#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১০|
#শার্লিন_হাসান
“ঘুমাবে না?”
শার্মিলা কোন কথা না বলে বালিশ নিয়ে কাউচের উপর চলে যায়। শার্মিলার কাজে তাইজ্যিন হতভম্ব হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, “খাটে ঘুমাবে না?”
“ওটা তারিনের জন্য রাখা। ওকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসুন!”
“তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? আর তারিন এখানে আসবে না। এটা আমাদের বেড রুম।”
শার্মিলা জবাব দেয়না। তাইজ্যিন ওর হাত টেনে ধরে। শার্মিলার ভীষণ রাগ হয়৷ তার রাগকে তাইজ্যিন পাত্তা না দিয়ে কোলে তুলে নেয়। সোজা খাটে এনে শুইয়ে দেয়। শার্মিলা উঠে বসে তাইজ্যিনের কলার চেপে ধরে শুধায়, “তোমার সাহস কত আমার মতের বিরুদ্ধে আমায় খাটে নিয়ে এসেছ।”
“আমার সাহস সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই শার্মিলা।”
কথাটা বলো শার্মিলার থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নেয় তাইজ্যিন। উঠে দাঁড়াতে, শার্মিলা ও উঠে দাঁড়ায়। দু’জন মুখোমুখি তখন শার্মিলা বলে, “তুমি অন্য কিছু মনে করো না, তবে হ্যাঁ আমার চোখের সামনে যদি তারিন আর তোমার মাখোমাখো ভাব আমি দেখেছি তাহলে খবর আছে।”
“অকেহ্! একটু খবর কোরো। সুইটহার্ট বলে কথা।”
বাক্যপ্রয়াস করে তাইজ্যিন শার্মিলাকে চোখ মারে। শার্মিলা রেগে বলে, “ফ্লার্ট করছ আমার সাথে? শোন, তোমার ফ্লার্টও বাদ দিতে হবে।”
“দিলাম বাদ।”
“তাহলে খু’ন করাটাও বাদ দিয়ে দাও।”
“দিয়ে দেব তবে একসপ্তাহ পর।”
“কেন?”
“এমনিতে! তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আমার কাজ আছে বাইরে যাব।”
“আমিও যাব।”
“কেন?”
“কাজ আছে।”
তাইজ্যিন বুঝেছে শার্মিলা তার সাথে ইয়ার্কি করছে। তাই পাত্তা দেয়না। চুপচাপ বেড়িয়ে পড়ে। তাইজ্যিন যাওয়ার পেছন দিয়ে শার্মিলা ও বেড়িয়ে পড়ে।
পিচ ঢালা রাস্তা। সুনশান নিরব পরিবেশ। আশেপাশে তেমন মানবের অস্তিত্ব নেই। এই নিস্তব্ধ পরিবেশে, কয়েকজনের পদ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সামনে দৌড়াচ্ছে একটা ছেলে। তার পেছন দিয়ে আরো দু’জন।
শার্মিলা ও দৌড়াচ্ছে পুরো দমে। কানে ব্লুটুথ গুঁজা। কলে সৌরভকে তার মুভমেন্ট বলছে। তাদের পেছন দিয়ে গাড়ীতে করে আসছে তাইজ্যিন।
দৌড়ানো ছেলেটা হঠাৎ রাস্তার মাঝে পড়ে যেতে পেছনের দু’জন তাকে ধরে নেয়। পেট বরাবর লা’থি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। পুনরায় কলার ধরে উঠিয়ে একটা ছেলে বলে, “স্যার চলে আসছে। আজকে সব কিছুর জবাব দিবি তুই। বল ওই দালানের, গেটের পাশে গর্ত তুই করেছিস? নাকী ওইটা যে তাইজ্যিনের ঢেড়া তুই বলেছিস ওদের?”
গুলির শব্দে তিনজনই পেছনে তাকায়। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আবছা কারোর ছায়া মূর্তি দেখা যাচ্ছে। কেউ কিছু বুঝার আগে শার্মিলা দুটো ছেলের পা বরাবর দুটো বুলেট গাঁথে। দুজনে পড়ে যেতে শার্মিলা তড়িঘড়ি মাঝের ছেলেটার হাত ধরে রাইট সাইডে দৌড় দেয়। পেছনে কেউই তাকায়নি। কিছুটা দূরে আসতে গাড়ীতে উঠে বসে দু’জন। সৌরভ শার্মিলা সাথের সায়েমকে দেখে বলে, ” যাই হয়ে যাক মুখ খোলা যাবে না। আর সায়েম তুমি কীভাবে ধরা পড়ে গেলে?”
“আসলে স্যার আমি নিজেও জানি না ওরা কীভাবে আমায় সন্দেহ করলো। আমি তো এই কয়দিন কাজ নিয়েই বিজি ছিলাম।”
“এখন কীভাবে ধরেছে তোমায়?”
“শার্মিলা ম্যামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওরা টার্গেটে রেখেছে আমায়।”
তখন শার্মিলা জবাব দেয়, “শোন, তাইজ্যিন প্লান করেছে নতুন কয়েকদিনের ভেতর সৈয়দ ইব্রাহিম বোধ হয় ওদের চৌধুরী বাড়ীতেই আসবে। হাই সিকিউরিটি দেওয়া হবে তাকে।”
★★
ছেলে দুটোকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয় পারিশ। তাইজ্যিন গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আকস্মিক ঘটনার কথা ভাবছে। কার এতো আস্পর্ধা তার প্লান ভেস্তে দিয়েছে। আজকাল সব কেমন জেনো। তাইজ্যিন তো এমন ছিলো না। তার সব প্লান সাকসেস। দুই দুটো কাজে সে ব্যর্থ। কেউ একজন তার সবকিছুতে জল ঢেলে দিচ্ছে। কিন্তু কে সে? তার প্লান জেনে যাচ্ছে কীভাবে? শার্মিলা?
কিন্তু সে এসব কেন করবে? তাইজ্যিন গাড়ীতে বসে ল্যাপটপ ওপেন করে। একটা গ্রুপে শার্মিলার কিছু ডিটেইলস সাথে পিকচার দেয়। শার্মিলা সম্পর্কে তার জানা দরকার। শুধু তাই নয়, সে যতটুকু শুনেছে একজন মেয়েই এসব করছে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব। মেয়েটা ভীষণ ট্যালেন্টেড একজন পার্সন।
রাহাতের খোঁজ মিলেছে সে জেলে আছে। তাকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য তাইজ্যিন কথা বলেছে। যত টাকা লাগবে সে দিবে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা পাচ্ছে সে।
গাড়ীতে বসে শার্মিলা একটা পরিত্যক্ত এলাকার ম্যাপ দেখছে। সাথে এলাকায় কেমন গাড়ি যাতায়াত করে সেটাও দেখছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী কালকে সে সেখানে যাবে। প্লান সৌরভকে বলে চৌধুরী বাড়ীর দিকে রওনা হয়। সায়েমকে সাবধানে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
শার্মিলা রুমে প্রবেশ করার প্রায় বিশ মিনিট পর তাইজ্যিন আসে। এই বাড়ীতে তেমন সিকিউরিটি নেই সেজন্য তার সুবিধা হয়েছে। তাইজ্যিন শার্মিলাকে জেগে থাকতে দেখে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে, “এতো রাত জাগছ কেন? শরীর খারাপ করবে তো।”
“তুমি এতো রাত জাগছ কেন? তোমার ও তো শরীর খারাপ করবে।”
“কাজ ছিলো। ”
“কী কাজ?”
“এমনিতে একজনকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিলো।”
“এতো রাতে?”
“ইচ্ছে হয়েছে।”
“আচ্ছা চলো বেলকনিতে যাই। জোস্না ভরা রাতের আকাশ দেখি আর প্রণয়ের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেই।”
“তুমি বলছ এটা?”
তাইজ্যিন ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে। তখন শার্মিলা তার হাত ধরে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়। কেন জানি মনটা ফুরফুরে লাগছে। তাইজ্যিনের আরেকটা ব্যর্থতা আর তার সফলতা। বেলকনিতে আসতে শার্মিলা তাইজ্যিনের গলা জড়িয়ে ধরতে তাইজ্যিন তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। তখন শার্মিলা বলে, “আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
“করো?”
“আমরা কী ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি?”
“হ্যাঁ হতে পারি।”
“আচ্ছা তাহলে এখন থেকে আমরা ফ্রেন্ড তারপর হাজবেন্ড ওয়াইফ।”
“তোমার ভালো ফ্রেন্ড আছে?”
তাইজ্যিন প্রশ্ন করে। তখন শার্মিলা জবাব দেয়, ” না নেই। কেউ নেই। এই তুমি যাকে আমি ফ্রেন্ড হওয়ার অফার করেছি।”
“তুমি বন্ধুত্বের মানে বোঝো শার্মিলা।”
“কিছুটা বুঝি! এই যেমন ধরো সবকিছু শেয়ার করা, দুঃখ ভাগ করে নেওয়া। মাঝেমধ্যে একে অপরের সাথে মন খুলে হাসা। মন খারাপের কথা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া।একে অপরের মন ভালো করার চেষ্টা করা। মাঝেমধ্যে ফুল উপহার দেওয়া।”
“তুমি ফুল পছন্দ করো না আমি জানি। তাহলে ফুলের কথা কেন বলছ?”
“এমনিতে। আচ্ছা ফুল বাদ দাও।”
“ঠিক আছে।”
“আচ্ছা তাইজ্যিন তুমি চাইলে ভালো পথে যেতে পারতে। একজন সৎ লোক হতে পারতে। তোনার বাবার টাকার অভাব ছিলো না। তাহলে তুমি এই খু’ন,নারী পা’চারের মতো জঘন্য রাস্তাটা কেন বেছে নিলে?”
“এমনিতে আমার পছন্দ। সবার সব পছন্দ হয়না।”
“আর ইও শিওর?”
“ইয়াহ্!”
“তুমি কখনো কোন নারীকে ভালোবেসেছো?”
“হ্যাঁ!”
“তাহলে তাকে বিয়ে করোনি কেন?”
“আমি কী বলেছি আমি যাকে ভালোবাসি তাকে পাইনি।”
“না। এমনিতে মনে হলো! তোমাকে দেখলে বাংলা সিনেমার বাপ্পারাজ মনে হয়। জেনো কতগুলো ছ্যাকা খেয়ে বেঁকে গেছ।”
“শাট আপ শার্মিলা।”
“মজা করছিলাম।”
কথাটা বলে তাইজ্যিনের বুকে আলতো ধাক্কা দেয় শার্মিলা। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে, “এটা হলো তৃষ্ণার্ত প্রেম নিবারনের প্রথম ধাপ।”
শার্মিলার এমন কথায় তাইজ্যিন ধাক্কা খায়। কেনো জেনো এসব অবিশ্বাস্য লাগছে। এটা শার্মিলা? তাইজ্যিন ও প্রশ্ন করে, “তাহলে দ্বিতীয় ধাপ কোনটা?”
“জড়িয়ে ধরা।”
“তৃতীয় ধাপ?”
“চোখের পাতায় ঠোঁটের পরশ দেওয়া। ”
“চতুর্থ?”
” নিজের মানুষটার হৃৎস্পন্দনের কম্পন অনুভব করা যাবে যে ছোঁয়া এবং আদরে। সেই ছোঁয়া এবং আদর নেওয়া।”
“পঞ্চম?”
“কঠোর হৃদয় ছিঁড়ে একটা বাক্য প্রয়াস করা, যেটা শোনলে মনটা শান্ত হয়ে যাবে। সব দাম্ভিকতাকে হার মানাবে। এবং যেটা সব কিছু উপেক্ষায়, সুন্দর এবং দামী।”
“কী সেই বাক্য?”
“ভালোবাসি বলা।”
“আমরা এখনো পঞ্চম ধাপে যাইনি শার্মিলা।”
“চিন্তা করো না। আমরা কখনোই পঞ্চম ধাপে যাবো না। প্রেমের সব ধাপ পূরণ হলে তো হবে না। একটা ধাপ অসম্পূর্ণ থাকুক। যাতে আমরা বলতে পারি, খুব কাছে গিয়েও আমাদের মাঝে তৃষ্ণার্ত কিছু রয়ে গিয়েছিলো।”
#চলবে
#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১১|
#শার্লিন_হাসান
“পঞ্চম?”
“চাতক হৃদয় ছিঁড়ে একটা বাক্য প্রয়াস করা, যেটা শোনলে মনটা শান্ত হয়ে যাবে। যেটা সব কিছু উপেক্ষায়, সুন্দর এবং দামী।”
“কী সেই বাক্য?”
“ভালোবাসি বলা।”
“আমরা এখনো পঞ্চম ধাপে যাইনি শার্মিলা।”
“চিন্তা করো না। আমরা কখনোই পঞ্চম ধাপে যাবো না। প্রেমের সব ধাপ পূরণ হলে তো হবে না। একটা ধাপ অসম্পূর্ণ থাকুক। যাতে আমরা বলতে পারি, খুব কাছে গিয়েও আমাদের মাঝে তৃষ্ণার্ত কিছু রয়ে গিয়েছিলো।”
“তুমি হয়ত জানো না আমার সম্পর্কে, আমি চারটা ধাপ যেহেতু সম্পূর্ণ করেছি পঞ্চম ধাপেও যাবো।”
তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা বাঁকা হাসে। অকপটে জবাব দেয়, “ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছো তো?”
তাইজ্যিন থমকায়। ভালোবাসা শব্দটা বা তার অনুভূতিটা নতুন মনে হয়। তবে এটা ভীষণ সুন্দর এবং পবিত্র একটা জিনিস। সবচেয়ে বেশী সুন্দর নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে ভালোবাসা। তাইজ্যিন ভালোবাসে তো শার্মিলাকে?
‘না ভালোবাসি না। আমার লক্ষ্য ভালোবাসা না, আমার লক্ষ্য অন্য কিছু। তাইজ্যিন এসবে নিজেকে জড়িয়ে নিস না। সাতশ ত্রিশ দিনের প্রায় ষাট দিনের মতো কেটে গেছে একসাথে। আর ছয়শ পঞ্চাশ দিন।’
ভেবে নিজেকে ধাতস্থ করে তাইজ্যিন। কন্ট্রাক্টের কথা ভুলেই গিয়েছিলো সে। না এখন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে, গুটিয়ে নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তাইজ্যিন। শার্মিলার দিকে একনজর তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। শার্মিলা তাইজ্যিনের ডান হাত পাশ থেকে জড়িয়ে ধরতে তাইজ্যিন তাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়। তখন শার্মিলা বলে, “তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী, আমরা ভালো বন্ধু হয়েছি ভুলে গেলে?”
“এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো শার্মিলা। আমি কারোর বন্ধু হতে পারবো না।”
“অকে! বন্ধু না হও, হাজবেন্ড তো হও তাই না? ওই অধিকারে হাতটা ধরেছিলাম।”
“শোন,তোমার মাঝে আর আমার মাঝে বিশাল সিক্রেট আছে। যেটা কেউই কাউকে বলতে ইচ্ছুক নই আমরা। তাই ভালো হবে তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো। আর তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করে না।
থেমে,
” গুড নাইট।”
কথাটা শেষ হতে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। শার্মিলা রেগে ফুঁসে উঠে। তাকে রিজেক্ট করলো তাইজ্যিন? সিরিয়াসলি? তাইজ্যিন ভীষণ চালাক। ওকে এভাবে কাছে আনা যাবে না আগামী কালকে উঠতে হবে ভেবে শার্মিলা ও গিয়ে শুয়ে পড়ে।
নিজের প্রতি নিজের ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। তাইজ্যিন কী তাকে লুজার প্রমাণ করলো? একে তো নিজে রাগ করে ছিলো, সেটাও ভাঙালো না। আবার বন্ধুত্বে অফার করায় বারণ।
“আচ্ছা রাগ করেছি আমি ও ভাঙাবে কেন? ওর কী ঠেকা? মোটেও না। শার্মিলা এক্সপেকটেশন কমা। সবাই সব বুঝে না।”
একরাশ রাগ,ক্ষোভ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে শার্মিলা।
শার্মিলা ঘুম থেকে উঠেই গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
ভোরের আলো ফুটেছে মাত্র। গতকাল সিলেক্ট করে রাখা সেই জায়গায় আসে। গাড়ী থেকে নেমে ছোট্ট দূরবীক্ষণ দিয়ে চারপাশটা ভালো করে দেখে নেয়। পুরোনো বাড়ী আছে কিছু। সবই পরিত্যক্ত! তবে কেমন অদ্ভূতুরে লাগলো। নিজে লক্ষ্য স্থির করে রওনা হয় শার্মিলা।
কলে,
সৌরভ এবং সায়েমকে পুরো ডিটেইলস বলে সেই সাথে, কী,কী করতে হবে না হবে সেটাও বলে। তাইজ্যিনের যত গাড়ি আছে সবগুলোর নাম্বার কালেক্ট করে নেয়।
আটটার দিকে রেডি হয়ে নেয়। তখন তাইজ্যিন ফ্রেশ হয়ে বসেছে মাত্র। শার্মিলাকে এভাবে রেডি হতে দেখে তাইজ্যিন প্রশ্ন করে, “কোথায় যাচ্ছ?”
“আমার থেকে এসবের উত্তরের এক্সপেকটেশন না রাখলে ভালো হবে।”
তাইজ্যিন বুঝেছে। গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে। তার কথাটাই রিপিট হচ্ছে শুধু ভিন্ন কথায়। তখন পুনরায় বলে, “তুমি সাত সকালে কোথায় যাচ্ছ? আমি এখানে তোমায় প্রশ্ন করছি আর তুমি কীসব ভুলভাল কথা বলছো?”
“আমার থেকে সঠিক কথার এক্সপেকটেশন না রাখাই ভালো।”
“তুমি বাচ্চা নও শার্মিলা।”
শার্মিলা জবাব দেয়না। তখন তাইজ্যিন বলে, “ওকে ফাইন! এখানে আসো তো?”
শার্মিলা ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে, “কোথায় যাব?”
“আমার কাছে আসো।”
শার্মিলা এগিয়ে যায়, সোফায় বসা তাইজ্যিনের দিকে। সামনে দাঁড়াতে তাইজ্যিন তার হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। গাড়ে থুঁতনি রাখতে শার্মিলা কিছুটা কেঁপে উঠে। তখন তাইজ্যিন বলে, “আচ্ছা সুইটহার্ট, তোমার কী হয়েছে? কোথায় যাচ্ছ?”
“জাহান্নাম থেকে স্বর্গে তুমি যাবা?”
“মানে?”
“তোমার এই বাড়ি, আমার জন্য জাহান্নাম তাই আমি খন্দকার বাড়ি যাব নিজের শান্তির জায়গায়।”
“ওটা ঘুষের টাকায় বানানো বাড়ি। এটা আমার বাবার পরিশ্রমের টাকায়, কোন ভেজাল নেই এই বাড়িতে। অবশ্য তোমার বাপ তো ঘুষখোর! বাপ কা বেটি!”
“মুখ সামলে কথা বলো তাইজ্যিন। আমার বাবা ঘুষখোর না তোমার শ্বশুর। সন্মান দাও তাকে।”
“দেখা হলে সালাম দেব।”
শার্মিলা উঠতে যাবে তখন তাইজ্যিন তাকে পাশে বসায়। দুগালে হাত রেখে চোখে চোখ স্থির করে। শার্মিলার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। তাইজ্যিনের এসব সিরিয়াস মূহুর্তে সে জেনো হৃদয়ের সংযম হারিয়ে ফেলে। কেমন জেনো ওই মানুষটা তাকে টানে। ভীষণ টানে তার দিকে। শার্মিলা চাইলেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না,তাইজ্যিনের থেকে। আজকাল কেমন জেনো! তাইজ্যিন তাকে একটু কাছে টানলে জেনো সব ভুলে যায় সে। তার ছোঁয়া আদরক ভীষণ মাতোয়ারা এই হৃদয়। তাইজ্যিন মুচকি হেঁসে মিহিত কন্ঠে শুধায়, “আমার শ্রেয়সী রাগ করেছে তাই না?”
শার্মিলা জবাব দেয়না। ওই ডাকটা হৃদয়ে কম্পন তুলছে জেনো। শ্রেয়সী আদুরে ডাক এর আগে তাইজ্যিন ডাকেনি। তাইজ্যিনের চোখে নেশা,হৃদয়ে তৃষ্ণা। শার্মিলা বুঝেছে, তাইজ্যিনের চোখের নেশায় সারা দিতে মন চায়। হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ইচ্ছে হয়। সবসময় মনে হয় তার একটা ছোঁয়া, একটু ছোঁয়া তার মাঝে থাকুক। কিন্তু নিজে অধিকার খাটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হলেও কোথাও থমকে যায় সে। তাইজ্যিনের হাতে আলতো হাত স্পর্শ করে শার্মিলা। জবাব দেয়, “জেনে কী হবে তোমার?”
“এই তুমি ভালো মেয়ে হয়ে যাচ্ছি। আগের মতো ছ্যাৎ করে উঠো না।”
“শাট আপ! তুমি যাও তারিনের কাছে।”
“তুমি যেহেতু বলেছ তাহলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে তাইজ্যিন উঠে দাড়াতে শার্মিলা ও দাড়ায় তবে তাইজ্যিনের, কলার চেপে ধরে শুধায়, “ওই মেয়ের আশেপাশে তোমায় দেখলে দেওয়ালের সাথে পোস্টার বানিয়ে ঝুলিয়ে দেব কিন্তু। আমায় চেনো না তুমি তাইজ্যিন!”
“ঠিক আছে এ,একটু তো চেনা দরকার তোমায়। দেখি কেমন তেজ তোমার।”
কথাটা শেষ করে শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। চোখের পাতায় ঠোঁটের বিচরণ ঘটায়। অতঃপর কপালে গাঢ় একটা চুমু দিয়ে বলে, “শোন ডেন্জারাস লেডি, আমি তোমার রাগকে ভয় পাই।”
তখন শার্মিলা তাইজ্যিনের পায়ের উপর পা রেখে ঠোঁট স্পর্শ করে বলে, “এটা নজর টিপ, আশা করি কেউ তাকাবে না।”
“কীভাবে?”
কথাটা শেষ হতে শার্মিলা তাইজ্যিনের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। তাইজ্যিন ব্যথায় শার্মিলাকে সরিয়ে দেয়।
“এটা কী করলে তুমি?”
“নজর টিপ দিয়েছি।”
“নজর টিপ কপালে দেয় ঠোঁটে না।”
“আমি কাউকে ফলো করি না।”
“আমি বাইরে বের হবো কীভাবে?”
“আমি কী করে বলব?”
“তুমি….
” আচ্ছা ভাইয়া সরি।”
কিছুটা ঢং করে বলে শার্মিলা তখন তাইজ্যিন বলে, “তোমার সরি তোমার কাছেই রাখো।”
“রাগলে আরো দেব নজর টিপ।”
“মাফ চাই ভাই।”
“ভাই না বউ।”
“আমার মাথা।”
শার্মিলা হাসে। তাইজ্যিনের অবস্থা দেখে। কেমন তৃপ্তি পাচ্ছে সে। আপাতত বাইরে যাওয়া বন্ধ তার। শার্মিলা নিচে আসতে তারিন প্রশ্ন কর, “ভাইয়া আসবে না?”
“না।”
“কেন?”
“নজর টিপ লাগিয়েছি শুকাতে সময় লাগবে।”
“হোয়াট? নজর টিপ? তুমি ভাইয়াকে টিপ পড়িয়েছ তার কপালে?”
“টিপ কী শুধু কপালে পড়ায়?”
“তা নয়ত কী?”
“বলে উপকার করলে আপু। আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যত একটু আলোকিত।”
“বাচ্চা?”
“না বেবি।”
“শার্মিলা আমার সাথে ত্যাড়ামী করছ কেন? আমি ভাইয়াকে দেখে আসছি।”
কথাটা বলে পা বাড়াতে যাবে, শার্মিলা তার হাত শক্ত করে ধরে। তারিন অবাক হয়। তখন শার্মিলা রেগে বলে, “রুমে গেলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেব। সারাদিন তাইডিং ভাইয়া,তাইডিং ভাইয়া না করে অন্য ছেলেকে ভাইয়া ডাকো কাজে দিবে। আমার জামাইয়ের একটা বউ আছে কয়দিন পর বাচ্চা ও আসবে।”
“এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতামী?”
“ইউনিক টাইপের, তবে আমি তোমার মতো অন্যের বরকে নিয়ে ছ্যচড়ামি করি না। আর আমি তোমার সাথে অসভ্যতামী করছি না বরং তুমি তাইজ্যিনের সাথে যেটা করো সেটা আমার কাছে অসভ্যতামী মনে হয়।”
“আমার হাত ছাড়ো।”
“ছাড়বো না।”
“তোমার এতো বড় আস্পর্ধা তুমি জানো আমি এই বাড়ীর কে হই, আর তুমি নিজের জায়গাটা জানো তো?”
“ইয়াহ্! আমি এই বাড়ির পূত্র বধূ আর তুমি…
” বলতে হবে না।”
শার্মিলার কথায় পোড়ন কেটে বলে তারিন। শার্মিলা জবাব না দিয়ে হাসে। তারিন বুঝেছে শার্মিলা উল্টাপাল্টা একটা বলবে, যেটা মোটেও তার সহ্য হবে না। শার্মিলা তার হাত ছাড়তে রাগে ক্ষোভে তিথিয়া চৌধুরীর কাছে যায়। শার্মিলার নামে বেশ কিছু কথাই বলেছে।
তাইজ্যিন রুমে পায়চারি করছে। শার্মিলা এটা কী করেছে? নিজেকে আয়নায় দেখলে নিজেরই লজ্জা লাগে্। পরিবারের সবার সামনে
সে কী ভাব তার। আজকে? নিচে যাবে কীভাবে? তখন আবার শার্মিলা রুমে আসে। তাইজ্যিন চটজলদি তাকে কাছে ডাকে। আসতেই অধর জোড়া দখল করে নেয়। শেষ নিজেও কামড় বসিয়ে দেয়। শার্মিলা চিৎকার করে উঠে, “এটা তুমি কী করলে?”
“নজর টিপ দিয়েছি সুইটহার্ট।”
শার্মিলার কান্না পাচ্ছে।। এখন তার কলিগদের সামনে যাবে কীভাবে? হেডকোয়ার্টারের গেলেই তো হলো। সবাই বুঝে যাবে ইনস্পেক্টর শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী শত্রুর সাথে রোমান্স করে।
#চলবে