চোখের তারা তুই পর্ব-১৫

0
196

#চোখের_তারা_তুই
#পর্ব :১৫
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া

আঁধার একটু বিব্রত হয়ে যায় টুনির কথায় ও সত্যি ঘটনা কি করে বলবে। ফারিশ ওকে বলতে না করেছে আঁধার নরমাল হয়ে বলে

” আসলে ফারিশ ফারহান চৌধুরী এই শহরের এমপি ওনার নাম কে না জানে। আর ওনি আমার বন্ধু তুলির ভাই তাই ওনার নাম জানি “।

” ওহ তুমি তুলির বন্ধু আচ্ছা তুমি ওই রুমে আসো। আসলে ফারিশ ভাইয়া নিজর রুমে খুব চুপচাপ থাকা পছন্দ করে কিন্তু আমরা তখন থেকে কথা বলছি ভাইয়া নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছে “।

আঁধার খেয়াল করে সে নিজের ব্যাগ থেকে বের করা কিছু জিনিস খাটে রেখেছে। তাই সব গুছিয়ে ব্যাগে তুলতে সময় লাগবে তাই আঁধার বলে

” আসলে টুনি আমার কিছু জিনিস খাটে রয়েছে সেগুলো গুছিয়ে রাখতে সময় লাগবে। তুমি যাও আমি সব গুছিয়ে পাশের রুমে চলে যাচ্ছি। আর আমি ফারিশকে বিরক্ত করব না টেনশন করো না “।

টুনি রুম থেকে চলে গেছে আসলে বিয়ের কনে সে অনেক বিজি থাকতে হয়। তাই নিজের রুমে চলে যায়।

ফারিশ দেখে আঁধার খাটে থাকা জিনিস গুছাতে শুরু করছে। ফারিশ বলে

” আপনি টুনিকে মিথ্যা কেনো বললেন যে আপনি আমার নাম এই জন্য জানেন কারণ আমি এই শহরের এমপি বা তুলির ভাই। সত্যি বলে দিতে পারতেন “।

আঁধার কাপড় গুছানো রেখে একটু ফারিশের দিকে তাকায়। আর একটা বিষাদের হাসি দিয়ে বলে

” মিঃ ফারিশ ফারহান চৌধুরী আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আপনি নিজে আমাকে বারণ করেছেন সবাইকে সত্যি বলতে। আর সত্যি কি বলব আমি কে হয় আপনার। ছয় মাসের বউ যাকে কয়েকদিন পর আপনি ডিভোর্স দিয়ে দিবেন নাকি আপনার কাঁধের একটা বোঝা যাকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে আপনি বেঁচে যান “।

ফারিশ একটু চোখ সরিয়ে নেয় কারন আঁধারের সেই বিষাদের হাসি তার কাছে অদ্ভুত অনূভুতি হিসাবে ধরা দিয়েছে

” আঁধার আমি কখনো আপনাকে কাঁধের বোঝা হিসাবে দেখি নাই। আপনি ভুল বুঝবেন না “।

” ওহ তাই কাঁধে বোঝা মনে করেন না আমাকে তাহলে কি মনে করেন। নিজের বউ যাকে আপনি ভালোবাসেন যদি নিজের কেউ মনে করতেন তাহলে এই কয়েকদিনে ফোন করতেন। আপনি শুধু আমাকে দায়িত্ব মনে করেন তাই একদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন হাতের ব্যাথা ঠিক আছে কি না। আমরা ভালো বন্ধুও হতে পারলাম না ফারিশ “।

ফারিশ নিচের দিকে তাকিয়ে আঁধারের কথা শুনে সে এতোদিন আঁধারকে ফোন করে নাই। কারণ আঁধাকে দেখার মতো লোক ছিলো। তাই ফারিশ বলে

” আমি আপনাকে ফোন করি নাই কারণ আপনার খেয়াল রাখার মতো লোক ছিলো। সে হয়তো আপনার সুন্দর করে টেইক এয়ার করেছে “।

আঁধার কাপড় গুছিয়ে ব্যাগা নিয়ে যায় কিন্তু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে

” ফারিশ আপনি কখনো বুঝতে পারেন না আমাকে। খেয়াল রাখার মতো লোক আছে অনেক আমার কিন্তু সবাইতো আপনি না। সবার কাছ থেকে টেইক এয়ার চাই না আমার কিন্তু কার কাছ থেকে চাই সেটা হয়তো আপনি কখনো বুঝতে পারবেন না। আমি আসি অন্য রুমে যেতে বলে “।
ফারিশ কোনো কথা বলে না শুধু তাকিয়ে আঁধারকে যেতে দেখে। কারণ কোনো উত্তর তার জানা নাই কি বলবে সে জানে না আঁধাকে নিয়ে কি ফিলিংস তার। আসলে কি কোনো ফিলিংস আছে। শুধু মনে মনে কিছু কথা বলে

” সরি আঁধার আমি জানি না আপনি আমাকে ভালোবাসেন কি না। কিন্তু একটা কথা জানি হয়তো ছয় মাস পড়ে আমাদের রাস্তা আলাদা হয়ে যাবে কিন্তু কোথাও এই চোখের তারায় আপনি থাকবেন।

আঁধার পাশের রুমে চলে যায় দিশার আরো অনেকে এই রুমে অপেক্ষা করছে। দিশা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে

” আরে আঁধার তুমি এখানে কোথায় ছিলে তুমি। সবাই তোমাকে খুজঁছে “।

আঁধার নিজের মনে উঠা বেদনার ঝড় শান্ত করে নরমাল হয়ে বলে

” আসলে এমন জায়গায় গিয়েছি যেখানে আমার কোনো জায়গা নাই শুধু আছে বোঝা “।

আঁধারের কথা দিশার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। তাই একটু উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে

” আঁধার তোমার কি হয়েছে মাথা ঠিক আছে তোমার। কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি আর বোঝা মানে কার বোঝা তুমি “।

আঁধার ব্যাগ রেখে বলে

” আরে আমার কথা বুঝতে হবে না তোমার। পাশের রুমে চলে গিয়েছি ভুল করে “।

আঁধারের কথা শুনে রুমে থাকা সবাই খুশিতে উঠে দাঁড়িয়ে যায়

” কি আঁধার তুমি পাশের রুমে গিয়েছো মানে ওই পাশে রুমে থাকা এমপি ফারিশ ফারহান চৌধুরীর কাছে। এমপির সাথে কি দেখা হয়েছে কি বলল তোকে। আমি শুনেছি এমপি নাকি বিয়ে করে নাই এইটা কি সত্যি “।

আঁধারের এতখন একটু দুঃখের মধ্যে ছিলো কিন্তু ফারিশের উপর সব মেয়ের এতো আগ্রহ দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়

” হুম তোদের এমপি বিয়ে করে নাই কি করে করবে তোদের এমপির বিয়েতে সমস্যা আছে। আর যদি বেশি এমপিকে পছন্দ হয় তাহলে পাশের রুমে আছে দেখে বিয়ে কর “।

” দেখ তোর এমপি পছন্দ না হলে ব্যাপার না আমাদের অনেক পছন্দ। কি ভালো দেখতে পুরা হিরো যদি এমপির বউ হতে পারি তাহলে কপাল খুলে যাবে সবাই আমাকে দেখে ভয় পাবে কি দারুণ বিষয়। যায় এমপিকে দেখে আসি “।

আঁধার কিছু বলে না কিন্তু অবাক বিষয় সব মেয়েরা সত্যি এমপির রুমে চলে যায় তাকে দেখতে। রাগ হচ্ছে

” এখন বুঝতে পারছি ফারিশ কোনো সবাইকে বিয়ের কথা বলতে বারণ করেছে। আসলে ওনি সিঙ্গেল সেটা সবাইকে জানাতে চাই যাতে মেয়েরা ওনার প্রেম পড়ে যায়। ঘরে এতো সুন্দর বউ থাকতে চোখে পড়ে না কতো শখ ছিলো আমার জামাই চোখের তারায় রাখবো আমাকে। কিন্তু একটা অন্ধ জামাই পেয়েছি জীবন পুরা কচুগাছ হয়ে গেছে “।

ফারিশ পড়েছে বিপদে কতগুলো মেয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে বিরক্ত লাগছে ওর। ফারিশ বলে

” আপনারা কারা এই রুমে কি করেন আর এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি মানে “।

মেয়েরা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে দেখে একটু কাছে এসে বলে

“আসলে এমপি স্যার আপনি দেখতে অনেক সুন্দর খুব ভালো দেখতে। আমাদের একটা আবেদন আছে আপনার কাছে “।

ফারিশ একটু দূরে সরে গিয়ে বলে

” জি বলুন কি আবেদন আমার কাছে “।

সব মেয়েরা কাছে এসে বলে

” আসলে এমপি স্যার বিয়ের বয়স আঠারো কিন্তু আমাদের আঠারো বছর হয়ে গেছে এখনো আমাদের বিয়ে হয় নাই। আপনি একটু আমার বিয়ের আয়োজন করে দেন “।

ফারিশ উঠে দাঁড়িয়ে যায়

” আসলে বিয়ের বিষয়ে আপনার পরিবারকে বলেন তারা হয়তো বিয়ে দিবে। আমি এখানে কি করতে পারি আমি এমপি আপনাদের অভিভাবক না “।

মেয়েরা কিছু বলতে যাবে তখন টুনি এসে পড়ে। টুনি রুমে ঢুকে দেখে অনেক মেয়ে তাই টুনি বলে

” কি ব্যাপার সবাই ফারিশ ভাইয়ার রুমে কি করছেন আপনারা। আপনাদের রুমে পাশে রয়েছে সেখানে যান “।

সব মেয়েরা টুনি উপস্থিতি খুশি হয় নাই কারণ তারা ফারিশের সাথে কথা বলতে পারে না।

” আসলে এমপি স্যারের সাথে একটু কথা বলতে চাই। শহরে ওনার সাথে দেখা করার সুযোগ থাকে না তাই যখন পাশের রুমে আছে তাই গল্প করতে এসেছি “।

” দেখেন ফারিশ ভাই কারো সাথে বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। সে আপনারা রুমে থেকে চলে যান “।

ফারিশ একটু বেঁচে যায় টুনি সবাইকে রুম থেকে বের করে দেয়। ফারিশ একটু শান্তি হয়ে বসে বলে

” ধন্যবাদ টুনি তুই আজ বাঁচিয়ে দিলি এই মেয়েরা যেভাবে কথা বলছে মনে হয় সারাদিনে এদের থেকে বাঁচতে পারতাম না “।

টুনি একটু রেগে বলে

” আচ্ছা ফারিশ ভাইয়া তুমি এমপি হয়ে এতো নরম কোনো সবাইকে বকা দিয়ে রুম থেকে বের করতে পারতে। আর বিয়ে না করলে মেয়েরা এমন করবে। বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় “।

ফারিশ হাসি দিয়ে টুনির মাথায় হাত দিয়ে বলে

” আমার বিয়ে কথা এতো চিন্তা করতে হবে না। আজকে তোর বিয়ে বউ সাজতে হবে তোকে যাহ রেডি হয়ে নে আর ভাগ্যে যদি কেউ থাকে তাহলে তার সাথে ঠিক মিলন হবে “।

” হুম তোমার সাথে কথা বলে পারব না সেটা জানি। কিন্তু বিয়ে করা দরকার সব যদি ভাগ্যর উপর ছেড়ে দাও তাহলে কেমন করে হবে। তুমি বরং মিলন হবে কতোদিনে এইসব গান করতে থাকে কারণ তোমার সাথে কারো মিল হবে না।

ফারিশ হেসে বিছানায় বসে পড়ে অন্যদিকে সব মেয়েরা রুমে চলে যায়। আঁধার একটা ভালো ড্রেস পড়ে বাহিরে আসে সবার মুখ দেখে জিজ্ঞেস করে

” কি হয়েছে সবার এমপি দেখার স্বাদ মিটেছে। আর এমপি কেমন অনেক কথা বলেছে সবার সাথে “।

সবাই মুখ মলিন করে বলে

” এমপিকে ভালো করে দেখতে পেলাম কোথায় এই এমপি দেখি মেয়েদের সাথে কথা বলে না। কতো সুন্দরী আমরা তাতে এমপির কোনো যায় আসে না “।

আঁধার একটু হাসি দেয় সে জানো ফারিশ কেমন মেয়েদের সাথে বেশি মেলামেশা করা পছন্দ না। বেশি কেনো একদম পছন্দ করে না তাই বিয়েতে বিশ্বাস করে না মনে হয় লোকটা জীবনে কখনো প্রেম করে নাই যদি করতো তাহলে যেই মেযের সাথে প্রেম করবে বেচারা সেই মেয়ের কপাল শেষ। আঁধার বলে

” শোন এমপিকে প্রেমে ফেলা বন্ধ কর। ওনি কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকান না সেটা আমি জানি। তুলির ভাইতো ওনি “।

সব মেয়রা মন খারাপ করে বসে থাকে। আঁধার একটু হাসি দিয়ে ছাদে ঘুরতে যাবে ভাবে

” বেচারা সব মেয়েরা আমি সারাদিন এমপির সামনে থাকি আমাকে দেখে না। তোদের কি দেখবে আর ভালো হয়েছে খুব শখ আমার জামাইয়ের সাথে কথা বলার এখন শখ মিটছে “।

কিছু গুডার ফোনো একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে

” হ্যালো স্যার বলেন। আমরা গ্রামে এসে পড়েছি টেনশন করবেন না “।

” শোন বিয়ে বাড়িতে অনেক লোক থাকবে সবার সামনে ফারিশকে মারা যাবে না। যখন কেউ থাকবে না তখন ওকে মেরে ফেলতে হবে।

” স্যার কোনো টেনশন করবেন না ফারিশ ফারহান চৌধুরী আজকে শেষ।ওকে এতো গুলি করব বেঁচে থাকা দূরের কথা এক মিনিটে মারা যাবে।

” হুম কাজ যেনো ঠিক মতো হয় যতো টাকা লাগবো পেয়ে যাবি। যদি ফারিশ আমার রাস্তা থেকে চলে যায় তখন সব টাকা আমার হয়ে যাবে “।

#চলবে