তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-০৫

0
14
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম |৫|
#শার্লিন_হাসান

🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫

(১৮+ এলার্ট)

শার্মিলাকে পেছাতে দেখে তাইজ্যিন নিজে পুনরায় এগিয়ে যায়। আজকে সে বড্ড উন্মাদ। নিজেকে চাইলেও সরাতে পারছে না শার্মিলার থেকে। শার্মিলা তাইজ্যিনের অবস্থা বুঝতে পেরে শুধায়, “আমার ঘুম পাচ্ছে।”

“আগে এখানের কার্য সম্পন্ন করি ডার্লিং।”

“কী কাজ?”
কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন ঠোঁট কামড়ে হেঁসে নরম স্বরে জবাব দেয়, “বাসর ঘরো যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছি। বউয়ের মন জয় করার জন্য এতো আয়োজন।”

তাইজ্যিনের কথা শার্মিলা কী জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। ভেতর জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। তাইজ্যিনের নেত্রপল্লবে দৃষ্টি স্থির করতে থমকে যায় শার্মিলা। ওই চাহনি অন্য কিছু চাচ্ছে এই মূহুর্তে।
চাহনিতে তীব্র মাদকতা নিয়ে তাইজ্যিন শার্মিলার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে, “প্লিজ জান আজকে না করো না।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। তাইজ্যিন বুঝে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। তাই দেরী না করে শার্মিলাকে পাজ কোলে তুলে ভেতরের দিকে হাঁটা ধরে। তাইজ্যিনের গলা জড়িয়ে ধরে তার মুখশ্রীর দিকে তাকায় শার্মিলা। তখন তাইজ্যিন শুধায়, “এভাবে তাকিয়ো না প্রেমে পড়ে যাবে।”

“এ্যাহহ্ বয়ে গেছে তোমার মতো খু’নির প্রেমে পড়তে।”

“শোন বউ, আমি খু’নি হই আর যা-ই হই তোমারই তো! আর প্রেম তো বলে কয়ে আসে না তাই না?”

“আমার প্রেমে আমি নিজেই ভিলেন হবো। এই প্রেম #তৃষ্ণার্থ_প্রেম হয়েই থেকে যাবে আজন্ম!”

“ডেঞ্জারাস লেডি!”
বাক্যপ্রয়াস করা শেষ হতে শার্মিলাকে এনে একটা রুমে স্থির করে। রুম জুড়ে কেবল ফুলে দের বিচরণ। ইলেকট্রিসিটির কোন অস্তিত্ব নেই। রুমটাকে আলোকিত করার জন্য কিছু ক্যান্ডেলা জ্বলছে। ফুলের সুভাষ রুম জুড়ে রাজত্ব করছে। ক্যান্ডেলার আলোয় অন্য রকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে শুধায়, “এটা কখন করলে?”

“গতকাল তুমি ফুলের কথা বলেছিলে।”

“তো?”

“এনেছি ফুল!”

“গুড!”

কথাটা বলে শার্মিলা তাইজ্যিনের শার্টের কলার ধরে নিজের মুখোমুখি করে নেয়। পা উঁচু করে নিজের অধর জোড়া তাইজ্যিনের অধরে স্থির করে। তাইজ্যিন শার্মিলার কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ক্যান্ডেলার আলোয় দু’জন মানুষের অস্তিত্বের ছায়া সাইডে দেখা যাচ্ছে।

শার্মিলাকে পাজ কোলে করে খাটের উপর নিয়ে আসো তাইজ্যিন। শার্মিলা মুখ বরাবর উপর নিজের মুখশ্রী অবস্থান রাখে। এক হাতে কপালের চুল সাইডে সরায় অন্য হাতে শার্মিলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। শার্মিলার মুখশ্রীতে,চোখে,পাপড়িতে ছোট,ছোট পরশ আঁকে।
শার্মিলার মেদবিহীন নরম কোমল জঠরে নিজের অধর জোড়ার বিচরণ ঘটায়। শার্মিলা নিজের কায়ায় কারোর ভালোবাসার পরশ মাখছে। এই অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন! রুম জুড়ে তাদের ঐক্যতার জংকার তুলছে।

দু’টি ভিন্ন মেরুর মানুষ আজ এক ছাঁদের নিচেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে।

★★★★

পরের দিন সকালে শার্মিলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। নিচে তাইজ্যিন পারিশ সাথে কিছু লোকের সাথে কথা বলছে। শার্মিলাকে দেখে তাইজ্যিন কথা শেষ করে ভেতরের দিকে যায়। রুমে প্রবেশ করতে শার্মিলা কঠোর মুখশ্রী চোখে পড়ে। তাইজ্যিন হেঁসে সোফায় বসতে,বসতে বলে, “আজকে একটা গাড়ী আসবে সুইটহার্ট।”

“তো?”

“না এমনিতে তোমাকে বললাম।”

“আমি বের হবো।”

“কোথায় যাবা?”

“স্বর্গে!”

“আমাকেও সাথে নিও এমনিতে নাকী জাহান্নামে যাব!”

“ওইখানেই যাও প্লিজ। তোমার জন্য ওইটাই ঠিক আছে।”

“তুমায় বোধহয় জন্মের পর মধুর বদলে করলার জুশ মুখে দেওয়া হয়েছে।”

“তুই আমার শত্রু! একমাত্র শত্রু তোর সাথে কীভাবে আমি ভালো ব্যবহার করি বল তো?”
বিড়বিড় করে বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন আর কথা বাড়ায়না। শার্মিলাকে সাফসাফ জানিয়ে দেয়, “আজকে কোথাও যেতে হবে না।”
&@,
মূহুর্তে মেজাজ হারায় শার্মিলা। রেগে জবাব দেয়, “তোকে জিজ্ঞেস করাটাই ভুল হয়েছে আমার।”

তাইজ্যিন শার্মিলার কথায় পাত্তা দেয়না। শার্মিলার রাগ হয় বেশ। তাইজ্যিন প্রস্থান করতে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। তার টিমের একজনকে ম্যাসেজ লিখে, “এই মাফিয়া আমায় বাইরে বের হতে দিচ্ছে না।”

শার্মিলার ম্যাসেজ পাওয়ার সাথে,সাথে সৌরভ রিপ্লাই দেয়, “আমরা ওয়েট করছি। খোঁজ ও চালাচ্ছি! আজকে রাতে একটা কিছু করা দরকার।”

“দেখি!”

“কল দিতে পারবেন ম্যাম? কিছু কথা ছিলো।”

শার্মিলা নিজেই কল দেয় সৌরভকে। সৌরভ সালাম দিতে জবাব দেয় শার্মিলা।
“কেমন আছ সৌরভ?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ম্যাম আপনি?”

“আমি আর ভালো! কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।”

“ম্যাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরীর যাতায়াতের জায়গা ওনার কোন জায়গা থেকে ড্রাগস সাপ্লাই করে জানা দরকার।”

“মেয়ে পাচার চক্রের কথা ভুলে গেছ?”

“একটা বের করতে পারলে অন্যটাও সুতো ধরে বের করতে পারব।”

“আচ্ছা আমি হেডকোয়ার্টারে আসছি কিছুক্ষণ পর।”

কথাটা বলে শার্মিলা কল রেখে রেডি হয়ে নেয়। ব্লু,হোয়াইট কালার মিক্স করা লং কুর্তি, কাধ বরাবর চুলগুলো একপাশে ক্লিপ দিয়ে ঠেকানো। পায়ে হিল ছড়িয়ে ফোন হাতে বেড়িয়ে পড়ে। লিভিং রুমে আসতে তাইজ্যিনের কন্ঠস্বর কর্ণভেদ হয়। বেশ কঠোর গলায় তাইজ্যিন শুধায়, “আমি বারণ করেছি বাইরে যেতে মানে তুমি এক পা ও বাইরে ফেলতে পারবে না।”

শার্মিলা চটে জবাব দেয়, “কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ এটা ভুলে ঢ়েও না তুমিও। আমি কারোর কথার দাসী নই!”

“আচ্ছা যাও বাইরে।”

তাইজ্যিনের কথা শেষ হতে শার্মিলা জোর কদমে বাইরে যায়। গ্যারেজ থেকে কোন গাড়ী নেয়নি সোজা গেটের সামনো চলে যায় সে। এই বাড়ীটা আসলে কোথায় ভেবে পাচ্ছেনা শার্মিলা। ফোন অন করে লোকেশন দেখে। এখান থেকে তার হেডকোয়ার্টার অনেকটাই দূরে। শার্মিলা বেশ বুঝেছে তাইজ্যিন তার পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে। সেজন্য, সোজা খন্দকার বাড়ীতে যাবে শার্মিলা। বাড়ীর চত্বর শেষে রাস্তা ধরে। কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর একটা সিএনজি ধরে। খন্দকার বাড়ীতে আসতে পিয়াসা শার্মিলাকে জড়িয়ে ধরে।

“ওই বাড়ীতে প্রতিটা পা সাবধানে ফেলবে। একটুও যাতে ভুল না-হয়। নাহলে ও তোমাকে মে’রে ফেলতে দুবা র ও ভাববে না।”

“আমি জানি সব মিমি। এই তাইজ্যিন ভীষণ চালাক সহজে মুখ খুলবে না। তবে ওর ডিটেইলস এভ্রিথিং নিতেও আমার সময় লাগবে না।”

কথাটা শেষ করে পিয়াসার দিকে তাকায় শার্মিলা। তার দেরী হয়ে যাচ্ছে সেজন্য বিদায় নিয়ে নিজের গাড়ীতে বসে পড়ে শার্মিলা। নিজেই ড্রাইভ করে হেডকোয়ার্টারের দিকে যায়।

শার্মিলাকে দেখে ইন্সপেক্টর আহসান শরাফত কুশলাদি বিনময় করে। শার্মিলা নিজের রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সৌরভের দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয়। সৌরভ ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। সীম কার্ডটা তাইজ্যিনের। রিসেন্ট আসা ফোন কল গুলো চেক দিচ্ছে সে। শার্মিলা গতকাল রাতেই সিমকার্ডটা খুলে নিয়েছে তাইজ্যিনের ফোন থেকে। ওয়াইফাই কানেক্টে করা সেজন্য বেশী নজরে আসবে না সীমকার্ডের ব্যপার টা। তবে ভয়ে আছে কখন তাইজ্যিন টের পেয়ে যায়। সবার আগে সন্দেহটা তাকেই করবে। খুব দ্রুত কাজ সমাপ্তি করে সৌরভ। লিটল প্রিন্সের পাঠানো লোককে তাইজ্যিনের আস্থানায় রাখা হয়েছে বিশেষ সুরক্ষার মাধ্যমে। সেই জায়গাটার লোকেশন নিয়ে নিয়েছে। তবে প্রিন্সের কোন ফোন কল এই সীমে পাওয়া যায়নি। কাজ শেষ হতে বেশী দেরী করেনি শার্মিলা। কিছু প্লান বুঝিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে।

বাড়ীতে আসতে দেখে তাইজ্যিন রুমে নেই। শার্মিলা জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। দরজাটা লক করে তাইজ্যিনের ফোনটা খোঁজা শুরু করে। খাটের পাশে টেবিলের উপর রাখা ফোনটা। সীম কার্ড রেখে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাবাড থেকে রাতের পোষাক ঠিক করে রাখে যেটা পড়ে বের হবে সে।

দরজায় নক করতে শার্মিলা দরজা খুলে দেয়। সামনে তাইজ্যিন সাথে কালো পোষাক পড়া বেশ কয়েক ছেলে এবং দু’জন মেয়ে দাঁড়িয়ে। শার্মিলা ব্রু জোড়া প্রসারিত করে শুধায়, “কী চাই?”

তাইজ্যিন শার্মিলার হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। পেছন দিয়ে লোকগুলো ও আসছে। তাইজ্যিন সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে রিলেক্সে শুধায়, “ওরা তোমার গার্ড। তোমার সুবিধা অসুবিধা সব দেখার দায়িত্ব ওদের। এমনিতে আমি সারাক্ষণ তোমার সাথে থাকতে পারব না।”

“আমহ এসবের কিছু চেয়েছি তোমার কাছে?”

“ওয়েট… একটা গাড়ী দেখলাম গ্যারেজে! ওটা তোমার?”

তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা থতমত খেয়ে যায়। রাতে বেরুনোর জন্য গাড়ীটা আনা। মাথায় একদম ছিলো না গ্যারেজের সিসি ক্যামরার কথা। ইভেন বাইরের দেওয়ালে লাগানো সিসি ক্যামেরার কথাও বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। শার্মিলা নিজের ভুলে নিজেকে গা’লি দেয়। কত বড় বাঁচা বেঁচে গেলো সে। শার্মিলাকে এমন চুপ থাকতে দেখে তাইজ্যিন পুনরায় শুধায়, “তোমার গাড়ী লাগলে আমায় বলবা, কীসব পুরোনো গাড়ী নিয়ে ঘুরো।”

“টাকা গরম দেখাচ্ছিস আমায়?”

চোখ রাঙিয়ে কথাটা বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন হাতের ইশারা করতে গার্ডস গুলো চলে যায়। উঠে দাঁড়ায় তাইজ্যিন। শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে, “রাগলে তোমায় হ’ট লাগে। একদম খেয়ে ফেলতে মন চায়।”

“তোমার শরীরে অনেক প্রেম সোনা। তবে আমার মনে ওত রং লাগেনি। ছাড়ো আমায়! ”

কথাটা শেষ করে শার্মিলা তাইজ্যিন বাঁধন ছিন্ন হয়। কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে শুধায়, ” উইদাউট পারমিশন, ইউ ডোন্ট টাচ মি, এগেইন!”

কথাটা শেষ হতেই তাইজ্যিন এগিয়ে এসে শার্মিলার দুগাল চেপে ধরে শার্মিলার অধরে নিজের অধর ডুবিয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর শার্মিলার ধাক্কাধাক্কিতে ছেড়ে দেয়। তাইজ্যিন কঠোর গলায় শুধায়, “নেক্সট টাইম থেকে যতবার বলবে ‘ডোন্ট টাচ মি!’ ঠিক ততোবারই এমন টাচ পাবা। আমি আরেকটু ফ্রি হলে এর থেকে বড়সর টা পাবা। এখন অপশন আমার চয়েজ তোমার!”

শার্মিলা রেগে তাইজ্যিনের কলার চেপে ধরে বলে, “তুই নিজের লিমিট ও ক্রস করে ফেলেছিস। তোকে,তোকে আমি শ্যুট করে রোমান্স করার শখ মিটিয়ে দেব।”

পতৃতীয় বারের মতো, একহাতে শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাইজ্যিন। অন্য হাত দিয়ে নিজের কলার থেকে শার্মিলার হাত সরিয়ে, মাথার পেছনে চুলে হাত ডুবিয়ে দেয় তাইজ্যিন। পুনরায় অধর জোড়ায় নিজের অধরের বিচরণ ঘটায় তাইজ্যিন। শার্মিলা রেগে আগুন! তাইজ্যিন এতেই জেনো মজা পাচ্ছে বেশ।

#চলবে