গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-২৭+২৮

0
9

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৭ (বিবাহ অভিযান)

প্রত্যেক মেয়ের জীবনেই তাঁদের বিয়ের দিন নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে, আশা থাকে। সে সবরকম ভাবে চেষ্টা করে যাতে তাঁর ওই বিশেষ দিনটি ভালো কাটে। সুন্দর শাড়ি কেনে, সেরা মেকআপ করতে চায়। আগে থেকেই সব কিছু ঠিক করে রাখে যাতে সেদিনটা তাঁর অন্তত তাঁকে কোনও দুশ্চিন্তা না করতে হয়। যাই হোক আগে থেকে নানারকম পরিকল্পনা করে রাখলেও তাঁর বিয়ের দিন নানারকম চিন্তা আসতেই থাকে।

আসলে বিয়ে হল অনেকটা তিন-পায়ে দৌড়ের সমগোত্রীয়। বাঁধা পা দু’টো একসঙ্গে আগে ফেলতে হয়। এক ছন্দে দৌড়তে পারলে দিব্যি দৌড়বে, কোনও ঝামেলা নেই। যে যার মতো দৌড়তে গেলেই হুমড়ি খাবে দু’জনেই। সুতরাং হয় নিয়ম মেনে পা ফেলে ছোটো, নয়তো দড়িটা খুলে ফেলে যে যার নিজের পথে হাঁটো।———-

প্রথম বার বিয়ের মতো তেমন অনুভূতি হয় না মানহা’র। এবার হয় অন্য রকম অনুভূতি। দ্বিতীয় বারের মতো নিজেকে সাজিয়ে তোলে আবরারের জন্য। যে তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে কেন তার জন্য এতটুকু করতে পারবে না? মানহা কে সাজানোর জন্য কোনো পার্লার থেকে লোক আসেনি। মানহা আসতে নিষেধ করছে। যেখানে নিরা অনেক বেশি সুন্দর করে সাজাতে পারে সেখানে পার্লার থেকে লোক আসার কোনো মানে হয় না।

সন্ধ্যার পরেই মানহা কে সাজাতে বসে নিরা। তাকে হাতে হাতে সব এগিয়ে দিচ্ছে মানহার খালাতো বোন বন্যা। বড় আপুর বিয়ের খবর পেয়ে ছুটে এসেছে সে। তাদের বাসা থেকে শুধু বন্যাই এসেছে। কারণ মানহা চাই না সবাই আসুক। নিরা ভাইয়ের সাথে এ বাড়িতে আসতে চেয়েছিল বাট হলো না। সেজন্য বউ নিয়ে একেবারে যাবে। তারপর মজা করবে বলে ঠিক করেছে।

মানহা ‘র সাজ কম্পিলিট করতে রাত আটটা বেজে যায়। একটুপরেই বর পক্ষ চলে আসবে। নিরা মানহা কে নিয়ে ডেসিন্টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,

” আপু দেখো তো নিজেকে চিনতে পারো নাকি। একদম মনে হচ্ছে সদ্য আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো পরী। যাকে দেখলে যেকোনো পুরুষ কাত হয়ে যেতে বাধ্য। আই’ এম সিউর আমার ভাই তোমাকে দেখলে হার্টহেটাক করবে। তোমাকে যা লাগছে। আমি নিজেই ফিদা হয়ে গেছি। পাশ থেকে বন্যা বলে,

” হ্যাঁ আপু ভাবিমনি কিন্তু ঠিকই বলছে তোমাকে খুব খুব সুন্দর লাগছে।

মানহা খুটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে। সত্যি সে নিজেকে চিনতে পারছে না। অদ্ভুত এক ফিলিংস হয় নিজের মাঝে।

বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ পেতেই নিরা আর বন্যা নিচে দৌড় দেয়। তারা নিশ্চিত বর এসেছে। মানহা দরজা ভিড়িয়ে বেলকনিতে দাড়ায়। গেটের আলোয় বাইরের সবটা স্পষ্ট দেখা যায়। আবরার কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। আবরার গাড়ি থেকে নামার সময় মানহার বেলকনিতে তাকায়। দু’জনের চোখাচোখি হয়ে যায়। আবরারের মানহার বেনারসির সাথে ম্যাচিং করে খয়েরী রঙের শেরওয়ানি আর পাগড়ি পড়েছে। আবরারের মুখে দুষ্টু হাসি। মানহা লজ্জায় চোখ সরিয়ে রুমের ভিতরে চলে আসে।







আবরারদের বাসা থেকে আবরার তার বাবা দাদু তার খালু আর ফুপা আর তার খালাতো বোন নিসা এসেছে। আবরারের ছোট চাচা আছে বাট তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক নেয়। কিছু কারণে তারা আলাদা হয়ে গেছে। তাদের মতো তারা নিজেদের গুছিয়ে নিছে।

তাদের বিয়ের জন্য হয়নি কোনো স্টেজ আর না আছে কোনো বিয়ে বাড়ির মতো হইচই। খুব সাদামাটা। তাতে কোনো দুঃখ নেয় আবরারের। সে তার বনবিড়াল কে নিজের করে পাচ্ছে এতেই সে খুশি।

আবরার কে সাদরে বরণ করে নেন তানিয়া বেগম। বর পক্ষ দের সোফায় বসতে দেওয়া হয়েছে। আবরার চুপচাপ সোফায় বসে আছে। প্রেয়সীকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। কখন তার বনবিড়াল কে দেখবে। মন ভরে।

নিরা বন্যা বড়দের সাথে নাস্তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। অয়ন আর মিরাজ সবটা এগিয়ে দেয়। বিয়ের পর জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে। এখন হালকা পাতলা খেতে দেয়।

সবাই খেলেও আবরার কিছু মুখে তোলে না। নিরা সেটা লক্ষ্য করে ভাইয়ের কাছে আসে। নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলে,

” ভাইয়া বউকে দেখার জন্য তোমার মনটা আকুপাকু করছে সেটা আমি বুঝতে পারছি বাট কিছু তো মুখে তোলো। নইলে নার্ভাস হয়ে যাবে কিন্তু বলে মুচকি হাসে। বোনকে হাসতে দেখে সেও ফিসফিস করে বলে,

” আমি তো বড় ভাই।আর তুই বড় ভাইয়ের সাথে ফাজলামো করছিস?

” একটু করলে কি হয় শুনি ইনোসেন্ট ফেস করে বলে। আচ্ছা ভাইয়া একটা জিনিস দেখবা।

” কি?

” আরে দেখবা কি না বলো?

” কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আচ্ছা দেখবো। দেখা।

নিরা নিজের ফোন বের করে গ্যালারি থেকে কিছু একটা বের করে আবরারের সামনে ধরে বলে,

” দেখো তো চিনতে পারো কি না?

নিরা আবরার কে একটা ছবি দেখায় আর ছবিটা হলো মানহা’র। মানহা কে সাজিয়ে কয়েকটা ফটো তুলে নেয় নিজের ফোনে। ছবিটা দেখে মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায় আবরারের। আবরারের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসে নিরা। ফের বলে,

” ভাইয়া ছবি দেখে যদি এমন করো তাহলে সরাসরি দেখলে কি করবেনে হু।

আবরারের ঠোঁটে হাসি, চোখে হাসি,মুখে হাসি। খুশিতে আজ শুধু হাসছে সে। দুই ভাই বোন কে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে অয়ন এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

” কি ব্যাপার তোমরা কি ফিসফিস করছো। আমাকেও একটু বলো শুনি।

অয়নের কথা শুনে নিরা বলে, তোমাকে বলা যাবে না সিক্রেট। অয়ন ও আর কথা বাড়ায় না। নিরাকে বলে কাজী সাহেব চলে আসছে মানহা কে দ্রুত নিচে নিয়ে আসো। অয়নের কথা শুনে মানহা কে আনতে চলে যায় নিরা আর বন্যা।

____________________

পাশাপাশি বসে আছে আবরার আর মানহা। মানহা ঘোমটা দিয়ে আছে বিধায় তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। আবরার অনেক চেষ্টা করেও প্রেয়সীর মুখ দেখতে পারেনি। মানহা ঘোমটার আড়াল থেকে সবটা লক্ষ্য করে মুচকি মুচকি হাসছে।

কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করেন। প্রথমে আবরারের বিয়ে পড়ান। আবরার কে কবুল বলতে বললে, লাজ লজ্জা ফেলে সাথে সাথে কবুল বলে দেয় আবরার। এবার মানহা’র পালা। কাজী সাহেব মানহা কে কবুল বলতে বললে, মানহা বলে না। মানহা কবুল না বলায় আবরার টেনশনে পরে যায়। ও দিকে মানহা ‘র গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। টেনশনে , ভয়ে সবটায় কাভু করে নেয় তাঁকে। মিনহাজ খান মেয়ের পাশেই ছিলেন। তিনি মেয়ের হাত ধরে বলে,

” মামনি তুমি কবুল বলো। কোনো ভয় নেই মামনি। আমরা সবাই নিজেদের মানুষ। বাবার কথায় ভরসা খুজে পায় মানহা৷ মাথা উচু করে বাবার দিকে তাকায় দেখে বাবার চোখে পানি। ইশারায় কবুল বলতে বলে মানহা কে। মানহা তিন কবুল বলে। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে। এবার সকলে মোনাজাত করে। মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় দুজনের বিয়ে।

দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুজনে হয়ে যায় একে অপরের পরিপূরক। একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী। আবরারের ঠোঁটে ফুটে ওঠে পূর্ণতার হাসি।

_______

বিয়ের ঝামেলা শেষ হতেই সবাইকে খেতে দেওয়া হয়। তারপর খাওয়ার পর্ব শেষ হলে বিদায়ের পালা৷

‘বিদায়’ শব্দটায় আছে অনেক কষ্ট। বিদায়ের সময় মানহা’র সে কি কান্না। সবাইকে জড়িয়ে ধরে খুব করে কাঁদছে। মিরাজ মানহা কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। ভাই বোনের কান্না দেখে সকলের চোখে পানি। অয়ন চুপ করে একপাশে দাড়িয়ে আছে। মিলন খান আর মিনহাজ খান আবরারের হাতে তাদের একমাত্র রাজকন্যা কে তুলে দেন। মিনহাজ খান বলেন,

” আবরার বাবা তোমার হাতে তুলে দিলাম আর কলিজা কে। তাকে তুমি দেখে রেখো। অতি আদরের মেয়ে আমার। কখনো কষ্ট পেতে দিও না।

” আপনি কোনো টেনশন করবেন না আঙ্কেল। আমার সবটা দিয়ে দেখে রাখব আপনার মেয়েকে।











বাসর ঘরে বসে আছে মানহা। অজানা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। বুকের ভিতর ধুকপুক করছে। তখনই দরজা খোলার শব্দ হয়। দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আবরার। তাকে দেখে মানহা নেমে সালাম করতে যায়। আবরার বাধা দিয়ে বলে,,

” আমার বনবিড়ালের জায়গা সবসময় আমার বুকে। মানহা অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকায়। মানহার তাকানো দেখে বলে,,

” ওমন করে তাকাবেন না নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রাখছি। আর ঠিক রাখতে পারব না কিন্তু। মানহা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। মানহার মাথা উচু করে তার হাতে দেনমোহরের সব টাকা বুঝে দেয়।

টাকা দেখে বলে এগুলো কেন দিচ্ছেন? আপনার কাছেই রাখুন কাজে লাগবে।

” ওটা আপনার কাছে রাখুন৷ দেনমোহরের টাকা দিয়ে আমার স্ত্রী কে হালাল ভাবে স্পর্শ করতে চায়।

❝ইসলামিক শরিয়তে আছে, স্ত্রী কে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে তবেই তাকে স্পর্শ করো। তার আগে নয়❞

আবরার ফের বলে,,

” তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি।

হঠাৎ আবরারের মুখে তুমি ডাক শুনে চমকে ওঠে মানহা। তারপর মাথা নেড়ে সায় দেয়। সম্মতি পাওয়ার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তমাকে। মানহাও প্রথম বারের মতো জড়িয়ে ধরে আবরারকে।আর এখান থেকেই শুরু হয় তাদের পথচলা।

চলবে ইনশা আল্লাহ

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২৮

পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আবরারের। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে প্রথমেই সদ্য বিয়ে করা বউয়ের মুখ টা দেখে। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে চওড়া হাসি। মারাত্মক সেই হাসি। যে রমনী দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে। কাত হয়ে প্রেয়সীর মুখের পানে তাকিয়ে থাকে। স্নিগ্ধ মায়াময় মুখ, মুখে আছে লাজুকলতার ভাব, মাঝে মাঝে চোখ মুখ কুচকায়, মাঝে মাঝে মুচকি হাসে। ঘুমন্ত বনবিড়ালের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। । মানহা নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভিতর মানহার মনে হয় কেউ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব গভীর দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। হুট করে মানহা চোখ খুলে তাকায়। হঠাৎ চোখ খুলায় আবরার অপ্রস্তুত হয়ে পরে। দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। মানহা চোখ ছোট করে আবরারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,

” কি ব্যাপার আপনি এমন তাকিয়ে আছেন কেন? কি দেখছেন হু?

” আবরার মানহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে?

” আমাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

” হ্যাঁ আমি আমার বনবিড়াল কে দেখছিলাম। তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে? মানহার কোমড় ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে।

” আমাকে দেখছেন আর আমি বললেই সমস্যা। বাহ! কি চমৎকার কথা!

” মানহা’র কথায় হেসে ওঠে আবরার। মানহা ফের বলে কয়টা বাজে?

” মাত্র সাতটা কেন?

” কিহহ! সাতটা বেজে গেছে। আর আপনি আমাকে না ডেকে পরে পরে আমাকে দেখছেন। ছাড়ুন আমাকে উঠতে হবে। বাসার সবাই কি ভাব্বে। নতুন বউ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে ছিহ! ছিহ!

মানহার কথায় আবরার আরও শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। আর বলে,,

” কেউ কিছু ভাব্বে নানে। এত পেনিক করো না তো। আমাদের বাসার সবাই অনেক ভালো। আর আমরা স্বামী স্ত্রী এখানো ছিহ! ছিহ! করার কি আছে শুনি?

” ধুর ওটা আপনি বুঝবেন না। আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে হবে আমাকে।

” যদি না ছাড়ি ভ্রু নাচিয়ে।

” আবরার খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু চোখ রাঙিয়ে।

” কি খারাপ হবে শুনি। নিজের বিয়ে করা বউ কেই তো জড়িয়ে ধরছি অন্য কাউকে তো না।

” আপনি কাকে মিন করতে চাইছেন হ্যাঁ ওই তিশা কে?

” তুমি তিশা। ওয়েট ওয়েট তিশার কথা তুমি জানলে কি করে?

” সেটা আপনাকে বলব না। ছাড়ুন তো বলে বিছানা থেকে উঠে পরে। আবরার নিজেও ছেড়ে দেয়। তিশার ব্যাপারটা মাথায় চক্কর খাচ্ছে।সে সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানা থেকে ওঠে। মানহা একেবারে গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। সুতি একটি শাড়ি পড়নে তার। মানহার বেরোনোর পর আবরার ফ্রেশ হতে যায়।









মানহা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে সেখানে কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ বসে আছে। তাদের মধ্যে শুধু তার শশুর আর দাদা শশুর কে ছাড়া কাউকে চেনে না। ভদ্রতার খাতিরে সবাইকে সালাম দেয়। সবাই সালামের উত্তর নেয়। সবার সাথে ভালোমন্দ কথা বলে রান্নাঘরে শাশুড়ির কাছে চলে যায়। শাশুড়ী মায়ের পাশে দাঁড়ায়। হালিমা বেগম পাশে কারোর অস্তিত্ব পেয়ে তাকান। দেখা মানহা, মুচকি হেসে বলে,,

” মানিয়ে নিতে কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো মা।

” জ্বি না আন্টি বলে জিভে কামড় খায়। মুচকি হেসে বলে সরি আন্টি মাা।

” হালিমা বেগম বলেন, সরি বলতে হবে না। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমাকে মা কিংবা আম্মু যেটা বললে স্বস্তি পাও সেটাই বলবা ঠিক আছে।

” আচ্ছা আম্মু।

” আচ্ছা আম্মু ওটা আপনি আমাকে দেন আমি করছি বলে হাত থেকে নিতে গেলে বলে,

” না না মা তোমার কিছু করতে হবে না। তুমি গিয়ে সবার সাথে গল্প করো।

” আমি তো কাউকে চিনি না আম্মু।

” আচ্ছা চলো সবার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেই। হালিমা বেগম মানহার হাত ধরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যান। তিনি একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

” আবরারের ফুপি কে উদ্দেশ্য করে বলে, এটা আবরারের একমাত্র ফুপি রোজিনা । এখন থেকে তোমারও ফুপি। আর তোমার ফুপা শরিফুল ইসলাম। তাদের পাশে বসে আছে নিসার আম্মু । আবরারের ছোট খালা। তার সাথে আর তার স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। মানহা সবার সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বলে। সকালের নাস্তা সেরে যে যার কাজে চলে যায়।

__________

দুপুর দুইটা। মাত্র দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে এসেছে মানহা। আবরার এখনো আসেনি। আবরার দের বাড়ির আশেপাশের মানুষ গুলো মানহা কে দেখতে আসছে। নিরা তাকে সাথে করে নিজে নামে।

বিয়ের পরের দিন সবাই নতুন বউ দেখতে আসে। পাড়া প্রতিবেশিরা নানান কথা বলে। একজন মহিলা মানহা কে খুটে খুটে উপর থেকে নিচ দেখে। মুখ বাঁকিয়ে বলে,,

” কি গো বউ শুনলাম তোমার নাকি আগে বিয়ে হইছিল। তা স্বামীর ঘর করতে পারলা না। এখন আমার আমাদের তেজের মতো একখান পোলাডারে ভুলাইয়া ভালাইয়া বিয়ে করে ফেলাইছো।

মহিলার কথা শুনে মানহা’র চোখে পানি টলমল করে। যেকোনো সময় অশ্রু বিসর্জন যেতে পারে। মানহা চুপ করে শাড়ি খামচে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি বলবে? এটা তো শোনারই কথা। সে যদি এখন কিছু বলে তো লোকে বলবে বিয়ে হতে না হতেই পরের দিনই নতুন বউ মুখে মুখে কথা বলছে। তাহলে তো তার শশুরেরই অপমান হবে। সেজন্য মুখ বুঝে সহ্য করে নিচ্ছে।নিরা রাগে কটমট করছে। কিছু বলতে যাবে তখনই সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে ভাইকে। মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আবরার আসতে আসতে বলে,

” আমার বউয়ের আগে বিয়ে হয়েছে কি হয়নি সেটা আপনাদের দেখার বিষয় না। আপনারা বউ দেখতে আসছেন ভালো কথা। বউ দেখা শেষ হলে এখন আসতে পারেন?

আবরারের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন মহিলাটা। রাগে গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে যাব বাসা থেকে। মানহা আবরারের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকায়। আবরার বউয়ের কাছে এসে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,

” খবরদার আমি যেন আমার বনবিড়ালের চোখে পানি না দেখি। তোমার চোখের পানির অনেক মূল্য বুঝছো। আবরারের কথায় মুচকি হাসে মানহা। পাশ থেকে নিরা বলে,,

” ভাব্বা আপনি থেকে তুমি বাহ! বাহ! বিয়ের পরে এত ডেভোলপ্ট।

” নিরার মাথায় গাট্টি দিয়ে বলে, ওরে পাঁজি। ভাইয়ের সাথে দুষ্টামি করা হচ্ছে হ্যাঁ।

” ধুর ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলায় বেকার। ভাবিমণি চলো আমরা আজ অনেক আড্ডা দেব। ছাদে বন্যা একা একা আছে। ভাইয়ার সাথে তুমি যাবে না বলে টেনে ধরে নিয়ে যায় মানহা কে। পিছন থেকে আবরার ডাকলেও নিরার জন্য কিছু বলতে পারে না।

চলবে ইনশা আল্লাহ।

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]