তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব-২২+২৩

0
453

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২২”

— রোজা চলে যাওয়ার পর থেকে রুদ্র ঘর থেকে বের হয়নি৷ সেই পুরোনো ক্ষত,পুরোনো স্মৃতি সবকিছু নতুন করে কষ্ট দিচ্ছে। প্রিয় মুখটাও আজ সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘৃণার কাছে ভালোবাসাটাও পরাজিত হয়ে গেছে। আর হবে নাই-বা কেনো? এমন মানুষের জন্য ভালোবাসা নয় ঘৃণাটাই প্রাপ্য থাকে। রুদ্রর মধ্যে অনুশোচনা আজ! ভীষণ ভাবে অনুশোচনায় ভুগছে অন্য বিষয় নিয়ে আর সেটা অবশ্যই দোলা। দোলার কথাগুলো আজ রুদ্রকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। নতুন করে দোলাকে চিনতে সাহায্য করছে। রুদ্রর মধ্যে আফসোস এতদিন সত্যি কি সে-সব ভুল করে এসেছে৷ দোলার সাথে যেগুলো করা হয়েছে সত্যি কি দোলা সেগুলোর যোগ্য ছিলো? সামিরের সাথে দোলার আদো সম্পর্ক আছে কি-না? আর যদি থাকেও সেটা কোন পর্যায়ে সেটা রুদ্র আজ ভীষণ ভাবে ভাবছে। তার চিন্তা, ধারণা, মস্তিষ্ক সবকিছু ভাবাতে বাধ্য করছে।
— রাজের বলা কথাগুলো আর আজকের দোলাকে রুদ্র জুড়ে দেয়। আর তাতে যা দেখতে পাই রুদ্র তা হলো দোলা স্নিগ্ধ, নির্দোষ সম্পুর্ণ। রুদ্র আর কিছু ভাবতে পারছে না। সে সাহস আর হচ্ছে না তার। তবে এটা বুঝে গিয়েছে যে একটা মানুষকে কেন্দ্র করে সে আরেকটা মানুষের প্রতি জুলুম করে ফেলেছে। অজান্তেই অত্যাচার করেছে। দোলা ঘরে আসে সে-সময়। দোলাকে দেখে রুদ্র একটু নড়ে-চড়ে বসে!এরপর স্নেহময় দৃষ্টি রাখে। অপরাধবোধ আজ অবশ্যই বিদ্যমান রুদ্রর মধ্যে। দোলা ঘরে ঢুকতেই রুদ্রকে লক্ষ্য করে একবার। এরপর নিজ কাজে মন দেয়। সময়টা দুপুর হওয়াতে বাইরে তীব্র রোদের চাপ। গরমটাও বেশি পড়ছে আজকাল। দোলা হাতের কিছু কাজ শেষ করে রুদ্রর জন্য ওষুধ বের করতে থাকে বক্স থেকে। রুদ্র এখনো একই ভাবে দোলাকে দেখছে। দোলা বুঝতে পারছে রুদ্র ড্যাবডেবে চোখে তাকে দেখছে আর তাতে অস্বস্তিও লাগছে দোলার। কিন্তু রুদ্র এইভাবে তাকিয়ে আছে কেনো এটা বোধগম্য নয়।

— এই নিন আপনার ওষুধ। খেয়ে রেস্ট করুন। রুদ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে রুদ্র দোলার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয় পাশে। দোলা হকচকিয়ে উঠে কৌতুহলী চোখে তাকায়।

— হুট করে পেটে হাত রাখে রুদ্র। দোলা মৃদু কেঁপে উঠে সরে আসতে চাইলে রুদ্র বাধা দেয়। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই না দোলা? দোলার অবাক চাহনি। কোনো কথা ছাড়াই বলে উঠে রুদ্র। দোলা যেনো বিস্ময়ের সাগরে ভাসছে। আগের তুলনায় কৌতুহল বৃদ্ধি পাই । কপালে ভাঁজ উঠে, চোখ, ভ্রু কুচকে আসে। দোলার এমন নানান তর্জমার এক্সপ্রেশন দেখে রুদ্র মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে অবাক হচ্ছো তাই না? রুদ্রর বলা বাক্যটিতে অপরাধবোধ স্থান পাই। দোলা নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে।

— অবাক হওয়ারই কথা! তোমাকে কি বলব! কি বলা উচিত আমার জানা নেই। শুধু এতটুকু বলব আমি ভুল ছিলাম। রুদ্রর নুয়ে পড়া কন্ঠস্বর! সংকোচ চাহনি দোলার মধ্যে তোলপাড় তৈরি করে।
— ওষুধ খেয়ে ঘুমান রুদ্র। কথা এড়িয়ে গিয়ে, কৌতুহল দমিয়ে কথাটা বলে দোলা। কারণ অনেক কিছু বাকি আছে তার। রুদ্র একটা আফসোস দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আমি বেবিটা চাই দোলা। ওর নিষ্পাপ মুখটা দেখতে চাই। সাথে তোমাকেও। শেষের তোমাকেও শব্দটা গায়ে কাটা ফেলে দেয় দোলার৷ ধক করে উঠে বুকের মধ্যে। রুদ্র উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় আগ্রহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

— আমি আপনার সন্তানকে আগলে রাখবো রুদ্র! এবং আপনার হাতে তুলে দেবো প্রমিস করছি। আল্লাহ তা’লা বাদে কেউ আমার সন্তানের ক্ষতি করতে পারবে না। অক্ষত অবস্থায় আপনার কোলে দেবো কথা দিচ্ছি আমি। এতটুকু বলে দোলা থেমে যায়। এরপর রুদ্রর দিকে অভিমানী দৃষ্টি রেখে বলে যদি আপনি আমায় বিশ্বাস করেন তবে। কিন্তু আপনি তো আমাকে৷ বিশ্বাসই করেন না। ঠোঁটে আছে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি। রুদ্র চমকে তাকায়। দোলার এই কথাটার তাৎপর্যতা যে কতটা গভীর সেটা রুদ্র বেশ উপলব্ধি করতে পারছে।

– রুদ্র দোলার হাত ধরে মুঠোয় নেয়। দোলা যেন আজ অন্য রুদ্রকে দেখছে। যার মধ্যে আজ শুধুই ভালোবাসা, ভরসা আর বিশ্বাসে ভরপুর।
– আমি তোমাকে বিশ্বাস করি দোলা। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করতেও চাই। যা ভুল করেছি সেটা আমি… আমার কাজ আছে রুদ্র। আপনি ঘুমান একটু। রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে দোলা। রুদ্র আহত দৃষ্টি রেখে বলে! বললে না তো তুমিও থাকবে আমার পাশে?

– আছি তো! যাওয়ার হলে অনেক আগেই চলে যেতাম। বিধাতা যখন জুড়ে দিয়েছে তখন ছেড়ে যাওয়ার তো অপশন নেই। দোলার কথায় রুদ্র অনেকটা খুশি হয়ে যায়। মুখে বিশ্বজয়ের হাসি এনে বলে থ্যাঙ্কিউ দোলা। আমি তোমাকে আর কখনো অবিশ্বাস করবো না প্রমিস। দোলা মলিন হাসে। যে হাসির মানে শুধু দোলায় জানে।

– ঘড়ির কাটা ঠিক তিনটার ঘরে অবস্থান করছে। রুদ্র একটু আগে ঘুমিয়েছে। দোলা যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। রুদ্র ঘুমিয়ে যেতেই দোলা আশাকে ফোন করে। আশা প্রস্তুত ছিলো। কারণ দোলা অনেক আগেই সবটা জানায় তাকে। তানিয়াকে এই বিষয়ে কিছু বলে না দোলা। কারণ রাজ আর তানিয়া বারণ করে দোলাকে একা কিছু করতে। সামিরের সাথে পরে কথা বলা যাবে এটাই জানায়। কিন্তু দাগ তো লেগেছে দোলার চরিত্রে। কিভাবে চুপ থাকতে পারে। তাই যতখন না নিজেকে সবার সামনে নির্দোষ প্রমাণ করছে। ততখন তার নিস্তার নেই।

– দুপুরে সবাই যখন যে-যার ঘরে বিশ্রাম করছে। তখন
দোলা বেরিয়ে যায় ফোন হাতে। আশাকে এগিয়ে আসতে বলে। দোলা এর আগেও সামিরের বাড়িতে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। সামির নিয়ে গেছে আশা আর দোলাকে। তাই তাদের সামিরের বাড়ি চিনতে অসুবিধা হয়না।

— সামির বাড়িতেই ছিলো। সেও লাঞ্চ সেরে ঘরে বসে আয়েস করে ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত। এমন সময় উপস্থিত হয় দোলা আর আশা। হঠাৎ দোলাকে দেখে চমকে উঠে সামির। একদমই প্রত্যাশা করেনি দোলাকে এই সময়। অনেক খুশি হয়ে যায় সামির দোলাকে দেখে। ঠোঁট প্রসারিত করে ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। দোলা চোখ মুখে ক্রোধ এনে তাকিয়ে আছে সামিরের দিকে।
– দোলা তুমি? ও মাই গড। আই কান্ট বিলিভ দিস! তুমি এই সময় আমার বাড়ি। দাঁড়িয়ে কেনো এসো বসো বসো। তুমি আসবে আমাকে জানাবে না একবার। আশা দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। দোলার কোনো রকম উত্তর না পেয়ে সামির ভ্রু কুচকে বলে কি হলো দোলা এসো বসো। সামির এগিয়ে এসে দোলার হাত ধরতে যাবে সে-সময় দোলা সর্বস্ব শক্তি দিয়ে সামিরের গালে একটা চড় দেয়। রাগে রিরি করছে দোলার শরীর। ইচ্ছে করছে সামিরকে নিজ হাতে খু/ন করতে। সামির তো শকড। হতভম্ব হয়ে তাকায়। দোলার এমন রুপ দেখে চমকে উঠে সে।

– আশার মুখে তৃপ্তির হাসি। তারও ইচ্ছে করছে এই ঠক প্রতারকের গালে দুটো ইচ্ছে মতো দিতে।
– কি হয়েছে দোলা? তুমি আমাকে মারলে কেনো? সামির কথাটা শেষ করতেই আরেকটা মারে। সামির এবার রেগে তাকায় দোলার দিকে। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে এমন ভাব।
– কি হচ্ছে এইসব দোলা? হঠাৎ এমন বিহেভের মানে কি? উত্তেজিত কন্ঠস্বর সামিরের।
– এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিলো আমার। কিন্তু আফসোস অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তারপরও যে আমি এটা করতে পেরেছি ভেবেই শান্তি লাগছে। দোলার কথা কিছুই বুঝতে পারে না সামির। ভ্রু কুচকে বিস্মিত হয়ে বলে মানে?

– তুমি আমাকে ঠকিয়েছো! দিনের পর দিন মিথ্যা বলে এসেছো। আমাকে দিয়ে একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট করিয়েছো।। ভালো মানুষীর মুখোশ পড়ে দিনের পর দিন ব্যবহার করেছো আমাকে। তোমার জন্য আমি চরিত্রহীনা হয়ে গেছি। সবাই আমাকে ভুল বুঝছে। এমনকি আমার স্বামীও আমাকে বিশ্বাস করে না। সব কিছুর জন্য দায়ী তুমি কথাটা বলে দোলা আবারও হাত তুলে মারার জন্য কিন্তু এবার সামির দোলার হাত চেপে ধরে। দোলা অগ্নি দৃষ্টি রাখে।
– ওহ এই ব্যাপার! তাই তো বলি আমার পোষা বিড়াল হঠাৎ বাঘিনী হলো কীভাবে। সামিরের কথায় আশা এবং দোলা দুজনেই স্বাভাবিক চোখে তাকায়।

– রুদ্র তোমায় ভুল বুঝেছে বলে এত দুঃখ। আরে ওতো এমনি মেন্টাল। কারো ভরসার যোগ্যই না। সেখানে ও কাউকে বিশ্বাস করবে কীভাবে? শুনো দোলা তুমি না রুদ্রকে ছেড়ে দাও। তারপর আমার কাছে চলে এসো। আমি তোমাকে রাজরানীর মতো করে রাখবো। একটুও অবিশ্বাস করবো না কখনো। ওই রুদ্র তোমাকে কীভাবে অত্যাচার করে আমি সব জানি। আর আমি! আমি তোমাকে ভালোবাসবো।।শুধু ভালোবাসবো কথাটা বলে সামির হেসে উঠে। দোলার ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে সামিরের কথায়।

– আমার হাত ছাড়ো সামির। তোমার মতো নিচ,জঘন্য মানুষের মুখে ভালোবাসার কথা শোনাটাও পাপ। ভালোবাসা কাকে বলে জানো তুমি? যদি জানতে তাহলে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করতে না। তাদের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলতে না।
– ওহ আচ্ছা। তো কার মুখে ভালোবাসার কথা শুনতে চাও তুমি? ওই রুদ্রর মুখে। ওই ষ্টুপিডটা আমার সব শেষ করে দিয়েছে৷ আমার খাচার পাখি ওর খাচায় বন্দী করেছে। আমি তো ওকে কখনোই ছাড়বো না। শেষ করে দেবো একদম দাঁতে দাঁত চেপে বলে সামির।

– খবরদার সামির! মুখ সামলে কথা বলো। তুমি যার সম্বন্ধে কথা বলছো তিনি আমার স্বামী। আর আমার স্বামীর নামে একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। হুশিয়ার দিয়ে বলে দোলা।
– বাবাহ! কি প্রেম। এই কয়দিনে এতো প্রেম। এতো প্রেম কীভাবে হলো শুনি? দুদিন আগেও তো রুদ্রকে দেখতে পারতে না। ওর থেকে পালাতে চাইতে। তাহলে আজ? আজ হঠাৎ স্বামী নিয়ে প্রতিবাদ করছো যে? আচ্ছা কারণটা কি এই বেবিটা। মানে যেটা তোমার গর্ভে আছে। রুদ্র আর তোমার বেবি। দোলা চমকে তাকায় সামিরের দিকে। আশাও অবাক হয় ভীষণ। সামির ওদের ফেস রিয়াকশন দেখে হো হো করে হেসে উঠে বলে কি হলো চমকে উঠলে মনে হয়। ভাবছো তো আমি কিভাবে জানলাম সব? আমি সব জানি মুখটা গম্ভীর করে বলে সামির।

— সামির এখনো একহাতে দোলাকে ধরে আছে দোলার একটা হাত। দোলা মোচড়ামুচড়ি করে হাতটা ছাড়ানোর জন্য কিন্তু সামির আরও শক্ত করে চেপে ধরে। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে দোলা আহ করে উঠলে সামির আঁতকে উঠে ছেড়ে দেয় দোলার হাত।
– কি হয়েছে দোলা ব্যথা পেয়েছো। দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো। আইম সরি জান। আমি সত্যি তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি। অদ্ভুত আচরণ করে সামির। দোলা শকড হয়ে যায়। বিস্ময় নিয়ে তাকায় সামিরের দিকে।

– তুমি একদম ঠিক করোনি সামির। হঠাৎ বলে উঠে আশা। সামির চোখ কুচকে তাকায় ওর দিকে।
– তুমি আমাকে ঠকিয়েছো দোলাকে ঠকিয়েছো। মিথ্যা বলেছো। আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছো মিথ্যা বলে।।সব তোমার সাঁজানো ছিলো। তুমি নেহার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো। ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছো। তুমি অনেক জঘন্য মানুষ সামির।
– এই চুপ! একদম চুপ। চিৎকার করে বলে সামির। আশা কেঁপে উঠে সামিরের কথায়। দোলা ঘাবড়ে যায়।
– তখন থেকে এক কথা শুনে যাচ্ছি। জঘন্য মানুষ, ঠকিয়েছি ব্লা ব্লা ব্লা। হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলেছি! আমি নেহাকে ঠকিয়েছি। দোলাকে মিথ্যা বলেছি
কিন্তু যা কিছু করেছি সব দোলার জন্য করেছি আমি। দোলা যেনো আঁতকে উঠে সামিরের কথায়।
আমি দোলাকে ভালোবাসি। আর এই জন্য আমি সব কিছু করেছি। যাতে করে আমি দোলার আশেপাশে সব সময় থাকতে পারি তাই মিথ্যা বলে বন্ধুত্ব করি। ভেবেছিলাম সময় মতো দোলাকে প্রপোজ করবো। কিন্তু তার আগে! ওই রুদ্র এসে সবটা গন্ডগোল পাকিয়ে দিলো। বিয়ে করে ফেললো দোলাকে। আমার এতদিকের পোষা পাখি, যাকে আমি আগলে আগলে রাখছি তাকে নিয়ে ফুড়ুৎ।
– এরপর থেকে আমি রুদ্রর মনে সন্দেহ ঢোকায় দোলাকে নিয়ে। নেহার জন্য যে মেয়ে দায়ী মানে যে আমার গার্লফ্রেন্ড সেটা যে দোলা। এটা আমি রুদ্রকে জানায়। যাতে করে রুদ্র দোলাকে ছেড়ে দেয়। বের করে দেয় বাড়ি থেকে। কিন্তু না! রুদ্র সবটা জেনেও চুপ করে থেকেছে। তবে দোলাকে যে সন্দেহ করতো এটা আমি জানতাম। যার জন্য আমি দোলাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করতাম রুদ্রর সামনে যাতে করে রুদ্র বিশ্বাস করে আমার আর দোলার রিলেশন আছে। এবং দোলা বিয়ের পরেও সেটা কন্টিনিউ করছে।

— দোলা পিছিয়ে যায় কিছুটা। এত ষড়যন্ত্র তার পেছনে। যার জন্য অনেক ভোগান্তি দিতে হয়েছে তাকে।
– আমি নেহাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসতাম। এমনকি আরো অনেক মেয়ের সাথেই আমার সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু তাদের বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ছিলো মূল উদ্দেশ্য। এরপর ছুড়ে ফেলতাম। নেহাকেও তাই করেছি। কিন্তু ঝামেলা হয়ে যায় বাচ্চাটা। তবে বিশ্বাস করো দোলা। আমি তোমাকে নিয়ে এমনটা কখনোই ভাবিনি। তোমাকে নিয়ে এমন চিন্তা কখনো আসেইনি। আমি সব সময় তোমাকে চাইতাম। আর সেটা মন থেকে ভালোবেসে। তোমাকে বিয়ে করে একসাথে থাকতে চাইতাম। আর সব মেয়েদের থেকে তুমি স্পেশাল আমার কাছে। দোলা আর কিছু শুনতে পারছে না। কান গরম হয়ে আসছে। একটা মানুষ এতটা খারাপ কীভাবে হতে পারে সেটাই ভাবছে সে।

– তবে সমস্যা নেই। তোমাকে আগে পাইনি তো কি? এখন তো পাবো।।হাসি মুখে বলে সামির।
– মানে? চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে দোলা।
+ মানে তুমি রুদ্রকে ছেড়ে আমার কাছে আসবে। আমি তোমায় বিয়ে করবো। অনেক ভালোবাস… তার আগে দোলা রেগে আবারও চড় দেয়। সামির তো এবার রেগে বো”ম হয়ে যায়।
– তোর মতো মানুষকে ভালোবাসা না শুধু ঘৃণায় করা যায়। আর তোকে বিয়ে না৷ সোজা জেলে দেবো। আর তার ব্যবস্থা আমি করবো। তোর মতো মানুষের শাস্তি প্রাপ্য। দোলার কথায় সামির হাসতে থাকে। শব্দ করে হাসতে থাকে। দোলা আর আশা ভ্রু কুচকে তাকায় ।
– তা কীভাবে দেবে আমাকে শাস্তি জানেমন! আমাকে শাস্তি দিতে হলে তো তোমায় বেরোতে হবে এখানে থেকে। তারপর না অন্য কিছু। কিন্তু আফসোস তুমি এখানে থেকে বেরুতেই পারবে না। এসেছো নিজ ইচ্ছায় কিন্তু বের হবে আমার ইচ্ছেতেই।

– কি বলতে চাইছো তুমি? আমি এখানে থাকার জন্য আসেনি৷ এসেছি যখন তখন বের হবো ঠিক আর তোমার শাস্তিও নিশ্চিত করবো দৃঢ় কন্ঠে বলে দোলা।

ও আচ্ছা৷ তো বেরিয়ে দেখাও। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে সামির।
-আশা চল এখানে থেকে। ওকে তো পরে দেখে নেবো কথাটা বলে দোলা আশার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে যাবে তার আগে সামির তালি বাজায় হাতে। কয়েকজন লোক এসে হাজির হয়। দরজা রোধ করে দাঁড়ায়। দোলা আর আশা ঘাবড়ে যায় ওদের দেখে। ভয়ার্ত চোখে তাকায় সামিরের দিকে। ( আসলে সামিরের লোক সিসি ক্যামেরায় সব দেখছিলো আর শুনছিলো। সামিরের ড্রয়িং রুমে সব সময় মনিটরিং অন থাকে। যার মাধ্যমে বাইরে থেকে কে আসছে যাচ্ছে ইনফ্যাক্ট ঘরের মধ্যে গুলোর খবরও জানা যায়। তাই ওরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো।)

– সামির ঠোঁট উল্টোয় তাতে।
– আমাদের যেতে দাও সামির। দেখো একদম ভালো হবে না বলছি। রুদ্র যদি একবার জানতে পারে তুমি আমার সাথে অসভ্যতা করেছো তাহলে কিন্তু তোমাকে মেরে রেখে দেবে।

– তাই নাকি? তোমার স্বামীর প্রতি তোমার অগাধ বিশ্বাস দেখছি। তবে তোমাকে খুঁজে পেলে তবে না আমার কিছু করবে? তাছাড়া তোমাকে তো বিশ্বাসই করেনা রুদ্র। কীভাবে আমার ক্ষতি করবে যদি রুদ্র এটা জানে যে তুমি নিজ ইচ্ছেতে আমার কাছে এসেছো ওকে ছেড়ে। বেচারা তো আবারও ছ্যাকা খাবে। দেবদাস হয়ে পথে পথে ঘুরবে আহারে!।
– সামির! আমাকে যেতে দাও বলছি উত্তেজিত কন্ঠে বলে দোলা।
– একবার বলেছি না কোথাও যেতে পারবে না। সবটা যখন জেনেই গিয়েছো তখন তো আর লোকানোর কিছু নেই। আমার আসল রুপের কথা শুনেছো কিন্তু দেখোনি কখনো। এবার দেখাবো বলে দোলার হাত চেপে ধরে। দোলা আঁতকে উঠে।
– সামির দোলাকে ছেড়ে দাও। কি করছো তুমি? আশা বলে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে।
– দুজনকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখ পাশের ঘরে। আর দেখবি পালাতে যেনো না পারে এরা কোনোভাবে৷ তাহলে তোদের একটাকেও আমি আস্ত রাখবো না। আমি একটু পর আসবো। একটা দরকারী কাজে বাইরে যাচ্ছি। এসে এদের ব্যবস্থা করবো আমি। এরপর সামির দোলার ফোনটা কেড়ে নেয় সাথে আশারও। তবে আশার ফোনে সবটা রেকর্ড চলছিলো। এতখন সামির যা যা বলেছে সব তাতে রেকর্ডিং হয়। আশার ফোন নেওয়াতে হতাশ হয় দোলা। দোলা আর আশা ছটফট করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিছু তাতে কোনো লাভ হয়না৷ ওদের নিয়ে ঘরে বন্দি করা হয়।

– দোলার অনুশোচনা হয় এখন। এইভাবে আশাটা একদম ঠিক হয়নি তার। কেনো এমন নির্বুদ্ধিতা করতে গেলো ভেবেই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে৷ তবে সামির যে এতটা খারাপ দোলার ভাবনায় ছিলো না।

চলেব….
“❌❌ কপি করা নিষেধ ❌❌

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৩”

–” রোজার সামনে বসে আছে সামির। রোজাকে সব জানানোর পর সামির এটা বলে যে, সে দোলাকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু রোজা ইস্যু করে বাচ্চাটাকে।
– তুমি দোলাকে বিয়ে করবে সমস্যা নেই। কিন্তু দোলার বেবিটাকে কি করবে? মেনে নেবে তাকে? রোজা ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে। সামির রাগী গলায় বলে রুদ্রর বাচ্চার দায়ভার কেনো আমি নিতে যাবো। তাছাড়া আমি চাইনা আমার আর দোলার মধ্যে কেউ আসুক। অনেক হয়েছে৷ আমি আর দোলাকে হারাতে চাইনা এটাই আমার শেষ কথা।
– তোমার কি মনে হয় সামির” রুদ্র এত সহজে সবটা ছেড়ে দেবে। দোলাকে এখন সে চোখে হারায় অফকোর্স সেটা বেবিটার জন্য। যদি বেবিটার কিছু হয় তাহলে কিন্তু রুদ্র তোমাকে ছাড়বে না। সো মাথা গরম করলে চলবে না। আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে৷ যাতে করে সাপও মরে আর লাঠিও অক্ষত থাকে।

– কি করতে চাইছো তুমি? বিস্ময় নিয়ে বলে সামির।
– রোজা মুচকি হেসে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে আমি যা বলছি এবার তাই করো শুধু।

— বিকেলে! রুদ্রর ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষণ আগে৷ ঘুম থেকে উঠেই সে দোলাকে দেখতে পাইনা। রুদ্রর প্রচন্ড মাথা ধরেছে৷ সচারাচর এই সময় রুদ্রর কখনোই ঘুম হয়না৷ শরীর খারাপের জন্য তার ঘুমানো আজ। তবে হঠাৎ করে মাথাটা এমন ভাড় হয়ে আছে৷ ইচ্ছে করছে আদা দিয়ে এক-কাপ চা খেতে। রুদ্র দোলাকে ডাকতে দিয়েও ডাকে না। রুদ্র ভাবে দোলা হয়তো কোনো কাজে আছে নিচে৷ সময় মতো চলে আসবে।

– তানিয়া দুপুরের পর আর রুম থেকে বের হয়নি। কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে সে। রত্না চৌধুরী তার ঘরে থাকলেও একটু বাদে ড্রয়িং রুমে আসেন। জেসমিন চৌধুরী আর তানভীর আহমেদও আছেন যেখানে। সবাই চা এর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দোলার কথাটা কারো মাথায় নেই আপাতত। কারণ সবাই মনে করে দোলা ঘরে আছে রুদ্রর সাথে। যেহেতু দোলা মা হতে চলেছে! সেহেতু দোলার রেস্টের প্রয়োজন অনেক।
– এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করে সজল। এই সময় সজলকে দেখে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই কিছুটা সংকোচিত চোখে তাকায়।
-রত্না চৌধুরী দৃষ্টিগোচর হতেই সজল সালাম দেয় তাকে হাসার চেষ্টা করে। রত্না চৌধুরীর বিস্ময় নিয়েই সালামের জবাব দেন।

-আন্টি একটু দোলাকে ডেকে দেওয়া যাবে৷ সজলের আবদার স্বরুপ কথায় রত্না চৌধুরী হাস্যজ্বল মুখে বলে দাঁড়িয়ে কেনো বাবা! বসো না। আমি দোলাকে ডেকে পাঠাচ্ছি। জেসমিন চৌধুরী মুখ বাকায় সজলকে দেখে। তানভীর আহমেদ সজলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে হঠাৎ এই সময় আসলে বাবা। আবার দোলাকে খুঁজছো এসে। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
– তানভীর আহমেদের কথায় সজল মুখটা মলিন করে বলে আসলে আঙ্কেল মামার শরীরটা ভালো নেই। হঠাৎ করেই সকাল সকাল অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি৷ দুপুরের দিকে অবস্থা বেশি খারাপ হলে রোকন দোলাকে ফোন দেয়। কিন্তু দোলাকে ফোনে পাইনা। এরপর আমাকে কল করে। মামাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। আমি এরপর থেকে দোলাকে ফোনে ট্রাই করছি”কিন্তু দোলার ফোন সুইচ অফ বলছে। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আসতে হলো। মামার ছোটখাটো একটা স্ট্রোক হয়। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন মোটামুটি ঠিক আছে। তবে বারবার শুধু দোলাকে দেখতে চাইছে। সজলের কথায় আতংকিত দৃষ্টি রাখে রত্না চৌধুরী আর তানভীর আহমেদ। চিন্তিত হয়ে বলে এখন আর কোনো সমস্যা নেই তো বাবা। দোলা যদি জানতে পারে তাহলে তো মন খারাপ করবে অনেক। আর ওর জন্য এটা একদম ঠিক হবে না এই সময়।

– এই সময় মানে? রত্না চৌধুরীর কথা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে সজল।
রত্না চৌধুরী মুচকি হেসে বলে তুমি যে মামা হতে চলেছো সজল বাবা। আমাদের দোলা মা হতে চলেছে। কথাটা শুনে সজলের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে আসে আনন্দে। অতঃপর সেখানে তানিয়া উপস্থিত হয়। সজলকে দেখে ভ্রু কুচকায় সে। সজল তানিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়। সেই হাসিতে তানিয়াও হেসে উঠে।

– তানিয়া দোলাকে ডেকে নিয়ে আয় তো মা। বল সজল এসেছে ওর সাথে দেখা করতে। রত্না চৌধুরীর কথায় তানিয়া সাবলীল ভাবে বলে আমি ডেকে নিয়ে আসছি ভাবিকে। এরপর তানিয়া সজলের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও উপরে চলে যায়।

– রুদ্র ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। এই দুদিন অফিসটা রাজই সামলাচ্ছে। হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে। রুদ্র স্বাভাবিকভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে গিয়ে আবছা চোখে ফোন স্ক্রিনে দোলার নাম্বার সো করতে দেখে। রুদ্র কপালে ভাঁজ ফেলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দোলার নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ নোটিফিকেশন।
– রুদ্র ম্যাসেজ চেক করতেই চমকে উঠে। অনুভূতিশূণ্য হয়ে কিছুক্ষণ ফোনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। মাথার মধ্যে ভনভন করে ঘুরছে। রুদ্র আবারও ম্যাসেজটা চেক দেয়। আর সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে! “আমি সামিরের সাথে থাকতে চাই। কারণ আমি সামিরকে ভীষণ ভালোবাসি। দয়া করে আপনি আমাদের মাঝে আসবেন না। আমি সামিরের কাছে স্ব-ইচ্ছায় চলে এসেছি। আমাকে বিরক্ত করবেন না আর”। রুদ্রর চোখ মুখে একটা ঘোর নেমে আসে। এর মধ্যে তানিয়া উপস্থিত হয় হাসি মুখে।
– ভাবি তোমাকে নিচে ডাকছে বলে তানিয়া ভেতরে তাকিয়ে দেখে রুদ্রর অস্বাভাবিক চেহারা। তানিয়া ভালো ভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে দোলাকে কোথাও পাইনা।
– ব্রো কি হয়েছে তোমার? আর ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় রুদ্র যেনো হতভম্ব হয়ে উঠে অবাক করা কন্ঠে বলে তার মানে দোলা বাড়ি নেই?
– হঠাৎ রুদ্রর এমন কথায় তানিয়া কপাল কুচকে বলে ভাবি বাড়ি নেই মানে। ভাবি আবার কোথায় যাবে?
– দোলা বাড়িতে নেই তানিয়া। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। তানিয়া যেনো হকচকিয়ে উঠে।
– কি হয়েছে ভাইয়া? ভাবি কোথায়? তানিয়ার কথায় রুদ্রর চেহারাটা মলিন হয়ে আসে। অসহায় চোখে তাকিয়ে ফোনটা বাড়িয়ে দেয় তানিয়ার দিকে।
– তানিয়া বিস্মিত হয়ে এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতেই ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে।

– এটা মিথ্যা! ভাবি এমনটা কখনোই করতে পারে না।
– আমিও এটাই বিশ্বাস করি তানিয়া। রুদ্রর মুখে এমন কথা শুনে তানিয়া আকাশ থেকে পড়ে এমন একটা লুক নিয়ে বলে ব্রো তোমার সন্দেহ হচ্ছে না ভাবির উপর?
– রুদ্র আহত দৃষ্টি রাখে শুধু।

— চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র মাথা নুয়ে কিছু একটা ভাবছে। রাজ,সজল, তানিয়া, রত্না চৌধুরী, তানভীর আহমেদ অস্থির হয়ে উঠছেন মাঝে মাঝে। কোনো ভাবান্তর নেই শুধু জেসমিন চৌধুরীর মধ্যে। হঠাৎ করে দোলা এমন সিদ্ধান্ত কেনো নেবে? আর দোলা বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছে এটা ভাবতেই বেশ বেগ পেতে হয় সবাইকে।

– রুদ্র! তোর সত্যি দোলাকে সন্দেহ হচ্ছে না? তোর মনে হচ্ছে না দোলা এইগুলো করতে পারে। রাজের কথায় রুদ্র বিরক্ত নিয়ে বলে কেনো এক কথা বারবার বলছিস রাজ? আমি বললাম তো! এইসব কিছু বিশ্বাস করিনা আমি৷ আমি যে ভুল আগে করেছি সেটা আবার পুনরায় করতে চাইনা। আমি দোলাকে আর অবিশ্বাস করবো না৷ কারণ আমি দোলাকে কথা দিয়েছি। আর দোলাও আমাকে কথা দিয়েছে ও কখনোই আমাকে ঠকাবে না। আমি ওর চোখে সেই ভরসা, বিশ্বাসের ছোঁয়া দেখেছি। তাই যতখন না দোলা আমার সামনে এসে নিজ মুখে এইগুলো বলছে ততখন আমি একটা শব্দও বিশ্বাস করবো না।।দোলা আমাকে ঠকাবে না আমি এতটুকু বুঝে গিয়েছি এতদিনে। রুদ্র কথায় সবার মধ্যে প্রশান্তি। অনেক ভালো লাগছে এত খারাপ সময়ের মধ্যেও।
– মিস্টার রাজ! আপনি বারবার এক কথা বলে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। আমার বোন দোষী? আমার বোন সত্যি ওই ছেলেটার সাথে… না না সজল আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লিজ। উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে রাজ।
– দেখুন! আমি জানিনা আপনি কেনো বলছেন এইসব কথা। কিন্তু আমি বলতে পারি আমার বোন এমন ধরনের কাজ কখনোই করবে না। দোলা অনেক ভালো একটা মেয়ে। আমার শুধু চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। কোথায় আছে? কেমন আছে আল্লাহ জানে। আর ওইদিকে মামাকে গিয়ে কি বলবো আমি? মামা তো দোলাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। সজল কপালে হাত ঠেকিয়ে নুয়ে পড়ে। সবার মধ্যে বিরহের ছাপ বিদ্যমান।

– আমি নিশ্চিত ভাবি কোনো না কোনো বিপদে পড়েছে। নাহলে ভাবি এমন কখনোই করবে না আমি বিশ্বাস করি। তানিয়া বলে দুঃখ বিলাপ করে।
— রোজা! হঠাৎ করে রুদ্র রোজার নাম করে। সবাই কৌতুহলী হয়ে তাকায় ওর দিকে।
– আমি জানি এইসব রোজার কাজ। ও দোলাকে সরিয়েছে কোনোভাবে। দোলার যদি কিছু হয় আমি ওকে ছাড়বো না। খু/ন করবো নিজ হাতে রাগে রুদ্রর শরীরের প্রতিটি রগ যেনো ফুলে-ফেঁপে উঠে। চোখ মুখে আগ্নেয়গিরির লাভা ফুটন্ত হয়ে।

— আচ্ছা রুদ্র” আমরা যদি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করি। তাহলে তো জানতে পারবো দোলা কখন বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। বা ওকে কেউ নিয়ে গেছে কি-না। রাজের কথায় রুদ্রর চোখ দুটো চকচক করে উঠে। এত দুঃচিন্তার মধ্যে এই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো সে। রুদ্র দ্রুত পায়ে উঠে ঘরে যায়। পেছনে যায় রাজ আর তানিয়া। বাকিরা আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে।

— সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করতেই রুদ্ররা দেখে যে দোলা কাউকে একটা ফোন করে। এরপর একটু পর বেরিয়ে যায়। দোলা কাকে ফোন করছে সেটা জুম করে দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তারা।
– আচ্ছা দোলা কোনো ভাবে সামিরের সাথে দেখা করতে যায়নি তো। রাজের কথায় তানিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলে একদম ঠিক বলেছো রাজ ভাইয়া। আমরা তো সামিরের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ভাইয়া তোমার মনে আছে ভাবি গতকাল বলেছিলো সে সামিরের সাথে দেখা করবে। কেনো এমন করেছে সামির তার জবাব চাই তার। আমরা তো বারণ করি ভাবিকে। তাহলে কি ভাবি আমাদের কিছু না বলে সত্যি সামিরের কাছে যায়। আর সেখানে গিয়েই কি কোনো বিপদ হয়। আমার খুব ভয় করছে ব্রো। ভাবির কোনো ক্ষতি করবে না তো সামির আতংকিত কন্ঠে বলে তানিয়া।

— কিছু হবে না দোলার। ওর গায়ে যদি একটা আচঁড়ও পড়ে তাহলে আমি কাউকে আস্ত রাখবো না। রেগে বলে রুদ্র।
– ওয়েট আমি আশাকে ফোন দিয়ে দেখি। ও কিছু জানে নাকি দোলার ব্যাপারে। রাজের কথায় সবাই অপেক্ষা করে। রাজ আশার নাম্বারে ফোন দিলে ফোন সুইচ অফ বলে। রাজ বেশ কয়েকবার ট্রাই করে কিন্তু বারবার একই কথা বলে।

– বুঝলাম না। আশার ফোনও বন্ধ কেনো। আচ্ছা আমি কি একবার যাবো ওর কাছে?
– কোনো দরকার নেই রাজ। আমি বুঝে গেছি এইসবের পেছনে কে আছে। সামির আর রোজা মিলে দোলাকে আটকে রেখেছে। রোজা যাওয়ার আগে দোলাকে থ্রেট দিয়ে যায় মনে আছে। আমাকে এখনি যেতে হবে রোজার কাছে৷ আজ এর শেষ দেখেই ছাড়বো বলে রুদ্র বেরিয়ে যেতে গেলে রাজ থামিয়ে দেয়।
– প্লিজ রাজ আমাকে থামাস না। দোলার কোনো ক্ষতি করার আগে আমাকে সেখানে যেতে হবে। দোলা একা নেই সেখানে৷ আমার বেবিও আছে ওর মধ্যে। আর আমি চাইনা আমার সন্তানের আর কোনো ক্ষতি হোক। করুণ কন্ঠে বলে রুদ্র।
– কারো কিছু হবে না রুদ্র৷ তুই মাথা ঠান্ডা করে কাজ কর। আমার কথাটা শুন। যদি রোজা দোলাকে কোনো ভাবে আটকে রাখে তাহলে দোলাকে পাওয়া সহজ হবে না। তাই আমাদের শান্ত মাথায় সবটা ভাবতে হবে।

– তুই ঠিক কি করতে চাইছিস? রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে। রাজ মুচকি হেসে বলে শুন আমার কথাটা।

— দোলা আর আশা বন্ধ রুমে ছটফট করছে। কীভাবে এখানে থেকে বেরুনো যায় সেটাই বুঝতে পারছে না।।তাছাড়া এখানে থেকে যাওয়ার মতো কোনো পথও নেই৷
– আমাদের সত্যি অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে দোলা। এইভাবে কাউকে কিছু না বলে আশাটা ঠিক হয়নি। সামির যে এতটা খারাপ সত্যি জানা ছিলো না।।আচ্ছা সামির যদি তোর বেবিটার কোনো ক্ষতি করে দেয় তাহলে?
– নাহ! এমন কিছু হবে না। আমার বেবির কিছু হতে দেবো না আমি। আমার প্রাণ থাকা পর্যন্ত ওর কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না উত্তেজিত হয়ে বলে দোলা।
– আমরা এখন কি করবো দোলা? সব প্রমাণ তো সামিরের কাছে৷ ফোন গুলো নিয়ে গেছে। না জানি কি হবে এরপর। আশা অনেক ভয় পেয়ে যায়।
– চিন্তা করিস না আশা। কিছু হবে না আমাদের। আমার জন্য তুইও বিপদে পড়ে গেলি। সরি রে৷ আমি সত্যি ভাবিনি সামির এমন কিছু করবে। তবে আমার বিশ্বাস রুদ্র ঠিক আসবে আমাকে খুঁজতে দেখিস। আমার বিশ্বাস উনি আমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে।

– রুদ্র কখনোই আসবে না দোলা জান। হঠাৎ কারো কথায় দোলা আর আশা চমকে উঠে।
দরজার সামনে সামির কে দেখে রাগে শরীর যেনো রিরি করে উঠে তাদের।
-আমাদের যেতে দাও সামির। তুমি কিন্তু অনেক বড় ভুল করছো। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। দোলা বলে দৃঢ় কন্ঠে। দোলার কথায় সামির হো হো করে হেসে উঠে। চোখ মুখ কুচকে তাকায় দোলা।

– আচ্ছা কোন ভরসায় এইগুলো বলছো তুমি দোলা? রুদ্রর ভরসায়? তোমার মনে হয় রুদ্র আসবে তোমাকে রক্ষা করতে। উমম! হ্যাঁ ঠিক ভেবেছো রুদ্র আসতো যদি তুমি রুদ্রকে এসএমএস দিয়ে না বলতে তুমি আমার সাথে থাকতে চাও। রুদ্র যেনো আমাদের মধ্যে না আসে। সামিরের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝে না দোলা। তাই বিস্ময় নিয়ে বলে মানে? কিসের এসএমএস?

– সামির মুখের হাসিটা চওড়া করে দোলার দিকে এগিয়ে এসে বলে, তোমার ফোন থেকে রুদ্রকে এসএমএস করে দিয়েছি। তুমি আমার সাথে থাকতে চাও। স্ব-ইচ্ছায় তুমি আমার কাছে চলে এসেছো।
– সামির! তুমি এতো নিচ জঘন্য মানুষ সত্যি আমি ভাবতে পারিনি।
– তাতে কি? এখন ভাবো! গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে সামির।
– দোলার শরীর জ্বলে উঠে সামিরের কথায়। ইচ্ছে করছে কয়েকটি চড় বসিয়ে দিতে। তবে একটু শান্তি আসে মনে।

– রুদ্র তোমার কাছে আর আসবে না। তাই রুদ্রর কথা ভুলে যাও। এখন শুধু আমার কথা ভাবো তুমি। রুদ্র তোমাকে আগেও ঘৃণা করতো এখনো করবে।

– “পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে” এটা নিশ্চয় জানো সামির। তোমার পতন খুব শীগ্রই তাই উড়ে নাও যত ইচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে মাটিতে থুবড়ে পড়বে বলে রাখলাম। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তুমি এতো আনন্দিত সেটা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷ রুদ্র আসবে আর আমাকে নিয়ে যাবে। এটাই আমার বিশ্বাস।

– আচ্ছা তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে থাকো তাতে আমার প্রবলেম নেই। এখন চলো।

– কোথায়? চমকে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা সামিরের কথায়।

– আমাকে বিয়ে করতে। সামির দোলার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বলে কথাটা।

চলবে….

-❌❌ কপি করা নিষেধ ❌❌