তুমি আমার প্রেয়সী পর্ব-৪৫+৪৬

0
1808

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৪৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

কণা ধীর স্থিরে হেঁটে বাসার ভিতর প্রবেশ করে। কণা একবার বাসার ভিতরে চোখ বুলিয়ে নেয়। এতদিন পর নিজের মেয়েকে দেখে চোখ ছলছল করে ওঠে মহুয়া জাহানের। দৌড়ে এসে কণাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কণা জড়িয়ে ধরে না বরং কণা ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দেয় মহুয়া জাহানকে। আকস্মিক ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা দুরে সরে যায় মহুয়া জাহান। মহুয়া জাহান অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে কণার দিকে। তিনি হয়তো কল্পনাও করেননি কণা এভাবে ধাক্কা দিয়ে উনাকে দুরে সরিয়ে দিবেন।

হোয়াট দ্যা হেল? এসব কোন ধরনের অসভ্যতা? ম্যানার্সলেসের মতো হুট হাট জড়িয়ে ধরছেন। ( দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে কথাটা বলে কণা। )

কণার চিৎকার ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয় ছোঁয়া আর আভিয়ান। ড্রয়িংরুমে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আফিফা বেগম, তিশান আহম্মেদ আর মহুয়া জাহান। কণাকে দেখে আফিফা বেগম খুশি হলেও তিশান আহম্মেদের মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই যে উনি খুশি হয়েছেন নাকি হননি। কণার বিহেভিয়ার দেখে তিশান আহম্মেদ রেগে বলেন,

এই মেয়ে বড়দের সাথে কী করে কথা বলতে হয় তা জানো না? এমন অসভ্যের মতো আচারণ করলে আমার বাসায় থাকতে দিব না।

আপনি আমাকে এই বাসায় থাকতে দেওয়ার কে? হু আর ইউ? এই বাসার হাফ মালকিন আমি। তাই এখানে থাকতে দেওয়ার আপনি কেউ না? আমি আমার বাসায় অসভ্যের মতো আচারণ করব নাকি গরু ছাগলের মতো আচারণ করব সেটা কী আপনি ঠিক করে দিবেন নাহ?

বাহ ৫ মাসে তো দেখি ভালো উন্নতি হয়েছে। বড়দের মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছো। তুমি যে এই বাসার হাফ মালকিন তোমার কাছে কোনো প্রুফ আছে?

তিশান আহম্মেদের কথায় কণা বাঁকা হাসে। তখনি বাসার ভিতরে প্রবেশ করে আদিয়াত। ঠিক কণার পাশে এসে দাঁড়ায় আদিয়াত। আদিয়াতকে কণার পাশে দেখে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সবাই যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আদিয়াত আয়মান এখানে তাও আবার কণার পাশে। ছোঁয়া তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে আদিয়াতকে। তার কৌতূহলও হচ্ছে বটে। আদিয়াত এখানে কী করছে? আর কণার পাশেই বা কী করছে?

আদিয়াত কণাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে, কী হয়েছে সুইটহার্ট? তুমি এতো চিৎকার করছো কেনো? এনিথিং রং?

জানু এই লোকটা আমার কাছে প্রুফ যাচ্ছে। আমি যে এই বাড়ির মালকিন তিনি তা প্রুফ ছাড়া বিশ্বাস করবেন নাহ।

কণাকে জড়িয়ে ধরা। আদিয়াত আর কণার কথোপকথন শুনে সবাই অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌছে গেছে। কণার মা এসে কণার গালে হাত রেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিয়াত কণার গাল থেকে মহুয়া জাহানের হাত সরিয়ে দেয়।

আপনার ঐ নোংরা হাতে একদম ওকে ধরবেন নাহ।

আমি আমার মেয়েকে ধরব নাকি ধরব না সেটা কী তুমি বলে দিবে? তুমি কে আমাদের মা মেয়ের মাঝে কথা বলার।

অবশ্যই বলে দিব। আমার স্ত্রীর কী ভালো লাগে আর কী ভালো লাগে না তা দেখার দায়িত্ব তো আমারই। তাই আপনাকে ওকে টার্চ করতে নিষেধ করছি। কারণ আমার ধূলিকণা বাইরের লোকদের ছোঁয়া একদম পছন্দ করে না। কণা আর আপনি মা মেয়ে কী করে হলেন? আমার জানা মতে তো আপনি কণাকে নিজের মেয়ে বলেই মানেন নাহ। আর আপনাদের মাঝে কথা বলার কে তার প্রশ্নের উত্তরটা নিশ্চয়ই পেয়ে গেছেন এক্স শাশুড়ী আ-ম না থাক? এনিওয়ে আমি বাইরের লোকদের সাথে এতো কথা বলতে পছন্দ করি না।

আদিয়াত কণার দিকে তাকিয়ে বলে, বেইব তোমার রুমটা দেখিয়ে দাও। আমি অনেক টায়ার্ড। একটু রেস্ট নিতে হবে।

আদিয়াতের বাবা মাও এসে উপস্থিত হয়। রাহেলা বেগম আর তুর্জয় আহম্মেদকে দেখে সবাই ভ্রু কুচকে তাকাই। পরমুহূর্তেই বুঝতে পারে এনারাও আদিয়াত আর কণার সাথে এসেছেন। আদিয়াত কণার হাজবেন্ড এটা শুনে ছোঁয়া রাগে ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। সে আদিয়াতকে দেখে ভেবেছিল কোনো ভাবে রূপের জ্বালে ফাসিয়ে আদিয়াতকে বিয়ে করে ফেলবে। তারপর সে পায়ের ওপর পা তুলে সারাজীবন কাটিয়ে দিবে। কিন্তু তার সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে কণা আদিয়াতকে বিয়ে করে।

ছোঁয়া এখন অন্য প্লেন করছে। কী করে কণাকে আদিয়াতের জীবন থেকে সরিয়ে সে ঢুকে পড়বে?

বাহ বাহ কণা পুরো গোষ্ঠী নিয়ে চলে এসেছিস এখানে থাকতে।

আমার বাড়ি আমি কাকে নিয়ে আসব নাকি অাসব না সেটা কী তুই ঠিক করে দিবি? বাই দ্যা ওয়ে তুই এখানে কী করছিস?

আমার ফুফির বাসায় আমি আসার আগে কী তোর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসতে হবে?

অবশ্যই পারমিশন নিয়ে আসতে হবে। আর কী বললি এটা তোর ফুফির বাসা? হা হা এটা তোর ফুফির না আমার বাসা। তোর ফুফি এই বাসার আশ্রিতা। কারণ আমার আব্বুর সাথে তোর ফুফির ডিভোর্স হয়ে গেছে।আর তুই তো এই বাসায় রোহিঙ্গার মতো পড়ে আছিস।

তিশান আহম্মেদ রেগে বলে, তোমার সাহস হয় কী করে আমার হবু বউমাকে অপমান করার?

আপনার হবু বউমার সাহস হয় কী করে আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের অপমান করার? মিস মহুয়া জাহান আর তিশান আহম্মেদ আপনাদের আদরের মেয়েকে সামলে রাখুন। নেক্সট টাইম যদি উনাদের অপমান করার চেষ্টা করে এমন অবস্থা করবো যে, এই মুখ দিয়ে আর কাউকে অপমান করতে পারবে না।

দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে কথাগুলো বলে তাহসিন আহম্মেদ। সবাই দরজার দিকে তাকাই দরজার সামনে অহি আর তাহসিন আহম্মেদ দাঁড়িয়ে আছে। তাহসিন আহম্মেদকে দেখেই কণার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কণা দৌড়ে গিয়ে তাহসিন আহম্মেদকে জড়িয়ে ধরে। তাহসিন আহম্মেদও স্নেহের সহিত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

আব্বু তোমার এতো দেরি হলো কেনো আসতে? আমি ভেবেছিলাম আমরা দুজন একসাথে বাসার ভিতর প্রবেশ করব। কিন্তু তোমার জন্য তা হলো না। ( অভিমানী সুরে)

তাহসিন আহম্মেদ মেয়ের অভিমানী গলা শুনে মুচকি হেসে দেয়। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

আই’ম সরি মামুনি। আমি তো তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অহির সাঁজের জন্য লেইট হয়ে গেছে। পাক্কা তিন ঘন্টায় রেডি হয়েছে। ওর জন্য বসে থাকতে থাকতে আমার কোমড় ব্যথা হয়ে গেছে।

আমি একাই সেঁজেছি? তুমি সাঁজনি? এক্কেবারে নতুন জামাইয়ের মতো সেঁজেছ। আমার তো সাঁজার অনেক কারণ আছে। তুমি এই বুড়ো বয়সে কেনো এতো সেঁজেছ?

আমাকে তোর কোন দিক বুড়ো মনে হয়। আমার তো নিজেকে ২৫ থেকে ২৬ বছরের যুবক মনে হয়। আর তুই জানিস আমার জন্য কত মেয়ে পাগল?

আদিয়াত একটু ভাব নিয়ে বলে, দেখতে হবে না শ্বশুরটা কার?

সবাই এখানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

মি. তিশান আহম্মেদ আমাদের ঢুকতে দিচ্ছেন নাহ। এই বাসার অর্ধেক মালকিন যে আমি এটা উনি প্রুফ ছাড়া বিশ্বাস করবেন নাহ।

উনি বিশ্বাস করলে করবেন না করলে নাই। চল ভিতরে। সবাইকে পাশ কাটিয়ে আদিয়াত আর কণা কণাদের রুমে চলে যায়। রাহেলা বেগম আর তুর্জয় আহম্মেদকে রুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অহি উনাদের সাথে যায়। তাহসিন আহম্মেদও নিজের রুমে চলে যায়। আভিয়ানও নিজের রুমে চলে যায়।

৯৫

কণা ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে বসে আছে। এই বেলকনির সাথে তার কতো শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কত রাত জেগে থেকে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে। রাতের তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কত শত অভিযোগ তুলে ধরেছে। আজ প্রায় পাঁচ মাস পর এই বেলকনিতে এসেছে। কণা ভাবতে থাকে তার বাবার সাথে দেখা হওয়ার মুহূর্তটা।

তাহসিন আহম্মেদ ফিরে আসার ১ মাস পর আদিয়াত কণাকে উনার সাথে দেখা করাতে নিয়ে যায়। কণা নিজের বাবাকে চোখের সামনে দেখে সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক মুহুর্তের জন্য কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তাহসিন আহম্মেদ নিজের মেয়েকে দেখে কেঁদে দেয়। তিনি হয়তো ভাবতে পারেন নি নিজের মেয়েকে দেখতে পারবেন। কণা কিছুক্ষণ তাহসিন আহম্মেদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিষাক্ত অতিত মনে পড়তেই অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আদিয়াত কণাকে সমস্ত সত্যি বলে। সত্যিটা জানার পর কণা তাহসিন আহম্মেদকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়। তাহসিন আহম্মেদও কেঁদে দেয়। দুই বাপ মেয়ের সেকি কান্না সবার চোখেই পানি চলে আসে। কণা আরো অনেক সত্যি জানতে পারে। যার জন্য মহুয়া জাহানের প্রতি কণার মনে ঘৃণার জন্ম হয়। সে ঠিক করে তার বাবার আর তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের শাস্তি তাদেরকে সে দিবে। অহি কণাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। নোমান আর বন্যাও কণাকে ধরে কান্না কাটি করে। কিন্তু সাফাত কণার কাছেও আসে না। কণা সাফাতের সামনে যেতেই সাফাত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কণা বুঝতে পারে সাফাত তার ওপর রেগে আছে। কণা অনেক কষ্টে সাফাতের রাগ ভাঙায়।

কণা কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আদিয়াত এখনো ওয়াশরুমে। আগামী আধ ঘন্টার আগে যে আদিয়াত ওয়াশরুম থেকে বের হবে না তা কণা জানে।

৯৬

আভিয়ানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কণা। ভিতরে ঢুকবে নাকি ঢুকবে না তা নিয়ে দ্বিধায় আছে কণা। কণা নক করে। আভিয়ান অফিসের কিছু ফাইল দেখছিল। দরজায় খট খট করে শব্দ হওয়ায় চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। দরজার সামনে কণাকে দেখে সে একদমি চমকায় না। বেশ স্বাভাবিক গলায় বলে,

আজ সুর্য কোন দিকে ওঠেছে মিসেস দেড় ব্যাটারি আমার রুমে? আহ আমার তো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

কণা কিছু না বলে দৌড়ে এসে আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।

চলবে…..

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_৪৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আজ সুর্য কোন দিকে ওঠেছে মিসেস দেড় ব্যাটারি আমার রুমে? আহ আমার তো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

কণা কিছু না বলে দৌড়ে এসে আভিয়ানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। কণা এমন ব্যবহারের আভিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সে এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে জানত কণা আসবে কিন্তু এসে এভাবে কেঁদে দিবে সেটা ভাবেনি আভিয়ান।

ভাইয়া।

কণার এমন কাতর কন্ঠে ভাইয়া শুনে আভিয়ানের বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। আভিয়ান ভুলেই গেছে কণা লাস্ট কবে এভাবে তাকে ডেকেছিল। আভিয়ান জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কণা বলে,

ভাইয়া তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও। আমি না বুঝে না জেনে তোমাকে অনেক অপমান করেছি। তুমি আমার ভালোর জন্য এতো কিছু করেছ আর আমি তোমাকেই ভুল বুঝে গেলাম প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও। নাহলে আমি নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয়ে যাব।

আভিয়ানও কণাকে জড়িয়ে ধরে। কণার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

বাহ ভালোই তো আদিয়াতকে বশ করেছিস। তোকে কোনো কথায় না বলে থাকতেই পারে না। আদিয়াত আয়মানও বউ পাগল হয়ে গেলো। ভাবা যায়?

আমি কাঁদছি আর তুমি আমার সাথে মজা করছ?

মজা কই করলাম? যেটা সত্যি সেটাই বললাম আমি। আমি কী কিছু ভুল বললাম নাকি? যে আদিয়াত আয়মানের জন্য সব মেয়েরা পাগল সেই আদিয়াত আয়মান মিহিকা তাহসিন কণা বলতে অঙ্গান।

কণা নাক টেনে টেনে বলে, তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না বলে কথা ঘুরাছ? তুমি আমার ওপর অনেক রেগে আছো তাই না? আমি কী করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে বল ভাইয়া? আমি তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারব।

ধুর পাগলি আমি তোর ওপর একটুও রেগে নেই। ভাইয়ার কাছে কেউ ক্ষমা চায়? এতো বছর পর যে তুই আমাকে এভাবে ভাইয়া বলে ডাকলি এটাই যথেষ্ট। তুই কোনো ভুল করিসনি। তুই তো সেভাবে চলেছিস যেভাবে আমরা চালাতে চেয়েছি। আমার জন্যই তো তোর জীবন নরক হয়ে গিয়েছিল। তুই সুখে আছিস এটাই আমার প্রাপ্তি। আমার আর কিছুই চাই না।

কিছুই চাও না? একটা মিষ্টি বউও চাও না?

আভিয়ান মাথা চুলকে মুচকি হেসে বলে, বউ তো সবারই দরকার আছে। এটা চাইতে হয়। গরমের দিন বাতাস করার জন্য একটা বউ দরকার। শীতের দিন শীত কমানোর জন্য বউ দরকার। একটু আধটু রোমান্স করার জন্য বউ প্রয়োজন।

ছিঃ তুমিও উনার সাথে থাকতে থাকতে বেহায়া হয়ে যাচ্ছ। ছোট বোনের সামনে কী বলতে আছে আর কী বলতে নেই সেই কান্ড ঙ্গানও নেই?

এই উনিটা কে?

কণা কিছু না ভেবেই ফট করে বলে দেয়, কে আবার তুর্ণ ভাইয়া।

কথাটা বলেই কণা মুখ চেপে ধরে। মুখ ফসকে তুর্ণ বলতে গিয়ে তুর্ণ বলে ফেলছে। আভিয়ানের চোখে মুখে খেলে যাচ্ছে দুষ্টুমির হাসি।

আচ্ছা কণা তোর মনে হয় না। তোর তুর্ণ ভাইয়ার এবার একটা বিয়ে করার দরকার। বয়স তো অনেক হলো এই বয়সের ছেলেরা এক দুটো সন্তানের বাপ হয়ে যায়। আর বেচারা তোর তুর্ণ ভাই এখনো সিঙ্গেল। মেয়ে দেখা শুরু করে দে। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে এবার তোর তুর্ণ ভাইকে বিয়ে করিয়ে দেই।

আমি থাকতে পাত্রী দেখার কী দরকার?

বোন দিয়ে কী সবকিছু হয়? একটা বউও তো দরকার।

একদম ঠিক বলছ আভিয়ান। আমিও ভাবছি এবার একটা বিয়ে করেই ফেলব।

কণা কোমড় হাত দিয়ে রেগে বলে, আপনার সাহস তো কম না। আমি থাকতে আপনি আবার বিয়ে করতে চাইছেন।

আদিয়াত ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখে বলে, বিয়ে তো করতেই হবে। বউ যদি আমাকে ভাই ডাকে। তাহলে সোনা, মনা, জানু, কলিজা, আত্না, হৃৎপিন্ড, লিভার, কিডনি ডাকার জন্য তো আরেকটা বিয়ে করতেই হবে।

কণা আদিয়াতের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, ইউ?

তোমার ভাই।

কণা রেগে মেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কণা রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আদিয়াত আর আভিয়ান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তারা দুজন ইচ্ছে করেই এতক্ষণ ধরে কণাকে রাগাচ্ছিল।

৯৭

অহি বেলকনিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি ঐ দূর আকাশের দিকে। চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে। আকাশে ঘন কালো মেঘ। আকাশও আজ অহির সাথে পাল্লা দিয়ে মন খারাপ করছে। অহি তারা বিহীন অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে তার মনেও যে মন খারাপের কালো মেঘ জমে আছে। অহির পাশে ফোনটা বেঁজে জ্বলেছে। ফোনের স্কিনে সাফাতের হাসি মুখের একটা ছবি ভাসছে। ফোনটা অনবরত বেঁজেই চলেছে কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই অহির। অহি তো বিকালের ঘটনাটা মনে করছে। কণা তো আভিয়ানের কাছে ক্ষমা চাইলো। সে কী করে চাইবে? সে তো অনেক বেশি অপমান করেছে আভিয়ানকে। এমনকি ভার্সিটির সকলের সামনে আভিয়ানকে বলছে, সে আভিয়ানকে ভাই হিসেবে মানে।

২ মাস আগে

কণা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ পিছন থেকে আদিয়াত কণাকে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

তোমাকে কিছু বলার ছিল ধূলিকণা।

আদিয়াত কথা বলার সময় আদিয়াতের ঠোঁট বার বার কণার কানের লতিতে স্পর্শ করছিল। কণা আদিয়াতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে। কণা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

হুম বলুন।

তোমার কিছু সত্যি এখনো জানা বাকি আছে। সেগুলোই আমি তোমাকে এখন বলব। কিন্তু তোমাকেও প্রমিস করতে হবে সব শোনার পর তুমি কান্না করতে পারবে না?

কণা কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ওকে প্রমিস।

আদিয়াত কণাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

তোমাকে একদিন বলেছিলাম, সহজে কাউকে বিশ্বাস কর না। তুমি যাকে বিশ্বাস কর সে তোমাকে ঠকাতে পারে। যাকে তুমি সব থেকে বেশি অবিশ্বাস কর সেই হয়তো তোমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত কেউ।

হুম।

আভিয়ান সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?

উনি একজন খুবই জঘন্য মানুষ। উনি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝেন নাহ। নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে উনি হিংস্র বাঘের মতন হয়ে যান। সারাদিন শুধু সুযোগ খোঁজেন কীভাবে আমাকে অপমান করা যায়। আমাকে অপমান না করলে উনার বোধ হয় পেটের ভাত হজম হয় না। বুঝি না উনার সাথে আমার কী এমন শত্রুটা যে, উনি আমাকে অলটাইম অপমান করেন? আমি উনার একমাত্র কাজিন। উনি আমাকে ছোট বোনের মতো না ভালোবাসে সব সময় সবার সামনে হেনস্তা করার সুযোগ খোঁজেন। আই যাস্ট হেইট হিম।

কণার কথা শুনে আদিয়াত হো হো করে হেসে দেয়। কোনো মতে নিজের হাসি কনট্রোল করে বলে,

আভিয়ান তো পাকা এক্টর হয়ে গেছে। অভিনয়ের দুনিয়াতে গেলে বেশ নাম কামাতে পারত। এতো ভালো অভিনয় করলো যে, আমার সহজ সরল ধূলিকণার মনেও তার জন্য ঘৃণা জন্মে গেলো।

মানে?

মানে এটাই আভিয়ান তোমার সাথে এতদিন যা খারাপ আচারণ করেছে সবটাই অভিনয় ছিল।

কণা আদিয়াতের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায়। আদিয়াত কণার এমন দৃষ্টি দেখে মুচকি হেসে বলে,

এক সময় আভিয়ান তোমাকেও অহির মতো ভালোবাসতো। তোমাকে আগলে রাখত। তোমাকে কেউ কষ্ট দিলে তার অবস্থা খারাপ করে দিত। আভিয়ানের সামনে তোমাকে কেউ কোনোদিন অপমান বা কষ্ট দিতে পারত না।
কিন্তু হুট করেই আভিয়ান চেইন্জ হয়ে গেলো। যে আভিয়ানের সামনে কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারত না। সেই আভিয়ান নিজেই তোমাকে কষ্ট দিত অপমান করত।

হুম। তখন আমার খুব খারাপ লাগত। আভিয়ান ভাইয়ার এমন চেইন্জ হয়ে যাওয়া আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আভিয়ান ভাইয়ার বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ করতাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে বলতাম আমার ভাইয়াকে যেনো আবার আগের মতো করে দেয়। কিন্তু আল্লাহ আমার কথা শুনেনি। উল্টো আভিয়ান ভাইয়াকে আমার প্রতি আরো কঠোর করে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।

আদিয়াত মুচকি হেসে বলে, সবটাই অভিনয় ছিল। আমি আর আভিয়ান প্লেন করে সবকিছু করে ছিলাম।

কীভাবে?

পাপা আমাদের নিয়ে বিদেশ চলে যাবার বেশ কিছু বছর পর আমি ফিরে আসি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি। একদম তোমার যোগ্য করে। অল্প বয়সে বাবার সাথে বিজন্যাসে হাত দেই। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যায়। অল্প সময়েই বেশ নাম ডাক হয়ে গিয়েছিল আমার। এমন ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেনো তোমাকে নিজের করে পাওয়ার পথে যাতে কোনো বাধা না থাকে।কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় অন্য জায়গায়। আমি তোমাদের বাসা চিনতাম নাহ। তুমি কোনোদিন তোমাদের বাসায় যাওয়ার কথা বলনি। আর আমি কোনোদিন নিজে থেকে তোমাদের বাসায় যাওয়ার কথা বলেনি। তোমার পরিবার সম্পর্কে কিছু জানতাম না। তখন ছোট ছিলাম এতোকিছু জানার আগ্রহ ছিল না। তোমাদের বাসার তোমাকে, অহিকে আর আভিয়ানকেই শুধু আমি চিনতাম। তোমাদের নাম দিয়ে তো আর তোমাদের খোঁজা সম্ভব না। ততদিন তোমরা বড় হয়ে গিয়েছিলে। ফেইসের গঠন পরিবর্তন হয়েছিল। দৈহিক পরিবর্তন হয়েছিল। তবু তোমাদের খোঁজার অনেক চেষ্টা করি কিন্তু ফলাফল বার বার শূন্য। কী করব না করব ভেবে পাচ্ছিলাম না? নিজেকে দিশাহারা লাগছিল। মনের মাঝে তোমাকে হারানোর ভয় দিনকে দিন তীব্র হচ্ছিল। চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত হয়েছিল তোমাকে দেখার জন্য। তোমাকে বার বার খোঁজার পর আমি ব্যর্থ হয়ে নিরাশ হয়ে পড়ি। তখন আমার জীবনে তোমাকে পাবার আশার আলো নিয়ে আসে আভিয়ান।

রাস্তার মাঝে আনমনে হাঁটছিলাম। তখন একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লেগে ঐ ছেলের হাতের ফাইলের সমস্ত কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিচে পড়ে যায়। আমি সরি বলে যখন ছেলেটির কাগজগুলো তুলতে সাহায্য করছিলাম। তখন ছেলেটার একটা সার্টিফিকেটে আমার চোখ আটকে যায়।

চলবে……..