#তুমিময়_বসন্ত
৪২.
#Writer_Mousumi_Akter
কুয়াশার কম্বল গায়ে ঢেকে আছে সূর্য।সাদা কুয়াশার আবরণ মুড়ে আছে শহর।চারদিক কুয়াশাছন্ন সকালের শুভেচ্ছা দিতে অতিথি পাখি সোরগোল করছে সকাল থেকে।ঠান্ডায় ঘুম বেশ এটে বসেছে চোখে।কাল রাত আট টায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
।আয়াস অনেক বার আমাকে ডিস্টার্ব করেছে কিন্তু লাভ হয়নি।গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলাম আমি।শীতকাল টা মানেই ঘুমকাল আমার কাছে।
‘আয়াস কাল সন্ধায় বলে রেখেছিলো শীত পড়েছে ধরে তুমি আমায় ভীষণ ফাঁকি দাও।একটুও ভালবাসতে পারিনা,আদর করতে পারিনা।হে মহান শীত দয়া করিয়া বিদায় হয়ে আমার বউ কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।’
তার সে কথা আমি রাখতে পারিনি।ঘুম এলে পৃথিবীর কোনো হুঁশ থাকে না আমার।আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আয়াস আমাকে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আজ বোধহয় তার থেকে ছাড়া পাওয়া যাবেনা যেভাবে শক্ত বাঁধনে বেঁধেছে আমাকে।আমি তার কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিস করে কতবার ডাকলাম।একটু বেশী বেশী ডাকাডাকির ফলস্বরুপ সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে পেটের উপর মুখ গুজে সুয়ে পড়লো।পেটের উপর নাক ডুবিয়ে আবার ও গভীর ঘুমের রাজ্য মগ্ন সে।তার নিঃশ্বাস উপচে পেটের উপর পড়ছে।আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো ঘুমোচ্ছে।বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পরে ও আয়াস উঠলো না।আমার ডাক তার কানে যাচ্ছে কিনা জানিনা।অনেক বেশী ডাকের ফলস্বরূপ সে এবার কোমর জড়িয়ে ধরে আরো আয়েস করে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো।আয়াসের চুলের মধ্য বিলি কাটতে কাটতে বললাম,
‘ শুনছো?অনেক বেলা হয়েছে উঠতে হবেনা।’
আয়াস ঘুম ঘুম চোখে তার মাথায় চালানো আমার হাত টেনে নিয়ে তার বুকের উপর রেখে বললো,
‘বেবিডল একটুও ডিস্টার্ব করোনা।অনেকদিন পর একটা রোমান্টিক সকাল পেয়েছি।একটু উপভোগ করতে দাও।’
আয়াসের বুকে চিমটি কেটে বললাম,
‘ অনেক দিন পর কোথায় রোজ সকালেই এভাবে বিরক্ত করো তুমি।’
আয়াস আবার ও ঘুম ঘুম মাতাল করা কন্ঠে বললো,
‘আজকের সকাল আর একটু বেশী রোমান্টিক।’
‘কেনো?’
‘আজ ঠান্ডা বেশী।’
‘ঠান্ডার সাথে রোমাঞ্চ এর কি রিলেশন। ‘
‘রিলেশন আছে,ঠান্ডা বেশী পড়লে আমার তোমাকে বেশী করে আদর করতে ইচ্ছা করে।মন চায় দুনিয়ার সব ভ্যানিশ হয়ে যাক।শুধু আমি আর আমার বউ সারা দুনিয়া জুড়ে প্রেম করে বেড়ায়।দুনিয়াট প্রেম ভালবাসার জন্য উন্মুক্ত করা হোক।আমি আর আমার বউ যেখানে সেখানে যেনো একটু প্রেম করতে পারি।’
‘ইস!শখ কত।ছাড়ো আমায়।আজ শুক্রবার।পাঞ্জাবী ধুয়ে দিতে হবে।তুমি নামাজে যাবেনা।’
‘উহু!ছাড়াছাড়ি নেই।নামাজে টাইমলি চলে যাবো।এখন অন্য কিছুর টাইম।’
‘অসভ্য একটা।’
অসভ্য বলাতেই আয়াস অসভ্য একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালো।তারপর
পেটে ওষ্ট ডুবিয়ে অনেক্ষণ রইলো।তপ্ত নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়ছে পেটের উপর।ভয়ানক এক শিহরন খেলে গেলো শরীরের ভেতর।লোমকূপ ও দাঁড়িয়ে গেলো।হঠাত অন্য এক শিতলতা শরীরের মাঝে শিহরণ জাগালো।আমি দ্রুত আয়াস কে ধাক্কা মেরে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতেই আয়াস সাথে সাথে হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।আমার ভারী হয়ে আসা নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়ছে।আয়াস আমার পেটে তার হাত রাখলো।হাতের উপর থুতনি ঠেকিয়ে ভরপুর ঘুমে ডুবুডুবু চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।চোখের পলক ই পড়ছে না আয়াসের।বড্ড বেশী নেশা তার চোখে।সদ্য ঘুম থেকে উঠা প্রেমিকের চোখে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি দেখছি আমি।আমার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে হাতের আঙুল গুলো নিজের হাতের মধ্য নিয়ে দুষ্টুমি করছে আর মৃদু মৃদু হাসছে।চাইলেই কি তার শক্ত বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।তার ঠোঁটে জেগে ওঠা দুষ্টুমি আস্তে আস্তে ভালবাসার অলংকার হিসাবে সমস্ত শরীরে ছুইয়ে দিলো।আমিও হারিয়ে গেলাম তার ভালবাসার গহীনে গভীরে।
খানিক টা সময় পর আয়াসের বাঁধন থেকে মুক্তি পেয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হলাম।আয়াস টাওয়াল কাঁধে করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।ওর হাসি দেখে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম।মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই আয়াস আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি লজ্জায় ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিচু দিকে তাকিয়ে আছি।আয়াস আমার দুই হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে তাকালো আমার দিকে।আমার পায়ের পাতায় ওর একটা পা আলতো ভাবে রেখে বললো,
‘কোথায় পালাও তুমি?সারাদিন শুধু পালিয়ে বেড়াও কেনো?হাউ স্ট্রেইঞ্জ। বউ তুমি আমার। ‘
বলেই আমার গালে মুখে অগনিত চুমু খেতে খেতে বললো,
‘এই ভেজা চুল,লজ্জা মাখা গাল আমাকে উ/ ন্মা/দ করতেই যথেষ্ট।’
আমি লজ্জায় আয়াস কে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম।কুসুম ভাবির ফ্ল্যটের দিকে নজর গেলো।ভাবতেই খারাপ লাগছে ভাবির মতো নিষ্পাপ একটা মেয়ে যদি জানে তার না থাকায় তার স্বামি অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ট হয়েছে সহ্য করতে পারবে না নিশ্চয়ই। ইস!মানুষের জীবন কত বিচিত্র।খুব বিশ্বাসের মানুষ টাও একদিন বেঈমানি করে খুব নিষ্টুর ভাবে।আচ্ছা শরীর ই কি সব।মনের ক্ষুদার থেকে কি শরীরের ক্ষুদায় কষ্ট বেশী।ব্যাপার টা আজ ও বুঝলাম না সত্যি।কুসুম ভাবি আসবেন আর কিছুদিন পর।ভাবির একটা ছেলে ও হয়েছে।অথচ এই বাসায় কুসুম ভাবির হাজবেন্ড এসব করছে।আজ ভাইয়া নামাজে গেলে এই বেটিরে আমি ধরবো।খুব করেই ধরবো।এর বিচার হওয়া উচিত।একটা পরিবার এভাবে আমি ভেঙে যেতে দেখতে পারিনা। মানে কিছুতেই পারিনাহ।
সাড়ে বারোটা বাজে আয়াস কে আমি পাঞ্জাবীর বোতাম লাগিয়ে দিতে দিতে বললাম,
‘জিলেপি নিয়ে আসবা কিন্তু।মসজিদ এর টা খেতে ভাললাগে।’
আয়াস আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ওকে ম্যাডাম আনবো।’
এরই মাঝে কুসুম ভাবির বাসার কাজের মহিলা রেনুকা উঁকি মেরে বললো,
‘আসবো ভাইজান।’
‘আয়াস হাসি মুখে বললো,এসো রেনুকা।’
আমি ভয়ানক রাগি মুডে আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি।আয়াস আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
‘তোমার কষ্ট হয় তাই।পাশের ফ্ল্যাটেই যখন কাজ করে তোমার ও কাজ করে দিবে।’
বুকে হাত বেঁধে অগ্নি চোখে আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘তোমাকে বলেছি আমি কাজের মহিলা লাগবে।’
‘আশ্চর্য তুমি বলবা কেনো?তোমার কষ্ট হয় আমিতো বুঝি।’
‘আমার নাকি তোমার কাজের মহিলার প্রয়োজন ঠিক বুঝছিনা আয়াস।’
আয়াস ভ্যাবাচেকা খেলো আমার কথা শুনে।আমি কাজের মহিলার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘এই হ্যালো আপনি?হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?এটা আমার বাসা।আমার বাসায় প্রবেশ করতে হলে আমার পারমিশন নিতে হবে।আপনি ওর পারমিশন নিলেন কেনো হুয়াই। পুরুষ মানুষ দেখলে তার গায়ে পড়ে কথা বলতে হয় বুঝি।এই মহিলা বারবার ওর দিকে তাকাস ক্যান।আমার দিকে তাকা আর আমার কথার উত্তর দে।যদি আয়াসের সাথে আর কখনো ভুলেও কথা বলিস আমি কি করবো তোর আইডিয়া ও নেই।’
‘আফা আপনি এমন করতাছেন ক্যানো?
‘কেমন করবো।এই চরিত্রহীন মহিলা।অন্যর জামাই নিয়ে ইটিস পিটিস করিস ক্যান।ক্যান করিস।শরীরে খুব জ্বালা তাইনা?বিয়ে করিস না ক্যান তাইলে।বিয়ে না করে অন্যর বিবাহিত জামাই নিয়ে ইটিস পিটিস।তোর বিয়ে করা লাগবে।আর আমি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো সবার আগে।শোন বজ্জাত মহিলা তোরা পুরুষ মানুষের মাঝে কামনার সৃষ্টি করিস।আর তখন শ/য়/তা/ন ভর করে পুরুষ মানুষের মাঝে।আর তোদের মায়াজালে ফেঁসে যায়।পৃথিবীতে নারী জাতীয় কারণে যত ঘর সংসার ভেঙেছে তার বেশীরভাগ দোষ এইসব দুঃচরিত্রা মহিলা।এক মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কষ্টের কারণ কিভাবে হস।মানুষ না কি তোরা।কারো স্বামির প্রেমিকা হওয়া বুঝি খুব গর্বের কাজ।আমার বাসা থেকে বের হ। এক্ষুণি বের হ।’
‘ভাই আপনেই তো ডাকছেন। আফা এমন ব্যবহার করতাসে ক্যান।’
‘আবার ভাই।এই মহিলা এই তুই কি পুরুষ মানুষের সাথে ছাড়া কথা বলতে পারিস না।তোর সাথে আমার এমনিতেও কথা আছে।এখন বের হ আগে।’
রেনুকার সাথে এমন ব্যবহারের কোনো কারন ই আয়াস খুজে বের করতে পারলো না।আয়াস হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে?….