জলকাব্য পর্ব-১৭

0
459

#জলকাব্য
#part:17
#Suraiya_Aayat

বাসায় এসে হাতে থাকা ব্যাগটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো নীলু ৷ শরীরটা রাগে ভীষনভাবে থরথর করে কাঁপছে , কি করবে বুঝতে পারছে না ভেবে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো আর নিজের মাথার চুলগুলো জোরে টানতে লাগলো ৷ মনের মাঝের জালাপোড়েনটা অনেকটাই বেশি ৷ এ ক্ষতের চিকিৎসা যে মিলেও মিলছে না নীলুর ৷ কিছুখন উন্মাদের মতো চিৎকার করার পর এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল নীলু ৷নিজেকে নিজে বলতে লাগল
” আমি কি খুব খারাপ ? সবাই আমাকে নিয়েই কেন ছিনিমিনি খেলে ? আমাকেই কেন সবাই শেষ করে দিতে চাই ? আমাকেই কেন বারবার লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হয় ? আমি কি কখনো তার হবো না নাকি সমাজ আমাকে তার হতে দেবে না কোনটা ? আমি তো চেষ্টা করছি বারবার ৷”
নীলুর অঝোর ধারার কান্নার মাঝে কারোর তীব্র পদধ্বনি শুনতে পেলো ৷ নীলু বুঝলো শ্রাবন এসেছে ৷ নিজের চোখ মুছে নিয়ে মেঝে থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ শ্রাবন গিয়ে নীলুর কাছে দাঁড়ালো ৷ নীলুকে ও এমনিতেই কখনো একা একা ছাড়ে না সবসময় চোখে চোখে রাখে আর নীলু আজকে পোগ্রাম শেষ হওয়ার আগেই আচমকাই চলে এসেছে , পোগ্রাম শেষ করে নীলুকে খুঁজে না পেয়ে ওর মেজাজটাই গরম হয়ে গিয়েছিলো ৷ ওর ফোনটাও যেহেতু নীলুর কাছে ছিলো তাই ফোন করে খোঁজ নেওয়ার ও কোন উপায় ছিলো না ৷ শ্রাবন নীলুকে এবার খানিকটা ধমক আর বকুনির সুরে বলতে লাগলো ” পা দুটো বড্ড চঞ্চল হয়েছে তাইনা ? এখন তো এক পা চলতে গেলেও পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিস না ৷ যখন তখন হুঠ করে না বলে কইয়ে চলে যাস ৷ তোকে না আমি বলেছিলাম যে যতখন না আমি স্টেজ থেকে নামছি ততখন তুই এক পা ও এগোবি না ওখান থেকে ৷ কি বলিনি ? ”
নীলু চুপ করে আছে, মুখ বুজে সব কথাগুলো হজম করছে হয়তো এই মুহূর্তে ওর কথা বলার কোন ইচ্ছা বা মন মানসিকতা নেই ৷ নীলুকে চুপ থাকতে দেখে শ্রাবন এবার আরো জোরে ধমক দিয়ে বলল
” আমার কথা কি তোর কানে যাচ্ছেনা নাকি নিজের মর্জি মতো চলতে আর বুঝতে শিখেগেছিস যে আমার আর কোন প্রয়োজন নেয় কোনটা ? নাকি আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে চাস কোনটা ?”

নীলু এবার শ্রাবনের দিকে ঘুরে ওউ উচ্চস্বরে আঙুল উচিয়ে বলল ” একদম চুপ , আর একটাও কথা নয়, নো মোর ওয়ার্ড ৷ আর একটাও আলতুফালতু কথা বললে আমি যে কি কি ঘটাবো তা হয়তো তুমি জানো না ৷”
শ্রাবন নীলুর ধমকের থেকেও বেশি অবাক হলো নীলুর চোখের দিকে তাকিয়ে , চোখের নীচের অংশটুকু ভেজাভেজা , চোখের কালো মনির আশেপাশের অংশটুকুর মাঝে থাকা শিরা উপশিরা গুলির মাঝে রক্ত চলাচলের ছাপ বিদ্যমান ৷ মুখটা ফোলা, চুলগুলো অগোছালো ৷ নীলুকে এমত অবস্থায় দেখে একপ্রকার চমকে গেল ৷ মনে মনে নিজেকেই অনেক প্রশ্ন করতে লাগলো ৷ তাহলে কি নীলুর মন খারাপ ? নীলুর প্রতি আমার এই রুক্ষতা প্রকাশ করাটা কি এই মুহূর্তে আমার দ্বারা ঘটা সবচেয়ে বড়ো ভুল ? শ্রাবনের গলটা ধরে এলো ৷ শুকনো ঢোক গিলতেই গলার মাঝে অদ্ভুত ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো ৷ নীলুকে কিছু বলার মতো পরিস্থিতি আর নেই , ও নিজেই নীলুকে এভাবে সহ্য করতে পারছে না ৷
শ্রাবনের নীলুকে নিয়ে এতো আকাশ পাতাল কল্পনার মাঝেও শ্রাবনের কানের মধ্যে বাজতে লাগলো নীলুর নরম কন্ঠে অগোছালো কর্কশ সুরের কথাগুলো ৷
” আপনি যা বলবেন আমাকে কি সেটাই করতে হবে ?আপনার বাড়িতে পড়ে আছি বলে যা খুশি তাই ?আমার নিজের কোন স্বাধীনতা নেই ? আমার নিজের পা দুটো চালাতেও যদি অন্যর অনুমতির প্রয়োজন হয় তাহলে পা দুটো কেটে ঘরে রেখে দিন ৷ দরকার কি ? আমি হলাম সবার গড়া খেলনার পুতুল , যে যখন যেভাবে খুশি আমাকে নাচাই, আমার তো মন বলে কিছু নেই , আছে বলতে কেবল শরীরটা যা বিলিয়ে দেওয়ার জন্যই তো আমার জন্ম তাইনা ?”

শ্রাবন এর থেকে আর বেশি কিছু শুনতে পারলোনা, নীলুকে আর বেশি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর কথার মাঝে বেরিয়ে গেল, নীলু ওর রাগ প্রকাশ করতে গিয়ে নিজেকে আর নিজের চরিত্রকে অনেকটা নীচে নামিয়ে ফেলছে, আর নিজের চরিত্র নিয়ে খারাপ মন্তব্য করছে যা শ্রাবন কখনো সহ্য করতে পারবে না ৷ ও জানে ও সেখান থেকে চলে আসলে নীলু এমনিতেই শান্ত হয়ে যাবে তাই নিজে পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সামলে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে ৷ শ্রাবন চলে যেতেই নীলুর মুখের ভাষা যেন বন্ধ হয়ে গেল ৷ শ্রাবনের সামনে নিজের রাগগুলোকে বেশ ভালোই প্রকাশ করছিলো ৷ এখন কাকে বোঝাবে ? কাকে শোনাবে ওর অভিযোগ ? এই চার দেওয়ালে বন্দি ঘরকে ? সে কি আদেও নীলুর অভিযোগ বুঝবে ?

পরেরদিন যথারিতী ওরা কোর্টে উপস্থিত ৷ আজকে যদিও শ্রাবন আসেনি ৷ শ্রাবনের মা আর নীলু এসেছে ৷ নীলুর যেন কিছুতেই রাগটা কমছে না ৷ এত দীর্ঘস্থায়ী রাগ ওর 20 বছরের জীবনকালে হয়েছে কি বলতে পারেনা ৷ তবুও অজান্তেই গেটের দিকে তাকাচ্ছে যদি শ্রাবন আসে ৷ আদালতের বিচার শুরূ হবে 12.45 এ ৷ এখন ঘড়ির কাটা 12 টা 30 এ থেমে আছে ৷ শ্রাবনের মা তার উকিল ভাইয়ের সাথে হয়তো জরুরি কোন কথা বলতে গেছেন ৷ নীলু চুপচাপ বসে আছে ৷ হঠাৎ মনে হলো কেউ ওর পাশে এসে বসলো , নীলু চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো রুদ্র ওর পাশে বসে আছে ৷ চেহারায় পরিবর্তন স্পষ্ট , মুখের দাড়িগুলো বড্ড বড়ো বড়ো হয়ে গেছে, আগে তো একটু দাড়ি বড়ো হলেই নীলু জোর করে দাড়ি শেভ করতে বলতো ৷ পরনের শার্টটাও খানিকটা ময়লা, চুলগুলোতে ফ্যাকাশে ময়লার আভাস ৷ আগে নীলু কখনো রুদ্রর কোন অযত্ন হতে দিতো না, সবসময় যত্নে রাখতো ভালোবেসে কিন্তু সেই ভালোবাসা বোঝার ক্ষমতা হয়তো রুদ্রর ছিলো না, থকলে হয়তো পরনারীতে আকৃষ্ট হতে পারতো না কখনোই ৷ রুদ্রকে চোখের সামনে দেখে আজ বহুদিন পর ভালোভাবে তাকে অনুধাবন করার চেষ্টা করছে নীলু ৷ নীলু রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রুদ্র বললো
” কি জানেমন চলছে তো ঠিকঠাক ? ভারী তেজ দেখিয়ে তো চলে এলে , আমার কাছে পড়ে থাকলে দিন শেষে তোমার শরীরের চাহিদা মিটতো , এখন কি সেটাও হচ্ছে নাকি,,,, “কথাটা বলে রুদ্র খানিকটা হাসতে লাগলো ৷ নীলু শক্ত পাথরের মতো হয়ে বসে আছে , ইচ্ছা করছে এক্ষুনি রুদ্রকে সবার সামনে ফেলে মাটিতে ধাক্কা মেরে পা থেকে জুতো জোড়া খুলে নিয়ে সপাটে ওর গালে মারতে ৷ কিন্তু নারীরা নাকি অসীম ধৈর্যশালী হয়, তাই এতো সহজে নীলুর মেজাজ হারিয়ে ফেলা কি আদর্শ নারীর লক্ষন ৷ নীলু দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে ৷ পাশে রুদ্র একের পর এক কটু কথা বলেই চলেছে কিন্তু নীলু যেন মুখ বুজে সহ্য করছে , কিছুটা সময় পর চোখ বন্ধ করে নিয়ে সব সহ্য করতে লাগলো ৷ হঠাৎ অনুভব করলো কানের কাছে রুদ্রর গলার আওয়াজটা আর ভেসে আসছে না, চমকে গিয়ে চোখটা খুলতেই দেখলো ওর পাশে শ্রাবনের মা বসে আছে, আর আশেপাঝে কোথাও রুদ্র নেই তার মানে এতখন ওর সাথে যা যা ঘটছিলো তা কেবলমাত্র ওর কল্পনা ৷ কথাটা ভেবে একটা সস্তির নিশ্বাস নিলো ৷ যদি সত্যিই চোখ খুলে দেখতো তাহলে হয়তো আজ একটা বিরাট বড়োসড়ো কান্ড ঘটিয়ে বসতো নীলু ৷ হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো ৷ 12.43 বাজে , রুদ্রর দেখা মিললো না আশেপাশে কোথাও ৷ মিঠির কথগুলো মনে আসছে বারবার ৷ মেয়েটা আজকেও এলোনা তারমানে ঐ মিঠির সাথে দেখা না করলে মিঠি সত্যিই আসবেনা ৷ কথাটা ভেবেই নীলুর বিরক্তি সহ রাগের মাত্রাটা তীব্র হলো ৷ জর্জ আসার এক মিনিট আগেই রুদ্র এসে গেছে ৷ নীলু একটা বার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো ৷ চেহারায় একটা বদ্ধ মাতালের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ছে , রুদ্রর দিকে তাকাতেও যেন আজ বিরক্তি লগছে কিন্তু কোন একসময় এই মানুষটার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে কতোটা সময়ই না নীলু পার করেছে ভাবলেই শরীরের মাঝে শিহরন বয়ে যাই ৷
নীলুকে আজও তার মতামত জানানোর জন্য ডাকা হলো ৷ রূদ্র বেশ আয়েষ করেই ওর জায়গায় নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে ৷নীলু যেতেই রূদ্রর লয়ার নীলুকে প্রশ্ন করে উঠলো ৷
” আপনার নাম কি ?” নীলু বেশ নরম কন্ঠেই বলল ” জ্বি সারিকা নীলাঞ্জনা ৷” উনি নীলুর কথাটা শুনে বেশ ভাবুক সুরেই বললেন ” শুধুই কি,সারিকা নীলাঞ্জনা?কোন পদবী নেই আপনার?আইমিন বংশ পরিচয় হিসাবে কোন পদবী তো নিশ্চয়ই থাকবে তাইনা ?”
ওনার কথাটা শুনে নীলুর পুরোনো সব কথা মনে পড়ে গেল ৷ ওর বাবার মৃতদেহের ছবি যেন ওর চোখে ভাসছে, মনে পড়ে যাচ্ছে ওর মায়ের বলা কথাগুলো ৷ নীলু এবার রূক্ষ গলায় বলল “জ্বি না আমার কোন পিতৃপরিচয় নেই, থাকলেও তা আমার জানা নেই ৷ ” নীলুর কথা শুনে রূদ্রর উকিল বলে উঠলেন ” মাই লর্ড এর দ্বারা প্রমান হয় যে অভিযোগকারী পরিচয়হীন, উনি মানুষটাই মিথ্যা দিয়ে গড়া ৷” এই কথা শুনে নীলুর লয়ার গর্জে উঠে বললেন ” অবজেকশন মাই লর্ড আমি মনে করি আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু তিনি অযথা আলাদা আর অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে আমার মক্কেল সারিকা নীলাঞ্জনাকে বিব্রত করতে চাইছেন, তিনি এর মাধ্যমে এই কেসটার পথভ্রষ্ট করছেন ৷”
ওনার কথা শুনে জর্জ বললেন ” অর্ডার , অর্ডার ৷মূল ঘটনায় আসা যাক ৷”

রূদ্রর উকিল আবার তার প্রশ্ন উত্তর শুরূ করলেন
” আচ্ছা তা মিস সারিকা নীলাঞ্জনা আপনি অভিযোগ জানিয়েছেন আপনার প্রাক্তন স্বামীর ব্যাপারে যে তিনি পরকীয়া জনিত কারনে আপনাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছেন, আপনার ওপর মানসিক আর শারীরিক অত্যাচার করেছেন এবং এটাও দাবী করেছেন যে আপনার 3মাসের বেবি ভ্রুনটাকেও উনি নষ্ট করে দিয়েছেন ৷ এমনকি জোর করে আপনার টিপছাপ নিয়ে আপনাকে ডিভোর্স দিয়েছেন ৷ কি ঠিক তাইতো ?”

নীলু চুপচাপ মাথা নাড়ালো ৷ উনি আবার প্রশ্ন করলেন “আপনি এর যেকোনো একটি অভিযোগের সপক্ষে কোন প্রমান দিতে পারবেন ? আদালত প্রমান বিশ্বাস করে মুখের কথাতে নয় ৷”

নীলুর গলা ধরে আসছে ৷ আজ সত্যিই মনে হচ্ছে যে সঠিক জিনিসের বিচার এতো সহজে হয় না, কিন্তু একটা মিথ্যা জিনিসকে খুব সহজেই সাজিয়ে গুছিয়ে অনেক বড়ো প্রমান করা,যায় ৷ নীলু আধো আধো গলায় বলল ” নাহ নেই ৷” এই সুযোগে উনি বললেন
“তাহলে কি আমরা ধরে নিতেই পারি যে আপনি মিথ্যা বলছেন এবং মিস্টার রূদ্রর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সব মিথ্যা ৷”
নীলুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ কত সুন্দর ভাবে কতগুলো মিথ্যা দিয়ে সব সত্যিটাকে ধামাচাপা দিয়ে নীলুকে মিথ্যাবাদী প্রমান করে দিলো ৷ তখনই নীলুর লয়ার বলে উঠলেন ” মহামান্য আদালত আমার প্রতিপক্ষ বন্ধু এতো সহজে কিভাবে ধরেই নিলেন যে আমার মক্কেল মিথ্যাবাদী , তিনিও কি তার বিরুদ্ধে কোন উপযুক্ত প্রমান দিতে পেরেছেন? পারেননি ৷ তাই আমি চাই যে রুদ্র আহমেদের বর্তমান স্ত্রী রেহনুমা মিঠি আহমেদকে আদালতে আসার অনুরোধ করা হোক ৷” জর্জ মিঠিকে আসার হুকুম দিতেই রুদ্রর উকিল বলে উঠলো “তিনি আজ এই সভায় উপস্থিত নেই মাই লর্ড ৷”
ওনার এই কথা শুনে জর্জ বললেন ” আজকের কার্য এই অবধিই সমাপ্ত হলো ৷” কতটা বলে উনি চলে গেলেন ৷ নীলু দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই, চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে , আজ পরিচয়ের অভাবে সমাজের মানুষ কতো সহজেই তাকে মিথ্যাবাদী অপবাদ দিলো ৷ বাঁচার ইচ্ছা ক্ষীন ৷
রুদ্র নীলুর কাছে গিয়ে বলল ” বলেছিলাম না আমার সাথে লড়তে এসো না , ভালো হবে আমার কাছে ফিরে এসো, অনেক আদর করবো ৷ ” কথাটা বলে নীলুর দিকে চোখ টিপ মেরে চলে গেল রুদ্র ৷ নীলুর গলা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে ৷ বেঁচে থাকাটাকেই সবচেয়ে বেশী অপরাধের মনে হচ্ছে এখন ৷ এই সমাজ ওকে ভালো থাকতে দেবে না, শেষ করে দেবে ওকে ৷

আজ রাতের আকাশটা ঘন কালো মেঘে ঢাকা , পাশে কেউ নেই, গা ছমছমে পরিবেশে একা ছাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে নীলু, অন্য দিনের মতো আজ শ্রাবনের গিটার থেকে কোন সুর ভেসে আসছে না , এলোমেলো বাতাসগুলোও আজ কোন ছন্দ মেলাতে পারছেনা , চারিদিকে ভ্যাপসা আর দম বন্ধ করা বিষাক্ত অনুভূতি , এতো কিছুর মাঝেও যে নীলুর মনে বাঁচার জন্য মনোবল আছে সেটা ভেবেই নীলুর ভীষনভাবে হাসি পাচ্ছে ৷ এতো সহজে হেরে যাবে না ও, ও হার স্বীকার করে নিলে ওর সাথে হেরে যাবে সেই সকল মানুষগুলো যারা ওকে ভালোবাসে ৷ শ্রাবনের সাথে সেদিনের পর আর কথা হয়নি ৷ শ্রাবনের অডিশনটাও বেশ ভালোই গেছে, ফাইনাল রেজাল্ট আসবে, এর ওপর শ্রাবনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ৷ হয়তো ব্যার্থ হয়ে ফিরলে শ্রাবনের শক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বেশ কিছু সময় লাগবে ৷ আজ মঙ্গলবার , বুধবার র মিঠির সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, এতোদিন এগুলো নিজের মনের মাঝেই চেপে রেখেছে , কাউকে বলেনি এমনকি শ্রাবনেও না ৷ হ্যাঁ কাল ও যাবে মিঠির সাথে দেখা করতে ৷ হয় ও সুবিচার পাবে না হয় ও নিজেকেই শেষ করে দেবে ৷ কথাটা ভেবে নীলু দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলো ৷ সন্ধ্যা 7.27 বাজে ৷ শ্রাবন ওর ঘরেই আছে ৷ নীলু কোন রকম কোন অনুমতি ছাড়াই শ্রাবনের ঘরে ঢুকে গেল, আজকাল ঘরটার প্রতি কেমন অধিকারবোধ জন্মেছে , এখন আর আগের মতো ওতো ফরমালিটি মেইনটেইন করে ঘরে ঢুকতে হয় না, এখন তো একটু ইচ্ছা হলেই সেই ঘরে চলে যাওয়া যায় ৷ নীলু ঘরে ঢুকলো, দরজার শব্দেও যেন শ্রাবনের মনোযোগ বিঘ্নিত হলো না, খুব মন দিয়ে গিটারের তারটা ঠিক করার চেষ্টা করছে ৷ কালকে তারটা ছিড়ে গেছে , এখনো রিপেয়ার করেনি , নীলুও কিছু জানেনা, জানবে কি করে ? জানতে গেলে মানুষটার সাথে কথা বলতে হয় তার কাছাকাছি আসতে হয় ৷ নীলু বুঝলো না শ্রাবন কি করছে , ও ভাবলো যে শ্রাবন হয়তো ওর ওপর রাগ দেখিয়ে কোনরকম কোন সাড়াশব্দ করছে না তাই ওউ রাগ দেখিয়ে বেশ জোরেই বলল “কালকে বিকালে গড়িয়া যাবো ,রেডি থেকো যেন লেট না হয় ৷” কথাটা বলে নীলু গটগট করে বেরিয়ে গেল ৷ নীলু চলে যাওয়ার পর শ্রাবন বুঝতে পারলো যে নীলু এসেছিলো আর ওকে কিছু একটা বলেও গেছে যা ও শুনতে পাইনি ৷ বেশ খুশি লাগছে একা ভেবে যে নীলু কথা বলেছে ৷ খুশিতে অনেকটা দৗড়াতে দৗড়াতে রূম থেকে বেরিয়ে গেল, দেখলো নীলু ওর ঘরের দিকে যাচ্ছে ৷ শ্রাবন হাপাতে হাপাতে বলল ” নীলুহহহ কিছু বলবি ৷”

নীলু শ্রাবনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল ” ব্রেকিং নিউই একবার হয় বারবার না ৷” কথাটা বলে রূমে ঢুকে গেল,গিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগলো ৷ শ্রাবন তো সেখানে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো যে নীলু ঠিক কি বলেছিলো ৷

#চলবে,,,,