তার শহরের মায়া পর্ব-২৬

0
901

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৬
#Writer_Liza_moni

অনুর কথা শুনে তনুর হাত থেকে খুন্তি নিচে পরে গেল। মাহির স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার কানের মধ্যে শুধু বাজতে থাকলো,,”আপুনি তুই খালা মনি হবি,,”

তনু শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে অনুর কপালে, গলায় হাত দিয়ে দেখলো ওর জ্বর টর হয়েছে কিনা।

অনু ভ্রু কুঁচকে চোখ গোল গোল করে একবার তনু আরেক বার মাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।

মাহিরের চোখ মুখের রিয়েকশন দেখে অনুর দম ফাটানো হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসবে না।তাই মুখটাকে সিরিয়াস করে তনু কে বললো,,

দেখ আপু আমি একদম ঠিক আছি।

না না তুই একটু ও ঠিক নেই।তনু অনুর হাত ধরে টেনে ড্রইং রুমের সোফায় এনে বসালো।

ডায়নিং টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে অনু কে দিলো।অনু পানি টা খেয়ে নিয়ে বললো বাবু পানি খেতে চেয়েছিল। তুই এত সহজে বুঝে গেছিস তাই? এই না হলে বাবুর খালামনি। পেটে হাত দিয়ে লাজুক হেসে বললো অনু।

তনু একটা ঢোগ গিললো।
তুই সত্যি প্রেগন্যান্ট?এত তাড়াতাড়ি? তোদের বিয়ের তো এক সাপ্তহ হয় নাই।আর তুই প্রেগন্যান্ট? সিরিয়াসলি অনু?

মাহির কৌতুহল নিয়ে ওদের কাছে আসে।অনু আড় চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে তনু কে বললো,,

আমাদের মেয়েদের পার্সোনাল কথার মধ্যে দুলাভাই এখানে কেন?

তনু মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
আসলেই তো,,এই তুমি একটু রুমে যাও তো,,আনুর সাথে আমি কথা বলছি না,, মেয়েদের কথা বার্তার মাঝে তুমি কি করো?যাও তো,,

মাহির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।কিছু বললো না। তার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে চলে গেল।

তনু অনুর ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেড়ে চড়ে বসে বললো,,
বল তো অনু তুই কি সত্যি প্রেগন্যান্ট নাকি মজা করছিস?

অনু মুখটাকে সিরিয়াস করে বললো আমি মজা করবো কেন? আচ্ছা আপু তুই কি দেখিস নাই,, আমাদের বাড়ির পাশের ঝিনুক আপু বিয়ের ৫ দিনের দিন প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ যাকে যখন দেয় আরকি।আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে।

তনু ঘামছে শুধু।অনু প্রেগন্যান্ট কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।
.
.
মাহির রুমে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বিছানায় বসে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।অনু প্রেগন্যান্ট?এত তাড়াতাড়ি?

মাহিরের কেমন কেমন জানি লাগছে। বেচারা একবার বসা থেকে উঠে পুরো রুমে পায়চারি করছে। আবার বিছানায় এসে বসছে। বুকের মাঝে ধক ধক করছে। হার্ট বিট বেড়ে গেছে অনেক টা।ধরফর করছে হার্ট।

(মনে হয় মাহির হার্ট অ্যাটাক করবে 🤭।)

.
তূর্য ঘুম থেকে উঠে কয়েক বার অনু কে ডাক দিল। অনুর সারা না পেয়ে ভাবলো,,
মাহিরদের বাড়িতে গেছে। তূর্য বিছানা বিছানা থেকে নেমে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে নিলো।

৯ টা বাজে। এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ফলে তার ক্ষিদা লাগছে ভীষণ। আজকে তনুদের ওখানে ডিনারের দাওয়াত পেয়েছে তারা।
তূর্য মোবাইল হাতে নিয়ে মাহিরদের ফ্লাটের দিকে চলে গেল।
.
.
আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না অনু। তুই প্রেগন্যান্ট সিরিয়াসলি?

দেখ তোকে বিশ্বাস করাতে চাই ও না।বাবু হলে তুই দেখবি হুঁ।

তনুর সব গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে।

তূর্য সাহেব আসছে মনে হয়।আপু তুই গিয়ে ডিনার রেডি কর। বেচারা বিকেলে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে। এখন নিশ্চয়ই ক্ষিদা পেয়েছে।

তনু একটা ঘোরের মধ্যে আছে।
হুম বলে উঠে গেল খাবার সাজাতে।

অনু গিয়ে দরজা খুলে দিল। তূর্য অনু কে দেখে মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে গেল।
সোফায় বসতে বসতে বললো ওনারা কোথায়?

আপু তো খাবার সাজাচ্ছে।ডাইনিং টেবিলে।আর দুলাভাই রুমে। আপুর শ্বশুড় , শ্বাশুড়ি ওনারা ওনাদের শ্বশুর বাড়িতে গেছেন।

মাহির কে ডাকি কেমন,,?

আপনি কেন ডাকবেন?
ঐ লোকটা থেকে একদম দূরে দূরে থাকবেন। না হলে ঐ লোকের বাতাস আপনার গায়ে ও লাগবে। তখন আপনি ও ঐ লোকের মতো হয়ে যাবেন।

আরে না।হবো না ওর মতো।

অনু দাঁত কেলিয়ে গলা উঁচু করে মাহির কে ডাকদিলো,,

দুলাভাইইইইইই,,,,

অনুর ডাক শুনে মাহির বসা থেকে লাফিয়ে উঠলো।

তূর্য কানে হাত দিয়ে বললো,,
মেঘুপাখি এতো জোরে না ডাকলে হতো না 😐

অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
কিছু মানুষকে একটু জোরে ডাকতে হয়। নাহলে কানে শুনতে পায় না।

মাহির রুম থেকে বের হয়ে এসে ড্রইং রুমে আসলো।
অনু মাহির কে দেখে দাঁত কেলিয়ে বললো,,
দুলাভাই আপনার ভাই আপনাকে খুঁজছিল।তাই এতো জোরে ডাক দিলাম।

তূর্য হাসলো।আর মাহির মুখটা কে মলিন করে তূর্যর পাশে গিয়ে বসলো।

অনু তূর্যর দিকে চোখ কটমট করে তাকালো।

তা দেখে তুর্য মাহিরের পাশ থেকে উঠে অন্য পাশে বসলো।তা দেখে মাহির বললো,,

কিরে ওখানে গিয়ে বসলি কেন?

অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
কিছু ভাইরাসের সাথে গা ঘেঁষে বসলে আমার জামাইয়ের গায়ে ও সেই ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে।যা আমি একদম চাই না। একদম না।

অনুর কথায় মাহির অপমান বোধ করলো।
খুব খারাপ লাগছে মাহিরের।

তনু ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে সবাই কে ডাক দিল।

তার পর সবাই খাওয়ার জন্য চলে গেল।

সবাই কে খাবার বেড়ে দিয়ে তনু ও বসলো তাদের সাথে।
সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। এমন সময় তনু হঠাৎ করে বলে উঠলো,,

তূর্য অনু নাকি প্রেগন্যান্ট? সত্যি?

তনুর কথায় তূর্যর গলায় খাবার আটকে গেল।কাশি উঠে গেছে তার।অনু থ মেরে বসে রইলো।তনু যে এই কথা তূর্য কে বলবে ভাবতেই পারেনি সে।

তূর্য কাশতে কাশতে শেষ।তনু তাড়াতাড়ি তূর্য কে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল।

তূর্য পানি খেয়ে বড় সড় একটা ঢোক গিললো।
মনে মনে বললো,,
আপনার বোন যে এত পাজি আমি জানতাম ও না। আমি তো ওকে ছুঁই ও নাই। তাহলে কি ও হাওয়ায় প্রেগন্যান্ট হইছে?নিজে ও হাত টা ও ধরতে দেয়নি।আর সে বলে কিনা প্রেগন্যান্ট?

কী হলো তূর্য কিছু বলছো না যে?অনু কী সত্যিই প্রেগন্যান্ট?

আরেএএএ আপু,,
উনি তো এখন ও জানেই না,, উনি যে বাবা হবেন। আমি তো এখন ও বলি নাই।

তূর্য এখন হার্ট অ্যাটাক করবে। বুকের বাঁ পাশে হাত চেপে ধরে বললো,,
আমার খাওয়া হয়ে গেছে,,
আমি আমাদের ফ্লাটে যাচ্ছি।

তূর্য উঠে চলে গেল। মাহির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।

অনু কেবলার মতো দাঁত কেলিয়ে বললো,,
আমার ও খাওয়া শেষ। তোরা খা,, আমি যাচ্ছি,,,

এই দুই টার আবার কী হলো?বলে মুখে এক টুকরো মাংস পুরলো তনু। মাহির চুপ করে ভাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।

অনু ও দৌড়ে চলে আসলো ওদের ফ্লাট থেকে। হাতের নখ কামড়াতে কামড়াতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে সে।

তূর্যর সামনে এখন কী করে যাবে সেই কথাই ভাবছে অনু। তূর্যর সামনে গেলে লজ্জায় মরে যাবে সে। এখন ও কেমন লজ্জা লাগছে তার। তূর্যর সামনে গেলে মরেই যাবে।

অনু নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে নিজে বিড় বিড় করে বললো,,
তুই আস্ত একটা গাঁধী অনু। মাহির খাটাশ রে জ্বালাতে গিয়ে কি বলে ফেলছিস? কেমনে যাবো আমি তূর্যর সামনে?

অনু তাদের ফ্লাটের সামনে এসে দাড়িয়ে এই সব ভাবছে। তখন কেউ একজন অনুর হাত ধরে টান মারে ফলে অনু গিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।

তূর্য দরজা বন্ধ করে অনুর দিকে এগিয়ে যায়।অনু দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে।তূর্যর মুখের দিকে।

তূর্য অনুর পাশের দেয়ালে হাত রাখতেই অনু কেঁপে উঠে।তা দেখে তুর্য ঠোঁট কামড়ে হাসে।

তূর্য অনুর একদম কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

অনুর বুক উঠা নামা করছে দ্রুত গতিতে।
হার্টটা মনে হয় বিট করতে করতে বের হয়ে আসবে।

তূর্য অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
আমি বাবা হয়ে গেছি আর আমিই জানি না?

অনু একটা ঢোক গিললো। মুখ দিয়ে তার কিছুই বের হচ্ছেনা।আসাড় হয়ে গেছে তার পুরো শরীর।

তূর্য অনুর কানের লতিতে হালকা কামড় দিতেই অনু চোখ মুখ খিঁচে তূর্যর টি শার্ট খামচে ধরলো হাত দিয়ে।

তূর্য মুচকি হাসলো। তার পর আবার ও অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো
আমি কিন্তু সত্যি সত্যি বাবা হতে চাই।

তা শুনে অনু ছিটকে দূরে সরে গেল।তা দেখে তুর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো।অনু পারলে দেয়ালের সাথে এক দম মিশে তেরো।

অনু তুতলিয়ে বললো,,,
আ-মি মা-হি-র কে জ্বা-লা-নো-র জ-ন্য ব-ল-ছি

তূর্য অনুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
সত্যি সত্যি মা হয়ে তার পর বাবু দেখিয়ে দিও,,,

এই আপনি দূরে থাকুন,,, একদম কাছে আসবেন না,,,

তূর্য মুচকি হেসে বললো,,
আমি যখন বাবা হয়ে গেছি,,আর তুমি যখন মা হয়েই গেছো,, তখন সত্যি সত্যি বাবুর মা, বাবা হলে ও সমস্যা নেই।

অনু একটা ঢোক গিললো। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।

তূর্য আবারো অনুর হাত ধরে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তার পর অনুর শাড়ির আঁচল দিয়ে অনুর মুখের ঘাম মুছে দিয়ে বললো,,

এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু হয়নি। তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করবো না। অনেক রাত হয়েছে,, সারাদিন জার্নি করছো,, এখন ঘুমাতে চলো,,,

অনু কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে রইলো,,,,
এতো ভালো কেন মানুষটা,,,,?

চলবে,,, 🍁