ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫১

0
545

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫১]
~আফিয়া আফরিন

ঢাকা ফিরে রোদ্দুরের একটু ব্যস্ত সময় কাটছিল বটে। আগে বাড়ি ফিরত সন্ধ্যার আগেই গতদিন বাড়ি ফিরেছে প্রায় আটটা নাগাদ। বলে দিয়েছে, কিছুদিন এইভাবেই চলবে। ঝিলমিলের’ও সারাদিন একা একা ঘরে থাকতে ভালো লাগে না। ভেবেছে, কাল থেকে ক্লাসে যাওয়া আসা শুরু করবে। এখান থেকে যাতায়াতের ব্যাপক সুবিধা। জানালায় দাঁড়ালেই ক্যাম্পাস দেখা যায়। রোদ্দুর সম্পুর্ণভাবে ঝিলমিলের দিকটা চিন্তা করেই এখানে থাকার ব্যবস্থা করেছে। ওর অবশ্য একটু অসুবিধে হয়ে যাচ্ছে… আবার উল্টোদিকে কতকগুলো রাস্তা পারি দিতে হচ্ছে।
সকাল সাতটার এলার্মে ঝিলমিলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। রোদ্দুরকে মৃদুস্বরে কয়েকবার ডাকাডাকি করে রান্নাঘরে গেল চা বানাতে। চুলায় চায়ের পানি দিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। এলোমেলো চুলগুলো পরিপাটি করে হাত খোঁপা করে নিল। তারপর গিয়ে বসল রোদ্দুরের পাশে। আলতো করে ওর পিঠে হাত রেখে ডাকতে শুরু করল। এমনিতে প্রতিদিন রোদ্দুর আগে ঘুম থেকে উঠে তারপর ঝিলমিলকে জাগায়। কিন্তু গতরাতে ওর ঘুমাতে ঘুমাতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছিল।
ঝিলমিল ওর চোখেমুখে হালকা পানির ছিটা দিল। রোদ্দুর সহসা চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। ঝিলমিল ওর অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল, ‘এইবার উঠে পড়। এরপর তো উঠে আমার সাথে তাড়াহুড়ো করবি। আমার শার্ট কই? প্যান্ট কই? টাই কই? এই কই… সেই কই? আমি এত পারব না। এক্ষুনি উঠে পড়বি।’

রোদ্দুর উঠে বলে সুন্দর করে হেসে বলল, ‘সবার শেষে বলব, আমার বউ কই?’

‘ওটা বলতে হবে না। আমি সামনে সামনেই আছি।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে… চোখ জুড়েই থাক সারাক্ষণ। আমি আসছি।’ আলস্য ভঙ্গিতে বলল রোদ্দুর।

ঝিলমিল বলল, ‘তুই দিনদিন খুউব আলসে হয়ে যাচ্ছিস। একটা কাজের কথা হাজারবার বললে তারপর তুই কানে তুলিস।’

‘সব তোর জন্য। আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছিস তুই। আমি কিন্তু আগে মোটেও এমন ছিলি না। তুই যেদিন থেকে আমার মাথার ভেতর জগা খিচুড়ি পাকাতে শুরু করলি, তারপর থেকে আমি কেমন যেনো একটা হয়ে গেলাম।’

‘ডাক্তার দেখা গিয়ে।’

‘আরে ডাক্তার লাগে না… এই রোগের চিকিৎসা যে করতে পারবে সে তো বাড়িতেই আছে। এই রোগ হচ্ছে প্রেম রোগ, ভালোবাসার অসুখ! সব ডাক্তার কি আর চিকিৎসা দিতে পারে?’

ঝিলমিল ভুরু কুঁচকে তাকায়। তৎক্ষণাৎ একটা কুশন কভার হাতে নিয়ে রোদ্দুরের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল, ‘সবসময় শুধু আজগুবি কথাবার্তা তাইনা? যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি নাস্তা রেডি করছি। আর একটা বাজে কথা বললে মুখ সে’লাই করে দিব একদম।’
মুখ সে’লাই করার ভয়েই হোক আর দেরি হয়ে যাওয়ার কারণেই হোক, রোদ্দুর রা করল না। ফ্রেশ হয়ে এসে দ্রুত হাতে নিজস্ব কায়দায় রেডি হয়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব যত্ন করে চুলগুলো ঠিক করছিল। বউ একখান হয়েছে তার, পান থেকে চুন খসলেই চুলের উপর এসে হামলা দেয়। টেনে হেঁচড়ে একাকার করে ফেলে। পরে যদি রোদ্দুরের মাথায় চুল না থাকে, যদি টাক হয়ে যায়, ঝিলমিল কখনোই মেনে নিবে তা? জীবনেও নেবে না। রোদ্দুর হতাশ ভঙ্গিতে ‘চ’ জাতীয় শব্দ করল।
ঝিলমিল ঘরে এসে দেখছিল রোদ্দুরের কাজকারবার। তার এখন বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে কি দরকার বাহিরে বের হওয়ার সময় এত রংঢং করার? ইচ্ছে করছে চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। আপাতত নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে শক্ত গলায় বলল, ‘খেতে আয়।’
রোদ্দুর ঘুরে তাকাল। বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে বলল, ‘আসছি।’ ওর হাসি দেখেও ঝিলমিলের কেমন খটকা লাগল। কথাবার্তা, চলন সবকিছুর মধ্যেই অত্যাধিক খুশির একটা বিষয় রয়েছে। বের হওয়ার আগ মুহূর্তে রোদ্দুর কী কী বলল ঝিলমিলের তা খেয়াল’ই নেই। সে বের হওয়ার আগে টুপ করে ঝিলমিলের কপালে একটা চুমু খেয়ে গেল।
ঝিলমিল ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল, ‘বাহিরে তো গেলি নায়ক সেজে তারপর ঘরে ফিরে যদি হযবরল হয়ে বসে থাকিস তবে তোর একদিন কি আর আমার যেই কয়েকদিন লাগে!’
ঝিলমিল নিজেও তৈরি হয়ে নিল। ভার্সিটিতে গেল, ক্লাস করল, বান্ধবীদের সাথে নিজের বিয়ের গল্পগুজব’ও করল। ফেরার পথে হঠাৎ ওর একটা ফ্রেন্ডের সাথে সানিয়াকে দেখতে পেল। ওকে দেখেই কেমন ঝিলমিলের হাসি পেল। ওর কথাবার্তা এতটাই যুক্তিহীন যে শুনলে না হেসে থাকা যায় না। বেচারা বারবার আসে, রোদ্দুরের দাবি নিয়ে। রোদ্দুর আমার, তুমি রোদ্দুরের কাছ থেকে দূরে থাকো, তুমি কে, সারাদিন কেনো ওর সাথে সাথে থাকো— এ্যাহ কথাবার্তার সাইজ দেখলে মনে হয় রোদ্দুর ওর বাপের সম্পত্তি। তারপর সেদিন যখন রেস্টুরেন্টে একসাথে দেখা হলো, ওদের বিয়ের খবরটা জানতে পারল, তখন একদম থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেছিল। ঠিক হয়েছে, তাই হওয়া উচিত ওর সাথে। নিজের ইচ্ছায় ব্রেকআপ করবে আবার এসে ঘ্যানঘ্যান করবে, ‘না না আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। ব্রেকআপ করে ভুল করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
হুহ, মামার বাড়ির আবদার! ঝিলমিল নিজ মনেই কিছুক্ষণ গজগজ করে সামনের দিকে এগিয়ে চলল। ওর সাথে যেচে পড়ে কথা বলার ইচ্ছে নেই। তারচেয়ে বাড়ি গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানো হাজার গুণে ভালো। ঝিলমিল গেটের বাইরে পা দিতেই পেছন থেকে ভেসে এলো, ‘অ্যাই অ্যাই দাঁড়াও, এক মিনিট।’
কাকে ডাকছে দেখার জন্য কৌতুহলবশত ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল তাকেই ডাকছে এবং ওই অসহ্যকর মেয়েটাই ডাকছে। ঝিলমিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে পড়ল। যার থেকে পালাতে চায়, সে কেমন কোলের মধ্যে এসে বসে থাকে, আশ্চর্য!
সানিয়া দৌড়ে এসে দম নিচ্ছে। ঝিলমিল নিজে থেকে কিছু বলবে না, ওর কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। সানিয়া বলল, ‘কাজিনের সাথে দেখা করতে এসে যে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারি নাই। বাই দা ওয়ে, এখানেই পড়ছ?’

ঝিলমিল মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘হুমমম।’

‘তারপর বলো, খবর কি? তোমাকে আমি মনে মনে খুঁজছিলাম। যার হয়ে সেদিন ওতো বড় বড় কথা বলছিলে, সেই মানুষটা যে আসলেই ততটা ভালো নয় তাই বলতে চাচ্ছিলাম।’
এ নিশ্চিত কোনো প্যাঁচ কষাতে এসেছে। ঝিলমিল নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল। কিছুতেই মাথা গরম করা যাবে না, ওর যা ইচ্ছে হয় তাই বলে চলে যাক।
সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, ‘আচ্ছা বলুন কি বলবেন?’

সানিয়া দুর্বোধ্য হেসে বলল, ‘তুমি জানো আমাদের বিয়ের কথা ছিল আই মিন আমরা এক শুক্রবারে দু’জন বিয়ের জন্য কাজি অফিস পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার একটা সমস্যার কারণে সেদিন বিয়েটা হয় নাই। তারপর রোদ্দুর বলেছিল, এভাবে হয়ত বিয়ে করা উচিত নয়। বাড়িতে সবাইকে জানিয়ে তারপর আমরা বিয়ে করব। আমিও তাই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি মাঝখান থেকে কীভাবে এলে? শুনেছি, তোমাদের বিয়েটাও একপ্রকার বাধ্যবাধকতার সাথে দেওয়া হয়েছে।’
ঝিলমিল কিছুটা অবাক হলো। বিয়ে করার জন্য ওরা কাজি অফিস পর্যন্ত গিয়েছিল অথচ রোদ্দুর তাকে একথা জানায় নাই। ঝিলমিলের এমন বাজে ধরণের একটা অনুভুতি হলো, যা ব্যক্ত করার মত নয়। আগে থেকে জানা থাকলে অন্তত তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলা যেত!
ঝিলমিল নিজেকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রেখে বলল, ‘যেটা হয় নাই সেটা নিয়ে কথা বলার কি আছে? আপনাদের বিয়েটা তো আর হয়ে যায় নাই। আর আমরা বিয়ে করেছি, আমাদের বিয়েটা কি থেকে হয়েছে কিংবা কেনো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের বিষয়।’

‘তুমি আমার কথার অন্য মানে ধরে নিচ্ছ। আমি জাস্ট তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট হোক, এটা তো আমি চাইতে পারি না। রোদ্দুরের সব ঠিক আছে, বাট ও ভীষণ পজেসিভ। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও পরে বিরক্তি ধরে যায়। এই দেখো, তোমার কথা শুনে যা বুঝলাম রোদ্দুর তোমাকে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এই খবরটা জানায় নাই। এখন বলো তো, কেনো সে এই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা তোমাকে আই মিন তার স্ত্রীকে জানাল না?’ শেষ কথাটুকু সানিয়া বেশ কঠিন স্বরেই বলল।

ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল, ‘কেনো?’

সানিয়া হেসে জবাব দিল, ‘সিম্পল। কারণ তোমার গুরুত্ব তার কাছে বিন্দু পরিমাণও নেই আর তার পুনরায় পা ফসকে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। যদি তা না থাকত…..’
ঝিলমিল হাত উঠিয়ে সানিয়াকে থামিয়ে দিল। ওর এসব ফালতু কথা শোনার মত মনমানসিকতা আপাতত তার নেই। চরম বিরক্ত সৃষ্টি করছিল তার কথাগুলো। তারচেয়েও বেশি গায়ে হুল ফোটানোর মত মনে হচ্ছিল। রোদ্দুর হাজব্যান্ড হিসেবে কেমন তা এই কয়েকদিনে বেশ ভালোভাবে জেনে গেছে। অন্য মানুষের কাছে তার চরিত্রের সার্টিফিকেট নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঝিলমিল কাটা কাটা কণ্ঠে বলল, ‘অনেককিছুই জানেন দেখছি। চারদিন আগে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল, সেটা জানেন? আমি বলেছিলাম আপনাকে সেই অনুষ্ঠানে প্রথম ইনভাইট করব বাট লাইফলেস মানুষদের কথা আমার আবার খুব একটা মনে থাকে না। আপনি তো নিজের ভাবনাচিন্তার কথা বললেন যে রোদ্দুরের জীবনে আমার কোনো মূল্য নেই, তার পা ফসকে যাওয়ার সম্ভবনা আছে তাই আপনাদের কথা সে আমাকে বলে নাই। এইবার আমি ওর দিক থেকে সত্যিটা জানিয়ে দিই। সেটা হচ্ছে, ও আপনাকে এতটাই গুরুত্বহীন মনে করে যে আপনার কথা ঢোল পিটিয়ে সে তার বউকে শোনাতে চায় নাই। অর্থাৎ আপনার মত নিচু মানসিকতার এবং ঈর্ষান্বিত মানুষের সংস্পর্শে সে আমাকে আসতে দিতে চায় নাই। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।’
ঝিলমিল আর বাক্যব্যয় করার প্রয়োজন মনে করল না। সানিয়ার কোনো কথাও শুনল না। রোদ্দুর তার নিজের মানুষ আর ওর পৃরতি সম্পুর্ণ আত্নবিশ্বাস আছে। কিন্তু একটা চাপা রাগ, কেনো এই কথাগুলো আগে তাকে জানানো হলো না? রোদ্দুরের উপর এই চাপা রাগ আর সানিয়ার উপর পৃথিবীসমান বিরক্তি তার মাথার শিরা-উপশিরা জ্বালিয়ে ছাড়ল।
বাড়ি এসে চুপচাপ বসে রইল। রোদ্দুর ফোন করেছিল, প্রথমে রিসিভ করে নাই বলে আবারও….. তারপর বারবার। ঝিলমিল ফোনটা অফ করে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
সন্ধ্যার পর পরপর দু’বার কলিংবেল বেজে উঠল। রোদ্দুর এসেছে, ও এভাবেই কলিংবেল বাজায়; পরপর দুইবার। ঝিলমিল উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। রোদ্দুর ভেতরে ঢুকে বলল, ‘কয়েকবার ফোন দিলাম তোকে। ফোন ধরিস না কেন? তারপর আবার দেখি অফ।’

‘অফ করে রেখে দিয়েছি।’

‘কেনো?’

ঝিলমিল কিছুটা ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘আমি কি ফোন অফ করে রাখতে পারব না? তুই ফোন করবি বলে কি সবসময় আমার ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে? ইচ্ছে হয়েছে তাই অফ করে রেখে দিয়েছি।’
রোদ্দুর অবাক হয়ে তাকাল। সকাল থেকে ঝিলমিলের সাথে কথা বলার মুহূর্তগুলো মনে করতে লাগল। এমন কিছু বলেছে কি যার কারণে ওর মেজাজ তেতে আছে? কিছুই মনে করতে পারল না। পকেট থেকে একটা চকোলেট বের করে বলল, ‘এটা তোর জন্য।’
ঝিলমিল ওর হাত থেকে চকোলেট’টা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলল। মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘লাগবে না আমার।’

রোদ্দুর ঝিলমিলের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে?’

ঝিলমিল ওর হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে বলল, ‘কিছু না।’
রোদ্দুর’ও গিয়ে পাশে বসল। বলল, ‘আমি কি কোনো ভুল করেছি? উমমমম… কান ধরব নাকি উঠবস করব তাই বল?’

‘তোকে কিছু করতে হবে না। তুই শুধু আমার সাথে কথা বলিস না, তাহলেই হবে।’

রোদ্দুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘কেনো কথা বলব না?’

‘আমি বলেছি তাই।’

রোদ্দুর মুখ কালো করে বলল, ‘ওহ আচ্ছা।’ তারপর উঠে গেল। কাপড়-চোপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। ঝিলমিল দেখছিল সবটাই। সে নিশ্চয়ই চা বানানোর জন্য যাচ্ছে। এখন তার উচিত গিয়ে এক কাপ চা ওকে বানিয়ে দিতে। চা খেতে খেতে ওর সাথে একটা মারাত্মক রকমের ঝগড়া করা প্রয়োজন। কিন্তু আগ বাড়িয়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করল না।
রোদ্দুর ঝিলমিলের সামনেই ঘোরাঘুরি করছিল। ঝিলমিল চোখ তুলে ওর দিকে তাকাল। দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচাইতে সভ্য আর নিষ্পাপ মানুষ। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ঘরের এমাথা ওমাথা হেঁটে বেরাচ্ছে।
তারপর ডাইনিংয়ে গিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে এসে ঝিলমিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘এই মুহূর্তে তোকে চা খাওয়ানোর মতো রিস্ক নিলাম না। এমনিতেই মাথা গরম…. তুই একগ্লাস পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে নে।’
ঝিলমিল পানির গ্লাসটা হাতে নিল। পানি ছলকে ওর গায়ের উপর পড়ল কিছুটা। ওসব পাত্তা না দিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের পুরো পানিটা খেয়ে নিল। তারপর বলল, ‘এত তৃষ্ণা পেয়েছিল! আরেক গ্লাস প্লিজ।’

‘পানিশূন্যতায় ভুগছিস নাকি? তোকে কি আর এমনি বলি, সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখবি‌। দেখ মাথা গরম হয়ে সারা শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে তাই এত বেশি পানি তৃষ্ণা পাচ্ছে।’ রোদ্দুর চিন্তিত মুখে বলে পানি আনতে গেল।
ঝিলমিল ওর উল্টাপাল্টা লজিক শুনে মনে মনে বলল, ‘বড় ধরনের একটা ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তাছাড়া আর কিছুই না।’
.
.
.
চলবে….
কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৭৫৫