তুমি রবে নীরবে পর্ব-১১+১২

0
22
তুমি রবে নীরবে

#তুমি_রবে_নীরবে (১১)
~নাদিয়া সাউদ

রওনকের কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।শক্ত ভরাট পুরুষালি স্বরে বলল সে,
“একে তো রেজাল্ট খারাপ করেছে!এখন নির্লজ্জের মতো বিয়ের কথা বলতে এসেছে!এরকম মাথামোটা মেয়েকে কোন ছেলে বিয়ে করছে কে জানে!ছেলেটির প্রতি আমি দুঃখ প্রকাশ করছি!

রওনকের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল কুহু।ক্রোধে তার শরীর কাঁপছে!পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কালবিলম্ব না করে,কোনোরকম প্রস্থান করলো রওনক।রিশা মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে!ভাইয়ের এরকম সহজ প্রতিক্রিয়া ঠিক হজম করা যাচ্ছে না।ভেবেছিল সিনেমার ভিলেনদের মতো করে কোলে তুলে নিয়ে কাজী অফিসের দিকে রওনা হবে রওনক!এখন তো দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি অনুকূলে!কুহুর বিয়ে হয়ে গেলেও কিছু যায় আসে না তার ভাইয়ের!সবকিছু মাথার উপর দিয়ে গেল রিশার।শুকনো ঢোক গিলে কুহুর উদ্দেশ্যে বলল,
” এই কুহু তুই কি সত্যিই বিয়ে করে নিবি?মানে মানুষিক ভাবে প্রস্তুত আছিস তো?নাকি মজা করতে এসেছিস?

নিজেকে ধাতস্থ করে রিশার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল কুহু। সিরিয়াস হয়ে বলল,
“আমি সত্যি বলছি রিশু।ভাইয়া অনেকদিন আগেই বলেছিল এই সম্মন্ধের কথা।যা বিচ্ছিরি রেজাল্ট করেছি!এরপর কোন মুখে ছেলেপক্ষে আসতে বাঁধা দিব বল?আর আমার মায়ের কথা তো জানিসই!সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকে।বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই।

রিশা এবার পুরোপুরি বিশ্বাস করলো কুহুকে।কেন জানি প্রচন্ড খারাপ লাগছে রিশার।অথচ তার ভাই এখনো কেমন শান্ত!সবে তো ছেলেপক্ষ আসবে।এখনো কিছুই ঠিকঠাক হয়নি।নিজেকে বোঝাল রিশা।পরক্ষণে কুহুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আচ্ছা কুহু,যদি তোকে আমার ভাইয়ের বউ করতে চাইতাম তুই রাজি হতিস?

রিশার কথায় চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল কুহু।যেন বিরাট অন্যায়ের কিছু শুনে নিয়েছে!

” প্রশ্নই আসে না।রওনক ভাইকে বিয়ে করবো?এটা তো কল্পনাও করা যায় না!তোর মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে রিশু?কি আবোলতাবোল বকছিস!আমি রওনক ভাইকে নিজের ভাইয়ের চোখেই দেখি!

রিশা আর কিছু বলল না।গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনেছে রওনক।রাগে তার কপালের মোটা রগ দৃশ্যমান হয়েছে!কুহু তাকে ভাইয়ের নজরে দেখে শুনে কান ঝাঝা করে উঠেছে!গায়ে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ!বিরবির করে স্বগোতক্তি করল রওনক,একবার ভাগে পাই বেয়াদব মেয়ে,ভাই থেকে কিভাবে স্বামী হয় সেটা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিব।

একরাশ রাগ আর বিরক্তি নিয়েই নিজের রুমে পা বাড়াল রওনক।যে মেয়েকে ছোট থেকে বউয়ের নজরে নজরে রেখেছে সে কিনা এতদিনে এসে বলছে ভাইয়ের নজরে দেখে!কুহুর মুখে ভাই শব্দটা বোধহয় সবচেয়ে বিশ্রি শোনায়!ছেলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলেন শারমিন বেগম।মুহূর্তে সমস্ত রাগ কে দূরে ঠেলে দিয়ে,মাকে ভেতরে আসতে বলল রওনক।শারমিন বেগমের মুখে অন্যরকম এক হাসি লেপ্টে আছে!হাতে কাগজের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে!চেয়ার টেনে ছেলের মুখোমুখি বসলেন শারমিন বেগম।
“তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছে তোর বাবা।ভীষণ মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।মেডিকেলে পড়ছে।ছবি নিয়ে এসেছি।তোর পছন্দ হলে আমরা কালকে দেখতে যাব।

কথাটুকু বলেই রওনকের দিকে ছবিটা বাড়িয়ে দিলেন শারমিন বেগম।খানিকক্ষণ আগের রাগটা আবার মাথাচাড়া দিল রওনকের!একে তো সে আছে এক অন্য চিন্তায়।এখন বাড়তি আরেক ঝামেলা।চোখমুখ কুঁচকে বলল রওনক,
” কি শুরু করলে মা?আমি এখন বিয়ে করব না।সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছি।যাক না আরও দু-একবছর!

“কার বিয়ের কথা হচ্ছে এখানে?

রিশার কন্ঠস্বর পেয়ে গাড় ঘুরিয়ে তাকালেন শারমিন বেগম।সাথে কুহু দাঁড়িয়ে আছে।হাসিমুখে দুজনকে ডাকলেন শারমিন বেগম।পরক্ষণে বিস্তারিত খুলে বললেন।রিশা বোধহয় আজ জ্ঞান হারাবে!কি শুরু হলো!একদিনেই দু’জনের বিয়ের খবর?কুহু ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকল।আড়চোখে কুহুকে খেয়াল করছিল রওনক।বাইরে থেকে রাশেদ জামালের ডাক আসতেই উঠে চলে গেলেন তিনি।রওনককে বলে গেলেন আবার আসবেন খানিক্ষন বাদে।রওনক কিছু বলল না।প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে ছবিতে চোখ রেখে বলল কুহু,
” আহা রে পোড়াকপালি টা!বেচারি জানেও না কোন জল্লাদের খপ্পরে এসে পরবে!এই বয়সেই জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।

কুহুর কন্ঠে আফসোস!যেন কেঁদে দিবে এমব কৃত্রিম ভাব।ঘন ভুরু দু’টো কুঁচকে গেল রওনকের।

“মানে?কি বলতে চাইছ তুমি?

তৎক্ষনাৎ মুখে হাসি টেনে বলল কুহু,
“ইয়ে মানে আপনি বড়ো সৌভাগ্যবান!একটা মেয়ে আপনাকে বিয়ে করছে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে।

রওনকের রাগ চরম আকার ধারণ করলো।পাশ থেকে রিশা বলল,
” আন্দাজে কথা বলিস না কুহু।ভাইয়া তো বলেছে বিয়ে করবে না এখন।

মুখ খানিক বাকিয়ে বলল কুহু,
“তোর ভাই যে বউ পাচ্ছে এটাই তো বেশি!বয়স টা তো কম হলো না।ঠিক সময়ে বিয়ে করলে দু একটা ছেলেপেলে থাকত।

কুহুর কথায় আশ্চর্য বনে গেল রওনক!হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ।তার মতো তাগড়া যুবককে কোন দিক থেকে বয়স্ক লাগে?চোখমুখ শক্ত করে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল রওনক।তক্ষুনি শারমিন বেগমের আগমন হলো।হাসি চেপে বেরিয়ে গেল কুহু।

১৭.
গেছে সপ্তাহে কুহুকে দেখে গেছে ছেলেপক্ষ।আর এই সপ্তাহেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।সবকিছু এত দ্রুত হয়ে যাবে ভাবেনি কুহু!এমন পাত্র হাতছাড়া করতে চায় না তার পরিবার।ছোট পরিসরেই বিয়ের আয়োজন করেছে ফুয়াদ।ঘড়িতে দুপুর তিনটে খানিক্ষন বাদে বরযাত্রী আসবে।যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক এবার নিয়ে বোধহয় মাত্র দু’বার কথা হয়েছে কুহুর।রাতিম ছেলেটির নাম।কালকেই নাকি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে সে।বাবা মাকে নিয়ে আসার জন্য।সকালে সেটা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে কুহুকে।লোকটাকে কেমন গম্ভীর মনে হয়েছে কুহুর কাছে।প্রয়োজনের তুলনায়ও কথা কম বলে।ভাল করে কুহুকে খেয়াল করেছে কিনা কে জানে!কুহুর মাথার পেছনে টকটকে লাল দোপাট্টা বেঁধে দিয়ে বলল তোহা,
” তোকে যে কি সুন্দর লাগছে রে কুহু!রাতিম আজকে নির্ঘাত জ্ঞান হারাবে!

ভাবীর কথায় কুহু লজ্জা পেল না।বরঞ্চ অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো তার।রাতিম কি একবারও জানতে চেয়েছে কুহু আজ কি রকম করে সেজেছে?মানুষটা আদৌ সঠিক হবে তো?কেন জানি খচখচে মন হুট করেই খারাপ হয়ে গেল!মেরুন রঙের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে আছে কুহু।মুখে ভারী সাজ আর গহনা।নিজেকে নিজেই চিনতে ভুল করছে কুহু!অবশ্য প্রথমবার শশুড় শাশুড়ির মুখোমুখি হবে ভাবতেই একটু নারভাসনেস কাজ করছে।তাদের পছন্দ হবে তো কুহুকে?মানিয়ে নিতে পারবে তো সব?আফসানা বেগম বার কয়েক এসে মেয়েকে দেখে গিয়েছেন।আত্নীয় স্বজন প্রায় সকলেই এসে গেছে।খাওয়ার দিকটা তদারকি করছে ফুয়াদ আর রওনক।অবশ্য কুহুর বিয়েতে রওনক এমন খাটা খাটবে এটা কল্পনাতীত ছিল।রিশাকে বারংবার ফোন করেও আনতে পারেনি কুহু।মেয়েটা হুট করে তার সঙ্গে রেগে কেন আছে বুঝতে পারলো না।ভাবনার মাঝে শারমিন বেগমের আগমন হলো।হাসি মুখে কুহুর পাশে এসে বসলেন তিনি।ছোট্ট একটা বক্স খুলে সোনার আংটি পরিয়ে দিলেন কুহুকে।বিয়ের উপহার সরুপ।কথার মাঝে এক পর্যায়ে জিগ্যেস করলেন,রিশার সঙ্গে কি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছে?প্রশ্নটা শুনে বেশ অসস্থিতে পরলো কুহু।রিশার সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই তার।কুহুর বিয়ে নাকি সে স্বচক্ষে দেখতে পারবে না।শারমিন বেগমের কথার জবাব দেওয়ার মুহূর্তে রওনক উপস্থিত হলো।সামনে দৃষ্টি থমকে গেল কুহুর।শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি-পাজামা পরে দাঁড়িয়ে আছে লম্বাটে গড়নের ছেলেটা।হাতে একটা ঘড়ি ঝুলছে।কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।চোখেমুখে স্পষ্ট আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে তার!কুহু বেশ অবাক দৃষ্টি নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে দেখল রওনক ভাইকে।যেন তার চোখে-মুখের অভিব্যাক্তি বলছে,কুহু বিদেয় হওয়াতে সে প্রচন্ড খুশি!কথাটুকু আপনমনে ভাবতেই কষ্ট হলো কুহুর।চোখে জল আসতে চাইছে।বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছে।নয়তো কাজল ঘেঁটে যাবে।অন্যপাশে দৃষ্টি রাখল কুহু।মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে বাইরে চলে গেল রওনক।খাওয়াদাওয়ার পর্ব মিটে গেছে বহুক্ষণ আগে’ই!বরযাত্রী আসার নামগন্ধ নেই!ফুয়াদ চিন্তিত মুখে বারবার ফোন করে যাচ্ছে রাতিমের দুলাভাই আর বোনকে।তারা জানাল রাতিম অর্ধেক রাস্তায় চলে এসেছে।তবুও স্বস্তি পেল না ফুয়াদ।ছেলের পায়চারি দেখে কলিজা কামড়ে ধরল আফসানা বেগমের।কুহু নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল।ফুয়াদ আর স্থির থাকতে পারল না।বাসা থেকে বেরোবার সময় কল এলো রাতিম এই বিয়ে করতে পারবে না।ফোনেই বড়ো সরো একটা ক্যাচাল বেঁধে গেল ফুয়াদের।মাথায় রক্ত চড়ে গেল রীতিমতো!বিয়ে কি ছেলেখেলা?রাতিমকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিল।পরক্ষণে লাইন কেটে দিয়ে রাতিম কে কল করলো ফুয়াদ।ফোন বন্ধ বলছে।এত আয়োজন করে যদি বিয়েটা না হয় তাহলে সমাজে মুখ থাকবে?বোনকে অন্যত্র বিয়ে দিতে গেলেও তো নানান কথা উঠবে!আফসানা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন।কথাটা ভেতরের রুমে কুহুর কান অব্ধি গেল।বজ্রমেঘের মতো ঝংকার তুলল তার মস্তিষ্কে!একমুহূর্তের জন্য পুরো দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গেল!তোহা মুখে ওড়না চেপে কাঁদছে।প্রতিবেশী কয়েকজন কুহুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।কোথা থেকে ছুটতে ছুটতে আসল রিশা।চোখেমুখে তার আনন্দ ঠিকরে পড়ছে!ঝাপসা দৃষ্টিতে কেবল রিশাকে এগিয়ে আসতে দেখল কুহু!মুহূর্তে তার পুরো ধরিত্রী আঁধারে ডুবল!ঢলে পরলো কারো গায়ে।’কুহু’ বলে চিৎকার করে উঠল রিশা!উচ্চ শব্দ পেয়ে ফুয়াদ আর আফসানা বেগম ছুটে আসলো কুহুর রুমে।মেয়েকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন আফসানা বেগম।

“আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি কুহুকে বিয়ে করতে চাই।

কারো ভরাট স্বরে বলা কথাগুলো আচমকা পুরো রুম স্তব্ধ করে দিল!সবাই দৃষ্টি ফেলল রওনকের দিকে।উত্তরের অপেক্ষা না করে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে কুহুর কাছে এগিয়ে গেল রওনক।ফুয়াদ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে।খানিক্ষন আগে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল তার।রওনককে চিনে বহুবছর যাবৎ!পাত্র হিসেবে রাতিমের থেকে সবদিকেই যোগ্য সে!না করার কোনো কারণ নেই।এই দুঃসময়ে যে রওনক এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিবে ভাবতেও পারেনি ফুয়াদ!খানিকটা আগে তার সঙ্গেই তো হাতে হাতে কাজ করছিল ছেলেটা!কি অমায়িক ব্যবহার!আফসানা বেগমের মুখের কালো আঁধারটুকু ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেল।মানুষের জীবনে যেমন দুঃসময় আসে,তেমনি সুসময়ও আসে।যা হয় ভালোর জন্যই বোধহয় হয়।রাশেদ জামাল দরজার কাছ থেকে ফুয়াদকে ডাকলেন।ছেলের বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে।কিছুক্ষণের মাঝে শারমিন বেগমের আগমন হলো।চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব একটা খুশি নন তিনি।ছেলে যখন জোড় গলায় বলে ফেলেছে,এতে আর কি বলার থাকতে পারে।পিতামাতার অনুমতির প্রয়োজন আছে কিনা সেটুকু ভাবল না!

১৮.
ঘড়িতে রাত আটটা।পিটপিট করে চোখের পাতা খুলল কুহু।প্রথমেই দেখতে পেল রওনক ভাইয়ের মুখ।কেমন অসহায় মুখাবয়ব হয়ে আছে লোকটার!ধীরে ধীরে উঠে বসল কুহু।রুমে তোহা আর রিশা দাঁড়িয়ে আছে।দুজনের মুখে মিটিমিটি হাসি!গলা ঝেড়ে বলল তোহা,
“ননদিনী বিয়ে তোমার হচ্ছে।জলদি আবার ঠিকঠাক হয়ে তৈরি হয়ে নাও!

তোহার কথা কিছুই বোধগম্য হলো না কুহুর।ভ্রু কুঁচকালো সে।তবে কি রাতিম এসেছে?পাশ থেকে রিশা বলল,
” দেখলি,আমার মনে কষ্ট দিয়ে তুই শশুড় বাড়ি যেতে পারলি না।উল্টো সারাজীবনের জন্য আমার বাড়িতে নিয়ে চলে যাব তোকে।খুব ইচ্ছে ছিল তোকে ভাবী বানানো।আল্লাহ আমার ডাক কবুল করে নিয়েছে।

কুহুর দূর্বল মস্তিষ্কে কথাটা তীব্র চাপ ফেলল!দ্রুত রওনকের দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাল সে।কোনো স্বপ্ন নয় তো এটা!রওনক ভাইকে বিয়ে করবে?না এটা কি করে হয়?বাহির থেকে রওনকের ডাক আসতে ওঠে চলে গেল সে।রিশা আর তোহা কুহুর ঘেঁটে যাওয়া সাজ ঠিক করা শুরু করলো।কুহু হতভম্ব হয়ে আছে!রওনক ভাই তাকে বিয়ে করার জন্য রাজি কি করে হলো?না না এই বিয়ে কিছুতেই করবে না কুহু!যে লোকটা তাকে এক সেকেন্ডের জন্য সহ্য করতে পারে না,সে সারাজীবন কি করে পাড় করবে?ফুয়াদ এলো রুমে।ভীষণ হাসিখুশি দেখা যাচ্ছে তাকে।রওনকের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটা কুহুকে জানাল।কন্ঠনালী শক্ত হয়ে আছে কুহুর।কিছু বলতে গিয়েও পারল না সে।ভাইয়ের অনেক দিনের সঞ্চয় দিয়ে আজকে বিয়ের আয়োজন করেছিল।অথচ একটা ঝড় সব তছনছ করে দিল!শেষ হয়েও যেন অক্ষত রয়ে গেল সব!এই দায় কেন নিলেন রওনক ভাই?কুহুর খুব করে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে হলো,বিয়ের মতো এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন রওনক ভাই!আমাকে আপনি কোনোদিন ভালবাসতে পারবেন তো?চোখে জলেরা ভীর জমালো।ভাইকে ছোট্ট একটা হাসি ফিরিয়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো কুহু।আচমকা ফুল গাছের উপর দৃষ্টি থমকে গেল।এতদিন বাদে আজ একটা লাল টকটকে গোলাপ ফুটেছে!আশ্চর্য!এটা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

,

শুভ্র পাঞ্জাবি পরেই বিয়ের পিড়িতে বসলো রওনক।কয়েক মিনিটের মাঝে কাজী বিয়ে সম্পন্ন করলেন।ভেতরের ঘর থেকেও সবার হৈচৈ শোনা যাচ্ছে।রিশা চেঁচিয়ে বলল,কুহু কবুল বলেছে।কথাটা কর্নপাত হতেই অদ্ভুত এক প্রশান্তি বক্ষস্থল শীতল করে তুলল রওনকের!অনুভূতি হলো প্রখর!পছন্দের কাউকে বিয়ে করা,যুদ্ধ জয়েরই সমান!তবে একবার পেয়ে গেলে ধরণীর সকল সুখ তখন একত্রে ধরা দেয়!

চলবে….

#তুমি_রবে_নীরবে (১২)
~নাদিয়া সাউদ

১৯.
সামনে প্রসস্থ নদী!এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রওনক।রাতের আঁধারে জলের এক অদ্ভুত শব্দ শোনা যায় যেন! পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রাতিম।হাতে কয়েকটা কংক্রিটের টুকরো নিয়ে থেমে থেমে নদীর বুকে ছুঁড়ে ফেলছে।খানিকক্ষণ পিনপতন নীরবতার পর বলল রাতিম,
“আসার পর তো সেই চুপ করেই আছিস।ঘরে যে নতুন বউ ফেলে এসেছিস সে খেয়াল আছে?আজকের এই দিনটা জীবনে একবারই আসে।চাইলে তো কালকেও দেখা করতে পারতিস আমার সঙ্গে।

রওনক ঈষৎ হাসলো।গম্ভীর স্বরে কিঞ্চিৎ হতাশ টেনে বলল,
” বাসরের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।বিয়েটা কিভাবে করেছি জানিসই!এখন যে রুমে গিয়ে কুহুর সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি আলাপন জুড়ে দিব সেটার কোনো উপায় নেই!মেয়েটা নির্ঘাত মাথা ভর্তি প্রশ্ন নিয়ে অপেক্ষা করছে।

“আমি ঠিক বুঝলাম না তোর হাবভাব!সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়ে বুক ফুলিয়ে বীর প্রেমিক পুরুষের মতো কুহুকে নিয়ে আসবি!তা না করে মাস্টার প্ল্যান করে বিয়ে করলি!শালা আরেকটু হলে তোর সুমুন্দি আমাকে জেলে পুরে দিত!

“বাসায় আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে।কুহুর ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে বললেও মা-বাবা রাজি হতেন না।এদিকে কুহু তো আমাকে ভালবাসে না যে দু’জনে মিলে বিয়ে করে নিব।অনেক ভেবেচিন্তে এই প্ল্যান করেছি।শেষ মুহূর্তে বাবার থেকে অনুমতি নিয়েই আমি জনসম্মুখে কুহুকে বিয়ে করার প্রস্তাব রেখেছিলাম।বাবা জানে আমি সবসময় যা করি সঠিক ভেবেচিন্তেই!খুব বিশ্বাস করে আমাকে।আর কুহুর পরিবারও যে রাজি হবে এতে শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম।আমাকে সর্বক্ষণ একটা ভয় তাড়া করতো যদি কুহুকে হারিয়ে ফেলি?সবদিকে বোঝানোর মতো সময় আমার কাছে ছিল না।

” তা বেশ!বিয়ে তো সম্পন্ন হয়েই গেল!এখন নির্ধিদ্বায় কুহুকে গিয়ে নিজের মনের কথাটা জানিয়ে দে!এখন তো আর ভয় নেই!

রাতিমের দিকে তাকাল রওনক।তার চোখেমুখে আজ উচ্ছলতা!পরিস্থিতি যাই হোক কুহুকে তো তার পাওয়া হয়ে গেছে!

“উহুম!ভালবাসা প্রকাশের চেয়ে অনুভব করানোটা বেশি সুন্দর রাতিম।এতদিন কুহু দেখেছে আমার রাগী রূপ!সেটা ঠিক কতখানি ভালবাসায় রূপ নিতে পারে সেটা এখন বোকা মেয়েটা উপলব্ধি করবে।যখন আমার ভালবাসাটুকু বুঝতে পারবে,তখন প্রকাশ করলে এর গভীরতা অনুধাবন করতে পারবে!আর সে তো এখন পুরোপুরিই আমার কব্জায়!

রাতিম অবাক হয়ে শুনলো রওনকের কথা।কাউকে ভালবাসলে দ্বিধাহীন,নিঃসংকোচে সহজে বলা যায় না!অন্যরকম একটা ভয় থেকেই যায়।এটা বোধহয় রাতিমের চেয়ে ভাল কেউ জানে না!হাত ঘড়িতে তাকিয়ে রওনককে তাড়া দিল রাতিম।ইতিমধ্যে রাত বারোটা বেজে গেছে!আর কিছুক্ষণ দেরি করলে বেচারারা বাসর রাত ভোর হয়ে যাবে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল রওনক,
“তুই আমার অনেক উপকার করেছিস রাতিম।তোর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার নেই।বল কি চাস তুই আমার কাছে?

প্যান্টের পকেটে হাত পুরে নিয়ে হাঁটা ধরল রাতিম।সঙ্গে রওনককে তাড়া দিয়ে বলল,
” এটা তোলা থাক।উপযুক্ত সময় এলে চাইব।তখন কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারবি না।এই প্রতিদানের কথা অবশ্যই মনে রাখবি।

রাতিমের কথায় খানিকটা হাসল রওনক।পিঠ চাপড়ে নিয়ে হাঁটা ধরল পাশাপাশি।জগতে এরকম একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ক’জনের থাকে?

২০.
কুহু বসে আছে রওনকের ঘরে।রিশা খানিক্ষন আগে তাকে রেখে গেছে এখানে।এই কক্ষে কুহুর কেমন দমবন্ধ আর অসস্থি লাগছে!চোখের পলকে কেমন সবকিছু পাল্টে গেল!জীবন অদ্ভুত!আমাদের ভাবনা,চাওয়া মোতাবেক হয়না কিছু!অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে হলেও তথাকথিত আজকে কুহুর বাসর।অথচ রুমে ফুলের চিহ্নটুকু নেই!এই বিয়ের জন্য কি কুহু প্রস্তুত ছিল?বিয়ে সম্পন্ন হতেই বাড়ি অবধি কুহুর সঙ্গে এসেছে রওনক।সর্বক্ষণ লোকটার চোখেমুখে একটা গাম্ভীর্যতা ছিল!বরণ শেষে রিশা বারংবার রওনককে বলছিল, কুহুকে যেন কোলে করে রুম পর্যন্ত নিয়ে আসে।কথাটা শুনেও কানে তোলেনি লোকটা।কুহুকে ফেলে চলে এসেছিল রুমে।কুহু অপমানিত বোধ করেনি।এমনটাই তো হওয়ার কথা!মন থেকে যদি মেনে নিতে নাই পারবেন,তাহলে বিয়েটা করেছিলেন কেন?নিছক দয়া ছিল?কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখে জল জমেছে কুহুর।এতক্ষণ যাবৎ রিশার রুমেই ভাল ছিল মনে হচ্ছে।খানিকক্ষণ বাদে হয়তো রওনক ভাই আসবেন।মুখোমুখি হবে কি করে কুহু?নিজের স্বামীর জায়গায় যতবার রওনক ভাইকে ভাবছে,ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।রওনকের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে কুহু।স্কুল ছুটির পর রিশার সঙ্গে তাদের বাড়িতে এসেছিল।সবে বিকেল গড়িয়েছিল।রওনকের এই রুমটাতেই কুহু আর রিশা ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে নাচ করছিল।কুহুর পরনে ছিল রওনকের টিশার্ট।রিশার হাত ধরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে নাচছিল।সেদিনই হোস্টেল থেকে ফিরেছিল রওনক ভাই।তার জামা কুহুর গায়ে দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে ইচ্ছেমত কথা শুনিয়ে দিয়েছিল।ভয়ে,অপমানে কেঁদে ফেলেছিল কুহু!এরপর রওনক বাড়িতে আসলে এবাড়িতে আসেনি কুহু।ভুলে যদিও রওনকের মুখোমুখি হয়ে যেত তখন এটা-সেটা বলে ক্ষ্যাপাত!ভাল লাগত না কুহুর।একসময় ভয়টা কেটে গেল।সে-ও রওনক ভাইয়ের মুখের উপর তর্ক করার সাহস পেয়ে বসল!কথার জবাব দিতে পারলে স্বস্তি লাগতো।যেদিন উত্তর দিতে পারতো না,সেদিন বাসায় গিয়ে লুকিয়ে কাঁদত কুহু!সবচেয়ে অপছন্দের লোকটা কিনা আজ তার স্বামী!ভাবনার মাঝেই শারমিন বেগম আসলেন।এক প্লেট খাবার রেখে চলে গেলেন।অথচ তার মুখে আর আগের সেই হাসিটুকু নেই!মন থেকে বোধহয় কুহুকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি তিনি।এত অমিলের মাঝে বিধাতা কেন এক করলেন তাদের?

দেওয়ালে ঝুলছে ঘড়ি।সময় রাত একটা।এখানে একটুও ভাল লাগছে না কুহুর।ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে বাড়ি চলে যেতে।গায়ের ভারী সাজ নিয়ে হাপিয়ে উঠেছে।খাবারের দিকে দৃষ্টি পরতেই তপ্ত শ্বাস ফেলল।ও খাবার গলা দিয়ে নামবে না।উঠে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল।আসার সময় কান্না করার দরুন সাজ সব লেপ্টে গেছে!কি বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে!এক এক করে গয়না খুলে নিল কুহু।গলার হার খুলতে গিয়ে আয়নায় কিয়ৎক্ষণ দৃষ্টি থমকে রইল।আজ সকাল অবধিও ভেবেছিল এই সাজ রাতিমের জন্য!রওনক ভাই তো ভাবনার ধারের কাছেও ছিল না!অথচ এখন সে রওনক ভাইয়ের বউ হয়ে চলে এসেছে!আচমকা হাতের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবনা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসলো কুহু!তৎক্ষনাৎ আয়নায় খেয়াল করতেই দেখলো রওনক ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।কুহুর হাত সরিয়ে দিয়ে,যত্ন নিয়ে গলার হার খুলে দিচ্ছে!কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল কুহু।কি বলবে বুঝতে পারলো না।মনোযোগী রওনক ভাইকে দেখল ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি নিয়ে!তবে ঘাড়ে রওনক ভাইয়ের মৃদু স্পর্শ পেতেই আড়ষ্ট হয়ে গেল ক্রমেই।হার খসে মেঝেতে পরে গেল।তড়িঘড়ি করে তুলতে ব্যস্ত হলো কুহু।

“শাড়ি পাল্টে নাও,হালকা লাগবে।

গম্ভীর পুরুষালি স্বরটুকু শুনে চকিতে ফিরে তাকাল কুহু!এত ভাল ব্যবহার ঠিক তার হজম হচ্ছে না।রওনক কয়েক পা এগিয়ে গেল কাবার্ডের কাছে।কুহু প্রশ্ন করল,
” হুট করে আমাকে কেন বিয়ে করলেন,রওনক ভাই?যাকে পছন্দ নয় তাকে কি করে সারাজীবনের জন্য নিজের কাছে নিয়ে এলেন?দয়া করলেন আমাকে?

ব্যস্ত হাত থামিয়ে কুহুর দিকে তাকাল রওনক।মাথামোটা মেয়েটা এরকম প্রশ্ন করবে ভাবতে পারেনি।একটা মানুষ যতই দয়াশীল হোক!নিজের জীবনের পরোয়া তার আছে।এত বড়ো একটা বিষয়কে কিনা কুহু দয়া ভাবছে!আশ্চর্য!দয়া করে কেউ বিয়ে করে না নিশ্চয়ই।চাপা এক রাগ নিয়ে কাবার্ড থেকে টিশার্ট,ট্রাউজার বের করল রওনক।কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি অতি মহান একজন ব্যাক্তি!সে জন্য বিশাল এই দয়া দেখিয়েছি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে!বাই দ্য ওয়ে!আমাকে বিয়ে করে আফসোস হচ্ছে নাকি তোমার?পোড়া কপালি মনে হচ্ছে নিজেকে?

রওনকের কথায় থতমত খেল কুহু।জবাব টা ভাল লাগল না তার!শক্ত গলায় বলল,
“জীবনের মায়া ত্যাগ করে বিয়ে কেন করলেন?আপনার সাথে তো একদিনও সংসার করা সম্ভব হবে না।ঝগড়া করেই দিন পাড় হবে।

নির্বোধ মেয়ের কথা ধীরে ধীরে রাগ নিয়ন্ত্রাধীন করে দিচ্ছে রওনকের।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য প্রাণী মনে হয় কুহুকে।কথার কোনো রকম তোয়াক্কা না করে পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে লাগল রওনক।লোমশ চওড়া বক্ষস্থলে দৃষ্টি আঁটকাতেই সরিয়ে ফেলল কুহু।কোনোরকম আমতা আমতা করে বলল,
“চেইঞ্জ করার জন্য তো ওয়াশরুম আছেই।এখানে আপনি ব্যাতিতও অন্য কেউ আছে দেখছেন না?

কুহুর কথা শুনে দৃষ্টি তুলে তাকাল রওনক।ওষ্ঠকোণে ধরা দিল তার দুষ্ট হাসি।জব্দ করার যখন দূর্দান্ত একটা সুযোগ এসেছে,এটাকে কোনোমতে হাতছাড়া করবে না সে।কুহুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ধারালো দৃষ্টি ফেলে বলল রওনক,
” আজকের দিনের কথা ভুলে গেলে তুমি?আমার সঙ্গে নাকি সংসার করা সম্ভব নয়।দেখি আজ থেকেই চেষ্টা করে।সম্ভব হয় কিনা কিছু!

রওনকের কথা শুনে তড়াৎ করে দৃষ্টি তুলে তাকাল কুহু।মনে হচ্ছে অদ্ভুত রকমের এক হাসি লেপ্টে আছে লোকটার চোখেমুখে!রওনক ততক্ষণে কুহুর আরো অনেকটা কাছে চলে এসেছে।বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে পিছিয়ে গেল কুহু।চোখেমুখে ভয়ার্তের ছাপ!রওনক এগোতে লাগল।শুকনো ঢোক গিলল কুহু!বিয়ে তো হয়েই গেছে!পরবর্তীতে কি হতে পারে সেটুকু তো মাথায় ছিল না!রওনক ভাইয়ের মতিগতি খুব একটা ভাল ঠেকছে না!খাটের সঙ্গে ধাক্কা খেতেই টাল সামলাতে পারলো না কুহু।রওনক ধরতে গিয়ে পা পিচলে পেলব বিছানায় পড়লো কুহুকে নিয়ে।চোখমুখ ভয়ানক ভাবে খিচিয়ে নিল কুহু।আঁকড়ে ধরল রওনকের পাঞ্জাবি!লম্বাটে গড়নের বলিষ্ঠ দেহ খানার সম্পূর্ণ ভার পরলো কুহুর গায়ে!শব্দ করে হেসে উঠল রওনক।দ্রুত চোখ মেলে তাকাল কুহু!রওনক ঝুঁকে আছে তার মুখের উপর।দু’জনের নাকের দূরত্ব কেবল এক ইঞ্চি!শ্বাসপ্রশ্বাস মিলেমিশে যাচ্ছে একত্রে!চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো কুহুর।খেয়াল হতেই দেখল তার একহাত রওনকের উন্মুক্ত বক্ষস্থলে!ফের শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলল কুহু,
“একদম কোনো অসভ্যতা করবেন না রওনক ভাই!আমি কিন্তু তাহলে এখন চেঁচাবো!

চলবে….