তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-১৬+১৭

0
356

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন কিছু বলতে যাবে এমন সময় অনু এসে অয়নের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— তুই কেনো বুঝিস না আমি তোকে ভালোবাসি। ঐ ঈশাকে কেনো তুই চাস? কেনো এতো কষ্ট সহ্য করিস তুই ওর জন্য? বল উত্তর দে আমায়।

অনুর কথা গুলো শুনে অয়ন ভিশন অবাক হয়ে যায়। এগুলো কি বলছে অনু? আর কি হচ্ছে এসব? কিছুই অয়নের বোধগম্য হলো না। অয়নকে নিশ্চুপ দেখে অনু একটু শান্ত হয়ে বলল

— আচ্ছা বলো আমার মধ্যে কি নেই? যা ঐ ঈশার মধ্যে রয়েছে! বলো।

অনুর কথার কি উত্তর দিবে অয়ন ভেবে পাচ্ছে না। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে

— অনু তুমি ঠিক আছো তো? কি সব পাগলের মতো বলছো? কিছু খাওনি তো আবার?

অয়নের কথা শুনে অনু বেশ বিরক্ত হলো। অনু অয়নের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

— আমি একদম ঠিক আছি। শোনো অয়ন আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ঈশাকে বিয়ে করতে পারবে না। তুমি শুধু আমার হবে। অন্য কারো না।

— ওয়াট! আর ইউ ম্যাড? কি বলছো নিজে চিন্তা করে বলছো তো? আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর আমার মনের মধ্যে তোমায় নিয়ে কোনো অনুভূতি ছিলো না‌। ঈশা আমার সব। আমি ওর জন্য আর ও আমার জন্য।

অনু আবারও অয়নকে অবাক করে দিলো। অনু অয়নকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। অয়ন অনুকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনু অয়নকে ছাড়ছে না। অয়ন অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— প্লিজ অনু এমন করিও না। ঈশা যদি এসে এসব দেখে তবে আবারও একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। তার থেকেও বড় কথা ঈশা কষ্ট পাবে। আর আমি ঈশাকে কষ্ট দিতে চাই না। প্লিজ অনু বোঝার চেষ্টা করো। প্লিজ

অনু কান্না ভেজা কন্ঠে বলল

— আমি কিছু বুঝতে চাই না। আমি তোয়ালে চাই ব্যাস। অয়ন আমার হয়ে যাও প্লিজ। ঈশার থেকেও কয়েক গুণ বেশি ভালোবাসা আমি তোমায় দিবো। বিশ্বাস করো আমি তোমার উপর ভিশন রকম দূর্বল। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডাসটেন্ড।

অয়নের ভিশন খারাপ লাগছে এখন। অয়ন ধাক্কা মেরে অনুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। অয়ন কর্কশ গলায় বলে উঠলো অনুকে

— আমি তোমাকে শুধু মাত্র আমার বন্ধু ভাবি। এর থেকে বেশি কিছু আমার পক্ষে সম্ভব নয় অনু। এরপরেও যদি তুমি আমায় ফোর্স করো তবে আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। সো প্লিজ। আমাকে বাধ্য করো না কিছু করতে।

অনু মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু থেমে অনু বলল

— ওকে। তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি নিজে থেকেই দূরে সরে গেলাম। ভালো থেকো তুমি।

* কথাটা শেষ করতেই অনু অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ঈশার ছোট বোন দাড়িয়ে আছে। অয়ন ঘাবড়ে যায় ঈশার বোন তাতলিকে দেখে। অয়ন ভাবছে

— তিতলি কি আমার আর অনুর সব কথা শুনতে পেরে গেছে? যদি শুনে থাকে তবে তো কিছু হবে না। আর যদি না শুনে শুধু মাত্র দেখে থাকে বা আমায় ভুল বোঝে থাকে। তবে তো ঝামেলা হয়ে যাবে আবার। তিতলি তো ঈশাকে সব বলে দিবে। ঈশা এসব শুনলে সমস্যা হয়ে যাবে। আল্লাহ এখন আমি কি করবো?

অয়ন কথা গুলো ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। তিতলি দরজার ওপার থেকে চলে গেলো। অয়ন ধপাস করে বসে পরলো। মাথায় হাত দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অয়ন। ভিশন চিহ্নিত দেখাচ্ছে অয়নকে। কিছু সময় যেতেই অয়নের রুমে তার সকল বন্ধুরা উপস্থিত হয়ে যায়। রাজ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন কি হয়েছে তোর? এতোটা চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? ভয় পাচ্ছিস নাকি?

— আরে ধূর ভয় পাবো কেনো? আর কোন ভয়ের কথা বলছিস তোরা?

সবাই অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। রাজ অয়নের কানের কাছে মুখ এনে বলল

— ঐ যে ঈশা ভাবির ভয়। রাতের কথা চিন্তা করে ভয় পাস না। আমরা থাকতে তোর ভয় কিসের? ম্যানেজ করে নিবো আমারা সো নো চিন্তা ডু ফুর্তি।

অয়ন রাগি কন্ঠে বলে উঠলো

— এই তোদের মুখে সব সময় এতো জঘন্য কথা থাকে কেনো? সব সময় উল্টা পাল্টা কথা। যা এখান থেকে ভালো লাগছে না এসব।

রাজ কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে বলে

— পরের বউ কে নিয়ে তুমি মজা করতে পারো আর নিজের বেলা ভালো লাগে না হুমম

— পরের বউ মানে? এই শালা আমি তোর বউকে নিজের বোন ভাবি আর তুই কিনা ছিঃ। লজ্জিত আমি তোদের কে বন্ধু বানিয়েছি।

— হ্যা, পেয়েনে লজ্জা আজ তো তোর তাই হরন হবে।

— আল্লাহ গো তোরা ভাই একটু চুপ থাক। আমি মরি আমার চিন্তায় আর তোরা সেই পরে আছিস কোথায়।

— আচ্ছা বাদ দে এখন চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে নিচে।

— হুম

* মন উদাস করে অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। নিচে এসে অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো তিতলি কে। তবে তিতলির দেখা মিললো না কোথাও। অয়নকে বিচলিত দেখে তার বন্ধুদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। অয়ন চুপ করে বসে আছে। হঠাৎ করে অয়নের পাশে এসে বসলো তিতলি। তিতলিকে দেখে অয়নের বুকে প্রান ফিরলো। অয়ন তিতলির দিকে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তিতলি মুচকি হেসে অয়নকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বললো

— জামাই বাবু আপুকে বলে দিলে কি হবে? সেটা ভেবে টেনশন হচ্ছে বুঝি?

— তিতলি বিশ্বাস করো বোন আমার আমি কিছু জানি না এসবের।

তিতলি রহস্য জনক হাসি দিয়ে বলল

— সব চোর ধরে খেয়ে একি কথা বলে। আপনিও তার ব্যতিক্রম না।

অয়নের চোখ জোড়া দেখার মতো হয়ে যায়। অয়ন অবাক হয়ে বলল

— আমাকে চোর বললে তুমি!

— আমি আপনাকে চোর বলতে যাবো কেনো? আপনি তো চোরের হেড অফিস। আমি আপুকে সব বলে আপনার রহস্য ফাঁস করে দিবো। তখন বুঝবেন ঠেলা কাহারে বলে।

— তিতলি বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না এসবের। আমি তো অনুকে বন্ধু ভাবি কিন্তু ওই তো উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। আমি…

অয়নকে থামিয়ে দিলো তিতলি। তিতলি মুচকি হেসে বলল

— জামাই বাবু ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমি জানি আপনি কেমন মানুষ। আর বিশ্বাস করুন আমি একদমই চাই না আপু আর আপনার মধ্যে আবার দূরত্ব তৈরি হোক। আমার মতে অনুকে আপনাদের সাথে রাখা উচিত হবে না। অয়ন ভাইয়া অনুর কিছুই আমার কাছে ভালো লাগে না। ওর এখানে আসার থেকে এখন পর্যন্ত ওর ব্যবহার রহস্য জনক।

অয়ন তিতলির কথা তাচ্ছিল্য করে বলল

— উহু অনু মেয়েটা অতি সরল। ও সোজাসাপ্টা কথা বলে তাই তোমাদের ওকে বাজে মনে হচ্ছে। একটু সময় দাও দেখবে অনুর বাহিরটা যেমন শক্ত, ভিতরটা তার থেকেও বেশি কোমল।

— যাক ভালো হলেই হয়। তবে ভাইয়া আমার আপুটাকে কষ্ট দিবেন না প্লিজ। ওতো শুরু থেকেই কষ্ট পাচ্ছে। এবার তো একটু সুখ পাওয়া উচিৎ ওর। তাই না!

— জ্বি মিস তিতলি ব্লাকমেইলার আপনার কথা মতো আপনার আপুকে সুখ দিবো হুমম..

— জ্বি ভিতু জামাই বাবু তাই যেনো হয়।

* তিতলি মুচকি হেসে চলে গেলো। অয়নের বুকের উপর থেকে যেনো একটা পাথর নেমে যায়। অয়ন একটা লম্বা শ্বাস নিতে আনমনে বলল

— যাক তিতলি আমাকে বুঝতে পেরেছে। তা না হলে আবার শুরু হয়ে যেতো।

অয়ন বসে আছে বর সেজে। বিয়ে বাড়ীতে প্রচুর মানুষ না হলেও কাছের রিলেটিভদের ভালোই উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু সময় যেতেই অয়নের দেখতে পেলো তার প্রিয়তমার মায়াবী মুখ। সিঁড়ি দিয়ে ধিরে ধিরে নেমে আসছে ঈশা। অপরূপ সুন্দরী লাগছে তাকে। লাল শাড়িতে মায়াবীনি পেয়েছে পূর্ণতা। হালকা মেকাপ, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, ভারি গহনায় ঈশাকে সাজানো হয়েছে। ঈশার রূপের বর্ণনা করা দায়। অয়ন তো এমনিতেই ঈশা বলতে দূর্বল। তার উপর এমন সাজ। অয়নকে পাগল করতে যথেষ্ট। অয়ন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। ঈশা অয়নের মুগ্ধ চাহনি দেখে মুচকি হাসলো। আড় চোখে তাকায় অয়নের দিকে। ঈশা আর অয়নকে পাশাপাশি বসানো হলো। সবাই যাস্ট মুগ্ধ হয়ে যায় ওদের একসাথে দেখে। খুব মানিয়েছে অয়ন আর ঈশাকে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

ভালোবাসা পূর্ণতার পথে হাঁটছে। এতো মানুষ, এতো লোকের ভিড়ে একজন মনের মতো মানুষ পাওয়া খুব সহজ নয়। আবার তা যদি হয় সারি জীবনের জন্য কাছে পাওয়া! তবে তো বলতেই হয় ভাগ্য। সবার ভাগ্যে এমনটা হয় না। ঈশা অয়ন দুজনকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তাদের মনের মধ্যে কি চলছে? তারা যে ভিশন আনন্দিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অয়ন আর ঈশার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে ভালো করে খুঁজে দেখলো অনু এখানে আছে কি না? অবাক করার বিষয় হলো পুরো অনুষ্ঠানের কোথাও অনুকে একটি বারের জন্যও দেখা যায়নি। ঈশা অয়নের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— অয়ন অনুকে দেখেছো তুমি?

— না, আমিও ওকে খুঁজেছি তবে কোথাও দেখিনি।

— কোথায় যেতে পারে অনু? বিয়ে বাড়িতে তো থাকার কথা তাই না!

— আছে হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত। তুমি ওর কথা বাদ দাও। বিয়ে হয়ে গেছে এখন বলো তোমার মনের অনুভূতি কি?

— মানে?

— মানে হলো কেমন লাগছে এই আর কি?

— কেমন লাগবে? একটুও ভালো লাগছে না। বোরিং একটা জামাই আমার কপালে জুটেছে। ভালো লাগবে কি করে?

— আমি বোরিং! আচ্ছা তবে এখন একটু রোমান্স করে নেই। কি বলো?

— ওই তোমার সব সময় এসব কেনো চাই হুম। আমার একটুও ওই সবে ইন্টারেস্ট নাই।

— এখন বুঝলা তো বোরিং কে আর কার কপাল খারাপ?

— হুম বুঝলাম

অয়নের হতাশা মাখা মুখ খানি দেখে ঈশার ভিশন হাসি পাচ্ছে। ঈশা কোনো মতে মুখ চেপে আছে আর কি। এতো মানুষের সামনে হাসা বারন।

* যথারিতি রাতের দিকে অয়নের রুমে ঈলাকে আনা হলো। ঈশা অয়নের রুমে বসে বসে অপেক্ষা করছে। অয়ন বন্ধু ও শালিকাদের সাথে বসে আছে। সবাই গল্প করছে। অয়ন তো রুমে আসার জন্য উদগ্রীব প্রায়। তবে ঐ যে লোক লজ্জা তো আছে তাই না। এই জন্য অয়ন বুকে ও মুখে পাথর চেপে বসে আছে। হঠাৎ করে অয়নের ফোনে একটা কল আসলো। অয়ন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো ঈশা কল করেছে। ঘড়িতে বাজে রাত দুটো। অসহ্য কর। অয়ন একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল

— আচ্ছা তোমরা এখানে আড্ডা দাও। আমার ভিশন ঘুম পাচ্ছে। আমি আসছি।

তিতলির একটা বান্ধবি অয়নের কথার বিপরীত জবাবে বলে

— তাই নাকি জামাই বাবু। আমাদের কেনো জানি মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অন্য!

অয়ন অপ্রস্তুত গলায় বলল

— আরে না। অনুর কিছু না। এমনিই

— আচ্ছা আচ্ছা যান তবে।

* অয়নের উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করলো। অয়ন নিজের রুমে চলে আসে। ঈশা অয়নকে দেখতে পেয়ে চরম বিরক্ত নিয়ে বলল

— এখন আসছো কেনো? আমি ঘুমাবো অয়ন। এমনিতেই সারা দিন প্রচুর ধকল গেছে।

অয়ন অবাক হয়ে ঈশাকে বলল

— এসব আমায় কেনো বলছো? ঘুমিয়ে পরলেই তো পারতে।

— হুম তাও ঠিক। আচ্ছা আমি ঘুমিয়ে পরছি। তুমিও ঘুমাও কেমন!

— কিহহহহহ, ওই না ঘুমাতে দিবো না।

কথাটা শেষ করতেই অয়নের ঠোঁট জোড়া ঈশার ঠোঁটকে স্পর্শ করে। হঠাৎ করেই রুমের বাহিরে……………….

#চলবে……………..

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ১৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
হঠাৎ করেই রুমের বাহিরে প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচি শব্দ আসতে থাকলো। অয়ন একটু অবাক হলো বটে। এতো রাতে হঠাৎ চিৎকার শুনে দুজনেই চমকে উঠে। ঈশা বিচলিত কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন বাহিরে এতো চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে কেনো? কিছু কি হয়েছে?

— সেটা কি‌ করে বলবো বলো? চলো গিয়ে দেখে আসি।

অয়ন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঈশা আর অয়ন একসাথে বাহিরে চলে যায়। বাহিরে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো তার বাবা তাদের রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। ওনাকে দেখে ভিশন চিহ্নিত দেখাচ্ছে। অয়ন তার বাবাকে প্রশ্ন করলো

— বাবা কি হয়েছে? তোমাকে এতো চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? সব ঠিক আছে তো?

অয়নের বাবা ভিশন হতাশার কন্ঠে বলল

— না কিছু ঠিক নেই অয়ন। অনুর অবস্থা মোটেও ভালো না। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

অয়ন কথাটা শুনে ভিশন অবাক হয়ে যায়। অয়ন বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অনুর কি হয়েছে বাবা? ও ঠিক আছে তো?

— নারে অনু হাতের শিরা কেটে ফেলেছে। প্রচুর ব্লাডিং হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। তুই চল আমার সাথে।

অয়ন ঈশার দিকে তাকালো। ঈশা অয়নকে কিছু বলল না। ঈশা অয়নকে ফেলে ছুটে গেলো অনুর কাছে। আসলে ঈশা কারো বিপদ হলে সবার আগে সেখানে যায়। এটা ওর একটা স্বভাব। ঈশা অনুর রুমে গিয়ে দেখতে পেলো সত্যি অনুর অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। হাত থেকে রক্ত পরছে। অয়নকে উদ্দেশ্য করে ঈশা বলল

— অয়ন তারাতাড়ি কিছু একটা করো। এভাবে রক্ত বেরিয়ে গেলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

অয়ন কিছু বলল না। অনুকে কোলে তুলে নিলো সে। খুব শীঘ্রই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে অনুকে। অয়ন গাড়িতে অনুকে বসিয়ে ঈশা সহ বেরিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। অয়নের সাথে অনেকে যেতে চাইলেও অয়ন বারন করে। তাই আর কেউ তাদের সাথে এলো না। পথি মধ্যে ঈশা অনেকবার অনুকে সজাগ করার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হলো না। অনুকে হসপিটালে নিয়ে যেতেই ডক্টররা তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করতে লাগলো। অয়ন আর ঈশা অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করছে। ঈশার বোধগম্য হচ্ছে না অনু কেনো এমনটা করলো? অয়ন কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছে অনু কেনো এমনটা করেছে। কিন্তু এসব করে কি লাভ হবে? অনু কেনো বুঝতে পারছে না আমার জীবনের সব কিছু ঈশাকে নিয়ে। ও সব কিছু জানার পরেও কি প্রয়োজন ছিলো এসবের?

আনমনে কথা গুলো ভাবছে অয়ন। ঈশা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।

— অয়ন অনু নিজের শিরা কেটে ফেললো কেনো? কি জন্য এমন পাগলামি করলো অনু? তুমি কি কিছু জানো?

অয়ন ঈশার প্রশ্ন শুনে কিছু মুহূর্ত ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। অয়নের উত্তরটা অজানা নয়। তবে এই মুহূর্তে এই উত্তরটা দেয়া যাবে না। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল

— আমি কি করে জানবো কেনো‌ ও এইসব করেছে!

ঈশা একটু মলিন হয়ে বলল

— হুম তাও তো ঠিক। মেয়েটা সত্যিই অৎভূত।

ঘন্টা খানেক পর অপারেশন শেষ হলো। ডক্টর অয়নকে জানালো

— অনুর হাতের শিরা কাটেনি। অল্প আঘাত পেয়েছে মাত্র। ভয়ের কিছু নেই। দু এক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।

অয়ন ও ঈশা দুজনি একটু শান্তি পেলো খবরটা শুনে। অয়ন কেবিনে চলে যায় কনুর সাথে দেখা করতে। অনু বেডে শুয়ে আছে। অয়ন অনুর পাশে বসতেই অনু চোখ মেললো। অয়নকে দেখতেই অনুর মনের মধ্যে শান্তি চলে এলো। তবে ঈশাকে অয়নের পাশে‌ দেখে একটু বিরক্ত বোধ করলো অনু। উদ্দেশ্য সফল হবার প্রশান্তি। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— তোমরা এখানে কেনো? আজ না‌ তোমাদের বাসর রাত?

অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর বলল

— আর রাত। তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?

স্বাভাবিক গলায় অনু বলল

— আর বলো না ফল কাটতে গিয়ে হাতে লেগে গেছে। তারপর আর মনে নেই।

— একটু সাবধানে কাটতে পারলে না। যদি কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো? জানো আমরা কতটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।

— কি হতো? বেশি কিছু হলে মরে যেতাম। এটাই তো চাই আমি। এ পৃথিবীতে আমার আপন‌ বলতে কেউ নেই। আর না আছে আমার জন্য চোখের জল ফেলার মতো কোনো মানুষ।

অনুর কথা শেষ হতেই ঈশা বলে উঠলো

— কেউ নেই মানে? আমরা সবাই আছি তোমার পাশে। শোনো অনু ভূলেও আর কখনও এই কথা বলবে না। জেনে রাখো তুমি কেউ তোমার পাশে না থাকলেও আমি আর অয়ন সব সময় তোমার পাশে আছি।

— হুমম

ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল আচ্ছা অয়ন তুমি বরং বাসায় চলে যাও। আমি এখানে থাকি অনুর পাশে। বলা তো যায় না রাতে যদি আবার কোনো প্রয়োজন হয়। কাউকে তো এখানে থাকতে হবে। তাই না?

— হুম। কিন্তু তুমি একা থাকলে হবে না। আমিও আছি।

— ওকে।

* ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। কিছু সময় অনুর পাশে বসে থাকার পর অয়ন ঈশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আসলে রাত অনেক হয়ে গেছে। তাছাড়া আজ অনেক ধকল গিয়েছে অয়ন আর ঈশার উপর দিয়ে। তাই অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগছে দুজনের। ক্লান্তি দূর করতে অয়ন ঈশাকে নিয়ে যায় বাহিরে। একটু হাঁটা চলা করলে শরীরটা ভালো লাগবে। সাথে কফিও খাওয়া যাবে। অয়ন ঈশাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই অনু বেডে ঠিক মতো উঠে বসে। অনুর ঠোঁট জোড়ায় উঁকি দিচ্ছে রহস্যজনক হাঁসি। এ হাসির কারন কি? তা অজানা। অনু আনমনে বলছে

— ঈশা চৌধুরী। নামের পাশে টাইটেলটা ঠিক নিয়ে গিয়েছিস তবে মানুষটাকে নিতে পারলি না। ওপস সরি নিতে দেইনি। খুব শখ ছিলো না অয়নকে নিজের করে রাখবি? তোর এই শখ আমি কখনও পূরণ হতে দিবো না। কতই না স্বপ্ন ছিলো আজকের রাত নিয়ে। তবে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। কতই না কষ্ট করতে হলো আমায়। এই পরিস্থিতি তৈরি করতে! এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে দিলাম যাতে করে অয়ন আর তোর মাঝে পূর্ণতা বলতে কিছুই আসলো না। আর কখনও আসবেও না। অন্তত পক্ষে আমি থাকা সত্ত্বে তো নয়ই। তোমাদের একসাথে থাকতে দেখে যতটা কষ্ট হচ্ছে তার দিকে থেকে আজকের আঘাতটা সামান্য। আমি এর থেকেও বেশি কিছু করতে পারি তোমাকে পাবার জন্য অয়ন। এর থেকেও অনেক খারাপ কিছু।

* অয়ন ঈশার হাত শক্ত করে ধরে আছে। ঈশা আড় চোখে তাকাচ্ছে অয়নের দিকে। ঈশার কাছে এ দৃশ্য নতুন নয়। যখনি তারা দুজন পাশাপাশি এক সাথে চলে। তখন অয়ন নিজে থেকেই ঈশার হাত শক্ত করে ধরে থাকে। একদিন ঈশা এর কারন জানতে চায়। অয়ন তখন বলে

— যদি হারিয়ে যাও! তখন কি হবে? কষ্ট করে খোঁজার থেকে ধরে রাখা ভালো।

ঈশা অয়নের কথা শুনে অবাক হয়েছিলো সে দিন। নিজের শহরের প্রতিটা গলি তার চেনা। সেই শহরে কি করে হারিয়ে যাবে সে? পরক্ষনেই ঈশা বুঝতে পারলো এটা অয়নের একটা অজুহাত মাত্র। আসল কথা হলো অয়ন ঈশার স্পর্শ চায়। অনুভব করতে চায় ঈশার হাতের কোমল ছোঁয়া। অয়নের এসব পাগলামো গুলো ভিশন ভালো লাগে ঈশার।

* ঈশা পিছনের রঙ্গিন দিন গুলোর কথা ভাবতেই হেসে ফেললো। অয়ন কৌতুহলি মন নিয়ে জ্বিগাসা করলো

— ওই হাসছো কেনো তুমি?

— উহু, এমনিতেই হাসছি।

— জ্বি না। এমনি এমনি তো কেউ হাসে না। কোনো কারন তো নিশ্চয়ই আছে।

— আরে ধূর‌ এমনি হাসছিলাম। আচ্ছা বাদ‌ দাও। হসপিটালে ব্যাক করবে না?

— হুম করবো।

— হুম। আচ্ছা অয়ন দেখেছো একটা জিনিস রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। কেমন যেনো নিঃস্তব্ধ পরিবেশ।

ঈশার কথার ইশারা অয়ন ঠিক বুঝতে পেরে গেছে। অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে বলল

— হুম। এই পরিবেশটা একটা জিনিস ইশারা করছে।

ঈশা মুখে কৌতুহলি ভাব এনে জ্বিগাসা করলো

— কি সেটা?

অয়ন ঈশার প্রশ্নের উত্তরের বদলে তাকে কোলে তুলে নিলো। ঈশা শক্ত করে অয়নের গলা জরিয়ে ধরে আছে। অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকাতেই ঈশা অয়নের বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে ফেলে। অয়ন মুচকি হাসলো ঈশার কান্ড দেখে।

— পাগলিটা এখনও আমায় লজ্জা পায়।

আপন মনে বলল কথাটা। অতঃপর ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই ছেড়ে দাও আমায়। এই রাস্তার মধ্যে এসব করতে লজ্জা করে না তোমার?

— ওমা লজ্জার কি আছে? আমি তো শুধু মাত্র কোলে তুলেছি। আর কি করেছি যে লজ্জা পাবো?

— ছিঃ অসভ্য লোক একটা। মুখে কিছুই আটকায় না তোমার!

— না ভাই আমার মুখে কিছুই আটকায় না। যা মুখে আসে তাই বলি।

ঈশা এবার অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আচ্ছা হয়েছে হয়েছে নামিয়ে দাও আমায়। আমার কিছু কথা আছে।

— কথা পরে বলিও। এখন চুপ করে থাকো তো।

— এই না প্লিজ। কথাটা খুব ইম্পটেন্ট প্লিজ

অয়ন ভিশন বিরক্তি নিয়ে ঈশাকে নামিয়ে দিলো। অয়নের ঈশাকে নামিয়ে দিয়ে। বিরক্তির সুরে বলল

— বলো তোমার ইমপোটেন্ট কথা।

— রেগে যাচ্ছো কেনো? বলছি তো!

— না আমি রাগবো কেনো? আমার রাগ আছে নাকি? তবে হ্যাঁ নেক্সটাইম আর কোলে ওঠার স্বপ্ন ভূল করেও দেখো না।

— ওই অয়ন রাগ করে না। আচ্ছা শোনো অনুর কথাটা কি তোমার বিশ্বাস হয়েছে?

— বিশ্বাস না হওয়ার কি কারন আছে?

— না কেনো জানি আমার না ওকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ওর প্রত্যেকটা কথাতেই আমি শেষে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন পাই।

— এটা তোমার মনের ভূল আর কিছু না।

— হুম তাও হতে পারে। আচ্ছা অয়ন একটা কথা বলি রেগে যাবে না তো?

— না বলো, রাগবো না।

— তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কোনো সুন্দরী নারীর প্রতি কি কখনও আকৃষ্ট হতে পারবে? মানে হবে? আসলে কি করে তোমায় বুঝিয়ে বলি আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।

অয়ন ঈশাকে বিচলিত দেখে একটু মুচকি হেসে দিলো। অতঃপর অয়ন ঈশার কাঁধের উপর দু হাত রেখে ঈশার দিকে হালকা ঝুঁকে ঈশার চোখের সাথে চোখ মিলিয়ে বলল

— যদি কোনো অপ্সরার আসে না ঈশা সেও তোমার রূপের কাছে পরাস্ত হবে। আর আমি একে আসক্ত। তুমি ছাড়া আমি অনবরত কারো কথা কখনও কল্পনা করতে পারি না। তবে হুম আমাকে যদি আদর করতে না দাও তো আমি অন্য মেয়েদের খুঁজে নিবো। বলে দিলাম

ঈশা অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বলল

— চোখ তুলে হাতে ধরিয়ে দিবো আমি ছাড়া অন্য কারো দিকে নজর দিলে হু

অয়ন ঈশাকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে এক করে নিয়ে বলতে লাগলো

— সেটা তো তোমার হাতে হুমমমম

— ফাজিল ছেলে একটা।

* ঈশা আর অয়ন একটু সময় কাটিয়ে হসপিটালে চলে আসে। কেবিনের সামনে আসতেই অয়ন যা দেখতে পেলো তা দেখে অয়ন বেশ অবাক হয়ে যায় সাথে রেগেও যায়। অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনু ছাড়াও অন্য একজন আছে। এই অন্য জনের চেহারাটা অয়নের বেশ চেনা। অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনুর সাথে………………..

#চলবে…………………