তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-২২+২৩

0
424

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ২২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন ফোনটা পিক করতেই কলটা কেটে গেলো। অয়ন একটু অবাক হলো। ঈশা তো কখনও মুখের উপর কল কাট করে না। তবে আজ কেনো? অয়ন মৃদু হেসে বলল

— পাগলিটার অভিমান অত্যন্ত প্রখর। তবে ক্ষেত্র বিশেষে আমাকে কাছে তা প্রজয্য নয়।

অয়ন ফোনটা পকেটে রেখে মুচকি হাসলো। অতঃপর কিছু সময় ধরে অয়ন নিজের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। অনু এসে মুখ ভারি করে জ্বিগাসা করলো অয়নকে

— আমি তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছি আর তুমি একটি বারের জন্যও জানতে চাওনি সারপ্রাইজটা কি?

অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো অতঃপর অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল

— হুম বলো কি সেটা?

অনু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল

— বলবো না।

অয়ন শান্ত গলায় বলল

— অ্যাস ইউওর উইস।

— তোমার কোনো ইচ্ছে নেই শোনার?

— তুমিই তো বললে বলবে না। আমি কি করবো?

— আচ্ছা শোনো, আমি তোমার মাথা থেকে একটা ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছি। ঈশার গল্প শেষ। ওকে এমন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি যে ওর আর আমাদের মাঝে আসার কোনো সুযোগ নেই। কয়েক মুহূর্ত পর অয়ন আর অনু সারা জীবনের জন্য এক হয়ে যাবে। ঈশার গল্প দ্যা ইন্ড।

অনুর কথা শুনে অয়ন চোখ বড় বড় করে ফেলল। এসব কি বলছে অনু? ঈশা শেষ মানে! অয়নের ভয় হচ্ছে। হুম প্রচন্ড ভয়। প্রিয়জন হারানোর ভয় অয়নের চোখে মুখে স্পষ্ট। অয়ন বসা থেকে আচমকাই উঠে দাঁড়ালো। অনুকে উদ্দেশ্য করে কাঁপা গলায় বলল

— কি বলছো তুমি? ঈশা শেষ মানে?

অয়নকে বিচলিত দেখে অনু অবাক হলো। অনু বিষ্ময় কন্ঠে বলল

— একি অয়ন! তোমাকে এতো ব্যাকূল লাগছে কেনো? আমি তো তোমার খুশির জন্য এসব করেছি। ভেবেছি ঈশা সারা জীবনের মতো আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলে তুমি খুশি হবে। আমরা হ্যাপি একটা লাইফ লিড করবো। কিন্তু তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?

অয়নের চোখ জোড়া দিয়ে এখন রক্ত বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। প্রচন্ড রাগের কারনে অয়নের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। অয়নের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো

— অয়ন ঠিক আছো তুমি? আমি কি কোনো ভূল করেছি? ঈশাকে শেষ…..

কথাটা শেষ করতে পারলো না অনু। তার আগেই অয়ন অনুর গলা চেপে ধরে। অনু চোখ বড় বড় করে আছে। অয়ন অনুর মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বলল

— কি করেছিস আমার ঈশার? কোথায় আছে ঈশা? আন্সার মি অনু। প্লিজ অনু কথা বল

অনু অনেকটা কষ্ট করে অয়নকে ছন্দহীন কন্ঠে বলল

— অয়ন আমার লাগছে। আমি বলছি ছাড়ো আমায়!

অয়ন অনুকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো। অনু গলা ধরে কাশি দিতে লাগলো। অনু ফ্লোরে পরে আছে গলা ধরে। অয়ন একটু থেমে অনুর কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো। অয়ন অনুর ছলছল চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— এখন বাঁচতে দিলাম‌। ততক্ষন বেঁচে থাকবি যতক্ষন ঈশা আমার কাছে আছে। যদি ইশারা কিছু হয় তবে আমি তোকে খুন করে ফেলবো। সাথে নিজেও খুন হয়ে যাবো। ঈশা ছাড়া আমি মূল্যহীন।

অয়নের প্রতিটি কথা অনুকে অবাক করে দিলো। এইসব কি বলছে অয়ন? তবে আজ সকাল থেকে যা হচ্ছিল তা কি শুধু মাত্র নাটক? অভিনয় ছিলো সবটা? অনুকে নিশ্চুপ দেখে অয়ন কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— কি ভাবছিস তুই? কাল রাতে ঈশাকে আমি ভূল বুঝেছি। সকাল থেকে তোর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছি। এসব সত্যি? নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তুই। তাই না? আসলে তোর মতো বোকা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। আমি তোর সব চাল অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি। শুধু বিশ্বাস করতে পারিনি যে তুই বন্ধু হয়ে আমার পিছনে ছোরা মারবি। আরে আমি তো তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে তোকে হসপিটালে ভর্তি করে তোর জীবন বাঁচিয়েছি। দিয়েছি আপন জনদের পরিবারের একজন হয়ে ওঠার অধিকার। আর তুই কি করলি? সুযোগ পেয়ে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করলি। বাহ রে বাহ অসাধারণ মানবতা তোর। প্রপার্টির জন্য এই সব নোংরামি করেছিস তুই! নে সব তোকে দিয়ে দিলাম। আমাকে শুধু ঈশাকে দিয়ে দে। আর কিছু লাগবে না আমার।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন মাথায় হাত রেখে ধপাস করে বসে পরলো। এক সেকেন্ডের মধ্যেই অয়নকে শূন্যতা সম্পূর্ণ রূপে গ্রাস করে নিয়েছে। অয়নের করার মতো কিছু নেই। অবাধ্য চোখ জোড়া বেয়ে পরছে কষ্টের নোনা জল। অনু প্রপার্টির কাগজ গুলো ছিরে ফেলে অয়নের কাছে এসে বলল

— অয়ন আমি ভূল করেছি। এখনও দেরি হয়ে যায় নি। ঈশাকে তুমি পেতে পারো।

অয়ন অনুর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল

— কোথায় আছে ঈশা?

অনু একটু থেমে কর্কশ গলায় উত্তর দিলো

— আমার আর দিব্বর প্লান মতো ঈশাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখান থেকে ঈশাকের রিসিভ করবে দিব্ব। প্লান মতো দিব্ব এতোক্ষনে ইন্ডিয়া চলে গেছে। আর ঈশা এখন কন্টিনারে আছে।

অনুর কথা গুলো শুনে অয়নের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তবে এখন অনুকে কিছু করা যাবে না। আগে ঈশাকে বাঁচাতে হবে। অয়ন দ্রুত অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। এখনি বন্দরে মেতে হবে। অয়ন যতটা সম্ভব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে। এক মিনিট লেট মানে সব শেষ। ঈশার মুখটা বার বার ভেসে আচ্ছে অয়নের চোখে। ঈশা কে কেনো তার কাছে রাখলো সে? দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিলেই তো আর কিছু হতো না। ঈশা ঠিক থাকতো। কিন্তু একটা ভূল অয়নকে আজ শেষ পরিণতির দিকে ডাকটে। মনের মধ্যে নানা ধরনের চিন্তা এসে ভর করছে তার। এই বুঝি তার প্রিয়জনকে সারা জীবনের জন্য হারাতে হলো তার! অয়ন কিছু ভাবতে পারছে না। অয়নের পাশে অনু বসে আছে। অনুর চোখে বেয়ে পানি পরছে। না এটা কোনো ছলনার চোখের জল নয়। এটা আত্নগ্লানীর চোখের জল। এটা ব্যর্থতার চোখের জল নয়। এটা ভূল বুঝতে পারার চোখের জল। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমাকে নিজের করে পাবার নেশায় আমি এসব করেছি। দিব্ব চাইতো ঈশা কে। আর আমি চাইতাম তোমায়। আমাদের প্রপার্টির প্রয়োজন নেই। আর আমার বাবা মা খুন হয়নি। আমি তোমার কাছে থাকার জন্য এই মিথ্যেটা বলেছি। আমি সোহেল চৌধুরীর মেয়ে অনু। আমি এখানে এসেছি শুধু তোমার জন্য। বিশ্বাস করো আমায় আমি তোমাকে চেয়েছি শুধু।

অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

— জোর করে, নোংরা খেলা খেলে, আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি আমাকে চেয়েছো? ভালোবাসার মানে কি এসব? ঈশাকে দেখো। আমার জন্য নিজের জীবন দিতে পারে। আমার ভালোর জন্য নিজের ভালো থাকা পরিত্যাগ করতে পারে। কিন্তু তুমি? তুমি শুধু মাত্র নিজের ভালো থাকা খুঁজতে পারো। তুমি সেই মানুষ যে না কাউকে ভালোবাসতে পারে আর না কাউকে ভালো রাখতে পারে। এতো কিছু করেও কি লাভ হলো তোমার? ঈশাকে আমার মন থেকে মুছে দিতে পেরেছো? বরং তুমি নিজেই আমাদের মাঝে ঘৃণ্য ব্যক্তি হয়ে এখনও বেঁচে আছো। এটাকে ভালোবাসা বলে না অনু। জেদ বলে। যা তুমি করেছো। তোমাকে আর কি বলবো আমি? একজন নারী হয়ে তুমি একটা নারীর কষ্ট বুঝলে না। তাকে আর আমি কি বোঝাবো?

অয়ন আর কোনো কথা বলল না। অনু কাঁদছে। এখন কেঁদে কি লাভ? যা করার তা তো সে করেই ফেলেছে। এখন শুধু অপেক্ষা অয়ন কখন পৌঁছাবে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে। মুক্ত করে আনবে তার সেই প্রিয়জনকে। যাকে ছাড়া অয়ন অপূর্ণ।

* ঈশাকে সেন্সলেস অবস্থায় কন্টেনারের বন্ধ করা হলো। কিছু সময়ের মধ্যে জাহাজ রোগ হবে। ঈশা নিজেও জানে না তার গন্তব্য কোথায়? কোথায় যাচ্ছে সে? নিঃশব্দে পরে আছে ঈশা কন্টেনারের ভিতর। একে একে সব কন্টেনার গুলো জাহাজে তোলা হলো। অয়ন এখনও পথে আছে। কোনো ভাবেই দ্রুত আসা যাচ্ছে না। বিপদের সময় রাস্তা বড় হয় আর সময় হয়ে আসে ছোট। অয়নের ক্ষেত্রেও বিপরীত হলো না। কিছু দূর অয়নের গাড়ি এগোতেই বিকট শব্দ হলো। অয়নের গাড়ির সামনে একটা ট্রাক চাকা পামচার করে বসে আছে। অয়ন গাড়িটা ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে যাবে এমন সময়…………………..

#চলবে……………………..

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ২৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন গাড়িটা ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে যাবে এমন সময় অয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিছু লোক। অয়ন তাদের বাধাকে উপেক্ষা করে গাড়ি ব্যাক গিয়ার দিয়ে আবারও চলতে শুরু করলো অনু অয়নকে বিচলিত কন্ঠে বলল

— অয়ন এসব কি হচ্ছে?

— কেনো জানো না কি হচ্ছে? তোমার নোংরা প্লানের অংশ এসব।

— বিশ্বাস করো আমাদের প্লানে এসব ছিলো‌ না।

— তাই নাকি? তা হলে ওরা আমার পথে বাধা দিলো কেনো?

— আমি এদের সম্পর্কে জানি না কিছু।

— অভিনয় কি করে করতে হয় তা তোমার থেকে শিখা লাগবে।

— অয়ন বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানি না।

অয়ন অনুর কথার কোনো জবাব দিলো না। অয়ন মনে মনে প্রার্থনা করছে ঈশা যেখানে থাকুক ও যেনো ঠিক থাকে। বিধাতা ঈশাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যেও না প্লিজ। অয়নের চোখ জোড়া বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। একি অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতর। প্রিয়জন দূরে চলে গেলে বুঝি এমন হয়! অয়ন দ্রুত বেগে গাড়ি ড্রাইভ করছে হঠাৎ করে অয়নকে গাড়ি ব্রেক করতে হলো। হার্ড ব্রেক করার কারনে অনু বেশ চমকে উঠে। অয়ন তার গাড়ির সামনে দেখতে পেলো একটা বড় গাড়ি পথ বন্ধ করে আছে। অয়ন‌ হর্ন বাজিয়ে চলেছে তবে কেউ গাড়ি সরিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করে দিচ্ছে না। অয়ন গাড়ি থেকে নামতে যেতেই অনু অয়নের হাত ধরে ফেলল

— অয়ন কোথায় যাচ্ছো? প্লিজ যেও না।

অয়ন রাগি কন্ঠে বলল

— কেনো যাবো না? কি হবে গেলে?

— অয়ন আমার ভয় হচ্ছে। নিশ্চয়ই কিছু খারাপ হবে। প্লিজ অয়ন আমার কথা শোনো তুমি প্লিজ।

— হাত ছাড়ো আমার হাত। এটাই তো চেয়েছো তুমি। আমার খারাপ হোক। এখন আর নাটক করার প্রয়োজন নেই।

অয়ন অনুর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। গাড়ি থেকে নেমে অয়ন ঐ দাড় করানো ট্রাকটার কাছে গেলো। অয়ন দেখতে পেলো ট্রাকে কেউ নেই। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কাউকে। তবে দেখা পেলো না কারো। অয়ন চরম বিরক্তি নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে এমন‌ সময় অয়নের পিছন থেকে কেউ একজন‌ এসে অয়নের মাথায় সজোরে আঘাত করলো। অয়ন মাথার পিছনে হাত দিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো দিব্বকে। দিব্বকে দেখে অয়ন বেশ অবাক হয়ে গেলো। দিব্বকে তো আটকে রাখা হয়েছিলো। তবে ও কি করে বের হলো? অয়নের মাথা বেয়ে রক্ত পরছে। অয়নকে আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় দেখে অনু দ্রুত‌ গাড়ি থেকে নেমে আসলো। অনু অয়নের কাছে আসতেই অয়ন হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। অনু অয়নকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। চোখ জোড়া দিয়ে পরছে অজস্র নোনা জল। অনু চিৎকার করে উঠলো। অয়নকে উদ্দেশ্য করে দিব্ব বলল

— মিস্টার অয়ন চৌধুরী। দুনিয়াটা উল্টো মনে হচ্ছে? নাকি রাগ হচ্ছে আমার উপর? চুচুচুচু রাগ না এখন তো অয়ন বাবু ভাবছে আমি কি করে এখানে আসলাম?

অয়ন মাথা চেপে ধরে বসে আছে। অনু দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এটা কি করলি তুই? অয়নকে আঘাত করলি কেনো? এটা তো কোনো প্লানের অংশ না।

অনু কথাটা শেষ করতেই দিব্ব এসে অনুর হাত ধরে টেনে অয়নের কাছে থেকে তুলে নিয়ে আসলো। অনু দিব্বর এমন আচরণে হতবাক। অনু দিব্বকে সজোরে

— ঠাসসসসসস, ব্লাডি রাসকেল আমাকে টার্চ করিস কোন অধিকারে? তোর সাহস হয় কি করে আমাকে স্পর্শ করার?

অনুর থাপ্পরে দিব্বর রাগ উঠে যায়। দিব্ব প্রচন্ড রেগে অনুর চুল গুলো শক্ত করে মুষ্টি বদ্ধ করে ধরে। দিব্ব অনুকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ বলায় বলে

— অয়নকে আঘাত করতে চাইনি আমি। বাধ্য হয়েছি করতে। আমি ওর সম্পত্তি চেয়েছি। আর তুই ওকে চেয়েছিস। অতঃপর প্লান বদলালো। ঈশাকে আমার করে দিবি। কিন্তু অয়ন আমাকে যতটা আঘাত দিয়েছে তার কি হবে? ওকে আমি খুন করবো আজ। আর তোকে ছেড়ে দিবো আমি। কারন তুই আমাকে সব সময় সাহায্য করেছিস। ঈশা আমার হবে। কিন্তু তোকে আর কিছু দিতে আমি পারবো না।

অয়নকে মেরে ফেলা হবে কথাটা শোনার পরে অনুর বুকটা দুমরে মুচড়ে উঠলো। আজ‌ নিজের ভূলের জন্য অয়নকে হারাতে হবে? না এটা হতে দেয়া যাবে না। অনু দিব্বর সামনে হাত জোর করে বসে পরলো। কান্না ভেজা কন্ঠে আকুতি করে বলল

— দিব্ব প্লিজ অয়নকে যেতে দাও। প্লিজ যা চাও তাই পাবে। কিন্তু অয়নের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। প্লিজ দিব্ব প্লিজ।

অনুর অনুনয় মিনতি কোনটাই দিব্বর মন গলাতে পরছে না। অয়ন শার্টটা খুলে মাথায় বেঁধে নিলো। যাকে করে রক্ত পরা বন্ধ হয়। অয়ন বসা থেকে অনেকটা কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালো। অয়নের হাত পা কাঁপছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জন্য। অয়ন তার গাড়ির সাথে হেলে দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— দিব্ব আজ কোনো প্রতিশোধ নিস না তুই। আমি কাল এসে নিজে তোর কাছে ধরা দিব। যত ইচ্ছে মিটিয়ে নিস তোর ইচ্ছে। কিন্তু আজ আমায় যেতেদে প্লিজ। তুই আমার প্রপার্টি চাস তো? সব নিয়ে নে। তবুও আমায় যেতে দে।

অয়নের কাঁপা গলায় বলা প্রতিটা কথা দিব্বর কঠিন হৃদয়কে সিক্ত করতে ব্যর্থ হলো। দিব্ব খিল খিল করে হেঁসে অয়নের কথা উড়িয়ে দিলো। অয়নের দিকে করুনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো দিব্ব‌। দিব্ব অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— চুচুচুচুচু…..! অয়ন চৌধুরী এতোটা ভেজা বেড়াল আগে জানা ছিলো না। নিজেকে খুব সাহসী, খুব প্রভাবশালী, শক্তিমান ভাবা অয়ন চৌধুরী আজ ভয়ে কাঁপছে। ওয়াও এই দৃশ্য তো লক্ষ কোটি টাকার বিনিময়ে ও দেখা যায় না। অয়ন ভাইয়া কি করবো বলুন? আপনাকে এই অবস্থায় দেখে বড্ড দয়া হচ্ছে আমার। কিন্তু আমার এই অবুঝ মন আপনাকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে না। কি করা যায় বলুন। এক কাজ করুন আমার পা ধরে আকুতি মিনতি করুন। দেখুন কোনো কাজ হয় কিনা। অয়ন ভাইয়া!

অয়ন দিব্বর কথাটা শুনে মৃদু হাসলো মাটির পানে তাকিয়ে। আজ যদি অয়নের দূর্বলতা কেউ না জানতো তবে এতোটা সময় দিব্ব পেতো না। সত্যি বলতে আমাদের সকলের কিছু দূর্বলতা আছে। আর যখন এই দূর্বলতা প্রকাশ পায়। তখন যে কেউ তার সুযোগ নিতে চায়। অয়নের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অয়ন দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ওয়েট করছি আমি তোর ইচ্ছে পূরণ।

কথাটা বলতেই অয়ন দিব্বর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। অনু বসা থেকে উঠে দৌড়ে অয়নের কাছে চলে আসে।

— অয়ন না এটা করবে না তুমি।

— সরে দাঁড়াও অনু। আমাকে যেতে হবে আর ঈশাকে সেভ করতে হবে।

— অয়ন না এসব করবে না প্লিজ। দিব্ব তোমাকে নিয়ে নাটক করছে। এসব করেও কোনো লাভ হবে না। তার থেকে বরং

— থেমে গেলে কেনো? বলো

— তোমার গানটা কোথায়?

— ওটা গাড়িতে আছে।

— ওকে।

অনু অয়নের কাছে থেকে সরে গিয়ে গাড়ির দিকে ছুটে আসে। অয়ন দিব্বর দিকে তাকিয়ে আছে। দিব্বর চোখ জোড়ায় স্পষ্ট অয়নের উপহাস। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলো। হঠাৎ করে অনু চিৎকার করে বলতে লাগলো

— মিস্টার অয়ন চৌধুরী ওখানেই দাঁড়িয়ে যাও। দিব্ব তোর খেলা শেষ। অয়নকে যেতে দে তা না হলে আমি তোকে গুলি করে দিব।

অনুর কথা শুনে দিব্ব অবাক হয়ে গেলো। দিব্ব অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল

— এই অনু কি করছো এসব? অয়ন তোমাকে ভালোবাসে না। ঈশাকে ভালোবাসে। তুমি অয়নকে খুন করে দাও। ও যখন তোমার নয় তা হলে অন্য কারোর নয়। ডু ইট অনু।

— স্টপ। অয়ন আমাকে ভালোবাসে না এটা সত্যি। কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি। ওর জন্য আমি যা খুশি তাই করতে পারি। যা খুশি তাই। ওকে যেতেদে দিব্ব।

অয়ন গাড়ির ভিতর বসলো। গাড়ি স্টার্ট করলো। দিব্ব থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিব্ব ভাবছে অনুকে ছেড়ে দেয়াই ভূল হয়েছে। অয়ন গাড়ি স্টার্ট করে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কাম ফাস্ট অনু। লেট হয়ে যাচ্ছে।

* অনু গানটা তাক করে গাড়িতে প্রবেশ করলো। অনু গাড়িতে বসতেই অয়ন ফুল গিয়ারে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। দিব্ব অয়নের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল

— ড্যাম ইট।

অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে। অনু অয়নের দিকে তাকাতে পারছে না। নিজেকে আজ বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।

— অয়ন আমার ভূলের জন্য এতো কষ্ট তোমায় পেতে হচ্ছে। আমি…

— চুপ করো অনু। আর কিছু বলিও না প্লিজ। কেউ ভূলের উর্ধ্বে নয়। আর আজ যদি তুমি গানের ভয় দেখিয়ে আমাকে না বের করতে তা হলে আমার পক্ষে ওখান থেকে বেরিয়ে আসা পসিবল ছিলো না। তুমি যা করেছো তার ক্ষমা হয় না। তবে এখন যা করেছো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

অয়নের কথা শুনে অনুর মাথা আবারও নিচু হয়ে যায়। অনু অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আপন মনে বলল

— কেনো ভাগ্য এমন হয় অয়ন? যাকে কখনও চিনতাম না সেই মানুষটির জন্য কেনো অনুভূতি তৈরি হয়? কেনো তৈরি হয় ভালোবাসা নামক একটি শব্দ? কেনো তাকে অন্য কারোর সাথে সহ্য না করতে পারার ব্যর্থতা তৈরি হয়? কেনোই বা তৈরি হয় তার জন্য হৃদয়ের দহন? আমি ভূল করেছি ঠিক তবে কার জন্য করেছি? তোমার জন্য। একটি বারের জন্য হলেও শোনার প্রবল ব্যাকূলতা রয়েছে আমার ভালোবাসি অনু বড্ড ভালোবাসি। একটি বারের জন্য হলেও তোমার বুকে মাথা রাখতে চাই। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও তোমার খুশি দেখতে চাই আমি।

অনুর ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু অয়ন। অয়নের গাড়ি বন্দরে আসতেই অয়ন অনু কে উদ্দেশ্য করে বলে

— অনু এখানে তো অনেক কন্টেনার। ঈশা কোথায় আছে? বলো আমায়।

অয়নের কথায় অনুর ভাবনার অবকাশ ঘটলো। অনু মৃদু কেঁপে উঠে বলল

— গাড়িটা সাইডে পার্ক করো। আমি দেখছি।

* অনুর কথা মতো অয়ন গাড়িটা সাইডে পার্ক করলো। অয়ন অনু দুজন পাগলের মতো খুঁজে চলেছে কন্টেনার তবে পাচ্ছে না। অয়ন অনু কে বলল

— কোন কন্টেনারে তুলে দিয়েছো ঈশা কে? পাচ্ছি না কেনো ওকে? কিছু করো অনু হাতে সময় কম।

— ওয়েট অয়ন এখানে যখন ঐ কন্টেনারটা নেই তখন জাহাজে চেক করতে হবে।

* অনুর কথা শেষ করতেই অয়ন দৌড়ে চলে যায় জাহাজ ঘাটে। একটা জাহাজ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বন্দর ছেড়ে যাবে। কাস্টম কতৃপক্ষ অনুমোদন দেয় না লোড জাহাজে প্রবেশের। অয়ন অনেকটা অনুনয় মিনতি করার পর কাস্টম কতৃপক্ষ অয়নকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলো। অয়ন দৌড়ে ঘাটে যেতেই দেখতে পেলো জাহাজটা ঘাট থেকে………………..

#চলবে………………………