তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-২৯

0
1760

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

৬৫

জিয়ান কণাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে কণাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। জিয়ান গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। দুজন গাড়িতে বসতেই দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ে। জিয়ান ড্রাইভ করে কিছু দূর এসে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আবার হাসি শুরু করে দেয়।

আমি কীভাবে এতক্ষণ হাসি থামিয়ে রাখছিলাম এটা একমাত্র আমি জানি।

আমি আর কী বলবো? তোর এক্টিং দেখে আমি টাস্কি খাইছিলাম। এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু আমার সত্যি মনে হচ্ছিল। তোর এক্টিং দেখে বোঝার উপায় নেই যে তুই এক্টিং করছিলি। কত কষ্টে যে আমি হাসিটা কনট্রোল করছি তোকে বলে বোঝাতে পারব না। তুই তো জানিস আমি আবার হাসি আটকে রাখতে পারি না। শেষ মুহুর্তে তোর কান্না দেখে আমার আরো হাসি পাচ্ছিল। তাই তোকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।

জিয়ান ভাইয়া তুমি কত ভালো এক্টিং করছ সেটা তুমি নিজেও জানো না। আমার তো মনে হচ্ছিল তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড আর আমার সাথে রাগ করে আছ। জিয়ান ভাইয়া তুমি যদি এক্টিং করতা। তাহলে অনেক নাম করতে পারতা।

তুইও।

দুজন আবার ফিক করে হেসে দেয়। কণা হাসি থামিয়ে বলে,

থ্যাংকস।

কেনো?

তুমি যা করছ আমার বান্ধবীর জন্য তাতে শুধু থ্যাংকস অতি সামান্য। দুজন ভালোবাসার মানুষকে এক করে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছ।

আমি তোর বান্ধবীর জন্য কিছু করি নাই সবকিছু নিজের জন্য করছি। ধন্যবাদ তো আমার তোকে দেওয়া উচিত। অহি যদি সময় মত মেসেজ না দিত তাহলে যে কী হত? নিজের বাসর রাতের কথা কল্পনা করেই আমার হার্ট এ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। বন্যা যদি ভদ্র মেয়ে হত তাহলে বাসর ঘরে ঢুকতেই আমাকে বলত, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আপনি আমার দেহ পাবেন কিন্তু মন পাবেন নাহ। আর যদি গুন্ডি টাইপের মেয়ে হত তাহলে বলত, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।। আপনি যদি আমার কাছে আসার বা স্পর্শ করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি আপনাকে খুন করে ফেলব। উফ খুব বাঁচা বেঁচে গেলাম। যদি একবার বন্যার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেত। তাহলে বিয়ে করেও সিঙ্গেলদের মত জীবন কাটাতে হত।

জিয়ানের কথা শেষ হতে না হতেই কণা আবার দম ফাটা হাসিতে ফেটে পড়ল।

জিয়ান ভাইয়া বাসায় গিয়ে মামা, মামিকে কী করে সামলাবে?

তোর আর আমার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে তা আল্লাহই ভালো জানে।

ছোঁয়া তোমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানত না তাই না?

ছোঁয়া কী করে জানবে? আমি নিজেই তো জানতাম নাহ আজকে আমার বিয়ে ছিল। আব্বু-আম্মু না জানিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছিল। ছোঁয়া খালামনির বাসায় যাওয়ার পর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। ও থাকলে এসব জামেলা হতো না।

হুম।

গ্রামে ঘুরতে যাবি?

কণা নাক সিটকে বলে, আমি আর গ্রামে যাব না।

কেনো?

ভুলে গেলে নাকি গত বার তোমার সাথে গ্রামে গিয়ে কাঁদায় পড়ে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় এসে তিনদিন জ্বরে ভুগেছিলাম।

কাঁদায় মাখার সুযোগ নাই। ঐ গ্রামটা অনেক সুন্দর। অন্য সব গ্রামের থেকে একদম আলাদা। রাস্তাও সুন্দর। চল না? প্লিজ? প্লিজ? তোকে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে নৌকায় উঠাব।

আচ্ছা চল।

জিয়ান ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দেয়। আমি একমনে তাকিয়ে আছি ব্যস্ত নগরীর দিকে। হঠাৎ আমার ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তের আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে ওঠে। আমি ফোনটা রিসিভ করি।

ধূলিকণা,, ধূলিকণা আই’ম সো হেপি।

আপনি এত খুশি কেনো?

আর চারদিন পর আমি তোমার সাথে দেখা করব।

সত্যি।

সত্যি।

তিনবার সত্যি বলেন।

সত্যি, সত্যি, সত্যি। আচ্ছা এখন রাখি। পরে কথা বলব।

আচ্ছা বাই।

বাই।

কণা কান থেকে ফোনটা নামাতেই জিয়ান তড়িৎগতিতে প্রশ্ন করে,

কীরে তুইও কী তলে তলে টেম্পু চালাস নাকি?

ছিঃ জিয়ান ভাইয়া তুমি এসব চিপ টাইপ কথা বল।

এটাকে চিপ টাইপ কথা বলে?

বলে নাহ?

না। আচ্ছা আগে বল ছেলেটা কে?

আমি নিজেও জানি না।

এটা আবার কেমন কথা?

উনার সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। উনার নাম পরিচয় কিছুই জানি না।

এটা তো নব্বই দশকের প্রেম কাহিনী হয়ে গেলো। কেউ কাউকে না দেখে কেউ কাউকে না চিনে প্রেম। বোইন তোরা তো ইতিহাস গড়ে ফেলবি। আজকের যুগের পোলাপান নাকি না দেখে ভালোবাসে।

এই তুমি চুপ চাপ গাড়ি চালাও তো। আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ। পরে আবার এক্সিডেন্ট করবা।

মনে তোরে দেইখা আমি মিনিটে মিনিটে ক্রাশ খায় যে তোর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকব।

তুমি মেয়েদের মত এত পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া কর কেনো?

তুই মানছিস তাহলে মেয়েরা ঝগরুটে।

তুমি চুপ করবা। নাহলে তোমাকে একটা উস্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিব। আজাইরা।

জিয়ান ভাইয়া আর কোনো কথা না বলে এক মনে ড্রাইভ করতে থাকে। আমি প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। গ্রামের পরিবেশ কত সুন্দর। স্নিগ্ধ ,নির্মল বাতাস। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ।চারদিক দিয়ে সবুজ গাছ পালায় ভরা। হুট করে গাড়ি থেমে যাওয়ায় আমি খুব বিরক্ত হয়ে যায়। বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলি,

জিয়ান ভাইয়া এবারও আগের বারের মত বল না যে গাড়ি টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। এবার যদি এমন কিছু বল তাহলে একটা বাড়ি দিয়ে তোমার মাথা ফাটিয়ে দিব।

কিন্তু জিয়ান ভাইয়া কোনো কথা বলে না। আমি এবার জিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকাই। জিয়ান ভাইয়া গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে স্টেইট বসে আছে।

জিয়ান ভাইয়া,, জিয়ান ভাইয়া।

কিন্তু জিয়ান ভাইয়ার কোনো সারা শব্দ নেই। জিয়ান ভাইয়ার আবার রিয়েকশন বাটন কাজ করা বন্দ করে দিয়েছে নাকি। জিয়ান ভাইয়া এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকাই। আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে খুব রূপবতী একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। জিয়ান ভাইয়া ঐ মেয়েটার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এবার জিয়ান ভাইয়াকে জোরে একটা ধাক্কা দিলাম। আমার ধাক্কা দেওয়ায় জিয়ান ভাইয়া একটু নড়েচড়ে বসে।

কী প্রেমে পড়লা নাকি?

কণা আমি আমার মনের মানুষ পেয়ে গেছি।

৬৬

কেটে গেছে এক দিন। ঐ দিন বাসায় এসে জিয়ান ভাইয়া সত্যিটা বলে দিতেই সবাই অনেক রেগে যায়। জিয়ান ভাইয়া সবাইকে অনেক বুঝায়। এট লাস্ট আমাদের অভিনয় করার কারণটা বুঝে। বন্যার আব্বু নোমান ভাইয়াকে মেনেও নেই নি আবার নাও করে দেয়নি। উনার সম্মতির লক্ষণই বেশি। আমি এখন ব্যগ গুছাতে ব্যস্ত। কারণ আমরা ভার্সিটি থেকে ট্যুরে সাঁজেক যাব। আগামীকাল আমরা সবাই দুই দিনের জন্য ট্যুরে সাঁজেক যাব ভার্সিটি থেকে। সকাল ৭ বেজে ৩০ মিনিটে সবাইকে ভার্সিটির মাঠে উপস্থিত থাকতে বলেছেন স্যার এবং মেমরা। কালকে যেহেতু আগে ঘুম থেকে ওঠতে হবে তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।

৬৭

ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে আছি আমি, বন্যা, অহি আর ছোঁয়া। সবাই লাফালাফি করে বাসে ওঠছে। আমরা ৪ জন দাঁড়িয়ে আছি ধীর সুস্থে বাসে উঠব বলে। সবাই ওঠে পড়লে আমরা চার জন ওঠে পড়ি। আমরা সবার পিছনের সিটে গিয়ে বসি। আমরা বসতেই বাস চলতে শুরু করে। চাউন্ড বক্সে গান বাজছে। সেই গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে সবাই। গানের প্রতিটা লাইনের সাথেই সবাই গলা মিলাচ্ছে। একেক জনের গলা একেক রকম তাই বিশ্রী শোনা যাচ্ছে। কেউ আবার বেসুরে গলায় চিৎকার করে গাইছে। আমরাও বসে না থেকে তাদের সাথে তাল মিলাতে শুরু করলাম।

____________________

অবশেষে আমরা সাঁজেক এসে পৌছালাম। এর মাঝে একবার নাস্তা খাওয়ার জন্য ৩০ মিনিট সময় দিয়েছিল।আমাদের বাস একটা হোটেলের সামনে দাঁড়ায়। হোটেল সম্পূর্ণটা আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য বুকিং করা হয়েছে। রিসেভশন থেকে চাবি রুমে চলে এলাম। আমরা ৪ জন এক রুমে থাকব।

____________________

বিকালের দিকে আমরা সবাই কলাংক পাহাড় যাই। পাহাড়ে ওঠার জন্য স্যার-মেমরা বাঁশ নিতে বলে। আমরা বাঁশের সাহায্যে ওঠছিলাম। হঠাৎ করে কেউ আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়।আমি অহির সাথে থাকায় অহির হাত চেপে ধরি। টাল সামলাতে না পেরে দুজনই পাহাড় থেকে পড়ে যেতে নিলে আমি অহির হাত ছেড়ে দেই। আমি একা পাহাড় থেকে পড়ে গেলাম।

চলবে…..