তুমি ছুঁয়ে দিলে এ মন পর্ব-২১

0
35

#তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন

পর্ব ২১

#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

নিজের অজান্তেই ত্রিশা আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে, ” লাভ ইউ ডিয়ার”

আহনাফ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
তার সে কাঙ্ক্ষিত রমনিটি যে তাকে এভাবে বরণ করবে তা সে কল্পনাতেও ভাবেনি। হৃদপিন্ডে যেখানে এক অগ্নিকুন্ড ছিলো সেখানে যেনো এক সুশীতল হাওয়া নাড়া দিয়ে গেলো। অতি আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে। প্রত্তুত্তরে সে যে “ভালোবাসি” বলবে তার ও অবস্থা নেই। বাক্যহীন দাঁড়িয়ে রইলো ঠাঁই!

ত্রিশার নিজের মনের মধ্যে তিলে তিলে আহনাফের প্রতি যে ভালোবাসা জমে গিয়েছে, আজ সেটা ছিলো তারই বহি:প্রকাশ! কিন্তু যখন মনে হলো ওর বান্ধবীর টিম “স্টার জলসা পার্টি” ওপর তলা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের এই সিন চোখ বড় বড় করে অষ্টম আশ্চর্যের ন্যায় দেখছে, তখন ঝটিকা সরে এলো। তাছাড়া সংকোচ তো আছেই।

এভাবে দৌড়ে এসে আহনাফকে জড়িয়ে ধরা আবার কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই ছাড়িয়ে চলে যাওয়া, আহনাফের কিছুই বোধগম্য হলো না।

সরে এসেই পুনরায় ত্রিশা পরপর দুবার বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে আর একবার আহনাফের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আর সংকোচ নিয়ে কাঁপা কন্ঠে বললো, ” আই মিন….আই লাভ ইউ ডিয়ার স্যার!”

সাথে সাথে স্টার জলসা পার্টির সবাই ও ভেংচিয়ে একযোগে কোরাস ধবনি করে বলে উঠলো, ” আই লাভ ইউ ডিয়ার স্যার….”

এতে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হলো, যা আহনাফ ও ত্রিশা দুজনের জন্যই ভীষণ লজ্জাকর!

ত্রিশা লজ্জার সাথে ভয়ও পেয়ে গেলো। ভালোবাসার জন্য প্রপোজ করার আগে সে আহনাফের বেশ অনেকগুলো ধমক যে খেয়েছিলো! আহনাফের বিশ্বাস নেই, যদি এ কান্ডকীর্তির জন্য ধমক দিয়ে বসে।

তাই সে আস্তে আস্তে আহনাফ কে বলতে লাগলো, ” স্যরি স্যার, স্যরি, আমি ভুল করে ফেলেছি..”

আহনাফ আস্তে করে বললো, ” ইটস ওকে ত্রিশা”

ত্রিনা দৌড়ে এসে বলতে লাগলো,

” ত্রিশা, তুই না জানতাম ফাস্টিং(উপোস) এ ছিলি আই মিন প্রেমের ফাস্টিং এ ছিলি! আর এখন সেই ফাস্টিং ভেঙ্গে ডুবে ডুবে প্রেম জল খাচ্ছিস?”

ত্রিনার এহেন কথা শুনে ত্রিশা জন্মের লজ্জাটা পেলো। প্রত্তুত্তর আর কি দিবে? লজ্জায় লাল হয়ে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

ওদিকে স্নিগ্ধা সরাসরি আহনাফকে বলে উঠলো,
” স্যার তাহলে ত্রিশাকে ম্যাথ করানোর ফাঁকে ফাঁকে প্রেম ও শিখিয়েছেন, দেখতে পাচ্ছি!”

ত্রিশা তার লজ্জালাল বদন নিয়েই একটা মৃদু ধমক দিয়ে ওকে বললো, ” ধুর! কি সব বলিস? স্যার সে…. ”

এবার গোটা দলই একসাথে উল্লাস করে উঠলো,

” দুলাভাই, দুলাভাই, স্যার এখন দুলাভাই, দুলাভাই, দুলাভাই, স্যার এখন দুলাভাই….”

বলে ত্রিশা আর আহনাফকে ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে চললো; যেনো এক আনন্দ মিছিল। আহনাফ এত গন্ডোগোলের মধ্যে আর কিচ্ছুটি বলার সুযোগ পেলো না। সারা দিনের ধকলে ত্রিশাও ভীষণ ক্লান্ত! এমতাবস্থায় আহনাফের পি বি আই এর সেই সিনিয়র ইনভেস্টিগেশন অফিসার বন্ধু বিশাল এসে দাঁড়ালো। বিশাল তার বিশাল দেহ দিয়ে সবাইকে ব্যারিকেড দিয়ে থামিয়ে বললো,

” তোমরা তো দেখছি দারুন ড্রামাবাজ মেয়ে, সারা বাড়ি পুলিশে ভর্তি, আর তোমরা আছো আনন্দ মিছিলে?”

বন্ধুর একথা শুনে আহনাফ একটু অভয় পেয়ে বললো,
” ড্রামাবাজের কি দেখছিস মাম্মাহ! এরা তো ক্লাশের টিচারের সামনেই মেইক আপ করে, ডিজে ডান্স করে, চ্যাট করে, সবই করে, এত এত দু:সাহস এদের..আর পুলিশ ফুলিশ তো এদের কাছে ডালভাত!.”

এ কথা বলাতেই ত্রিনা, ঊষা, স্নিগ্ধা আর রাত্রি সবাই একযোগে আহনাফকে বলে উঠলো,

” দুলাভাই প্লিজ… অফ যান না, আজকে এসব বলবেন না প্লিজ, আজকে আমাদের খুশির দিন”

শুনে আহনাফ চুপ হলো বটে! তবে বিশাল চুপ হলো না।
বিশাল ত্রিশার দিকে তাকিয়ে টাস্কি খাওয়া টাইপের মুখ বানিয়ে বললো,

” আচ্ছা, ইনিই সেই? যে আমাদের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম বন্ধুকে পটিয়ে ফেলেছে!”

ত্রিশার বান্ধবীরা সবাই মিলে বলে উঠল,

” হোয়াট?আপনার বন্ধুই কি শুধু হ্যান্ডসাম? আমাদের বান্ধবীই কি কম রুপসী নাকি? প্রিন্সেস সিন্ড্রেলার চেয়ে কোন অংশে কম আমাদের এই বান্ধবী?”

এসব আলোচনা আর বাক বিতান্ডা শেষে চার বান্ধবী মিলে ত্রিশাকে খোঁচাতে লাগলো, ” কবে প্রেমে পড়লি, কখন, কিভাবে? ইত্যাদি, ইত্যাদি ইত্যাদি…আর বিশাল আহনাফের সাথে বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।

রাতেই আহনাফ ত্রিশার চার বান্ধবীকে নিজ দায়িত্বে নিজ বাড়ি পৌঁছে দিলো।
আর ত্রিশা ও তার ছোটো দুই ভাই গেলো পুলিশ কাসটাডি তে।

কনকচাপাকেই যেহেতু বাদি হয়ে একটা মামলা দায়ের করতে হবে জহিরের নামে সেহেতু কনকচাপাকে আগেই থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
আর পরবর্তীতে ত্রিশাকেউ নেওয়া হলো।
সে রাত আর ওরা কেউ ঘুমাতে পারলো না, এ জায়গা ও জায়গা দৌড়াদৌড়ি করে।

জহিরের নামে থানায় সর্বমোট তিনটি মামলা হয়েছে, একটি হলো মাদক চোরাচালান ব্যবসায় নিজের অংশিদারিত্বের জন্য, দ্বিতীয়টি হলো নারী কেলেঙ্কারির জন্য ও কনকচাপার অধিকার ক্ষুণ্য ও তার প্রতি করা জুলুম অত্যাচারের জন্য ও তৃতীয়টি হলো, ত্রিশার ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ছবি ও ভিডিও বানিয়ে ওকে ব্লাকমেইল ও হয়রানী করার জন্য।
নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আব্রাহাম ও জহিরকে ধরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজকে সহসাধ্য করার জন্য ত্রিশা ও তার বান্ধবীদের জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা মেজিস্ট্রেট ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে।
ওদিকে ববিতার জ্ঞান ফিরলে তাকে সহ ইন্দু ও বিন্দুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, ইন্টারোগেশন এর জন্য। কারন তারাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জহিরকে সাহায্য করেছে ও বিভিন্ন অন্যায় করার জন্য উৎসাহ ও উদ্দিপনা যোগিয়েছে। তাদেরও অবশ্য জেল জরিমানা হবে।

জহির শেখ তার অতি লোভের জন্য নিজের গড়া রাজ্য ও রাজত্ব সব হারালো।
পুলিশের ইনভেস্টিগেশনে গোটা দেশে জহিরের প্রায় দুই ডজন ডিভোর্সপ্রাপ্ত ও অডিভোর্স প্রাপ্ত স্ত্রী পাওয়া গেলো। এরা সবাই জহিরের দ্বারা ভিকটিম।

তিন সন্তান সহ কনকচাপা ঠাঁই নিলো শহরেরই এক ভাড়া বাড়িতে।

এসব কাজে বিশাল ও আহনাফ সহ আহনাফের সকল বন্ধু তাদেরকে যার পর নাই সাহায্য করেছে।

কয়েকদিন ত্রিশা ও তার মা’কে নিয়ে এ জায়গা ও জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে জহির শেখের সম্পত্তি হতে তাদের নিজেদের ভাগ বুঝিয়ে দিতে আহনাফ ও বিশাল সক্ষম হলো।
কনকচাপার উপর যেহেতু জহিরের দুই ছেলের দায়িত্ব রয়েছে সেহেতু সে জহিরের সম্পত্তির একটা বড় ভাগই পেলো, সাথে স্ত্রী হিসেবে নিজের হিস্যা তো রয়েছেই।

জহিরের কত বছর সাজা হবে এখন তা আদালতই নির্ধারণ করবে। পাভেল ও নয়ন তাদের দাস জীবন হতে মুক্ত হয়ে জেলা শহরেই এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলে বসেছে। সেখানে তাদের পাশে কনকচাপাও নিজের একটা টেইলারিং এর দোকান খুলে বসেছে।

কলেজে ত্রিশার আনুষ্ঠানিক ক্লাশ শেষ। ফেয়ারওয়েলও হয়ে গেল বিশাল আয়োজন অনুষ্ঠান করে।
ফেয়ারওয়েলের কয়েক দিন বাদেই হলো আহনাফ ও ত্রিশার এংগেইজমেন্ট!
একটা ছোটোখাটো ঘরোয়া আয়োজন করে ত্রিশা আর আহনাফের এংগেইজমেন্ট হয়ে গেলো। শুধু দু পক্ষের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজন। তাছাড়া বাবা আর ভাই ছাড়া কনকচাপার আছেই বা কে? তবে বাবা ভাইরা তার উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে জহির কে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। যত যাই হোক কয়টা টাকা তো পাওয়া যেতো জহিরের কাছ থেকে। তবে এর জন্য কনকচাপাকে যে কি কি ত্যাগ স্বীকার করতে হতো তা তাদের বোধগম্য ছিলো না। তাই কনকচাপা তার লোভাতুর ভাই ও বাবাকে ত্যাগ করে দিলো। এতদিন মুমূর্ষু মা ছিলো কনকচাপার পিছুটান। এখন মা ও বেঁচে নেই কোনো পিছুটানও আর নেই।

বাবা ভাইকে বাদ দিলে কনকচাপার পরিবারে কোনো পুরুষমানুষ নেই, তাই যেনো যেকোনো পরিস্থিতিতে কোনো জনরোষে না পড়তে হয়, তাই সে ত্রিশা ও আহনাফের এংগেইজমেন্ট করিয়ে নিশ্চিত হয়। আহনাফের মা ও বাবা শায়লা ও আশফিককে তো আগেই অহনা রাজী করিয়ে নিয়েছিলো।
আর উভয় পরিবারের সম্মতিতে পরীক্ষার পরই বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হয়।

আহনাফ প্রতিদিন কলেজে ক্লাশ শেষ করে ত্রিশাকে পড়াতে আসে। ত্রিশার পরীক্ষার যেহেতু আর বেশি দেরি নেই, তাই আহনাফ যতটা সম্ভব ত্রিশাকে পড়ার চাপে রাখে আর তার মনোযোগের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতাও বন্ধ করে দিয়েছে।
ওদের দুজনের সম্পর্ক এখন শুধু মাত্রই ছাত্রী ও শিক্ষকেরই ন্যায়। দুজনের এত সেক্রিফাইসের জন্যই ত্রিশা সবাইকে অবাক করে দিয়ে সর্বাধিক জিপিএ নিয়ে টেস্ট পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করলো।
কিন্তু ত্রিশার বান্ধবীরা ওকে ফোন করে বিভিন্ন ভাবে আহনাফের সাথে নিজেদের ভালো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং মানে নিজের প্রেমটা ভালো করে জমিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
কিন্তু লাজুকলতা ত্রিশা আহনাপফের দিকে এখনো তাকিয়ে কথাই বলতে পারে না।
বান্ধবীরা ওদের জুটির নাম দিয়েছে ” কাপল উইদাউট ইনটিমেসি বা সি ডব্লিও আই”।

ওদিকে কিভাবে জানি গোটা কলেজই আহনাফ ও ত্রিশার প্রেম ও এংগেইজমেন্টের খবরে থমথমে হয়ে উঠেছে। অনেক মেয়ের মন ভেঙ্গেছে, তাদের পছন্দের ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম স্যারের এংগেইজমেন্টের খবরে।
ত্রিশা, কনকচাপা ও আহনাফ যেনো এখন গোটা শহরের আলোচনার ভাইরাল টপিক।
কেউ কেউ ত্রিশা ও কনকচাপার প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছে, সাথে আহনাফ ও তার বন্ধুদের সহায়তায় যে তারা জহির শেখের ঐ নরক থেকে উঠে আসতে পেরেছে তাতে গোটা শহরই আহনাফকে সাধুবাদ দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর এংগেইজমেন্টের খবরটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। কুটনি টাইপের মহিলারা বলে বেড়াচ্ছে, ” মেয়েটা মনে হয় প্রেম করার জন্যই কলেজে যেতো, আর ছেলেটাও কেমন লুইচ্চা টিচার, যে ছাত্রীর ডাকে সাড়া দেয়” এসকল কথা ও অপপ্রচার মূলত সেই সব ছাত্রীরাই করছে, যাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আহনাফ সর্বদা তাদের এড়িয়ে চলতো। সাধারন ছাত্র শিক্ষক সবাই ত্রিশা ও আহনাফকে শুভকামনা জানাচ্ছে শুধু কলেজের সেই সব ছাত্রী বাদে যারা আহনাফকে ভীষন চাইতো। তারা এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো আহনাফ তাদেরকে প্রেম করে ছ্যাঁকা দিয়েছে। আহনাফ ত্রিশাকে জড়িয়ে কোনো ভালো আলাপও তারা কোনোক্রমেই মেনে নিতে পারছে না বরং সেগুলোতে নানা মিথ্যাচার দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে।

এ দলের মধ্যে অন্যতম হলো বিভা ও ওর পরিবার। বিভা ও তার বাবা মা আহনাফের এংগেইজমেন্টের খবরে যেনো হাই ভোল্টেজের শক খেয়েছে।
বিভার বাবা রাহুল চৌধুরী নিজের মেয়েকে মনমরা দেখে হতাশার সাগরে ডুবে যাচ্ছে।
তাদের দিক থেকে তো তারা কোনো কমতি রাখেনি। আহনাফের বাবার কাছে নিজে ঘটক সেযে যে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো, সে প্রস্তাব তারা কিছুদিন ঝুলিয়ে রেখে পরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাহুল চৌধুরী এলাকার সম্মানী ও বৈভবশালী ব্যক্তি। জন্মসূত্রে বড় রাজনীতিবিদ। তার বাপ চাচা ও বড় ভাইরা সব মন্ত্রী, মিনিস্টার ছিলো। আর যারা মন্ত্রি মিনিস্টার হতে চায়নি তারা সরকারের উচ্চপদস্থ ও নীতি নির্ধারক ছিলো। জীবনে তারা কোনোদিন কোনো নির্বাচনে হারেনি। আর সে কিনা একটা সামান্য কলেজের লেকচারারের কাছে হেরে গেলো। সে হার রাহুল চৌধুরী কোনোমতেই মেনে নিতে পারছিলো না। তার মেয়েটা হয়তো সামান্য বোকা। বোকা বলেই সে আহনাফকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে। আর সেই ভালোবাসার পরিনাম সে এভাবে পেলো?

“বিভা সারাদিন কোনো খাবারই মুখে তুলছেনা! আর এখন চোখই খুলছেনা, কি না কি খেয়েছে! ”

এই দুটো বাক্য শুনে যেনো রাহুল চৌধুরীর গোটা দুনিয়া উল্টাপাল্টা হয়ে গেলো। দৌড়ে গেলো বিভার ঘরে। সারাঘরে বইপত্র সব উল্টাপাল্টা হয়ে আছে। ছেঁড়া কাগজে গোটা ঘর ভর্তি। এমনকি বিভা নিজের এইচ এস সি পরীক্ষার এডমিট কার্ডও ছিঁড়ে ফেলেছে। কয়েকদিন ঠিকমতো কোনোকিছু খায়নি বলে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছে, অথবা অন্য কিছু খেয়েছে। মাথার কাছে কয়েকটা স্লিপিং পিল ও পড়ে থাকতে দেখলো রাহুল চৌধুরী। দ্রুত বিভাকে মেডিকেলে নেওয়া হলো।
আহনাফের জন্য নিজের মেয়ের এমন হাল দেখে রাহুল চৌধুরীর চোখ ফেটে জল চলে এলো। নিজের স্ত্রীর কাছে আফসোস করতে লাগলো, ” সারা জীবন কারো ভালো ছাড়া ক্ষতি করেনি সে, কেনো তারই সাথে এমন ঘটলো?”
.
.

সেদিন বরাবরের মতোই ত্রিশাকে আহনাফ ম্যাথ পড়াতে এসেছে, কলেজের ক্লাশ শেষ করে। পরীক্ষার আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিনই বাকি। কনকচাপা আহনাফকে রাতের খাবার খেয়ে যেতে বলায় সে রাতের খাবার খেয়ে দেরী করে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

“কলেজের ক্লাশগুলো করাতে এখন আর তার ভালো লাগে না আহনাফের। ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর ব্যাপারে সে এত ডেডিকেটেট তবুও কেউ তার ক্লাশ ভালো করে করে না। এই সকল মেয়েরা যেনো শুধু প্রেম করার জন্য কলেজে এসেছে, পড়াশুনা এরা আর কি করবে? আহনাফের মনে এক আকাশ অভিমান। এসব বিষয়েই আলোচনা করছিলো কনকচাপার সাথে। কারন আজই এক ছাত্রী তাকে কল দিয়ে ত্রিশার নামে কুৎসা রটাতে ধরেছিলো। আহনাফ খুব শক্তভাবে এক ধমক দিয়ে দিয়েছে সে মেয়েকে।
এসব নিয়েই কথা বলছিলো আহনাফ আর কনকচাপা। ত্রিশা রান্নাঘরে ছিলো। মাকে বলে সে আহনাফের পছন্দের ইলিশ কোরমা রান্না করতে রান্নাঘরে গিয়েছিলো।
হঠাৎ ই ছোট্টো করে একটা চিৎকার শুনে কনকচাপা রান্নাঘরে ছুটে গেলো। সালাদ কাটতে গিয়ে ত্রিশা নিজের আঙ্গুল কেটে ফেলেছে। ত্রিশাকে নিজের হাত চেপে ধরিয়ে দিয়ে কনকচাপা রান্নাঘরে গেলো ইলিশ কোরমার রান্না শেষ করতে।

হঠাৎ হাত ছাড়তেই ফিনকি দিয়ে আবার র’ক্ত পড়তে লাগলো ত্রিশার হাত দিয়ে।
আহনাফ কি বুঝে দ্রুত সে কা’টা আঙ্গুল নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিলো।

ত্রিশা প্রথমবার আহনাফের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে দারুন বিচলিত হলো।
প্রথমবারের মতো দুজন দুজনার দৃষ্টিতে যেনো বিলীন হয়ে যেতে লাগলো।
ঠিক তখনি আহনাফের ফোনে কল এল।
ওপাশ থেকে শায়লার কন্ঠ ভেসে এলো,
” ভীষণ বড় একটা ঝামেলা হয়েছে, এক্ষুণি বাড়ি আয়!”

(চলবে)