তুমিময় মোহ পর্ব-০৫

0
44

তুমিময়_মোহ [৫]

বন্ধুদের মিটিং শেষে আহিলকে সঙ্গে নিয়ে জোহান দুই বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে। রাধিকা আহিলকে দেখেই চিনে ফেলে। তবে জোহানকে চিনতে পারে না। উগ্রভাবে মেজাজে বলে,
‘আপনি তার সাথে জড়িত? কেন আঁটকে রেখেছেন আমাদের?’
‘রিলাক্স। সব বলব আপনাদের।’ শান্ত হয়ে বলল আদিল।
‘শান্ত হতে পারব না। দ্রুত সব বলে আমাদের মুক্ত করুন।’
‘আপনি মুক্ত হলেও ভাবিকে মুক্ত করতে পারব না।’
‘কেন?’
‘স্টপ!’ জোহান ক্ষুব্ধ গলায় থামতে বলল তাঁদের।
তারা দু’জনে থেমে গেল। এখন তাঁদের নজর জোহানের উপর। একটু হেয়াল নিয়ে ঝুঁকে দৃঢ় গলায় বলল,
‘তোমায় কিডন্যাপ করার কারণ একমাত্র সামাইরা। দ্বিতীয় কারণ, ইমরানের সাথে তোমার বেশ ভালো বন্ডিং দেখলাম। আমি চাই ওর সাথে তুমি কথা বলো সামাইরার বিষয়ে।’
‘বুঝতে পারিনি ঠিক।’
‘ওয়েট, আমি বলছি মন দিয়ে শোনো।’ এতটুকু বলে জোহান নড়েচড়ে বসলো। ফের বলল,
‘বিয়ের দিন তোমার সাথে ইমরারের ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই যোগসূত্র ধরে তুমি ইমরানের পক্ষে কথা বলবে। তাকে সাহায্য করবে সামাইরাকে খুঁজে বের করতে।’
‘আমি এগুলা কেন করব? তকে আমি পছন্দ করি না। সম্পর্ক তো শুধু মিথ্যে অভিনয় ছিল…।’ উত্তেজিত হয়ে বলল রাাধিকা।
আহিল ধমকের স্বরে রাধিকাকে থামালো। বলল,
‘চুপ থাকো। আগে সব কথা শোনো।’
রাধিকা শান্ত হয়ে গেল। মনস্থির করে হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাঁকালো।
জোহান বলতে শুরু করলো। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব ব্যাপারে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করে বলে। সামাইরা পলকহীন চাহনিতে বিভোর হয়ে শুনে জোহানের কথা। একটা ছেলে তাকে গোপনে এতটা ভালোবাসে আজ সেটা উপলব্ধি করতে পারছে। তবুও মনের মধ্যে তার সেই ক্ষুব্ধ আতংক রয়েই আছে ছেলেদের প্রতি।
পরিশেষে জোহান আহিলকে বলে,
‘রাধিকাকে হোস্টেলে পৌঁছে দে।’
‘ওকে।’ বলে উঠে দাঁড়ালো।
রাধিকা সামাইরার দিকে করুণ চোখে তাকালো। জোহান কোমল গলায় বলল,
‘সামাইরা আমার হেফাজতে থাকবে। তুমি তোমার বান্ধবীর ভালো চাইলে আমার কাজে হেল্প করতে পারো। নয়তো তোমার যেটা ভালো মনে হয় কোরো।’
রাধিকা নরম স্বরে জানালো,
‘আমি চেষ্টা করব আপনাদের সাহায্য করার।’
‘গুড!’
আহিল বাহিরে বেরিয়ে এলো রাধিকাকে নিয়ে। যাওয়ার সময় বার বার দুই বান্ধবী একে অপরের পানে তাকিয়েছিল। তাঁদের এরূপ অসহায়ত্ব চাহনি দুই বন্ধুর চোখ এড়ায়নি। আপাতত কক্ষে জোহান ও সামাইরা একা। মেইন গেট লক করে জোহান সামইরাকে বলল,
‘আমায় ফলো করো।’ বলে হাঁটতে লাগলো। সামাইরা একবার ভাবছে যাবে, অরেকবার ভাবছে যাবে না। মনের সাথে যুদ্ধ করে শেষে মৃদু পায়ে এগোতে লাগলো। ততক্ষণে জোহান ফিরে এসে তেজি কণ্ঠে শুধায়,
‘এত সময় কেন নিচ্ছো?’ বলতে দেরি সামাইরাকে কোলে তুলে নিতে সময় হলো না জোহানের। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।
এমনটা ঘুনাক্ষরে আশা করেনি। নড়াচড়া করে নিজেকে উন্মুক্ত করবে এতটুকু বোধ মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে গেছে। জোহান সামাইরাকে নিয়ে পাশের রুমের বেলকনিতে এনে দাঁড় করালো। রেলিঙের উপর হাত রেখে বড়ো নিশ্বাস নিলো।
সামাইরা এখনো বিস্ময়তা কাটাতে পারেনি। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। জোহান একবার সামাইরার পানে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
‘ভয় না পেলেও চলবে। আমি তোমার ক্ষতি করব না। যে ভালোবাসতে জানে, সে ভালোবাসার মানুষকে সম্মানও দিতে পারে। আমার জীবনে প্রথম নারী তুমি। যাকে আমি সেদিন প্রথম স্পর্শ করেছি। আর আজ দ্বিতীয় বার। তোমার উপর অধিকার আছে আমার। তবে, পুরোপুরি না। যেদিন আমায় ভালোবাসবে, ঐদিন পুরোপুরি অধিকার পাবো। তুমি তোমার বাড়ির কথা ভাবছো, বাবার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো। কিন্তু এতটুকু ভাবছো না আজ বিয়ে হলে গেলে কাল দুই দিন পূর্ণ হতো। তুমি সুখী থাকতে না। সারাজীবন মুচকি হাসির পেছনে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে রাখতে হতো ঠোঁটে। মাঝেমধ্যে অন্যদের তুলনায় নিজের কথা ভাবতে হয়। এটা ভাবা গুনাহ না।’
নির্বাক কথনগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে সামাইরা। নিমিষেই তার মনের মধ্যে জমানো ভয় গুলো উধাও হয়ে গেল। যে লোক অন্যদের জীবনে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিতে পারে। সে আর যাই হোক অসৎ নয়। নিঃসন্দেহে সে সুপুরুষ!
‘সামাইরা শোনো, মানুষের আয়ু দীর্ঘ নয়। আজ তুমি, আমি আছি। কাল নাও থাকতে পারি ভুবনে। জীবনে সুপ্ত শখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা গুলো পূরণ করবে। অপূর্ণ জীবন বিষের সমতুল্য। চিরকাল তা পীড়া দেয়। আমার জীবনে সব কিছুই পরিপূর্ণ, কেবল তুমি ব্যতীত। ইনশাআল্লাহ! যেটাও পূরণ হবে। যদি তুমি চাও তো!’
তীরের ন্যায় বিঁধল কথাগুলো তার হৃদয়ে। ঈষৎ অচেনা অনুভূতি হাতছানি দিয়ে আলিঙ্গন করছে যেন তাকে। এই অনুভূতি তার জীবনের প্রথম। নৈঃশব্দে সরু নিশ্বাস ফেললো।

‘সামাইরার বিষয়ে কিছু জানতে চাই। বললে উপকার হতো।’ আহিল প্রশ্ন ছুঁড়লো রাধিকার নিকট।
রাধিকা প্রথমে বলতে ইতস্তত বোধ করলেও পরমুহূর্তে সব খুলে বলে। ইমরানের বিষয়টিও হাইড রাখে না। সব কিছু রেকর্ড করে সেগুলো তৎক্ষনাৎ জোহানকে পাঠায় সে। সেকেন্ড কয়েক চুপ থাকে আহিল। পরপরই জানতে চায়,
‘আমরা পাঁচ বন্ধু। তাঁদের মধ্যে কেবল আমি একাই অন্য ধর্মের। এই বিষয়টি আমাদের মাঝে কখনোই ইফেক্ট পড়েনি। খুবই ক্লোজ আমরা।’
‘মনে তো হচ্ছে না ক্লোজ।’ রাধিকার বাঁকা কথন।
আহিল বুঝতে পরে বিষয়টি। মৃদু হেসে বলে,
‘এক সময় সব জানানো হবে। তবে পোক্ত প্রমাণ সহিত।’
‘এটা কি বেইমানি নয়?’
‘নাহ! উপকার বলা যায়। ইমরান ভালো ছেলে না। তুমি ইমরানের সাথে দুই ঘন্টা সময় অতিবাহিত করবে। ব্যস। বাকিটা আপনা-আপনি বুঝে যাবে।’
‘আর তার ছোট ভাই?’
‘মিরানের চরিত্র, মনমানসিকতা সব দিক থেকে ভালো।’
রাধিকা চুপ হয়ে রইলো। আহিল ফের জানতে চাইলো,
‘আপনি হোস্টেলে একা থাকেন বাবা-মা দেখা করতে আসে না?’
‘আমার বাবা-মা নেই। মামা-মামির কাছে বড়ো হয়েছি।’ বলে মৃদু হাসলো আহিলের পানে তাকিয়ে।
আহিল মুখ ভার করে নিচু স্বরে বলল,
‘স্যরি।’
‘সমস্যা নেই। তারা মৃ’তু্যবরণ করেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। কেবল আমিই বেঁচে ছিলাম।’
‘আপনাকে কিডন্যাপ করার জন্য স্যরি।’
‘স্যরি বলতে হবে না। কিডন্যাপ হয়ে প্রিয় বান্ধবীর দেখা পেয়েছি এটাই অনেক।’
আহিল কথাটি শুনে মুচকি হাসি প্রধান করল। তাদের মাঝে আরো কথোপকথন শেষে নাম্বার আদান-প্রদান হয়ে গেছে।
_
‘তোমার সহজসরল মেয়ে মানসম্মান শেষ করে দিয়েছে। বুঝতে পারছো কিছু?’ হুমাইরা বানু চ্যাঁচিয়ে বললেন খালিদ শেখের দিকে তাকিয়ে।
তিনি নির্বোধ হয়ে অসহায় চোখে তাকালের স্ত্রীর পানে। কয়েক বার পলক ফেলে বড়ো নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিলো। তার জানা মতে সামাইরা এমন কাজ করবে ধারণা ছিল না। তবুও তা হয়েছে। তিনি কোমল গলায় বলল,
‘এখনো এট শিওর না সামাইরা পালিয়েছে নাকি কিডন্যাপ হয়েছে। তুমি চ্যাঁচিয় না। আমার একা থাকতে দেও।’
‘একা থাকলেই কি মেয়েকে পেয়ে যাবে? খোঁজো। কোথায় আছে খুঁজে বের করো।’
তাঁদের কথপোকথনে মাঝে মিরান উপস্থিত হয়। অনেক আগেই কলিংবেল বাজছিল। সিয়াম দরজা খুলে দিয়েছে এজন্য ভেতরে আসতে পেরেছে।
হঠাৎ মিরানকে দেখে হুমাইরা বানু কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। জোর করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
‘এত রাতে তুমি এলে যে মিরান। বোসো। কোনো খবর পেলে কী?’
মিরান বসে শান্ত ভাবে জানালো,
‘প্রথমত, ভাবি পালায়নি। তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে এটা শিওর।’
‘এই বিষয়টি আমার গিন্নিকে বোঝাতে পারছি না। মেয়েটা আমার পালায়নি।’ হতাশ হয়ে বললেন তিনি।
‘আমি এই বিষয়টি দেখছি। আপনি টেনশন করবেন না। আর এই বোতামটি দেখে বলতে পারবেন এটি আপনাদের কি-না?’ এগিয়ে দিলো বোতামটি। হাতে নিয়ে তিনি দেখে বললেন,
‘এটি কিসের?’
‘কোটের।’
‘আমরা তো সেদিন কোট পড়িনি।’
‘আত্মীয় কেউ?’
‘এমন কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না। ব্যস্ত ছিলাম। নো আইডিয়া।’
‘আচ্ছা, উঠি।’
‘এটা কোথায় পেয়েছো?’
‘বেলকনিতে।’
‘বোসো চা খেয়ে যাও।’
‘এখন না। অন্য একদিন।’ বলেই দ্রুত প্রস্থান করল মিরান।
তিনি চিন্তিত হয়ে ভাবছেন। হুমাইরা বানু পাশ থেকে উঠে গেলেন তার কাজে। বাড়িঘর এখনো এলোমেলো। মেহমান চলে গেলেও সব কিছু অগোছালো হয়ে রয়েছে।
.
.
#চলবে?

®সুমাইয়া মনি