তুমি আমার পর্ব-২৫

0
653

#তুমি_আমার
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
#২৫_পর্ব

শান্ত নীরব পরিবেশ বিদ্যমান গম্ভীর মুখে আছে সিরাত।আবেশের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি।সিরাত এবার অশনি কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘এবার বলো তোমার সাথে ঠিক কি হয়েছে।পাশাপাশি শুয়ে থাকলেই যে খারাপ কিছু ঘটবে তেমন তো কোনো কারণ নেই।হতে পারে এমনিতেই শুয়ে ছিলে এটা খুব একটা বড় ইস্যু নয়’।

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো অশনি।ওর মা দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বললেন,’এসব কি বলছো তুমি।শোন সবাই দেখেছে ওদের অবস্থা তাই এটাকে মিথ্যা প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা করো না’।সিরাত হাসলো।হেসে হেসে বললো,

‘এর আগেরবারও তো সেইম কাহিনী হয়েছিলো।কিন্তু আমি তো জানি আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি।ইভেন উনি আমি একই রুমে সেটাও টের পাইনি’।

‘ সিরাত তুমি একটা মেয়ে।মেয়ে হয়ে মেয়েকে এভাবে দেষারোপ করতে পারো না’।

‘অবশ্যই পারি।না পারার কি আছে।আচ্ছা আমার কয়েকটা প্রশ্নের উওর দাও তো’।ঘাবড়ে যায় অশনি।তবুও স্বাভাবিক ভাবে বলে,

‘কি প্রশ্ন বলো’?

‘তোমার সাথে ঠিক কি হয়েছে?তুমি আবেশের রুমে গিয়েছিলে কেন?ওখানে তো উনার একার থাকার কথা তাহলে সেখানে তুমি কেন? যদি তোমার সাথে আমার স্বামী বাজে কিছু করে তাতে তুমি সম্মতি দিলে কেন যেখানে তুমি জানো সে বিবাহিত।এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।ইভেন এটাও জানো আমার প্রতি তার ফিলিংস কি?আরেকটা কথা তোমার সাথে অসভ্যতামি করেছে তার প্রুফ কি’?শুকনো কয়েকটা ঢোক গিললো অশনি।ওর মাও ঘাবড়ে গেছেন বুঝা যাচ্ছে বেশ।আবেশের বাবাও সিরাতের সাথে একমত।বাধ্য হয়ে মুখ খুলতে হলো তাকে।ন্যাকা কান্না করে বললো,

‘যদিও সকলের সামনে এসব বলতে আমার লজ্জা লাগছে তবুও বলবো বলতে হবে আমায় কারণ সিরাত আমায় অবিশ্বাস করছে।এই অবিশ্বাস দূর করতে আমাকে বলতে হবে।।আমি যখন রুমে যাচ্ছিলাম তখন রাত আনুমানিক একটা হবে।তখন হঠাৎ আমার হাত ধরে আমাকে একটানে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দেয় আবেশ।আচমকা এমন হওয়ায় আমি বিস্মিত হই।এরপর আমাকে নানা ভাবে বুঝায়।আমি বারণ করলে শোনে না ততক্ষণে জোর করতে শুরু করে।তারপর বলে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে তোমাকে ঝামেলায় পরে বিয়ে করেছে।সবাইকে বুঝিয়ে তোমায় ছেড়ে দেবে।আমায় ঘরে তুলবে।বলতে দ্বিধা নেই আমিও ওর প্রতি উইক তাই মানাও করতে পারি নাই।আর যেখানে ও তোমাকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেখানে তো অবিশ্বাসের প্রশ্নই উঠে না।সারারাত আমার উপর টর্চার করেছে।একটুও ঘুমাতে পারিনি।ভোরে আমাকে ছেড়ে শুয়ে পরে তখন আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।তাই সকালের এত কাহিনী শুনেও কানে যায় নি।তাছাড়া এসবের অসংখ্য চিন্হ পাবে আমার শরীরে।গলার দিকটা বের করে দেখিয়ে বলে ওখানে কামড়ের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এরপর ফুঁপিয়ে বললো,

‘এবারও বলবে এসব মিথ্যা।একটা মেয়ের এই পরিস্থিতিতেও তাকে বিশ্বাস করছো না’।ওর মা উওেজিত কন্ঠে বলেন,’আর এক মূহুর্ত নয় এবার পুলিশ ষ্টেশন যাব আমরা।এখানে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখতে পারব না’।

‘কুল একটু পর যাবেন জাস্ট ওয়েট’।সিরাত নতুন কাজের মেয়ে মর্জিনাকে ডেকে পাঠায়।বিয়ে উপলক্ষ্যে তাকে এখানে আনা হয়েছে।তাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে চায় সে।মর্জিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আচ্ছা খালা কালকে আবেশ কখন ঘুমিয়েছে?লাস্ট তোমাকে আমি দুটোর দিকে উনার ঘরে পাঠিয়েছিলাম কারণ তিনি কল ধরছিলেন না জরুরি প্রয়োজনে তোমাকে পাঠিয়ে ছিলাম উনার রুমে তখন কোথায় ছিলো সে’?

‘ছোট ভাই ঘুমাইতাছিলেন তাই আমি উনার ঘুম ভাঙাই নাই।দুইবার ডাকছি উঠেন নাই দেইক্কা চইলা যাই।কই তহন তো তারে একাই দেখলাম।এরপর ভোরে উনার রুম পরিষ্কার করতে গিয়াও একইভাবে ঘুমাতে দেখছি।আমি কাজ করে আসার সময়ও দেইখা আইলাম উনি একলা ঘুমাইতাছেন।যা হওয়ার পরে হইছে’।

সবাই থমকে গেলো।অপরাধীর ন্যায় আবেশের দিকে তাকালেন মিঃ খান।উনি নিজের ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারেন নি।অশনির মা চিৎকার করে বললেন,

‘এই দুই পয়সার চাকরানি বল কত টাকায় বিক্রি হয়ে এসব মিথ্যা আজগুবি কথা বলছিস।আজ তোকে আমি ওকে মারতে উদ্যত হলেই আবেশ সামনে আসে দাঁড়ায় উনার।চুপ রাঙ্গাতেই পিছিয়ে যান তিনি।এবার আবেশ বলে,

‘আজ যদি সিরাত আমায় বিশ্বাস না করতো তাহলে কখনও আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইতাম না।কারণ যেখানে আমার বাবা মা ভাই আমাকে বিশ্বাস করেনি সেখানে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর কিছু ছিলো না।কিন্তু ভাবছি এখন প্রয়োজন।দুই টাকার চাকরানি না হয় বিক্রি হয়ে গেছে।কিন্তু এখন যেটা দেখাবো সেটা ত মিথ্যা নয়’।

সবাই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে।আবেশ কি দেখাবে সেটা দেখতে উৎসুক সবাই।আবেশ সিসি টিভির ফুটেজ দেখায় যেটা দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া।একটা মেয়ে নিজের ইজ্জত নিয়ে এতটা নোংরামু করতে পারে ভাবতেও পারে নি কেউ।ফুটেজে দেখা যায় আবেশ ঘুমিয়ে আছে তখন অশনি আর ওর মা তার রুমে প্রবেশ করে।অশনির পরনে একটি বড় টাওয়াল পেঁচানো।ওর মা একটি রুমাল আবেশের নাকে চেপে ধরে কিছুক্ষণেই নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় তার।এরপর নিজেই ওর কাথার নিচে ঢুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।ওর কয়েক মিনিটের পরই চিৎকার চেঁচামিচি করে সবাইকে জড়ো করেন অশনির মা।আবেশ ফুটেজটি বন্ধ করে বললো,

‘সবাই ভাবছো তো আমার ঘরে সিসি টিভি কেন?আসলে সিরাত আর আমাকে কেন্দ্র করে কদিন আগে যেই ঘটনা ঘটেছিল সেখানে আমার আর সিরাতের অবস্থা দেখে আমার সন্দেহ হয়।কারণ একই বিছানায় ঘুমুনো অস্বাভাবিক ছিল না অস্বাভাবিক ছিল আমার আর সিরাতের মুখভঙ্গি।যা দেখে সবাই ভেবে নিয়েছিলো আমাদের মধ্যে অনৈতিক কিছু ঘটেছে।কিন্তু আমরা তো জানি আমরা সৎ।তখনই বুঝে গেছি কেউ ইচ্ছে করে এসব করেছে তাই সকলের অগোচরে ক্যামেরা ফিট করি’।

সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অশনি আর তার মায়ের দিকে।মুখে কোনোকথা নেই দুজনের।মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।মিঃ খান প্রথমে অশনি এবং পরে ওর মাকে ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন।ধরা গলায় বললেন,

‘তোদের মা মেয়ের নোংরামিকে বিশ্বাস করে আমি আমার সোনার টুকরো ছেলেকে কিছু সময়ের জন্য অবিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।ছিহ!তুই এত নিচ জঘন্য’।সকলে যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।আবিদ ভাইকে জড়িয়ে ধরে নিজের ভুল স্বীকার করলো।আবেশের মা ছেলের কপালে চুমো খেয়ে বললেন,

‘ভুল বুঝিস না আমাদের।রাগও করিস না।দেখ পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো।এসব দেখার পর মনে হয়েছিলো হয়তো তুই খারাপ হয়ে গেছিস।আবার কোথাও একটা আশা ছিলো আমার ছেলে এমন নয়’।আবেশ মাকে জড়িয়ে বললো,’রাগ করিনি মা।এই পরিস্থিতি তে বিশ্বাস রাখা টাফ।আমি জানিনা সিরাত কি করে বিশ্বাস রাখতে পারলো মনে মনে’।

সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান।অনেকে অনেক কথা বলছে অশনি অশনির মাকে।মিসেস খান বললেন,

‘এই অশনি তোমাকে ত নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেছি তাহলে আমাদের সাথে এমন কেন করলে।আর যদি এটাই ইচ্ছা ছিলো তাহলে সিরাত আবেশকে ফাঁসালে কেন’?চিৎকার করে উঠলো অশনির মা,

‘তোমাদের মান সম্মান ধুলোয় মেশানোর জন্য এসব করেছি।কারণ এক সময় আমি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রেগন্যান্ট হয়েছিলাম বলে তোমরা আমাদের মেনে নাও নি।কোনোমতে অশনির বাবার সাথে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো।তখন বলেছো আমি তোমাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশাচ্ছি। তোমার বাসায় পর্যন্ত আসতে দাও নি। অনেক চেষ্টা করেছি সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে কিন্তু পারিনি।অতপর সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করিনি।প্রথমবার সিরাতকে ইউজ করি কারণ সিরাত আরু বেষ্টফ্রেন্ড।অন্যদিকে সিয়াম আর আবেশ।তাই এখানে ভুল বুঝাবুঝি হলে চারটি সম্পর্ক নষ্ট হবে।কথাগুলো বাইরে লিক হবেই হবে।তখন তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। তার উপর তোমার ছেলে টিচার এই ট্যাগটার জন্য আরও সহজ হচ্ছিলো সব।এতে লাভ আমারই।কিন্তু বুঝতে পারিনি তোমরা ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে।আমি চেয়েছি মুখ লুকাতে তোমরা হন্যে হয়ে কনে খুঁজবে যদি তখন অবস্থা বেগতিক হয় অশনিকে দেখিয়ে দেবো। বিয়ে হয়ে যাবে আর তোমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবে আমার কাছে।আর আজকের করার কারণও সেইম।যদি ওদের না মানতে তাহলে নিজে বাইরে জানাতাম।তোমার ছেলের ক্যারিয়ার তোমার সম্মান সব নষ্ট করে দিতাম কিন্তু এই মেয়েটার জন্য সব ভেস্তে গেলো।

এক দমে কথাগুলে বলে বললেন তিনি।সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মানুষ কতটা নোংরা হলে এসব ভাবতে পারে ভেবেই গা গুলাচ্ছে সিরাতের।আবেশের বাবা শুধু নিজের বোনের দিকে স্থির চাহনী নিক্ষেপ করে আছে।এটা তার বোন।হ্যাঁ যখন ওর ঘটনাটা ঘটে তখন সবাই রেগে ছিলো এটাই স্বাভাবিক কিন্ত এত বছর পর নিজের ভুল নয় বুঝে প্রতিশোধের নেশায় এমনটা করতে পারলো।মানুষ ঠিকই বলে,কয়লা ধুলে কখনও ময়লা যায় না।

আরো বড় করে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু লিখতে গিয়ে সেই ইচ্ছা মরে গেছে।আগামীকাল চেষ্টা করব বড় করে দেওয়ার।সরি দুদিন গল্প না দেওয়ার জন্য।হ্যাপি রিডিং

#চলবে