#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১৯
তীব্র বর্ষণের ধারা গিয়ে থামলো প্রভাতের ঠিক পূর্বে৷ হিম অনলে ছড়ালো বুনো ফুলের স্নিগ্ধতা। সিক্ত কাঠগোলাপের দল মাধুর্য পেল সূর্যের প্রথম আলো গায়ে পরশ বুলাতে। কিয়দংশ সময় গড়াতেই টুংটাং শব্দ ভেসে এলো পুবদিকে অবস্থিত রান্নাঘর থেকে। জ্বলে উঠলো চুলো। ধীরে ধীরে জাগ্রত হলো শেখ বাড়ির সকলে। শান্ত পরিবেশ হলো গমগমে। ব্যস্ততায় নিমজ্জিত হলো সময়। দুপুরে মাহিনের বউভাত বলে।
ব্যস্ততা থেকে অবকাশ মিলতেই নির্বাণ রুমে আসে।স্পর্শী তখন আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নিজের সাজ ঠিক করতে মগ্ন। নির্বাণের আবির্ভাব তার বোধগম্য হয়নি। নির্বাণ একপলক সেদিক তাকালো, দৃষ্টি গিয়ে ঠেকলো শাড়ির ফাঁকে নিষিদ্ধ এক স্থানে। সংযতচিত্তে দ্রুত সে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ব্যাগ থেকে নিজের শার্ট-সুট বের করে নিল। বিছানায় সেগুলো রেখে শুভ্র শার্টটি হাতে নিল প্রথমে। ব্যাগের চাপে শার্টটির ভাঁজ প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নির্বাণ বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করার মত শব্দ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নিলুফার রুমের সামনে গিয়ে মন্থর কন্ঠে বলে উঠে, “মা, আয়রনটা কোথায়?”
নিলুফা তখন চশমা ঠিক করে মাত্র বিছানায় বসেছিলেন। নির্বাণের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই তিনি চোখ তুলে তাকান। শান্ত কন্ঠে বলেন, “আলিয়া ভাবীর রুমে থাকার কথা।”
“মামীকে একটু বল দিতে, আমার শার্ট আয়রন করতে হবে।”
“আচ্ছা, তুই যা। কাউকে বলে আমি তোর রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
নির্বাণ ছোট করে ‘আচ্ছা’ বলে চলে যায়৷ রুমে এসে বসতেই নাহিদ হুড়মুড় করে নির্বাণের রুমে ঢুকে। উচ্চকিত কন্ঠে বলে, “ভাবী! ফুলের মালাটা সুবর্ণা পাঠিয়েছে তোমার জন্য। নাও।”
স্পর্শী ফিরে তাকায়। মিষ্টি হেসে বলে, “ধন্যবাদ ভাইয়া।”
নাহিদও প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হেসে রজনীগন্ধার মালাটা এগিয়ে দেয় স্পর্শীর নিকটে। স্পর্শী সেটা হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের এক প্বার্শে রেখে দিয়ে পুনরায় নিমগ্ন হলো নিজ কাজে। নাহিদ একপলক নির্বাণের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “তুই এইভাবে মেয়েদের মত বসে আছিস কেন? রেডি হবি না?”
নির্বাণ শান্ত কন্ঠে বলে, “শার্টের আয়রন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শার্ট আয়রন করে রেডি হয়ে যাব।”
নাহিদ বিছানার কাছে এসে শুভ্র শার্টটা হাতে নিয়ে বলে, “কই নষ্ট হয়েছে? সামান্য একটু কুঁচকে গিয়েছে তাও নিচের দিক দিয়ে। এইটাকে আবার আয়রন করা লাগে? শার্ট তো কোর্টের নিচের থাকবে ভাই, দেখবে কে?”
নির্বাণ স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “তোকে এত কথা বলতে কেউ বলিনি৷ যাহ এখন এইখান থেকে।”
নাহিদ প্রত্যুত্তর করার আগেই আলিয়ার ছোট ছেলে ফাহিম আসে রুমে। নির্বাণকে আয়রন দিয়ে চটজলদি চলে যায়। নাহিদ তা দেখে আফসোসের সুরে বলে, “এত খুঁতখুঁতে স্বভাব ভালো না, বুঝলি। তোর এই স্বভাবের জন্য কবে না জানি আমার কিউট ভাবী পালিয়ে যায়। দেখ, আগেই বলে রাখছি ভাবী যদি পালায় না আমি তোর নামে ক্যাস ঠুকে দিব। ”
নির্বাণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “তোর ভাবীরটা জানি না তবে তুই যদি এখনই আমার সামনে থেকে দূর না হোস তাহলে…”
নির্বাণের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই নাহিদ বলে উঠে, “রাগিস কেন ভাই? মজা করছিলাম তো।”
“তোকে মজা করতে বলেছে কেউ?”
“টিচারদের এই এক সমস্যা, কথায় কথায় সিরিয়াস হয়ে যায়। অ্যাই! তোকে টিচার হতে কে বলেছিল? চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা হতে পারলি না?”
নির্বাণ চড়া গলায় বলে, “যাবি তুইই!!”
নাহিদ দ্রুতপায়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলে, “যাচ্ছি!”
নাহিদ যেতেই নির্বাণ শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। এইদিকে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখে স্পর্শী ঠোঁট চেপে হাসছে। নির্বাণ ঘুরে স্পর্শীর দিকে তাকাতেই স্পর্শী বলে উঠে, “দেন, আমি আয়রন করে দিচ্ছি।”
“দরকার নেই, হাতে লাগিয়ে ফেলবে তুমি। আমি করে নিচ্ছি।”
স্পর্শী অনড় কন্ঠে বলে, “কিছু হবে না, দেন আমায়। করে দিচ্ছি!”
নির্বাণ ভরাট কন্ঠে বলে, “স্পর্শী না করেছি না আমি?”
নির্বাণের ভরাট কন্ঠের পৃষ্ঠে দমে গেল স্পর্শী। হতাশাজনক নিশ্বাস ফেলে নিজের কাজ করতে থাকলো।
_______________
ওয়াশরুম থেকে একবারে তৈরি হয়ে বের হলো নির্বাণ। বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে বা-হাতার বোতামটা লাগাতে লাগাতে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সামনে। স্পর্শী একমনে নিজের খোঁপায় রজনীগন্ধার মালা গাঁথতে ব্যস্ত। অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে হেয়ারপিনের সাহায্যে মালাটা সুন্দরভাবে খোঁপায় এঁটে দেওয়ার কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। যতবারই সে ব্যর্থ হচ্ছে ততবারই সে পাতলা ঠোঁট দু’টি নাড়িয়ে বিরবির করে উঠছে। নির্বাণ তা দেখে আনমনে হাসলো, হাতার বোতাম লাগিয়ে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল সেদিকে। স্পর্শীর পিছনে দাঁড়িয়ে বলে, “দাও, আমি সাহায্য করছি।”
স্পর্শী আয়নার মধ্য দিয়েই নির্বাণের পানে তাকালো। অভিমানী কন্ঠে বলল, “লাগবে নাহ! আমি পারবো করতে।”
স্পর্শীর অভিমান বুঝতে পেরে নির্বাণ ঠোঁট কামড়ে হাসে। মধ্যবর্তী দূরত্ব ঘুচিয়ে নির্বাণ স্পর্শীর খুব নিকটে এসে দাঁড়ায়। স্পর্শীর হাত থেকে হেয়ারপিনগুলো নিয়ে নেয়, “তুমি না বললেই আমায় শুনতে হবে?”
স্পর্শী প্রত্যুত্তর না করে মাথা নুইয়ে দাঁড়ায়। নির্বাণের নৈকট্য স্পর্শীর বক্ষঃস্পন্দনের গতানুগতিক ধারায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। কণ্ঠনালীতে আঁটকা পড়েছে কথাগুলো। উত্তর না পেয়ে নির্বাণ পিনগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে, “এইগুলো লাগায় কিভাবে?”
নির্বাণের প্রশ্নে স্পর্শী চোখ তুলে তাকায়। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোনমতে শব্দ টেনে বের করে কণ্ঠনালী মধ্য হতে। বুঝিয়ে দেয় কিভাবে হেয়ারপিনগুলো ব্যবহার করতে হয়। নির্বাণ নির্দেশনাগুলো শুনে, বুঝে খুব সপ্তপর্ণে স্পর্শীর খোঁপায় মালা চেপে হেয়ারপিনগুলো এঁটে দিতে শুরু করে। মাঝে মধ্যে ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃতভাবেই নির্বাণের আঙ্গুল ছুঁয়ে যায় স্পর্শী গলদেশ, কাঁধ। মুহূর্তেই ভিতর থেকে কেঁপে উঠে স্পর্শী। অজানা ভালোলাগায় আবৃত হয় মন,চিত্ত।
মালা গাঁথা শেষে নির্বাণ স্পর্শীর কাঁধের কাছে মুখ আনতেই তপ্ত নিঃশ্বাসের দল আঁচড়ে পড়ে স্পর্শীর গলদেশে। শাড়ির উপর দিয়ে আলতো হাতে স্পর্শীর কোমর জড়িয়ে ধরতেই স্পর্শী কেঁপে উঠে। আয়নার মধ্য দিয়ে বৃহৎ নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকায় নির্বাণের পানে। নির্বাণ কিঞ্চিৎ হেসে স্পর্শীকে দ্বিগুণ অবাক করে ওষ্ঠ্য ছোঁয়ায় তার কাঁধে। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, “কৃষ্ণময়ীর অলঙ্কার লাজুকলতা, অভিমান নয়।”
কথাটা কর্ণগোচর হতেই স্পর্শী স্থির হয়ে যায়। নিজ সহিতে মেদুর গালে ছঁড়ায় স্নিগ্ধতা। অভিমানী মন গলে নিরুদ্দেশ হয় আকাশে। এই কথার পর কি আদৌ অভিমান থাকার দুঃসাহসিকতা করে?
কিয়ৎক্ষণ পর সরে আসে নির্বাণ। বিছানার উপর থেকে কোর্ট নিয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলে, “তাড়াতাড়ি এসো, বাহিরে অপেক্ষা করছি আমি।”
________________
চারদিকের কোলাহলে স্পর্শীর মাথা ধরে আসতেই নীরব এক জায়গায় খুঁজে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে নেয়। অতঃপর পার্সব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করে ফেসবুক স্ক্রোল করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ এইভাবেই চলে যেতেই অকস্মাৎ স্পর্শীর ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে তার। কিছুটা আশঙ্কা নিয়ে কলটা রিসিভ করে সালাম দেয় স্পর্শী। কিয়ৎকাল নীরবতায় অতিবাহিত হয়ে অপরপাশ থেকে সালামের উত্তর আসে। সে সাথে একটি প্রশ্ন,
“আমার নাম্বার সেভ কর-নি এখনো?”
কন্ঠস্বরের মালিককে সনাক্ত করতে পেরে স্পর্শীর অভিব্যক্তি বিবর্ণ হয়ে উঠে। শুকনো গলায় ঢোক গিলে বলে, “ভুলে গিয়েছিলাম।”
অপরপাশ থেকে নির্বাণ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “কোথায় তুমি?”
“বা-দিকটায় আছি। মাথা ধরেছিল তাই নিরিবিলি জায়গায় দেখে এইখানে এসে বসেছি।”
নির্বাণ উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “ঠিক আছো তুমি?”
“হ্যাঁ, এখন ঠিক আছি। চিন্তা করার বিষয় নেই।”
“আচ্ছা, তুমি থাকো আমি আসছি।”
স্পর্শী ‘আচ্ছা’ বলে কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। ফোন কাটার জন্য আঙুল স্ক্রিনে ছোঁয়ানোর আগেই পাশ থেকে একজন বলে উঠে, “এক্সকিউজ মি মিস!”
স্পর্শী চোখ তুলে তাকায়, “জি?”
হাস্যজ্বল মুখশ্রীর অধিকারী এক ছেলে বলে উঠে, “আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“বলুন!”
“আগে পাশে বসি, তারপর না-হয় বলি?”
স্পর্শী ইতস্তত করলো। ছেলেটা উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করেই বসে পড়লো। স্পর্শী তা দেখে নিজের সিট ছেড়ে এক সিট পিছিয়ে বসলো৷ ছেলেটা তা দেখে হেসে বলল, “আমি দেখতে কিন্তু এতটাও খারাপ নই যে আপনাকে ভয়ে পিছিয়ে যেতে হবে।”
স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকালো ছেলেটার দিকে। ছেলেটা চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল, “জানি আমি কিছুটা অদ্ভুত টাইপ। কিন্তু খারাপ না।”
স্পর্শী কোনরকম ভণিতা না করে জিজ্ঞেস করে, “আমার সাথে আপনার কি যেন কথা ছিল?”
“ছিল তো! তবে এখন বলতে ইচ্ছে করছে না।”
স্পর্শী বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “যেহেতু ইচ্ছে করছে না সেহেতু এখন আসতে পারুন।”
“রেগে গেলেন বুঝি? আচ্ছা, ভণিতা করছি না আর। সোজা পয়েন্টে আসি, আপনাকে কয়েকদিন ধরেই নোটিস করছিলাম। বলতে পুরো বিয়েতে আমি আপনাকেই দেখে গিয়েছি। যতটুকু বুঝেছি আপনার প্রতি আমি কিছু ফিল করি, কিন্তু সেটা কি রকম ঠিক জানি না। আজকের পর আপনার সাথে আমার দেখা হওয়ার সুযোগ তেমন নেই, তাই আপনাকে একা দেখে ভাবলাম মনের কথাটা বলে দেই।”
কথাগুলো লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো ছেলেটা। অতঃপর স্পর্শীর চোখে চোখ রেখে বলল, “আই লাইক ইউ!”
স্পর্শী কাঠ কাঠ গলায় বলে, “আর কতজনকে এই কথা বলেছেন?”
ছেলেটা অবাক হয়ে বলে, “কতজন মানে? আপনাকেই প্রথম বলেছি।”
স্পর্শী বিরক্তিকর কন্ঠে বলে, “চেনা নাই, জানা নেই হুট করে কাউকে বললেই হলো আই লাইক ইউ? আর মেয়েরাও বুঝি নাচতে নাচতে আপনাকে হ্যাঁ বলে দিবে, এত সস্তা মনে হয় মেয়েদের?”
ছেলেটা থমথম কন্ঠে বলে, “তা না ভুল বুঝছেন আপনি। আমি সেটা বুঝাতে চাইনি। আচ্ছা, আপনার সমস্যা এইটাই তো আমরা অপরিচিত? ওকে আমি পরিচয় বলছি আগে, আমি কনের খালাতো ভাইয়ের বন্ধু আদিত্য। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। এইবার আপনার পরিচয় বলুন।”
স্পর্শী কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে নির্বাণের কন্ঠ ভেসে আসে, “তার পরিচয়, সে আমার একমাত্র বউ এবং বরের বড়ভাবী।”
কথাটা শুনে স্পর্শী আর আদিত্য দুইজনেই পিছনে ঘুরে তাকায়। নির্বাণ কান থেকে ফোন নামিয়ে কল কেটে এগিয়ে এসে স্পর্শী হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, “প্লাস ও তোমার সিনিয়রও। ভুল জায়গায় ট্রায় মারছো ব্রাদার।”
নির্বাণের কথায় আদিত্যের মুখ হা হয়ে আসে। সে বিমর্ষচিত্তে একবার স্পর্শীর দিকে তাকায়, আরেকবার নির্বাণের দিকে। অতঃপর কোনমতে উঠে নির্বাণের দিকে তাকিয়ে বলে, “সরি ভাইয়া! আসলে বুঝতে পারিনি,এক্সট্রিমলি সরি।”
কথাটা বলে আদিত্য দ্রুত কেটে পড়ে। নির্বাণ একপলক সেদিকে তাকিয়ে স্পর্শীর দিকে তাকায়। স্পর্শী আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে মিনমিনে কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি? এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“ভাবছি, আমার সামনে ভিজাবিড়াল থাকা মেয়েটা আসলে ভিজাবিড়াল নয়।”
স্পর্শী থমথম দৃষ্টিতে তাকায়। অস্ফুটস্বরে বলে, “তেমন কিছু না।”
কথাটা বলে দ্রুত দৃষ্টি নামায় সে। সে জানে, সকলের নিকট কঠোর হলেও নির্বাণের সম্মুখে সে কঠোর হতে পারে না। চেয়েও কথার খই ফুটাতে পারে না। লজ্জায় আবৃত এবং অন্যরকম অনুভূতির শিহরণে জর্জরিত থাকে। কিন্তু এইটা কি আর স্বীকার করা যায়?
নির্বাণ বলে, “তা না-হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি এখন সেটা নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি তোমার নতুন পরিচয়ের কথা।”
স্পর্শী কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আবার কোন পরিচয়?”
নির্বাণ মুচকি হেসে স্পর্শীর নিকট কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে, “তোমার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, তুমি আমার না হওয়া বাচ্চার মা।”
কথাটা কর্ণপাত হতেই স্পর্শীর কান গরম হয়ে আসে। সে দ্রুত নির্বাণের কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “আপনাকে আমি ভালো জানতাম।”
নির্বাণ হেসে বলে, “তো এখন খারাপ জেনে নাও”
স্পর্শী আনমনে নির্বাণকে বকাঝকা করে চলে যেতে নিলে নির্বাণ পিছন থেকে স্পর্শীর হাত ধরে বলে, “আমার সাথে সাথেই থাকবে এখন৷ আসো!”
#চলবে