তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-১৯

0
1904

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

বাড়াবাড়ির কিছু দেখছি না তো বড় আব্বু। আভিয়ান ভাইয়ার যেমন এ বাড়ির প্রোপাটি ওপর অধিকার আছে তেমন আমারও আছে। ইনফ্যাক্ট আমার একটু বেশি অধিকার আছে কারণ আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান। তোমার প্রোপাটি দুই ভাগ হয়ে অহি আর আভিয়ান ভাইয়া পাবে। আব্বুর প্রোপাটি শুধু আমি একা পাবো। তো আমি কেনো বাসে-রিকশায় করে ভার্সিটি যাবো?

কথাগুলো বলে কণা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কণার কথাগুলো শুনে তিশান আহম্মেদ স্তব্ধ হয়ে গেছেন। উনি ভাবতে পারছেন নাহ যে কোনোদিন তাদের প্রোপাটি ভাগাভাগি নিয়ে কথা ওঠবে। কণা ডিরক্টলি না বললেও কথার ধরনে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কণা চাইলেই তার ভাগের প্রোপাটি নিয়ে নিতে পারে। প্রোপাটি নিয়ে তিশান আহম্মেদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। উনি ভাবছেন তার পরিবারটা কী তাহলে ভেঙে যাবে?

৪২

ভার্সিটি এসেই ক্যান্টিনে চলে যায়। আমি জানি সবাই ঐখানেই অপেক্ষা করছে। আমরা ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে সাফাত ভাইয়া, নোমান ভাইয়া আর বন্যা ক্যান্টিনে বসে আছে। আমিও গিয়ে তাদের সাথে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।

কী সাফাত ভাইয়া কি বলে প্রোপোজ করবে?

আরে কণা কী বলবো? কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রচণ্ড নার্ভাস লাগছে।

নোমান ভাইয়া ঠাট্টার সুরে বলে, মামা এতো চাপ নিও না। একটা রিং নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে বলবা, অহি বেবি আমার বাচ্চার মা হিসেবে তোমাকেই চাই। হবে কী আমার বাচ্চার মা? দিবে না তোমার মাকে আমার বাচ্চার নানি হওয়ার সুযোগ?

নোমান ভাইয়ার কথায় আমি আর বন্যা হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের ওপর ঢলে পড়ছি। নোমান ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে। সাফাত ভাইয়া নোমান ভাইয়ার পিঠে ধুমধাম মারা শুরু করে। সাফাত ভাইয়ার মার খেয়ে নোমান ভাইয়া জুরে হেসে দেয়। নোমান ভাইয়া আর আমাদের হাসির শব্দ শুনে ক্যান্টিনের অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সেদিকে আমাদের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আমরা আমাদের মতো প্রাণ খুলে হেসে যাচ্ছি।

শালা তুই প্রেম করার আগেই আমার ব্রেকআপ করাতে চাইছিস। দেখবি বিয়ের দিন তোর বউ পালিয়ে যাবে।

শালা বলবি না। শালা বললে আমার বোনকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে না করতে চাইলে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিব। তারপর অহিকে বিয়ে করার স্বপ্ন তোর স্বপ্নই থেকে যাবে।

উফ তোমরা কী এখানে ফাজলামো করার জন্য বসছো? তোমরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমরা এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে আসছি। আর আলোচনাটা অহি আসার আগে শেষ করতে হবে।

নোমান ভাইয়া ফাইজলামি করে বলে, ইয়েস ম্যাম।

আমি আলতো হেসে নোমান ভাইয়ার বাহুতে একটা থাপ্পড় দিলাম। সাফাত ভাইয়া মাথা চুলকে বলে,

আমি কী অহিকে সরাসরি আই লাভ ইউ বলে দিবো? না না না সাফাত চৌধুরী এতো নরমাল ভাষায় প্রোপোজ করতে পারে না। কণা প্লিজ হেল্প মি?

“আমি আমার থেকেও তোমাকেই বেশি ভালোবাসতে চাই, তুমি কি সেই অধিকারটুকু আমাকে দিবে?” এইগুলো বলতে পারো।

যাক বাবা একটা টেনশন থেকে মুক্ত হলাম।

আমাদের কথার মাঝেই আমার পিঠে কেউ ধাম করে চড় বসিয়ে দিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি অহি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহির দৃষ্টি দেখে আমি একটা ঢোক গিলি। মনে মনে দোয়া পড়ছি। অহি আমাকে আজকে কাঁচা গিলে খাবে। আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছি। কথায় আছে না যেখানে ভাগের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। তেমনি আমিও কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। পিছনে অহি সামনে টেবিল একপাশে সাফাত ভাইয়া আরেক পাশে দেয়াল। এখন আমি কী করি?

কণা তুই আজকে এতো আগে ভার্সিটি কেনো এলি? আসবি ভালো কথা আমাকে নিয়ে আসবি না?

এখন আমি কী বলবো? শুকনো গলায় দুই তিনটে ঢোক গিললাম। অহির দৃষ্টি আমার দিকে স্থির কিন্তু আমি বার বার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি।

সাফাত ভাইয়া গম্ভীর গলায় বলে, কণা বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেইটে গিয়েছিল। তোমাকে কী সেখানেও নিয়ে যেতো?

সাফাত ভাইয়ার কথায় আমার চোখ আপনা আপনি বড় হয়ে যায়। সাফাত ভাইয়া এসব কী বলছে? আমার বয়ফ্রেন্ড আবার তার সাথে ডেইটে গিয়েছি। হাউ ইজ পসিবল? কথাগুলো নিজের মনেই চেপে রাখলাম। কারো সামনে প্রকাশ করলাম না।

অহি চিৎকার করে বলে, হোয়াট। কণার বয়ফ্রেন্ড আছে? কণা তুই আমাকে বললি না তোর বয়ফ্রেন্ড আছে? কোথায় কণার বয়ফ্রেন্ড?

সাফাত ভাইয়া বেশ স্বাভাবিক গলায় বলে, কেনো আমাকে চোখে পড়ে না? আমি কী কণার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার যোগত্যা রাখি না?

সরি।

কথাটা বলে অহি চলে যায়।

তোমার অহিকে জেলাস ফিল না করালে চল না? দেখলে মেয়েটা কতো কষ্ট পেয়েছে?

পরে যে সারপ্রাইজটা পাবে তার কাছে এই কষ্ট কিছুই না।

হ পরে আমার পিঠ ভাঙবো।

নিজের ভাইয়ের জন্য এইটুকু করতে পারবি না?

আমি ফাইসা গেছি
ফাইসা গেছি মাইনক্যা চিপায়

৪৩

লাফাইতে লাফাইতে করিডোর দিয়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। তখনি কেউ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরে। আমাকে ধরে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়। ক্লাস রুমটা গুটগুটে অন্ধকারে।

আমাকে যে নিয়ে আসছে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু এইটুকু বুঝেছি যে আমাকে নিয়ে আসছে সে মেয়ে নয় ছেলে। কারণ লোকটার শরীর থেকে আমি মেইল পারফিউমের স্মেল পেয়েছি। হুট করে লোকটি আমার হাত দুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। এতে যেনো আমার আত্না কেঁপে ওঠে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“তুমি শুধুই আমার আগামিকালের জন্য, চিরকালের জন্য এবং পরের জন্মেও আমি তোমাকেই চাই”।

লোকটার প্রতিটা নিশ্বাস আমার কানে বারি খাচ্ছে। আমার মনে অদ্ভুত এক ফিলিংস কাজ করছে। লোকটার নেশাক্ত কন্ঠে আমার ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। আচমকা লোকটা আমার কাছে চলে আসে। এবার আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো আমি ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। হুট করে লোকটি আমার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।

আমার দ্বিতীয় কিসটা তোমার নামে করে দিলাম।

রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ করে চোখে আলো পড়ায়। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। রুমে এখন আলোকিত তার মানে আমি এখন লোকটিকে দেখতে পাবো। তাড়াতাড়ি চোখ খুলি।

কিন্তু চোখ খুলে আমি কাউকে দেখতে পাই না। সারা রুমে চোখ বুলাই কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। তার মানে আমার চোখ বন্ধ করার সুযোগে লোকটি চলে গেলো। ইশ একটুর জন্য লোকটাকে দেখতে পেলাম না। তারপর ক্লাসে চলে এলাম। ক্লাসে এসে দেখি অহি চুপচাপ পিছনের বেঞ্চে বসে আছে। আমি ও গিয়ে অহির পাশে ধপ করে বসে পড়লাম।

তুই কী আমার সাথে রাগ করেছিস?

আরে না আমি আপনার সাথে রাগ করতে যাবো কেনো? আমি রাগ করলে আপনার কী? কী হই আমি আপনার?

তুই আমার সাথে এমন করে কেনো কথা বলছিস?

কেমন করে কথা বলছি? সবাই বলে, মানুষ ভালোবাসার মানুষ পেলে তার বেষ্টফ্রেন্ডকে ভুলে যায়। কিন্তু আমি কথাটা বিশ্বাস করতাম নাহ। কিন্তু তুই আমাকে কথাটা বিশ্বাস করিয়ে দিলি।

অহি সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। এমন ভুল আর হবে না। আসলে সাফাত ভাইয়া সকালবেলা ফোন করে তাড়াতাড়ি দেখা করতে বললো। তারাহুরা করতে গিয়ে তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ( কানে ধরে ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বললাম। )

অহি আমার হাত কান থেকে ছাড়িয়ে বলে, হইছে হইছে আর ঢং করতে হবে না। বয়ফ্রেন্ডকে কেউ ভাই ডাকে?

বয়ফ্রেন্ড না ছাই। মনে মনে কথাটা বলে মুখে বললাম, ঐ আগের অভ্যাস তো তাই। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস তো ?

ক্ষমা করে দেবো এক শর্তে।

কী শর্ত?

আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে।

ওকে ডান।

৪৪

ভার্সিটি শেষে আমি, অহি আর বন্যা মিলে ফুচকা খেলাম। ফুচকা খাওয়া শেষে বন্যাকে নিয়ে নোমান ভাইয়া চলে গেলে।

কণা চল আজকে ঐ নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বাসায় যাই।

না না ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। নদীর পাড়ের রাস্তা অনেক নিড়িবিলি জায়গা। যদি কোনো বিপদ হয়।

আরে কিচ্ছু হবে না চল না। ঐ দিক দিয়ে গেলে মনটা ভালো হয়ে যায়।

আর কিছু না ভেবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। যদি সত্যিই অহির মন ভালো হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে নদীর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তাটা জনমানব শূন্য। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আচমকা আমাদের সামনে একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে বেশ কিছু ছেলে বের হয়ে এলো। আমরা কিছু বলার আগেই আমাদের মুখে রুমাল চেপে ধরে।

চলবে……