তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-০৮

0
10
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম |৮|
#শার্লিন_হাসান

🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তাইজ্যিন বেড়িয়ে পড়ে তার পুরোনো বাড়ীর উদ্দেশ্য। তাইজ্যিন যাওয়ার পেছন দিয়ে শার্মিলা ও বেড়িয়ে পড়ে বাংলোর উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে ফাস্টে রাহাতের কাছে যায়। রাহাতের ডান হাতে ব্যান্ডেজ করা। শার্মিলাকে দেখে রেগে ফুঁসে উঠে রাহাত। তা দেখে শার্মিলা হাসে। পিস্তলটা স্লাইড করতে,করতে শুধায়, “সকাল,সকাল খু’ন করব কীনা ভাবছি।”

“তোকে তো আমি শেষ করে দেব।”

দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে রাহাত। শার্মিলা বাঁকা হেঁসে বলে, “আচ্ছা তাহলে জেলে পঁচে মর তুই। কিছু প্রয়োজন হলে তোকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

কথাটা শেষ করে সৌরভকে নির্দেশ দেয় রাহাতকে জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আজকে সে হেডকোয়ার্টারে যাবে। কথা শেষ হতে বেড়িয়ে পড়ে সে। নেক্সট প্লান মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু আসল সত্যিটটা তো জানা হলো না। আচ্ছা তাইজ্যিনকে জিজ্ঞেস করবে কিছু? তাইজ্যিনের বাড়ী থেকে ানেকটা দূরে গাড়ী থেকে নেমে যায় শার্মিলা। বাকী পথটা হেঁটেই যাবে। কালো হুডির সাথে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা। ছোট, ছোট চুলগুলো কপালের উপর আসা। যাতে খুব সহজে তার মুখটা কেউ চিনতে না পারে।

শার্মিলা পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে। রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। আনমনা হয়ে হাটলেও গুলির শব্দে পেছন ফিরে তাকায় সে। কালো পোষাক পরিহিত দুটো ছেলে তার পিছু নিয়েছে। এই নিয়ে বুলেট দুটো ছোঁড়া হয়েছে তার পাণে। শার্মিলা সোজা দোর দেয়। বাড়ীর কাছাকাছি চলে এসেছে ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু ছেলে দুটো তার পেছনে আসছে। পুনরায় দৌড় দিতে গিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে যায় শার্মিলা। নিজের উপর নিজেরই রসগ হয়। অঘটন ঘটার আর সময় পেলো না। এখন উঠে দাঁড়াতেও সময় লাগবে। ততক্ষণে ছেলেগুলো তাকে নিয়ে যেতে পারবে।

শার্মিলা উঠে দাঁড়াতে তাইজ্যিনের গাড়ী এসে তার সামনে থামে। তাইজ্যিন গাড়ী থেকে নেমে শার্মিলার কাছে আসে। শার্মিলা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে, “ওরা আমার পিছু নিয়েছে আমাকে সাহায্য করো।”

তাইজ্যিন হেঁসে ইয়ার্কি করে বলে, “উমমম, তোমার মতো ডেঞ্জারাস লেডির আবার সাহায্য প্রয়োজন? খুব তো ডায়লগ মারো আমার এটা,ওটা ভেঙে দেওয়ার। তা ওই ছেলেগুলো….

কথাটা শেষ হতে না দিয়ে শার্মিলা তেজী স্বরে বলে, ” জাস্ট শাট আপ। লাগবে না তোমার সাহায্য।”

কথাটা বলে শার্মিলা হাঁটা ধরে। কিন্তু পায়ের ব্যথ্যায় বেশী এগোতে পারে না। তখন হুট করে তাইজ্যিন এসে তাকে কোলে তুলে নেয়। দুজনের চোখাচোখি হতে তাইজ্যিন হাসে। শার্মিলা বিরক্ত বোধ করে শুধায়, “নিচে নামাও আমায়।”

“এমনিতে তুমি অসুস্থ। এখনো তোমার শরীরে আমার দেওয়া ছোট্ট, ছোট্ট আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারউপর এই পিচ ঢালায় পড়ে গিয়েছ নিশ্চয়ই ব্যথা পেয়েছ।”

“আমার কথা ছাড়ো, তুমি এতো সকালে কোথায় গিয়েছ।”

“চৌধুরী বাড়ীতে।”

“মিথ্যে কথা।”

“তাহলে সত্যিটা তুমি বলো?”

“তোমার পুরোনো বাড়ীতে।”

“কারেক্ট।”
দুজনে গাড়ীতে বসতে তাইজ্যিন বাড়ীতে আসে। শার্মিলা গাড়ী থেকে নেমে ভেতরে চলে যায়। জামাকাপড় পাল্টে শাড়ী পড়ে নেয়। হাতের কনুই ছিলে গেছে। পায়ের হাঁটুর ও সেম অবস্থা। তখন তাইজ্যিব ফাস্ট এইড বক্স এনে শার্মিলাকে স্থির করে বসায়। দুজনের মাঝে নিরবতা। তখন তাইজ্যিন বলে, “একটু পর বাড়ী যাব রেডি হয়ে নিও। এখন থেকে আমাদের বাড়ীতেই থাকব আমরা।”

“কেন?”

“বারে আমার মায়ের একমাত্র বউমা তুমি। তার কাছে থাকবা তার সেবা যত্ন করবা এটাই তো তোমার দায়িত্ব সুইটহার্ট।”

“কেন তোমার বড় ভাইয়ে ওয়াইফের কী হয়েছে?”

তাইজ্যিন জবাব দেয় না। শার্মিলা উদগ্রীব হয়ে আছে। চট করে বলে বসে, “তোমার বাড়ীর সিক্রেট রুমটায় আমায় নিয়ে যাবে?”

“কেন?”

“এমনিতে।”

“আচ্ছা আমায় একটা কথা বলো তো?”

“কী কথা?”

“তুমি রাতে, সকালে কোথায় যাও? আর ড্রেসআপ এমন রাখো কেন?”

“তোমাকে উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই তাইজ্যিন।”

“তুমি বাধ্য। কারণ তুমি আমার ওয়াইফ আর আমি তোমার হাজবেন্ড।”

“তাই বুঝি? তাহলে তোমার ও আমাকে সব বলতে হবে।”

“জেনে কী করবে তুমি?”

“আমি কোথায় যাই, না যাই, সেটা জেনে তুমি কী করবে?”

ওকে ফাইন!”

তাইজ্যিন কথা বাড়ায় না এই বিষয়ে। শার্মিলা পুনরায় বলে, “আমায় নিবে না তোমার সিক্রেট রুমে?”

“এখন যাবে?”

তাইজ্যিন শান্ত স্বরে জবাব দেয়। শার্মিলা জেনো ধাক্কা খেলো। এতো সহজে কীভাবে রাজী হয়ে গেলো তাইজ্যিন? আর রাহাতকে নিয়ে চিন্তা নেই তার মুখে। শার্মিলা শাড়ী সামলে উঠে দাঁড়ায়। তখন তাইজ্যিন ইয়ার্কি মে’রে বলে, “হাঁটতে পারবে নাকী কোলে তুলে নেব?”

“তোমার কী আমাকে বাচ্চা মনে হয়?”

তাইজ্যিনের বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন শার্মিলা কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নেয়। এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে, “শাড়ীতে তোমায় সুন্দর লাগে সুইটহার্ট।”

“ছাড়ো আমায়।”

“ছাড়বো না।”

“তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছ তাইজ্যিন।”

“তুমি আমার বিয়ে করা বউ।”

“তাতে কী হয়েছে?”

“ঠিক আছে আর করব না অসভ্যতামী। নতুন বউ খুঁজে নেব।”
কথাটা বলে শার্মিলাকে ছেড়ে দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলা রাগ দেখিয়ে বলে, ” নেক্সট টাইম থেকে উইদাউট পারমিশন,তুমি আমায় স্পর্শ করবে না।”

“ওকে।”

কথাটা শেষ করে তাইজ্যিন হাঁটা ধরে। শার্মিলা তার পেছনে দিয়ে আসছে। তাইজ্যিন আঙুল চাপতে দরজা খুলে যায়। দুজনে ভেতরে প্রবেশ করে। শার্মিললা রুমটা দেখে অবাক হয়। দুটো সোফা, একটা কাবাড আর দেওয়াল কয়েকটা ফটো ফ্রেম ঝুলানো।
“এই রুমটাকে এতো রহস্যময় করে রাখার কী দরকার ছিলো?”

“তুমি বুঝবে না।”

“রুমটা আমার পছন্দ হয়েছে। এখন থেকে যখনি ইচ্ছে হবে আমি এখানে আসব। পারমিশন দিবে তো?”

“” আসতে পারো। পাসওয়ার্ড বলে দেব।”

দুজনে বেড়িয়ে পড়ে। সোজা নিচে যায় নাস্তা সেরে তাইজ্যিন শার্মিলাকে বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। শার্মিলা ও তাইজ্যিনের কথা মতো রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। একজন গার্ডস এসে তার ব্যাগ নিয়ে যায়। তাইজ্যিন সহ দুজনে গাড়িতে বসে পড়ে। তাইজ্যিন ড্রাইভ করছে, শার্মিলা ফোন স্ক্রোল করছে। রাস্তার পাশে এনে তাইজ্যিন গাড়ী থামায়। তখন সেখানে একটা ছোট্ট ছেলে আসে হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ, বালতিতে জারবেরা সাথে বেলীর মালা, ফ্লাওয়ার ক্রাউন ও আছে। তাইজ্যিন দুটো বেলীর মালা, একগুচ্ছ গোলাপ সাথে বেশ কয়েক জারবেরস আর একটা স্নিগ্ধ ফুলের ক্রাউন নেয়। টাকা দিয়ে ফুলগুলো শার্মিলার দিকে এগিয়ে দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলা বুঝেছে তাইজ্যিন শখ করে নিয়েছে সেজন্য ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি টেনে বলে, “ওগুলো তোমার কাছেই রাখো। আমি ফুল পছন্দ করি না।”
“আমি দিয়েছি তোমায়। আর ফুল নিলে ক্ষতি কী?”

“প্লিজ ডোন্ট ফোর্স মি! যেটস জানো না সেটা নিয়ে কথা বলো না প্লিজ।”

“তুমি আর তোমার কথা বার্তা গুলো এমন কেন?”

“আমি এরকমই,আমার কথা এরকম আপনার চলবে ভাইয়স?”

“হোয়াট? হু’জ ইওর ভাইয়া?”

“এই ভাইয়া সেই ভাইয়া না ভাইয়া।”

“তুমি আমাকে ভাইয়া বানিয়ে দিলে?”

“তো? বানিয়েছি ভাইয়া,বেশ করেছি তাতে তোমার কোন সমস্যা আছে?”

তাইজ্যিন কথা বাড়ায় না। চুলগুলো পেছনে স্লাইড করে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দেয়। ফুলগুলো মাঝের সীটে পড়ে রয়েছে। শার্মিলা বাইরে তাকিয়ে রয়। তার মন খারাপ। তাইজ্যিনের মুখটাও গোমড়া হয়ে আছে। শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে একনজর তাকিয়ে মনে,মনে আওড়ায়, “অ্যাম সরি তাইজ্যিন। ফুলে আমার ভীষণ অনীহা৷ একদম সহ্য হয়না ফুল। আমার নীতিভ্রষ্ট জীবনে এই শুভ্রফুল বেমানান লাগে। আমি নিজেকে ওয়াদা দিয়েছিলাম ফুল স্পর্শ করবো ন

দুজনে গম্ভীর মুখ করে বাড়ীতে প্রবেশ করে। তখন জেসিয়া ইসলাম এসে শার্মিলাকে জড়িয়ে ধরে। তখন কোথা থেকে হুট করে একটা মেয়ে এসে তাইজ্যিনকে জড়িয়ে ধরে। উপস্থিত সবাই অবাক না হলেও শার্মিলা বেশ ধাক্কা খায়। মূহুর্তে মনে হিংসারা এসে দলা পাকিয়েছে। তাইজ্যিন ও মিষ্টি হেঁসে তারিনকে আলিঙ্গন করে। তখন তারিনের আম্মু রিশা আসে। তাইজ্যিন তাকে দেখে সালাম দেয়। শার্মিলাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে সালাম দিতে। শার্মিলা দেখে ও না দেখার ভাণ করে। তিথিয়া চৌধুরী আসতে তাকে সালাম দেয়। পরে রিশাকে সালাম দেয়। একজন সার্ভেন্ট ব্যাগ আনে আরেকজন ফুল গুলো আনে। তাইজ্যিনকে জিজ্ঞেস করে, ” স্যার ফুলগুলো কী করব?”

সবার দৃষ্টি সার্ভেন্টের হাতের ফুলের দিকে। তখন তারিন দৌড়ে সার্ভেন্টের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে তাইজ্যিনের কাছে আসে। তাইজ্যিনের দিকে ক্রাউনটা এগিয়ে দিয়ে বলে, “এটা আমায় পড়িয়ে দাও তো।”

তাইজ্যিন ও হেঁসে তারিনকে সেটা পড়িয়ে দেয়। তখন তারিন বলে, “ভাইয়া আমি ফুলগুলো নিতে পারি।”

“হ্যাঁ নিয়ে নেও।”

শার্মিলা তাদের দুইজনের কান্ড দেখছে। সে তাইজ্যিনকে ভাইয়া ডেকেছে এখন তারিন কেন ভাইয়া ডাকবে? তার জন্য ফুল কেনা হয়েছে তারিন কেন নিবে? পরক্ষণে ভাবে, “থাক শার্মিলা তোর ইউজ করা নাম আর রিজেক্ট করা ফুল ই তো।”
কিন্তু আলিঙ্গন করলো কেন? ফুল গুলো না নিয়ে কী ভুল করলাম? কিন্তু নিজের জেদের কাছে এটা কিছু না। কিন্ত তারিন কেন এসবে আসবে? না,না শার্মিলার একদম এসব সহ্য হচ্ছে না। তাইজ্যিনের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।

#চলবে

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❤️)