে আজ?
-“ তোর বোন আর আমার।
নেহাল আশ্চর্য হয়ে বলল-
-“ হোয়াট!
-“ হ্যাঁ। আন্টি আপনার মেয়েকে একটা শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে আসুন। না সাজালেও চলবে।
সাইফুল ইসলাম এবার রেগে গেলেন। বললেন-
-“ তোর কি মাথা ঠিক আছে? বলছি তো তোর সাথে মেয়ে দিব। তাহলে এমন করছিস কেনো? আমার একটা মাত্র মেয়ে তাকে আমি ধুমধাম করে বিয়ে দিব।
-“ এতে কি লাভ? শুধু শুধু টাকা খরচ। এরচেয়ে বরং সেই টাকাগুলো দিয়ে আপনার মেয়ের আর আমার হানিমুনে খরচ কইরেন। আপাতত বিয়েতে বাগড়া দিয়েন না। আর আন্টি যান না একটু।

নীতির মা নীতি কে নিয়ে রুমে আসলো। নীতি এতক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে রেখেছিল। রুমে এসেই মা’কে জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলল। বলল-
-“ মা আমার হাসি থামছে না। এই ছেলে কি শুরু করেছে এটা!

নীতির মা আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে নীতি কে বলল পড়ে নিতে। নীতি শাড়ি টা পড়লে নীতির মা নীতি কে নিয়ে বাহিরে আসে। রোহান নীতির পাশে বসে গিয়ে। নীতি আড়চোখে একবার তাকায়। রোহান সেটা লক্ষ্য করে কাজিকে বলল-
-“ বিয়ে পড়ানো শুরু করেন কাজি সাহেব।
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। নীতি কে কবুল বলতে বললে নীতি বাপ,ভাইয়ের দিকে তাকায়।নীতির ভাই ইশারায় বলে কবুল বলে দিতে। কিন্তু সাইফুল ইসলামের চোখ মুখ শক্ত থাকে। নীতি কবুল বলে দেয়। রোহান কে বলতে বললে রোহন বলে দেয় কবুল। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলে রোহান কাজির পাওনা কাজি কে বুঝিয়ে দেয়। তারপর শ্বশুর শাশুড়ি কে সালাম করে। রোহান শক্ত করে নীতির হাত ধরে বলে-
-“ তাহলে এখন আসছি আমরা। নেহাল রে তরে একটু বলতে পারছি না বাসর ঘর টা সাজানোর জন্য বউয়ের ভাই বলে। তোর আব্বা আম্মা সামলাস। তার মেয়ের অযত্ন আমি করবো না। আসছি।

রোহান নীতি কে নিয়ে চলে আসলো নিজের বাসায়। বাসায় একটা খাবারও নেই। রোহান নীতি কে রুমে বসিয়ে ফুড পান্ডায় খাবার অর্ডার দিতে নিলে নীতি বাঁধা দিয়ে বলে-
-“ অর্ডার করতে হবে না খাবার। আমি রাঁধতেছি।
রোহান বারন করলো। বলল- নতুন বউ তুই আমার তোকে দিয়ে প্রথম দিনই রান্না করাবো আমি! নো ওয়ে।
নীতিও কম না। সে রোহানের কথা না শুনে রান্না ঘরে এসে রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিলো। একা হাতে চিকেন,ডিম,ভাত,পোলাও,পায়েস রান্না করলো। রোহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। নীতি নিশ্চয়ই তারজন্য ই রান্না করাটা এতো ভালোভাবে শিখেছে। কথায় আছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। নীতি কে পাওয়া শ্রেষ্ঠ গিফট আল্লাহর থেকে রোহানের। নীতি খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলে সাজালো। তারপর রোহান কে ডেকে বলল-
-“ আসুন..ক্ষুধা পেয়েছে খেয়ে নিন।
রোহান চেয়ার টেনে বসলো। খাবারের প্লেট টেনে খেতে খেতে বলল-
-“ তোর খাবার কই প্লেটে?
-“ আমার ক্ষিধে নাই।
-“ আমার পাশে এসে বস তো।
-“ কেনো?
-“ আহ্ বলছি আসতে আয় না।
নীতি চেয়ার ছেড়ে উঠে রোহানের পাশে বসলো। রোহান পাশে ফিরে প্লেট থেকে ভাতের লোকমা উঠিয়ে নীতির মুখের সামনে ধরে বলল-
-“ হা কর।
নীতি হা করলো না। সেটা দেখে রোহান রাগী কন্ঠে বলল-
-“ হা করতে বলছি তো। কানে যায় নি সেটা?
নীতি হা করলো। রোহান খাইয়ে দিলো নীতি কে। নীতি কে খাইয়ে দেওয়ার সাথে সাথে রোহান নিজেও খেতে লাগলো।

খাওয়া শেষে বাকি খাবার গুলো নীতি ফ্রিজে রেখে এঁটো থালাবাসন ধুয়ে উপর করে রুমে আসলো। দেখলো রোহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। রোহান নীতির আসার শব্দ টের পেয়ে পেছন না ফিরেই বলল-
-“ এখানে আয় তো।
নীতি আঁচল দিয়ে মুখ চেপে রোহানের পাশে দাঁড়ালো। রোহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নীতি কে কাছে টেনে মুখের সামনে থেকে আঁচল সরিয়ে মুখে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া নীতির চোখ মুখের উপর ছেড়ে দিলো। নীতি কেশে উঠলো। রোহান বাঁকা হাসলো। কপালে গাঢ় চুম্বন একে বলল-
-“ আজ থেকে আমাদের একটা সংসার হবে জানিস তো? যেখানে আমি আর তুই থাকবো। আমাদের ভালোবাসায় পূর্ণ হবে সেই সংসার। আমার রাগ,পাগলামি, ভালোবাসা সব তোকেই তো সামলাতে হবে। তুই ছাড়া আর কে আছে বল তো আমার? গোধূলিতে পাওয়া সেই বিকেলের এক ফোটা রশ্মি তুই। সেই রশ্মি ছাড়া তো আমার ঘর অন্ধকার! একটু না অনেকখানি ভালোবাসি তোকে নীতি। আমার পাশে থাকিস সব সময়। ছেড়ে চলে যাস না। আমার ভাগ্যে কেনো জানি প্রাপ্তির সংখ্যা খুবই কম। তুই প্লিজ থেকে যাস।

নীতি বরফের মতো থমকে গেলো। আলতো হাতে রোহানের গালে হাত রেখে বলল-
-“ চলে যাবার হলে অনেক আগেই তো চলে যেতাম। এতো বছর অপেক্ষা করতাম না তাহলে। আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে চাই।
রোহানের চোখ মুখে হাসির ঝলক। রোহান নীতি কে সোজা পাজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। রুমের লাইট বন্ধ করে দিলো। আজ থেকে শুরু হলো তাদের এক নতুন জীবনের সূচনা।

#চলবে?