তুমি শুধু আমারই হও পর্ব-২২+২৩

0
383

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২২|

অর্নি আর উৎসবের বিয়ের সপ্তাহ দুই পেরিয়েছে৷ উৎসব অর্নির পরিবারের সাথেও মিশে গেছে একদম। আর অর্নির তো উৎসবের পরিবারের সাথে আগে থেকেই বেশ ভাব। দুই পরিবারের বন্ডিংটাও বেশ। রাত জেগে উৎসবের সাথে কথা বলা, মাঝে মধ্যে ঘুরতে বের হওয়া সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছে সবকিছু।

ক্লাস শেষে ক্যানটিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে অর্নিদের গ্রুপ। তরী আর শান্ত জয়েন হয়েছে ওদের সাথে। শান্ত মুচকি হেসে অর্নিকে বললো,
–“ভাবী বলবো নাকি শালীকা বলবো?”

অর্নি মৃদু হেসে বললো,
–“যা বলে আপনি খুশি___”

–“আচ্ছা, উৎসব ভাইয়ার সামনে ভাবী আর এমনিতে শালীকা।”

নূর চট করেই বললো,
–“কেন, কেন?”

শান্ত হেসে বললো,
–“আরেহ উৎসব ভাইকে একটু সম্মান দেওয়া লাগবে না? সবসময় যদি শালীকা ডাকি তাহলে উৎসবের ভাইয়ের মনে হবে না উনার বউকে ভাবী কেন ডাকছি না? আর অর্নিরও তো একটা ইচ্ছে আছে নাকি? ওরও তো ভাবী ডাক শুনতে ইচ্ছে হবে।”

রুশান হেসে বললো,
–“কারেক্ট।”

অর্নি সবাইকে থামিয়ে বললো,
–“শান্ত ভাই আপনি নূরকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কবে?”

শান্ত অসহায় চোখে বললো,
–“আমি তো এখনই চাচ্ছি, তোমার ননদিনী-ই তো চাইছে না আমার কাছে যেতে।”

নূর চোখ পাকিয়ে তাকালো শান্ত’র দিকে। শান্ত অর্নিকে বললো,
–“দেখো, কিভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে__”

অর্নি এবার নূরের মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
–“কিরে, ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন? দাঁড়া আমি ব্যবস্থা করছি তোকে শান্ত ভাইয়ের কাছে পাঠানোর জন্য।”

নূর সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
–“আমাদের তো এখনো বিয়ে হয়নি জাস্ট এনগেজমেন্ট হয়েছে। আর তুই তো কাগজে কলমে আমার ভাইয়ের বউ তাহলে তুই ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেন? চলে আসতে পারছিস না ভাইয়ার কাছে?”

অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“এখানে উনাকে টানছিস কেন? কথা হচ্ছে তোদের নিয়ে__”

এভাবেই একের পর এক আড্ডা হচ্ছে সকলের মাঝে। শান্ত বললো,
–“তো তোমরা আড্ডা দাও, আমি তোমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।”

অর্নি সম্মতি জানাতেই শান্ত নূরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷ কিছুক্ষণ বাদে রুশানও বললো,
–“দোস্ত তাইলে চল, আমরাও যাই? অনেক দিন হয় তরীরে নিয়ে কোথাও যাই না।”

অর্নি মুচকি হাসলো। বললো,
–“তোরা যা, আমি শুধু শুধু কাবাব ম্যা হাড্ডি হতে কেন যাবো?”

তরী অর্নির হাত ধরে বললো,
–“আপুই চলো না, তুমি একা থাকবে নাকি?”

অর্নি একগাল হেসে বললো,
–“উঁহু, আমি বাসায় চলে যাবো তোমরা যাও।”

রুশান বললো,
–“তাহলে চল, আগে তোকে বাসায় পৌঁছে দেই।”

–“আরেহ ইয়ার আমি যেতে পারবো। তোরা যা।”

–“সিয়র?”

–“অফকোর্স।”

অর্নির কথায় রুশান তরীকে নিয়ে চলে গেলো। অর্নিও ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীতে গেলো। বই নিয়েছিলো পড়ার জন্য সেগুলোই জমা করবে। আগের বইগুলো জমা করে নতুন একটা বই নিলো অর্নি পড়ার জন্য। ভাবলো বাসায় গিয়ে শুয়ে বসেই কাটাতে হবে তাই এখানেই বসলো বই পড়ার জন্য। ফোন বেজে উঠলো অর্নির। উৎসবের ফোন। এসময়ে ওর ফোন দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো অর্নি। এসময়ে উৎসব অফিসে থাকেন। সচারাচর ফোন করে না। অর্নি রিসিভ করে কানে নিতেই উৎসব বললো,
–“গেটের বাইরে অপেক্ষা করছি, চলে এসো।”

অর্নি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বই হাত নিলো। তারপর উৎসবের সাথে কথা বলতে বলতেই বেরিয়ে গেলো লাইব্রেরী থেকে। গেটের কাছাকাছি আসতেই ওড়নায় টান বাজে। অর্নি পেছন ফিরে দেখতে পেলো মাহির ওর হাতে অর্নির ওড়না পেচাচ্ছে৷ অর্নি গলার কাছে ওড়না চেপে ধরে রাগী গলায় বললো,
–“কি অসভ্যতামি শুরু করছেন? সেদিনের মার খেয়েও লজ্জা হয়নি আপনার না?”

মাহির অর্নির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তোমার জন্য উৎসব বারবার আমার গায়ে হাত তুলেছে, ভাবলে কি করে এত সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো আমি?”

কথাটা বলে মাহির আবারো অর্নির ওড়না ধরে টান লাগালো। অর্নি সজোরে মাহিরের গালে থাপ্পড় মেরে বললো,
–“কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না, তেমনি আপনিও ভালো হবেন এটা আশা করাটাই বোকামি।”

মাহির অর্নির হাত চেপে ধরে বললো,
–“তোমার সব তেজ আমি আজ মাটিতে মিশিয়ে দিবো।”

এতক্ষণ লাইনে থেকেই সবটা শুনছিলো উৎসব। ফোন কানে নিয়েই ক্যাম্পাসে ঢুকে। উৎসব প্রথমেই বুঝেছিলো কিছু একটা তো গোলমাল হবে তাই সাথে সাথেই গাড়ি পার্ক করে নেমে আসে ও। মাহির অর্নিকে টেনে নিয়ে গেটের কাছে যেতেই দেখা হয় উৎসবের সাথে। উৎসব রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের হাতের দিকে। মাহির ঘাবড়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিলো অর্নির। উৎসব সেদিকে তাকিয়ে বললো,
–“যেখানে অর্নি সা’য়াদাত আবরার উৎসবের গার্লফ্রেন্ড থাকা অবস্থায় ওর কিচ্ছুটি করতে পারিস নি সেখানে ও সা’য়াদাত আবরার উৎসবের বিয়ে করা বউ। তাকে স্পর্শ করার মতো সাহস কিভাবে দেখাস তুই?”

উৎসবের বউ কথাটা শুনে মাহির চমকালো। কিন্তু সেটা চেহারায় প্রকাশ করলো না। অর্নির হাত ধরতে গেলেই উৎসব লাথি মারলো মাহিরের হাত বরাবর। মাহির ছিটকে ক্ষানিকটা দূরে গিয়ে পড়লো৷ তেড়ে উৎসবের কাছে যেতে গেলেই মাহিরের বন্ধুরা ওকে টেনে নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। উৎসব আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“নূর আর রুশান কোথায়?”

অর্নি জানালো ঘুরতে গেছে ওরা। উৎসব ক্ষানিকটা চেঁচিয়ে বললো,
–“নূর তোমাকে একা রেখে যায় কিভাবে? কোনো কান্ড জ্ঞান নেই ওর? জানেনা মাহির কিভাবে ওত পেতে থাকে তোমার ক্ষতি করার জন্য?”

–“আপনি অযথাই রেগে যাচ্ছেন। এখন আমার জন্য কি ওরা নিজেদের মতো সময় কাটাবে না?”

–“ওদের উচিত ছিলো আগে তোমায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া নয়তো আমাকে জানানো, আমি এসে নিয়ে যেতাম তোমাকে।”

–“রুশান বাসায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলো আমিই বলেছিলাম একা__”

উৎসবের মেজাজ খারাপ হলো এবার। অর্নির দুই বাহু চেপে ধরে ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,
–“এখন যদি সময় মতো আমি এখানে না থাকতাম? মাহির যদি নিয়ে যেতো তোমায়? ভাবতে পারছো কি হতো আজ?”

অর্নি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই কেমন চোখে দেখছে ওদের। অর্নি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে জড়িয়ে ধরলো উৎসবকে। উৎসব সরিয়ে দিতে চাইছিলো কিন্তু অর্নিই শক্ত করে ধরে রেখেছে। ইনোসেন্ট গলায় বললো,
–“আপনি এসে পড়েছেন তো৷ আর দেখুন, কিচ্ছু হয়নি তো আমার। আপনি অযথাই রেগে থাকবেন না প্লিজ।”

–“ছাড়ো।”

–“উঁহু আগে বলুন, রেগে থাকবেন না।”

–“সবাই দেখছে অর্নি।”

–“দেখুক না, আমার বরকেই তো ধরেছি।”

–“আচ্ছা তাহলে এর থেকেও বেশি কিছু করি আমি? চুমু খাই ঠোঁটে?”

অর্নি দ্রুত সরে গেলো উৎসবের থেকে। বললো,
–“ছিঃ কিসব বলছেন?”

উৎসব অর্নির দিকে এগোতে এগোতে বললো,
–“কেন? ভুল কি বললাম? আমার বিয়ে করা বউ-ই তো। আমার বউয়ের ঠোঁটেই তো চুমু খাবো__”

–“একদম কাছে এগোবেন না। এটা পাবলিক প্লেস।”

উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“তাহলে চলো, বাসায় যাওয়া যাক? আমার ঘর তো আর পাবলিক প্লেস না___”

–“অসভ্য___”

এইটুকু বলেই অর্নি হাঁটা লাগালো গাড়ির দিকে। উৎসব অর্নির পেছনে যেতে যেতে মুচকি হেসে বললো,
–“তোমারই তো বর।”

–“হ্যাঁ আমার বরকেই বলেছি। আস্তো একটা অসভ্য সে।”

কথাটা বলে অর্নি গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বসলো। উৎসবও হেসেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

উৎসব নিজেদের বাসার সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালো। অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকালো উৎসবের দিকে। অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“বাসায় কেন?”

উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“ভুলে গেলে? একটু আগেই না বললাম আমার ঘরটা পাবলিক প্লেস না?”

অর্নি চট করেই বললো,
–“বাসায় যাবো আমি। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।”

উৎসব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
–“ভয় পাচ্ছো কেন? তোমারই তো বর, একটু আধটু ঠোঁটে চুমু খেলে তেমন কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া আমার তো আরো অনেক কিছুই করার অধিকার আছে রাইট?”

বলেই বাঁকা হাসলো উৎসব। অর্নির বুক ধরফর করছে। লোকটা এসব বলছে কেন? অর্নির এমন ফেস দেখে উৎসব উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। বললো,
–“রিল্যাক্স অর্নি। তোমার শাশুড়ী-মা তোমায় নিয়ে আসতে বলেছে তাই বাসায় নিয়ে এসেছি___নয়তো অন্য কোথাও নিয়ে যেতাম।”

অর্নি লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললো,
–“অসভ্য একটা, ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো আমাকে।”

কথাটা বলেই অর্নি গাড়ি থেকে নেমে গেলো। উৎসব গাড়ি থেকে নেমে চাবিটা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললো গাড়িটা গ্যারাজে রেখে দিতে। তারপর অর্নির পিছনে গিয়ে বললো,
–“এখনো নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই বউ। বাসাটা কিন্তু আমারই, আর আমিও এখানেই আছি।”

অর্নি কলিংবেল চেপে বললো,
–“আমাকে একা পাবেনই না আপনি।”

–“চ্যালেঞ্জ করছো আমায়?”

অর্নি উৎসবের দিকে ঘুরে বললো,
–“হ্যাঁ।”

–“ওকে ওয়েট এন্ড সি।”

অর্নি অন্যদিকে ঘুরে তাকালো। শায়লা বেগম দরজা খুলে দিতেই অর্নি উনাকে জড়িয়ে ধরলো। শায়লা বেগম বললো,
–“কতদিন হয় আসিস না, এখন তো একটু আধটু আসতে পারিস আমাদের দেখতে। নাকি শাশুড়ী বর কাউকেই দেখতে ইচ্ছে করে না?”

অর্নি আড়চোখে তাকালো উৎসবের দিকে৷ তারপত বললো,
–“এই যে আজ আসলাম শাশুমা, এখন তো সবসময় আসবো দেখবা। তখন আবার বলো না কিন্তু এত আসি কেন এ বাসায়।”

শায়লা বেগম অর্নির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
–“এখন তো তোরও বাসা এটা। তোর বাসায় তুই আসবি।”

–“আচ্ছা, আচ্ছা।”

শায়লা বেগম অর্নিকে সোফায় বসিয়ে কিচেনে গেলেন। উৎসব উপরে নিজের রুমে চলে গেছে। শায়লা বেগম অর্নির সামনে কয়েক ধরনের স্ন্যাকস দিয়ে আবারো কিচেনে গেলেন রান্নার জোগাড়যন্তর করতে। উৎসব একেবারে ফ্রেস হয়ে এসে অর্নির পাশে বসলো। অর্নি বললো,
–“আম্মু চিন্তা করবে। এখন বাসায় যাই?”

–“আন্টি জানে তুমি এ বাসায়।”

অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উৎসব বললো,
–“আম্মু ফোন করে আন্টির থেকে অনুমতি নিয়েছে। সুতরাং নিশ্চিন্তে থাকতে পারো তুমি।”

চলবে~

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|২৩|

নূর বাসায় ফেরেনি এখনো। আর উৎসবের আব্বু অফিসে। তাই বাসায় অর্নি, উৎসব এবং শায়লা বেগমই আছেন। তিনজনে একসাথে লাঞ্চ করে নেন। উৎসব সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছে আর অর্নি শায়লা বেগমের সাথে হাতে হাতে সবকিছু গুছিয়ে রাখছে। যদিওবা এতে শায়লা বেগম বেশ কয়েকবার আপত্তি জানিয়েছেন কিন্তু অর্নি সেসবে পাত্তা দেয়নি৷ শায়লা বেগম অর্নিকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলেই উৎসব বললো,
–“আম্মু আমার বউকে নিয়ে তোমার ঘরে যাচ্ছো কেন?”

উৎসবের এমন কথায় অর্নি বিষম খেলো। কি ঠোঁটকাটা ছেলে। নিজের মা কে কেউ এভাবে বলে? শায়লা বেগম হেসে বললো,
–“তোমার বউ তোমার কাছে আসেনি, এসেছে আমার কাছে। তাই সে আমার ঘরেই যাবে। সময় হলে ঠিক চলে যাবে তোমার ঘরে। আপাতত একা থাকো।”

উৎসব অসহায় ফেস করে বললো,
–“বিয়ের পর আব্বু তোমায় ছাড়া থেকেছে কখনো? থাকেনি মেবি, তাহলে আমি কেন বউ ছাড়া থাকবো?”

–“সেসময়ের কথা ছাড়ো। তখন তোমার আব্বু আমায় বিয়ে করে বাসায় নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু তুমি বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করেছো বলেই তোমাদের শুধু রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।”

–“তাতে কি? বিয়ে করা বউ-ই তো।

–“লাজ-সরম একটুও নেই না? এভাবে মায়ের সামনে বউ বউ করছো?”

–“নিজের বউকেই তো চেয়েছি লজ্জা করবে কেন? তুমি দ্রুত আমার বউকে আমার কাছে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। তোমার বউয়ের ইচ্ছেমতো, অনুষ্ঠান পরেই হবে। কিন্তু আমার বউকে আমার এখন লাগবে।”

–“চুপ ফাজিল ছেলে, লজ্জা করছে না আম্মুকে এসব কথা বলতে?”

–“আমুউউউউউ___”

ছেলের কান্ডে শায়লা বেগম মুচকি হেসে অর্নিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। অর্নি এতক্ষণ দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো এখানে। ইশ্! কি বিচ্ছিরি কান্ড। এই ছেলেটার মুখে কিছু আটকায় না। এভাবে নিজের মাকে কেউ এসব বলে?

শায়লা বেগম উনাদের বিয়ের এলব্যাম বের করে অর্নিকে দেখাচ্ছে। সাথে নূর আর উৎসবের ছোটবেলার ছবিও আছে৷ শায়লা বেগম তো রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছেন। অর্নি মনোযোগ সহকারে সেসব গল্প শুনছে। একপর্যায়ে শায়লা বেগম বললো,
–“জানিস অর্নি, আমার উৎসবটা না তোকে বড্ড ভালোবাসে।”

অর্নি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। শায়লা বেগম আবারো বললো,
–“যেদিন নিহালের সাথে তোর এনগেজমেন্ট হয়েছে সেদিন নূর বাসায় ফিরে সরাসরি কথাটা উৎসবকে জানাতে পারেনি। নূর জানতো উৎসব জানলে যাচ্ছেতাই কান্ড ঘটাবে। নূর কথাটা আমায় জানিয়েছিলো তখনই উৎসব শুনতে পায়। তারপর হনহনিয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।”

–“তারপর কি হয়েছিলো শাশুমা?”

শায়লা বেগম হেসে বললো,
–“ছেলেটা আমার ঘর-দোরের নাজেহাল অবস্থা বানিয়ে ফেলেছিলো। পুরো বাড়ি ভাংচুর করেছে। দেখছিস না সবকিছু নতুন আনানো?”

অর্নি কি বলবে বুঝতে পারলো না। শায়লা বেগম আবারো বললো,
–“উৎসব সেদিন এত্ত পরিমান রেগে ছিলো ওর আশেপাশে যেতেও ভয় পেয়েছি আমরা। আমার যে ছেলেটা সিগারেট স্পর্শ করতো না সেই ছেলের ঘরের সামনেও যাওয়া যেতো না সিগারেটের গন্ধে। সেদিন সারা-রাত একাধারে সিগারেট টেনেছে আর সবকিছু ভাংচুর করেছে। ঘর থেকেও বের হয়নি। তারপর দিন তুই ভার্সিটি যাওয়ার পর রুশান টেক্সট করে আর অমনিই পাগলটা ছুটে যায় তোর কাছে।”

অর্নি বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। শায়লা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
–“তোদের বিয়ের দিন উৎসব কি করেছে শুনবি?”

অর্নি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো শায়লা বেগমের দিকে। শায়লা বেগম একগাল হেসে বললো,
–“হুট করেই বিকেলে বাড়ি ফিরে আমাদের ঘরে আসে উৎসব। সরাসরি জানায় ও তোকে বিয়ে করতে চায় আর তক্ষুনি। আমি আর তোর আংকেল অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু লাভ হয়নি। ও জেদ বেঁধে আমাদের দুজনের পায়ের কাছে বসে ছিলো। ওর একটাই কথা ছিলো তোকে ওর করে দিতেই হবে। আর সেটা সেদিনই। বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেছিলো তোকে পাওয়ার জন্য। তাই তো ওভাবে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই সেদিন তোদের বিয়েটা হয়ে যায়।”

অর্নির এবার বেশ লজ্জা লাগছে। সাথে একরাশ ভালো লাগা কাজ করছে৷ উৎসবের এমন পাগলামির কথা শুনে। শায়লা বেগম অর্নির হাতের উপর হাত রেখে বললো,
–“আমার পাগল ছেলেটা আরো একটা আবদার করেছে, এবার সেটা পূর্ণ করার পালা।”

অর্নি কথাটা বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। শায়লা বেগম অর্নির গালের হাত রেখে বললো,
–“বুঝলি না তো? আচ্ছা থাক বুঝতে হবে না৷ বোঝার সময় হলে ঠিক বুঝে যাবি। আমার ছেলেটা তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসে রে মা, ওকে কখনো কষ্ট দিস না।”

অর্নি শায়লা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“চিন্তা করো না শাশুমা, তোমার ছেলেকে কষ্ট পেতে দিবো না আমি।”

–“এবার খুব শীঘ্রই আমার ছেলেটার কাছে চলে আয় তো তাহলেই হবে, আর কোনো কষ্ট পাবে না আমার ছেলে।”

অর্নি লাজুক হাসলো৷ মা ছেলে মেয়ে কেউ বাদ যায় না৷ সবার মুখেই যা আসে অনায়াসে বলে ফেলে। অর্নি লজ্জা পেয়ে উঠে গেলো।

নূর বাসায় ফিরেছে সন্ধ্যার ক্ষানিকটা আগে৷ এসেই শাওয়ারে গিয়েছে। শায়লা বেগম মাগরিবের নামায পরে কিচেনে এলেন নাস্তা বানানোর জন্য। অর্নিও শায়লা বেগমকে হাতে হাতে সাহায্য করলেন। নাস্তা বানানো শেষে হাত ধুয়ে নূরকে ডাকতে যাবে বলে ঠিক করলো অর্নি।

নূরের রুমে যাওয়ার সময় উৎসব অর্নির হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দেয়। আচমকা হাতে টান পড়ায় বেশ ঘাবড়ে যায় অর্নি। সামনে উৎসবকে দেখতে পেয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে। উৎসব বাঁকা হেসে বললো,
–“চ্যালেঞ্জের কথা মনে আছে? মিসেস সা’য়াদাত আবরার উৎসব?”

উৎসবের কথায় অর্নি থতমত খেয়ে গেলো। ছেলেটার মতলব একদমই ভালো না৷ নিজের উপর এখন নিজেরই বেশ রাগ হচ্ছে অর্নির। কোনো অলক্ষুণে যে সকালে ভার্সিটিতে সবার সামনে জড়িয়ে ধরতে গেলো উৎসবকে। এখন তার জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে। উৎসব সোফায় বসে অর্নিকে ওর কোলে বসালো। দুহাতে অর্নির কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
–“নাউ গিভ মি অ্যা কিস।”

–“মা্ মানে কি?”

–“মানে খুব সহজ, চুমু দিতে হবে এখন আমায়।”

–“কেন?”

উৎসব অর্নির কোমড় ধরে অর্নিকে নিজের আরো কাছে এনে বললো,
–“চ্যালেঞ্জের কথা ভুলে গেছো?”

–“আমার যতদূর মনে হয় আপনি উল্লেখ করেননি যে চুমুটা আমাকে দিতে হবে।”

উৎসব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
–“আমি এটাও বলিনি যে চুমু আমি দিবো।”

–“তাহলে তো হলোই, আপনিও চুমু দেওয়ার কথা উল্লেখ করেননি আর আমার কথাও উল্লেখ করেননি। তাহলে আবার চুমু কিসের?”

উৎসব অর্নির কোমড় খামচে ধরলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
–“টপিক চেঞ্জ করার চেষ্টা করলেও লাভ হবে না বউ, আমার চুমু চাই মানে চাই। আর এখন সেটা তোমাকেই দিতে হবে।”

অর্নির বুকের মাঝে ঢিপঢিপ করছে। লোকটা বুঝতে পারছে না কেন ওর স্পর্শে অর্নির ভিতর কাঁপছে? উৎসবের মতো অর্নিরও যে নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। অর্নি তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
–“শুনুন না__”

উৎসব আরো ক্ষানিকটা মিশিয়ে নিলো অর্নিকে নিজের সাথে। অর্নির কপালে কপাল ঠেকিয়ে নেশা ধরানো কন্ঠে বললো,
–“চুমু চাই আমার।”

–“আপনি___”

আর কোনো টু শব্দটিও করতে পারলো না অর্নি। তার আগেই উৎসব ওকে চুপ করিয়ে দেয়৷ অর্নির কোমড় শক্ত করে খামচে ধরে অর্নির ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয় উৎসব। অর্নি হাঁসফাঁস করছে। প্রথম চুমু, প্রথম স্পর্শ, সব মিলিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে অর্নি। দুহাতে শক্ত করে উৎসবের শার্টের কলার খামছে ধরে আছে অর্নি।

ওভাবেই অর্নিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগোয় উৎসব। অর্নিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অর্নির উপর আধশোয়া হয়ে অর্নির গলায় মুখ গুজে। অর্নির ঘাড়ে গলায় অজস্র ঠোঁটের স্পর্শ দিতে থাকে উৎসব। অর্নি একহাতে বিছানার চাদর খামছে ধরে অন্যহাতে উৎসবের চুল খামছে ধরে। উৎসব এখন নিজের মাঝে নেই একদমই। অর্নিতে হারিয়ে যেতে চায়। আবারো অর্নির ঠোঁট জোড়া দখলে নিয়ে নিলো উৎসব৷ একহাতে অর্নির ঘাড় ধরে অন্যহাত গলিয়ে দেয় অর্নির কামিজে।

কামিজ ক্ষানিকটা উপরে উঠাতেই কিছু একটা ভেবে অর্নির উপর থেকে সরে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ে উৎসব। দুজনেই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অর্নির বুক উঠানামা করছে খুব দ্রুত৷ ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। উৎসব আবারো অর্নির দিকে ঝুঁকে চুমু খেতে থাকে ঠোঁটে। বেশ কিছুক্ষণ বাদে অর্নিকে ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। শান্ত গলায় বলে,
–“আমার কাছে চলে আসো না অর্নি, তুমি তো এখন আমার বিয়ে করা বউ-ই।”

উৎসবের এমন কথায় অর্নির কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। ও আগের মতোই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। উৎসব এবার ইনোসেন্ট গলায় বললো,
–“এই মূহুর্তে নিজেকে বড্ড হেল্পলেস লাগছে জানো? আমার এখন তোমাকে প্রয়োজন, ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। তুমি আমার সামনেও আছো কিন্তু দেখো তোমাকে পুরোপুরি কাছে টানতে পারছি না। মনে হচ্ছে কোথাও একটা বাঁধা রয়েই গেছে। চলে আসো না বউ আমার কাছে। আমি কাছে পেতে চাই তোমাকে, খুব করে কাছে পেতে চাই।”

উৎসবের কথাগুলো শুনে অর্নি চমকে তাকালো উৎসবের দিকে। উৎসব সিলিং ফ্যানের দিকে দৃষ্টি তাক করে আছে। উৎসব আবারো বললো,
–“জানো আমি কখনো ভাবিইনি কারো সাথে এভাবে জড়িয়ে পড়বো, তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠবো।”

–“আমি তো আপনারই___”

–“আমি জানি তুমি আমার, তবুও বেশ দূরত্ব আছে আমাদের মাঝে। আমি তোমাকে পুরোপুরি ভাবে কাছে পেতে চাই। মিশে যেতে চাই তোমার সাথে।”

এই কথার জবাবে অর্নি কি বলবে ভেবে পেলো না। আজকে উৎসবের স্পর্শ পাওয়ার পর অর্নিরও এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছে উৎসবকে চাই ওর। খুব কাছে চাই। কিন্তু মেয়ে মানুষ তো, মুখ ফুঁটে এসব বলা যায় নাকি? উৎসব আবারো বললো,
–“অর্নি___”

–“হু__”

–“আমি আম্মুকে বলবো আন্টির সাথে কথা বলতে।”

চমকালো অর্নি৷ এই ছেলের কি একদম মাথা টাথা গেছে? নিজের মা কে বলবে এসব? অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“ক্ কি বলছেন এসব? আম্মু আর শাশুমা কি ভাববে বলুন তো?”

উৎসবের স্বাভাবিক জবাব,
–“কে কি ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি আমার বউকে আমার কাছে নিয়ে আসবো এইটুকুই জানি।”

–“কিন্তু___”

–“কাল রেডি থাকবা তুমি, কালকেই তোমাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে।”

কথাটা বলেই উৎসব উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। অর্নি আগের ন্যায় শুয়ে শুয়ে উৎসবের কথাগুলো ভাবছে। মিনিট পাঁচেক বাদে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে অর্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“এলোমেলো ভাবে আছো নিজেকে ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো, বাসায় পৌঁছে দিবো।”

কথাটা বলে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না উৎসব। গটগট করে দরজা খুলে নিচে নেমে গেলো। অর্নি উৎসবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর আবার নিজের দিকে তাকালো। সত্যিই এলোমেলো ভাবে আছে ও। তাই দ্রুত উঠে আগে বিছানা ঠিক করে নিলো। তারপর ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। মিনিট দশেক বাদে নিচে নামলো অর্নি। সবাই মিলে একসাথে সন্ধ্যার নাস্তা করলো। তারপর উৎসব অর্নিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। শায়লা বেগম আর নূর বেশ কয়েকবার ডিনার করে আসার জন্য বলেছিলেন কিন্তু অর্নি রাজি হয়নি।

অর্নিদের বাসার সামনে আসতেই উৎসব গাড়ি থামালো। সেসময়ের পর উৎসব আর এক মূহুর্তের জন্যও অর্নির দিকে তাকায়নি। এমনকি কথাও বলেনি। অর্নিও চেষ্টা করেনি। অর্নি গাড়ি থেকে নামতে চাইলেই উৎসব ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু দেয়। অর্নি গাড়ি থেকে নেমে উৎসবকে বললো,
–“বাসায় চলুন না__”

–“পরে একসময় আসবো।”

–“আপনি বাসার নিচ থেকে চলে গেলে আম্মু রাগ__”

–“কাল রেডি থেকো, এখন আসছি।”

কথাটা বলে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না উৎসব। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। অর্নিও সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লো।

চলবে~