#তুমি_আসবে_বলে
#নুসাইবা _ইভানা
পর্ব- ২৯
আরহার দু’বাহুতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে মেঘ আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরহার উত্তরের আশায়।
আরহার আজ নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়নি সেও তাকিয়ে আছে মেঘের চোখের দিকে, কথা হচ্ছে তবে চেখে চোখে যেনো হাজার বছরের জমানো কথা। আরহার দৃষ্টির কাছে হার মানতে হচ্ছে মেঘের। এচোখের গভীরতা অনেক, আরহা সরে আসতে চাইলে মেঘ আরহাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয় ঝুম বৃষ্টির পরে পরিবেশ যেমন শীতল এই মূহূর্তে মেঘের হৃদয়ে তার যেয়েও শীতলতা বয়ে গেলে।রাতের আধারে দু’জন মানব মানবীর নিশ্বাসের শব্দ, দু’জনের হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি স্পষ্ট শুনতে পারছে দু’জনেই নীরব নিশ্চুপ। নীরবতা ভেঙ মেঘ কাতর স্বরে বললো, আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না! শুধু একবারে জন্য এই শুন্য হৃদয়টাকে পূর্ণ করা যায় না! কথা দিচ্ছি আমি নিরাশ করবো না।
হুট করে মেঘের এতো কাছে আশা মেঘের নিশ্বাস তার নিশ্বাস মিশে যাওয়া সব মিলে আরহার হৃদয়ের অবস্থা মেসামল। তবে এতো এতো অনূকূল পরিস্থিতি পার করতে করতে আরহার হৃদয় নারকেলের মতো হয়ে গেছে।
উপরে শক্ত আবরণে ঢাকা পরে গেছে ভিতরের কোমল হৃদয়।
আরহার চোখের কোনের লুকানো জলটুকু সযত্নে মুছে দিয়ে গালে হাত রাখলো মেঘ, আরহা কিছুটা কেঁপে উঠলে এই শীতল স্পর্শে। মেঘ আবার বললো,চুপ করে থেকে না হৈমন্তিকা তোমার নীরবতা আমার হৃদয়ে বিরহের ঝড় তুলছে! এই ভঙ্গনো হৃদয়ের কথা ভেবে অন্তত কিছু বলো,
আরহা মুখ খুলে অভিমানী কন্ঠে বললো,
– ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন!
– মানছি ভুল করেছি
– অবিশ্বাস করেছিলেন!
– এজীবনে দ্বিতীয়বার আর হবে না
– আঘাত করে ছিলেন!
– ভালোবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলবো
আপনার জন্য যতটা মুখে বলা সহজ আমার জন্য মেনে নেয়া তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি কষ্টকর
আচ্ছা তখন কোথায় ছিলেন? যখন অন্যের বাসায় আশ্রিতা ছিলাম!
যখন প্রতিনিয়ত নিজের মানুষ হারোনাোর যন্ত্রণায় দিনের পর দিন কাতরাচ্ছিলাম!
যখন ভুল বুঝে আঘাত করেছিলেন! কোন কোন ভুলের মাসুল দিবেন।
মেঘের কাছ থেকে একটু সরে এসে ডান হাতের স্লিভটা একটু উপরে তুলে বলে সব কিছু বাদ দিলাম আপনি আগে আমার এই ক্ষতচিহ্ন দূর করে দিন!
হৃদয়ের আঘাতের কথা বাদ দিলাম শুধু শরীরের এই আঘাত সারিয়ে দিন। যেটা প্রতিনিয়ত আমাকে মনে করিয়ে দেয় আপনার নির্মমতার কথা।
মেঘের দৃষ্টি নত ভাষা নেই এই প্রশ্নের উত্তরের।
আরহা আবার বললো সে সব না হয় বাদ দিলাম, আপনি শুধু আমার চোখের পানি গুলো ফেরত দিন!আমার নির্ঘুম রাত গুলোতে শান্তির ঘুম এনে দিন!
মেঘ কোন কথা না বল আরহাকে একবারে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো। মেঘের চোখের জল আরহার কাঁধে পরছে তবে এ মূহুর্তে আরহা অনূভুতি শুন্য। মেঘ কাতর স্বরে বললো দয়া করে আর কিছু বলো না আমি সহ্য করতে পারছিনা। তোমার মুখের প্রতিটি শব্দ আমার হৃদয় আঘাত করছে। মেঘ কাঁদছে দীর্ঘ চার বছর পর মেঘের চোখে পানি! ছেলেরা সহজে কাঁদে না কিন্তু আরহার কথাগুলো এতোটাই তীক্ষ্ণ যে মেঘের হৃদয়কে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে।
কেউ একজন ঠিক বলেছিলো, কথা যদিও তরবারী নয়! তবে তরবারির চেয়েও আঘাত দায়ক!
আরহা আহত কন্ঠে বললো, ছাড়ুন আমাকে যখন ঠিক এইভাবেই কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করার প্রয়োজন ছিলো তখন কোথায় ছিলেন?
যখন কারো কাঁধে এই ভাবেই অশ্রু বিসর্জন দেয়ার দরাকার ছিলো তখন কোথায় ছিলেন?
আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেইে!আমি একা বাঁচতে শিখে গেছি
– আর বলোনা একটু শান্ত হও। তুমি একবার আমাকে অনুভব করো শুধু একবার আমার হৃদয়ের আকুলতা বোঝার চেষ্টা করো শুধু এক মূহুর্তের জন্য নিজের অভিমানকে সাইডে রেখে আমার হৃদয়ে কান পেতে আহাজারি শোনো।আমি জানি তুমি ঠিক বুঝতে পারবে আমাকে।
শোন পাগলি ভুল বুঝে দূরে সরে থাকা যায়! তবে সে ভুল ভেঙ্গে গেল আর এক মূহুর্তের জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না।
আরহা মেঘের কলার ধরে বলে এখন এসেছেন কাছে টেনে নিতে!
“আর কিসের ভালোবাসা? কোন ভালোবাসার কথা আপনি বলছেন! যে ভালোবাসা সামান্য হাওয়ায় উবে যায় সেটা ভালোবাসা হতেই পারে না।
-মেঘ নিম্ন স্বরে বললো, আমিও কম কষ্ট পাইনি
– মেঘের কলার আরএকটু শক্ত করে ধরে বলে কষ্ট কাকে বলে আপনি জানেন?
এই যে আমাকে দেখুন জন্মের পর থেকে নিজের বাবাকে দেখিনি, বুঝ হওয়ার পর থেকে নিজের মাকে ধুঁকে ধুঁকে ম*র*তে দেখেছি, মায়ের মৃত্যুর পর প্রতিটাদিন ছিলো আমার জন্য যন্ত্রণা দায়ক।
এই যে শরীর দেখতে পাচ্ছেন এই শরীরে প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন মন বলতে তো কিছু ছিলোই না।
আপনার মা এসে নতুন জীবন দিয়েছিলো ভেবেছিলাম এবার হয়তো সব কষ্ট শেষ।
কিন্তু না আমার হৃদয়ে আঘাত করা বাকি ছিলো সেটাও আপনি পূর্ণ করে দিয়েছেন!
আর আমাকে কষ্টের কথা বলতে এসেছেন!
মেঘ আরহার হাতের উপর হাত রাখলো কোন শব্দে কোন ভাষায় আরহাকে সান্তনা দিবে সব ভাষাই যে অজানা। অসহায় দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ বুঝতে পারছে আরহার শরীরের টেম্পারেচার বেড়ে গেছে আরহার হয়তো জ্বর আসছে। মেঘ আরহার মাথায় চুমু খেয়ে আরহাকে কোলে করে নিয়ে বেডের পাশে বসলো, দু’জনের চোখে পানি, এতো কথা বলে আরহা শ্বাস বেড়ে গেছে তবুও আরহা আর কিছু বলতে চাইলো।
আরহা কিছু বলবে তার আগেই মেঘ আরহার ঠোঁট আঙুল ছুয়ে আদুরে কন্ঠে বলে, একদম চুপটি করে লক্ষী বউয়ের মতো বসে থাকো আমার কোলে, আমি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দেবো।
জ্বর আসছে মেডিসিন নিতে হবে তো নাকি! আরহা অবিশ্বাস নয়নে তাকিয়ে আছে, এমন স্বপ্ন সে কত শত বার দেখেছে। আচ্ছা এটাও স্বপ্ন নয়তো সকাল হলেই ভেঙ্গে যাবে নাতো! এতো কথা বলে আহত বাঘিনীর মতো চুপটি করে বসে আছে মেঘের কোলে।
টেবিলের ধোয়া ওটা কফিটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়েগেছে। ঠিক এখন যে ভাবে আরহা শান্ত হয়ে বসে আছে মেঘের কোলে।
নীলু আর ইমতিহান বসে আছে আরহাদের বাসায় এতো সময় ধরে সব কিছু খুলে বললো ইমতিহানকে
আরহাকে খুঁজতে যেয়ে ইমতিহানের সাথে দেখা হয় রাস্তায়। মেঘ কোন এক ফাঁকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো আরহা তার সাথে আছে।
ইমতিহানের কাঁধে মাথা রেখে নীলু বললো,আচ্ছা আমি এক সমান্য কাজের লোকের মেয়ে জানার পর তোমার ফ্যামেলির মানুষ আমায় মেনে নেবে তো! ছেড়ে চলে যাবে না তুমি আমাকে?
– একদম বাজে কথা বলবে না, তুমি আমার কাছে অসামান্য। তোমার পরিচয় দেখে তোমাকে ভালোবাসিনি তোমার সুন্দর মন আর বোকামি গুলোগে ভালোবেসেছি। তাই আমার কাছে তুমি সবচেয়ে দামী। না না না তুমি আমার কাছে অমূল্য
– কিহহহহ আমার কোন মূল্য নেই! জানতাম তুমি ঠিক আমাকে ছেড়ে যাবে।
– এই এসব আবল তাবল কি বলছো। অমূল্য মানে, পৃথিবীর কোন কিছুই নেই যেটা দিয়ে তোমার মূল্য নির্ধারণ করা যায়।
– ওহ এবার বুঝতে পারছি
– আর বুঝে কি করবে আমার ফিলিংসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।
নীলু দু’হাত দিয়ে ইমতিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, চলো ফিলিংসের একটা বাজাই।
– এই কখনো বদলে যাবে না তো
– মানে
– না মানে সবসময় আমার ফিলিংসের বারোটা বাজিয়ে এইভাবে আবার একটা বাজবে!
– না বিয়ের পর তোমার ফিলিংসের ৩টা বাজাবো
ইমতিহান নীলুর কপালে চুমু খেয়ে বলে ভালোবাসি পাগলি!
নীলু হেসে বলে আমি তো বাসি না।
– কিহহহহহহহহহহহ
– না মানে আমি তাজাবাসি
-এটা আবার কেমন কথা?
– এটা হলো নীলিমা কথা
ইমতিহান নীলুর নাক টেনে বললো, দুষ্ট বউ আমার
তুমুল বৃষ্টি শেষ আকাশের মেঘগুলো ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। আচ্ছা ঠিক এভাবে কি আরহার হৃদয় থেকে অভিমানের মেঘ সরে ভালোবাসার সূর্য উদিত হবে?
#চলবে
#তুমি_আসবে_বলে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব- ৩০
মেঘের বুকে গুটিশুটি হয়ে বাচ্চাদের মতো মেঘের সাথে মিশে ঘুমিয়ে আছে আরহা।
আগমন ঘটেছে এক নতুন প্রভাতের, আগামীকাল রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে তা বুঝা দায়। জানালার পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রভাতের সোনালী আলো চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললো আরহা, পাশে তাকিয়ে মেঘকে দেখেই হৃদযন্ত্রে তবলা বাজতে শুরু করলো। আরহা ধীরে ধীরে সরে আসলো, উঠে জানালার পর্দা ঠিক করে দিলো যাতে মেঘের চোখে আলো না পরে।
ফ্রেশ হয়ে নিজের শাড়ী পরে বের হলো। মেঘ তখনো গভীর ঘুমে। পা টিপে টিপে মেঘের কাছে এসে কিছু সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, আলতো করে মেঘের কপালে চুমু খেলো, মেঘের ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে নিলো। দরজা খুলে বের হওয়ার আগে এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার থেকে দূরে আমি নিজেই থাকতে পারবো না! তবে আর একটু দৌড়ে ঝাপ করো, আর একটু ব্যাকুলতা অনুভব করো, আর একটু খুঁজে ফেরো আমাকে। একটা ফ্লাইংকিস দিয়ে দরজা আস্তে করে বন্ধ করে চলে গেলো। নিচে এসে মনে পরলো এভাবে বেড় হলে তো সবাই তাকে ঘিরে ধরবে। আগামীকাল তো এই ড্রেসে কনসার্ট করেছে। কি করা যায়! নিজের ফেনটাও তো ফেলে এসেছি, আসেপাশে তাকিয়ে তেমন কিছুই চোখে পরলো না। গুটিগুটি পায়ে আবার চলে আসলো উপরে এবার আর মেঘের রুমে যাওয়ার সাহস করলো না। তার পাশের রুমে যেয়ে খুঁজতে লাগলো নাহ মেয়েলি কোন ড্রেস নেই। হতাশ হয়ে যখন বের হয়ে আসবে তখন চোখ পরলো একটা শপিং ব্যাগের দিকে হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিতেই খুশি হয়ে গেলো। ওয়াও একটা গাউন খুব সুন্দর। আরহা কাল বিলম্ব না করে দ্রুত ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পরলো। একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলো, সকালের ঢাকা শহর ভালোই লাগে আরহার, ঘুম থেকে উঠেই কর্ম ব্যস্ত মানুষ গুলো নিজেদের কাজে লেগে পরে। গ্রামের মতো মোটেই ঢাকা শহরের সকালটা নীরব হয়না এখানে আলো ফোটার আগেই গাড়ীর হর্ণ, মানুষের কোলাহল শুরু হতে থাকে।
কাল রাতের কথা মনে পরতেই খিলখিল করে হেসে উঠলো আরহা। মনে মনে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলো….
মেঘ আরহাকে পাস্তা খাওয়ানোর ট্রাই করছে, আরহা নাক কুঁচকে বলে, আমি খাবো না এটা
– তাহলে কি ভাবে বেবিডল
– বিরিয়ানিহহহহহহহহহহহ
– আস্তে বললেও আমি শুনবো, তবে এই মধ্য রাতে বিরিয়ানি কোথায় পাবো?
– আরহা ইচ্ছে করে মেঘকে বিরক্ত করার জন্য হাত পা ছুড়ে কান্না জুড়ে দিলো, আমি বিরিয়ানি খাবো আমার বিরিয়ানি চাই।
– আচ্ছা আমাকে একটু সময় দাও দেখি ম্যানেজ করতে পারি কি না।
– আরহাকে বেডে শুয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসলো একবার ভাবলো অর্ডার করবে আবার ভাবলো নিজেই রান্না করি। কি করবে না করবে এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে ফুড পান্ড্যার মিড নাইট সার্ভিসের কথা মনে পরে গেলো, সাথে সাথে অর্ডার দিলো। যাক আজকে ফুডপান্ডা বাঁচিয়ে দিলো। ৩০ মিনিটে বিরিয়ানি নিয়ে রুমে এসে দেখে আরহা ঘুমিয়ে আছে আরহাকে দেখতেএকদম কিউট পরীর মতো লাগছে, মেঘ মনে মনে ভাবছে আচ্ছা ওকি সবার থেকে একটু বেশি সুন্দর?
আর একটু কাছে এসে খাবারের প্লেটটা রেখে দিয়ে আরহার পাশে আধ শোয়া হয়ে বসে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে, মনে মনে বলছে, তোমার নাম তো বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো, তবে আরহা নামটাও বেশ মানিয়েছে। আরহার কপালে চুমু দিয়ে আরহার মাথা নিজের বুকে নিয়ে আরহাকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরলো নিজেরো জানানেই।
আরহা সজাগ ছিলো,মেঘের আওয়াজ পেয়ে ঘুমের ভান ধরে। তবে বেশি ক্ষন ঘুমকে আটকে রাখতে পারেনি! ঘুমের অভিনয় করতে করতে সত্যি ঘুমিয়ে পরে।
আরহা বাসায় আসতে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় লেগেছে। বাসায় এসে কলিং বলে বাজাতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলো দিলো। আরহা বাসায় ডুকেই দেখলো নীলু আর ইমিতান সোফায় একসাথে
বোঝাই যাচ্ছে দু’জনেই অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে।
আরে রিলাক্স, এতো লজ্জা পেতে হবে না। আমিই তো জিজু, তোমার এক মাত্র শালিকা সো লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই।
– আরে লজ্জা আমরা কেনো পাবো কিউটিপাই লজ্জা তো পাওয়ার কথা… নীলু ইমতিহানের মুখ চেপে রেখে বললো হচ্ছেটা কি হুম! লাগামহীন কথা বললে মরিচ খাইয়ে দেবো।
হঠাৎ ইমতিহান আরহার পরণের ড্রেসটার দিকে খেয়াল করলো, এই ড্রেসটাতো লন্ডন থাকতে মেঘ কিনেছিলো! তুমি এই ড্রেস কোথায় পেলে সুইটি?
– আপনার রুম থেকে চুরি করেছি।
– তবে ড্রেসটা কিনেছে তোমার উনি।
– কেনো কিনেছে?কার জন্য কিনেছে?ওনার কি অন্যকোন চক্কর আছে নাকি?
– ব্রেক নাও এক সাথে এতো উল্টো পাল্টা কথা কেমনে বলো! আগে শুনে তো নাও পুরো কথা। একদিন আমি আর মেঘ নিজেদের জন্য শপিং করতে যাই, সেখানে আমি নীলুর জন্য দুটো’ ড্রেস কিনি। তখন মেঘ এই ড্রেসটা পছন্দ করে আর নিজের টাকা দিয়ে কিনে নেয়। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম এটা কার জন্য নিয়েছিস! তখন ড্রেসটা আমার হাতে দিয়ে বলে পছন্দ হলো তাই নিলাম! আমারতো দেয়ার মতো কেউ নেই! বরং তুই তোর প্রিয় মানুষটাকে দিয়ে দিস!
– আগে বলবেন তো।
– বলার সময় দিলে তো বলবো।
– বাইদা রাস্তা আপনি বিয়ে না করেই সারারাত শশুর বাড়িতে কেনো ছিলেন?
– বাইদা মেইন রোড কিউটি, তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আশ্রয় নিয়েছিলাম এই বাসায়। দেখো না একটু রুম পর্যন্ত যেতে দেয়নি! পুরো রাত এখানে বসিয়ে রেখেছে।
– একদম ঠিক কাজ করেছে। বিয়ের আগে শশুর বাড়িতে কোন জামাই আদর চলবে না।
নীলু দু’কাপ কফি এনে দু’জনের হাতে দিয়ে বলে কফি খেতে খেতে গল্প কর!
ইমতিহান উঠে বলে নীলু এখন আমি কফি খাবোনা বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর।
– খাবে না মানে খেতেই হবে। না খেলে এক পা নড়তে দেবো না।
– বাচ্চাদের মতো জেদ করছো কেনো
– কোন কথা নেই খেতে বলছি মানে খেতেই হবে।
আরহা হাসতে হাসতে বলে, জিজু না খেয়ে উপায় নেই
ইমতিহান কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে, আমার জীবন তেজপাতা বানানোর জন্য স্বাগতম মহারানী
নীলু মুখ ভেঙচি কেটে বলে,তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি দেখে আসমানে উড়ছো। একবার যদি বিয়েতে অমত করি তখন বুঝবে।
– আরে পাগলি রাগ কর কেনো মজা বুঝো না। আচ্ছা এবার তাহলে আসি। ইমতিহান চলে যেতেই। নীলু আরহার দিকে ফিরে তাকালো, মনে মনে ভাবছে আচ্ছা কোন ভাবে আরহা কি ভুলে গেছে আজকের দিনটাকে!
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? কিছু বলবে?
– না। কি বলবো তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয় এক সাথে ব্রেকফাস্ট করি।
আরহা মনে মনে ভাবছে, আমি জানি তুমি কি ভাবছো তবে তোমাকে বুঝতে দিতে চাইছি না। আজ আমি সিলেট যাবো, একা যাবো। যা কিছু হোক আমার সাথে হোক তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনা।
– কিরে তুই এতো কি ভাবছিস?
– কিছু না’তো আচ্ছা ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি
হিয়া একটা চেয়ারে বসে আছে, নিজের পাপে আজ তার এই অবস্থা। এর চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো,তিন তিনটে তাজা প্রাণ তার ভুলে ঝড়ে গেছে। এখন প্রতি মূহুর্তে সে সেই ম*র*ণ যন্ত্রণা ভোগ করছে অথচ মৃ*ত্যু তাকে ধরা দিচ্ছে না। হিয়ার আজ খুব মনে পরছে ইমতিহানের বলা শেষ কথাটুকু, কোন মানুষের সত্যিকারের ইমোশন নিয়ে খেললে তার বিচার উপরওয়ালা ঠিক করবেই। আজ তুমি আমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিচ্ছ! এমন একদিন আসবে, তুমি ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল হবে! তবে কেউ তোমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসবে না। কারো সহজ সরল সুন্দর মনটাকে তুমি যে আঘাতে জড়জড়িত করেছো! তা’ সুধে আসলে তুমি ফেরত পাবে। কথা গুলো ভাবতেই চোখের কোন ভিজে উঠলো। এই চোখের পানিটুকু এখন হিয়ার নিত্যদিনের সঙ্গী।
মেঘের ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠে আরহাকে খুঁজতে লাগলো। নাহ কোথাও নেই, জ্বর নিয়ে একাএকা কোথায় গেলো? নিজের ফোনটা বের করতেই একটা মেসেজের কিছু অংশ দেখে মেঘের হাত থেকে ফোনটা নিচে পরে গেলো।
#চলবে
#তুমি_আসবে_বলে
#নুসাইবা_ ইভানা
পর্ব-৩১
হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে পায়চারি করছে এক যুবক, চোখমুখে ফুটে উঠেছে প্রিয়জনকে হারানোর আতংক। মেঘের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে চিৎকার করে কাঁদতে মাত্র কয়েক ঘন্টায় ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো। সারা দেশের টিভি নিউজে একটাই খবর প্রচার হচ্ছে।জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আদিয়াত নুজহাত আরহা এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে আজ সকাল এগারোটায় তিনি সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার গাড়ীটি নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে অপর গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হয়।
এতে গুরুত্ব আহত হন তিনি। হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন এখনও তার ব্যাপারে সঠিক কিছুই বলা যাচ্ছে না।
নীলু বুঝতেই পারছেনা কি থেকে কি হয়ে গেলো, এই তো সবকিছু ঠিক ছিলো সমান্য কিছু সময়ের ব্যবধ্যানে সবকিছু উল্টপাল্ট হয়ে গেলো! আরহার বাবাও এসেছেন তিনি আজ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে সেই দৃষ্টি হয়তো মেঘকে বলছে, আমিতো আমার মেয়েটাকে দেখে রাখতে বলেছিলাম! এতোদিন দূর থেকে নিজেই দেখে রেখেছি তাহলে তুমি কেন আমারর মেয়েটার খেয়াল রাখতে পারলে না।
এতোদিন পর ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও হারানোর ভয় কাবু করে ফেলেছে মেঘকে। রাতের পরা কুঁচকানো টি শার্ট আর এলোমেলো চুল, আতংকিত চেহারা বলে দিচ্ছে কতটা কষ্টে আছে মেঘ
অপারেশন থিয়েটারে থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসলেন সবাই অধির আগ্রহে ডক্টরের মুখ পানে তাকিয়ে আছে, ডক্টর মাথা নিচু করে বললো, “সি ইজ নো মোর। কথাটা মেঘের কানে পৌঁছাতেই মেঘ ডক্টরের কলার চেপে ধরে বলে তোর সাহস হলো কি করে এসব কথা বলার। আমার আরহা নেই এটা তুই কেনো বলবি ও বেঁচে আছে! বেঁচে আছে ও। কয়েকজন মিলে ডক্টরকে ছড়িয়ে নিলো। কিছুসময় পর কয়েকজন নার্স আরহার বডিটা নিয়ে বের হলো সাদা কাপড়ে মুখটা ঢাকা। মেঘ সাথে সাথে নিচে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।ইমতিহান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বললো,এখন তোর অনেক দ্বায়িত্ব নিজেকে সামলে নে।
ইমিতানের কথা শুনে মেঘ ইমতিহানকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে, এটা আমার আরহা হতেই পারে না। কিছুতেই না। আমার মন বলছে আমার আরহা আছে আছে সে আমার খুব কাছাকাছি আছে। কারো সাহস হচ্ছে না মুখটা দেখার কারণ এক্সিডেন্টে মুখটা থেতলে গেছে। চেহারা বোঝার উপায় নেই। মেঘ বসা থেকে দৌড়ে উঠে আসলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটার আঙুল চেক করতে লাগলো, কাল রাতেই সে আরহার হাতে একটা ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিয়েছিলো। না নেই কোন হাতে নেই। মেঘ জোড়ে জোড়ে হাসছে। মেঘের হাসি দেখে সবাই ভাবছে মেঘ হয়তো মেন্টালী সিক হয়ে পরেছে। হাসি থামিয়ে আরহার বাবার সামনে এসে বলে, আঙ্কেল এটা আমাদের আরহা নয়! আমাদের আরহা বেঁচে আছে এটাতো অন্যকেউ।
– শান্ত হও বাবা নিজেকে সামলে নাও সত্যিটা মেনে নাও!
– আপনি বুঝতে পারছেন না আমি সত্যি বলছি এই দেখুন এই হাতে আমার দেয়া রিংটা নেই। আর দেখেন এই পায়ে একটা পায়েল থাকতো তাও নেই। আমার আরহা আর একটু চিকন ছিলো আর এই মেয়েটা মোটা।
– তুমি ভুল ভাবছো বাবা মোটা দেখাচ্ছে কারন এক্সিডেন্টের কারণে শরীর ফুলে উঠেছে।
এবার নীলু ছুটে আসলো শরীর থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে দিয়ে পেটের দিকের কাপড় সরিয়ে চিৎকার দিয়ে সরে আসে। ইমতিহান নীলুকে আগলে নেয়। ততক্ষণে নীলু সেন্সলেস হয়ে পরে।
ইশতিয়াক সাহেব মেঘের মাথায় হাত রেখে বলে, তোমাদের ভাগ্য হয়তো এ পর্যন্ত ছিল! মন খারাপ না করে ওকে সুন্দর মতো শেষ বিদায় দাও।
মেঘ মূর্তির মতো বসে আছে মনে হচ্ছে সে পাথরে গড়া মূর্তি কোন হেলদোল নেই। ইশতিয়াক সাহেব বললেন, ওঠো বাবা এখন আমারা ছাড়া আমাদের সান্ত্বনা দেয়ার কেউ নেই। আমার মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
মেঘ গর্জে উঠে বলে, কখন থেকে বলছি আরহা বেঁচে আছে, বেঁচে আছে। ও আমকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারেনা। মেঘের চিৎকার শুনে হসপিটালে মানুষ জড়ো হয়ে গেলো।
হিয়া টিভিতে নিউজটা দেখার পর থেকে মনের মধ্যে কেমন অস্থিরতা অনুভব করছে ইচ্ছে করছে একছুটে যেয়ে একনজর মেয়েটাকে দেখে আসুক। কিন্তু নিজের শারীরিক অবস্থার জন্য যেতে পারছে না।
সামিরা হাসপাতালে এসে মেঘের কাছে গেলো,কোমল কন্ঠে বললো, আচ্ছা তোর কথা মেনে নিলাম এটা আরহা না। ঠিক আছে, এবার চল এর দাফন সম্পন্ন করে আরহাকে খুঁজতে বের হই। আরহাকে নিয়ে আসলে তো সবাই বিশ্বাস করবে, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
মেঘ সামিরার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, তুই বিশ্বাস করেছিস এই মেয়েটা আরহা নয়!
– বিশ্বাস করব না কেনো তুই যখন এতো কনফিডেন্স নিয়ে বলছিস তারমানে সত্যি হবে।
– বিশ্বাস কর আমার কথা এটা আমার আরহা হতেই পারে না। কাল রাতেই আমি ওকে ওই ডায়মন্ড রিংটা পরিয়ে দিয়েছি কিন্তু এই মেয়ের হাতে সেটা নেই। আমার আরহার এক পায়ে পায়েল ছিলো এই মেয়ের তাও নেই। তার মানে আমার আরহা বেঁচে আছে বল?
মেঘের পাগলামি দেখে সামিরা কেঁদে ফেললো, তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল, শোন এটা শুধু তোর আর আমার মধ্যে সিক্রেট থাক, এটা এখন কাউকে বলতে হবে না। আগে এই মেয়েটাকে বিদায়ের ব্যবস্থা করি!
মেঘ উঠে দাঁড়ালো স্বাভাবিক ভাবেই তার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না এই মেয়েটাই আরহা। বরং বারবার মনে হচ্ছে আরহা আছে খুব কাছেই আছে।
হায়দার মিয়া কিছু এতিম বাচ্চাদের খাবার খাইয়েছেন
মসজিদের ইমাম সাহেবকে নিয়ে কবর জিয়ারত করে এসেছেন। এখন একা একা দাঁড়িয়ে আছে কবরের পাশে, মৃদু স্বরে বললো, বোন তোর মেয়েটাকে আর খুঁজে পেলাম না কোথায় আছে কেমন আছে? জানা নেই তবে আশা করি যেখানেই আছে ভালো আছে। জানিস ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, বড় হয়ে কেমন হয়েছে দেখতে?তোর ভাবি তার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে দেখ আজ সেও ক্যা*ন্সা*রে আক্রান্ত যে যন্ত্রণা তুই সহ্য করেচিস আজ সেও সহ্য করছে। কথায় আছে না পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। এখন চোখে দেখছি। আমার মেয়েটা আজ আমার চোখের সামনে থাকতো শুধু ওর ভুলের জন্য নেই।তবে জানিস এমন নিষ্ঠুর মানুষটা এখন কোমল স্বাভাবের হয়ে গেছে। এখন সেও আরহাকে এক পলক দেখতে চায়! একটিবার তার কাছে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চাইতে মরিয়া হয়ে আছে।হায়দার মিয়া নিজের বোনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মনের কথাগুলো বলছেন। এমন সময় বারো বছরের একটি ছেলে আব্বাজান বলে ডেকে উঠলো, হায়দার মিয়া পিছু ফিরতেই নিজের ছেলেকে দেখতে পেলো।
– আর কত কাঁদবে আব্বাজান বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে চলো বাসায় যাবো।
– আচ্ছা চল বাসায় যাই বিকেলের দিকে আবার আসবো, তুই কি আসবি আমার সাথে হারিছ?
-আচ্ছা আসবো
হসপিটাল থেকে লা*শ বাসায় নিয়ে এসে গোসল করিয়ে, জানাজা নামাজ পড়ে, লা*শ নিয়ে এসেছো কবরস্থানে। মেঘ নিজে কাঁধে করে নিয়ে এসেছে তার মনে প্রবল আস্থা আছে এটা আরহা নয়।
দাফন কার্য সমাপ্তি করে মেঘ কারো সাথে কোন কথা না বলে চলে গেলো কোথাও একটা। ইমতিহান সাথে যেতে চাইলেও তাকে নেয়নি সাথে। শুধু বলে গেছে, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!
আরহার বাবা কবরের পাশেই বসে আছে, নিজের মেয়েটাকে একবার ছুয়ে দেখা হয়েছিল,আর কখন ছুঁতেওে পারেনি,কেঁদে কেঁদে বলছে, আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় বাবা, যে নিজের মেয়ের কাছে থেকেও দূরে থেকেছে, বারবার বলতে চেয়েও বলতে পারিনি আমি তোর বাবা। একবার আমায় বাবা বলে ডাকবি? শেষ আশা টুকুনও আজ দাফন করে দিলাম মাঠিতে, পারলে এই অসহায় বাবা টাকে ক্ষমা করে দিস!
মেঘ পুলিশ স্টেশনে যেয়ে প্রতিটি রাস্তার মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো অশ্রু, আচ্ছা এটা কি আনন্দ অশ্রু? নাকি বিরহের অশ্রু?
#চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰