#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [১৩]
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী — [নতুন সূচনা]
.
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌]
.
দুজনের চোখের দৃষ্টি প্রতিনিয়ত গাঢ় হতে রইল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনে। হঠাৎ এমন তাদের কানে ভেসে আসলো গানের আওয়াজ,
♪….আমার মন বসেনা শহরে
ইট পাথরের নগরে,
তাই তো আইলাম সাগরে,
তাই তো আইলাম সাগরে।
মন বসেনা শহরে
ইট পাথরের নগরে,
তাইতো আইলাম সাগরে,
তাইতো আইলাম সাগরে…♪
.দুজনের তাকালো সেদিকে। ওদের থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে গান ধরেছে। দ্যূতি আরুশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ চলেন! ওখানে যাই! ”
আরুশ মুচকি হাসে দ্যূতির সাথে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করল। দ্যূতি নিচে মুখ করে হাঁটছে। আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তোমার মুখ যে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সেটা লুকাতে হবে না, আমার চোখে অনেক আগেই সেটা পরেছে…”
দ্যূতি বিস্ফারিত দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকালো। চোখ মুখে এক অন্যরকম ছোঁয়া। জেদী মেয়েটির চাহনি এখন অনেকটাই নরম আর স্নিগ্ধ। আরুশ থেমে গেলো। দ্যূতিও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“ দাঁড়িয়ে গেলেন কেন? ”
“ তোমাকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে… এতো মায়বী কেন তুমি? ”
আরুশের গাঢ়, হাস্কি টোনটা দ্যূতির মনে আবারও তীক্ষ্ণ দাগ কেটে দিয়ে গেলো। আরুশের পানে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। আরুশের চোখে তখন অব্যক্ত ভালোবাসা ভেসে উঠছে। আরুশ আর দ্যূতির মাঝে একহাত সমান দূরত্ব ছিল যা আরুশের দ্যূতির কাছে এসে ঘুচিয়ে দিয়েছে। আরুশকে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে দ্যূতির পা জমে গেল বালির মধ্যে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আরুশ দ্যূতির অপ্রস্তুত চাহনি দেখে বেশ মজা পেলো। সে ধীরে ধীরে নিজের হাত বাড়িয়ে দ্যূতির হাত ধরতে গেল।
আরুশের ছোঁয়া পেতেই দ্যূতি কেঁপে উঠলো। আরুশের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল। আরুশ দ্যূতির হাত নিজের দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। দ্যূতির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে ছোট করে ঢোক গিলল। আরুশ দ্যূতির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে দ্যূতির হাত নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো। তাতে নিজের ঠোঁট আলতো করে ছুঁইয়ে দিলো। দ্যূতি অবাকের ন্যায় আরুশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীরে ভীষণ বেগে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
দ্যূতি আরুশের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। যে জায়গায় আরুশ তার ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করেছে হাতের সেই স্থানে অশ্রু নয়নে চেয়ে থাকল। আরুশ দ্যূতিকে না ছুঁইয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো। ফিসফিস করে বলল,
“ তুমি কি মিস্ থেকে মিসেস চৌধুরী হতে প্রস্তুত? ”
দ্যূতি চোখ বন্ধ করে নিলো। নিঃশ্বাস নেওয়া যেন বন্ধ হয়ে গেছে তার জন্য। আরুশ দ্যূতির কানে আবার ফিসফিস করে বলল,
“ কিছু না বলা তো, সম্মতির লক্ষণ তাই না? ”
দ্যূতি তাতেও কোনো উত্তর দিলো না। আরুশের দিকে ধীরে ধীরে ফিরে দাঁড়ালো। আরুশের মুখে অবিচল হাসি রয়েছে। দ্যূতি উত্তর স্বরূপ করে বলল,
“ হয়তো! ”
বলেই দ্যূতি একদৌড় দিলো,সেই গানের আসরের দিকে। তখনও সবাই গানে মেতে রয়েছে। দ্যূতিকে দৌড়ে যেতে দিলো আরুশ। সে চাইলেই আটকাতে পারতো। আরুশ দ্যূতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“ my love! ”
.
আরুশও গানের আসরে এসে দাঁড়িয়েছে। শিহাব তার দিকে সন্নিহিত চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে ওমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরুশ চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“ ছাগলের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? ”
শিহাব ঢোক গিলে একই ভাবে তাকিয়ে বলল,
“ স্যার আপনি ভাবিজান কে প্রপোজ করেছেন তাই তো? ”
আরুশ বেশ অবাক হলো। সে ভেবেছিল কেউ হয়তো তাদের দেখেনি। আরুশ একটু চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
“ তুই কিভাবে জানলি? ”
শিহাব যেন তার শক্তি ফিরে পেলো আরুশের সামনে। বুক ফুলিয়ে মুখে এক গাল হাসি নিয়ে বলল,
“ আমি আপনাকে প্রপোজ করতে দেখেছি! চিন্তা করবেন না,অন্যরা কেউ দেখতে পারেনি! তাহলে তো আর রক্ষে থাকতো না, ”
“ সামনেও যেন কেউ না জানে! ”
“ জ্বী স্যার! ”
গানের আসরের মধ্যে সবাই গান ধরেছে কেবল দুজন বাদে। আরুশ আর দ্যূতি একে অপরের দিকে আছে। দুজনের মুখেই হাসি। দুজনের চোখেই ভালোবাসা। দ্যূতি বুক ভরে শ্বাস নিলো….
.
সবাই রিসোর্টে ফিরে এসেছে। দ্যূতি নিজ ঘরে চিন্তাই পায়চারি করছে। থেকে থেকে থেমে যাচ্ছে আবার পরক্ষনেই লাফালাফি শুরু করে দিচ্ছে। নিজের চুল নিজেই টানছে।
“ এতো কিছু পিউ আপি কিভাবে বুঝাবো? আপি তো আমাকে খেয়ে ফেলবে! ….. আর ভালো লাগে না… প্রেম না করলে জ্বালা করলেও জ্বালা…. আমার জীবনটা একটা আগুন 🔥….!”
“ আমার সত্যিই এবার মনে হচ্ছে,তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস দ্যূতি…”
হঠাৎ দরজার কাছ থেকে মিলির গলা পেতেই দ্যূতি থেমে গেলো।
“ আবার? ”
মিলি দরজার কাছ থেকে দ্যূতির কাছে এসে দাঁড়ালো। দ্যূতির মাথাই হাত বুলিয়ে কি যেন চেক করল। দ্যূতি মিলির অদ্ভুত কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকালো। মিলি দ্যূতির কপাল থেকে হাতে নামিয়ে বলল,
“ জ্বর তো নাই! তাহলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গিয়েছিস! ”
মিলির কথা শুনে দ্যূতি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,
“ তুমি এসব কি বলছো? ”
“ আমি কি বলছি? বিজ্ঞান বলছে, নিজের সাথে বিড়বিড় করা মানুষ গুলো পাগল হয়, যেমন ওইসব বিজ্ঞানীরা….”
দ্যূতি কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই থেমে গেলো। মিলিকে এখনো সব ঘটনা খুলে বলা হয়নি। এখন বলার মতো সময়ও না। ঢাকায় ফিরে বলবে বলে ঠিক করেছে দ্যূতি কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তো একটা বাহানা দিতে হবে, কিন্তু দেবেটা কি?
দ্যূতিকে চুপ করে থাকতে দেখে মিলি দ্যূতিকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ আরেকটা লক্ষণ!”
“ মানে? ”
“ এই যে থেকে থেকে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া,পাগল হয়ে যাওয়ার আরেকটা লক্ষণ! ”
দ্যূতি মিলির কথাগুলো শুনে মনে মনে ভাবল,
“ আমি পাগল না হলেও,এই আরুশ আর মিলি আপু দুজনে মিলে আমাকে পাগল কলে দিবে …”
.
“ আচ্ছা রিলেশনে থাকলে অ্যাজ আ গার্লফ্রেন্ড মানুষদের কি কি করতে হয় ? ”
দ্যূতির হঠাৎ এমন প্রশ্ন আরুশ বেশ চমকিয়ে উঠলো। আড়চোখে দ্যূতির দিকে তাকালো ওকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। সন্ধ্যা বেলায় দু’জনে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অনেকক্ষণ কোনো শব্দ ছিল না দুজনের মাঝে। কিন্তু দ্যূতির ওমন প্রশ্ন আরুশকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো।
“ কি হলো? বলুন! ”
দ্যূতি দৌড়ে আরুশের সামনে এসে দাঁড়ালো। আরুশ দ্যূতির প্রশ্নের কি উত্তর দিবে বুঝতে পারল না। বয়ফ্রেন্ড হিসেবে কি করতে হবে সেটা নয় বলা যায় কিন্তু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কি করতে হবে সেটা সে কিভাবে বলবে? আরুশ হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,
“ ওসব জেনে তোমার কাজ নাই! ”
“ কেন কাজ নেই শুনি? ”
দ্যূতি কোমরে হাত রেখে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। এমন দেখে আরুশই খানিকটা ভীতু হয়ে পরল। আগে কখনো তো দেখেনি।
“ কি হলো? কিছু জিগ্গেস করছি তো? ”
“ গার্লফ্রেন্ড কিছু করতে হয় না, তারা পায়ের উপর পা রেখে বসে থাকে ,যা করার বেচারা বয়ফ্রেন্ড গুলো করে, ”
আরুশের উত্তর দ্যূতির মনে ধরল না। পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে হালকা লম্বা হয়ে তিরিক্ষি স্বরে বলল,
“ আমাকে কি আপনার মতো ছাগল লাগে? যা বোঝাবেন তাই বোঝবো? ”
“ না দ্যূতি! আমি কি একবারও তা বলেছি, আমি তো শুধু…..”
দ্যূতি আরুশকে থামিয়ে দিলো,
“ থাক আপনার আর কথা বলতে হবে না, কোনো কিছু জানে না….”
বলে সামনের দিকে হাঁটা ধরল দ্যূতি। দ্যূতিকে চলে যেতে দেখে আরুশ চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“ কোথায় যাও? ”
“ জাহান্নামে! ”
দ্যূতি না ফিরেই চেঁচিয়ে উত্তর দিলো….
চলবে…..
#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [১৩]
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী — [নতুন সূচনা]
.
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌]
.
দুজনের চোখের দৃষ্টি প্রতিনিয়ত গাঢ় হতে রইল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনে। হঠাৎ এমন তাদের কানে ভেসে আসলো গানের আওয়াজ,
♪….আমার মন বসেনা শহরে
ইট পাথরের নগরে,
তাই তো আইলাম সাগরে,
তাই তো আইলাম সাগরে।
মন বসেনা শহরে
ইট পাথরের নগরে,
তাইতো আইলাম সাগরে,
তাইতো আইলাম সাগরে…♪
.দুজনের তাকালো সেদিকে। ওদের থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে গান ধরেছে। দ্যূতি আরুশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ চলেন! ওখানে যাই! ”
আরুশ মুচকি হাসে দ্যূতির সাথে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করল। দ্যূতি নিচে মুখ করে হাঁটছে। আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তোমার মুখ যে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সেটা লুকাতে হবে না, আমার চোখে অনেক আগেই সেটা পরেছে…”
দ্যূতি বিস্ফারিত দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকালো। চোখ মুখে এক অন্যরকম ছোঁয়া। জেদী মেয়েটির চাহনি এখন অনেকটাই নরম আর স্নিগ্ধ। আরুশ থেমে গেলো। দ্যূতিও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“ দাঁড়িয়ে গেলেন কেন? ”
“ তোমাকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে… এতো মায়বী কেন তুমি? ”
আরুশের গাঢ়, হাস্কি টোনটা দ্যূতির মনে আবারও তীক্ষ্ণ দাগ কেটে দিয়ে গেলো। আরুশের পানে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। আরুশের চোখে তখন অব্যক্ত ভালোবাসা ভেসে উঠছে। আরুশ আর দ্যূতির মাঝে একহাত সমান দূরত্ব ছিল যা আরুশের দ্যূতির কাছে এসে ঘুচিয়ে দিয়েছে। আরুশকে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে দ্যূতির পা জমে গেল বালির মধ্যে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আরুশ দ্যূতির অপ্রস্তুত চাহনি দেখে বেশ মজা পেলো। সে ধীরে ধীরে নিজের হাত বাড়িয়ে দ্যূতির হাত ধরতে গেল।
আরুশের ছোঁয়া পেতেই দ্যূতি কেঁপে উঠলো। আরুশের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল। আরুশ দ্যূতির হাত নিজের দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো। দ্যূতির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে ছোট করে ঢোক গিলল। আরুশ দ্যূতির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে দ্যূতির হাত নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেলো। তাতে নিজের ঠোঁট আলতো করে ছুঁইয়ে দিলো। দ্যূতি অবাকের ন্যায় আরুশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীরে ভীষণ বেগে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
দ্যূতি আরুশের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। যে জায়গায় আরুশ তার ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করেছে হাতের সেই স্থানে অশ্রু নয়নে চেয়ে থাকল। আরুশ দ্যূতিকে না ছুঁইয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো। ফিসফিস করে বলল,
“ তুমি কি মিস্ থেকে মিসেস চৌধুরী হতে প্রস্তুত? ”
দ্যূতি চোখ বন্ধ করে নিলো। নিঃশ্বাস নেওয়া যেন বন্ধ হয়ে গেছে তার জন্য। আরুশ দ্যূতির কানে আবার ফিসফিস করে বলল,
“ কিছু না বলা তো, সম্মতির লক্ষণ তাই না? ”
দ্যূতি তাতেও কোনো উত্তর দিলো না। আরুশের দিকে ধীরে ধীরে ফিরে দাঁড়ালো। আরুশের মুখে অবিচল হাসি রয়েছে। দ্যূতি উত্তর স্বরূপ করে বলল,
“ হয়তো! ”
বলেই দ্যূতি একদৌড় দিলো,সেই গানের আসরের দিকে। তখনও সবাই গানে মেতে রয়েছে। দ্যূতিকে দৌড়ে যেতে দিলো আরুশ। সে চাইলেই আটকাতে পারতো। আরুশ দ্যূতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“ my love! ”
.
আরুশও গানের আসরে এসে দাঁড়িয়েছে। শিহাব তার দিকে সন্নিহিত চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে ওমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরুশ চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“ ছাগলের মতো তাকিয়ে আছিস কেন? ”
শিহাব ঢোক গিলে একই ভাবে তাকিয়ে বলল,
“ স্যার আপনি ভাবিজান কে প্রপোজ করেছেন তাই তো? ”
আরুশ বেশ অবাক হলো। সে ভেবেছিল কেউ হয়তো তাদের দেখেনি। আরুশ একটু চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
“ তুই কিভাবে জানলি? ”
শিহাব যেন তার শক্তি ফিরে পেলো আরুশের সামনে। বুক ফুলিয়ে মুখে এক গাল হাসি নিয়ে বলল,
“ আমি আপনাকে প্রপোজ করতে দেখেছি! চিন্তা করবেন না,অন্যরা কেউ দেখতে পারেনি! তাহলে তো আর রক্ষে থাকতো না, ”
“ সামনেও যেন কেউ না জানে! ”
“ জ্বী স্যার! ”
গানের আসরের মধ্যে সবাই গান ধরেছে কেবল দুজন বাদে। আরুশ আর দ্যূতি একে অপরের দিকে আছে। দুজনের মুখেই হাসি। দুজনের চোখেই ভালোবাসা। দ্যূতি বুক ভরে শ্বাস নিলো….
.
সবাই রিসোর্টে ফিরে এসেছে। দ্যূতি নিজ ঘরে চিন্তাই পায়চারি করছে। থেকে থেকে থেমে যাচ্ছে আবার পরক্ষনেই লাফালাফি শুরু করে দিচ্ছে। নিজের চুল নিজেই টানছে।
“ এতো কিছু পিউ আপি কিভাবে বুঝাবো? আপি তো আমাকে খেয়ে ফেলবে! ….. আর ভালো লাগে না… প্রেম না করলে জ্বালা করলেও জ্বালা…. আমার জীবনটা একটা আগুন 🔥….!”
“ আমার সত্যিই এবার মনে হচ্ছে,তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস দ্যূতি…”
হঠাৎ দরজার কাছ থেকে মিলির গলা পেতেই দ্যূতি থেমে গেলো।
“ আবার? ”
মিলি দরজার কাছ থেকে দ্যূতির কাছে এসে দাঁড়ালো। দ্যূতির মাথাই হাত বুলিয়ে কি যেন চেক করল। দ্যূতি মিলির অদ্ভুত কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকালো। মিলি দ্যূতির কপাল থেকে হাতে নামিয়ে বলল,
“ জ্বর তো নাই! তাহলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গিয়েছিস! ”
মিলির কথা শুনে দ্যূতি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,
“ তুমি এসব কি বলছো? ”
“ আমি কি বলছি? বিজ্ঞান বলছে, নিজের সাথে বিড়বিড় করা মানুষ গুলো পাগল হয়, যেমন ওইসব বিজ্ঞানীরা….”
দ্যূতি কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই থেমে গেলো। মিলিকে এখনো সব ঘটনা খুলে বলা হয়নি। এখন বলার মতো সময়ও না। ঢাকায় ফিরে বলবে বলে ঠিক করেছে দ্যূতি কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তো একটা বাহানা দিতে হবে, কিন্তু দেবেটা কি?
দ্যূতিকে চুপ করে থাকতে দেখে মিলি দ্যূতিকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ আরেকটা লক্ষণ!”
“ মানে? ”
“ এই যে থেকে থেকে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া,পাগল হয়ে যাওয়ার আরেকটা লক্ষণ! ”
দ্যূতি মিলির কথাগুলো শুনে মনে মনে ভাবল,
“ আমি পাগল না হলেও,এই আরুশ আর মিলি আপু দুজনে মিলে আমাকে পাগল কলে দিবে …”
.
“ আচ্ছা রিলেশনে থাকলে অ্যাজ আ গার্লফ্রেন্ড মানুষদের কি কি করতে হয় ? ”
দ্যূতির হঠাৎ এমন প্রশ্ন আরুশ বেশ চমকিয়ে উঠলো। আড়চোখে দ্যূতির দিকে তাকালো ওকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। সন্ধ্যা বেলায় দু’জনে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অনেকক্ষণ কোনো শব্দ ছিল না দুজনের মাঝে। কিন্তু দ্যূতির ওমন প্রশ্ন আরুশকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো।
“ কি হলো? বলুন! ”
দ্যূতি দৌড়ে আরুশের সামনে এসে দাঁড়ালো। আরুশ দ্যূতির প্রশ্নের কি উত্তর দিবে বুঝতে পারল না। বয়ফ্রেন্ড হিসেবে কি করতে হবে সেটা নয় বলা যায় কিন্তু গার্লফ্রেন্ড হিসেবে কি করতে হবে সেটা সে কিভাবে বলবে? আরুশ হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,
“ ওসব জেনে তোমার কাজ নাই! ”
“ কেন কাজ নেই শুনি? ”
দ্যূতি কোমরে হাত রেখে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। এমন দেখে আরুশই খানিকটা ভীতু হয়ে পরল। আগে কখনো তো দেখেনি।
“ কি হলো? কিছু জিগ্গেস করছি তো? ”
“ গার্লফ্রেন্ড কিছু করতে হয় না, তারা পায়ের উপর পা রেখে বসে থাকে ,যা করার বেচারা বয়ফ্রেন্ড গুলো করে, ”
আরুশের উত্তর দ্যূতির মনে ধরল না। পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে হালকা লম্বা হয়ে তিরিক্ষি স্বরে বলল,
“ আমাকে কি আপনার মতো ছাগল লাগে? যা বোঝাবেন তাই বোঝবো? ”
“ না দ্যূতি! আমি কি একবারও তা বলেছি, আমি তো শুধু…..”
দ্যূতি আরুশকে থামিয়ে দিলো,
“ থাক আপনার আর কথা বলতে হবে না, কোনো কিছু জানে না….”
বলে সামনের দিকে হাঁটা ধরল দ্যূতি। দ্যূতিকে চলে যেতে দেখে আরুশ চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“ কোথায় যাও? ”
“ জাহান্নামে! ”
দ্যূতি না ফিরেই চেঁচিয়ে উত্তর দিলো….
চলবে…..