তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-২৮

0
1771

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

বাহ বাহ খুব ভালো বললেন অনিক ভাইয়া। আপনি আপনার বোনকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন নাহ। আর আপনি যখন বেকার হয়ে অন্য একজনের বোনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তখন লজ্জা করেনি।

কণা বন্যাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে কথাগুলো বলল।

মানে?

কণা অনিকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, মি. অনিক এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে গেলেন। আপনি পড়াশোনায় একটু গাধা ছিলেন। মানে বলতে চাইছি আপনার ব্রেইন এতো ভালো ছিল না। তাই বলে ৫ বছর আগের কথা ভুলে গেলেন। ৫ বছর আগের গল্প আবার রিপিট হচ্ছে। আজকে নোমান ভাইয়া যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ৫ বছর আগেও ঠিক আপনিও এই জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। পার্থক্য ছিলো কী জানেন? আপনি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে বেকারদের মত চাকরির জন্য অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরতেন। আর নোমান ভাইয়া এখন পড়শোনা করছে। আমি একশ পার্সেন শিউর আর যাই হোক নোমান ভাইয়ের পড়াশোনা শেষ হলে আপনার মতো চাকরির জন্য অফিসের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না। কারণ নোমান ভাইয়া একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট।

কণা তুমি কিন্তু এখন আমাকে অপমান করছো?

আমি আপনাকে অপমান করছি? আপনি তো এখনো অপমানের কিছু দেখেননি। আপনার আর রুমু ভাবি ( বন্যার ভাবি) ভালোবাসাটাই ভালোবাসা। আর সবারটা ফেলনা। অনিক ভাইয়া আপনি যদি ভেবে থাকেন জোর করে বন্যার বিয়ে অন্য জায়গায় দিয়ে দিবেন। তাহলে ভুল ভাবছেন। আপনারা যদি সহজে মেনে না নেন তাহলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিব। আর বন্যাকে এখনি আমি আমার সাথে নিয়ে যাব।

বন্যা কোথাও যাবে না।

বন্যা আমার সাথে যাবে। বন্যা তুই চলে আয়। এখানে কার ক্ষমতা নেই বন্যাকে আটকে রাখার। কারণ বন্যা এডাল্ট।

বন্যা যদি তোমার সাথে যায়। তাহলে চিরদিনের মত আমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে যেতে হবে। আর কোনোদিন আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। আজকের পর থেকে আমরা জানব বন্যা নামে কেউ কখন আমাদের পরিবারে ছিল না। এখন বন্যা তুই ভেবে দেখ দুইদিনের ভালোবাসার জন্য তোর মা, বাবা, ভাইয়া, ভাবি আর মিরার সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করবি।

এতক্ষণ রুমু অনেক কষ্টে নিজের মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। কারণ উনি চাননি এই জামেলাটা বেশি বড় হক। কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারলেন নাহ। এই বাড়িতে এসেছেন তিনি পাঁচ বছর ধরে। এর মাঝে বন্যা কোনেদিন উনার সাথে ভাবির মত বিহেভ করেনি। বন্যা সব সময় রুমুকে নিজের বড় বোনের মত ভালোবেসে এসেছে। রুমুর কোনো বোন ছিল না। বন্যা উনার ছোট বোনের অভাব পুরণ করেছে। তিনি এখন চুপ থাকলে হয়ত তার ছোট বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। নিজের সংসার ভেঙে গেল ভেঙে যাবে তবু আজকে তিনি চুপ থাকবেন নাহ।

বন্যা কণার সাথে চলে গেলে অনিক তুমি তোমার বোনের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিতে পার। কিন্তু আমি বা মিরা বন্যার সাথে সম্পর্ক শেষ করব না। যদি বন্যা এখন কণার সাথে না যায় তাহলে সারাজীবনের মত আমি আর মিরা বন্যার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিব। কোনো দিন বন্যার মুখটাও দেখতে যাব না।

রুমু তুমি চুপ কর।

কেনো চুপ করব? আজকে তুমি ধমক দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না। দুই দিন ধরে তোমরা দুজন মেয়েটার ওপর মানসিকভাবে টর্চার করছ। পাঁচ বছর আগে আমিও দুই দিনের ভালোবাসার জন্য বাবা-মার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে তোমার মতো একটা বলদের হাত ধরে পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আর না এবার আমি আমার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ঠিক করব। আজকে আমি এখনি মিরাকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছি। যেদিন নোমানের সাথে বন্যার বিয়ে ঠিক হবে। সেদিন এ বাড়িতে পা রাখব। এর আগে না। যদি বন্যার বিয়ে অন্য কারো সাথে দাও তাহলে কোনো দিন আমি বা আমার মেয়ে বাড়িতে পা রাখবে না। যেদিন বন্যার সাথে অন্য ছেলের বিয়ে হবে ঠিক সেদিন তোমার সাথে আমার ডিবোর্স হবে। কথাটা মনে রেখো।

কথাগুলো বলে রুমু মিরাকে নিয়ে রুমে চলে যায়।

জামান সাহেব এতক্ষণ নিরবে সবার কথোপকথন শুনে গেছেন। এবার তিনি রেগে বলে, চুপ কর তোমরা। আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাই না। আমার মেয়ের কীসে ভালো হবে আর কীসে খারাপ হবে সেটা আমি বুঝব। তোমরা এবার আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও। একটু পরে পাত্রপক্ষ আসবে। আমি চাই না তাদের সামনে কোনো রুপ জামেলা হোক। আমাদের একটা মান সম্মান আছে।

আপনাদেরই শু…..

কথাটা আর শেষ করতে পারলাম নাহ। তার আগেই সামনে তাকিয়ে থমকে গেলাম। কারণ মেইন ডোর দিয়ে জিয়ান ভাইয়া, মামা-মামি বাসার ভিতরে প্রবেশ করছে। উনাদের দেখে আংকেল এগিয়ে গিয়ে কোশল বিনিময় করছেন। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না জিয়ান ভাইয়ার সাথেই বন্যার বিয়ে ঠিক হয়ছে। আমি এগিয়ে গেলাম জিয়ান ভাইয়ার দিকে। ঠিক জিয়ান সামনে দাঁড়ালাম। কণাকে এখানে দেখে রেশমি রহমান অবাক হয়ে বলেন,

কণা তুই এখানে?

এই একই প্রশ্ন তো আমারও। তোমরা এখানে?

আমরা তো জিয়ানের জন্য পাত্রী দেখতে আসছি।

আমি জিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তখনি জিয়ান ভাইয়ার মেসেজ টোন বেজে ওঠে। জিয়ান ভাইয়া ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি ঠাট্টার সুরে বলি,

বাহ জিয়ান বাহ অভিনয় তো ভালোই করতে পার। মানুষ ঠিকই বলে নতুন পেলে সবাই পুরোনো জিনিসটাকে ভুলে যায়।

হেলাল রহমান অবাক হয়ে বলেন, এসব কী বলছিস কণা? আর কীসের অভিনয়ের কথা বলছিস? আমি তোর কথার কোনো মানে বুঝতে পারছি না।

মামা তুমি আমার কথাগুলোর মানে তোমার ছেলেকে জিঙ্গেস কর? জিঙ্গেস কর আমি এসব কেনো বলছি? জিঙ্গেস কর আমার সাথে চার চারটা বছর ভালোবাসার অভিনয় করার মানে কী?

কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। সবাই অবাক হয়ে জিয়ান আর কণার দিকে তাকিয়ে আছে। জিয়ান আগের মত দাঁড়িয়ে আছে। জিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,

সেইম প্রশ্ন আমিও তোমাকে করতে পারি। তুমি কেনো আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে আমাকে ঠকালে?

আমি তোমাকে ঠকায়নি। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। তুমি এভাবে আমার স্বপ্নগুলো ভেঙে দিতে পার না। আমাকে একটা ছোট সংসারের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন তুমি অন্য কাউকে নিয়ে সেই সংসার বাধঁতে পার না।

জামান সাহেব চিৎকার করে বলেন, আমার বাসাটা কী কোনো রঙ মঞ্চ যে সবাই এখানে এসে সার্কাস করছ?

জামান সাহেবের কথাটা কেউ পাত্তা দিল না।

আমি তো তোমার স্বপ্নগুলো ভেঙে দিলে সত্যিই তোমার কিছু আসে যায়? তোমাকে স্বপ্ন দেখানোর ভালোবাসার তো এখন অনেক মানুষ আছে।

নিজের দোষ ঢাকার জন্য এখন আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ কেনো?

আমি সত্যিই মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি। ঐ দিন তোমার সাথে ছেলেটা কে ছিল? যার সাথে ঘুরাঘুরি করছিলা। তোমাকে নিজ হাতে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছিল।

মামি তুমি বল ফ্রেন্ডরা কী একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিতে পারে না? একসাথে ঘুরতে যেতে পারে না?

রেশমি রহমান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানান।

আর তুমি যে ছেলেটাকে আমার সাথে দেখেছিলে সেই ছেলেটা তোমার হবু বউ বন্যার বয়ফ্রেন্ড। নোমান ভাইয়া আমাকে নিজের ছোট বোনের মত ভালোবাসে।

আমি মামিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই।

মামি তোমার ছেলে খুব খারাপ একটা ছোট বিষয় নিয়ে ব্রেকআপ করে ফেলল। ব্রেকআপ করে ক্ষান্ত হয়নি একেবারে বিয়ে করতে চলে আসছে। মামি আমি এখন কীভাবে জিয়ানকে ছাড়া থাকব। আমি সত্যি ওকে খু্ৃ়ব ভালোবাসি।

কণার কথা শুনে হেলাল রহমান এবং রেশমি রহমানের চোখ মুখ একটা খুশি খুশি ভাব চলে আসে। এটলিস্ট তাদের প্লেন সাকসেস হতে চলেছে। তাদের ছেলে তো তাদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে। চার বছর ধরে কণার সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে। রেশমি রহমান কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হেলাল রহমান গম্ভীর কন্ঠে বলে,

জিয়ান তোমার সাহস কী করে হয় আমার কণা মামুনিকে কষ্ট দেওয়ার?

জিয়ান তার বাবার কথাটা পাত্তা না দিয়ে কণার এক হাত ধরে টেনে নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে।

জামান সাহেব হেলাল রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলে, এখন আমার মেয়ের কী হবে?

কী হবে আবার ওর প্রেমিকের সাথে বিয়ে দিয় দে। আমি ভাবতে পারছি না তুই একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে নিজের মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিস। আগে জানল কখন আমার ছেলেকে নিয়ে এখানে আসতাম নাহ।

৬৫

জিয়ান কণাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে কণাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।

চলবে…..