চলো রোদ্দুরে পর্ব-৩৮+৩৯

0
692

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_38

গ্রামের পথে এসে ভোর যেন পৃথিবী কে হাতে পেয়ে গেছে। মেয়েটার আনন্দে ভরা মুখ দেখে বেশ স্বস্তি মিললো রাদের। বেশ অনুভূতি জেগেছে অন্তকর্নে। ইচ্ছে করছে মেয়েটার উচ্ছ্বাস ফ্রেম বন্দী করে নিতে। বক বক করছে মেয়েটি। কখনো কানে যাচ্ছে আবার যাচ্ছে না। হাই তুলতে তুলতে ভোর বলল
_গাড়ি থামান।

_কেন?

_আরে থামান ই না।

গাড়ি থামাতেই নেমে গেল ভোর। পিছু পিছু রাদ ও নেমে গেল। পূর্ন শীত কাল। গ্রামের রাস্তায় খেজুর গাছের সমারোহ। রস কাঁটা হয়েছে। লোভনীয় রস চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা। ভোর বলল
_গাছে উঠুন।

_এহহ?

_আরে হ্যাঁ। গাছে উঠুন। এই সময়ে কেউ নেই আশে পাশে। চুরি করে রস খাওয়ার মজাই আলাদা।

_এতে ওনাদের ক্ষতি হবে ভোর।

_প্রথমত সরকারি গাছ এগুলো। আর দ্বিতীয়ত আমরা টাকা রেখে যাবো।

_ উমম গুড আইডিয়া। বাট গাছে উঠা টা।

_আরে উঠুন না। এক টা মাত্র বউ এর জন্য এই টুকুনি করতে পারবেন না আপনি? কেমন ডাক্তার হলেন যে বউ এর সেবা করতে পারেন না।

_ডাক্তার আমি,কোনো গাছি নই।

ছেলেটার কথায় খিল খিল করে হেসে উঠলো ভোর। কখনো গাছে উঠা হয় নি ওর। প্রায় কয়েক বার চেষ্টা করলো রাদ। তবে প্রতি বার ই ব্যর্থ হলো। মুখ টিপে হাসছে ভোর। অসহায় চোখে তাকালো রাদ।তাই ভোর বলল
_আচ্ছা আমি উঠছি।

_এই না পরে যাবা।

_পরবো না। আপনি একটু সরুন।

_ আমি তোমাকে উঠতে দিবো না।

_আমি উঠবোই।

নাছোড়বান্দা হয়ে তর্ক চালাচ্ছে ভোর। গাছের কাছাকাছি যেতেই মেয়ে টি কে জাপটে ধরলো রাদ। ভোর নিজেকে ছাড়াতে চাইছে তবে পারছে না। রাদ ও যেন উপভোগ করলো বিষয় টি। কাক ভোরে খিল খিল করে হাসছে দুই দম্পতি। এর থেকে সুখের আর কিই বা হতে পারে?

কিছু পায়ের শব্দ শুনে ভোর কে নামিয়ে দিলো রাদ। কয়েক টা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরে পা দেওয়া ছেলে গুলোর চোখে মুখে উৎকন্ঠা। এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হয় নি কখনো। ভোর লজ্জা পেলো। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে দের কাছে এমন ভাবে উপস্থাপন হলো ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছে হয়।
_এই তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন?

_লজ্জা পাবো না?

_বাচ্চা এরা চিল।

_আশ্চর্য তো!

_আপু।

কথার মাঝেই এমন শব্দ শুনে থমকে গেল দুটি হৃদয়। বুক টা কেমন ধরফর করছে। রাদ আর ভোর এর চোখ একে অপরের দিকে নিবদ্ধ।আবারো শব্দ টা কানে এলো। ছুটে গেল ভোর। তাফিন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। তাফিন এর চোখে পানি। এতো গুলো বছর পার হলেও বোন কে ভুলে নি ছেলেটা। ক্রন্দনরত অবস্থায় তাফিন বলল
_আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি আপু। অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাই নি।সবাই খুব খারাপ, শুধু তুমি ভালো।

_তাফিন,ভাই আমার।

তাফিন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ভোর। রাদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাই বোনের এমন ভালোবাসা যেন ওর হৃদয়ে বসন্ত নামিয়ে দিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের আবেগ ঝরালো দুজনেই। রাদ এসে তাফিন কে জড়িয়ে ধরলো। বলল
_কি শ্যালক সাহেব খুব তো বড় হয়ে গেছেন।

_আপনিই আমার দুলাভাই?

খলবিলিয়ে হাসলো রাদ। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে সম্মতি জানালো। ছেলেটির কৈশোর মন যেন আজ বাঁধন ভাঙা খুশি তে মেতেছে। চিৎকার করে বলল
_তোরা দেখ, এই যে আমার দুলাভাই। বলেছিলাম না খুব সুন্দর আমার দুলাভাই।

ছেলেটার আচারন মুগ্ধ করলো ওকে। তাফিন কে কতো টা ছোট দেখেছিলো। ভাবতেই কেমন লাগে, সেই তাফিন আজ পূর্ন কিশোর।লম্বায় ও বয়সে রাদের থেকে অনেক টাই ছোট হলে ও আচারন যেন ভিন্ন। বেশ গল্প ছড়িয়ে দিলো ওরা। ভোর এর মন টা তৃপ্ত আজ।
তবু ও ছটফট করছে প্রান। কখন যে বাড়ির উঠানে পা রাখবে।আচ্ছা পুরনো সেই শিউলি গাছ টা এখনো আছে নাকি রাগে কেঁটে ফেলেছেন কুলছুম।

_মা, মা দেখো কে এসেছে। মা ও মা দেখো না তুমি।

বহু দিন পর ছেলের মুখে এমন ডাক শুনে আঁতকে উঠলেন কুলছুম। চোখ ভরে উঠলো জলে।রান্না ঘর থেকে ছুটে এলেন তিনি। তাফিন কে বুকে চেপে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলেন। ভোর চলে যাওয়ার পর তাফিন এক সমুদ্র অভিমান নিয়েছে।কুলছুম কে মা বলে সম্বোধন করে না , আর না তাফাজ্জাল কে বাবা বলে সম্বোধন করে। ছোট্ট তাফিন এতো টা অভিমান নিতে পারে তা যেন সকলের কল্পনার অতীত ছিলো।
_কান্না না করে এখন রান্না চাপাও তো।

চোখ মুছলেন কুলছুম। ছেলে কে তৃপ্তির দৃষ্টি তে দেখলেন। আশে পাশের কিছু লোকজন ও এসে পরেছে। তা দেখে কুলছুম বললেন
_কি চাই সকলের? সবাই জোঁট ধরে আইছো কেন?

সকলের মাঝ থেকে এক বৃদ্ধা বললেন
_মিষ্টি খাওয়াইবা না নাকি?

_কিসের মিষ্টি চাচি?

_ওমা,এতো দিন পর মাইয়া জামাই আইছে আমাগো খালি মুখেই বিদেয় করবা বইলা স্থির করছো?

মেয়ে জামাই শব্দ টা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো কুলছুম। তারপর ই বললেন
_কি বললেন চাঁচি? কার মেয়ে জামাই?

_ঐ তো আসতেছে।

ইশারা করলেন বৃদ্ধা। হাত ভর্তি জিনিস নিয়ে আসছে এক সুদর্শন পুরুষ। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য যেন বেশ কিছু কিশোরীর বুকে তীর বসিয়ে দিলো।পাড়ার মেয়ে গুলো কেমন দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। একটু করে তাকালো ভোর।তবে সেসব গাঁয়ে মাখলো না তেমন। ছুটে এলো তাফিন। রাদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
_সবাই দেহো আমার আপুর বর। বলেছিলাম না আমার আপুর বর খুব সুন্দর। দেহো সবাই, কেমন রাজপুত্র।

সকলের দৃষ্টি যেন রাদ কে ঘিরে। তবে এবার নজরে এলো ভোর। মেয়েটা এমনি তেই সুন্দরী। তবে এখন মনে হচ্ছে চাঁদ থেকে নেমে আসা কোনো অপ্সরী। মেয়ে, মেয়ে জামাই সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে কুলছুম এর। শাশুড়ির পা ধরে সালাম করলো রাদ। বলল
_কেমন আছেন আন্টি?

কুলছুম তব্ধা হয়ে আছেন । ধীর পায়ে এগিয়ে এলো ভোর। চোখ দুটো স্থির হলে ও পানি গুলো বাড়ন্ত। যেন টোকা দিলেই পরে যাবে। চেঁচিয়ে উঠলেন কুলছুম। আর্তনাদ করে বললেন
_আমার মাইয়া, আমার ভোর।

_মা

অস্ফুটন স্বরে উচ্চারণ করেই জড়িয়ে ধরলো কুলছুম কে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো মেয়েটা। বুক টা কেমন উঠা নামা করছে। যেন সমস্ত জীবনী শক্তি এখনি ফুরিয়ে যাবে।

ভোরের চোখে মুখে চুমু খেলেন কুলছুম। রাদ অনেক টাই সন্তুষ্ট হয়েছে। আসার পথে সব কিছু জানিয়েছে তাফিন। যা শুনে অবাক হয়েছিলো রাদ। হয়তো ভাগ্য একেই বলে।

রাদ আর ভোর কে ভেতরে যেতে বলে সকলের উদ্দেশ্যে কুলছুম বললেন
_সবাই বইসা যাও। সকলরে মিষ্টি মুখ করামু আমি।

সকলেই দাঁড়িয়ে রইলো। মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে তে নয়। বরং রাজপুত্র, রাজকন্যা কে আরেক বার চোখের দেখা দেখতে।

গ্রাম টা যেন পিছিয়েই রয়েছে। বিদ্যুৎ এলে ও সঠিক ভাবে সার্ভিস দেয় না। নেহাত ই শীতকাল, না হলে যে কি হতো। তাফিন শরবত এগিয়ে দিলো। ছিম ছাম ঘর টা একি রকম রয়েছে। কোনো পরিবর্তন ই হয় নি। যেন ছয় বছর পূর্বের সেই সময়ের ই গ্রাম।
মেয়েটার চোখের জল মুছিয়ে দিলো রাদ। সন্তর্পণে মাথা টা বুকে চেপে বলল
_একদম কান্না করবে না। আমি জানি আমার ভোর অসাধারন ব্যক্তিধারী।যাঁর মাঝে কোনো আঁধারের স্থান নেই। আছে শুধুই রোদ্দুর আর রোদ্দুর।

স্বপ্নের মতো লাগছে সব। এভাবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে তা যেন ছিলো স্বপ্ন।
তাফিন অনেক কিছুই জানিয়েছে। ছোট্ট ছেলেটার বোনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা সকলের বুকে দাগ কাঁটার মতোই।

ভোর চলে যাওয়ার এক বছরের মাথায় একটি সত্য সকলের সম্মুখ আসে। রাহিলার মেয়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক হয়েছিলো পাত্রের। সেই নিয়ে কতো কিছু হলো। তাছাড়া ভোরের নামে করা বদনাম ও সকলের সামনে আসে। আর তখনি নিজে দের ভুল বুঝতে পারেন তাফাজ্জাল, কুলছুম। প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলেন এই ভেবে যে মেয়ে টা কতো আঘাত করেছেন। ভাগ্য ছিলো বড় বেমানান। তাই তো হজুর মারা যান আগুনে দগ্ধ হয়ে। আর ছাই হয়ে যায় সকল ডকুমেন্ট। হাজার খুঁজে ও ভোর কে পায় নি ওনারা। ক্ষমতাই বা কতো দূর?
সেই থেকে অনুশোচনায় ভুগছেন ওনারা। এদিকে তাফিন ওহ অভিমান করেছে। যেন বেঁচে থাকা টাই পাপ হয়ে গেছে। এই ভরা আঁধারে এক ফালি রোদ্দুর হয়ে ফিরে এলো ভোর আর রাদ।

পুরো গ্রামে খবর টা ছড়িয়ে পরলো। একে একে সবাই দেখতে এলো। প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে।ভোরের ভেতর থেকে তৃপ্তি এলো। সকলের অগোচরে রাদের বুকে মাথা রেখে বলল
_এমন রোদ্দুরে নিয়ে আসার জন্য কৃতঙ্গ ডাক্তার সাহেব। এমন ভালোবাসা দেওয়ার জন্য কৃতঙ্গ ডাক্তার সাহেব। এতো ঘন আঁধারের ভিরে আমাকে খুঁজে নিয়ে রোদ্দুরে পৌছে দেওয়ার জন্য কৃতঙ্গ ডাক্তার সাহেব। আমি কৃতঙ্গ আপনাকে পেয়ে।
এই রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিশ্রুতি করছি কখনো আঁধারে ডুবতে দিবো না।দু হাতে আঁকড়ে নিবো। আঁধার কে তুচ্ছ করে আমি ওহ চেঁচিয়ে বলবো ডাক্তার সাহেব চলুন রোদ্দুরে।

মেয়েটার কথায় হেসে উঠলো রাদ। আলগোছে গালে চুমু খেয়ে বলল
_চলুন নয় বলো চলো রোদ্দুরে।

লজ্জা পেলো ভোর। সে লজ্জা নিবারণে রাদ কেই বেছে নিলো। ছেলেটার উষ্ণ বুকে মুখ লুকিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। কজন পারে এভাবে নর্দমার কালো আঁধার থেকে তুলে রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে?

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_39

বেশ অনেক গুলো দিন পেরিয়ে গেল নাহিদের সাথে যোগাযোগ নেই সুপ্তির। মেয়েটা বারং বার বললো জাপান গিয়ে ফোন দিতে তবে নাহিদ যেন ভুলেই গেছে।মন টা ভীষন ভাবে ক্ষত। রাদ আর ভোর কে আসতে বলেছিলো সুপ্তি। তাঁদের ও খবর নেই। কিচেনে গিয়ে নুডলস এর বাটি নিয়ে নুডলস খেতে লাগলো। ডোর বেল বাজতেই নুডলস রেখে গেল দরজার কাছে। সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরলো ভোর। মেয়েটার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে সুপ্তির। ছোট বোনের চোখেই দেখে। রাদ এর হাতে কয়েক টা এন্টিক শো পিচ।ভ্রু নাঁচিয়ে সুপ্তি বলল
_এই জিনিসের জন্য এতো টা লেট করলি?

_হ্যাঁ রে কথাকলি। তুই সেদিন হা হয়ে তাকিয়ে ছিলি, তাই ভাবলাম এগুলোই গিফ্ট করে দেই।

_হয়েছে, হয়েছে এবার ভেতরে আসুন।

কাউচে বসতে বসতে রাদ বলল
_এতো জরুরি তলব কেন?

_নাহিদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। সোশ্যাল সাইটে ও নেই।

_আচ্ছা আমি দেখছি আঙ্কেল কে ফোন করে।

_ধ্যাত ওনার ফোন ও বন্ধ।

একটু চিন্তিত হলো রাদ। গ্রামে নেটওয়ার্ক ছিলো না। এই কয়েক টা দিন সেখানেই ছিলো ওরা। তাই কারো সাথেই কথা বলা হয় নি।ভোর কিছু একটা ভেবে বলল
_আমার মনে হয় ভাইয়া কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেদিন তো আমাদের সাথে তেমন কথা ও বললো না।

_ওহ একটু এমনি। তবে আমার এখন ভয় হচ্ছে।

_আচ্ছা চিন্তা করিস না। আমি দেখছি, আমার কাছে আঙ্কেল এর ম্যানেজার এর নাম্বার থাকার কথা। বাসায় গিয়ে জানাচ্ছি।

_আচ্ছা। যোগাযোগ হলে বলবি আমাকে যেন কল করে।

_হুম বলবো। তুই রেস্ট নে।

মলিন মুখে উঠে দাঁড়ালো সুপ্তি। ভেতর টা কেমন করছে। নাহিদের কিছু হলো না তো?

স্প্যানিশ রমনী টি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নাহিদের দিকে। ছোট বেলার বন্ধু হলে ও নাহিদের সাথে প্রণয়নের সম্পর্ক ছিলো ওর। তবে বিশেষ কারনে সে সম্পর্ক টা ভেঙে যায়।
অবশ্য নাহিদের সাথে অনেক মেয়ের রিলেশন ছিলো।কোনো রিলেশন কেই সিরিয়াসলি নেয় নি ছেলেটা। সিগার এর গন্ধে পুরো পরিবেশ টা কেমন অদ্ভুত লাগছে। জেসিকার মনে কিছু টা ভয় চেপেছে। নাহিদ প্রচন্ড রাগি ছেলে। তবু ও জেসিকা বলল
_সিগার খাওয়া কি খুব প্রয়োজন?

_অপ্রয়োজনে কিছু করতে আমার ভালো লাগে এটা তো তোমার অজানা নয় জেসি।

মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো জেসিকা। নাহিদ ওকে বার বার আঘাত করে।
ব্রেকআপ এর পর জেসিকা বলেছিলো এর পর থেকে ওকে কখনো যেন জেসি বলে সমোন্ধন না করে। তবে সবর্দাই জেসি বলে সম্বোধন করে নাহিদ। সিগার টা ফেলে পা দিয়ে পিষতে পিষতে নাহিদ বলল
_জীবনে কখনো ভালোবাসতে নেই। এই ভালোবাসা গুলো খুব যন্ত্রণার হয়।

বাংলা ভাষা ব্যবহারে কিছুই বুঝতে পারলো না জেসিকা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। নাহিদ কিছু টা এগিয়ে এসে জেসিকার কপালে চুমু দিলো। মেয়েটার চোখে পানি এসে গেছে। নাহিদ ইংরেজি তে বলল
_তুমি বলেছিলে আমি যেন এমন কারো প্রেমে পরি যে কখনোই আমার হবে না।

_রাগের মাথায় বলেছিলাম নাহিদ।

_সে কথা ফলে গেছে জেসি। অন্য দের কষ্ট দিয়েছি কি না জানা নেই তবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।তাই সৃষ্টিকর্তা আমায় কষ্ট দিবেন বলে স্থির করেছেন।

_তুমি তাঁকে সত্যি টা বলছো না কেন?

_উপায় নেই। মিথ্যে বলতে বলতে এতো টাই পঁচে গেছি যে কেউ আমার সঙ্গ দিবে না।

_শেষ চেষ্টা তো করতেই পারো।

মলিন হাসলো নাহিদ। প্রতিশ্রুতি গুলো চোখের সামনে ভেসে চলেছে। এক দিকে নীলাশা অন্য দিকে সুপ্তির ভালোবাসা।
.

ভাঙা গলায় কেঁদে চলেছে সুপ্তি। ভোর কে এক হাতে কাছে টেনে নিয়ে রাদ বলল
_অদ্ভুত পাগলি মেয়েটা। নাহিদ কে যেন নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে।

_হ্যাঁ। আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আপু কে একান্ত সময় কাঁটাতে দিন। ভাইয়ার সাথে কথা বলে মন হালকা করুক।

_আচ্ছা চলো।

সুপ্তি কে কিছু না বলেই চলে গেল ওরা। মন টা এতোক্ষনে স্থির হলো। নাহিদ কে আচ্ছা কে পেটাতে ইচ্ছে হয় রাদের। এই ফোন হারিয়ে ফেলে তো এই সিম কার্ড।

রামিসা আর ইফতিহার কোনো বিশেষ আলোচনায় বসেছেন। কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত দেখাচ্ছে ওনাদের। তবে ভোর আর রাদ কে দেখে স্বাভাবিক হলেন।
রাদের সিক্সথ সেন্স বলছে ওনারা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন। রামিসা এগিয়ে এসে ভোর কে জড়িয়ে ধরলো। বলল
_মেয়েটা কতো দিন পর বাসায় এলো।

_স্যরি আম্মু। আসলে আমরা একটু বেশিই লেট করে ফেলেছি।

_হ্যাঁ তা ঠিক।আমার ছেলে টা বড্ড অধৈর্য হয়ে পরেছে।

_কিছু বললে মম?

_শশুর বাড়ি থেকে ঘুরে এসে মাঝের একটি দিন যে রিসোর্ট এ কাঁটিয়ে এসেছো সেটা জানি না ভেবেছে?

রাদ কেবলি মাথা চুলকোলো। তবে ভোর ভীষন লজ্জায় পরেছে। ইফতিহার স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন
_বুঝলে ভোর তোমার আম্মুর সাথে একটি মজার ঘটনা রয়েছে আমার।

_এই না। এসব কথা ছেলে মেয়ে দের কাছে বলতে লজ্জা করবে না তোমার?

_লজ্জার কি আছে বলো তো।

_তুমি বলবে না।

_আমি বলবোই।

_দেখো তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো।

_বেশি বেশি না, তুমি যে তখন আমার উপর

ইফতিহারের মুখ চেপে ধরলেন রামিসা। রাদ আর ভোর খলবিলিয়ে হাসতে লাগলো। ওনাদের দুজনের আচারন দেখলে মনে হয় এই তো কিছু দিন পূর্বেই মধুচন্দ্রিমা সম্পূর্ন করেছেন।
_তোমরা তোমাদের মধুচন্দ্রিমার বিশেষ কথা বলতে থাকো আমি আমার বউ কে নিয়ে পালালাম।

_এই রাদ শোনো

কে শোনো কার কথা। ইফতিহারের দিকে রাগি দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন রামিসা।কি একটা অবস্থা ছেলে মেয়েদের কাছে নিজের মধুচন্দ্রিমার ঘটনা শোনাবে।

ভোরের মাথা টা বুকে চেপে ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে রাদ। আকাশে অর্ধ চাঁদ। পাশেই বিশাল দিঘি। শতেক খানেক পদ্ম ফুটে আছে বা তার ও বেশি। দোলনায় শুয়ে রাদের বুকে আঁকি বুকি করে চলেছে ভোর। মাঝে মাঝে ছেলেটার আঙুল নিয়ে খেলছে। এরি মাঝে রাদ বলে উঠলো
_আমাদের ছোট্ট একটা সদস্য প্রয়োজন।ছোট ছোট হাত পা নিয়ে খেলবো আমি। জানো আজকাল রনিত কে দেখলে আমার প্রচন্ড হিংসে হয়। মনে হয় আমাকে ও কেউ পাপা , পাপা বলে ডাকুক।

_আর আমার বুঝি ইচ্ছে করে না?

_একটা বাবু নিবো তাহলে?

রাদের ভারী দৃষ্টি। ভোর এবার চোখ মেলে তাকালো। ছেলেটার মসৃন গালে হাত বুলিয়ে বলল
_এখন তো মোটামুটি ফ্রি টাইম। আমাদের ছোট্ট একটা সদস্য নেওয়াই যায়।

ফট করেই মেয়েটার কপালে চুমু এঁকে দিলো রাদ। ভোর শুকনো হাসলো।
তবে অধিক খুশি হতে পারছে না মেয়েটা। বার বার কেমন ভয় হচ্ছে। রাদ ধীরে ধীরে ওর চুলে আঙুল গলিয়ে দিলো। পদ্ম দিঘির ধারেই আজকের রাত কাঁটিয়ে দিবে ওরা। বড্ড সুন্দর এ জলাধার। হালকা চাঁদের আলোয় যা আরো মোহনীয় হয়ে গেছে।

নীলিশা যেন পরিনত হয়েছে উন্মাদ মানবী তে। ওয়াইন এর নেশা টা আগে থেকে থাকলে ও এখন যেন তা দ্বিগুণ বেড়েছে। নাহিদের চোখ চিক চিক করছে।ওর এখনো মনে আছে বহু বছর পূর্বে দেওয়া কথা টা। চোখ বন্ধ করলেই সে দৃশ্য দেখতে পায় ওহ। নীলাশার কিশোরী মন যখন রাদ কে পেতে চায় তখন নাহিদ হেসে বলেছিল ‘ তোর দা ভাই এনে দিবে রাদ কে।’ নীলাশা সেদিন পচন্ড খুশি হয়েছিলো।
উত্তেজনায় কেঁদে উঠেছিলো। সে কান্না ছিলো বড় সুখের। তবে আজকের জল যে বড় দুঃখের।

_এই দা ভাই রাদ কে এনে দিবি তো তুই? বল না এনে দিবি। আমি পাবো তো ওকে? বলছিস না কেন?

_দিবো বনু। তুই প্লিজ শান্ত হ।

_আমার সব থেকে ভালো ভাই ও পারে নি রাদের খবর রাখতে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দা ভাই।তুমি পারলে না, পারলে না তুমি।

নীলাশা থামলো। আরেকটু ওয়াইন ঢেলে নিয়ে আবার উল্টো পাল্টা কথা শুরু করলো। মেয়েটার পাগলামি নাহিদ কে হাজার সুচের খোঁচার মতো ব্যথিত করে চলেছে। মন কে স্থির রেখে নীলাশার মাথায় হাত বুলিয়ে ঝাপসা চোখে বলল
_আজ ই ফিরে যাচ্ছি আমি। আর রাদ কে বোঝানোর চেষ্টা করবো।

_যদি না বুঝে?

_উল্টো পথ অবলম্বন করবো।

_আমার রাদের কিছু হবে না তো?

_না হবে না।

নীলাশা নাহিদের হাত টা চেপে ধরে বসে রইলো। সামনেই রয়েছে রাদের ছবি। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলানো পূর্ণ ডাক্তার। ঠোঁট টা হালকা প্রসারিত করে নীলাশা বলল
_আমার ডাক্তার সাহেব।

বিস্ফোরিত চোখে তাকালো নাহিদ। বুক টা ভীষন যন্ত্রণা দিচ্ছে। ভোর ওহ তো রাদ কে ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে