তুলির সংসার পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
182

#তুলির_সংসার
পর্ব-১০/শেষ পর্ব

জীবন যদি হতো কোনো কাব্য
থাকতো তাতে কিছু প্রেমের কবিতা
কিছু ব্যর্থতার,কিছু পূর্ণতার
কিছু হারানোর, কিছু প্রাপ্তির
বাকিটা শুধুই আশার

আশা নতুন করে ভালবাসার
আশা নতুন করে কাছে পাবার
আশা হারিয়ে খুঁজে পাওয়ার
আশা ভুল বুঝে ভুল পথে যেয়ে
ফিরে আসার…

স্টেশনে ট্রেনটা এসে থামতেই বেশ হট্টগোল শুরু হয়ে গেলো। হকার কুলিরা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছুটোছুটি করছে। কোনো যাত্রী নামছে তো কেউ হাতে এক গাদা বাক্স পেটরা নিয়ে উঠছে। জহিরও তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ওর দ্রুত ঢাকা পৌছাতে হবে শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা যোগাড় করতে পেরেছে। সেই টাকা নিয়েই রওনা হয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। সেদিন তুলি যাবার পর বড় ডাক্তার এসে বললেন ওনার হার্টের অবস্থা খুব সিরিয়াস দ্রুত অপারেশন না করলে যেকোনো সময় আবার হার্ট এ্যাটাক করতে পারেন। ওদিন রাতের ট্রেনেই দেশে এসেছিলো জহির। মতিনের চেক শেষ পর্যন্ত জহির নেয়নি। গত তিনটা দিন পাগলের মতো টাকা যোগাড়ের চেষ্টা করেছে। ঢাকায় ওর বাবার এক বন্ধুর ছেলে চাকরিসূত্রে থাকে, তার কাছেই ওনার দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে এসেছিলো।

সকালে হাসপাতালে এসে দেখে ওর বাবার বেডে অন্য একজন শুয়ে আছেন। ভয়ে গা হিম হয়ে আসে জহিরের। বাবার বন্ধুর ছেলেটার সাথে কাল রাতের পর আর কথা বলতে পারেনি। ছেলেটার ফোনও বন্ধ। ডিউটি রত নার্সকে জিজ্ঞেস করলে সেও কিছু বলতে পারলোনা। দৌড়ে রিসিপশনে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই বললো ওনাকে আইসিউতে রাখা হয়েছে।

নিজেকে সামলাতে পারলোনা।কান্নায় ভেঙ্গে পরলো জহির।কিছু না ভেবেই ফোন দিলো তুলিকে।

তুলি আমার বাবা মনে হয় আবার হার্ট এটাক করেছেন। ওনাকে আইসিউতে রেখেছে।আমি টাকা নিয়ে আসতে দেরি করে ফেলেছি।
তুলি তুমি আমাকে মাফ করে দাও তোমাকে কষ্ট দিয়েছি বলেই আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন।

প্লিজ আপনি ঘাবড়াবেন না।

আপনার ডাক্তারদের সাথে কথা হয়েছে।

না
মাত্র রিসিপশনে শুনলাম বাবাকে আইসিউতে ট্রান্সফার করেছে।

আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলুন আমি আসছি

তুলিকে দেখেই জহির বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। জীবনের প্রথম শক্ত নির্লিপ্ত গ্রামের ছেলেটাকে এভাবে কাঁদতে দেখলো তুলি।

আইসিউতে গিয়ে পেশেন্টের কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন নার্স বললেন। ওনারতো গতকাল ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। উনার অবস্থা এখন স্টেবল কিন্তু বাহাত্তর ঘন্টা আমরা আইসিউতে অবজারভেশন এ রাখবো।

ততক্ষনে বড় ডাক্তার আসলেন। জহির দৌড়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার অপারেশন কি করে হলো আমিতো ওনার ছেলে আমিতো কিছুই জানি না আর অপারেশনের টাকাই বা কে দিয়েছে।

আরে আপনি আগে বলবেন না আপনি শুভ্রদের আত্মীয় তাহলে কি এতো ওয়েট করা লাগে। গতকাল শুভ্র নিজে এসেছিলো। আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, আপনি যে ছেলেটাকে রেখে গিয়েছিলেন ওকেও পাচ্ছিলাম না, আপনার বাবার অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছিলো তাই আমরা অপারেশনটা করে ফেলি।

এখন আপনার বাবা বিপদমুক্ত। ইনশাল্লাহ ঠিকমতো যত্ন নিলে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

ধন্যবাদ শুধু আমাকে না শুভ্রকেও দিবেন। ছেলেটা বড় ভালো। কাল যতক্ষন অপারেশন হয়েছে এখানেই ছিলো ।
বড়লোকের ছেলে এতো দায়িত্ববান, সচরাচর দেখা যায়না।

ডাক্তারে কথাটা শুনে আজ প্রথম বারের মতো নিজের স্বামিকে নিয়ে খুব গর্ব হলো তুলির।
ওই শুভ্রকে বলেছিলো জহিরের বাবা অসুস্থ।
কিন্তু সে কথা মনে রেখে, ও যে নিজে থেকে সব ব্যবস্থা করে দিবে তুলি ভাবতেই পারেনি।

তুমি নিশ্চয়ই শুভ্রকে বলেছো টাকা দিতে
কাজটা তুমি ঠিক করোনি
আমি আর আমার বাবা সারা জীবনের জন্যে তোমাদের কাছে ছোট হয়ে গেলাম। হতাশা আর রাগান্বিত চোখে জহির বললো, ‘আমি তোমাকে না করেছিলাম তুলি।’

জহিরের আচরনে অবাক হলো তুলি
আত্মসম্মান থাকা ভালো তাই বলে এরকম আত্মসম্মান তো একগুয়েমি।

আমি শুভ্রকে টাকার কথা কিছুই বলিনি যা করেছে ও নিজে থেকেই করেছে

তুমি না বললে সে জানলো কি করে আমার টাকার সমস্যা।
ওর কি দায় পরেছে যে ও সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিবে।

ও এমনই
যেকোনো মানুষের উপকার করতে ও কখনো পিছপা হয়না। এক মূহুর্ত চিন্তাও করেনা।

এসব বড় লোকের শখ এগুলো করে ওরা মানুষের আনুগত্য পাবার জন্যে। শুভ্রর বাবা এরকম লোক দেখানো উপকার করেই মানুষের ভোট কিনে।

জহিরের মুখে শুভ্রর বদনাম শুনে রেগে গেলো তুলি, না কখখনো না শুভ্র এরকম না। ওর সাথে ওর বাবার কোনো মিল নেই।

জহিরের হঠাৎ কি হলো বলতে পারবে না। তুলির এরকম শুভ্রর পক্ষ হয়ে কথা বলা ও সহ্য করতে পারলোনা।
তুমি জানো শুভ্রদের অফিসে ডেকে আমাকে কি প্রস্তাব দেওয়ানো হয়েছে।
হড়বড় করে সব বলে দিলো তুলিকে

সেটা শুভ্রর বাবা করাতে পারে

কেনো শুভ্র কেনো করতে পারবে না, হতে পারে ও চেক করতে চাইছিলো তুমি আমাকে এখোনো ভালবাসো কিনা

শুভ্র এতো ছোটলোক নয়।

আপনার উপর অনেক ধকল গিয়েছে আপনি বিশ্রাম নিন আমি পরে ফোন দিয়ে খোঁজ নিবো বলে বেরিয়ে এলো তুলি।

কেনো যেনো ওর জহিরের সামনে আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছা করছিলো না। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত শুভ্র কোনোদিনও জহির সম্পর্কে একটা খারাপ কথা বলেনি সেখানে জহির কি করে, কিছু না জেনে তুলির সামনে শুভ্রকে নিয়ে এতো বাজে কথা বললো।

তাও এতো বড় উপকার করার পর…

#
হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে কোনো রিক্সা পেলোনা তুলি। অনেকক্ষন অপেক্ষার পর হাঁটা শুরু করলো। কিন্তু কিছু দূর আসতেই তলপেট চিরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো। এখোনো তো অনেক দিন বাকি এখন এমন ব্যথা কেনো। ডাক্তার বলেছিলো ফলস পেইন হতে পারে। কিন্তু ফলস পেইন এতো তীব্র হয় নাকি। কিছুক্ষন থেমে থেমে বার বার ব্যথা হতে লাগলো। খুব ভয় করতে লাগলো তুলির।
ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করলো। সেই প্রচন্ড অসহায় অবস্থায় ওর পুরো পৃথিবীতে শুধু একজনার কথাই মনে পরলো। ফোন পেয়েই দৌড়ে আসে শুভ্র। তাড়াতাড়ি ওর গাইনি ডাক্তারের হসপিটালে নিয়ে যায়। আরেকটু হলে খারাপ কিছু হয়ে যেতো। সাথে সাথেই এডমিট করে নিয়েছে তুলিকে। কয়েকদিন অবজারভেশনে রাখবে।

#
গভীর ঘুম থেকে জেগে নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখলো তুলি মনে পরলো কি কি হয়েছিলো। বেডের পাশের চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে শুভ্র। ওর মাথাটা একদিকে হেলানো। তুলির খুব ইচ্ছে হলো মাথাটা সোজা করে দিতে নাহলে পরে ওর ঘাড় ব্যথা করবে। তুলির এক হাতে সেলাইন আরেক হাত শুভ্র ধরে রেখেছে নাড়ালেই ও জেগে যাবে।

হঠাৎ মনে হলো আজ দুপুরে যখন ওর সেই তীব্র ব্যথা উঠেছিলো ওর সবার প্রথম শুভ্রর কথাই মনে পরেছিলো। দুই কদম দূরেতো জহির ছিলো কই এক বারতো ওনার কথা মনে হয়নি। এমনকি ওর বাবা মা বা তোয়ার কথাও মনে পরেনি। এটাই কি ভালবাসা..?

এই যে ওর খুব মন চাচ্ছে শুভ্রর ঘাড়টা সোজা করে দিতে টেনশন হচ্ছে ওর ঘাড় ব্যথা হতে পারে। এটা কি ভালবাসা নয়..?

পাশে একটা বেড আছে সেখানে না শুয়ে, শুভ্র ওর পাশে ওর হাত ধরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
এটা কে কি ভালাবাসা বলেনা..?

বিয়ের এতোটা দিন পর তুলির অতিত জানার পরও শুভ্র যদি ধৈর্য্য ধরে ওর জন্যে অপেক্ষা করতে পারে। আজ তাহলে কেনো কয়েক দিন আগে আসা টিনার কাছে হেরে যাবে তুলি।

নাহ পৃথিবীর কোনো ক্ষমতাধর মানুষের কাছেই আর পরাজয় স্বীকার করবে না তুলি। তা সে তোবারক হোসেন চৌধুরী হোক কিংবা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো অতিথি।

শুভ্রর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে আবার ঘুমিয়ে পরলো তুলি।

কেবিনের জানালাটা সাধারন ঘরের জানালার মতো নয় বরং দেয়ালের উপরে যেখানে ভেন্টিলেটর থাকার কথা সেখানে রেক্টেঙ্গুলার সাইজের লম্বা জানালা আড়াআড়ি করে বসানো। সেই জানালা দিয়ে তেরছা করে সকালের রৌদ্র প্রবেশ করে তুলির মুখে পরেছে। শুভ্র চোখ খুলে সেই দৃশ্যটাই দেখলো। কখন ঘুমিয়ে পরেছে ও জানেনা। হঠাৎ ভয় হলো তুলি ঠিক আছেতো ঝুকে ওর নাকের সামনে আঙ্গুল ধরলো। উষ্ণ শ্বাসের ছোয়া ওকে স্বস্তি দিলো।
ঘুমের মধ্যেই তুলি চোখ কুচকালো। তাড়াতাড়ি দাড়িয়ে নিজের শরীর দিয়ে রৌদ্র আটকে দিলো শুভ্র। তুলির ঘুমে ব্যাঘাত হোক ও চায়না।

কালকে কি ভয়টাই না পেয়েছিলো। তুলির ফোন পাওয়ার পর কি করে যে ও সেখানে গিয়ে পৌঁছায়, আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেনা।

ঠিক কি কারনে এই সময় এমন হলো ডাক্তাররাও ধরতে পারছেনা। টু মাচ স্ট্রেস থেকে হতে পারে গেস করছে।

আবার চোখ খুলে শুভ্রকে ওরকম দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো তুলি। কি হলো তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো। বসো।

না এমনি

কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবে

তুলির পেড়াপেড়িতে শুভ্র সরতেই তীব্র রোদের আলোতে চোখ ধাধিয়ে উঠলো তুলির

হেসে ফেললো ও
এজন্য তুমি ওরকম করে দাড়িয়ে ছিলে

মাথা ঝাকালো শুভ্র

কখন থেকে

বেশীক্ষন না
দেখোনা এতো দামি হাসপাতাল অথচ জানালায় পর্দা টর্দা কিছু নেই

তুমি বলো তাহলে লাগিয়ে দিবে
মন্ত্রীর ছেলের কথা ওরা ফেলতে পারবেনা

তুমি আমার সাথে মজা করছো

মজা হলেও কথাটা তো সত্যি

জহিরকে না জানিয়ে ওনার বাবার অপারেশনটা করতে হয়েছে। ডাক্তার বলছিলো আর্জেন্ট। আমি খোঁজ নেবার জন্যে ফোন দিয়েছিলাম মনে হলো ব্যাপারটা উনি পছন্দ করেন নি।

তুমি যা করেছো ভালো করেছো।আমার স্বামী কখনো কারো খারাপ করতেই পারেনা। যতক্ষন পর্যন্ত তুমি জানো যে কাজটা তুমি ভালো নিয়তে করেছো, কে কি মনে করলো তাতে কিছু যায় আসে না।

কিন্তু জহির…

উঠে বসে হাত দিয়ে শুভ্রর ঠোঁটে ধরে ওকে চুপ করিয়ে দিলো তুলি

আজ থেকে আমাদের মধ্যে কোনো জহির আর টিনার কথা হবে না

ওমা টিনা এখানে আসলো কোথা থেকে
তুমি কি ভেবেছিলে আমার সাথে টিনার কিছু আছে?

তুলি চুপ হয়ে আছে দেখে আরো অবাক হলো শুভ্র
কি কিছু বলছোনা কেনো
সত্যি তুমি ভেবেছিলে আমি টিনার সাথে প্রেম করছি

প্রেম না হলেও হয়তো পছন্দ করো। হয়তো ভাবছিলে ইশ ওর সাথে বিয়ের কথা ছিলো ওকে বিয়ে না করে ভুল হয়ে গিয়েছে। কি শিক্ষিত স্মার্ট মেয়ে, বাবাও তো ওকে অনেক পছন্দ করেন

শিক্ষিত আর স্মার্ট দেখে বিয়ে করতে চাইলে অন্য অনেক মেয়েই ছিলো। আমি ভালো মনের একটা মেয়েকে জীবন সাথি হিসেবে চেয়েছিলাম। যার মনটা পরিষ্কার। যার ভেতরে কোনো লুকোছাপা নেই। যে স্পষ্ট করে কথা বলতে ভয় পায়না।

আর বাবার কাকে পছন্দ না পছন্দ তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তার কাছে নিজের ছেলের খুশির চেয়ে তার স্ট্যটাসটাই বড়। তোমাকেতো আগেই বলেছি উনি হার্ট এন্ড সোল ট্রাই করবেন আমাদের বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার। আমার মনে হয় টিনাকেও সে উদ্দেশ্যেই আনানো হয়েছে।

তাহলে টিনা আসার পর তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলে কেনো।

তার সাথে টিনার কোনো সম্পর্ক নেই। তোয়া অন্য একজন কে যখন বিয়ে করলো আমার মনে হয়েছে তুমি একটু বদলে গেছো। মন খারাপ করে থাকতে। তোয়ার জন্যে জহিরকে স্যাক্রিফাইস করে তুমি আমাকে গ্রহন করেছিলে হয়তো সেজন্য অনুশোচনা হচ্ছিলো।

দোষটা তাহলে আমারই, তোমাকে মিথ্যা বলবো না, তোয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। কেমন যেনো কষ্টও পেয়েছিলাম।
কিন্তু যাকে আমি ভালবাসা বলে ভাবছিলাম সেটা আর ভালবাসা ছিলো না। ভালবাসার লাকড়ি পোড়া কিছু ছাই অবশিষ্ট ছিলো। মনের পুরোনো জন্জালের ভীড়ে কবে যে নতুন করে ভালবাসার কুড়ি জন্মেছে সেই উপলব্ধি ই হয়নি।

উপলব্ধিটা কখন হলো..?

#
দরজা ঠেলে তোয়া ঢুকলো সাথে তুলির মা আর শাশুরি।
কেবিনে ঢুকে মা তুলিকে দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।
তোয়া মা কে ধমক দিয়ে বাইরে পাঠালো।

তুলির শাশুরি বেরিয়ে যাবার পর তুলি জিজ্ঞেস করলো
তোয়া বাবা আসেনিরে

এসেছে বাইরে আছে তোমার সামনে আসতে লজ্জা পাচ্ছে

তুই জানিস কেনো?

হুম বাবা বেশ কিছুদিন ধরে খুব অস্থির হয়ে ছিলো।একদিন আমি বাবাকে জোড় করে ধরে জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দেয়।
আপা তুমি বাবাকে ভুল বুঝো না।
বাবা যা করেছে প্রচন্ড আর্থিক সমস্যায় পরেই করেছে। আর তুমিতো জানোই মা কেমন।

না আমি বাবাকে ভুল বুঝিনি। তোর বরের খবর কি?

ভালো অনেক ভালো
শুভ্র ভাই বলেছেন ওর গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলে চিন্তা করতে না উনি চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন।
তোমার বরটা খুব খুব ভালো মানুষ

ও কইরে।

আমরা আসার পর বাইরে বেরিয়ে গেলো।

তোরা এখন চলে যা
আজই হয়তো আমাকে ছেড়ে দেবে
তারপর আমি বাড়িতে এসে কয়েকটা দিন থাকবো

কয়েকটা দিন কেনো তোমার ডেলিভারি পর্যন্ত তোমাকে আর ছাড়বোনা।

আচ্ছা দেখি শুভ্র কি বলে।

তুলি উঠে ফ্রেস হয়ে আসলো। আগের থেকে অনেক ভালো বোধ করছে। কিছুক্ষন আগে ডাক্তার এসেছিলেন। বললেন টেস্টের রিপোর্ট এলে যদি সব ঠিক থাকে আজই রিলিজ করে দিবেন। তবে বাসায় বেড রেস্টে থাকতে হবে।

#
আজ রেহানা নিজে রান্নাঘরে খাবারের তদারকি করছেন।একমাত্র বউমার সাতোশা বলে কথা। ছেলেটাকে নিজের পেটে ধরেন নি কিন্তু বুকে পিঠে করে মানুষ করেছেন। ওর বাবার মতো একটা জঘন্য লোকের সাথে সংসার করেছেন শুধু এই নিষ্পাপ ছেলেটার থেকে দূরে চলে যেতে হবে বলে। ওনার নিজের জীবনে যেমন সব কিছুতে তোবারক হোসেন বাধ সেধেছেন। শুভ্রর জীবনে তেমনটা হোক উনি চাননি।
তাইতো শুভ্রর এক কথাতে তুলিকে বউ করে এনেছেন।
রেহানা কি আর জানেন না সে বিয়ে ভাঙ্গার কতো চেষ্টাই না করেছে সেই লোক।

কি ব্যাপার তুমি রান্না করছো
বাবুর্চিরা কোথায়

বাবুর্চি লাগবে না, আমার ছেলের বউয়ের অনুষ্ঠান আমিই রান্না করবো।

পাগল কতো বড় বড় অতিথি আসবে, খাবার ভালো না হলে আমার মান সম্মান থাকবেনা। আমি এখনই মতিন কে ফোন দিচ্ছি

খবরদার বলছি তুমি কাউকে ফোন দিবেনা। আর আজকের পর আমার কোনো ডিসিশনে তুমি কোনো কথাও বলবে না । অনেক সহ্য করেছি, আর না।

রেহানার এই রুপ দেখে তোবারক হোসেন বেশ ঘাবড়ে গেলেন। রেহানাকে অবাক করে দিয়ে কিছু না বলে, নিঃশব্দে চলেও গেলেন।

#
আমি ঘুমোতে গেলাম তোরাও আর বেশিক্ষণ থাকিস না
এ অবস্থায় রাতে ছাদে থাকা ঠিক না।

তুমি চিন্তা করোনা একটু পরেই নেমে যাবো

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতে চা নিয়ে বসে গল্প করছিলো তুলি, শুভ্র আর শুভ্রর মা

আম্মা নেমে যেতেই শুভ্র বললো
তুমি কিন্তু তখন কথাটা শেষ করোনি

কোন কথাটা..?

উপলব্ধিটা কখন হলো..?

মুচকি হাসলো তুলি
জানতেই হবে..?

বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ালো শুভ্র

সেদিন… আমার প্রচন্ড বিপদের সময়।
যখন আমার তীব্র ব্যথা হচ্ছিলো, সেই কষ্টের মধ্যে,শুধু তোমার কথা মনে হচ্ছিলো।
মনে হচ্ছিলো তোমাকে দেখলেই আমি ভালো হয়ে যাবো। ঠিক তখন।

আমি প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত অনেক ভুল করেছি শুভ্র। ভুল মানুষকে ভালোবাসার ভুল। বিয়ে হবার পরও সেই পুরোনো স্মৃতি আকড়ে ধরে রাখার ভুল। তোমাকে ভুল বোঝার ভুল। আমাকে কি তুমি কোনোদিনও মাফ করতে পারবে..?

সামনে এগিয়ে এসে তুলির হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিলো শুভ্র,
তুলি কখনো বলা হয়নি, কিন্তু আজ না বলেও থাকতে পারছিনা। তোমাকে প্রথম দেখার পরই আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। নিজের মনকে বোঝাচ্ছিলাম এটা ভালবাসা নয়, তুমি ইন্টারেস্টিং একটা মেয়ে। মজার মজার কথা বলো তাই হয়তো ভালো লেগেছে।

যখন তোমাকে বলেছিলাম তুমি জহিরের কাছে চলে গেলেও আমার কিছু হবেনা। তখন মিথ্যা বলেছিলাম আমি চাইনি তুমি আমার অনুভূতিটা জানো।

তোমাকে আমি মাফ করবো কি। তোমার কাছেতো আমি চিরদিনের জন্যে ঋনী, আমার বন্ধুহীন জীবনে বন্ধু হয়ে আসার জন্যে, আমার প্রেমহীন জীবনে প্রেম হয়ে আসার জন্যে।

আর ভালবাসায় মানুষ ভুল করবে, ভুল করেও আবার ভালবাসবে। সেটাই তো নিয়ম।

আমার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কি লিখেছিলেন জানো,
‘ভালবাসায় মানুষ বরাবর একই ভুল করে। প্রেমিকরা কখনো অভিজ্ঞ হয় না। অভিজ্ঞ লোকেরা প্রেমিক হতে পারেনা।’

সমাপ্তি…