তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-১

0
160

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

কবুল বলার ঠিক আগ মুহুর্তে মাথা ঘরে পড়ে যায় নববধূ। অবস্থা বেগতিক দেখে সাথে সাথে হাসপাতালে কল দেয় নাহিদ সাহেব। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তারের আগমন ঘটে। আর ডাক্তার ভালো ভাবে পরিক্ষা করে মুখে একটা হাসি নিয়ে বলল,

— কংগ্রাচুলেশনস নাহিদ সাহেব। আপনি নানা হতে চলছেন। মিষ্টি খাওয়ান সবাইকে।

ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আর সবার মুখে একটা বাক্য, বিয়ের আগে এই মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয় কীভাবে? যে মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি সে প্রেগন্যান্ট! সবাই এসব নিয়ে একজন আরেক জনের সাথে কথা বলছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন নাহিদ। সে কিছুতেই এসব বিশ্বাস করতে পারছেনা। আদিবা তো এমন মেয়ে নই যে সে অন্য কারোর সাথে এমন সম্পর্কে লিপ্ত হবে।

এদিকে আদিবা কোনো কথা বলছেনা, সে ভয়ে চুপসে আছে। ছেলের বাবা রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,

— নাহিদ সাহেব আপনি একজন পাক্কা খিলাড়ী, মানতেই হবে। আপনি না বলছিলেন আপনার মেয়ে কোনো ছেলের সাথে কথা অব্দি বলেনা, তাহলে এখন এসব কি? নিজের চরি*ত্রহীন মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলেন। যাইহোক, কোনো ভাবেই আপনার সাথে সম্পর্ক রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নই। সবাই চল।

এই কথা বলে সবাই চলে যেতে চাইলে নাহিদ সবাইকে আঁটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। বিয়ে বাড়িটা হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায়।

নাহিদ সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে যায় আদিবার সামনে। আদিবার আম্মু নাজমা বেগম আদিবার কাছে এসে বলল,

— আদিবা এসব কি? এগুলোর মানে কি? তুই এমন একটা জঘন্য কাজ কীভাবে করতে পারলি? তোর কি একবার আমাদের কথা মনে পড়েনি? এখন আমরা এই সমাজে মুখ দেখাবো কি করে?

আদিবা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে মাথা নিচু করে। আদিবার নিস্তব্ধতা দেখে নাহিদ সাহেব আদিবকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আদিবা তোর এই সন্তানের বাবা কে? আমাকে বল। আমি এক্ষনি সেই ছেলেকে এখানে নিয়ে আসবো। তুই শুধু একবার ছেলেটার নাম বল।

— বাবা আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য আজ সবার সামনে তোমাদের মাথা নিচু হয়ে গিয়েছে। আমি আর এই জীবন রাখতে চাইনা।

এই কথা বলে আদিবা উঠে তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আদিবার এমন অবস্থা দেখে সবাই খুব ভয় পেয়ে যায়। নাহিদ সাহেব দরজার সামনে গিয়ে আদিবকে ডাকেন, কিন্তু ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স আসেনা। এতে সবাই খুব বেশি ভয় পেয়ে যায়। আর নাহিদ সাহেব সাথে সাথে জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতর গিয়ে দেখে আদিবা গলায় ফাঁ*সি দেওয়ার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে নাহিদ আদিবাকে সেখান থেকে নামিয়ে আদিবার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

— এসব তুই কি শুরু করলি? তুই আমার এক মাত্র মেয়ে। তোর কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হতো?

আদিবা অঝোরে কান্না করছে। তখনই আদিবার মাথায় হাত রাখেন জয়নাল সাহেব । জয়নাল সাহেব নাহিদে সাহেবের বন্ধু।

জয়নাল সাহেব আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আত্মহত্যা কোনো কিছুর সমাধান নই। তুমি আমাকে সব বলো। তোমাকে কেউ কিছু বলবেনা। আমি আছি তোমার পাশে। তোমার বাবাও তোমাকে কিছু বলবেনা। আমরা অবশ্যই এর সমাধান বের করব।

আদিবা কান্না করতে করতে বলল,

— আংকেল একটা ছেলে সাথে আমার দু’বছর সম্পর্ক ছিল। ছেলে আমার সাথে প্রতারণা করছে। একদিন রাতে আমি প্রচুর ড্রিংকস করি। তারপর কি হয় আমি জানিনা। হঠাৎ করে ছেলেটা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারপর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। আমি ভয়ে কাওকে কিছুই আর বলতে পারলাম না।

এই কথা বলে আদিবা কান্না করতে শুরু করে। এবার জয়নাল সাহেব নাহিদ সাহেবকে নিয়ে অন্য একটা রুমে চলে যায়। দু’জন রুমে গিয়ে বসে থাকে। নাহিদ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছে।

— দেখ নাহিদ যা হওয়ার হয়েছে এসব নিয়ে পড়ে থাকলে তো হবে না। কিছু একটা তো করতে হবে।

— কি করব বল? আমার কি করার আছে? লজ্জায় আমার তো মাথা কাঁটা যাচ্ছে। এই মেয়ের তো কখনো বিয়ে দিতে পারবোনা।

— কে বলছে বিয়ে দিতে পারবিনা?

— এসব জানার পরে কে বিয়ে করবে আদিবাকে?

— কে আবার, আমার ছেলে আদনান করবে।

— কি বলছিস তুই? আদনান!

— হ্যাঁ, আর আদনান কখনো আমার কথার অমত করবেনা।

— কিন্তু বন্ধু!

— আর কোনো কিন্তু নেই। আমি বেঁচে থাকতে আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হতে আমি দিতে পারিনা।

— আদনান সব কিছু জানার পরেও আদিবাকে বিয়ে করবে?

— অবশ্যই করবে।

এই কথা বলে জয়নাল সাহেব আদনানের নাম্বারে ফোন দেয়।

কয়েকটি রিং পড়ার পরে আদনান ফোন রিসিভ করে।

— হ্যালো!

— আদনান তুই কোথায়?

— ভার্সিটি থেকে মাত্র বাসায় এলাম।

— আমি তোকে একটা লোকেশন দিচ্ছি সেখানে এক্ষুনি চলে আয়।

— তুমি ঠিক আছো তো আব্বু?

— হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি আয়।

এই কথা বলে জয়নাল ফোন কেটে দিয়ে লোকেশন পাঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান সেখানে চলে আসে। আদনান বাড়ির সামনে এসে জয়নাল সাহেবকে ফোন দেয়।

— আব্বু আমি তো চলে আসছি। এখনে তো মনে হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে।

— তুই দাঁড়া আমি আসছি।

এবার জয়নাল সাহেব আদনানের কাছে চলে যায়। আর আদনানকে সাথে নিয়ে একটা রুমে চলে যায়।

— আব্বু কি হইছে? আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে আশার কারণ কি?

— এখনে অনেক বড় একটা ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।

— কি হইছে?

এবার জয়নাল সাহেব আদনানের কাছে সব ঘটনা খুলে বলল।

— আব্বু তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি কেন এই মেয়েকে বিয়ে করব? আর সব থেকে বড় কথা আরেক জনের বাচ্চার দ্বায়িত্ব আমাকেই কেন নিতে হবে?

— দেখ বাবা এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মেয়েটা অলরেডি একবার সুই*সাইড করার চেষ্টা করছে। আমার বন্ধু ও কাওকে মুখ দেখাতে পারছেনা। আমি ওঁকে বড় মুখ করে বলছি। এখন তোর বাবার সম্মান তোর হাতে।

আদনান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— আম্মুকে বলছ এই ব্যাপারে?

— নাহ। বাসায় গিয়ে সব বলব।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

জয়নাল সাহেব আদনানকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। জয়নাল সাহেব ইতিমধ্যে তার স্ত্রীকে বিয়ের কথা জানিয়ে দেয়। উনিও আর অমত করলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পুর্ণ হয়। এবার আদিবাকে নিয়ে চলে যাওয়া হয় আদনানের বাসায়। নতুন বউকে ভালো ভাবেই বরণ করে ঘরে তুলেন আদনানের আম্মু রাবেয়া বেগম।

আদনান চলে যায় ছাদের উপরে। হঠাৎ করে এতো কিছু হয়ে যাবে যা কল্পনাও করতে পারছেনা আদনান। সব কিছুই অদ্ভুত ভাবে হয়ে গেলো। তখনই ভাইয়া ডাক শুনে আদনান পিছনে তাকিয়ে দেখে তার ছোট বোন রাইসা দাঁড়িয়ে আছে।

— কিরে ভাইয়া তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে? ভাবি তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। তাড়াতাড়ি চল।

রাইসা আদনানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। তারপর দরজার সামনে নিয়ে যায়। এবার রাইসা আদনানকে রুমের ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে রাইসা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আদনান ও দরজা বন্ধ করে দিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে আদিবা একটা বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আদনান বেশ কয়েকবার শব্দ করলেও আদিবা কোনো নড়াচড়া নেই।

এবার আদনান খাটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

— বাড়িতে কেউ বলে দেয়নি বাসর ঘরে স্বামীকে সালাম করতে হয়?

আদিবা তাও কোনো কথা বললনা। আদনান আবার বলল — কানেও সমস্যা আছে নাকি?

এই কথা বলে আদনান খাটের উপরে বসতেই আদিবা একটা চাকু বের করে আদনানের দিকে তাক করে ধরে।

চাকু দেখে আদনান খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আদিবাও দাঁড়িয়ে তার শাড়ির আঁচল ভালো ভাবে কোমরে ঘুছিয়ে আদনানের দিকে এগিয়ে আসে। আদনান ভয়ে পিছনে যেতে থাকে।

— কি করছেন এসব? এটা সরিয়ে রাখুন। বাসর রাতে স্বামী হত্যা করবেন নাকি?

— কিহ! কে কার স্বামী?

— আমি আপনার স্বামী।

— তুই আমার স্বামী? শালা তোকে আমি খু*ন করব। তোর জন্য আমার সব প্ল্যান মাটি হয়ে গেলো।

— প্ল্যান মানে? কিসের প্ল্যান?

— এইযে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার প্ল্যান। তুই মাঝখান দিয়ে এসে আমার প্ল্যানের বারোটা বাজিয়ে দিলি। আইছে আমার মানবতার ফেরিওয়ালা। আমার ইচ্ছে করছে এই চাকুটা তোর পেটে চালান করে দেই।

— আপনি কি তাহলে প্রেগন্যান্ট না?

— নাহ। সব কিছুই আমার একটা প্ল্যান ছিলো।

— বিয়েতে রাজি না আপনার বাবাকে বললেই হতো। এতো কিছুর তো দরকার ছিলনা।

— বলছিলাম অনেকবার।

— আচ্ছা যা হয়েছে বাদ দেন। আমাদের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর তো কিছু করার নেই। চলুন আমরা বাসরটা শুরু করি।

— কীসের বাসর! তোকে আমি কখনও স্বামী হিসেবে মানি না। শুন তুই আমাকে কালি ডিভোর্স দিবি। কথাটা যেনো মনে থাকে। আর তুই এই রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

— রুমের দরজা বাহিরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।

— তাহলে সোফায় গিয়ে ঘুমা। যদি ভুল করেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করিস, তাহলে চাকুটা দেখছিস তো? তোর পেটে চালান করে দেব।

আদনান কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবা আদনানের দিকে একটা বালিশ ছুড়ে দিয়ে সে খাটের উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আদনান সোফায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে।

— হায়রে কপাল! মানুষ বিয়ে করলে বাসর রাতে বউয়ের ভালোবাসা পায় আর আমার কপাল দেখো? খাটেও যায়গা হয়নি। আমি মনে হয় এক মাত্র স্বামী, যার স্ত্রী বাসর রাতে ডিভোর্স চেয়েছে।

এসব ভাবতে ভাবতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে আদনান। কারোর ডাকে আদনানের ঘুম ভেঙে যায়। আর আদনান চোখ খুলে তাকাতেই সে হতবাক হয়ে যায়।

চলবে?