#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩৬
#Writer_Liza_moni
.
এই যে মিস্টার শুনেন,,
আপনি আগে থেকে অনেক পাজি হয়ে গেছেন। কিছু বলতে ও এখন আপনার মুখে বাজে না।
কেন ?আমার বউয়ের সাথেও কি আমাকে ভেবে চিনতে কথা বলতে হবে নাকি ?
আপনি আস্ত একটা খাটাশ।
.
তূর্য অনু বসে বসে কথা বলছে আর এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে।অনু গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখে মাহির দাঁড়িয়ে আছে।
আজ এই সময় উনি এখানে কেন?মনে মনে বললো অনু। তার পর মনে পড়লো আজ তো শুক্রবার। অফিস ছুটি।
আসুন।আপু কে নিয়ে আসেন নাই কেন?
মাহির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,
তনু রান্না করছে।
মাহির তূর্যর কাছে চলে গেল।
মাহির কে দেখে তূর্য বলে উঠলো,,
কিরে ভাই এত দিন পর কোথা থেকে আসলি?এত দিন তো তোর কোনো খবর ছিল না।
মাহির বিছানায় বসতে বসতে বললো,,
অফিসে ইদানিং অনেক কাজের চাপ। সকালে বের হই আর রাতে আসি।সময় হয়নি।তাই আর তোকে দেখতে আসতে পারিনি।আজ যেহেতু ছুটি তাই চলে আসছি তোকে দেখতে।
বুঝলাম।অনু মাহির কে এক গ্লাস শরবত গুলে এনে দাও।
অনু রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বললো,, অপেক্ষা করতে বলুন। আমি আনছি।
.
অনু এখন ও তোকে আপনি করে বলে?
তূর্য মুচকি হেসে বললো হুম।ওর এই আপনি ডাকটা আমার ভাল্লাগে খুব।
অনু তখন দুই জনের জন্যই দুই গ্লাস ঠান্ডা শরবত এনে দিলো। দুপুরের এই সময়টায় অনেক গরম পড়ছে ইদানিং।
মাহির শরবত খেয়ে বললো,,
তনু আজ তোদের ইনভাইট করেছে,, দুপুরে আমাদের এখানে লাঞ্চ করবি।
সেকি দুলাভাই,,, আমি তো আজ আপনাদের নিমন্ত্রণ করবো ভেবেছিলাম। আমি তো রান্না কিছুক্ষণ আগেই শেষ করেছি।
তনু ও তো প্রায় সব রান্না শেষ করে ফেলেছে।
তূর্য ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
এক কাজ কর,,
দুপুরে আমাদের এখানে তোরা খা,,রাতে না হয় আমরা তোদের ওখানে খাবো,,,
হুম ঠিক বলছেন। আপনারা কথা বলুন। আমি তনু আপু কে যেয়ে বলে আসি।
অনু আর দাঁড়ালো না।
তনুর কাছে চলে গেল। মাহির সে দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
অনু কে দেখে এখন আর মনেই হয় না,,,অনুর একটা কালো রঙের অতীত ছিল।যার কারিগর আমি। একটা সময় যে এই মেয়ের জীবনের পুরোটা জুড়েই যে আমি ছিলাম।অনু কে দেখলে আর সেটা মনেই হয় না।মনে হয় যেন অনুর পুরো জীবন জুড়ে যেনো প্রথম থেকেই তূর্য ছিল।
কীরে কী ভাবিস?
ভাবছি অনু তোর সাথে অনেক ভালোই আছে।সব সময় মুখে হাসি ফুটে থাকে ওর।
তূর্য মনে মনে বললো,,বোকা তুই মাহির সত্যি খুব বোকা।হাসি খুশি মানুষটার মধ্যে একটা ভাঙা চুড়া মানুষ ও থাকে।যাকে সবাই দেখতে পায় না।
ধন্যবাদ তোকে মাহির।
কেন?
অনু কে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।অনুকে যদি না ছাড়তি তাহলে আমি ওর মত এত ভালো একটা মেয়ে
কে পেতাম না।
তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
মাহির কিছু বললো না। চুপ করে রইলো।
.
.
একটা মানুষ যখন তোমার সাথে থাকে ,, তোমাকে গুরুত্ব দেয়, তোমার জন্য অনেক পাগলামি ও করে তখন তুমি তাকে পাত্তা দাও না। ইগনোর করো।যখন সে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তখন তুমি তার মুল্য বুঝো। কথায় বলে না,,
থাকলে কাছে কে আর বুঝে,,
হারিয়ে গেলে সবাই খুঁজে,,,
মাহিরের অবস্থা এখন ঠিক এমন।অনু যখন তার জন্য পাগল ছিল তখন অনু কে ঠকাতে তার বিবেকে বাঁধেনি।আর এখন যখন অনু তূর্যর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে মাহির আফসোস করছে।ইসসস মেয়েটার সাথে এমন না করলেই হতো।
.
.
অনু তনুর কাছে গিয়ে দেখে সোফায় তনুর শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি বসে কিছু নিয়ে কথা বলছেন।এত দিন পর তাদের দেখে অনু সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন,,?
এই তো মা। আলহামদুলিল্লাহ। তূর্যর কী খবর ? কেমন আছে ও?আমরা একটু আগেই আসছি। তূর্য কে দেখতে যাওয়ার কথাই বলছিলাম।
সমস্যা নাই। আপনাদের কে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আসছি।উনি আগে থেকে অনেক ভালোই আছে। দুপুরে আমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবেন।
তনু রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বললো,,
আমি আরো তোদের দাওয়াত দেওয়ার কথা বলেছি।তোর দুলাভাই যাইনি?বলেনি তোদের?
অনু তনুর কাছে গিয়ে বললো,,
আমি তো রান্না শেষ করে ফেলছি। তোরা আজ আমার এখানে খাবি।
আর আমি যে এতো রান্না করলাম?
রাতে তোর এখানে খাবো।
.
.
দুপুরে সবাই মিলে একসাথে লাঞ্চ করে নিল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাহিরের মা বাবা সোফায় বসে পান খাচ্ছে। মাহির আর তূর্য কথা বলছে বেলকনিতে বসে।অনু আর তনু সব গুছিয়ে রেখে রুমে এসে বিছানায় বসলো।
তনু অনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
তোদের মাঝে সব ঠিক হয়েছে তো?
সবই তো ঠিক আছে। আবার কী ঠিক হবে?
আমি অন্য সবের কিছু বলছি না। আমি বলছি অন্য কথা।
অনু বুঝতে না পেরে বললো,,অন্যটা আবার কীসের কথা?
তনু অনুর চুল ধরে টান দিয়ে বললো,,
তুই পিচ্চি,,?বুঝোস না ? আমি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যা হয় তার কথা বলছি।
ওহ সেটাই বল। না হয়নি তেমন কিছু।
এখন ও?
হুম। কিন্তু এখন যদি উনি কাছে আসতে চান তাহলে আমি বাঁধা দিবো না।
তূর্য আসতে হবে কেন? তুই যেতে পারিস না?
ইসস রে আমার লজ্জা শরম কিছু নাই? আমাকে দেখে কী তোর নির্লজ্জ মনে হয়?
তনু হাসলো। দুষ্টু হেসে বললো,,
সেটাই তো। আমার বোন কত লজ্জাবতি।শুন তোকে একটা কথা বলি।
কী কথা?
মনোযোগ দিয়ে শুনবি কিন্তু?
হুম।আগে বল কী?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,(আপনাদের বলা যাবে না)
.
কীহ সম্ভব না এটা,,,,
আমি জীবনে ও পারবো না।মরেই যাবো,,,,
শুন যেমন বলছি ঠিক তেমনি করবি।
.
কী শিখানো হচ্ছে ভাবি?
না দেবর জি। কিছুই শিখানো হচ্ছে না।
এই আপনি দুপুরে ঔষধ খাইছেন?
ইসস রে ভুলে গেছি।
আমি মনে না করে দিলে তো কিছুই মনে থাকবে না।সব তো আমার জ্বালা।
অনু তূর্যর হাতে ঔষধ ধরিয়ে দিয়ে বলল খেয়ে নেন। তূর্য চুপ করে খেয়ে নিল।
মাহিরের খুব ঘুম পাচ্ছে। অফিসে থাকায় শরীর দূর্বল থাকে। অনেক কাজ করতে হয়।তনু মাহির আর তনুর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ও চলে যায়।
তূর্য বিছানায় শুয়ে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
বউ বুকে আসো,,,
ঘুমাবো,,,
কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমান।
২৬ বছর ধরে সেটাই করছি। এখন যখন বউ আছে কোলবালিশের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
ঢং,,
অনু বেলকনিতে চলে গেল।তনুর বলা কথা গুলো শুনে অনুর ভীষণ লজ্জা করছে। তূর্যর সামনে যেতে। বিয়ের পর আপুনি টার সব লাজ লজ্জা হারাই গেছে। ফাজিল মাইয়া 🤒
.
.
রাত প্রায় ১১ টা। তূর্যদের ঘর অন্ধকার। একটু আগেই ডিনার করে আসছে তনুদের ওখান থেকে। ওখান থেকে আসার সময় অনু কে কোথাও দেখতে পেল না তূর্য।
অনু কে খুঁজতে দেখে তনু বললো,,
অনু তো কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছে।
ওহ।আমাকে বলে যায় নাই।
তূর্য ও চলে গেল। দরজা খোলা। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে পুরো ঘর অন্ধকার। কোনো আলো নেই।
তূর্য কয়েক বার অনু কে ডাক দিল। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেল না।লাইট জ্বালাতে গেলে নুপূরের শব্দ কানে আসে,,,
অনু একটা মোম বাতি হাতে নিয়ে তূর্যর দিকে এগিয়ে আসে এক পা এক পা করে।
অনুর পরনে জর্জেটের একটা লাল শাড়ি।হাতে আলতা। মোমবাতির আলোয় অনুর মুখ স্পষ্ট। চোখে কাজল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। মুখে লজ্জার আভা,,,
তূর্য ভ্রু কুঁচকে অনুর দিকে এগিয়ে গেল।
এত সাজ গোজ কিসের জন্য? হঠাৎ এত সাজলে কেন?
অনু কিছু বললো না। দৌড়ে রুমে চলে গেল। তূর্য ও অনুর পিছু পিছু রুমে আসলো।অনু ড্রেসিং টেবিলের সাথে গা ঘেঁষে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ভয়ে বুক উঠা নামা করছে দ্রুত।
চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো।
তূর্য রুমে এসে লাইট অন করে যা দেখলো তা দেখে তুর্যর চোখ চড়কগাছ।
বিছানায় ফুল দিয়ে সাজানো। সারা রুমে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। তূর্য রুমে চোখ বুলিয়ে হাসলো।
অনুর দিকে চোখ পড়তেই অনু চোখবন্ধ করে শাড়ি খামচে ধরে। তূর্য এক পা এক পা করে অনুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তূর্য যত কাছে আসছে অনুর নিঃশ্বাস তত ভারি হচ্ছে।
তূর্য অনুর হাত ধরে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
অনুর লাজুক মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে এত লজ্জা পেতে আজ প্রথম দেখছে সে।অনুর গাল লাল হয়ে গেছে।
তূর্য অনুর কানে ফিসফিস করে বললো,,
কাছে যখন আসতেই চাও এত লজ্জা পাচ্ছো কেন বাবুর আম্মু?
অনু মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে।
তূর্য অনুর কানে আলতো করে কামড় দিতেই অনু তূর্যর টি শার্ট খামচে ধরে,,,
তূর্য মুচকি হেসে অনু কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। অনুর ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়,,,তার পর আর কী আমি কিছু জানি না,,🙊
.
অনু আজ নিজে থেকেই তূর্য কে নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপন করে নিলো।পাড়ি জমালো তাদের ভালোবাসার দেশে,,,,
চলবে,,,, 🍁