জারুল ফুলের কাব্য পর্ব-৩৮+৩৯

0
10

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:৩৮]

সময়ের ব্যবধানে মাস দেড়েক পেরিয়েছে। ঊষার মৃত্যু শোকের কাতরতা কাটিয়ে নতুন অতিথি বরণ করার উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাড়ির সদস্যদের মনে।হাসপাতালের করিডোরে মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর থুতনি ঠেকিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছে উৎস। তার ঠিক পাশেই তাকে ভরসা জোগানোর তাগিদে বসে আছেন বাবা-মা।

অপারেশন থিয়েটারের আলো কয়েক মিনিট পেরোতে নিভে গেলো। নার্স এসে জানান দিলো সুসংবাদ, “ছেলে হয়েছে আপনার!”

চিন্তিত মুখগুলো থেকে তৎক্ষণাৎ আঁধার সরে গিয়ে ঠাঁই হলো আনন্দের। সকালে আচমকা রিনিতার মারাত্মক পেইন ওঠায় পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকের সাহায্যে তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করান রায়হান কবীর এবং কেয়া বেগম। খবর পেয়ে অফিস থেকেই সোজা হাসপাতালে চলে আসে উৎস। তারপর থেকে এখানেই সে চুপটি করে বসা।

তারও ঘণ্টা খানেক পর রিনিতাকে নরমাল কেবিনে শিফট করা হলো। একে একে সবাই প্রবেশ করল কেবিনে। বাচ্চাকে রাখা হয়েছে মায়ের ঠিক পাশে। পেট ভরে মাতৃদুগ্ধ পান করে সে এখন নিরবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে চারিদিক। কেয়া বেগম এসে কোলে তুলে নিলেন নাতিকে। শরীরের অবস্থা এখন আগের থেকেও যথেষ্ট ভালো উনার। সেদিনের পর টানা এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কেয়া। মনের দুঃখগুলো না কমলেও দেহের সুস্থতার ঠিকই উন্নতি ঘটেছে উনার। হাস্যোজ্জ্বল মুখে নাতির দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল স্বরে বললেন,“অবশেষে কোল আলো করে আমাদের বংশধর চলে এলো। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না বউমা!”

শাশুড়ির কথার বিপরীতে নিঃশব্দে হাসলো রিনিতা। মায়ের কোল থেকে ছেলেকে নিজের কোলে তুলে নিলো উৎস। তাকে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো স্ত্রীর পাশে। শুধালো,“কেমন আছো রিনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি?”

“আমিও খুব ভালো। কিন্তু আমি যে দ্বিতীয়বারের মতো বাবা হয়ে গেলাম রিনি! এর জন্য আমার কাছে তুমি একটা উপহার কিন্তু পাওনা আছো।”

“তুমি খুশি হয়েছো এতেই আমি খুশি। কোনো উপহার আর লাগবে না।”

“তা তুমি যাই বলো, উপহার আমি তোমায় দিবোই।”

হাসিটা চওড়া হলো রিনিতার। রায়হান কবীর এতক্ষণ ছটফট করছিলেন নাতিকে কোলে নেওয়ার জন্য। এবার যেনো সেই সুযোগটা তিনি পেয়ে গেলেন। এসেই ছেলের থেকে বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে আনন্দিত কণ্ঠে বলে উঠলেন,“এইতো আমার দাদু! তোমাকে কোলে নেওয়ার জন্য কতগুলো দিন আমি অপেক্ষা করেছি জানো?”

দাদার কথা যেনো পছন্দ হলো না ছোট্ট সোনার। দাঁতহীন চোয়াল দেখিয়ে অ্যা অ্যা শব্দে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো সে। কেয়া বেগম স্বামীর উপর রাগ দেখিয়ে বললেন,“দিলে তো বাবুকে কাঁদিয়ে? দাও আমার কোলে।”

“আমি কী করলাম? এখানে আমার দোষ কোথায়?”

“তোমার আবার কীসের দোষ? বাচ্চারা তোমাকে পছন্দ করে না। তনির সময়ও ঠিক এমন হয়েছিল। এমনকি উৎস আর ঊষাকে কোলে নেওয়ার পরেও তারা এভাবেই কেঁদেছিল।”—-বলেই থেমে গেলেন কেয়া বেগম।

ঊষা! আজ অনেকদিন বাদে মেয়েটার নাম সশব্দে উচ্চারণ করলেন তিনি। রায়হান কবীর হয়তো স্ত্রীর মনোভাব বুঝতে পারলেন। তাই প্রসঙ্গে বদলানোর উদ্দেশ্যে বললেন,“উথমী কিন্তু একদম কাঁদেনি। বরং আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো! আমার এখনো সে কথা স্পষ্ট মনে আছে। এমনকি মায়ের আগে সর্বপ্রথম ও বাবা ডাকটাই বেশ ভালো করে রপ্ত করে নিয়েছিল।”

কথায় কাজ দিলো। কেয়া বেগম মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলেন। স্বামীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,“ও তো হয়েছে চরম বাপ ভক্ত মেয়ে! আর এর পেছনেও কিন্তু তোমার কারসাজি ছিলো। উৎস প্রথম মা ডাক শেখার কারণে তুমিই উথমীর সময় মাঝরাতে উঠে ওর ঘুম ভাঙিয়ে পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে হাঁটতে হাঁটতে ওর কানের কাছে শুধু বলতে, বাবা বলো মা! বলো বাবা।”

পুরোনো দিনের কথা মনে পড়তেই শব্দ করে হেসে উঠলেন রায়হান কবীর। অনেকদিন বাদে বাবা-মাকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে উৎস আর রিনিতাও বেশ অবাক হলো। রিনিতা শুধালো,“তনি কোথায়?”

উৎস প্রত্যুত্তর করল,“ও আম্মার সাথে বাইরে। তোমার জন্য মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করছিল। পরে ওকে ভুলিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।”

“মাকে বলো ওকে নিয়ে আসতে। আমার মেয়েটার খিদে পেয়েছে কিনা কে জানে? ওর জন্য চিপস, বিস্কুট কিনে এনো তো।”

মাথা নাড়িয়ে বসা থেকে উঠে বাইরে চলে গেলো উৎস। তার কিছুক্ষণ বাদেই ভেতরে প্রবেশ করলেন আছিয়া। মেয়ের মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন বেয়াই বেয়াইনের কাছে নাতিকে কোলে নিতে।

তনির ঘুম ভাঙতেই সর্বপ্রথম সে মায়ের কাছে এসে বসলো। শুধালো,“ওরা তোমায় ব্যতা দিয়েছে আম্মু?”

মেয়েকে দেখে মৃদু হাসলো রিনিতা। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে স্যালাইন লাগানো হাত দিয়ে মেয়ের গাল ছুঁয়ে দিলো। কপালে চুমু খেয়ে বললো,“না আম্মু, ব্যথা কেনো দিবে? তুমি আমার জন্য কেঁদেছো শুনলাম?”

“আমাকে তোমার কাছে আসতে দিচ্ছিল না নানু।”

“ভাইকে দেখেছো?”

“না।”

“যাও গিয়ে দেখে এসো। তুমি তো আরেকজন খেলার সাথী পেয়ে গেলে মা! যাও দাদীর কাছে যাও, তোমার ভাই ওখানেই আছে। আর হ্যাঁ, বাবা খাবার আনলে কিন্তু ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিবে, ঠিক আছে?”

“আচ্ছা।”—-বলেই তনি ছুটলো ভাইকে দেখার উদ্দেশ্যে।

ঊষার কেসটা কোর্টে এখনো চলমান। আইনজীবীর মাধ্যমে থানায় গিয়ে মামলা করার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই রাফানসহ আরো দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তারও এক সপ্তাহ বাদে তাদের মাধ্যমেই গহনাগাটিগুলোও খুঁজে পেয়ে পুলিশ হস্তান্তর করে উৎসের কাছে। এতোগুলো গহনা তারা একসঙ্গে বিক্রি করতে পারেনি। ভেবেছিল হয়তো, ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে গেলে তারপর না হয়! তবে পুরো ক্যাশ টাকাটা এখনো পাওয়া যায়নি। তার অর্ধেকেরও বেশি টাকা তারা খরচ করে ফেলেছে। সেসব দিয়ে শোধ করেছে সকল ধারদেনা।
___________

ফুলকুঞ্জ আবারো আগের মতোই হয়ে উঠেছে নিরব। বাড়িতে শাহানা আর মালতী ফুফু ছাড়া কেউ নেই। বশির উদ্দিন তিনতলা থেকে নিচ তলার একটি ঘরে ঠাঁই নিয়েছেন। এ বয়সে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠা নামা উনার পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তবে তিনি বাড়িতে থাকলেও যা আর না থাকলেও তা। সারাদিনে প্রয়োজন ব্যতীত তেমন কোনো সাড়াশব্দ উনার পাওয়া যায় না।

তৈমূর অফিসের কাজে ব্যস্ত। কলেজের ক্লাস শেষে গেইট দিয়ে বেরোতেই রোজকার মতন তৈমূরের গাড়িটা ঠিক রাস্তার অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাস্তা পার হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো উথমী। চালকের উদ্দেশ্যে বললো,“এখান থেকে সোজা বড়ো ভাইয়ার বাসায় যাবো আশফাক ভাই।”

“তুরাগ স্যারের বাড়ি?”

“হ্যাঁ, ভাবী ফোন করে যেতে বলেছে। তারপর ওখান থেকে যাবো হাসপাতালে।”

“হাসপাতাল কেনো ম্যাডাম?”

“আমার ভাইয়ের বাচ্চা হয়েছে।”

“আচ্ছা।”—-গাড়িতে স্টার্ট দিলো আশফাক।

জোহান স্কুল থেকে ফিরে খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে আছে। তুরাগ এখন অফিসে। এই সময়টা বাসায় জেবার খুব অলসতায় কাটে। কখনো সময় কাটানোর জন্য সে টেলিভিশন দেখে আবার কখনো বা নতুন নতুন রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করে। কলিং বেল বাজার শব্দে সে উঠে চলে গেলো দরজার কাছে। লুকিং গ্লাসে চোখ রাখতেই পরিচিত মুখশ্রী দেখে অধরে ফোটে উঠলো এক চিলতে হাসি। দরজা খুলতেই ভেতরে প্রবেশ করল উথমী। মিষ্টি হেসে সালাম দিলো, “আসসালামু আলাইকুম ভাবী।”

“ওয়া আলাইকুমুসসালাম। তোমার জন্যই এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।”

ভেতরে এসে বসলো উথমী। ততক্ষণে আশপাশটা বেশ ভালো করেই সে পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছে। জেবা যে অত্যন্ত সৌখিন একজন মহিলা তাও খুব সহজে বুঝে গিয়েছে। কত সুন্দর করে সবকিছু সাজানো গোছানো! কিচেন থেকে একটা ট্রে নিয়ে এসে জায়ের সম্মুখে বসে পড়ল জেবা। পানির গ্লাস আর নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,“আজ ইউটিউব দেখে এই সুন্দর সুন্দর মোমোগুলো আর সাথে স্পেশাল একটা সস বানিয়েছি। আগে কখনো অবশ্য ট্রাই করা হয়নি। জোহান রোজ রোজ নতুন কিছু খাওয়ার বায়না ধরে। এখন এগুলো খেয়ে দেখো তো, কেমন হয়েছে? সাথে আমায় রেটিং দাও।”

অপ্রস্তুত হলো উথমী। জেবার উৎসুক চাহনি দেখে হাত ধুয়ে এসে মোমোতে সস মাখিয়ে কামড় বসালো। উত্তরের আশায় দাঁত দিয়ে এবার নক কাটছে জেবা। পরপর দুটো মোমো খেয়ে বিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়ালো উথমী। বললো,“রেটিং দশের মধ্যে সাড়ে আট। এমনিতে খেতে দারুন হয়েছে, বিশেষ করে সসটা! কিন্তু মোমোটা আরেকটু সিদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন ছিলো বলে মনে হচ্ছে।”

চটজলদি একটি মোমো নিজে চেখে দেখলো জেবা। ভ্রুকুটি করে হতাশ হয়ে বললো,“সত্যিই তো!”

“এটা কোনো ব্যাপারই না। পরবর্তীতে আরো ভালো হবে। তা কী জন্য এতো জরুরি তলব করেছেন বললেন না তো?”

“ওহ হ্যাঁ, তুমি একটু বসো আমি আসছি।”—-বলেই রান্নাঘরে ছুটলো জেবা।

উথমী তার যাওয়ার পথে হা করে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর দু হাতে দুটো টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে হাজির হলো সে। সেন্টার টেবিলের উপর রেখে বললো,“তোমার ভাই আর ভাসুর তো আবার এক অফিসেই চাকরি করে। সম্পর্কে কলিগ বন্ধু। তাই তোমার ভাসুরের থেকেই জানতে পারলাম আজ তোমার ভাবীর সিজার হবে। এই কারণে সবার জন্য আমি নিজ হাতে রান্নাবান্না করেছি। সবাই হাসপাতালে ব্যস্ত, অফিস শেষে তোমারও তো আর বাড়িতে গিয়ে রান্না করে আবার হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমায় ডাকলাম।”

অবাক হলো উথমী। বললো,“এসবের আবার কী দরকার ছিলো?”

“অবশ্যই ছিলো। আগে তো মাঝেমধ্যেই রিনিতা ভাবীর সাথে দেখা হতো। একে অপরের বাসায় যাতায়াত লেগেই থাকতো। এখন সম্পর্ক আরো জোড়ালো হয়ে বেয়াইন হয়ে গিয়েছি। এতোটুকু না করলে হয়? এখন নিশ্চয়ই হাসপাতালে যেতে?”

“হ্যাঁ, ভেবেছিলাম একেবারে হাসপাতালে গিয়ে ভাবী আর তার বাচ্চাকে দেখে তারপর বাড়ি ফিরবো।”

“তা ভালো, আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। আর হ্যাঁ, আমার বাবা গ্ৰামের বাড়ি গিয়েছিল। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে আজ সকালেই একগাদা শাক সবজি, দেশি মুরগি, মুরগির ডিম দিয়ে গিয়েছে। আম্মা আবার কচুর লতি, লাউ, দেশি মুরগির ঝোল, খেতে খুব পছন্দ করেন। সেগুলোও সঙ্গে করে নিয়ে যেও।”

“বাড়ি ফিরতে তো দেরি হবে ভাবী।”

“আহা গাড়ি এনেছো না সঙ্গে করে? আশফাককে ডেকে গাড়িতে উঠিয়ে দিবো।”

“আচ্ছা।”

আরো আধ ঘণ্টা ওখানে কাটিয়ে তারপর সোজা হাসপাতালে চলে এলো উথমী। বাইরে সন্ধ্যা নেমেছে। রিনিতা ঘুমাচ্ছে। পাশে শোয়া ছোটো বাচ্চাটাও পরম নিশ্চিন্তে মায়ের হাতের ভাঁজে ঘুমিয়ে আছে। আছিয়া আর কেয়া বেগম তনিকে নিয়ে করিডোরে বসা। উৎস, রায়হান কবীর নিচে গিয়েছে চা খেতে।

নির্দিষ্ট কেবিনের সম্মুখে এসেই মায়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো উথমীর। মেয়েকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন কেয়া বেগম। বললেন,“এইতো উথমী এসে পড়েছে!”

উথমী মায়ের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে এসে থামলো। হাতের ব্যাগগুলো উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে শুধালো,“আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। তা ভাবী এখন কেমন আছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।”

“আর বাচ্চা?”

“ওও ভালো আর সুস্থ আছে। একেবারে বাপের চেহারা পেয়েছে। যা ভেতরে গিয়ে দেখে আয়।”

মায়ের কথায় কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করল উথমী। ঘুমন্ত রিনিতার দিকে একপলক তাকিয়ে কোলে তুলে নিলো বাচ্চাটিকে। বিড়বিড় করল,“মাশাআল্লাহ!”

কারো উপস্থিতিতে চোখ মেলে চাইলো রিনিতা।ননদকে দেখে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,“কখন এলে?”

ভাবীর কণ্ঠস্বর শুনে সেদিকে তাকালো উথমী। উত্তরে বললো,“এইতো এলাম, তুমি ঘুমাওনি?”

“ঘুম ভেঙে গিয়েছে।”

“শরীর এখন কেমন? শুনেছি খুব পেইন উঠেছিল?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমার ভাতিজা পেট থেকে বের হওয়ার জন্য যেই লাথি আমায় মারছিল! পেইন না উঠে পারে?”

“যাক আল্লাহ সব ভালো করেছেন এতেই শান্তি। তোমার কপাল ভালো বলতে হয়। প্রথম চান্সেই পয়দা করলে একটা কিউট দুষ্টু মেয়ে আর দ্বিতীয় চান্সে একেবারে ছেলে!”

হাসলো রিনিতা। বললো,“আমার কষ্ট আরো বেড়ে গেলো উথমী। এক দুষ্টুকে সামলাতে সামলাতেই তো হিমশিম খেতে হয়, এখন আবার আরেকজন এসেছেন!”

“ব্যাপার না, দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে যাবে।”

আরো কিছুক্ষণ ভাতিজাকে কোলে নিয়ে সেখানেই বসে রইলো উথমী। মাঝেমধ্যে টুকিটাকি কথা চললো ভাবী ননদের মধ্যে। তখনি কোত্থেকে যেনো ছুটে এলো তনি। এসেই ফুফুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটির দিকে আঙুল তাক করে বলে উঠলো,“এই দেখো পুপি! আমার ভাই এটা। এবার থেকে আমি, আইতকিলিম আর ভাই মিলে খেলব।”

“ভাইও চলে এলো অথচ আইসক্রিমকে আইতকিলিম বলা আর ছাড়লি না তুই, তাই না?”

“ঠিকই তো বলেছি, ও আইকিলিমই তো।”

“হয়েছে হয়েছে, ও এখনো ছোটো। তোর সাথে খেলতে এখনো দেরি আছে।”

“আমিও তো ছোতো।”

“আরে ও তো আর তোর মতো হাঁটতে, কথা বলতে পারে না সোনা।”

মাথা নাড়ালো তনি। প্রশ্ন ছুঁড়লো,“ওই আঙ্কেল কই? ডাকো, ভাইকে দেখিয়ে আনি।”

“আঙ্কেল এখন অফিসে। খুবই ব্যস্ত। তোর ভাইকে পরে দেখবে।”

রিনিতা শুধালো,“তুমি একা এসেছো?”

“হ্যাঁ ভাবী, কলেজ শেষে জায়ের বাড়ি থেকে সোজা এখানে এলাম। উনি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর হ্যাঁ, আমার জা কিন্তু তোমার জন্য এত্ত এত্ত রান্না করে পাঠিয়েছে।”

প্রত্যুত্তরে শুধুই হাসলো রিনিতা। বাচ্চার ঘুম ভেঙে যেতেই তাকে রিনিতার পাশে শুইয়ে তনিকে নিয়ে বাইরে চলে এলো উথমী। আছিয়া বেগমের হাতে তাকে ধরিয়ে দিয়ে বললো,“এভাবে ওকে ধরে রাখবেন মাওই। প্রচুর দুষ্টু এই বাচ্চা।”

আছিয়া হাসলেন। কেয়া বেগম শুধালেন,“দেখেছিস ছেলেকে? কেমন?”

“হ্যাঁ দেখেছি, মাশাআল্লাহ।”

“জামাই কোথায়? এলো না যে?”

“উনি এসে কী করবেন? তাছাড়া উনি এ ব্যাপারে জানেন না। অফিসে আছেন।”

“এখন বাড়ি ফিরবি?”

“না, আমার একটু কাজ আছে হাসপাতালে। তোমরা ফিরবে?”

“আমি তো আজ রাতটা এখানেই থেকে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাসা ওদিকে খালি পড়ে আছে। আর আমি এখন এখানে বসে থাকলে সবাই খাবে কী? তাই বেয়াইন আর উৎস এখানে থাকবে আজ। আমি আর তোর বাবা তনিকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবো।”

“যা খাবার নিয়ে এসেছি তাতে আজ রাতটা তোমাদের হয়ে যাবে মা। আর তোমাদের আপাতত ফিরে যাওয়াই উচিত।”

“তোর এখানে আবার কীসের কাজ?”

“ডাক্তার দেখাবো। দুপুরে তোমার থেকে ভাবীর খবর পেয়েই গাইনী ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছি। ভাবলাম যাবোই যখন একেবারে না হয় ডাক্তারও দেখিয়ে আসবো।”

চিন্তিত হলেন কেয়া। সেই চিন্তার রেখা ফোটে উঠলো উনার ললাটে। এ কদিনে মা-মেয়ের সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। আগে মেয়ে ছিলো দুটো আর এখন হয়েছে একটা। এ মেয়ে দিয়েই যেনো শেষ বয়সে এসে সব শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে চাইছেন তিনি। উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,“সেকি! তোর আবার কী হয়েছে? কই বললি না তো? খুব অসুখ? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কলেজ করিস তাই না?”

“তেমন জটিল কিছু না মা। চিন্তা করো না। ইদানিং শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ঠিকমতো ঘুম হয় না, খাওয়ার প্রতি একটু আধটু অরুচি ধরেছে, শরীর দুর্বল এই যা। তাই ভাবলাম একেবারে ডাক্তার দেখিয়ে যাই। আমি আসছি। তোমরা সাবধানে বাড়ি ফিরো।”

“বাড়ি ফিরে ফোন করে জানাস কিন্তু।”

“আচ্ছা।”—–বলেই চলে গেলো উথমী।
____________

ডাক্তারের কথামতো বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুরো আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পুনরায় ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করতে পারলো উথমী। ঘড়ির কাঁটায় তখন ধীরে ধীরে সময় বাড়ছে। তার সাথে বাড়ছে রাত। পাঁচ মিনিটের মতো রিপোর্টগুলো চেক করে ডাক্তার বললেন,“সমস্যা দেখা দেওয়ার পর আর কোনো ডাক্তার দেখাননি?”

“না।”

“সেকি!এতোগুলো দিনে একবারও না?”—মুখশ্রীতে উনার বিষ্ময়।

“আসলে আসবো আসবো ভেবেও বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আর আসা হচ্ছিল না।”

“তা বাড়িতে নিশ্চয়ই টেস্ট করেছিলেন?”

“বাড়িতে? বাড়িতে কীভাবে টেস্ট করবো?”

“আপনি প্রেগন্যান্ট। প্রেগন্যান্সির প্রায় দুই মাস চলছে। অথচ কোনো টেস্ট করেননি? ডাক্তার দেখাননি? এটা কীভাবে সম্ভব? আপনার হাজব্যান্ড কোথায়? তিনি আসেননি?”

ভীষণ অবাক হলো উথমী। বুক কেঁপে উঠলো তার। শুধালো,“কী বললেন আপনি? প্রেগন্যান্ট? আমি?”

“হ্যাঁ, আমি অবাক হচ্ছি! আপনি কীভাবে টের পেলেন না? কিছু সিমটম দেখে তো সন্দেহ হওয়ার কথা। তার উপর মেয়েদের মান্থলি যেই নির্দিষ্ট একটা সময় পার করতে হয় সেটাও তো অফ থাকে। আশা করি বুঝতে পারছেন আপনি?”

উত্তর দিলো না উথমী। এই মুহূর্তে তার ভেতরে অদ্ভুত সব অনুভূতি কাজ করছে। সন্দেহ যে তার হয়নি এমন নয় কিন্তু বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এবং সংসার, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় ওসব আর মাথায় আসেনি। তার নিরবতায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। বললেন, “সকল ব্যস্ততার আগে নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ম্যাডাম। নিজে সুস্থ না থাকলে কাজ করবেন কীভাবে? সংসার সামলাবেন কীভাবে? তার উপর এখন আপনি একা নন। ভেতরে আরো এক প্রাণ বেড়ে উঠছে। নিজের যত্ন নিবেন, খেয়াল রাখবেন। প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছি, সেই অনুযায়ী ওষুধগুলো নিয়মিত খাবেন। লিখে দেওয়া তারিখে পুনরায় চেকআপের জন্য চলে আসবেন। নইলে কিন্তু বাচ্চার ক্ষতি হবে।”

উপরনিচ মাথা নাড়ায় উথমী। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো কিনে নেয়। তারপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে উঠে বসে গাড়িতে।

চলবে ________

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:৩৯]

“ফিরতে দেরি হলো কেনো? এতক্ষণ ধরে কোথায় বসে ছিলে? এটা তোমার বাপের বাড়ি নয় যে যখন যা ইচ্ছে তাই করবে। শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হলে, সংসার করতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন আছে যেগুলো মেনে চলতে হয়।”

তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে হকচকিয়ে গেলো উথমী। দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,“হাসপাতালে ছিলাম। আমার ভাবীর আজ বাচ্চা হয়েছে।”

সন্দেহভাজন দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষণ পুত্রবধূর পানে তাকিয়ে রইলেন শাহানা। উথমী নমনীয় স্বরে বললো, “এবার ভেতরে আসি?”

দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালেন শাহানা। উথমী ভেতরে প্রবেশ করতেই তার পিছুপিছু কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকলো ফজলুল। শাহানাকে সালাম দিয়ে হাতের ব্যাগগুলো অন্দরমহলে রেখেই তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। শাহানা সদর দরজা আটকে পিছু ফিরে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কী? আর হাসপাতালে গিয়েছো ভালো কথা কিন্তু ফিরতে এতো দেরি হলো কেনো? বাড়িতে ফোন করে জানাবে না?”

“এসব জেবা ভাবী পাঠিয়েছেন। কলেজ শেষে উনার ফোনকল পেয়ে উনাদের বাসায় গিয়েছিলাম। ভাবীর বাবা গ্ৰাম থেকে সোনালী মুরগি, কচুর লতি, লাউ আর হাঁসের ডিম নিয়ে এসেছে। এসব নাকি আপনার খুব পছন্দের? তাই সঙ্গে করে দিয়ে দিলো। এমনকি আমার ভাবীর জন্য তিনি রান্নাবান্নাও করেছেন। ওখান থেকেই সোজা হাসপাতালে গেলাম। আপনার ছেলের হয়তো জানার কথা। আশফাক ভাইকে নিশ্চয়ই ফোন করেছে! তাছাড়া বাড়িতে জানানোর কথা মনে ছিলো না। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।”

সোফায় এসে বসলেন শাহানা। নিমিষেই উনার রাগ কমে গিয়েছে। বললেন,“আমি আবার রাতের খাবার দেরি করে খেতে পারি না। তাই আগেই খেয়ে নিয়েছি। তবে বাড়ির বউ এতো রাত পর্যন্ত একা একা বাইরে ঘুরে বেড়াবে আর আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ব? এ আমায় দিয়ে সম্ভব নয়।”

“আপনার ছেলে ফিরেছে?”

“না, ও ফিরলে তো ওকে দিয়েই খুঁজতে পাঠাতাম।”

“আচ্ছা, আপনি এখানে বসুন আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি। আপনার জন্য একটা টাটকা খবর আছে। আর হ্যাঁ, এসব আমি এসে গুছিয়ে রাখবো।”–বলেই দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো উথমী। শাহানা ভ্রুকুটি করে পুত্রবধূর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

মালতী ফুফু ঘুমিয়ে পড়েছেন। তৈমূরের বিয়ের পর থেকে উনি যেনো একটু শান্তিতে আছেন। বেশি রাত জাগতে হয় না, কারো জন্য অপেক্ষা করতে হয় না আবার ভোরে উঠে তাড়াহুড়ো করে নাস্তাও তৈরি করতে হয় না।

পোশাক বদলে, হাত-মুখ ধুয়ে নিচে নেমে এলো উথমী। শাহানা পূর্বের ন্যায় এখনো বসে আছেন সোফায়। উনার দিকে একপল তাকিয়ে একটি ব্যাগ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে হাতে নিলো উথমী। শাশুড়ির মুখের সামনে মিষ্টির পিছ ধরে বললো,“নিন হা করুন।”

থতমত খেয়ে গেলেন শাহানা। হা না করে মুখ সরিয়ে নিলেন। সন্দেহ নিয়ে বললেন,“কীসের মিষ্টি? কেনো খাবো? আমার ডায়াবেটিস আছে জানো না?”

“ডায়াবেটিসের তোয়াক্কা আপনি আবার কবে থেকে করেন? রোজ যে মালতী ফুফুকে চায়ে বেশি বেশি চিনি দিতে বলেন, তখন? আপনার ছেলেকে কখনো বলেছি এ বিষয়ে?”

ধরা পড়ে যাওয়ায় মুখশ্রীতে চোরাচোরা ভাব চলে এলো শাহানার। তবুও গলার তেজ কমলো না। উনি কিছু বলার আগেই উথমী বলে উঠলো,“ছানার মিষ্টি। তাই এতে মিষ্টির পরিমাণ কম আছে। হা করুন।”

গাঁইগুঁই না করে পুরো মিষ্টিটাই মুখে নিয়ে নিলেন শাহানা। চিবোতে চিবোতে শুধালেন,“তোমার ভাবীর বাচ্চা হওয়ার মিষ্টি?”

“না।”

“তবে?”

খানিকটা লজ্জা পেলো উথমী। দুয়েক মিনিট সময় নিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,“লজ্জার কথা কীভাবে আপনাকে বলি বলুন? আপনার ছেলে আসুক। আগে তাকে জানাই তারপর কাল না হয় সে আপনাকে জানাবে। এখন আপনার জন্য পানির বোতল নিয়ে আসি। তা নিয়ে ঘরে গিয়ে ঘুম দিন।”

হঠাৎ পুত্রবধূর এমন অদ্ভুত আচরণে বিপাকে পড়লেন শাহানা। মেয়ের কী মাথায় সমস্যা দেখা দিলো? নাকি আগে থেকেই সমস্যা ছিলো? শুরু থেকেই একে শাহানার তেমন সুবিধার মনে হয়নি। না, কাল সকালেই ছেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। ভালো ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলে তো বিপদ!

শাহানা ঘরে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পর ঘামে জবজবে শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরলো তৈমূর। কিছুক্ষণ না জিড়িয়েই ক্লান্ত শরীর নিয়ে একেবারে গোসল সেরে এসে বিছানায় বসলো সে। উথমী জিজ্ঞেস করল,“খাবার বাড়বো?”

“আপনি খেয়েছেন?”

“বিকেলে নাস্তা করেছিলাম, এখন আর খিদে নেই।”

“অফিসে এক কলিগের তরফ থেকে পার্টি ছিলো। খেয়ে এসেছি।”

“আচ্ছা।”—-আর কথা না বাড়িয়ে দরজা আটকে দিলো উথমী।

তৈমূর প্রশ্ন ছুঁড়লো,“আপনি প্রথমে ভাইয়ার বাসায় গিয়ে তারপর হাসপাতালে গিয়েছিলেন? কই জানালেন না তো?”

“ভাবীর ছেলে হয়েছে। আমার ভাইয়া আর আপনার ভাই তো এক অফিসেই চাকরি করে। তাই সেকথা বড়ো ভাইয়ার থেকে জেনেই জেবা ভাবী একগাদা রান্না করে আমায় দ্রুত যেতে বললেন। গিয়ে দেখি এই অবস্থা! আপনার মোবাইল তো সবসময় সাইলেন্ট থাকে। কী করে জানাবো?”

“ওহ।”

“আশফাক ভাই কী সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি?”

“আমিই যেতে নিষেধ করে দিয়েছি। আশফাকের ফোন আসতে আসতে আমি বাসে উঠে গিয়েছিলাম।”

মোবাইলে দৃষ্টি রেখেই নিজ কথা শেষ করল তৈমূর। উথমীর হঠাৎ করে খুব লজ্জা লাগছে। কীভাবে স্বামীকে সে প্রেগন্যান্সির কথা জানাবে? সরাসরি বলে দিবে নাকি রিপোর্ট দেখাবে? দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে সে। মোবাইলের স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্ত্রীর পানে তাকালো তৈমূর। ভ্রুকুটি করে শুধালো,“শোবেন না? এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”

নড়েচড়ে উঠলো উথমী। আমতা আমতা করল কিছুক্ষণ। তারপর বিছানায় এসে পা ঝুলিয়ে বসলো। বললো,“ভাবীকে দেখতে গিয়ে আমিও একেবারে ডাক্তার দেখিয়ে এলাম, বুঝলেন?”

“আপনার আবার কী হয়েছে?”

“বেশ কয়েকদিন ধরে যে আমি অসুস্থ, ঠিকমতো খেতে পারছি না, বমি হচ্ছে, একটু পরপর ওয়াশরুমে দৌড়াচ্ছি, মাথা ঘুড়ায় সেসব কিছুই দেখি জানেন না।”

মোবাইল হাত থেকে রেখে সোজা হয়ে বসলো তৈমূর। নরম কণ্ঠে বললো,“জানবো না কেনো? আমিই তো কতবার আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু আপনি পরবর্তীতে বললেন সেসব নাকি ঠিক হয়ে গিয়েছে।”

থতমত খেয়ে গেলো উথমী। মুখ ভার হলো তার। তৈমূর প্রশ্ন ছুঁড়ল,“কী বললেন ডক্টর?”

“বললেন, এখন আর আমি একা নই।”

“একা নন?”

“না।”

“কে আছে সঙ্গে?”

“তৈমূরের বাচ্চা।”

“হে? মজা করছেন?”—–বোকা বনে গেলো তৈমূর।

দুদিকে মাথা নাড়িয়ে লজ্জা লুকাতে স্বামীর বুকে মাথা ঠেকালো উথমী। স্বামীর পরনের টি-শার্ট আঙুল দিয়ে প্যাঁচাতে লাগলো। তৈমূর চুপচাপ স্ত্রীর কান্ড কারখানা দেখছে। এই মেয়ে এমন করছে কেনো? সকালেও তো তার সাথে রাগ দেখিয়েছে। অথচ? তার ভাবনার মধ্যেই উথমী বললো,“রিপোর্টে এসেছে আজ প্রায় দুই মাস ধরে আমার পেটে আপনার বাচ্চার বসবাস। ডাক্তার বললেন, স্বামীকে বেশি বেশি আপনার খেয়াল রাখতে বলবেন। আপনার সকল আবদার মেটাতে বলবেন।”

থমকালো, চমকালো তৈমূর। দুই বাহু ধরে উথমীকে সোজা করে চোখে চোখ রেখে আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বললো,“আপনি প্রেগন্যান্ট? এটা সত্যি?”

মুচকি হেসে উপরনিচ মাথা নাড়ায় উথমী। উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে রিপোর্টগুলো বের করে স্বামীর হাতে ধরিয়ে দেয়। তৈমূর সেসব উল্টেপাল্টে দেখলো। মুহূর্তেই চকচক করে উঠলো তার মুখশ্রী। উথমীর হাত টেনে ধরে তাকে পূর্বের স্থানে বসালো। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে আপ্লুত হয়ে বললো,“কী সংবাদ দিলেন উথমী? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। ভেতরে অদ্ভুত সব ফিলিংস কাজ করছে।”

প্রত্যুত্তর করল না উথমী। সংবাদটি শোনার পর থেকে ভেতরে মাতৃত্ববোধ জেগে উঠেছে তার। একটা ছোট্ট বাচ্চা আসবে, তাকে মা মা বলে ডাকবে! সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াবে! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
___________

ইদানিং শরীরটা খুব মুটিয়ে যাচ্ছে তিথিয়ার। ঘরে বসে থাকতে থাকতে হয়তো চর্বি বেড়েছে। তাই আজ সেই কাক ডাকা ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করেই সে বের হয়েছে হাঁটতে। প্রথমে গলির মোড় আর তারপর পার্কে কিছুক্ষণ সকলের সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে সেখান থেকে সে বেরিয়ে এলো। এবার বাড়ি ফেরার পালা। শামীম বাড়িতে নেই। ব্যবসায়িক কাজে এবার বেশ কয়েকদিনের জন্য চলে গিয়েছে ঢাকার বাইরে। এমনটা সে প্রায় প্রায়ই করে।

ফেরার পথে মেইন রোড পেরোতেই দেখা হয়ে গেলো মিলির ক্লাসমেট ফারিয়ার মায়ের সাথে। আগে যখন রোজ রোজ মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতো তিথিয়া, তখন নিচে বসে অভিভাবকদের সাথে চলতো তার ঘোরাঘুরি এবং সাংসারিক সব গল্প। ভদ্রমহিলাকে দেখেই অধরে হাসি ফোটে উঠলো তিথিয়ার। ফারিয়ার মা মৃদু হেসে বললেন,“কতদিন পর দেখা হলো ভাবী! আপনি তো এখন আর স্কুলে আসেনই না। মিলিকে দেখলেই আমি আপনার কথা খুব জিজ্ঞেস করি।”

“মেয়েরা বড়ো হয়েছে, এখন একা একাই স্কুলে যেতে পারে। তার উপর ওরি তো আছেই! এই জন্য আর যাওয়া হয় না ওদিকে। অফিসিয়াল সবদিক ওদের বাবাই দেখে।”

“ভাইয়ের কথা তুলতেই একটা কথা মনে পড়ে গেলো ভাবী। আপনাকে বলবো বলবো করেও আর বলা হয়নি।”

“কী কথা?”

আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালেন ভদ্রমহিলা। এগিয়ে এসে কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললেন, “ফারিয়ার বাবা দুদিন আগে অফিসের কাজে সোনারগাঁও গিয়েছিল। ওখানকার একটা রিসোর্টে মিলির বাবাকে অন্য এক মহিলার সঙ্গে দেখে এসেছে। পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ভাইকে সে ডেকেছিল কিন্তু উনি শুনেও শুনলেন না। বরং না চেনার ভান ধরে কিনা চলে গেলেন? তখনি ফারিয়ার বাবা বুদ্ধি করে রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, উনারা নাকি স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ওখানে উঠেছে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!”

অধরের হাসিটা মিলিয়ে গেলো তিথিয়ার। শুকনো ঢোক গিলে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললো,“একি বলছেন ভাবী? এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। ফারিয়ার বাবা হয়তো চিনতে বা দেখতে ভুল করেছে।”

“এ অসম্ভব ভাবী। মিলির বাবাকে সে চিনবে না? এ কীভাবে হয়? গত মাসেই না ফারিয়ার জন্মদিনে আপনারা সপরিবারে এলেন? ভাইয়ের সাথে ওদের বাবা কত গল্প করল? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া সম্ভব না ভাবী।”

“তাও ভাবী, এটা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। আমাদের বিয়ের কয়েক যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন আমরা দুই সন্তানের বাবা-মা। আর তাকেও আমি বিশ্বাস করি।”

“ফারিয়ার বাবার তো আর মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই ভাবী। আপনার সাথে একসময় আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো তাই জানিয়েছি। এখন আপনি কী করবেন তা আপনিই ভালো জানেন। কিন্তু একটা কথা বলি ভাবী। বিশ্বাস ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালো নয়। চোখ কান খোলা রাখুন। পুরুষ মানুষ তো বোঝেনই? ঘরে বউ রেখে বাইরে ছুঁক ছুঁক করা এদের স্বভাব। তার উপর টাকাওয়ালা পুরুষ মানুষ দেখলে তো আবার কিছু চরিত্রহীন মহিলা শুয়ে পড়ে। সংসার আছে জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। আজ তবে আসি, বাড়ি গিয়ে রান্না বসাতে হবে। সময় পেলে আমাদের বাড়িতে আসবেন কিন্তু।”

তিথিয়া বিষণ্ণ মুখে ভদ্রমহিলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এতোগুলো বছর ধরে শামীমের সাথে সম্পর্ক তার। আজকের এই সফল শামীমের পেছনে তার আর তার বাবার অবদান তো আর কম নয়! ছাপোষা চাকুরীজীবি থেকে আজ বড়ো এক ব্যবসায়ী সে। গ্ৰামের ওই শ্যাওলা পড়া বংশীয় দালান ছেড়ে আজ অট্টালিকায় বসবাস। সবই তিথিয়ার বাবার কারণেই হয়েছে। যা শামীম ভুলেনি। তাই তো রাজরানীর মতো তাকে মাথায় তুলে রাখে। বিয়ের এতোগুলো দিন পেরিয়ে আসার পরেও তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পর্যন্ত করেনি অথচ সে কিনা তাকে ঠকাবে? এসব কখনোই তিথিয়ার পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। তবে ফারিয়ার মা যেই সন্দেহের বীজ বপন করে দিয়ে গেলো তার মন মস্তিষ্কে, সেসবের কী হবে? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো তিথিয়া। ওরি, মিলি এতক্ষণে হয়তো স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে।

স্যুট বুট পরে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে টেবিলে নাস্তা করতে বসেছে তৈমূর। তার নাস্তার টাইমিং এর ঠিক নেই। কখনো জগিং থেকে ফিরে এসে নাস্তা করে তৈরি হয় আবার কখনো বা একেবারে তৈরি হয়ে নাস্তা করে। উথমী এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে স্বামীর প্লেটে। শাহানাও এসে বসলেন নিজস্ব চেয়ারে। তৎক্ষণাৎ দুধের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে শাশুড়ির প্লেটে ডিম সিদ্ধ, আটার রুটি তুলে দিলো উথমী। শাহানা সিদ্ধ ডিমে কামড় বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,“তুমি বেরোবে না?”

“না, ছুটি নিয়েছি।”

“হঠাৎ?”

“তেমন কোনো কারণ নেই। ভাবলাম দুদিন একটু বিশ্রাম নেই। তাছাড়া ভাবীকে দেখতে আজ বিকেলে হাসপাতালে যাবো। কাল সারাদিনও বাড়িতেই থাকবো।”

“ওহ।”

তৈমূরকে ইশারায় কিছু বললো উথমী। যার অর্থদ্বার খুব সহজেই বুঝে গেলো তৈমূর। রাতেই কথা হয়েছিল, সকাল হলে মাকে খুশির খবরটা জানিয়ে দিবে সে কিন্তু এমন সময়ে এসে ভীষণ অস্বস্তিবোধ হচ্ছে তার। মায়ের সামনে নিজ মুখে কীভাবে বলবে, মা আমার বউ প্রেগন্যান্ট! স্ত্রীর বারবার করা চোখের ইশারায় আর চুপ থাকতে পারলো না তৈমূর। প্লেটের খাবারটুকু শেষ করে পানি পান করল। রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ডাকলো,“আম্মা!”

খেতে খেতেই ছেলের ডাকে সাড়া দিলেন শাহানা, “কী?”

দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে লাজ লজ্জা ভুলে বলে উঠলো তৈমূর,“আপনি দাদী হতে চলেছেন।”

খাওয়া থামিয়ে ছেলের পানে এবার তাকালেন শাহানা। ভ্রুকুটি করে বললেন,“দাদী হতে চলেছি মানে? দাদী তো আমি কবেই হয়ে গিয়েছি।”

“ওটা তো ভাইয়ার মাধ্যমে হয়েছেন। এবার হবেন আমার মাধ্যমে।”

ফ্যালফ্যাল নয়নে কিছুক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে এবার দৃষ্টি ঘুরালেন পুত্রবধূর পানে। উথমী মাথা নিচু করে চুপচাপ আঙুল দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছে। এদের হাবভাব দেখে কিছু একটা আঁচ করলেন শাহানা। উৎসুক কণ্ঠে বলে উঠলেন,“তোর বউ পোয়াতি!”

থতমত খেয়ে গেলো তৈমূর। অপ্রস্তুত ভঙিতে উপরনিচ মাথা নাড়ালো। শাহানা উথমীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,“এই উপলক্ষ্যে কাল রাতে মিষ্টি খাইয়েছিলে?”

“হুম।”

“তা কতদিন চলছে?”

“প্রায় দুই মাস।”

উত্তেজনা কিছুটা কমলো উনার। দু ভ্রুয়ের মাঝখানে ভাঁজ পড়ল। তৈমূর ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ‘আমি আসছি’ বলেই সেখান থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো সে। ছেলের যাওয়ার পথে একবার তাকিয়ে পুত্রবধূর উদ্দেশ্যে কড়া কণ্ঠে বললেন তিনি,“দুই মাস পেরিয়ে গেলো অথচ তুমি কাল জেনেছো?”

“হু।”

“এটা কেমন কথা? তুরাগ, তৈমূর পেটে আসার কয়েক সপ্তাহ পরেই আমি জেনে গিয়েছিলাম তাও আবার ডাক্তারের কাছে না গিয়েই। আর তোমরা শিক্ষিত মানুষ এতদিনেও জানলে না? এই জন্যই বলি, সাংসারিক শিক্ষা তোমার মধ্যে নেই। সারাক্ষণ টইটই করবে কিন্তু অসুখ বিসুখ হলেও নিজের যত্ন নেওয়ার খবর নেই।”

“আসলে বাবা-মা, ভাবীর অসুস্থতা, হঠাৎ ঊষার মৃত্যু, কলেজের ব্যস্ততা, সংসারের সব চিন্তা মিলিয়ে এসব আর মাথায় আসেনি। ভেবেছিলাম হয়তো এমনিই।”

“হয়েছে হয়েছে, এবার থেকে সাবধানে চলাচল করতে হবে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নিতে হবে।”—-বলেই আরো দুটো ডিম তার প্লেটে তুলে দিলেন শাহানা।

আর খেতে ইচ্ছে করছে না উথমীর। তবে নিষেধ করল না সে। নইলে দেখা যাবে আরো দু চারটে কথা তাকে শুনিয়ে দিবেন ভদ্রমহিলা। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,“দুপুরে ভাবছি ঝাল ঝাল মুরগি ভুনা, কচুর লতি আর ডাল রান্না করবো। ঠিক আছে না?”

“হ্যাঁ, কিন্তু তোমার করতে হবে না। কাল সারাদিন কম দৌড় ঝাঁপ তো আর করোনি। রাতেও দেরিতে ফিরেছো। বিশ্রাম নাও গিয়ে। মালতী করে নিবে।”

“আমি ঠিক আছি। রান্না আমিই করবো।”

“বারণ তো আর শুনবে না। শোনো, মাঝারি সাইজের চিংড়ি আছে না? কচুর লতিতে বেশি করে চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করবে, উপরে যেনো তেল ভেসে থাকে।”

উথমীর অধরে হাসি ফোটে উঠলো। বললো,“এভাবে আমার মাওই রান্না করেন।”

“মাওই?”

“আমার ভাবীর মা। উনার হাতের রান্না খুবই সুস্বাদু। বিশেষ করে বিভিন্ন সবজি। আমার মা আবার সবজি রান্না তেমন ভালো পারে না। মায়ের হাতের মাছ, মাংস, পোলাউ থেকে শুরু করে যেকোনো রান্না দারুণ হলেও সবজি রান্না তেমন ভালো না। আগে তো কচু আমি খেতামই না কিন্তু একদিন বেড়াতে গিয়ে মাওই এর হাতে খেলাম‌। এরপর থেকে এটাও আমার ভালো লাগে। যদিও চিংড়ি মাছে এলার্জি আছে তবুও না খেয়ে থাকতে পারি না।”

চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো শাহানার। নিজের ছেলেবেলা হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো। মৃদু হেসে বললেন,“ছোটোবেলায় ধানের জমি থেকে বাবা মাছ ধরে আনলেই তার সাথে আসা চিংড়িগুলো আলাদা করে রেখে আমার আম্মা রান্না করতো কচুর লতি। আম্মার হাতের রান্না কি যে স্বাদ! ওই লতির তরকারি দিয়েই আমরা ভাই-বোনেরা এক থাল গরম গরম ভাত খেয়ে সাবাড় করে দিতাম। এরপর নিজ হাতে কত যে রান্না করলাম কিন্তু সেই স্বাদ আর কখনো পাইনি। আমার শাশুড়ির আবার কচুতে খুব গলা ধরতো। তাই তিনি বেঁচে থাকাকালীন বাড়িতে কচু প্রবেশ ছিলো নিষিদ্ধ। কম জ্বালান জ্বালায়নি আমায়।”

একদৃষ্টিতে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো উথমী। হঠাৎ করেই তার মনে হলো, সামনে বসা এই বয়স্ক নারীর ভেতরে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্ট। যা এতো বছরেও কাউকে হয়তো মন খুলে বলতে পারেননি তিনি। পারেননি দুঃখ কমিয়ে হালকা হতে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাহানা উঠে দাঁড়ালেন। চোখের পানি আড়ালে মুছে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,“আগুনের তাপে বেশিক্ষণ থেকো না। সময়মতো গোসল করে খেয়ে নিও।”

তারপর আর সেখানে দাঁড়ালেন না তিনি। সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলেন উপরে।

চলবে ___________

(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)