তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-৩৫

0
1874

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৩৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আদিয়াত তার পকেট থেকে ফোনটা বের করে কণার চোখের সামনে তার আর কণার মেসেজ চোখের সামনে ধরে। কণা আর তার কিছু ছোটবেলার ছবি কণাকে দেখায়। যেগুলো একমাত্র তুর্ণের কাছেই থাকার কথা অন্য কারো কাছে নাহ। সোফা থেকে ওঠে গিয়ে আদিয়াত তার কিছু সার্টিফিকেট এনে কণাকে দেখায়।

এতগুলো প্রমাণ দেওয়ার পরেও যদি তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে না পারো। তাহলে আমার কিছু করার নাই।

আপনি তুর্ণ আদিয়াত যেই হোন না কেনো? আমি আপনার সাথে এই বাসায় থাকতে পারব নাহ।

কেনো? কী সমস্যা এই বাসায় থাকলে? বা আমার সাথে থাকলে?

আপনি বুঝতে পারছেন নাহ? আমি কী বুঝাতে চাইছি?

আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।

আমি আর আপনি এতবড় একটা বাসায় একা থাকি। যদি এই বাসায় ভূত থাকে। আর এভাবে একা একটা বাসায় দুজন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে তো থাকা ঠিক নাহ।

তুমি কী আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?

আমি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।

তাহলে…….

আমি আমতা আমতা করছি। বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছি। এই কথা বলার পর উনি আমাকে রাম ধমক দিবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আদিয়াত কণার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

বাই এনি চান্স তুমি বাইরের লোকের কথা ভাবছ না তো? বাইরের লোক কী বলল না বলল তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কিছু মানুষের কাজই অন্যের নিন্দা করা। তাই কে কী বলল তাতে আমি কান দেয় নাহ।

আপনি কান না দিলেও আমি দেই়। লোকের কথা আপনার কিছু না আসলেও আমার অনেক কিছু আসে যায়।

তাহলে আজকে থেকে কান দিবে না।

আপনি বললেই হল নাকি।

তোমার যখন এত সমস্যা তখন প্রবলেম তো সলভ করতেই হয়। আমরা আজকেই বিয়ে করব।

কীহহহহহহ! ( অনেকটা অবাক হয়ে )

তুমি এত অবাক হচ্ছ কেনো? তুমি কী আমাকে বিয়ে করতে চাও নাহ?

আপনাকে বিয়ে করতে চাই নাহ। সেটা আবার কখন বললাম।

তার মানে তুমি রাজি। তুমি ১ ঘন্টা অপেক্ষা কর। সবকিছু রেডি হয়ে যাবে।

আরে আমার কথাটা তো শুন…….

তোমার সব কথা বাসর ঘরে শুনব। ( চোখ টিপ দিয়ে বলে)

আদিয়াত কাউকে কল করতে করতে বাসার বাইরে চলে যায়। আমি আহম্মকের মতো সোফায় বসে আছি। বাসার কাউকে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করে ফেলব। বাসার কাউকে জানিয়েই বা কী করব? তারা তো আমার লাইফের কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করে না। আমাকে তো তাদের একজন বলে মনেই করে না। তাই তাদের জানিয়ে বিয়ে করি বা না জানিয়ে বিয়ে করি। তাতে তাদের কিছু আসে যায় নাহ। অহি, বন্যা, জিয়ান ভাইয়া, সাফাত ভাইয়া, নোমান ভাইয়া আর বড় আম্মু সবাই তো আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাদের না জানিয়ে আমি বিয়ে করে ফেলব।

৭৪

জিয়ান আজকে আবার সেই গ্রামে আসছে। গ্রামের নাম বকুলতলি ( গ্রামের নামটা কাল্পনিক। বাস্তবে যদি এই নামে গ্রাম থেকে থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক আমি অবগত নই।) অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামটি। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে একটা নদী। নদীর দুই ধারে কাশবন দিয়ে ঘেরা। নদীর মাঝে কিছু হাঁস সাতার কাটছে। নদীর পাড়ে কিছু ছাগল ঘাস খাচ্ছে।
নদীতে কিছু ছেলে মেয়েরা সাঁতার কাটছে। কিছু মেয়ে একটা বড় গাছের নিচে গোল্লা ছুট খেলছে। মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে ধান গাছের ডগা।

বরাবর জিয়ান এই গ্রামে আসে এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। কিন্তু আজকে আসছে ভিন্ন কারণে। আজকে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য তার চোখে আটকাচ্ছে নাহ। কারণ তার চোখ তো খোঁজছে তার প্রেয়সীকে। তার প্রেয়সীর সৌন্দর্যের কাছে এই সৌন্দর্য কিছুই নাহ। জিয়ান গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে। কিন্তু তার মায়াবতীকে দেখতে পাচ্ছে না। তাই জিয়ান পা বাড়ায় সামনের দিকে। জিয়ান মনে মনে বলছে,

কোথায় গেলে মায়াবতী? আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো মায়াবতী? তোমাকে দেখার জন্য যে কেউ বেকুল হয়ে আছে। তার বার্তা কী তোমার কাছে পৌছায় না মায়াবতী?

জিয়ান এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার মায়াবতীর দেখা সে পাচ্ছে না। জিয়ান কাউকে তার মায়াবতীর কথা জিঙ্গেসও করতে পারছে না। কারণ সে তো তার মায়াবতীর নামই জানে না। জিঙ্গেস করবে কী করে? কারো মনো মুগ্ধকর হাসির শব্দে থমকে যায় জিয়ান। জিয়ান মনে মনে বলে,

এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে। আমিও কী যা তা বলি না। এত সুন্দর করে হাসতে পারবে না কেনো? কণা হাসলেও তো মনে হয় মুক্ত ঝরে।
কিন্তু এই মেয়ের হাসিটা কণার হাসির থেকেও বেশি সুন্দর।

জিয়ান নিজের ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাসির শব্দ অনুসরণ করে। যে হাসছিল তাকে দেখে জিয়ানের চোখ অটোমেটিকলি বড় বড় হয়ে যায়। এই তো তার মায়াবতী।

জিয়ানের ফোনটা বেঁজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে। ওপাস থেকে যা বলল তা শুনে জিয়ানের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। জিয়ানকে ফোন তার এক বন্ধু করছে। ফোন করে ঐ এক্সিডেন্টের ঘটনা খুলে বলছে। জিয়ান একটা প্রজেক্টের কাজে কিছুদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। আর সেখান থেকে ফিরে নিজের বাসায় না গিয়ে এই গ্রামে চলে আসছে। তাই সে অহি আর কণার সাথে ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টের কথা জানে না। আর জানবেই কী করে তাকে তো কেউ জানায়নি?

আমি সবার কাছে এতটা পর হয়ে গেলাম। এত বড় একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেছে। আর আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।

জিয়ান রেগে ফোনটা মাটিতে আচার মারে। তারপর ধুপ ধাপ পা ফেলে সেখান থেকে চলে যায়।

৭৫

পার্লারের মেয়েরা আমাকে রেডি করাচ্ছে। তাহার মায়ের কড়া নির্দেশ উনার বউ মাকে পরীর মত কর সাজাতে হবে। আরো ১ ঘন্টা পরে আমার সাজ কম্পলিট হয়। সাজানো কম্পলিট হতেই পার্লারের মেয়েরা চলে যায়। আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক ঘুরে নিজেকে দেখছি। আমি নিজেকে নিজেই চিন্তে পারছি না। এত বাড়ি মেকআপের তলে আমিটাই যেনো চাপা পড়ে গেছি।

_________________

ফুলে ফুলে সাজানো একটা রুমে বসে আছি। একটু আগেই আমাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই আমরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। সারাজীবন হাতে হাত রেখে পাশে থাকার প্রতিঙ্গা করেছি। আমাদের বিয়েতে উনার বন্ধুরা দুয়েকটা কাজিন ছিল। উনার বাবা-মা আমাদের থেকে অনেকটা দুরে থাকায়। আমাদের বিয়েতে এটেন্ড করতে পারেনি।

চারদিকে ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে রুমটা সুন্দর করে সাজানো। এত কম সময়ে এত সুন্দর করে সাজানো হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারিনি। ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছি। ঘোমটা আমি দিতে চায়নি সামিয়া আপু ( উনার বন্ধুর ওয়াইফ) জুড় করে দিয়ে দিয়েছে। বাসর ঘরে নাকি এভাবে বসে থাকতে হয়। যাওয়ার সময় বলে গেছে উনি রুমে আসলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে।

কিন্তু আমি তো করব নাহ। আমি জানি উনি আমাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে দিবেন নাহ। সিনেমার একটা ডায়লগ মারবে। আমি সালাম করার জন্য ঝুঁকতে গেলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দিয়ে বলবেন, তোমার স্থান আমার পায়ে নয়। আমার বুকে। আমি তো উনাকে বাংলা সিনেমার ডায়লগ মারার সুযোগই দিব নাহ।

আমি ১০ মিনিট ধরে বসে আছি। এতেই যেন আমার অসহ্য লাগছে। সামিয়া আপু বলেছিল বাসর রাতে বরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কোমড় ব্যথা হয়ে যায়। সামিয়া আপু উনার বাসর রাতে পাক্কা ২ ঘন্টা বসে থাকার পর উনার বর এসেছিল।

খট করে দরজা খোলার আওয়াজে আমি একটু নড়েচড়ে বসি। এতক্ষণ লজ্জা না লাগলেও। এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। উনি ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমার বুক ধুকপুক করছে।

আদিয়াত কণাকে পিঞ্চ মেরে বলে,
শুনছিলাম বাসর রাতে স্ত্রীরা নাকি তাদের স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আমার কপালটাই পুড়া। আমার সেই ভাগ্য হলো না।

চলবে………