চারুকাব্য পর্ব-১৫+১৬

0
209

#চারুকাব্য ১৫
লেখা : #azyah_সূচনা

“আমি চাই না প্রমাণগুলো ওই লোককে দিতে।একবার যদি প্রমাণগুলো কবিরের হাতে পড়ে যায় এক সেকেন্ড দেরি করবে না কাব্য স্যারকে মেরে ফেলতে।”

“আর যদি আমরা প্রমাণগুলো রেখে দেই কাব্যকে বাঁচিয়ে রাখবে তার নিশ্চয়তা কি?” প্রশ্ন করলেন চঞ্চল সাহেব।

আমজাদ থমকালো।এটা ভাবেনি।কোনো নিশ্চয়তাইতো নেই। নিশ্চয়তা শব্দটা এখানে অকেজো।নিজে থেকে চঞ্চল সাহেবের কাছে বসেছেন।তাকে সব খুলে বলা উচিত।এটা ভেবেই তার নিকটে আসা।

“কাব্য কেনো গেলো নিজে থেকে কবিরের কাছে?কি দরকার ছিলো?”

“আমরা যেদিন ঢাকা ফিরে আসি আমাদের গাড়িতে গুলি ছোড়া হয়েছিলো।ঠিক চারু ম্যাডামের বরাবর।ম্যাডাম ঘুমিয়ে ছিলেন।কাব্য স্যার থেকে প্রতিশোধ নিতে চারু ম্যাডামকে তারা টার্গেট করেছিলো।এই যাত্রায় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি তাই স্যারকে চব্বিশ ঘণ্টার আলটমেটাম দেয়।নিজেকে স্যারেন্ডার না করলে চয়নকে তুলে আনবে স্কুল থেকে।চারু ম্যাডামকে মেরে ফেলবে।”

চঞ্চল সাহেব মাথা দুলিয়ে বললেন, “কবির এখনও থামেনি না?”

আমজাদ করুন কন্ঠে উত্তর দিলো, “আমি কিছুই জানি না।আমি কাব্য স্যারকে সহি সালামতে দেখতে চাই”

পিনপিনে স্তব্ধতা ছেয়ে গেলো দুজনার মধ্যে।ভাবুক মুখের ভঙ্গি চঞ্চল সাহেবের।চোখের পলক ফেলছেন বারংবার। আমজাদও তার মুখপানে চেয়ে।এখন কাব্য নেই।চঞ্চল সাহেবের আদেশ অনুযায়ী কাজ করবে সে।নীরবতা ভাঙলেন চঞ্চল সাহেব।বললেন,

“আমি যাবো। প্রমাণগুলো নিয়ে আমিই যাবো সেখানে।”

“স্যার আপনার জীবনের রিস্ক আছে”

“রিস্কতো কাব্যর জীবনেরও আছে।আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে সে।আজ নাহয় আমিও ওর ঋণ শোধ করার চেষ্টা করবো।”

চারুর রেজাল্ট এসেছে গতকালই।ইচ্ছে হয়নি দেখার।বাবার কাছ থেকে এতশতো কথা জেনে মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়েছিল। ঘুমহীন রাত পেরিয়ে এখনও চারুর চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে।ভুলভাল কল্পনারা ভাসছে। হৃদ প্রচুর পরিমাণ ক্লেশিত।কেনো মুক্ত করতে পারছে না নিজেকে?কাব্যর মুখটা ভেসে আসছে।তার চোখ নিঃশব্দে কত কথা বলেছে। ঐকান্তিক কন্ঠস্বর কর্ণপাত হচ্ছে বারবার। প্রসন্নতায় পরিব্যাপ্ত। বিশ্রী মননে আবৃত হয়ে ক্ষণেক্ষণে আকম্পন অনুভব করে।যদি সত্যিই কাব্যর কিছু হয়ে যায়?নাহ!এভাবে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।শ্বাস আটকে মরণ হবে নির্ঘাত।দু পা মাটিতে ফেলে ঘরের বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো।তার আগেই নিজেকে থামায়।কি করবে সে?কি করতে পারে?এই আবদ্ধ জীবনে তার কিছু করারও জো নেই।

ফোন বাজছে।চারু টেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মাহমুদ স্যারের কল।ফোনটা তুলতে ইচ্ছে হলো না।অবশ্যই জানতে চাইবেন কি রেজাল্ট এসেছে!সেতো নিজেই দেখেনি ফলাফল।ভালো হোক খারাপ হোক আর কোনো লাভই নেই।অনিচ্ছা শর্তেও ফোনটা তুলে নিলো।

__

“আসেন ম্যানেজার সাহেব।কত্তদিন পর!”

কবিরের দিকে ফিরেও চাইলো না চঞ্চল সাহেব।তার চোখ থেকে কাব্যর মুখটা সরছে না।হাত দুটো পেছনে বেধে রাখা। মাথা ঝুকে জ্ঞানহীন অবস্থায় পড়ে আছে ছেলেটা।রক্তের ছাপগুলোও অস্পষ্ট নয়।

“এতটা নির্দয় কি করে হতে পারেন কবির সাহেব?কি করে পারেন!এই ছেলেটা আপনার!রক্ত আপনার!আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ওকে এই অবস্থায় দেখে।আর আপনি বাবা হয়ে ওর এই অবস্থা করলেন?”

কবির হাসলো। পৈচাশিক হাসি।এই দেহে বোধহয় হৃদয় নামক বস্তুটা নেই। বিবেকহীনতো সে অনেক বছর আগে থেকেই।বললো,

“বেশি বাড় বেড়েছিলো।আমার টাকায় যোগ্য হয়ে আমাকেই চলেছিলো জেলের ভাত খাওয়াতে।একসাথে কাজ করার বাহানায় আমার ছেলে আমার বিরুদ্ধেই সব প্রমাণ জুগিয়েছে?আর সেটা দিয়ে আমাকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করে গেছে।ওর কারণে বাধ্য হয়ে আমি দেশ ছেড়েছি।আমার তিলেতিলে গড়ে তোলা সমস্ত কিছু অর্ধেকটাই হারিয়ে ফেলেছি।সেতো রক্তের মূল্য দেয়নি।আমি কেনো দেবো?”

দাত কটমট করে চঞ্চল সাহেব বলে উঠেন, “বাবা নামের কলঙ্গ আপনি।”

“আমি বাবা নামের কলংক হলে কাব্যও ছেলে নামের কলঙ্ক।যেই থালায় খেয়েছে সেটায়ই ছেদ করেছে।”

“আর আপনি কি করছিলেন?অপরাধ। অপকর্ম।”

এক এক করে বুলেট লোড করলো পিস্তলে কবির।মুখ কুচকে চঞ্চল সাহেবকে বলতে লাগলো,

“এত ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানের সময় নেই আমার।তোমাকে ক্ষমা করেছি।তুমি আমার হাতে প্রমাণ গুলো তুলে দিয়ে বিদায় হও।”

এক পলক কাব্যর দিকে তাকিয়ে চঞ্চল সাহেব বলে উঠেন, “সব প্রমাণ এনেছি।আপনার হাতে তুলেও দিবো।তার আগে আমার একটা শর্ত আছে।”

থমথমে গলায় জানতে চায় কবির, “কি শর্ত?”

“আপনি প্রমাণগুলো একহাতে নিবেন।আরেক হাতে কাব্যকে ছেড়ে দিবেন।”

রহস্যময় হাসলেন কবির।চঞ্চল সাহেব একাধারে তার দিকে চেয়ে। ভাবসাব বোঝার চেষ্টায়।যতই হোক এতটা বছর কাটিয়েছে তার সাথে।তার মুখ পড়তে পারবে একটু হলেও।

“ভেবে দেখবো।পেন ড্রাইভ আর ডকুমেন্টগুলো দেও ম্যানেজার।নাহয় শুধু কাব্য না তুমিও প্রাণ হারাবে।মনে বউ,ছেলে মেয়ের চিন্তা আছেতো নাকি?”

চঞ্চল সাহেব বুঝে উঠতে পারলেন না কি করবেন।নিজের জীবনের মায়া নাকি কাব্যর?একা ফেলে রেখে যাওয়ার মন মানসিকতা নিয়ে আসেননি।চান না কাব্যর কোনো ক্ষতি হোক।কবির এর ভেবে দেখার মধ্যে কোনো নিশ্চয়তা নেই।বলা চলে সাময়িক শান্তনা দিলো।এত সহজেই ছেড়ে দিবে?

হাতে থাকা কাগজ ও ছোট্ট পেনড্রাইভ এগিয়ে দিলো কবিরের দিকে। সাথেসাথে হাতের মুঠোয় নিয়েছে।মুখে বিজয়ের হাসি নিয়ে বাকি গার্ডদের ডাকলো।আদেশ করলো,

“এই পঙ্গু ম্যানেজারকে ধরে বেধে এই এরিয়ার বাহিরে নিয়ে ফেলে এসো।আর খবরদার এখানে যাই হোক। ও ফিরে যেনো না আসে।”

কথার মর্ম বুঝতে অক্ষম চঞ্চল সাহেব।হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো তিন চারজন।হাত ছড়াছড়ি করে বারবার আকুতি মিনতি করতে লাগলেন।কাব্যকে ছেড়ে দেওয়ার দোহাই দিচ্ছেন।লাভ হলো না।উল্টো আরো আতঙ্কিত করে তুললো একটি দৃশ্য। পিস্তলের ট্রিগারে হাত রেখে জ্ঞানহীন কাব্যর বরাবর দাড়িয়ে আছে কবির।নিজের হাতের সাহায্যে চুল মুঠ করে ধরে মাথা তুললো কাব্যর।ঠিক কাব্যর কপালের উপরিভাগে ঠেকায় বন্দুকটি।বাকিটা দেখার পূর্বেই সুবিশাল দেহের লোকগুলো চঞ্চল সাহেবকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।হাত জোড় করতে বাঁধলো না।কাব্যকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আর্তনাদে ভেঙে পড়ছেন চঞ্চল সাহেব। উচ্চ গুলির আওয়াজে যেনো এক মুহুর্তে সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো।শুনশান নীরবতায় ছেয়ে গেল অল্পক্ষনেই সবকিছু। চঞ্চল সাহেবও থমকে গেছেন।আর হাত ছুঁড়ছেন না।

লোকগুলোর মধ্যে একজন আরেকজনকে অকস্মাৎ বলে উঠে,

“কাজ হয়ে গেছে।দ্রুত চল একে মেইন রোডে পৌঁছে দিয়ে স্যারের কাছে আসতে হবে। এমনেতেই ব্যাটার মাথা গরম!”

আমজাদ দাড়িয়ে আছে।রিস্ক নেয়নি চঞ্চল সাহেবকে নিয়ে।নিজেই এসেছে।অথচ অনেকটা দুরত্বেই তাকে দাড়াতে হয়েছে।দুর থেকে দৃষ্টিগোচর হলো চঞ্চল সাহেবের হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে আসছে কয়েকজন লোক।আমজাদ এগিয়ে যেতে চাইলে বাধাপ্রাপ্ত হয়।কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই আমজাদের কাছে রেখে চলে গেলো লোকগুলো।

“কাব্য স্যারকে দেখেছেন?ঠিক আছেন উনি?ওরা স্যারকে…”

“মেরে ফেলেছে”

মূর্তির মতন শক্ত হয়ে জবাব আসে চঞ্চল সাহেবের কাছ থেকে।একবার শুনে আমজাদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েও পূনরায় নড়েচড়ে উঠে।বলে,

“স্যার আপনি কি বলছেন?”

চঞ্চল সাহেবের রাগী গলা শোনা গেলো, “শুনো নি কি বলছি! মেরে দিয়েছে ওর বাবা ওকে।আমার সামনে…ওর মাথায় বন্দুক ধরেছে….আমি অক্ষম একটা লোক!কিছুই করতে পারলাম না।ওকে মেরে ফেলেছে!”

উত্তেজিত কন্ঠস্বর। হাপিয়ে উঠছেন বারেবারে।কথাগুলো মুখে আটকে আসছে চঞ্চল সাহেবের।উঠানামা করা নিঃশ্বাসের গতির সাথে বুক চেপে ধরলেন।জ্ঞানশূন্য হয়ে দাড়িয়ে আমজাদও।মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে চঞ্চল সাহেবের।তার দিকে চেয়ে আমজাদ ভরকে উঠলো। অনুসরণ করলো কাব্যর অতীতে বলা একটা কথা।

“সবসময মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করবে।পরিস্থিতি সাপেক্ষে যা করা দরকার সেটাই করবে ইমিডিয়েটলি।এর মাঝে কোনো দুর্বলতাকে বাঁধা হয়ে আসতে দেওয়া চলবে না।”

এখন পরিস্থিতি বলছে চারুর বাবাকে দ্রুত এখান থেকে নিয়ে যাওয়া দরকার।তার চিকিৎসার প্রয়োজন।চোখ উল্টে যাচ্ছে তার। আকড়ে যাচ্ছেন হুইল চেয়ারে বসেই।নিজের শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে চঞ্চল সাহেবকে গাড়িতে তুলে নিলো। লাগামহীন ঘোড়ার মতন ছুটে চলেছে হসপিটালের দিকে।

__

“গুড আফটার নুন মিস চারুলতা”

টিচার্স রুমে বসে বই পড়তে থাকা চারুর মনোযোগ ক্ষুণ্ণ হয় পুরুষালি কণ্ঠে। অপরাহ্নের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে তারই একজন সহকর্মী তানভীর।আকাশী রঙের শার্ট পরিহিত একজন পুরুষ হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।

ভার মুখ খানায় মিথ্যে হাসি টেনে প্রতিউত্তরে বললো, “গুড আফটার নুন”

“তো মিস চারুলতা…”

তানভীরের কথা পূর্ন হওয়ার সুযোগই পেলো না।চোখ থেকে সচ্ছ চশমা সরিয়ে চারু বলে উঠলো,

“চারু।শুধু চারু আমার নাম”

কথায় কঠোরতার আভাস পেলো তানভীর।মেয়েটি রেগে গেলো নাতো?দ্রুত সম্ভব ক্ষমা চেয়ে তানভীর উত্তর দেয়, “আই অ্যাম সরি।আসলে চারুর সাথে লতাটা যায়।তাই আরকি! যাই হোক।প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড”

“ইটস টোটালি ফাইন”

চায়ের কাপ হাতে স্টাফ এসেছে।বিকেলের সময়ে সব টিচাররাই চা নাস্তা করে।চারু আর তানভীরকে দুকাপ চা দিয়ে চলে গেলো সে। নিঃশব্দেই চায়ের কাপে চুমুক দেয় চারু।চোখ আবারো নামিয়েছে বইয়ের দিকে। তানভীর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলো তাকে। খুবই সাধারণ একজন নারী সে।তারপরও এতো অসাধারণ ব্যক্তিত্ব! ভাবাতে বাধ্য করে তার কথা বলার ধরন।তার এড়িয়ে যাওয়াটাও ভিন্নভাবেই মনোযোগহরণ করে।

চারু নীরবতা ভাঙবে না।ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ করে বসে থাকতে পারবে। তাই তানভীরই আগ বাড়িয়ে বললো,

“আমি দুই বছর যাবত আছি এই প্রতিষ্ঠানে।অথচ এখানকার অর্ধেক স্টুডেন্ট নাকি আমাকে চেনেই না।অথচ দেখেন আপনি এসেছেন মাত্র একবছরও পূর্ণ হয়নি।সারা স্টুডেন্টমহলে আপনারই জয়গান।”

“কোনো বিশেষত্ব নেই আমার মধ্যে।জানি না আমাকে ওরা কেনো পছন্দ করে”

“কারণ হলো আপনার বচনভঙ্গি। খুবই সাবলীল। মার্জিত।”

চারু উঠে দাড়ায়।ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল, “হতে পারে।আজ আসছি।আমার ক্লাস শেষ”

স্বপ্নকে বাঁচার মধ্যেও আলাদা সুখ আছে।হাতের নাগালে সবকিছু এসে গেলে নিজেকে মনে হয় বিজয়ী।তবে এই সুখটা অনুভব করার মতন সাধ্য নেই কেনো?যতবার নিজের প্রাপ্তির খাতা খুলে দেখা হয় ঠিক ততবার সবটা ভেঙে চুরমার করার শখ জাগে।প্রতি মুহূর্তে,প্রত্যেক ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেও নিজেকে অযোগ্য মনে হয়।শূন্যতায় ডুবে থাকা একটা হৃদয়।কি চায় আসলে?যা এই দুনিয়াতে আর পাওয়া সম্ভব না।

“আপনাকে কতবার বলেছি আমার জন্যে অপেক্ষা করবেন না”

“আদেশ ম্যাডাম।আর ওয়াদা।আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আপনার আর আপনার পরিবারকে দেখে রাখার দায়িত্ব আছে আমার উপর”

হাসি মুখে সরাসরি উত্তর দেয় আমজাদ।কিছু বললো না চারু।এই লোককে বলেও লাভ নেই।সকাল ছয়টায় হাজির থাকে।আবার বিকেলে ঠিক টাইমে চলে আসে। এতবার বারণ করেও শোনাতে পারেনি। প্রত্যেকবারই তার একই জবাব।আদেশ আর ওয়াদা।
ঘরে প্রবেশ করে কোনোদিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।বড়বড় কদম ফেলে বাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেছে।নিত্যদিনের কাজ এটা। সবার প্রথমে বিছানার এক কোণে সারাদিন, সারারাত পাড় করা বাবাই তার প্রথম অগ্রাধিকার পায়।

ঘরে থাকা নার্সকে সবার আগে প্রশ্ন করলো, “কোনো মুভমেন্ট করেছে আজ?”

প্রতিদিনের ন্যায় নার্সের একই উত্তর।সেটি হলো, “না”

বিশেষ কোনো অনুভূতি আসেনি।চারু জানতো এমনি উত্তর আসবে।বাবার পাশে গিয়ে বসে বাবার নড়চড়হীন হাত নিজের হাতের মুঠোয় আগলে দিয়ে বললো,

“আমার মাথায় হাত বোলাতে ইচ্ছে হয়না তোমার?আর কতদিন বিছানায় শুয়ে আরাম করবে।আগেতো অন্তত হুইল চেয়ারে বসে থাকতে।এখন পুরোপুরি অলস হয়ে গেছো বাবা।”

পরপর দুবার স্ট্রোক করায় মুখটা বেকে গিয়েছে চঞ্চল সাহেবের।সম্পূর্ণ দেহ প্যারালাইজড।সস্তি এটাই। আধো আধো কথা বলতে পারেন।মেয়ের কথার জবাবে বললেন,

“ইচ্ছে..ইচ্ছে করে মা। মা.. থায় হাত বোলা..তে”

চলবে..

#চারুকাব্য ১৬
লেখা : #azyah_সূচনা

আজকালের ছেলে মেয়েদের এত অধঃপতন কি করে হলো বুঝে উঠা যায়।হয়তো যান্ত্রিক শক্তি কাছে প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছে। রসাতলে যাচ্ছে দিন কে দিন।পরীক্ষার খাতা দেখে মাথা ব্যাথা চেপে বসলো।নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছে তাই লিখে রেখেছে খাতায়।আজ শনিবার।ছুটির দিন। কাল সারাদিন পরিবারকে দিয়ে আজ বাকি থাকা খাতাগুলো দেখতে গিয়ে মেজাজের পারদ সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।ছেলেগুলো আরো ইতর প্রজাতির।পড়ালেখার নাম নেই খাতা ভর্তি উপন্যাস।এত ভালোভাবে বোঝানোর পরও যদি এদের এই অবস্থা হয়?তাহলেতো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। হাতে গোনা কয়েকজন বাদে সবাই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে।

পূর্ণিমা রাত।মৃদু হাওয়া বইছে সম্পূর্ণ বাতাবরণ জুড়ে।সেই দিকে এক বিন্দু ইয়াত্তা নেই চারুর। অবাধ্য কেশমালাকে বারংবার কানের পেছনে বিরক্তি সহকারে গুজে দায়িত্ব পালন করছে। দৃষ্টিভ্রম হয়। শ্রুতিভ্রমও কি হয়? মিছেমিছি এক আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।প্রতিরাতেই আসে। জ্বালাতন করতে। ক্ষতবিক্ষত করতে! জখম খুঁড়ে খুঁড়ে তাজা করে এই কন্ঠ।

এক মাদক মিশ্রিত গলার স্বর ডেকে বললো, “চারুলতা”

ঠোঁটে ঠোঁট চাপে চারু। হঠাৎই চেচিয়ে উঠে নিস্তব্ধ কক্ষে, “নেই!নেই কোনো চারুলতা।এখানে কোনো চারুলতা থাকে না।”

পাগলের মতন এদিক ওদিক ছুটলো।হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুঁড়ে ফেলছে।দ্রুত হাতে জানালাগুলো বন্ধ করে দেয়।কোনো হাওয়া যেনো ছুতে না পারে।আবার আওয়াজ তুলে চারু।একাকী বলতে লাগে নজর চারিদিকে ঘুরিয়ে,

“সব জানালা বন্ধ করে দিয়েছি।কোনো হাওয়া আমাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না।কোনো ভালোবাসা অনুভব হবে না। শুনছেন আপনি?কেনো আসেন প্রতিদিন?চলে গিয়েও আমাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করছেন কেনো?আমি ভালোবাসি না আপনাকে কতবার বলবো!”

চোখের অশ্রু কোনো বাঁধ মানলো না। অঝোর ধারায় বয়ে যাওয়া কি খুব জরুরি?এত ভোগান্তি কেনো পোহাতে হবে। স্বাদ মেটেনি। কান্না জড়িত গলায় চারু আবার বললো,

“আর কক্ষনো আসবেন না।একদম ডাকাডাকি করবেন না বলে দিলাম।এখানে কোনো চারুলতা থাকে না।খারাপ লোক! স্বার্থপর লোক!”

সারা ঘরে জড়বস্তু। ব্যক্তি অস্তিত্ব মাত্র একজনেরই।একাকী চিৎকার করে যাচ্ছে।হুহু করে কেদে উঠছে অনিচ্ছায়।এই চোখের বর্ষণ চারুর ইচ্ছের বিরুদ্ধেই কাজ করে এখন।কথা শোনে না। আটকালেও আটকায় না।পা চালিয়ে আলমারির সামনে এসে কাব্যর শার্টটি বের করে। হাতে তুলে অস্থিরতারা আরো কয়েক শতগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে। পিঠ ঠেকেছে বিছানার শক্ত কাঠে।কালো রঙের শার্টটিতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো চারু।

হেচকি তুলে অস্ফুট স্বরে আওড়ায়,

“কাব্য”

__

অনেক সময় পর মনে হয় ঘরে মেহমানের দেখা পেলো।নাহয় অতিথি নামক শব্দটা চারুদের জীবন থেকে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।চারু দূর থেকে দেখলো তাদের।অচেনা মুখ।তাদের এত লম্বা জীবনে কখনো দেখেছে কিনা মনে পড়ছে না। শায়লা বেশ যতনে খারিরদারি করছেন তাদের।দুজন মহিলা হাসিমুখে খোশগল্পে মজে আছেন।মুখে সাবলীল হাসি।

তাদের দিয়ে চারুর কোনো কাজ নেই। থাকলেও মা ডেকে নিবেন নিজে থেকেই।ঘরে পা বাড়ানোর আগেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,

“আসলে আপা আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার মেয়ে”

চারুর পা জোড়া থামলো।তার ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছে? দরজার পাশে আড়াল হয়ে দাঁড়ায়।শুনতে ইচ্ছুক তার জন্য কি উদ্দেশ্যে এসেছে এই নারীদ্বয়।

শায়লা প্রশ্ন করলেন, “আমার মেয়ে?”

“আসলে আমি তানভীরের মা।তানভীর চারুর সাথেই একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে।”

“আচ্ছা”

“তো আপা আমি..আসলে কি করে বলি?..আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়েকে চাচ্ছিলাম।”

থতমত খেয়ে গেলেন শায়লা।মুখে পুনরায় হাসি টানার চেষ্টা করছেন।তবে পারছেন না। মুখোমুখি বসে এমন একটা কথা বলে বসেছেন যার কোনো উত্তর নেই। চারুও স্তম্ভিত। কল্পনার বাহিরে পরিস্থিতি বসার ঘরে। তানভীরকে চেনে।তার মাকে প্রথম দেখছে।

তানভীরের মা পাশে বসা মহিলাকে দেখিয়ে বললেন, “এভাবেইতো কারো বাসায় আসা যায়না হুট করে তাই জুন আপাকে নিয়ে আসলাম। উনিতো আপনার পরিচিত।আমার ছেলেকে কত চেষ্টা করেছি বিয়ে দেওয়ার।ছেলেটা কথাই শুনতে চায় না।আমাকে গতকাল বললো চারুর কথা।আমি দেরি না করেই এখানে এসেছি।আপনারা কিছু মনে করবেন না।”

শায়লা তার মেয়েকে অন্যভাবে চিনেছে এই এক বছরে।নরম স্বভাবটা নিঃশেষ।কঠোর হয়ে উঠেছে।এসবের অন্তরালে কাব্য। কাব্যকে হত্যা করা হয়েছে।এই খবরটাই তাকে সবকিছু থেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নিলো।রাগ ছিলো।তবে অতটা নয়।সেদিন দেখেছে তার ভয়ঙ্কর রূপ। জিনিসপত্র ভেঙেছে। মসৃণ হাতে ভাঙ্গা কাচের কত ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেদিন।হিসেব করা যাবেনা।

তানভীরের মা ভাবনা চিন্তার ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন।বলেন,

“নিজের ছেলের সুনাম করতে আমি চাই না।কিন্তু আপা বলবো আমার ছেলে অঢেল সম্পদের মালিক না হলেও একজন ভালো মনের মানুষ।ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আমার এই ছেলেটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।ঘরের কাজও কিন্তু পারে আপা।তাছারাও চারু মাও ওরই সাথে কাজ করে।দুজন দুজনের কাজ বুঝবে।”

আমতা আমতা করে শায়লা উত্তর দিলেন, “আসলে আপা।”

“প্লিজ আপা আমার ছেলেকে রিজেক্ট করবেন না।আপনার মেয়ে সত্যি সুখে থাকবে।আপনি নাহয় সময় নেন।চারু মাও সময় নেক যতদিন প্রয়োজন। আমার ছেলেকে জানুক বুঝুক।তারপর আগ বাড়বেন এই সম্মন্ধে ”

এখানেই কথোপকথনের শেষ করতে শায়লা বললেন, “আমি চারুর সাথে কথা বলবো।যদি ওর রাজি হয় তাহলে।মেয়ের ইচ্ছে ছাড়া আমরা কিছু করতে পারছি না।”

“জ্বি অবশ্যই। সংসারতো চারুই করবে।”

শায়লা জানেন তার মেয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করবে।উত্তর আসবে না বোধক।এর উর্ধ্বে একটা অক্ষরও উচ্চারণ করবে না।একবার সাহস করে বিয়ের কথা তুলেছিল। অগ্নিমানবি রূপে দেখেছে তাকে।কোনো কারণ না জানিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে।অহেতুক।সেদিন প্রথমবারের মতন মেয়েকে ভয় পেয়েছিলো।এই রূপ আগে কখনোতো দৃষ্টিগোচর হয়নি।

__

“আপনার মনে হয় না আপনি বাড়াবাড়ি করে ফেললেন।আপনাকে কখনো আমি কোনো ইঙ্গিত দিয়েছি?আপনাকে আমি কেনো বিয়ে করবো মিস্টার তানভীর।আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো?”

চারুর রাগী রূপটায় তানভীর লজ্জায় পড়ে গেলো।প্রশ্নে জর্জরিত।উত্তর কি দেবে?বিগত দিনগুলোতে চারু নামক নারী তার মন মস্তিষ্ক হরণ করে রেখেছে।অজান্তেই অনুভূতির জন্ম হয়।সেটাকে পূর্ণতা দিতেই এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া।

স্বভাবত শান্ত তানভীর।শীতল গলায় উত্তর দিলো, “মিস চারু প্লিজ ভুল বুঝবেন না।আমার মনে আপনার জন্য অনেক আগে থেকেই একটা দুর্বল স্থান সৃষ্টি হয়েছে। হ্যা এটা শুধু আমারই অনুভূতি।আপনি আমাকে কখনো কোনো ইঙ্গিত দেননি।আমি চেয়েছিলাম আপনাকে জানাতে কিন্তু আমি কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাইনি। বৈধভাবে বিনয়ের সাথে আপনার বাড়িতে প্রস্তাব দিয়েছি।”

মুখ শক্ত করে চারু জবাব দেয়, “আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি না”

“ওকে ওকে! রিল্যাক্স।আমার এতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু কেনো জানতে পারি?আমি দেখতে খারাপ?নাকি আমার স্বভাব আপনার পছন্দ হয়নি”

কপাল কুঁচকে চারু বলে উঠে, “এসব প্রশ্নের কোনো কারণ আমি দেখছি না।”

“না মিস চারু। হ্যা হতে পারে আমাকে আপনার পছন্দ না।কিন্তু ঠিক কি কারণে পছন্দ না সেটা বলতে পারবেন?আমি নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করতাম আরকি”

“মিস্টার কাব.. সরি মিস্টার তানভীর।আপনার মধ্যে কোনো ত্রুটি নেই।যতদিন একসাথে কাজ করেছি আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে জেনেছি আমি।কিন্তু বিয়ে ও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আলাদা।প্রত্যেকটা মানুষের কিছু আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে।আপনি পার্সোনাল লাইফে কেমন আমি জানি না।তাই বলতে পারছি না কোন দিক শুধরে নিতে হবে।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানভীর। অপরাধবোধ কাজ করছে এখন।কেনো এতো তাড়াহুড়ো করে ফেললো?আরেকটু সময় দেওয়া উচিত ছিলো।সম্পর্কের বৈধতার কথা ভাবতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে মনের বাসনা অপূর্ণ রয়ে যাবে।

“আপনি আমার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে জানতে চান?”

“জ্বি না”

“কিন্তু মিস চারু..”

“মিস্টার তানভীর।আপনি জানেন আপনি আমাকে বারবার ভুল নামে ডাকেন?”

কিঞ্চিত আশ্চর্য্য হয়।চারুলতা ডাকার ইচ্ছে ছিলো।এই ডাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে খোদ চারু।এখনও ভুল করছে?কিন্তু কি ভুল?জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে,

“কি ভুল মিস চারু?”

“মিস”

এবারও অর্থ বুঝলো না।পূনরায় প্রশ্ন করে, “মানে?”

পলক ঝাপটে চারু উত্তর দেয়, “মিস এর জায়গায় মিসেস হবে”

কাচের হৃদয়।এক ঝটকায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। শব্দহীনভাবে। হৃদয় ভাঙ্গার কোনো আধ্বান নেই।শুধু রয়েছে এক আর্তনাদ।যা কেবল তার কান অব্দিই পৌঁছায়। পারিপার্শ্বিক কেউ জানে না,বোঝে না। মিসেস?এর অর্থ পরিষ্কার।চারু বিবাহিত। মানতে বেকে বসলো তানভীরের অন্তর।

প্রশ্ন করলো, “আপনি ম্যারিড?”

“জ্বি?”

“কখনো ধারণাও করতে পারিনি।আপনার স্বামীকেও কক্ষনো দেখিনি।”

মোলায়েম দৃষ্টি তুলে চাইলো এবার চারু তানভীরের পানে।এসব কথা বলার জন্য তাকে কাজের জায়গার বাহিরে এসেছে।রাস্তায় দাড়িয়ে এত এত কথা শুনে বিহ্বল হতে হবে ভাবতে পারছে না।

চারু জবাব দিলো, “স্বামী দেখিয়ে বেড়ানোর জিনিস?”

“না তা নয়”

আনমনে চারু বলে উঠলো আকাশ পানে চেয়ে, “সেতো আমার দৃষ্টিরও আড়ালে।কতটা দিন দেখা হয়না।একবার দেখা করতো?শুধু ডাকে।কন্ঠ বাজে তার কর্ণকুহরে।মুখ দর্শন হয়না।”

ঘোর কাটে তানভীরের প্রশ্নে, “যাক আমি জানতাম না।আমাকে ক্ষমা করবেন।আসেন এক কাপ চা খাই?”

অদ্ভুত দৃষ্টি ছুঁড়ে চারু।এখানে আবার চা খাওয়ার প্রসঙ্গ কেনো আসছে।তার সাথে চারুর কথা শেষ।চারুর দৃষ্টির অর্থ চট করে ধরে ফেললো তানভীর।হাসি মাখা সুরে বলল,

“ওয়েট ওয়েট!আমাকে ভুল ভাববেন না।আমি স্বীকার করছি মনের অজান্তে আপনাকে নিয়ে অনেক কিছুই ভেবে ফেলেছি।কিন্তু আমি জানি আমি সেই রকম লোক না।পাগল আশিকের মতন পিছু করবো।আমি জানি হৃদয়ের লাগাম কি করে টানতে হয়।আপনি অন্যের।দৃষ্টি তুলে তাকাবো কিন্তু সেই দৃষ্টিতে সম্মান থাকবে আপনার জন্য।আর কলিগ হিসেবে চায়ের অফার করেছি।নাথিং এলস ”

গটগট করে বলে ফেললো তানভীর সব কথা।এক নিঃশ্বাসে।তার চিন্তায় কোনো ভ্রান্তি নেই সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করলো।ভীতু! মুচকি হাসে চারু।বলে,

“চায়ের বিলটা আমিই দিবো তাহলে।এমনেতেই অনেক ঋণী আমি।আর কারো ঋণ কাধে নেওয়ার মতন শক্তি দেই।”

টং এর দোকানে দুই কাপ চায়ে চুমুক বসাচ্ছে চারু এবং তানভীর।চারুর দৃষ্টি শূন্যে হলেও তানভীর একবার ভালোবাসার দৃষ্টিতে চাইলো।পরপর সরিয়ে নিলো।চোখের পাপ এটা।অন্যের জিনিসের প্রতি নজর দেওয়া কোনো ভালো পুরুষের ব্যক্তিত্ব না।মনে মনে ভাবনার সাগরে ডুব দিল।মানুষ বলে প্রথম ভালোবাসা যন্ত্রণাদায়ক।বিশাল আশার জোয়ার নিয়ে আসে।তলিয়ে দিয়ে যায়। শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে।জীবন যদি সবসময়ই পরিপূর্ণতায় ভরে উঠতো?তাহলে অপূর্ণতা বলে কিছু থাকতো?মনের এক কোণে বসবাস করা মানুষকে কাছে না পাওয়ার দুঃখটাও বেশ উপভোগ্য।যে জানে উপভোগ করতে সে হয়তো চাইতে ভুলে যায়।হাত পেতে রাখা।

“একটা প্রশ্ন করবো মিস..সরি মিসেস চারু?”

“জ্বি অবশ্যই”

“উত্তর দিতে হবে কিন্তু?”

“হুম”

“কে সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি?যে কিনা সবার প্রথমে এসে আপনাকে নিজের করে নিলো?নাম কি তার?”

হাঁটছিলো দুজনই।কদম নড়বড় করে উঠে।জানতে চাচ্ছে তার নাম।সেই নিষ্ঠুর,স্বার্থপর নাম?যেকিনা ঝড় তুলতে এসেছিল? সন্দ্বীপের উত্তাল জোয়ারের ন্যায়।আহামরি নয় যে মানুষ। বিশেষত্ব নেই যার কোনো।যেকিনা প্রকাশ কাজে অসমর্থ। অযথা মানুষের জীবনে এসে জরিয়েছিলো আবার নিজের মন মোতাবেকই চলে গেছে?গেছে কিন্তু এত দূরে?বলতো বারবার!আমার মৃত্যু তোমাকে কাদাবে?বারবার মৃত্যু শব্দ উচ্চারণ করা কলংকিত মুখ।শেষমেশ ডেকেই আনলো তার অন্ত।

ভাবুক চারুর পানে তাকিয়ে আছে তানভীর।মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে চিন্তান্বিত হলো?এই মুখের মমার্থ বোঝার প্রযত্নে সেও অপেক্ষায়।ভাবতে দিচ্ছে চারুকে।সময় হলে আপনাআপনি প্রতিউত্তর দেবে।

“কাব্য আফনান।একটা খারাপ লোক!”

চলবে…