তবুও ভালোবাসি পর্ব-১৮

0
470

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৮
#রেজওয়ানা_রমা

এইবার রিফা জোরে কেদে উঠে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে। রিয়ান রিফার কান্নার থামানোর চেষ্টা করছে। আদরের বোনের কান্না তার সহ্য হচ্ছে না।
– তোকে কেউ কিছু বলেছে? বল আমাকে দেখ আমি কি করি তার ( রেগে)
– (মাথা নাড়ে)
– তাহলে
-আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া। আমার জন্য এসব কিছু হয়েছে ( কেদে)
-তোর জন্য? সব টা খুলে বল। উঠ চল ভিতরে চল

রিফা কে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসিয়ে দেয়। পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
– নে পানি টা খা। নিজেকে শান্ত কর বোন। কি হয়েছে বল

রিফা পানি টা এক চুমুকেই শেষ করে একটা নিশ্বাস নেয়।
-এবার বল কি হয়েছে
-কাল রাতে,

অতীত,
রিফা ডিনার করে রুমে এসে দেখে তার ফোন টা বাজছে। রিফা রিসিভ করতেই,
-কি ব্যাপারম ফোন ধরছো না কেন?
-আমি কেন ফোন ধরছি না তার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে? কে আপনি?
– তোমার ভালোবাসা
-বাজে কথা রাখুন। কে আপনি সেটা বলুন
-আমি কে সেটা জেনে তোমার লাভ নেই। শুধু বলো আমাকে ভালোবাসবে কি না?
-চিনি না জানি না কিসের ভালোবাসা? এভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।
-তুমি ডিস্টার্ব হও? আমিও ডিস্টার্ব হই তোমাকে কাছে না পেয়ে।
-দেখুন আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। আর আমি আপনাকে চিনি ও না। কে আপনি? এভাবে কি ভালোবাসা হয়? আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না।
-আমার ভালোবাসা আমি আদায় করে নিতে জানি। দেখো এইবার তোমার পরিবারের কি হয়।
-মানে? হুমকি দিচ্ছেন?
-সতর্ক করছি
-আমি ভয় পাই না। আপনার যা ইচ্ছা আপনি করে নেন
-ওকে গুড বাই রিফুপাখি

টুট টুট টুট

ফোন কেটে রিফা একা একা বিড় বিড় করছে আর বিছানা গোছাচ্ছে, যত্তসব কোথা থেকে যে আসে এরা। হুমকি দিচ্ছে হুমকি হুহ যেন আমি ভয় পেয়ে উনাকে ভালোবাসবো। এই রিফা এত সস্তা নয়। যাকে তাকে ভালোবাসা যায় না হুহ। এক বার ভালোবেসে ঠকেছি আর না। চিনি না জানি না ভালোবাসা চাইলে যেন ভালোবাসা দেওয়া যায়।

হঠাৎ থেমে যায় রিফা। বিছানায় বসে ফোন হাতে নেয়। একটা মেসেজ,

Amar rifupakhi, ghumiye poro eto rag korso keno? R boka jhoka korcho keno amake 🥺 tumi rag korle r o beshi sundor lage kintu😁 good night Rifupakhi

রিফা মেসেজ টা মুচকি হাসে। আর ভাবে।
আচ্ছা এই লোক টা কে? কিভাবে জানলো আমি বিড়বিড় করছি। এমা সব শুনে ফেলল। আমাকে কি ফলো করছে?

এর মধ্যে হঠাৎ আবারও একটা মেসেজ,
hmm ami tomake follow korsi.

এবার রিফার হার্ট অ‍্যাটাক হওয়ার মত অবস্থা। মেসেজ টা দেখেই আশে পাশে দেখতে থাকে যে কোথাও কেউ আছে কি না তখন আবারও মেসেজ আসে,
amk tumi khuje pabe na ekhn. Valobasa na pele amar dekha milbe na

রিফা এই মেসেজ টা দেখে একটু চেচিয়ে মুখেই উত্তর দেয়,
সহস থাকলে সামনে আসুন। আড়াল থেকে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আর এভাবে একটা মেয়ে ফলো করা মটেও ভালো কাজ নয়। আমার ওপর থেকে নজরদারী বন্ধ করলে খুশি হবো।
বলেই রিফা মুচকি মুচকি হাসে। তখন আবারও মেসেজ আসে,

okay. Ami r tomar opor nojordari korbo na. Tumi khushi tei amar khushi. Kintu hea valobasa na pele samne ashbo na.

রিফা এবারও মুচকি হাসে। আর বলে,
লোক টা কি পাগল নাকি। এভাবে কি ভালোবাসা হয় নাকি। আচ্ছা লোক টা কি সত্যি আমাকে ভালোবাসে?তবে তুই যাই বলিস না কেন রিফা ভয়েজ টা কিন্তু খুব সুন্দর হিহি। আবার আমাকে হুমকি দেয় হুহ😏

রিফা বিড় বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায় কারো উষ্ণ ঠোঁটের ছোয়ায়। চোখ খুলতেই কাউ কে না দেখে মনের ভুল ভেবে আবারও ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে যাবে এমন সময় রেহানা বেগমের রুমে মি.রাইয়ানের এমন নিথর দেহ দেখে ভয়ে আতকে উঠে। দৌড়ে রুমে আসে। ভয়ে হাত পা কাপছে। আর তখনই মনে পড়ে কাল রাতে সেই লোক টার হুমকির কথা,
ছিহ! সত্যি সত্যি আঘাত করলো? আমি তো ভেবেছিলাম এমনি বলছে। আমি ভালো না বাসলে আমার পরিবারের ক্ষতি করবে। আর সত্যি সত্যি তাই করলো।

বতর্মান,

রিফা কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। রিয়ানের চোখ রক্তবর্ণ ধরন করেছে। রিফা ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে,
-আমার জন্য এইসব হলো ভাইয়া। আমা? ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারি নি ভাইয়া সত্যি সত্যি এমন কিছু করবে
-তোত কোনো দোষ নেই বোন। তুই নিজেকে দোষারোপ করিস না। (রিফার মাথায় হাত বুলিয়ে ) চল ফ্রেস হয়ে নে। আমি রোজ কে বলছি খাবার দিয়ে যেতে।

রিয়ান ফোন টা হাতে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
রিয়ানের মাথায় রিফার কথা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ একজন হুমকি দেয়। কিন্তু কে? ছাড়বো না কাউ কে। একবার খুজে পাই টুকরো টুকরো করে কাটবো ( রাগে বিড়বিড় করে)

আর এদিকে মেহুল আর রেহানা বেগম মি.রাইয়ানের কেবিন থেকে বের হয়। মেহুল রিয়ান কে ফোন করতে যাবে তখনই রিয়ানের কল আসে,
-হ্যালো
-হ্যাঁ হ্যালো রিয়ান। রিফা ঠিক আছে? (উত্তেজিত হয়ে)
-হ্য- হ্যাঁ ঠিক আছে। ওদিকের কি অবস্থা?
-বাবার অপারেশন সাকসেসফুল। আর ব্লাড পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ৪৮ ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। ICU তে আছেন এখন মা কে নিয়ে দেখা করে আসলাম। এখনো জ্ঞান ফেরে নি।
-ওহ। ঠিক আছে তোমরা থাকো আমি আসছি।

কিছুক্ষণ পর রিয়ান গাড়ি নিয়ে আসে। রেহানা বেগম আর মেহুল কে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।

রোজ সবার সবার ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। সকাল ১০ টা বাজে। সেই ভোর ৫ টায় বেরিয়েছিল সবাই। মেহুল রোজ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– মা কে নিয়ে রুমে যাও
-জ্বী বউমনি

রোজ রেহানা বেগম কে নিয়ে উপরে চলে যায় সাথে রিয়ানও। আর মেহুল ওয়াসিম (সার্ভেন্ট)
কে বলে নাস্তা রেডি করতে। ওয়াসিম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে নাস্তা রেডি করতে থাকে। মেহুল সোজা রিফার রুমে যায়। মেহুল কে দেখে রিফা কান্নায় ভেঙে পরে।

– বাবা ঠিক হয়ে যাবে রিফা। কান্না করো না প্লিজ।
– আজকে আমার জন্য এইসব ভাবী ( কান্না করতে করতে)
-কে বলেছে তোর জন্যে? (রিয়ান পেছন থেকে কথা টা বলে)
-কি হয়েছে? (মেহুল)
-নীড় রুমে এসো কথা আছে।

মেহুল রিয়ানের পিছু পিছু রুমে চলে যায়। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বেলকানি তে দাড়িয়ে আছে মেহুল। তখন রিয়ান মেহুলের পাশে গিয়ে দাড়ায়। মেহুল বলে,
– কি জানি বলবেন বলছিলেন
-হুম। জানো কাল রাতে,,,

মেহুল কে সব টা বলে। মেহুল শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না।
– এখন এটা কে সেটাই খুজে বের করতে হবে নীড়।
– কিন্তু কিভাবে
– সেটাই তো বুঝতেছি না। নাম্বার টা সব সময় বন্ধ থাকে। না হলে তো লোকেশন ট্যাগ করে খুজে বের করতে পারতাম।
-এখন উপায়?
-উপায় আছে। চলো আগে নাস্তা করে নাও।
-আপনি কি আজকেই চলে যাবেন?
-৫দিনের ছুটি নিয়েছি অফিসে ফোন করে। বলেছি আব্বুর অবস্থার কথা।
-ওহ।
-হুম। চলো।

সবাই নাস্তা করে আবারও হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। রিফাও রেডি হচ্ছে। এমন সময় রিফার ফোনে আবারও ফোন আসে সেই নাম্বার থেকে। রিফা ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,
-আপনি কেন করলেন এমন? বলুন কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আপনি সত্যি সত্যি আমার পরিবারের ক্ষতি করলেন? ছিহ! এতো নিচ আপনি? কেমন ভালোবাসা আপনার? (কান্না করতে করতে)
– কিহ! আমি কি করেছি?
-কি করেছেন বুঝতে পারছেন না?
-না। আমি সত্যি বুঝতে পারছি না। কি হয়েছে? একটু বলবে প্লিজ?
-আপনি কাল রাতে আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন আর আজকে সকালে আব্বু কে আপনি,, ( কান্নায় ভেঙে পড়ে)
– দেখো আমি তোমার আব্বুর কিছু করি নি। আমি তো জাস্ট ফান করেছি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছি। প্লিজ রিফুপাখি বিশ্বাস করো প্লিজ আমি উনার কিছু করি নি।
-ওহ তাই না? আপনি খুব খারাপ একটা মানুষ। আমার ঘৃণা হচ্ছে আপনার প্রতি। ভালোবাসা চেয়েছিলেন না? হ্যাঁ আপনি এখন থেকে সারাজীবন আমার ঘৃণা পাবেন।

বলেই ফোন কেটে দেয় রিফা। আর ওদিকে অচেনা লোক টা রিফার কথায় থ হয়ে বসে আছে, আর ভাবছে,
রিফা আমাকে ভুল বুজলো? কিন্তু আমি তো কিছু করি নি। কিভাবে বিশ্বাস করাবো। আজকে সকালে আংকেল কে দেখে এই ভয় টাই পাচ্ছিলাম যে রিফা না আমাকে দোষারোপ করে। আর সত্যি তাই? কিন্তু কি করবো এখন আমি?

এর পর অচেনা লোক টা কাউ কে ফোন করে।

রিফা ফোন কেটে কান্না করতে করতে মেহুলের রুমে দৌড়ে যায়। গিয়েই মেহুল কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মেহুল কিছু বুঝা উঠতে পারছে না। অতঃপর মেহুল বলে,

-কি হয়েছে রিফা?
-ভাবী আবারও (কান্না করে)
-আবারও কি?
-ফোন
-কে? কে ফোন করেছে?
-সেই লোক টা
-কোন লোক?
-হুমকি দিয়েছিলো যে?(রিয়ান)
-হুম(রিফা)
-কি বলেছে(মেহুল)
-উনি কিছু বলে নি আমি বলেছি। উনি নাকি এসব কিছু করে নি। উনি নাকি আমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিল। আব্বু কে নাকি উনি আঘাত করে নি
– তাহলে কে করেছে (মেহুল)
– ওই লোক টাই করেছে আর এখন নাটক করছে। (রিয়ান)
-কিন্তু সত্যি টা বের করবো কিভাবে?

এর মধ্যেই রিয়ানের ফোন বেজে উঠে। রিক ফোন করেছে। রিসিভ করেই বলে,
-হ্যাঁ রিক বল। আব্বু ঠিক আছে তো?
-আরে হ্যাঁ হ্যাঁ আংকেল ঠিক আছে। কিন্তু তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। খুবই জরুরি। তারাতারি দেখা কর
-কি হয়েছে বল। আব্বুর কিছু হয় নি তো?
– আরে বলছি না আংকেল ঠিক আছে। এটা অন্য বিষয়ে। আংকেল কে নিয়ে চিন্তা করিস না। আংকেল এর জন্য এখানে আমি আছি। তুই দেখা কর
-ঠিক আছে। কোথায় আসতে হবে?
– (…………….)
-ওকে আমি আসছি।

রিয়ান মেহুল কে বলে তোমরা মা কে নিয়ে হসপিটালে যাও। আমার একটা কাজ আছে।

মেহুল: ঠিক আছে

মেহুল রিফা আর রেহানা বেগম হসপিটালে চলে যায়। আর রিয়ান রিকের দেওয়া অ‍্যাড্রেসে চলে যায়।

রিক অপেক্ষা করছে রিয়ানের জন্য। কিছুক্ষন পর রিয়ান চলে আসে,
-বল কি জরুরি কথা।
– কিভাবে শুরু করি ভাবছি।
-আরে বল শালা। কি হয়েছে? মুখ টা এমন শুকিয়ে আছে কেন? বউ ছেড়ে গেছে নাকি?
-আরে বউ হওয়ার আগে যাওয়ার মত অবস্থা।
-মানে?
-তোকে বলেছিলাম না আমার প্রিয়শীর কথা
-হুম তো? এখন কি হয়েছে?
– শোন,

#চলবে