তুমি রবে নীরবে পর্ব-২৫+২৬

0
18
তুমি রবে নীরবে

#তুমি_রবে_নীরবে (২৫)
~নাদিয়া সাউদ।

রিশার হুট করেই মনে হলো রাতিম ভাইকে তো কখনো দেখেনি কুহু।উনাকে নিয়ে কথাও হয়নি তার সঙ্গে। না চেনারই কথা! কুহু এক অন্য জগতে হারিয়ে গেছে মুহূর্তে! রাতিম নামের ছেলের সঙ্গেই তো তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল! তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রিশা,

“আরে তুই চিনবি না।রওনক ভাইয়ার বন্ধু হয়।একবার এসেছিল আমাদের বাসায়।রাস্তায় অনেকবার দেখা হয়েছে তার সঙ্গে।আজকে তোর সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিব।

ভাবনার জাল ছিন্ন হতেই বলল কুহু,

” কোন রাতিম এটা? মানে আমার বিয়েও তো রাতিম নামের কারো সাথেই ঠিক ছিল।এটাই আবার সেই ছেলেটা নয়তো?

কুহুর সন্দিহান গলা শুনে কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পরলো রিশার।এই কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।অবশ্য কুহুর সঙ্গে যার বিয়ে ঠিক ছিল তাকে দেখেনি রিশা।তার সম্পর্কে শুনেছে শুধু।শব্দ করে হেঁসে বলল রিশা,

“তুই ও না! মানে এখনো আগের চিন্তায় পড়ে আছিস? তোকে না বলেছি সব ছেড়েছুড়ে আমার ভাইয়ার প্রতি মন দে! তোর সাথে যে ছেলেটার বিয়ে ঠিক ছিল সেই ছেলেটার বড়ো বোন আর দুলাভাই এসে তোর বিয়ে ঠিক করে গিয়েছিল।আর আমি যার কথা বলছি তার কোনো বড়ো বোন নেই।ভাই আছে একটা ছোট।এবার এইচএসসি দিয়েছে।

কুহুর মুখ থেকে চিন্তা সরলো না।রিশা গভীর মগ্ন হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।কুহুর হাতে দৃষ্টি পরতেই দেখল আটা মাখানো।মানে অর্ধেক কাজ রেখে চলে এসেছে মেয়েটা। ঘড়িতে তাকিয়ে দ্রুত তাড়া দিল রিশা। হকচকিয়ে উঠলো কুহু।পরক্ষণে রিশাকে বলল নাশতার জন্য ডাকতে এসেছে সে। কথাটুকু বলেই ভোঁ দৌড় দিল।

,

আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে রওনক। পরনে ছাই রঙা ফুল হাতার শার্ট। আর কালো রঙা ফর্মাল প্যান্ট।এক হাতা গুটানো হলেও কা-টা হাতের টা গুটাতে পারল না। ঘড়ি পরার সময়ও ঘটলো বিপত্তি! কা-টা হাত নিয়ে তৈরি হতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে।শার্টের বোতাম লাগাতে গিয়ে রীতিমতো যু-দ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। সেই সকালে যে এই রুম থেকে বেরিয়েছে নির্বোধ মেয়েটা এখনো আসার নামগন্ধ নেই! কাল রাতের কথা মনে হতেই ওষ্ঠ জুড়ে ঈষৎ হাসি ফুটে উঠলো রওনকের। কালকে ঘুমের ভাব ধরে পরে না থাকলে বোধহয় কুহুর ওই চমৎকার রূপটা চোখে ধরা দিত না। মাঝরাতে রওনকের কা-টা হাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে ছোট ছোট চুমু খেয়েছিল মেয়েটা। চোখ ভিজে উঠেছিল জলে! মৃদু ফোঁপানোর শব্দ হচ্ছিল। অন্ধকারে ঠিক অনুভব করছিল রওনক। সে মুহুর্তে বিশ্বজয় করা আনন্দ হচ্ছিল তার! ইচ্ছে করছিল অবোধ মেয়েটাকে বুকে টেনে নিতে। আর চোখের জলটুকু শুষে নিতে। বহুকষ্টে নিজেকে সংবরণ করেছে রওনক। কুহুর ওই মুহূর্তটুকু সে দেখে ফেলেছে এটা বুঝতে দিতে চায়নি। সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে বিছানা থেকে ওয়ালেট নিয়ে পকেটে পুরতে পুরতে বেরিয়ে আসলো রওনক। ডাইনিংয়ে আসতেই সর্বপ্রথম কিচেনে দৃষ্টি গেল। বেশ মনোযোগ নিয়ে কাজ করছে কুহু। একটুপরই তাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।হাতে খুব একটা সময়ও নেই! টেবিলে নাশতা সাজাচ্ছেন শারমিন বেগম। নিজের প্লেটে মনোযোগী হয়ে শান্ত স্বরে বলল রওনক,

“মা ,কুহু তো ভার্সিটিতে যাবে। দেখ তো ওর কাজ শেষ হয়েছে কিনা।

ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন শারমিন বেগম,

” হ্যাঁ, নাশতা অনেক্ক্ষণ আগেই তৈরি হয়ে গেছে। সারাদিন আমি একা একা কাজ করি। তাই কুহুকে বললাম দুপুরের রান্নার জন্য কিছুটা কাজ এগিয়ে দিয়ে যেতে। বিয়ে হয়ে গেছে এখন যদি না শেখে, সংসার না বোঝে তাহলে আর কবে করবে বল? পড়াশোনা করলেও সংসারের কাজ তো করতেই হয়।

মার কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলল না রওনক। চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগী হলো।কিছুক্ষণের মাঝে রিশা উপস্থিত হলো। কিচেনে কুহুকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল সে। চপিং বোর্ডে সব্জি কাটছে কুহু। একপ্রকার টেনেটুনে কুহুকে নিয়ে আসলো রিশা। আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে আজকে আর ভার্সিটি যাওয়া হবে না কুহুর। মেয়ের এরুপ আচরণ ভাল লাগেনি শারমিন বেগমের। বিয়ে হলে বুঝবে সংসার কি! অন্তত মায়ের কষ্টটা বোঝা উচিত ছিল রিশার। তপ্ত শ্বাস ফেলে রুমে চলে গেলেন তিনি। কুহু নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। খানিক শক্ত গলায় কুহুকে তৈরি হয়ে আসতে বলল রওনক। কাজ আছে বলে রিশা একটু তাড়া নিয়েই বেরিয়ে গেল। নাশতা শেষ করে রুমে চলে আসলো রওনক।ততক্ষণে কুহু তৈরি হয়ে গেছে।সাদা আর আকাশী রঙা মিশেল কুর্তি পরে নিয়েছে। চুল বাঁধার সময় পেছন থেকে রওনক তাকিয়ে দেখছিল মনোযোগ নিয়ে। আয়নায় অবশ্য রওনককে খেয়াল করছিল কুহু।অদ্ভুত এক মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে লোকটা।ঈষৎ লজ্জা পেল কুহু। কয়েক কদম এগিয়ে এলো রওনক। ঘড়িটা কুহুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল পরিয়ে দিতে। কিঞ্চিৎ থতমত খেল কুহু। কা-টা হাতটা টেনে নিল নিজের কাছে। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে বুলিয়ে দেখলো করুণ দৃষ্টি ফেলে। পরক্ষণে সোনালী রঙা ঘড়িটা রওনকের লোমশ হাতে যত্ন নিয়ে পরিয়ে দিল। কুহুর সামনে পড়ে থাকা কাটা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল রওনক। বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে বেরিয়ে গেল কুহু। বাঁকা হেসে বিরবির করে বলল রওনক, লজ্জাবতী গাছকে ছুঁয়ে দিলেও বোধহয় এত তাড়াতাড়ি নুইয়ে পড়ে না যতটা সংকুচিত হয়ে যায় কুহু! এই লাজ রওনকের বুকে ভয়ানক তোলপাড় সৃষ্টি করে! ইচ্ছে করে মুহূর্তেই ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিক বোকা মেয়েটার সমস্ত হায়া!

কুহু বেরোতেই শারমিন বেগমের মুখোমুখি হলো। কেমন এক গাম্ভীর্যতা তার মুখাবয়ব জুড়ে। একটুখানি হাসলো কুহু। জানাল ভার্সিটি যাচ্ছে সে। কোনোরকম উত্তর দিলেন না শারমিন বেগম। মুকখানা মলিন হয়ে আসলো কুহুর। মনে মনে ভেবে রাখলো আজকে রাতের সব কাজ একাই করবে সে। রওনক বেরিয়ে আসতেই টুকিটাকি জিনিস আনার কথা বললেন শারমিন বেগম। সায় জানিয়ে চলে গেল রওনক। বাইক বের করে নিল। শারমিন বেগমের কপালে ভাজ পরলো। ছেলেকে পইপই করে নিষেধ করেন বাইক চালাতে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয় তার। মায়ের কথা বাধ্য ছেলের মতো মানে রওনক। তবে আজ কেন কথার বরখেলাপ করছে? এই মুহূর্তে মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে রওনক। এমনিতে দেরি হয়ে গেছে আজ। তারউপর রিশা নেই। তাই বাইকে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। কুহু বেশ খুশি হয়ে এগিয়ে গেল। এতক্ষণ চিন্তা হচ্ছিল পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে। বাইক থাকতেও যে কেন ব্যবহার করেননা রওনক ভাই সেটাই বুঝে উঠতে পারে না সে। অযথা গাড়ি ভাড়া দেওয়ার মানে হয়? রওনকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল কুহু,

“এখন থেকে আপনার বাইকে করেই ভার্সিটিতে যাব।ওটা আর অযথা ফেলে রাখবেন না।

শারমিন বেগম ছেলেকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। এখন তো সে বিবাহিত! মায়ের কথার কোনো মূল্য আছে নাকি? বউ যেটা বলবে সেটাই শুনবে। লম্ব লম্বা পা ফেলে চলে গেলেন তিনি। রওনক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মায়ের যাওয়ার পানে।

,

পরের সপ্তাহে ভার্সিটিতে নবীন বরণ। সেই আয়োজনের পূর্ব প্রস্তুতি চলছে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শুরু করে বাকি বর্ষ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের নৃত্য,গান,কবিতা বিভিন্ন পারফরম্যান্স করার সুযোগ আছে। ছেলেদের দলের দায়িত্ব শাহিনূর মাহি ম্যামের কাছে। তিনি সেচ্ছায় দায়িত্ব না নিলেও ছেলেপেলেরা তার কাছে এসেই নামের লিস্ট ধরিয়ে দিল। রূপসা,সোহা,নয়ন আর আরিয়ান অপেক্ষায় আছে কুহু আর রিশার। রূপসা একক নৃত্য করবে। এর জন্য সপ্তাহ খানেক তাকে রিহার্সাল করতে হবে ভার্সিটির নৃত্য শিল্পী কনকের কাছে। নয়ন আর আরিয়ান সোহাকেও জোড়াজুড়ি করলো।বরাবরের মতো নাকচ করে গেল সে। স্টেজে উঠলেই হাত-পা কাঁপে সোহার। তার দ্বারা নৃত্য করা সম্ভব নয়! আরিয়ান ইচ্ছে প্রকাশ করলো যুগল নৃত্য করবে সে। সবাই যেন ভুত দেখার মতো চমকাল! নয়ন চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেল! এসবে শুধু রূপসার আগ্রহ আছে। তাছাড়া এসবে তাদের বন্ধুমহলের কেউ মাথা ঘামায়নি। সোহা কন্ঠস্বর টেনে নয়নের উদ্দেশ্য বলল,

“তুই তাহলে বাকি যাবি কেন রে? গান গাইতে পারিস। একমিনিট! তুই না সারাক্ষণ বই পড়িস? আবৃত্তি করতে পারিস অন্তত!

বিরস মুখে বলল নয়ন,

” দূর! এসব নৃত্য,আবৃত্তি ছেলেদের সাথে যায় না।পারসোনালি আমার মনে হয় আরকি। আরিয়ান আর রূপসা মিলে যুগল নৃত্য করুক। বরং আমরা উপভোগ করি। এটাই ভাল হবে।

পাশ থেকে রূপসা বলল,

“আমি একক নৃত্যে নাম দিয়ে ফেলেছি। ওসব যুগল নৃত্য আমাকে দিয়ে হবে না।

হাসতে হাসতে বলল নয়ন,

” আরিয়ান তুই পার্টনার পাবি কোথায় এখন? এত কিছু রেখে যুগল নৃত্য করতে ইচ্ছে হলো তোর!

নয়নের কথা থামিয়ে দিয়ে বলল সোহা,

“আরে রিশা আর কুহুকে আসতে দে আগে। হতে পারে দুজনের থেকে একজন রাজি হয়ে গেল আরিয়ানের সঙ্গে নাচতে।

আচমকা দৌড়াতে দৌড়াতে আসলো কুহু। সবার সামনে এসে হাঁপিয়ে গেল। ঘনঘন দম ফেলল। রূপসা পেছনে তাকিয়ে দেখে নিয়ে প্রশ্ন করলো,

” কিরে রিশা কই?

নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বলল কুহু,

“কি জানি! অনেক্ক্ষণ আগেই তো চলে এসেছে ও!

নয়ন বলল,

” দেখ বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে হয়তো কোথাও!

সবার মাঝে নৃত্যশিল্পী কনক আসলেন। আরিয়ানের উদ্দেশ্যে জিগ্যেস করলেন,সে পার্টনার জুগিয়েছে কিনা। আজকের পর আর কারো নাম নেওয়া হবে না। আরিয়ান চট করেই বলল,

“হ্যাঁ পেয়েছি ম্যাম। কুহু আর আমি যুগল নৃত্য করবো।

কুহুর দিকে একপলক তাকিয়ে কাগজে দু’জনের নাম টুকে নিয়ে চলে গেলেন নৃত্য শিল্পী কনক। পাশ দিয়েই যাচ্ছিল রওনক। কথাটা স্পষ্ট শুনেছে সে। কুহু হতবুদ্ধি হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ানের কথা বোধগম্য হলো না তার। কুহুর অবাক চাহনি দেখে রূপসা এগিয়ে এসে বুঝিয়ে বলল সব। মুহূর্তে রেগে গেল কুহু। তেড়ে গেল আরিয়ানের দিকে। স্কুলে থাকাকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কুহু নৃত্য করতো এটা সবারই জানা। তবে তখন ছোট ছিল সে। এখন এসবে কোনো আগ্রহ নেই। অথচ আরিয়ান তার থেকে মতামত নিবে না? আরিয়ানের পিঠে ধুপধাপ কিল বসাল কুহু। আরিয়ান বেশ অনুনয়ের স্বরে বলে যাচ্ছে রাজি হতে। এবারই প্রথম পারফরম্যান্স তার। খুব আশা করে নাম দিয়েছে সে।

দূর থেকে দুজনের কান্ড দেখছিল রওনক। মনে হচ্ছে কুহু বাড়াবাড়ি করছে। চোখমুখ কাঠিন্যে হয়ে আসলে তার।

” হাতে কি হয়েছে আপনার?

চিকণ মেয়েলি স্বরে পাশ ফিরে তাকাল রওনক। শাহিনূর মাহি দাঁড়িয়ে আছে। এমুহূর্তে রাগ দ্বিগুন হলেও সেটা দমিয়ে দিল সে। হাসার চেষ্টা করলো। সন্দিহান গলায় ফের বলল শাহিনূর মাহি,

“দেখে মনে হচ্ছে কারো জন্য ইচ্ছাকৃত হাত কে-টেছেন! কার জন্য করেছেন এমন পাগলামি? কে সেই সৌভাগ্যবতী?

একটা মানুষকে সরাসরি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করাটা মূর্খের কাজ। এমুহূর্তে শাহিনূরকে বুদ্ধিশূন্য মনে হলো রওনকের। দূরে কুহুর দিকে দৃষ্টি রেখে উত্তর দিল সে,

” আপনি তো নিজের মতো উত্তর ভেবেই নিয়েছেন ম্যাম। তাহলে অযথা জিগ্যেস করছেন কেন?

“তার মানে কোনো মেয়ের জন্যই হাত কে-টেছেন?

” আমি সম্পূর্ণ বোধবুদ্ধি সম্পন্ন একজন পুরুষ। পাগল ছাড়া নিজের ক্ষতি কেউ করে বলে মনে হয় না। তবে এসব নিরর্থক প্রশ্ন করার মানে কি বুঝলাম না।

“বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝেও না বোঝার ভং ধরছেন? প্রেমে পরলে মানুষ পাগলামিও করে।

” জানা নেই এই বিষয়ে। তবে এটুকু বলতে পারি আমি একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। আমার চিন্তাভাবনাও সুন্দর। আমার কথা বলার ধরণও যৌক্তিক! অন্যকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করারও কোনো বাজে অভ্যেস নেই।

রওনকের শেষের কথায় অপমানিত বোধ করলো শাহিনূর মাহি। কিছুটা দূরে একদল শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে দেখছিল রওনক আর শাহিনূরকে। বিষয়টা বরাবরের মতো বিরক্তি ধরাল রওনককে। এসব বিষয় খুব নাজুক হয়। যা ঘটে না তা নিয়েও রটে বিশ্রিভাবে! ভীড়ের মাঝে হুট করে কুহুকে দেখতে না পেল না রওনক। ভ্রু কুঁচকে ক্যাম্পাসে চলে আসলো সে। সামনে আরিয়ানকে দেখল হেঁটে কোথাও একটা যাচ্ছে। হাতে লাল টকটকে একটা জবা ফুল। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো রওনকের। আরিয়ানকে ডাকলো কাছে।

চলবে…

#তুমি_রবে_নীরবে (২৬)
~নাদিয়া সাউদ।

আরিয়ান হাসিমুখে এগিয়ে এসে সালাম জানাল। রওনকের মুখ থমথমে গম্ভীর দেখাল। আরিয়ানের আপাদমস্তক দেখে নিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বলল সে,

“পড়াশোনার কি অবস্থা? কদিন বাদেই ইনকোর্স পরীক্ষা। মাথায় আছে?

আরিয়ানের হাসিটুকু নিমেষে বিলীন হয়ে গেল। রওনক স্যার বলতে সবাই একটু ভয়ই পায়। সবকিছুতে বেশ কড়াকড়ি নিয়ম তার! নিয়মের বাইরে একচুল ছাড় দেননা। সুদর্শন হলেও কোনো মেয়ের সাহস নেই চোখ তুলে ভাল মতো দেখবার। মেয়েরা যা প্রশংসা করে দূর থেকেই। আর সামনাসামনি ভয়েই সেঁধিয়ে থাকে! জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল আরিয়ান,

” জ্বী স্যার,মাথায় আছে পরীক্ষার কথা।

“তোমার পরিবারে কি কেউ নৃত্য শিল্পী আছে? এই ধরো তোমার বাবা, কাকা কিংবা ভাই! হতে পারে তোমার দাদা। কারণ ছেলেরা নাচের প্রতি কমই ঝুঁকে।
আমার জানামতে, কমবেশি যারা নৃত্যের সঙ্গে জড়িত তারা বংশগত ভাবে দ্বারা পেয়ে থাকে।

রওনক স্যারের কথায় লজ্জাবোধ করলো আরিয়ান।সেটুকু তার মুখাবয়বে স্পষ্ট ফুটে উঠলো।

” না মানে আমার বংশের কেউ নাচের সঙ্গে জড়িত নয় স্যার। আমার পরিবারে এসব পছন্দও করে না কেউ। এমন ফাংশনে টুকটাক নাচ সবাই-ই করে।

আরিয়ানের কথার সঙ্গে ঈষৎ মাথা ঝাঁকাল রওনক। পকেটে হাত পুরে নিয়ে বলল,

” কথাটা ভুল বললে। সবাই এসব ফাংশনে নৃত্য করতে পছন্দ করে না। আর নিজের পছন্দ, ইচ্ছে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। যদি ঠিকঠাক নৃত্য জানো, অভিজ্ঞতা থাকে তাহলেই পারফরম্যান্স কোরো। পরে দর্শক যেন তোমার নাচের প্রতি আগ্রহ না হারায়। সময় নষ্ট মনে না করে।

রওনক স্যারের কথায় কনফিডেন্স লেভেল একেবারে কমে গেল আরিয়ানের। শখেই একপ্রকার নাম লিখিয়েছিল সে। এখন যদি ঠিকঠাক নৃত্য করতে না পারে? তাহলে ভার্সিটিতে তাকে নিয়ে হাসাহাসি হবে! মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়ে প্রস্থান করলো আরিয়ান। রওনক আশেপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে কুহুকে খুঁজতে লাগলো। এই মেয়ে কি একদণ্ডও শান্তি দিবে না? একটা ছেলে জোড় করছে নাচার জন্য মুখের উপর ‘না’ বলে দেওয়া যেত না? নাকি রওনকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই? কুহুকে দেখা গেল পাশের ভবনের তিনতলায় উঠছে। সাথে দু’টো মেয়ে। আপাতত ক্লাস না থাকায় দ্রত সেদিকে এগিয়ে গেল রওনক। লম্বা লম্বা পা ফেলে মুহূর্তে উঠে গেল উপরে। পাশে রওনককে দেখে রূপসা আর সোহা দাঁড়িয়ে গেল। সালাম জানাল। তাদের সঙ্গে কুহুও তাল মেলাল। রওনকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কুহুর মাঝে নিবদ্ধ। থমথমে মুখে রিশা কোথায় জানতে চাইল রওনক। হঠাৎ কুহুর মনে হলো রিশা তো এখনো আসেনি! ঠোঁট উল্টে বলল সে,

“আমিও তো রিশুকে খুঁজছি স্যার। ও এখনো আসেনি!

সোহার ফোনে কল আসলো। নয়ন জরুরি তলব জানাল নিচে যাওয়ার জন্য। কাল কখন থেকে রিহার্সাল শুরু হবে সেটা জানিয়ে দিবে কনক স্যার। কুহুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে দেখে কিছু বলল না সোহা। রূপসাকে নিয়ে চলে গেল। আশপাশে একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে কুহুর হাত চেপে ধরলো রওনক। ঈষৎ চমকাল কুহু! টেনে নিয়ে ফাঁকা ক্লাসরুমে চলে আসলো রওনক। নিজের বদ্ধ হাতের দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল কুহু! চোখমুখ শক্ত করে বলল রওনক,

” নাচের জন্য যে নাম লিখিয়েছ ওটা কেটে আসো যাও!

রওনকের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকাল কুহু। এই নাচের কথা কিভাবে জানলো রওনক ভাই? তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল সে,

“আরে আমি ইচ্ছে করে নাম দেইনি তো। বন্ধুরা মিলে লিখিয়ে দিল। তাই আমি আর কিছু বলিনি।

” বলোনি মানে? তোমার তো ইচ্ছে নেই নাচার! তাহলে কেন বারণ করবে না? আর আমার বউ সবার সামনে নাচবে সেটা দেখতে পারব না আমি।

চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবল কুহু। পরক্ষণে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,

“কে আপনার বউ? আপনি বিবাহিত নাকি? নিজেই তো শাহিনূর মাহি ম্যামের সঙ্গে বললেন আপনি অবিবাহিত! ভার্সিটিতে আপনার আর আমার মধ্যে শুধু শিক্ষক – ছাত্রীর সম্পর্ক! কোনো বারণ শুনবো না। আমার ব্যাপারে নাক গলাবেন না আপনি। সরুন, নিচে যেতে হবে আমাকে।

কুহু হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতেই অপর হাতে কুহুর কোমড় জড়িয়ে ধরলো রওনক। টেনে নিল আরো কাছে।টাল সামলাতে না পেরে রওনকের শক্তপোক্ত বুকে ধাক্কা খেল কুহু। চোখমুখ ঈষৎ কুঁচকে মাথা উঁচু করে তাকাল রওনকের দিকে! কাঠিন্য স্বরে বলল রওনক,

” যা বলছি সেটা শোনো। নয়তো খারাপ হয়ে যাবে কুহু।

“এখন আপনি যা শুরু করছেন সেটা খারাপ হচ্ছে! কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভাবতে পারছেন? সবাই বলবে আপনি একটা অসভ্য, চরিত্রহীন টিচার!

কথাটুকু বলে রওনকের বুকে হাত রেখে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলো কুহু।হাতের বাঁধন আরো শক্ত করলো রওনক।শীতল স্বরে কুহুর কানের পাশে বলল,

” যার যা ইচ্ছে হয় বলুক। সমস্ত কলঙ্ক হাসিমুখে মাথা পেতে নেব। কথা না শুনলে অসভ্যতা কাকে বলে সেটা বুঝিয়ে ছাড়ব তোমাকে।

” শুনব না। পারলে নিজে গিয়ে নাম কেটে দিয়ে আসুন। গিয়ে বলুন আমার বউকে নাচতে দিব না আমি।

কোনো উত্তর দিল না রওনক। নিনির্মেষ তাকিয়ে রইল কুহুর দিকে। খানিক্ষন আগের রোদ জ্বলমলে আকাশে মুহুর্তেই ঘন কালো মেঘ জমেছে।থেমে থেমে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। দমকা হাওয়া ছেড়েছে বাইরে। পুরো ক্লাসরুম প্রায় অন্ধকারে ছেয়ে গেছে! বাতাসটা গায়ের সঙ্গে মিশে যেতেই শরীর শিরশির করে উঠলো কুহুর। নির্ঘাত সবাই তাকে খুঁজছে। মুখ তুলে রওনকের পানে চাইল সে। বাতাসে রওনকের চুল এলোমেলো হয়ে কপাল ছুঁয়ে আছে। অদ্ভুত এক ঘোর লাগা নিয়ে তাকিয়ে আছে কুহুর পানে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য সামনে থাকা পুরুষের মাঝে দৃষ্টি আঁটকে গেল কুহুর। হৃৎস্পন্দন থমকে গেল যেন! কুহুকে জড়িয়ে নিয়েই ধীরে ধীরে সামনে এগোলো রওনক।পেছাতে থাকলো কুহু। দেওয়ালে পৃষ্ঠদেশ ঠেকতেই চমকে উঠলো! ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল রওনকের দিকে। দরজার আড়ালে আসতেই কুহুর দুগালে আলতো ল হাত রাখলো রওনক। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল কুহু। এখন ঠিক কি ঘটবে তার মস্তিষ্ক বোধহয় বুঝে ফেলল! ধীরে ধীরে ঝুঁকে কুহুর অধরোষ্ঠে ঠোঁট ছোঁয়াল রওনক। মুহূর্তে সর্ব শরীর কেঁপে উঠলো কুহুর।চোখ বুজে ফেলল সে। ক্ষনে ক্ষনে রওনক ডুবে যেতে লাগলো অন্যরকম এক ঘোরে! নিজের পেলব দু’হাতে রওনকের পিঠ জড়িয়ে ধরল কুহু। মুহূর্তে রওনকের মস্তিষ্ক এটুকু বুঝতে সক্ষম হলো কুহু সম্মোহিত! তার মন সম্পূর্ণ রূপে মেনে নিয়েছে রওনককে! ছাড়াবার প্রচেষ্টা না চালিয়ে উল্টো জড়িয়ে নিচ্ছে মেয়েটা! রওনকের পুরুষালি হাত অবাধ্যের মতো বিচরণ করলো কুহুর তনুময় জুড়ে! অত্যল্পকালে শ্বাস আঁটকে গেল কুহুর! নিজের সমস্ত ভার রওনকের উপর দিয়ে ঢলে পড়লো সে! রওনক ছেড়ে দাঁড়াতেই ঘনঘন দম ফেলল কুহু। ঘাপটি মেরে রইল বুকে। রওনকের ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল রওনক,

“এতটা অসভ্য হয়ে যাব নিজেও বুঝতে পারিনি। তুমি যতবার অবাধ্য হতে চাইবে আমি ততবার এভাবে অস্তিত্ব হারাব! মনে রেখ পালাবার কোনো পথ নেই তোমার।

আচমকা জুতার শব্দ হলো। কেউ একজন হেঁটে আসছে মনে হলো। দরজার কাছে লেগে থেকে খুব সুক্ষতার সহিত বাইরে তাকাল রওনক। করিডর পেরিয়ে যাচ্ছে শাহিনূর মাহি। আচমকা কুহুকে ছেড়ে দিয়ে বলল রওনক,

” আমি চলে যাচ্ছি।

রওনক বেরিয়ে গেল। কুহু দাঁড়িয়ে রইল ঠাঁয়। কোনো কথার জবাব দিল না সে। নব্য ভাবে রওনক ভাইকে আবিষ্কার করে তার মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গেল! এখন অবধিও শরীর মৃদু কাঁপছে অনুভব হলো! কেন একটুও রাগ হলো না সে বুঝতে পারলো না! উল্টো ভাল লাগার আবেশে জড়িয়ে গেল যেন!

শাহিনূর কে পিছু ডাকলো রওনক। পেছন ফিরে তাকিয়ে ফের এগিয়ে আসলো শাহিনূর মাহি। কপালে সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে বলল,

“কোথায় ছিলেন আপনি? প্রতিটা ক্লাসেই তো খুঁজলাম! পেলাম না।

” কেন খুঁজছিলেন?

“তার আগে বলুন আপনি এই ভবনে কেন? এখানে তো আপনার কোনো ক্লাস নেই!

খানিক অপ্রস্তুত হলো রওনক। মাথা চুলকে নিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

” দরকার ছিল। আপনি কিভাবে জানলেন আমি এখানে?

“দু’জন স্টুডেন্ট বলল এই ভবনে উঠতে দেখেছে আপনাকে। ওদিকে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টর স্টুডেন্টরা আপনার অপেক্ষায় ক্লাসে বসে আছে। ক্লাস রেখে এখানে কি করছেন আপনি?

হাত ঘড়ি দেখে নিয়ে তাড়া নিয়ে চলে গেল রওনক। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শাহিনূর মাহি। এই ভবনে মাইক্রো ইকোনমিকস সাবজেক্টের ক্লাস নেয় সে। যখন শুনেছে রওনক স্যার এদিকে এসেছে তখন প্রচন্ড খুশি হয়েছিল সে।ভেবেছিল তার খোঁজেই হয়তো এসেছিলেন রওনক স্যার। তাই একপ্রকার দ্রুতই এসেছে সে। রওনক স্যার তো কোনো কিছু না বলেই চলে গেলেন!


মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বিশাল কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে রাতিম আর রিশা। আশেপাশে সেরকম কোনো জায়গা নেই গা বাচিয়ে দাঁড়ানোর মতো। রাতিম খানিকটা দৌড়ে চলে গেলেও পিছু ফিরে দেখল রিশা ঠায় দাঁড়িয়ে ভিজছে! অগত্যা আবার ফিরে এলো রাতিম। গাছের তলা থেকে অনেকগুলো হলদে পাতা কুড়িয়ে হাতে তুলে নিয়ে বলল রিশা,

” ফিরে এলেন যে রাতিম ভাই? আপনার তো ভেজার ইচ্ছে ছিল না!

রিশার গালে কপালে লেপ্টে আছে ভেজা চুল। মুখে কোনো কৃত্রিম সাজ নেই! নাকের ডগা বেয়ে টুপটুপ করে ঝরছে জল! সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল রাতিম,

“নিজের ভাল থাকা, খুশি থাকা যখন অন্যের উপর নির্ভর করে, তখন সেই মানুষটার চাহিদার উপর আমাদের ইচ্ছেকে ছেড়ে দেই! মানে বলতে চাইছি এমুহূর্তে তোমাকে এভাবে একা ফেলে চলে যাওয়াটা বেমানান দেখায় আইরিশ।

মৃদু হাসলো রিশা। পাতাগুলো এক এক করে জড়ো করে সাজিয়ে নিল হাতে। পরক্ষণে রাতিমের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আপনি খুব কঠিন ভাষায় কথা বলেন রাতিম ভাই। তবে খুব চমৎকার অর্থবহ করে! কথার জাদুকর আপনি।

শব্দ করে হাসলো রাতিম। ভেজা চুল ঝাঁকিয়ে নিল। পাশে থাকা ভেজা নারীর রূপ তাকে আকৃষ্ট করতে চাইছে বারংবার! মানুষের স্বভাবই বোধহয় নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি কৌতুহলী হওয়া! এই মুহূর্তে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে খুব হিংসে হচ্ছে রাতিমের। তারা অনায়াসেই কেমন রিশার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, শরীর ছুঁয়ে মন অব্ধি পৌঁছে গিয়ে ভাল লাগার পরশ দিচ্ছে! অথচ এতটা সামনে থেকেও সহস্র মাইল দূরত্বে রাতিম। আজকের বৃষ্টিটা অন্যরকম ভাল লাগছে রিশার। হয়তো রাতিম ভাই পাশে আছেই বলে। সামনে থাকা ছেলেটার মনে যে রিশার জন্য কিছু চলছে সেটুকু বুঝতে বাকি নেই। পাতাগুলো রাতিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল রিশা,

“এগুলো মাথার উপর ধরে রাখতে পারেন রাতিম ভাই। সাময়িক ছাতার কাজ দিবে।

হাত বাড়িয়ে সেগুলো নিতে নিতে বলল রাতিম,

” নিজেকে আজ সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দেওয়ার পন যখন করেছি তাহলে অযথা মাথা বাঁচিয়ে কি হবে?

রিশা কোনো প্রতিত্তোর করলো না। ওড়নাটা ভাল মতো গায়ে জড়িয়ে নিল। আজকে ভার্সিটিতে না গিয়ে ইচ্ছে করে রাতিম ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে সে। একটা রহস্য উদঘাটন করতে। তবে বিষয়টা সত্য কিনা তাকে কৌশলে যাচাই করতে হবে।

“আপনি এমন একটা কাজ কেন করেছেন আমার বান্ধবীর সাথে? তাও বিয়ের মতো বিষয় নিয়ে! সব ঠিকঠাক করে কেন বিয়ে করতে গেলেন না? আপনি তো খুব বুঝদার একজন মানুষ। কি করে করলেন এমন অন্যায়?

রিশার কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রাতিম! এই খবরটা রিশা কি করে জানতে পারলো? সে তো কুহুকে নিজের ছবিও পাঠায়নি কখনো! রওনক বলেছে তাদের দুজন ছাড়া কোনো কাকপক্ষীও টের পাবে না! রিশার কৌতুহলী চেহারার দিকে একপলক তাকাল রাতিম। মেয়েটা কে তার প্রতি ক্ষিপ্ত? এমন কিছু শুনতে পেলে রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক! অবশেষে কি রিশাকে না পেয়েই হারিয়ে ফেলবে? কি ভাবে পরিস্থিতি সামলাবে রাতিম? মাথা কাজ করছে না তার। ঘাবড়ে যাওয়া রাতিমের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ দ্বিগুণ হলো রিশার। সকালে কুহুর কথা ততটা পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে ভেবেছে রিশা। নাম না হয় মিলে যেতে পারে। পেশা আর বর্নণাও মিলে যাবে? এটা তো অসম্ভব!

চলবে…….