তুমি_ছারা_আমি_শূন্য পর্ব_২৭+২৮

0
1723

তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
পর্ব_২৭+২৮
#লেখক_Mohammad_Asad

নওগাঁ পৌচ্ছে গেলে ছাদিক নিশাত আনহা তিনজনে বাস থেকে নেমে পরে। আজকে খুব অচিনা লাগছে সবকিছু, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আনহা আম্মুর কোলে আছে আর ছাদিক সুটকেচ নিয়ে। আনহা ঘুম থেকে উঠেছে কিছুক্ষণ আগে। তাই কিছু বুঝতে পারছে না মেয়েটা।
-আব্বু’ই আমরা কোথায় এসেছি।
“এই তো আম্মু তোমার নানুদের বাসায়”
-কই আমার নানু,
“এই তো আম্মু চলে এসেছি। আর কিছুক্ষণ পর তোমার নানুকে দেখতে পাবে তুমি।
” নিশাত আনহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।”
-আনহা বেশি কথা বলে না, চুপ থাকো।
-এই তুমি আমার আম্মুটাকে বকা দিচ্ছো কেন?
-হইছে হইছে, যাও এবার রিকশা অথবা সিয়েন্জি নিয়ে এসো। এখনো তো ২ কিলোমিটারের মতো রাস্তা যেতে হবে।
-আচ্ছা যাচ্ছি।
“আনহা তুতলিয়ে বলে”
-আব্বু’ই তোমার সঙ্গে যাবো আমি, আম্মু খালি বকা দেয় আমাক।
-এই দেখছো তোমার মেয়ে কি বলছে।
“ছাদিক আনহার মুখে হাত দিয়ে বলে”
-মামনী এই তো এখনি চলে আসবো আমি। আম্মুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকো তুমি। আমি এই যাচ্ছি আর আসছি।
“আনহা”
-আচ্ছা আব্বু,

ছাদিক সিয়েন্জি নিয়ে আসলে। তিনজনে সিয়েন্জিতে উঠে। পিছনে সিটে বসে আছে ছাদিক নিশাত, আর আনহা আম্মুর বুকে।

২ কিলোমিটার রাস্তা অল্প সময়ের মধ্যে পারি দিয়ে নানুদের বাসায় চলে আসে আনহা। তার সঙ্গে আব্বু আম্মু তো আছে’ই।
-আনহা মামনী এই তো চলে এসেছি তোমার নানুর বাসায়।
“আনহা খিলখিল করে হেঁসে দেয়, বলে।
-এইটা আমার নানুর বাড়ি?
-হ্যাঁ এইটা তোমার নানু নানির বাড়ি।

বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই নিশাতের আব্বু আম্মু সকলে হৈ-হুল্লোড় শুরু করে। আনহাকে কোলে নিয়ে নানু নানি দুজনে আদর করতে থাকে। নিশাত কান্না করতে করতে আব্বুকে জরীয়ে ধরে।
-স্যরি আব্বু, তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-আরে নিশাত তুই কান্না করছিস কেন? এই যে দেখো তোমার মেয়ে কান্না করছে।
” নিশাতের আম্মু”
-হ্যাঁ দেখছি তো, শুধু বাবাকে জরীয়ে ধরেছে তোমার মেয়ে। আমাক তো ভুলে গেছে একদম।

নিশাত আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে আম্মুকে জরীয়ে ধরে।
-কে বলছে আম্মু, তোমায় ভুলে গেছি আমি, একটুও ভুলি নাই।

আনহা ফ্লরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার কান্না ভরা চোখ গুলো দেখে কান্না করে দেয় পিচ্চি মেয়েটা।

ছাদিক আনহাকে কোলে তুলে নেয়।
-আরে আরে আমার আম্মুটা কান্না করে কেন? কত বড় হয়ে গেছে আমার আম্মুটা তবুও কান্না করে। এটা কিন্তু একদম ভালো না মামনী।
-আব্বু আম্মু কেন কান্না করছে আম্মু।
-কিছু না মামনী। তোমার নানুদের বাড়িতে অনেকদিন পর এসেছে তোমার আম্মু, তাই কান্না করছে।

নিশাত আনহাকে ছাদিকের কোল থেকে নিয়ে বলে।
-এই চুপ, সব জায়গায় পাকামো তাই না।

“নিশাতের আব্বু”
-আরে নিশাত, আমার নাতনিটাকে বকা দিচ্ছিস কেন? দে আমার কোলে দে।

নিশাত নানুর কোলে আনহাকে দিয়ে দেয়। আনহার নানু আনহাকে ঘাঁড়ে উঠিয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ পর আরাফাত বাসায় আসে।
-আপু তুমিইইই,

নিশাত আরাফাতকে একদম চিনতে পারে না। এই পাঁচটি বছরে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে আরাফাত।
-আরাফাত তুই না।

“আরাফাত দৌড়ে আপুর কাছে এসে বলে”
-হ্যাঁ আপু আমি। তোমার সেই পিচ্চি ভাইটা। সারাদিন তোমার সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকতাম সেই আরাফাত আমি।
-ভাই তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস।
-হ্যাঁ আপু,

নিশাতের আব্বু আম্মু আরাফাত সকলে খুশি হয়ে যায়। নিশাতের আব্বু বলে।
-জামাই চলো রাতের ভাত খেয়ে নিবে।
“নিশাত”
-হ্যাঁ আব্বু ঠিকি বলেছো। আমার অনেক খুধা পেয়েছে। চলো ভাত খেয়ে নিই আগে, তারপর গল্প করবো সকলে।
-আচ্ছা চল।

নিশাত নিজের রুমে চলে যায় আনহাকে কোলে নিয়ে। সেই আগের মতোই রুমটা পরে আছে। ছাদিক নিশাতের পিছন পিছন আসে সুটকেচ রুমে রেখে বলে।
-বাহ্ নিশাত এটা কার রুম!
-আমার
-ওহ আচ্ছা,
“ছাদিক নিশাতের ছোট্টবেলার ছবি হাতে নিয়ে বলে।”
-এইটা কে নিশাত?
-কেন চিনতে পারছো না এটা আমি।
-আমার মিস্টি বউটা।
-হ্যাঁ

নিশাত ফ্যামেলি ফটো এলব্যাম বের করে ছাদিকের হাতে দেয়। আনহাকে কোলে তুলে নিয়ে নিশাতের ছোট্টবেলার ছবিগুলো দেখাতে থাকে ছাদিক আনহা। আর বাবা-মেয়ে দুজনে হ্যাঁসতে থাকে।
-দেখছো মামনী তোমার আম্মুটা তোমার মতই কতটা পিচ্চি ছিলো।

কিছুক্ষণ পর আরাফাত রুমে আসে।
-আপু, দুলাভাই চলেন, রাতের ভাত খেয়ে নিবে।
“নিশাত মিস্টি হেঁসে বলে”
-আচ্ছা চল, ভাত খেয়ে সকলে আড্ডা দেওয়া যাবে।

আনহাকে কোলে নিয়ে খাবার টেবিলে যায় ছাদিক। আজকে নানান রকমের খাবার তৈরি করেছে নিশাতের আম্মু। মেয়ের জামাই এসেছে বলে কথা। বাড়ির সকলে খাবার খেয়ে। টেবিলে বসে’ই গল্প করতে থাকে। গল্প করতে করতে সময় যেন চলেই যায়। তবে তাদের গল্প শেষ হয়না। আনহা ঘুমিয়ে যায় আব্বু আম্মুর গল্প শুনতে শুনতে।

ছাদিক আনহার দিকে খেয়াল করে দেখে মেয়েটা ঘুমে গেছে। নিশাতের আব্বু বলে।
-নিশাত অনেক তো গল্প হয়েছে এবার তোরা রুমে গিয়ে সুয়ে পর।
-আচ্ছা আব্বু।

আনহাকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে ছাদিক। নিশাত রুমের দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়। বিছানা ঠিক করে, আনহাকে সুয়ে দেয়।
-পেত্নী আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

নিশাত রুমের লাইটটা বন্ধ করে দেয়। ড্রিম লাইটা জালিয়ে দিয়ে সুয়ে পরে। আনহা আব্বু আম্মুর মাঝখানে সুয়ে আছে। ছাদিক নিশাতের গালে হাত দিয়ে বলে।
-নিশাত ঘুমিয়ে গেছো!
-নাহ্, কেন কি হয়েছে?
-নাহ্ কিছু হয়নি,
-অনেক তো রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরো।
-হুম
-উঁহু তুমি খুব খারাপ।
-কেন পেত্নী?
-আনহাকে পেয়ে আমাকে একটুও ভালোবাসো না তুমি।
-এ্যা এ্যা মিথ্যা কথা।
-না মিথ্যা না সত্যি বলছি। আগের মতো ভালোবাসো না তুমি আমাকে।
-কে বললো বাসি না! খুব ভালোবাসি তোমায়।
-হ্যাঁ হয়েছে পাম দিতে হবে না। আগে আমাক বুকে নিয়ে সুয়ে থাকতে।
-ওহ আচ্ছা এই বুঝি তোমার অভিমান।
-হু
-আচ্ছা আনহাকে সরিয়ে আমার কাছে এসো।
-নাহ্ জেগে যাবে মেয়েটা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-কি ঠিক আছে শুনি?
-কাল থেকে আগের মতো বুকে নিয়ে সুয়ে থাকবো তোমাকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে, মনে যেন থাকে।
-হ্যাঁ মনে থাকবে, তবে আমাদের মেয়েটা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে তাই না।
-হুম

“চলবে?”
#তুমি_ছারা_আমি_শূন্য
#পর্ব_২৮
#লেখক_Mohammad_Asad

আজকে মাঝরাতে নিশাত খারাপ স্বপ্ন দেখে জেগে যায়। ছাদিকের মুখে হাত দিয়ে বলতে থাকে।
-এই তুমি একটু উঠবে।
“ছাদিক গভীর ভাবে ঘুমিয়ে আছে। আবার ডাকতে থাকলে ছাদিক জেগে যায়। মিটিমিটি চোখে বলে,
-কি হয়েছে নিশাত,
-আনহা কোথায়?
-এই তো আমাদের মাঝখানে সুয়ে আছে। কেন কি হয়েছে?
-না কিছু হইনি, স্যরি তোমার ঘুম ভাঙালাম শুধু শুধু।
-আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমিয়ে পরো।
-হুঁ

নিশাত একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে জেগে যায়। তাই আনহার খোঁজ করতে থাকে।
আনহা তাদের মাঝখানে সুয়ে আছে।
নিশাত নিশ্চিত হয়ে আনহার মুখে এবং
ছাদিকের মুখে হাত দিয়ে সুয়ে পরে।

ফজরের আজানের ডাকে নিশাতের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে, ছেলেটাকে ডাক দিতে শুরু করে। ছাদিক ঘুম থেকে জেগে যায়, তার সঙ্গে আনহা। আনহা ঘুম থেকে উঠেই কান্না করতে থাকে।
-আরে আরে কি হয়েছে মামনী।

রুমের লাইটটা জালিয়ে দেয় নিশাত। আনহা কান্না থামিয়ে দেয়, নিশাত রেগে বলে।
-দেখেছো তোমার মেয়েটা কতটা পাজি,।
-আরে এমন করে বলছো কেন?
-তাহলে কিভাবে বলবো? তোমার মেয়ে বড় হলে কি হবে আল্লাহ ভালো যানেন। আব্বু আম্মুকে কিভাবে জালানো যায় তাই খুঁজে তোমার মেয়ে।

আনহা কান্না শুরু বলে,
-আমাকে বকা দিচ্ছো কেন আম্মু।
-হ্যাঁ তোমাকে বকা দিচ্ছি কেন যান! শুধু শুধু কান্না করছিলে কেন?
-আমার ভয় করছিলো!
-ওহ আচ্ছা,
“ছাদিক আনহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
-মামনী আমরা আছি তো একটু ভয় পায় না কেমন। তুমি ঘুমিয়ে পরো।
-আব্বু আমিও তোমাদের সঙ্গে নামাজ পড়বো।
-মামনী তোমাকে এখন নামাজ পড়তে হবে না, তুমি তো এখন অনেকটাই ছোট্ট তাই না বলো।
-কে বললো আমি ছোট্ট? আমি তো অনেক বড় হয়ে গেছি।

আনহার কথা শুনে ছাদিক নিশাত ফিঁক করে হেঁসে দেয়। কি আর করার ছাদিক নিশাত ওজু করতে যায় তার সঙ্গে তাদের পিচ্চি মেয়ে আনহা। ওজু করে রুমে আসে তিনজন। ছাদিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশাত পিছনে, তা দেখে আনহা ছাদিকের পার্শে দাঁড়ায়। ছাদিক মিস্টি হেঁসে বলে,
-আমার আম্মুটা এখানে কেন?
-আব্বু আমি তোমার কাছে থাকবো। আম্মু খুব খারাপ।

“নিশাত”
-এই দেখছো তোমার মেয়ে আমাক খারাপ বলছে।
-নিশাত তুমিও না, ছোট মেয়ে দুষ্টুমি করে বলছে।
-আনহা তুমি আমার কাছে এসো।
-না আমি আব্বুর কাছে থাকবো।

ছাদিক সামনে আর নিশাত পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়। ছাদিক যখন আল্লাহ তায়ালার দরবারে সেজদা দেয়। আনহা তখন আব্বুর পিঠে উঠে যায়। ছাদিক যখন মোনাজাতে আনহা তখন আব্বুর সামনে এসে কপালে চুমু দিয়ে দেয়।

নামাজ শেষ হয়ে গেলে, নিশাত অনেক বকা দিতে থাকে আনহাকে।
-এই বলেছিলাম না। এই মেয়ে নামাজে ডিস্টার্ব করবে।
-আরে পেত্নী থাক না, মেয়েটা কিছু বুঝে না তাই এমন করেছে।
-হ্যাঁ তুমি তো বলবেই,
-পেত্নী তুমি দিন দিন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছো।
-হ্যাঁ তাই হচ্ছি, তো?

আনহা আম্মুর বকাগুলো শুনে আব্বুর কাছে আসে। ছাদিক ঠান্ডা মাথায় আনহাকে বলে।
-আম্মু নামাজের সময় দুষ্টুমি করতে নেই, নয়তো আল্লাহ্ খুব রাগ করে।

ছাদিক আনহাকে ঘাঁড়ে উঠিয়ে নেয়। বিছানায় এসে সুয়ে দিয়ে বলে।
-মামনী এবার তুমি চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ো ওকে। নয়তো আম্মু অনেক বকা দিবে তোমায়।
-আচ্ছা আব্বু, তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।
-হুম

আনহাকে ঘুমিয়ে দিয়ে নিশাতের পার্শে আসে ছাদিক।
-নিশাত তুমি মেয়েটার সঙ্গে এমন করো কেন বলতো? মেয়েটা তো এখনো খুব ছোট কিছু বুঝেনা।
-স্যরি,
-আনহাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছিলাম তাই না।
-হুঁ
-এবার চলো ঘুমিয়ে পড়বে।
-না তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, আমার ঘুম আসবে না এখন।
-আমার মিস্টি বউটা কত বড় হয়ে গেছে।
-হিহিহিহি,
-আমার পেত্নীটা,
-হনুমান,

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিশাত। আম্মুর সঙ্গে সকালের নাস্তা বানাতে সাহায্য করে। এদিকে বাবা-মেয়ে দুজনে ঘুমিয়ে আছে। পিচ্চি মেয়েটা ঘুম থেকে জেগে গেলে আব্বুর বুকে উঠে ডাকতে থাকে। ছাদিক চোখ খুলে দেখে আনহা বুকের উপর বসে আছে।
-আব্বু তুমি ঘুম থেকে উঠেছো?
-হ্যাঁ মামনী,
-চলো দাঁত ব্যাঁশ করবে।
-তুমি দাঁত ব্যাঁশ করেছো মামনী?
-হুম অনেক আগে,
-আমার পাক্কা আম্মুটা,
-আব্বু, ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্যাঁশ করে নেও। নয়তো দাঁতে পোকা হবে তো।
-আচ্ছা মামনী, তুমি আমার বুক থেকে উঠো আগে।
-আচ্ছা আব্বু,

আনহা আব্বুর বুকের উপর থেকে থেমে যায়। ছাদিক মিস্টি হেঁসে আনহাকে বলে।
-তোমার আম্মু কোথায় মামনী?
-যানি না তো,
-কেন যানোনা?
-আমি তো ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্যাঁশ করে তোমার কাছে এসেছি।
-আচ্ছা,
-আচ্ছা মামনী তুমি বিছানায় সুয়ে থাকো। আমি ফ্রেস হয়ে আসি।
-আচ্ছা আব্বু তাড়াতাড়ি যাও।
-আমার বুড়ী মেয়েটা।

ছাদিক ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে যায়। তার কিছুক্ষণ পর নিশাত রুমে আসে। আনহাকে দেখে বিছানায় চোখ মেলে সুয়ে আছে।
-এই যে আব্বু পাগল মেয়ে, তোমার আব্বু কোথায় গিয়েছে শুনি?
-আব্বু তো দাঁত ব্যাঁশ করতে গিয়েছে।
-ওহ আচ্ছা।

নিশাত আনহার পার্শে বসে বলে।
-তুমি দাঁত ব্যাঁশ করেছো?
-হ্যাঁ আম্মু অনেক আগে,
-যাক তাহলে, আব্বুর মতো না তুমি।

ছাদিক ফ্রেস হয়ে এসে বলে।
-কে বলেছে আনহা আমার মতো। আনহা একদম তোমার মতো, খুব দুষ্টু।
-হয়েছে এবার চলেন সকালের নাস্তা করে নিবেন দুজনে!

নিশাত কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। তার সঙ্গে ছাদিক। আনহা গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বের হতে থাকে।

সকলে একসঙ্গে টেবিলে বসে আছে। সকালের নাস্তা করার জন্য, আনহা আব্বুর কোলে বসে আছে। বাড়ির সবাই গল্প করতে থাকে। সকালের নাস্তা শেষ করে আড্ডা জমিয়ে দেয় সকলে। আনহার নানু বলে।
-জামাই আজকে আমাদের এখানে মাহফিল যাবে?
“নিশাত অনেক খুশি হয়ে যায় বলে,”
-সত্যি আব্বু?
-হ্যাঁ সত্যি,
-যানো হনুমান আব্বু প্রতি বছর মাহফিলে
নিয়ে যেতেন আমাকে। মাহফিলে মেলার মতো আয়োজন হয়ে থাকে। আব্বুর কাছ থেকে অনেক খেলনা কিনে নিতাম আমি।

“আরাফাত”
-বাহরে আপু, আমি তো তোকে মাহফিলে নিয়ে গেছি অনেকবার।
-হ্যাঁ রে মনে আছে। তবে তুই তখন অনেক ছোট্ট। তুই আমাকে নিয়ে যাসনাই, আমি তোকে নিয়ে গেছি।
-দেখেছেন দুলাভাই, আপু কেমন করে পচিয়ে দিলো আমাক।

ছাদিক আর আনহা, নিশাত আরাফাতের ঝগড়া দেখে হ্যাঁসতে থাকে। তার সঙ্গে নিশাতের আব্বু আম্মু। আনহা আব্বুর গালে হাত দিয়ে বলে।
-আব্বু আমিও মাহফিলে যাবো!
-আচ্ছা মামনী ঠিক আছে।
-আমি কিন্তু অনেক খেলনা কিনবো।
-আচ্ছা মামনী,

নিশাতের আব্বু তখন বলে।
-আনহা, আমি তোমাকে মাহফিল দেখিয়ে আনবো ওকে।
-নাহ্ আমি আব্বুর সঙ্গে যাবো।

“নিশাত”
-দেখেছো আব্বু, আনহা একদম বাবা-পাগল মেয়ে।
-হ্যাঁ তাই তো দেখছি। আমার নাতনিটা একদম বাবা-পাগল মেয়ে।

সকালে নানু আনহাকে বলে, নাতনি চলো তোমাকে আমাদের এলাকাটা দেখিয়ে আনি। নানুর কথা একদম শুনতে চায়না আনহা। বলে আব্বুকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি। ছাদিক আনহাকে অনেক বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়।

আনহার নানু আনহাকে ঘাঁড়ে উঠিয়ে এলাকাটা দেখাতে বের হয়। চা-ওয়ালা থেকে যে বলে পিচ্চি মেয়েটা কে? তখন আনহার নানু উত্তর দেয়। এটা আমার নাতনি। আনহা আইসক্রিম দেখে বায়না ধরে।
-নানু আমি আইসক্রিম খাবো, কিনে দাও।
-আচ্ছা নাতনি চলো,

আনহার নানু আনহাকে আইসক্রিম চকলেট কিনে দেয়। আনহা খুশি হয়ে সবগুলো খেয়ে নেয়।
নানুর চোখে জল চলে এসেছে আনহাকে দেখে। ছোট্ট থাকতে নিশাত এমনি ছিলো। আনহা নানুর চোখের জলগুলো মুছিয়ে দিয়ে বলে।
-নানু তুমি কান্না করছো কেন?
-কই নাতনি কান্না করছি না তো।
-হুঁ বললেই হলো, দেখলাম তো কান্না করছো।
-হা হা পাগলী বুড়ী একটা।
-উঁহু নানু, আমি বুড়ী না দেখছো না আমি কতটা পিচ্চি।
-বাহরে আমার নাতনিটা বুড়ী না তাও যানে।
-হুঁ যানি তো।

“চলবে?”