#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:২১
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষিদ্ধ]
–জানিস আজকে তোর ফ্লাইটে কে এসেছিল?
সমুদ্র আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে বলল,
–কে এসেছিল? যারা সকিনা খালাকে হুমকি দিয়ে তাকে শহর ত্যাগ করিয়েছে, তারা!
আকাশ নিজ পকেট হতে ফোন বের করে সমুদ্রের সামনে উপস্থাপন করল। অতঃপর বলল,
–দেখ, কে এসেছিল। আমি ছবি তুলে রেখেছি।তুই যাকে বিশ্বাস করে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেছিস।
আকাশের কথা অনুযায়ী সমুদ্র তৎক্ষণাৎ দৃষ্টিপাত ফোনের স্কিনে আবদ্ধ করল। মুহূর্তেই স্তম্ভিত হয়ে পড়ল সে। চোখ যুগল বন্ধ করে মাথার চুল গুলো হাতের মুঠো বন্ধি করে বিরবির করে বলল,
–বিউটি খালা!
–হুম। এখন দেখ। তুই এতোদিন হূদাই স্কুলে ক্লাস নিলি। আমি আগে থেকেই বলেছিলাম স্কুলের হেন্ড মাস্টারের পাশাপাশি অন্য অন্য ইস্টাফদের উপর নজর রাখিস। কিন্তু তুই তো অত্যধিক বিশ্বাস করছিস বিউটি খালাকে।
প্রচন্ড রাগ হচ্ছে সমুদ্রের। অতিরিক্ত রাগে হাত পা কাঁপতে আরম্ভ করেছে। খানিকক্ষণ মস্তিষ্কে শীতল করার উদ্দেশ্যে চোখ যুগল বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস গ্রহণ করল। অতঃপর সে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল।
–দেখ আকাশ তুই কেসটা যতটা সহজ ভাবে নিচ্ছিস ততোটা সহজ কিন্ত নয়। আমি সিউর এই কেসটা অর্থাৎ ড্যাক্স পাচারে ওই স্কুলের হেড মাস্টার জড়িত। তাছাড়া তুই বিউটি খালাকে দেখেও ছেড়ে দিল কেন?
আকাশ মোবাইল পকেটে রেখে। সমুদ্রের প্রত্যুত্তর বলে উঠল,
–আমি তোর উপর অনেক রাগ করে এখানে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম তুই যখন এসিপি স্যারের কাছ থেকে ফিরবি তারপর তোকে ইচ্ছে মতো বকবো। কিন্তু এখানে এসেই যে এমন পরিস্থিতি দেখব তা কল্পনাও করি নি। আমি বিউটি খালার পা অনুসরণ করে তার পিছু নিয়েছিলাম। কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই দেখলাম অনেক গুলো ছেলে। সবাই কালো পোশাক পড়া। ছেলেগুলো গ্যংয়ের ছিল তাই একা কিছু করতে যাই নি। তাছাড়া আমার কাছে রিভালবার নেই।
কথাগুলো সমাপ্ত করে মিনিট পাঁচেক বিরতি নিয়ে পুনরায় সমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–প্লিজ সমুদ্র হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিব না। ভাবিকে একটু বোঝার চেষ্টা কর। বাচ্চা মেয়ে। কষ্ট দিস না ওকে।
আকাশের কথা কর্ণপাত করার খানিক বাদে সমুদ্র ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করে শক্ত কন্ঠে বলল,
–তুই এখন বাসায় যা। যা বোঝার আমি বুঝে নিব। আর আমার কানের কাছে ভাবি ভাবি করবি না।
সমুদ্রের বলা বাক্যগুলো শুনে আকাশের হৃদয় গহীন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। মুখশ্রীতে অসীম ব্যর্থতার আবির্ভাব ঘটল। মনে মনে ভাবতে লাগল, তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু হঠাৎ এতো কঠিন হৃদয়ের মানুষ হয়ে উঠল কেন ? সমুদ্র তো এমন রুক্ষ অন্তরের অধিকারী ছিল! বারংবার সমুদ্র মেয়েদের হতে একশ হাত দূরে থাকত। কিন্তু তাই বলে এমন স্নেহ বর্জিত নিষ্ঠুর মানুষে পরিণত হলো ! আকাশ একরাশ অভিমান ভরা কন্ঠে অস্কুটস্বরে বলল,
–ওকে যাচ্ছি। ওর খেয়াল রাখিস।
বলেই আকাশ সমুদ্রের বাসা হতে প্রস্থান করল। সমুদ্র কিছুটা সময় বেলকনিতে অতিবাহিত করল। অবশেষে তপ্ত শ্বাস নির্গত করে মেহেরের রুমে ধাবিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে লাইট অন করল সে। মুহূর্তেই লাইটের কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল পুরো ঘরটা। সমুদ্র সতর্ক দৃষ্টিপাতের সহিত রুম জুড়ে পর্যবেক্ষণ করল। ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙা ফুলদানির টুকরো গুলো তুলে পরিষ্কার করল। অতঃপর বিছানার এক কোণে দাঁড়িয়ে মেহেরের মুখশ্রী মনোযোগের সঙ্গে দৃষ্টি মেলে দেখতে লাগল। প্রায় খানিকক্ষণ তার অবাধ্য অন্চলপ্রান্ত চোখ যুগলের দৃঢ় দৃষ্টি পড়ে রইলো মেহেরের ঘুমন্ত পাণ্ডর, মলিন এবং ভীত গ্রস্ত চেহারাতে। পরক্ষণে তার হৃদয়মনে কিছুটা অস্থিরতার ঝড় হাওয়া বইতে লাগল। এ যেন যে সেই ঝড় নয়। এই বাজে অনুভূতি সম্পূর্ণ অন্তরের পরিস্থিতিকে বোধহয় কোন এক ঝড় রাত্রির উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় হৃদয়মনে বহমান আশন্ত, অস্থির অবস্থাকে বোঝায়। বড্ড ব্যথা করছে তার বুকের বা পাশটাই। সমুদ্র বুঝতে পারছে না, কেন তার মনে বিষণ্ণতার আবির্ভাব ঘটেছে ! কী আছে ওই ফ্যাকাশে মুখশ্রীতে? যার তার রাতের নিদ্রা ছিনিয়ে নিয়েছে। কী এমন মায়াজাল ঘিরা ওই পুঁচকি মেয়ের মধ্যে যা সমুদ্রের শান্ত মনে অশান্তর আবিষ্কার করার মতো ক্ষমতা রাখে। সমুদ্র যেন না চাইতেই মেহেরের যাদুর মায়াজালে ডুবে যাচ্ছে। ফজরের আযানের সুমধুর, অন্তর শীতল করার ন্যায় ধ্বনি কর্ণপাত হতেই ঘোরের ব্যাঘাত ঘটল। সে কী সব আজেবাজে কথা চিন্তা করছিল! বিষয়টা ভাবতেই একরাশ বিরক্তির উপস্থিত ঘটে সমুদ্রের মন গহীনে। বিরক্তে মুখ হতে বিরক্তির ‘চ’ শব্দ বের করল। নিজের উপর বড্ড ক্রোধ হচ্ছে তার। শেষে কীনা সে এক পুচকি মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করল? রাগে তার কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ উৎপত্তি ঘটল। অবশেষে মেহেরের শরীর ভালো ভাবে উষ্ণ চাদর ঢেকে দিয়ে দ্রুত পা সে মেহেরের ঘর হতে প্রস্থান করল।
_______
স্বচ্ছ শুভ্র রঙের সকালের আবির্ভাব ঘটেছে খানিক পূর্বে। শিশির ভেজা কুয়াশার চাদের গ্রাস কৃত সূর্যি মামা মাত্রই বার্তা জানিয়েছেন। ঘড়ির কাটাতে ছুঁইছুঁই সাড়ে নয়টা। মেহেরের বিছানার পাশে গম্ভীর মুখ করে বসে রয়েছে সমুদ্র। হাতে তার গরম সুপ ভর্তি বাটি। হাল্কা বাষ্পের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে সুপ হতে। সমুদ্র মেহেরের মাথা থেকে ভেজা কাপড় বারংবার এপিঠ ওপিঠি করে দিচ্ছে। প্রায় দু ঘন্টা যাবৎ এ কর্মে নিযুক্ত ছিল সমুদ্র। হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে মেহের। সেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল প্রচন্ড জ্বরে ভুগছে মেয়েটা। কিছুতেই জ্বর বিদায়ের নাম নিচ্ছে না। তাই মাঝখানে স্বল্প বিরতি নিয়ে মেহেরের জন্য খাবার তৈরি করেছে। খাবার খেয়ে ওষুধ খেলেই হয়তো জ্বর কমে যাবে। কিন্তু সমুদ্র ভেবে পাচ্ছে না, কীভাবে মেয়েটাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করবে। একরাশ অস্বস্তি এসে চেপে ধরেছে সমুদ্রকে। পরিশেষে সমুদ্র খানিক এগিয়ে এলো মেহেরে দিকে। অতঃপর ইতস্তত বোধ নিয়ে হাত জোড়া আলত করে ছুঁয়ে দিল মেহেরেল গাল যুগলে। মুহূর্তেই হাল্কা কেঁপে উঠল মেহের। ঘুমের মধ্যেই মেহেরের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠল। মেহেরের মুখ দিয়ে অস্কুটস্বরে আর্তনাদ বের হতে আরম্ভ করল।
মেহেরের পরিস্থিতি বোধগম্য হতেই সমুদ্র অস্থির হয়ে উঠল। জ্বরে মেহেরের গা পুড়ে যাচ্ছে । অত্যধিক তাপ নির্গত হচ্ছে মেহেরের শরীর হতে। মেহের ঠোঁট জোড়া বেগতিক গতিতে কাঁপছে। সমুদ্র দূরে বসে মেহেরের বিরবির করে কী বলছে তা শোনার প্রয়াস চালাল কিন্তু কিছুই শুনতে পেল না। তৎক্ষণাৎ সমুদ্র অশান্ত মনে কান এগিয়ে নিলো মেহেরের ঠোঁট যুগলের নিকট। কর্ণপাত করতে চেষ্টা করল মেহেরের বিরবির করে বলা বাক্যগুলো। মেহের অস্কুটস্বরে অশ্রু মাখা কম্পনিত কন্ঠে বলছে,
–আমাকে বাঁচান,, আপনি কোথায়। আমার ভয় করছে তো,,,
সমুদ্র তার হতটা হাল্কা ঝাকাল। চিন্তা গ্রস্ত কন্ঠ মেহেরের উদ্দেশ্য ফিসফিস করে বলল,
–ভয় পেও না পুচকি। আমি আছি তো। কিছু হবে না।
মেহের কান্না যুক্ত কন্ঠে ফির বিরবির করে বলে উঠল,
–জানেন কেউ একজন সেদি,, ন রাতে আমা র রুমে এসে ছিল। কি করছে জানে নে,,,, আম র গলায়,,,,
তৎক্ষণাৎ সমুদ্র দৃষ্টি ফেলল মেহেরের বন্ধ চোখ জোড়াতে। খানিকটা ঝাকিয়ে নিম্ন কন্ঠে বলল,
–ওপেন ইউর আইস পুচকি। চোখ খুলো।
শেষোক্ত বাক্যটা কিছুটা জোড়ে বলে উঠল সমুদ্র। ফলে মেহের শিউরে উঠল। দু চোখ জোড়া খোলার প্রয়াস চাললো। বহুক্ষণ ধরে চেষ্টা করে মেহের চোখ উন্মুক্ত করতে সফল হলো। কিন্তু প্রায় পাঁচ সেকেন্ড বাদে পুনরায় চোখ জোড়া আপনি আপনি বন্ধ হয়ে গেল। ফির মেহের চোখ বন্ধ অবস্থায় অস্কুটস্বরে বলে উঠল,
–কেউ আমা কে ছোঁয়েছে,, আপ,,,,
মেহেরের সম্পর্কে কথা শুনতে পেল না সমুদ্র। কিঞ্চিৎ থতমত স্তম্ভিত হয়ে পড়ল সে। অতঃপর মলিন কন্ঠে মেহেরের কানের কাছ মুখ নিয়ে ঠোঁট যুগল সংকুচিত করে আস্তে করে বলল,
–আরে বোকে অন্য কেউ তোমাকে ছুঁই নি। সেদিন আমি ছিলাম।
(চলবে)
#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব:২২
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষিদ্ধ]
–কেউ আমা কে ছোঁয়েছে,, আপ,,,,
মেহেরের সম্পর্কে কথা শুনতে পেল না সমুদ্র। কিঞ্চিৎ থতমত এবং স্তম্ভিত হয়ে পড়ল সে। অতঃপর মলিন কন্ঠে মেহেরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ঠোঁট যুগল সংকুচিত করে আস্তে করে বলল,
–আরে বোকা অন্য কেউ তোমাকে ছুঁই নি। সেদিন আমি ছিলাম। আন্ডারইস্টান্ড!
সমুদ্রের বলা ভারী কন্ঠস্বরের ফিসফিসনো বাক্যগুলো মেহের হয়তো বুঝে উঠতে পারল না। সে চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে রয়েছে। পূর্বের ন্যায় তার মুখশ্রীতে ফুটে উঠেছে অস্বস্তি, ভিতু ভাবটি! সমুদ্র ফির মেহেরের মুখে তার হাত যুগল আবদ্ধ করল। হাল্কা স্পর্শ পেয়ে পুনরায় মেহের কেঁপে উঠল। চোখ জোড়া বন্ধ অবস্থায়, ভয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল মেহের। চোখে মুখে একরাশ আতঙ্কের সহিত আবার বিরবির করে বলে উঠল,
–আপ নি প্লিজ আমা কে ছেড়ে কো, থাও যা, বেন না। আমি ভয় পাই তো। লোক টা আ, বার আসবে,,,
মেহেরের বর্তমান কন্ঠস্বর হতে নির্গত কথাগুলো শুনে ঠোঁট বাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে উঠল সমুদ্র। মেয়েটার নিশ্চয়ই জ্বরের ঘোরে আবাত তাবোল ভাষণ দেবার অভ্যাস আছে! অতঃপর সমুদ্র ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে নিম্ন কন্ঠে বলে উঠল,
–কেউ আসবে না তো পুচকি। ভয় পেও না কেমন? আমি আছি তো।
সমুদ্রের কথার প্রত্যুত্তরে মেহের নিরব রইলো। প্রচন্ড জ্বরে মেয়েটার মস্তিষ্কের জ্ঞান লোপ পেয়েছে। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। সমুদ্র খানিকটা সময় অস্বস্তি নিয়ে অতিবাহিত করে দিল। সুপ কিছুটা ঠান্ডা হতেই বাটিটা হাতে নিল। মেহেরের কপাল হতে ভেজা কাপড় সরিয়ে হাল্কা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিল সমুদ্র। ইশ সাংঘাতিক গরম হয়ে রয়েছে মেয়েটার কপাল! জ্বর এখনো কমে নি। মেহেরের পরিস্থিতি দেখে সমুদ্র পরাপর দুটো দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। চামচে সুপ তুলে এগিয়ে নিলো মেহেরের ঠোঁট জোড়ার নিকট। কিন্তু মেহের কিছুতেই হা করল না। মুখ শক্ত করে বিরবির করে বলল,
–আ,, মি খাব না,, ভালো লাগছে না,,
মেহেরের কথা শুনে, সমুদ্র কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে অতি ঠান্ডা গলায় বলে উঠল,
— খাবে না মানে? খেতে তো হবেই। সো মুখ হলো স্টুপিড!
মেহের সজ্ঞানে না থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রের ভয়ে মুখ খুলে ফেলেছে। তৎক্ষণাৎ মেহেরের ঠোঁট যুগলের কিঞ্চিৎ দূরত্ব খেয়াল করল সমুদ্র। সঙ্গে সঙ্গে তার ঠোঁটের কোণে স্বল্প হাসির রেখা ফুটে উঠল। দ্রুত করে সে সন্তপর্ণে খাইয়ে দিতে আরম্ভ করল মেহেরকে। কোনদিন যে সমুদ্র কাউকে খাইয়ে দিবে কথাটা সম্পূর্ণ অভাবনীয়। কথাটা সমুদ্রের মা ইসরাত বেগম শুনলে বিশ্বাস করতে পারবে কিনা সন্দেহ! হঠাৎ মেহেরকে খাইয়ে দেবার সময় নাম না জানা এক অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে সমুদ্রের অন্তরালে। অনুভূতি প্রকাশ না করেই জলদি সুপ খাওনো শেষ করল সমুদ্র। অতঃপর মেহেরকে পানি আর ওষুধ খাইয়ে দিলো। বিষয়টা যতোটা সহজ মনে করেছিল সমুদ্র কিন্তু ততোটা সহজ নয়। বিশেষ করে মেহেরকে ওষুধ খাওয়াতে গিয়ে তার অবস্থা বেগতিক। অদ্ভুত অনুভূতি গ্রাস করে নিয়েছে সমুদ্রের হৃদয়মনে। সে ভেবেছিল সামান্য পুকচিকে খাওয়াতে কি আর ঝামেলা হবে। তার তো ছোট বাচ্চাদের আদর করতে ভালোলাগে। কিন্তু মেহেরের ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও সে মেহেরকে পুচকি ভাবতে ব্যর্থ হয়েছে। বারংবার তার মস্তিষ্কে বলে উঠছে, কী আছে ওই পুচকির মুখশ্রীতে! যেখানে চোখ জোড়া দৃঢ় দৃষ্টিতে উন্মুক্ত করলেই সমুদ্রের পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায়। অন্তরালে অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হয়ে উঠে। অদ্ভুত বৈকি সমুদ্রের নিকট অত্যধিক অদ্ভুত ব্যাপারটা। বর্তমানে সমুদ্র জানে না এই অদ্ভুত অনুভূতির নাম কী? অনুভূতিটা তার হৃদয়ে ঝড় বহমান করার ক্ষমতা রাখে।
বর্তমান সময়টাতে তার খুব করে অনুভব হচ্ছে মেহের নামক পুচকিটাকে। সমুদ্র চোখ জোড়া সরিয়ে নিলো মেহেরের মুখশ্রী থেকে। শুকনো ঢোক গিলল। অতঃপর বুকে হাত দিয়ে অনুভব করল তার হৃদয় স্পন্দন। মুহূর্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সে। ইদানিং তার বক্ষ পিন্জরের হৃদয় স্পন্দন বড্ড অবাধ্য হয়ে পড়েছে। মেহেরের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করলেই বিয়াদপ দ্রুত বেগে ছুটটে আরম্ভ করে। সমুদ্র মতো একজন রাগী, স্টং সিআইডি অফিসার যেন ধীরে ধীরে নিজের থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ফেঁসে যাচ্ছে মেহেরের মায়াজালে। হাজার চেষ্টা করেও সে মেহেরকে মস্তিষ্কে হতে বের করে দিতে সক্ষম হচ্ছে না। বিষাক্ত সাপের বিষের ন্যায় তার অন্তরাল ক্রমশ মিশ্রিত হয়ে যাচ্ছে মেহের নামক অনুভূতিতে। এমনকি তার মস্তিষ্কও আধিপত্য করতে সক্ষম হয়েছে মেহেরের মতো অতি সাধারণ পুচকি মেয়ে। তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অন্তরে। অথচ সমুদ্র অনুভূতি গুলো প্রকাশ করছে না। কঠোর হৃদয়ের মানুষের মতো অবহেলা করে যাচ্ছে অনুভূতি গুলোকে। নিজকে শক্ত রাখার প্রায়াসে সে যেন মানসিক রোগীতে পরিনত হচ্ছে।
খানিকক্ষণ বাদে পূর্বে ন্যায় সমুদ্রের নিয়ন্ত্রণ হীন চোখ জোড়ার অন্চলপ্রান্ত দৃষ্টি পড়ল মেহেরের উপর। তৎক্ষণাৎ সমুদ্র লক্ষ্য করল, মেহের গা থেকে কম্বল ফেলে দিয়েছে।
সমুদ্র এতে স্বল্প বিরক্ত হয়ে উঠল। পা জোড়া ফির বিছানার এক কোণে অবস্থিত মেহেরের নিকট ধাবিত করল। ঠোঁট যুগল জিহ্বা দ্বারা ভিজিয়ে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে মেহেরের শরীর কম্বল দ্বারা আবদ্ধ করে দিল। লহমায় তার দৃষ্টি পড়ল মেহেরের গলার উপর। মুহূর্তেই তার দৃশ্যমান হলো গলার সেই বাজে ক্ষত। মনে হচ্ছে কেউ যেন মহেরের গলায় গরম কোন বস্তু চেপে ধরেছিল।সঙ্গে সঙ্গে রাগে সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। সেদিন এই ক্ষত এর রহস্য ভেদ করতে গভীর রাতে মেহেরের রুমে হাজির হয়েছিল সে। কিন্তু সেদিন কিছুই আন্দাজ করতে পারে নি। বর্তমানে সমুদ্র দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বসেছে, সে যে করেই হোক মেহেরকে কে এমন বাজে ভাবে ব্যথা দিয়েছি তার সম্বন্ধে জেনে ছাড়বে। অবশেষে রাগ কমানোর প্রয়াসে হাত মুঠো করে নিজ মাথার সিল্কি চুলগুলো হাল্কা টেনে ধরল সে। নিজেকে স্বাভাবিক করে পূর্বের ন্যায় মেহেরে গাল যুগল আবদ্ধ করল তার শক্ত হাতে বাঁধনে। নিজের মুখশ্রী ধাবিত করল মেহেরের কানের কাছে। অতঃপর ঠোঁট যুগল সংকুচিত করে নরম গলায় বলে উঠল,
–মেহের,,,,
সমুদ্রের কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই মেহের তার চোখ জোড়া উন্মুক্ত করার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ভদ্র মেয়ের মতো অস্কুটস্বরে বলল,
–হু,,
সমুদ্র মেহেরের প্রত্যুত্তর পেয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
–পুচকি, তোমার গলায় কী হয়েছে? কে তোমাকে ব্যথা দিয়েছে?
মেহের কিছুটা সময় চুপ করে রইল। ঠিক তখনি সমুদ্র খেয়াল করল মেহের বন্ধ চোখের কার্নিশ হতে জল গড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটা অচেতন হওয়া সত্ত্বেও কেঁদে উঠেছে। ভীত গ্রস্ত মুখশ্রী নিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল মেহের। আর্তনাদ গলায় অস্কুটস্বরে বলে উঠল,
— আমা কে ছেড়ে যা,বেন না তো?
সমুদ্র বুঝে উঠতে পারল না হঠাৎ কেন মেহের এ কথা বলল। মুখে গম্ভীর ভাব বজায় রেখে দ্রুত সে বলে উঠল,
–না যাব না। আমি তোমাকে আমার কাছে রাখব। তুমি শুধু বলল তোমার গলায় কে ব্যথা দিয়েছে।
মেহের ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বলতে লাগল,
–সে দিন. ওড়না.. ছাড়া ছাদে গিয়ে,, ছিলাম। তাই শাস্তি সরুপ বা,, বাবা আমমার গলায় গরম খুনতির চে, পে ধর,, ছে। আমমি না বুঝতে পারি নি।
মেহেরের বলা বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই সমুদ্রের গা রাগে গিরগির করে উঠল। সামন্য একটা কারনে মেয়েটা এতো বড় শাস্তি দিয়েছে তার বাবা! এতটুকু পুকচি ওড়না পড়লেও কী! না পড়লেও কোন অন্যায়ের বিষয় না। সমুদ্রের খেয়ার আছে সে যেদিন প্রথম মেহেরকে দেখেছিল তখন তার মনে হয়েছে সে যেন একজন অবাধ্য পিচ্চি মেয়ে। কিন্তু তার ভাবণা সম্পূর্ণ ভুল তা এতোদিনে প্রমাণ করে দিয়েছে মেহের। হয়তো মেহেরের মতো জ্ঞান, চুপচাপ শান্ত সভাব একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের ব্যবহারে পরিলক্ষিত হবে কিনা সন্দেহ! মেয়েটা বয়স অনুযায়ী অত্যধিক বুদ্ধিমতি। হাজার কষ্ট পেলেও বড় মানুষের মতো সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে মেহের ভিতর। মুহূর্তেই সমুদ্রের শুনতে ফেল মেহের পুনরায় বিরবির করছে। সমুদ্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ রেখে মনোযোগ নিক্ষেপ করল মেহেরের মুখশ্রীতে। মেহের ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর বিরবির করে বলছে,
–আম,, কে তাড়িয়ে দিবে,, না। আ,, মি তো সহ্য কর, তে পা,রি না। আপনি কেন বুঝে, ন না এই পৃথিবীতে আমা,র একমাত্র আশ্রয় স্থল যে আপ, নি।
মেহেরের শেষোক্ত বাক্যটা শুনের সমুদ্রের হৃদয় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠল। বুকের বা পাশটাই চিনচিন করে ব্যথা করে উঠল।
______________________
খানিক পূর্বে শাওয়ার নিয়ে ড্রইং রুমে উপস্থিত হয়ে ইয়াদ। আজ বেশ বেলা করে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছে সে। কারন কাল জারার ব্যবহার ইয়াদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সারা রাত সে নিদ্রা হীন চোখে অতিবাহিত করেছে। কিন্তু সকলের দিকে তার চোখ জোড়া ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে আজ জারার তাকে ঘুম থেকে উঠাতে যায়। সোফার উপর বসে জারার কথা স্মরণ করছিল ইয়াদ। তৎক্ষণাৎ ইয়াদের দৃষ্টি পড়ল জারার উপর। জারার এসে নিম্ন কন্ঠে তাকে সালাম দিল। তাড়াতাড়ি করে প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে জারা ড্রইং রুম হতে প্রস্থান করার জন্য ধাবিত হলো। জারার ব্যবহার ইয়াদের নিকট অস্বাভাবিক লাগছে। সে পর্যবেক্ষণ করল জারাকে। ঠিক তখনি ইয়াদ লক্ষ্য করল জারা পায়ের গোড়ালি উঁচু করে হাঁটছে। বিষয়টা খেয়াল করতেই ইয়াদের ভ্রূ যুগল কুঁচকে উঠল। অতঃপর গম্ভীর গলায় জারার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
–স্টপ!
ইয়াদের কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই জারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়ি পড়ল। তার হৃদয় স্পন্দন তীব্র ভাবে ছুটতে আরম্ভ করল। এখন নিশ্চিত তার কপালে কষ্ট আছে! ভয় দেখা দিল জারার অন্তরালে। তার শাশুড়ি আম্মু এখন ঘুমে আর রাফু বাইরে ঘুরতে গিয়েছে। বর্তমানে নিশ্চয়ই ইয়াদের খপ্পরে পড়লে তার অবস্থা খারাপ হয়ে উঠবে। কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে না। জারার ধারণা সঠিক করে দিল ইয়াদ। তার নিকটবর্তী এসে হাজির হলো সে। হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
–কোথায় যাচ্ছ তুমি? আমি কি তোমাকে যাবার অনুমতি দিয়েছি! কিছু বলি না বলে, অনেক সাহস হয়েছে তোমার তাই তো? আমি এখনি তোমার সাহস ঘুচিয়ে দিচ্ছে। ওয়েট,,
কথাটা বলেই ইয়াদ জারার অত্যধিক কাছে এসে হঠাৎ অনাকাঙ্খিত ঘটনা করে বসল। জারা,,,
(চলবে)