চোখের তারা তুই পর্ব-১৮

0
201

#চোখের_তারা_তুই
#পর্ব ১৮
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া

আঁধারকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো এখনো সে অনেক অসুস্থ কিন্তু হাসপাতালে থাকা তার জন্য নিরাপত্তার জায়গা না।

আঁধারকে নিয়ে এসেছে বাড়ির ভিতর কিন্তু এতগুলো সিঁড়ি দিয়ে ওকে উপরে কে তুলবে। আঁধার বলে

” আচ্ছা সিঁড়ি দিয়ে উপরে কেমন করে উঠবো। আমাদের রুম উপরে রয়ছে “।

ফারিশ একটু টেনশন করে এতগুলো সিঁড়ি দিয়ে যদি আঁধার একা উপরে উঠে তাহলে ওর হাতের সমস্যা হতে পারে। সেখানে তুলি রয়েছে ওর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। তুলি বলে

” ভাইয়া তুমি একটা কাজ করো। আঁধারকে কোলা তুলে ওকে উপরে নিয়ে যাও “।

ফারিশ আর আঁধার দুইজনে তুলির দিকে তাকিয়ে থাকে।ফারিশ ওকে কোলো তুলবে সেটা কখনো সম্ভব ফারিশওকে টার্চ করতে চাই না। আঁধার বলে

” আরে কোলো তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো দরকার নাই আমি একা যেতে পারব। আর এখানে পরিবারের বড়ো মানুষ রয়েছে তাদের সামনে কোলো তুললে বিষয়টা অনেক লজ্জার হবে “।

আঁধার একা উপরে উঠার চেষ্টা করে কিন্তু হাতে ব্যাথার কারণে যখন পড়ে যেতে থাকে। তখন ফারিশ ওকে ধরে ফেলে। ফারিশ বলে

” সবসময় সব কাজ একা করার চেষ্টা কেনো করেন। আমি আছি আপনার সাথে “।

আঁধারকে অবাক করে ফারিশ ওকে কোলো তুলে নেয় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে। আঁধার শুধু তাকিয়ে থাকে সত্যি কি ফারিশ ওর সাথে থাকবে না ছয়মাস পর ছেড়ে দিবে।

ফারিশ ওকে বিছানায় নামিয়ে দেয় আর একটা বালিশ দেয় ওর মাথার নিচে। ফারিশ বলে

” আপনি এখন রেস্ট নেন। আর জরিনা থালা একটু পর ফল আনবে সেটা খেতে হবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন তাহলে।

আঁধার বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বলে

” কিন্তু আমি চাই যাতো কখনো সুস্থ না হয় আমি সবসময় এমন অসুস্থ থাকি “।

ফারিশ একটু অবাক হয়ে বলে জিজ্ঞেস করে

” সবাই সুস্থ হতে চাই আর আপনি অসুস্থ থাকতে চান কোনো “।

” কারণ আমি চাই আপনি আমার যত্ন করেন কেয়ার করেন সেটা শুধু অসুস্থ হলে। কিন্তু ভালো থাকলে এতো কেয়ার করেন না তাই আমি সারাজীবন অসুস্থ থাকতে চাই তাহলে আপনি সারাজীবন আমার কাছে থাকবেন “।

ফারিশ একটু হাসি দেয় এই মেয়েটি সত্যি অনেক বাচ্চা তবে বিয়ে যখন হয়ে গেছে তাহলে এই রিলেশনকে একবার সুযোগ দিতে চাই। কিন্তু এখন আঁধারের সুস্থ হয়ে উঠা খুব জরুরি।

” হুম অসুস্থ থাকতে ইচ্ছা করবে আপনার কারণ পড়াশোনা করতে হবে না তো। পরীক্ষায় ফেল করবেন তখন সবার সামনে আমার মান সম্মান চলে যাবে। এরকম একটা খারাপ রেজাল্ট করা মেয়ের সাথে আমি থাকতে পারব না”।

আঁধার রেগে যায় কি সুন্দর একটু রোমান্টিক কথা বলছে আর ওনি পড়াশোনা নিয়ে খোটা দিলেন। আমি পরীক্ষায় ফেল করব এই কথা কি করে বললেন ওনি। আঁধার রাগী স্বরে বলে

” শুনুন মি: ফারিশ ফারহান চৌধুরী আমি পড়াশোনায় ছোটবেলা থেকে খুব ভালো জীবনে কখনো সেকেন্ড হয় নাই। আর আপনার মনে হয় পরীক্ষায় আমি ফেল করব সাহস কি করে হয় এই কথা বলার “।

ফারিশ নিজের হাসি চেপে রেখে বলে

” সত্যি কথা বললে সবসময় খারাপ লাগে। আর আপনি পড়াশোনায় কতো ভালো সেটা দেখা যাবে পরীক্ষা আসছে তখন দেখবো আপনি ফাস্ট হন না ফেল করেন “।

” আপনার মনে হয় আমি ফাস্ট হতে পারব না শুনুন যদি ভালো রেজাল্ট না করতাম তাহলে মেডিক্যালে চান্স কি করে পেতাম “।

” মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেলে কেউ ডাক্তার হয়ে যায় না আগে ডাক্তার হন তারপর বুঝতে পারব আপনি ভালো ছাএী।না হলে কে যানে আপনি চুরি করে পাশ করেছেন হয়তো “।

আঁধারের এবার অনেক রাগ হলো

” শুনুন আমি চুরি করে পাশ করি নাই আর মেডিক্যালে পড়তে চুরি করতে হয় না যোগ্যতা লাগে। ভোট চুরি করে পাশ করা আপনাদের মতো এমপিরা করে আমি করি না “।

” আপনার মনে হয় আমি ভোট চুরি করেছি। সবাই আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে “।

আঁধার মুখে ভেংচি কেটে বলে

” নিবার্চন আসলে দেখা যাবে কে চুরি করেছে কে চুরি করে নাই। আর আপনিও আমার পরীক্ষার মধ্যে দেখে নিবেন আমি চুরি করি না “।

ফারিশ আর আঁধারের কথা মধ্যে হঠাৎ করে ওর ফোন বেজে উঠেছে। ফারিশ ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফাহিম কল করেছে সে কথা বলতে বেলকনিতে চলে যায়।

” হ্যালো ফাহিম গুডাদের ধরতে পারলি “।

” হুম ধরতে পেরেছি ওকে আমাদের আস্তানায় নিয়ে এসেছি তুই চলে আয় “।

ফারিশের নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে

” তুই ওকে একটু সাইজ করতে থাক আমি আসছি। এতদিন শুধু এমপি হিসাবে ফারিশ ফারহান চৌধুরীর ভালো রূপ দেখে এবার দেখবে ভয়ংকর রূপ”। যেই হাত দিয়ে ফারিশ ফারহান চৌধুরীর বউকে গুলি করেছে সেই হাত টুকরো টুকরো না করলে শান্তি হবে না আমার “।

আঁধার বিছানায় শুয়ে রয়েছে ফারিশের কথা শুনে অনেক রাগ হয়েছে ওর। হঠাৎ দেখে ফারিশ বেলকনি থেকে বের হয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। আঁধার বলে

” আপনি কোথায় যান এখন। কে ফোন করেছে ”

ফারিশের শরীরে অনেক রাগ কিন্তু নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে কারণ আঁধার ভয় পেয়ে যাবে। একটু হাসি দিয়ে বলে

” আসলে আমার বন্ধুর কাছের মানুষ মারা গেছে তাকে কবর দিতে যাচ্ছি “।

” ওহ তাই কি করে মারা গেছে “।

ফারিশ ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে

” আসলে কেউ ওদের খুন করেছে খুব খারাপ ভাবে মেরেছে শরীরের সব জায়গ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলেছে। হয়তো পুরানো শএু ছিলো তাকে কবর দিতে যাচ্ছি “।

আঁধার ভয় পেয়ে যায়

” সত্যি এভাবে কেউ মারে খুব ভয় করছে আমার “।

” ভয় পেতে হবে না আপনি আমাকে সব বিপদ থেকে সেফ করেছেন এখন আমার দায়িত্ব। আমি থাকতে আপনাকে কেউ কিছু করতে পারবে না টেনশন করবেন না “।

ফারিশ রুম থেকে বের হয়ে যায় আঁধার একটু ঘুমিয়ে পড়ে ফারিশ গাড়ি করে আস্তানায় যায়। সব গুডাদের বেঁধে রাখা হয়েছে। ফারিশ ওদের কাছে যায়

” দেখ আমার রাগ কতটা সেটা তোদের দেখাতে চাই না। তাই খুব ভালো করে বল কে তোদের আমার উপর গুলি চালাতে বলেছে “।

” আমরা কিছু বলব না “।

ফারিশ হাসি দিয়ে ফাহিমকে বলে

” ফাহিম তোকে বলেছি ওদের একটু সাইজ করে রাখতে কিন্তু তুই কিছু করলি না। দেখ কতো সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কিছু বলে না এখন যদি আমার রাগ উঠে যায় তাহলে কি আমার দোষ “।

ফাহিম বলে

” কি করব আমি দেখ মেরে কি অবস্থা করেছি কিন্তু কিছু বলছে না। এখন তুই কি করবি কর ওদের সাথে “।

ফারিশ এবার রাগ উঠে যায় সে পাশে থাকা একটা ছুরি হাতে নিয়ে গুডার হাতে গেঁথে দেয়। সাথে একটা লোক চিৎকার করে উঠে

” কি কেমন লাগে। তোদের কতো বড়ো সাহস ফারিশ ফারহান চৌধুরীর বউকে তোরা গুলি করলি। আমি সবসময় শান্ত থাকি বলে খুব ভালো মানুষ আমি। চৌধুরী বাড়ির ছেলে আমি আগে যদি কেউ এই বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে হেঁটে যেতো তাহলে তার পা কেটে দেওয়া হতো। আর তোরা সেই বাড়ির বউকে গুলি করলি সাহস কি করে হয় “।

” আহ দয়া করে ছেড়ে দেন। সত্যি কথা বলছি আসলে একটা লোক আপনাকে মারার জন্য অনেক টাকা দিয়েছে তাই আমরা এই কাজ করেছি। আমাদের বুঝতে পারি নাই।

ফারিশ ছুরির মধ্যে একটু চাপ দেয়

” কে মারতে বলেছে তোদের তার নাম বল। কেমন দেখতে সে “।

” আমরা তার মুখ দেখি নাই শুধু আওয়াজ শুনেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না আমরা “।

ফারিশ বুঝতে পারে এরা সত্যি কিছু জানে না।

” ফাহিম ওদের হাত আর জিহ্বা কেটে ফেল যাতে কখনো মুখ দিয়ে কথা বলতে না পারে আর হাত দিয়ে গুলি করতে না পারে। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবে এই ফারিশ ফারহান চৌধুরী কতটা ভয়ংকর সেটা মনে থাকবে। আর এদের কল লিস্ট বের করে খুঁজে থাক আসল অপরাধী কে “।

ফারিশ রাতে বাড়ি ফিরে আসে আঁধার অপেক্ষা করতে থাকে। ফারিশ ঘরে ঢুকে দেখে মেয়েটা বসে আছে। ফারিশ বলে

” এতো রাত হয়েছে খাবার খেয়েছেন “।

আঁধার বলে

” না খাবার খাওয়া হয় নাই। আপনি তো জানেন এই বাড়িতে পুরুষ মানুষ না খেলে মহিলারা খেতে পারে না এইটা নিয়ম “।

ফারিশ হাতের ঘড়ি খুলে আঁধারের দিকে তাকিয়ে বলে

” শুনুন সব নিয়ম সবসময় পালন করতে হবে এমন কোনো। আর আপনি অসুস্থ এখন যদি আগে খেয়ে নেন তাহলে কোনো সমস্যা হবে না “।

আঁধার বলে

“আমি খুব ভালো মেয়ে নিয়ম মেনে চলতে পছন্দ করি।আর আমার ডান হাতে গুলি লেগেছে এখন এই হাত দিয়ে খাবার কি করে খাবো “।

ফারিশ বুঝতে পারে আঁধার কি চাই সে নিচে নামে আর খাবার নিয়ে উপরে উঠে আসে। ফারিশ হাত ধুয়ে খাবার মুখে তুলে দেয়

” এই নেন খাবার খেয়ে নেন “।

আঁধার খাবার খেতে থাকে আর বলে

” খুব ভালো খাবার খেতে হয়েছে ইচ্ছা করছে যে খাবার খায়িয়ে দিচ্ছে তার হাতে একটা কিস করি “।

ফারিশ একটু কাশি দেয়ে বলে

” খাবার ভালো হলে যিনি রান্না করেছে তার হাতে কিস করবেন আমার হাতে কোনো করবেন “।

আঁধার দুষ্টামি হাসি দিয়ে বলে

” যিনি রান্না করেছে সে এতো যত্ন করে খায়িয়ে দেয় নাই। আর যে যত্ন করে তাকে ভালোবাসা দরকার আমার মায়ের পর আপনি প্রথম আমার এতো যত্ন করছেন। ধন্যবাদ এমপি মশাই এতো কেয়ারিং হওয়ার জন্য “।

ফারিশ একটু হাসি দেয় সে এই মেয়েকে সারাজীবন সয্য করবে কি হরে কি বাচ্চা মেয়ে। খাবার শেষ করে ফারিশ বলে

” আঁধার আপনি আজকে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ুন আমি ছোফায় ঘুমাতে যায় “।

আঁধার অবাক হয়ে বলে

” ছোফায় ঘুমাতে হবে কোনো এখানে ঘুমিয়ে যান। আমি কি আপনাকে খেয়ে ফেলব “।

ফারিশ বলে

” শুনুন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন “।

আঁধার একটু কষ্ট পায় সে বলে

” আচ্ছা ঘুমাতে হবে না আমি একা ঘুমিয়ে পড়ব। খুব বাজে লোক আপনি “।

ফারিশ একটু হাসি দেয় রুমের লাইট নিভিয়ে দেয় আঁধার ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় চলে যায় কিন্তু ফারিশের চোখে ঘুম আসে না। ছোফায় সে ঘুমাতে পারে না ফারিশ উঠে বেডে চলে যায় সেখানে শুয়ে পড়ে। হঠাৎ খেয়াল করে আঁধার চুলগুলো এলেমেলো হয়ে গেছে। ফারিশ চুলগুলো সরিয়ে দেয় আর বলে

” কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে রয়েছে একদম বাচ্চা একটা মেয়ে। আঁধার আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমি জানি না আমার মনে কি আছে শুধু এইটা জানি ছয়মাস পড়ে যদি আপনি চলে যান তাহলে আমি ভালো থাকবো না। কথা দিলাম চোখের তারায় আপনি থাকবে নয়নে রাখিব আপনাকে “।

#চলবে