#চৈত্রের_শেষে_বৃষ্টি (০৪)
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম
রাতে খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে শশী। চুপচাপ নিজের মতো খাওয়ায় তার মনোযোগ রয়েছে। তার পাশে তার বাবা সুলাইমান সাহেব খাচ্ছেন আর তার পাশে তার মা। নিজে খাচ্ছেন এবং স্বামী সন্তান কে পরিবেশন করছেন। খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে এমন সময় সুলাইমান সাহেব শশী কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“- শশী মামনি! কালকে ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নাই। কালকে বাসায় মেহমান আসবে।
শশী নর্মালি উত্তর দেয়,
“- ঠিক আছে আব্বু।
অতঃপর খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়। শশী চলে যেতেই তাহমিনা আক্তার স্বামী কে প্রশ্ন করেন,
“- তুমি শশী কে কিছু বললে না কেন? এতে যদি হিতে বিপরীত হয় তখন কি হবে? তোমার বলা উচিত ছিল। মেয়েটা কিন্তু খুব রেগে যাবে।
সুলাইমান সাহেব হালকা হেঁসে বলেন,
” যা হবে ভালোই হবে। তুমি অযথা টেনশন করে তোমার ভিপি বাড়ায়ো না।
” যা ভালো হয় করো? কিন্তু মেয়েটার চোখের পানি আমি দেখতে পারব না। সেই ভাবে কাজ করবে বলে দিলাম।
দু’জন খাওয়া শেষ করে যে যার মতো ঘুমাতে চলে যায়।
********
রাত দশটা। শশী বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে অনবরত ফোন বাজছে অথচ ফোন রিসিভ করার কোনো নামগন্ধ ই নেই। শশী ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে বা। কারণ ফোন টা ঊর্মি করেছে। ঊর্মির উপরে খুব রেগে আছে। শশী’র ভাবনার মাঝেই আবার ফোন বেজে ওঠে। শশী নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে বলে,
“- এই শা*লী বারবার ফোন করছিস ক্যান। তুই বুঝছিস না আমি ফোন টা ধরতে চাইছি না। তাহলে কেন বারবার ফোন করে বিরক্ত করছিস আমায়। খবরদার আর ফোন দিবি না। দিলে তোর খবর আছে। ফোন রাখ বলছি বলে ফোন টা কেটে দিতে গেলে ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে থেমে যায় শশী। কান থেকে ফোন টা নামিয়ে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য ভাইয়া নামে সেভ করা। শশী জিভে কামড় খেয়ে বলল,
“- ভাইয়া তুমি? এত রাতে কল করছো কোনো প্রবলেম হয়েছে বাকি?
সৌহার্দ্য শশী’র কথা’য় জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করে,
“- শশী তুমি কাকে এসব বলছিলে? কে তোমায় বিরক্ত করছে?
শশী খুব লজ্জা পায়। নাম্বার না দেখেই কথা গুলো তার বলা উচিত হয়নি। সৌহার্দ্য ভাই কি না কি মনে করল। ধুর ভাল্লাগে না। আমি আসলেই একটা গাধা। না দেখেই বকবক শুরু করে দিছি। শশী’র ভাবনার ছেদ পড়ে সৌহার্দ্য এর কথা’য়। সৌহার্দ্য ফের বলল,
“- শশী অ্যার ইউ ওকে? কথা বলছো না কেন?
শশী বোকা বোকা হেসে বলে,
“- আব আ- সলে ভাইয়া আমি নাম্বার না দেখেই এতগুলো কথা বলে ফেলছি। তুমি মাইন্ড করো না? আমি আসলে আমার ফ্রেন্ড ভেবে এত গুলো কথা বলছি। ও এতবার ফোন দিচ্ছিল তাই ভাবলাম এবার ও হয়তো ওই ফোন দিছে তাই আর কি?
“- আচ্ছা ঠিক আছে। কোনো ব্যাপার না।
সৌহার্দ্য এর কথা’য় শশী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তবে কি যেন মনে করে বলে,
“- ভাইয়া এত রাতে কি মনে করে ফোন দিলে। উৎসব ঠিক আছে তো ওর কিছু হয়নি তো আবার।
সৌহার্দ্য মৃদুস্বরে হাসে। কারণ শশী উৎসব কে নিয়ে সবসময় পজিটিভ। শশী যেমন উৎসব অন্ত প্রাণ তেমনি উৎসব ও শশী অন্ত প্রাণ! দু’জন দু’জন কে খুব ভালোবাসে। দু’জন দু’জনার প্রাণ৷ তারপর শশী’র কথা’য় উত্তর দেয়,
“- রিল্যাক্স শশী। উৎসব ঠিক আছে। উৎসব বারবার শুধু তোমার কথা বলছে। কালা কালা করছে ( খালা)। তাই ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলিয়ে যদি একটু ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারতাম। তাহলে ছেলেটা ঘুমাইতো।
শশী হালকা হেঁসে কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল দেয়।। উৎসবের সাথে বেশকিছু সময় কথা বললে উৎসব একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। সেজন্য শশী কল কেটে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে। এখন বেশ অনেক টা রাত হয়ে গেছে। সকালে উঠে আবার মা’য়ের সাথে কাজ করতে হবে বাসায় মেহমান আসবে। অতঃপর ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় শশী।
_______________
ফজরের আযান কানে যেতেই ঘুম ভেঙে যায় শশী’র। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে চারটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট । শশী বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে ওজু করে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে সোজা বাড়ির বাইরে চলে আসে।
শশী বাড়ির বাগানে অনেক ধরনের গাছগাছালি লাগিয়েছে। আর বাড়ির ছাদে তার সব প্রিয় ফুল গাছ গুলো লাগিয়েছে। বাগানে পরিচর্যা নিজে করে শশী। গাছ পরিষ্কার করা থেকে গাছে পানি দেওয়া সবটা শশী নিজে করে এত এত গাছের মধ্যে শশীর সবচেয়ে প্রিয় গাছ সুপারি গাছ। সুপারি গাছ গুলো সারি সারি লাগানোয় খুব সুন্দর লাগে শশী’র কাছে।
ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকে। অন্ধকার সরে আলোর দেখা মিলছে। সূর্য মামা ধীরে ধীরে পূর্ব আকাশে উদিত হচ্ছে। শশী সময় নষ্ট না করে এবার বাড়ির ভিতরে চলে আসে৷ ড্রয়িংরুমে এসে দেখে তার মা কিচেনে কাজ করছেন। তিনি সকালের নাস্তা রেডি করবেন। শশীদের বাসায় কোনো মেইড নেই। তিনজন মানুষের জন্য আর কারোর দরকার পরে না। শশী পুরো বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলে। ততক্ষণে তাহমিনা আক্তারের সকালের হালকা নাস্তা তৈরি করা হয়ে যায়৷ সুলাইমান সাহেব ও চলে আসেন। তারপর তিনজনে মিলে নাস্তা সেরে ফেলেন।
****
সকাল দশটা। শশী মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ করছেন। প্রায় সব কাজই শশী নিজে করছে। শশী এত এত কাজ করার মাঝে ভুলে গেছে কাদের জন্য এত আয়োজন করা হচ্ছে। মা কিংবা বাবা কারোর কাছে শোনেনি। তাহমিনা আক্তার মুরগির মাংস রান্না করছেন আর শশী গুরুর মাংস। শশী আবার খুব ভালো রান্না করতে পারে। রান্না শেষ হতে হতে প্রায় একটা বেজে গেছে। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে শশী৷ মা কে বলে গোসল করতে যায়। গোসল শেষ করে একটা সুতি কাজ করা থ্রি পিস পড়ে । মাথায় টাওয়ার পেচিয়ে কাপড় নাড়তে ছাদে চলে আসে। কাপড় গুলো ছাদে মেলে দিয়ে ফের রুমে আসে। রুম থেকে চিল্লিয়ে বলে,
“- আম্মু তুমি গোসল করে ফেলো।
তাহমিনা আক্তার হাসেন। এই ভেবে যে তার মেয়েটার সব দিকে খেয়াল।
শশী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের হাওয়া খাচ্ছে। খুব বাতাস বইছে বাইরে। গাছের পাতা গুলো দুলছে। মাঝে মাঝে কতগুলো পাখি উড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কেমন অন্ধকার হয়ে যায়। আকাশে ঘনঘন মেঘের আনাগোনা। সহসা তখন ফোনের সাইরেন বেজে ওঠে। শশী খানিকটা চমকে ওঠে। অসময়ে কে ফোন করছে ভেবে দেখে ঊর্মি ফোন করছে। তবে এবার আর বেশি রাগ দেখায় না। কাল থেকে খুব বেশি করে ফেলছে সে জানে। সেই বা কি করবে রাগ হলে যে মাথা কাজ করে না। ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
“- বেবি প্লিজ খেমা করে দে। আর হইবো না। জীবনে আর কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে ভালো করে কথা বলব না৷ তুই যা বলবি তাই করব। যদি বলিস ছেলেটার সাথে আবার যদি দেখা হয় তবে তাকে ঠাস ঠাস করে চারটা থাপ্পড় মারবো তবুও কথা না বলে থাকিস না।
ঊর্মির কথা মুচকি মুচকি হাসে শশী। হাসি থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“- পায়ের কি অবস্থা। ওষুধ খেয়েছিস।
“- হ্যাঁ।
শশী চুপ করে রয়। ঊর্মিও কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ পর ঊর্মি মন খারাপ করে বলল,
“- এতগুলো কথা বললাম আর তুমি একটা কথারও উত্তর দিলি না। আচ্ছা বেশ তবে রাখলাম শশী কে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয় ঊর্মি। ঊর্মির কান্ডে শশী অবাক হয়ে যায়। সে এমনটা আশা করে নি। এখন একটু মজা করতে গিয়ে মেয়েটা আরও রেগে গেলো। ধুর শশী তুই এবার বেশি বেশি করে ফেলছিস। এবার ঠেলা সামলা।
ড্রয়িংরুম থেকে শশী’র ডাক আসায় শশী ফোন রেখে বাইরে চলে আসে। তার মা তাকে নাস্তা গুলো ট্রেতে সাজাতে বলছে। এতক্ষণে মেহমান রা চলে আসছে প্রায়। শশী নাস্তা গুলো ট্রেতে সাজিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসে। মাত্র তার বাপ টা বললো নতুন কোনো মেহমান আসছে নাকি। অচেনা অপরিচিত কারোর সাথে মিশতে পারে না শশী। সেজন্য রুমে চলে আসে। কিন্তু কারা এই নতুন মেহমান? কিসের জন্য আসছে? তার বিয়ের ব্যাপারে নয়তো? ভেবেই চমকে ওঠে শশী!
#চলবে—-