#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
ব্যাস আম্মু অনেক বলে ফেলেছো। এতো বছর ধরে তোমাদের এক অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আমার তো মনে হয় আব্বু আমার জন্য নয় তোমার জন্য এই বাসা থেকে চলে গেছে। তোমার মতো একটা মানুষের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। আব্বু এই বাসা থেকে চলে গিয়ে ভালোই করেছে। নাহলে তোমার মতো একটা মহিলার সাথে সংসার করে আব্বুর জীবন নরক হয়ে যেতো।
কণা। ( কিছুটা চিৎকার করে)
আম্মু তুমি চিৎকার করে আজকে আমাকে থামাতে পারবে না। অনেক সহ্য করেছি তোমাদের অত্যাচার আর না। তোমরা বলো মেয়ে হয়েছে বলে আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আব্বুর সম্পর্কে আমি যতটুকু শুনেছি তার মাঝে এইটুকু বুঝেছি যে আব্বু ছেলের থেকে মেয়ে বেশি পছন্দ। ফুফির কাছে শুনেছি, আব্বু অহিকে কোলে নিয়ে বলেছিল, আমারও এমন কিউট একটা মেয়ে হবে। তাহলে আব্বু কী করে আমি হয়েছি শুনে চলে যেতে পারে? তোমাকে এসব কথা বলাই বেকার। কথায় আছে না কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। তাই তোমাকে আমি যতই বুঝায় না কেনো তোমার ভেতরের মনোভাব কখনো চেইন্জ হবে না।
কণার কথা শুনে কণার মা চুপ করে যায়। কণার এমন প্রতিবাদী রূপ দেখে সবাই অবাক। কেউ ভাবতেই পারছে না শান্তশিষ্ট মেয়ে এতগুলো কথা বলছে।
কণা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের কোণের জলটা মুছে নেয়। কণা মনে মনে ধীর প্রতিঙ্গা করছে আজ থেকে সে আর চোখের জল ফেলবে না। কারোর কথায় বা কারোর অবহেলায় এক ফোটা চোখের জলও ফেলবে না। কেউ তাকে অপমান করতে আসলে সে মুখ বুঁজে সহ্য না করে অপমানের যোগ্য জবাব দিয়ে দিবে। শাড়ির আঁচল টেনে কাধটা ভালো করে ঢেকে নেয়। অমিতের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য যখন ছুটাছুটি করছিল তখন কাধের দিকে ব্লাউজ কিছুটা ছিড়ে গিয়েছিল। অহি এগিয়ে এসে বলে,
কণা এই জানোয়ারকে ( অমিতকে উদ্দেশ্য করে বলে ) এখন কী করবি?
জাস্ট স্টপ ইট। আমার ভাইকে একদম জানোয়ার বলবি না। আমার ভাই এমন কিছু করতে পারে তা আমি বিশ্বাস করি না। ( ছোঁয়া চিৎকার করে বলে)
ক্যানরে তোর ভাই কী দুধে ধুয়া তুলসি পাতা নাকি যে এমন কিছু করতে পারে না। তুই যেমন চরিত্রহীন তোর ভাই তো তার ডাবল হবে। কারণ ছোটরাই তো বড়দের কাছ থেকেই শিখে।
অহি তুমি চুপ করো। তুমি ছোট ছোটর মতো থাকো। বড়দের মাঝে কথা বলো না।
আব্বু কেনো অহি চুপ থাকবে। অহি যথেষ্ট বড় হয়েছে। অহিরও কথা বলার অধিকার আছে। অহি ছোট হলে কণাতো আরো ছোট। তাহলে ছোট একটা মেয়ের সাথে যখন এমন জঘন্য একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো তখন তোমরা কোথায় ছিলে?
আমি চুপ থাকবো না। আচ্ছা আব্বু কণার সাথে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা যদি আমার সাথে হতো। তখনো কী তুমি এমন ভাবে চুপ থাকতে?
দুই ছেলে মেয়ের কথা শুনে চুপ করে যান তিশান আহম্মেদ। এখন ঠিক কী বলা উচিত তা বুঝতে পারছে না তিশান আহম্মেদ? তাই তিনি মনে করলেন এখন চুপ থাকায় শ্রেয়।
অমিতের বাবা-মা চুপ করে আছে। তারা এখন কথা বললে ব্যাপারটা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে। উনারা তো ভেবেছিলেন অমিতের সাথে কণার বিয়ে দিবে। কিন্তু তার আগেই যে তাদের ছেলে এমন একটা অপকর্ম করবেন সেটা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। তাদের প্লেনে জল ঢেলে দিল তাদের অপদার্থ ছেলে। এখন তাদের একমাত্র ভরসা তাদের ছোট ছেলে। ছোট ছেলের সাথে কণার বিয়ে পাকাপোক্ত করতে হলে এখন কণাকে সাপোর্ট করতে হবে। রেশমি রহমান ন্যাকা কান্না করে বলতে শুরু করেন,
আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে যে তুই আমার ছেলে। কণা তো তোর বোন ছিল কী করে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে চেয়েছিলি? তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না।
মা। ( অমিত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে)
একদম তুই আমাকে মা বলে ডাকবি না। আজ থেকে তুই আমাদের কাছে মৃত। আজকের পর থেকে আমাদের দুই সন্তান ছোঁয়া আর জিয়ান ( রেশমি রহমান আর হেলাল রহমানের ছোট ছেলে)। জিয়ান কথা শুনে যদি আমরা আরো আগে তোর লাগাম টানতাম তাহলে আজকে তোর এমন অধঃপতন হতো না।
কণা পুলিশকে ফোন করে। কিছুক্ষণের মাঝে পুলিশ চলে আসে। পুলিশ এসে অমিতকে ধরে নিয়ে যায়। অমিতকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ছোঁয়া বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে কণাকে শাসিয়ে যায় যে, কণাকে সে দেখে নিবে। কিন্তু ছোঁয়ার এমন কথায় কণার মাঝে কোনো প্রভাব ফেলেনি। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ছোঁয়া যাওয়ার পর পরই রেশমি রহমান এবং হেলাল রহমান ও বাসা থেকে বার হয়ে যায়।
আমি এবার ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।
কথাটা বলে আমি এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসি আমার রুমে।
আভিয়ানের খুব খারাপ লাগে যে কণা তার সাথে এমন ফর্মালিটি করে কথা বলছে। এটা তার দায়িত্ব ছিল কণাকে রক্ষা করা। তার জন্য কণা তাকে ধন্যবাদ বললো। সে ভাবছে কোনদিন কী তাদের সম্পর্ক আগের মতো স্বাভাবিক হবে না?
আভিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান করে। একে একে সবাই সবার রুমে চলে গেলো। মহুয়া জাহান জেনো মূর্তি হয়ে গেছেন। তার কানে শুধু কণার বলা কথাগুলো বাজছে। তার চারপাশে কী হচ্ছে সেদিকে উনার কোনো খেয়াল নেই?
৩৮
ছাদের রেলিংয়ের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে গুন গুন করে গান গাইছে কণা। কানে তার হেডফোন লাগানো। মুখে সেন্টার ফ্রেশ থাকায় গানের কথাগুলো অস্পষ্ট শুনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের মন খারাপটা হুট করে কেটে গিয়ে কণার মন ভালো হয়ে গিয়েছে। কেনো তার মনটা ভালো হয়ে গেলো সে নিজেও জানে না। জানার কোনো আগ্রহ তার নেই। এখন সে প্রকৃতির খেলা দেখতে ব্যস্থ। বিকেলবেলা হওয়ায় সূর্যের আলো প্রকোপ নেই। তাই সে ছাঁদে অনায়াসে বসে আছি। কোনো প্রকার গরম লাগছে না।
হঠাৎ তার মনে হলো আজকে দুপুরে তো ঐ চিঠি প্রেরকের সাথে দেখা করার কথা ছিল। লোকটা কী সময় মতো এসে তার দেওয়া ঠিকানাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে? লোকটা কী অপেক্ষা করকে করতে বিরক্ত হয়ে চলে যাবে। নাকি আমার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করবে। এসব ভাবতে ভাবতে লোকটির ফোনে কল দিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফোনটা বন্ধ বলছে। উফ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম লোকটা আমার সাথে কলে নয় মেসেজে কথা বলে। তাই দ্রুত লোকটাকে মেসেজ দিলাম।
আমি আপনাকে অপেক্ষা করিয়ে আসি নাই বলে কী আপনি রাগ করেছেন আমার ওপর? আমার ওপর রাগ করে লাভ নেই। আমি আপনার রাগ ভাঙাবো না। আমি অদ্ভুত টাইপের মানুষ কারো রাগ ভাঙায় না। পরে উল্টো আমার রাগ ভাঙাতে হয়।
মেসেজ পাঠিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো রকম উত্তর আসলো না। মনটা আমার খারাপ হয়ে গেলো। অদ্ভুত ব্যাপার চিনি না জানি না একটা লোক আমার মেসেজের রিপলাই দিচ্ছে না বলে আমার মন খারাপ হয়ে গেলে। আমার মন খারাপের কারণ ভেবে আমি নিজেই অবাক।
৩৯
আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এটা তো পুলিশ স্টেশন যাওয়ার রাস্তা না। ( অমিত ব্যস্ত ভঙ্গিতে গাড়িতে বসে থাকা পুলিশদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলো।
)
তোর শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তোকে জামাই আদর দেওয়ার জন্য।
কথাটা বলে গাড়িতে বসে থাকা সবগুলো লোক বিকট শব্দে হেসে ওঠে। সবাইকে এমন ভাবে হাসতে দেখে ভয় পেয়ে যায় অমিত। একটা লোক এসে অমিতের মুখে রুমাল চেপে ধরে। অমিত অঙ্গান হয়ে যায়। অমিতের মাথাটা হেলে পড়ে গাড়ির সিটে।
____________
মুখের ওপর পানি পড়ায় ধড়ফড়িয়ে ওঠে অমিত তার মাথাটা বেশ ভার ভার লাগছে। তাকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে সে বুঝতে পারলো না সে কোথায় আছে। কারণ জায়গাটা অন্ধকার। অমিত স্পষ্ট না বুঝলেও অস্পষ্ট বুঝতে পারছে তার সামনে একটা লোক বসে আছে। লোকটি বেশ আয়েশ ভঙ্গিতে চেয়ারের ওপর বসে আছে।
কে আপনি?
তোর যম।
অমিত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, মানে?
লোকটি চেয়ার ছেড়ে এসে অমিতের গলা চেপে ধরলো। লাইট জ্বলে ওঠায় রুম আলোকিত হয়ে গেলো। অমিত চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখ খুলে নিজের মুখের সামনে একটা অপরিচিত মুখ দেখতে পেলো। লোকটির চোখ দেখে অমিত ভয় পেয়ে যায়। লাল টকটকে চোখ জুড়ায় রয়েছে শুধু হিংস্রতা।
চলবে……..