তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-১৪+১৫

0
14
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১৪|
#শার্লিন_হাসান

শার্মিলার রাগ উঠে। লা’থি মেরে গরু দান করার মানে হয়না। শার্মিলা নিরব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাইজ্যিনের পাণে। তাইজ্যিন চোখে,চোখ রাখতে পারেনা বেশীক্ষণ। অপরাধ বোধ হচ্ছে। তখন শার্মিলা তার হাত ঝাঁটা মেরে সরিয়ে দিয়ে কঠোর কন্ঠে শুধায়, “ডোন্ট টাচ মি। গুড নাইট।”

পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে যাবে তাইজ্যিন তাকে টেনে বসিয়ে দেয়। খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে শুধায়, “শোন খাবারের সাথে রাগ করতে নেই। আমার উপর করো সমস্যা নেই। খাবার তো আর দোষ করেনি।”

“প্লিজ তাইজ্যিন আমাকে বিরক্ত করো না। নিজের মন চাইলে খেয়ে নেও। আর বেশী অধিকার দেখাতে এসো না। এখন আমি দুর্বল তাই বলে এই না যে সবসময় আমি দুর্বল থাকব। সময় আমার ও আসবে। গুড নাইট।”

ওকে ফাইন! তোমার গুড নাইটকে ব্যাড নাইট বানাতে আমার সময় লাগবে না।”

তাইজ্যিনের কথায় আঁতকে উঠে শার্মিলা। চুপচাপ বেচিংয়ে গিয়ে হাত ধুয়ে আসে। তাইজ্যিন খাবারের পৃলেট এগিয়ে দিতে চুপচাপ খাবার খেতে আরম্ভ করে। তখন সার্ভেন্ট শরবতের জগ নিয়ে দরজায় নক করে। তাইজ্যিন পারমিশন দিতে ভেতরে নিয়ে আসে। চুপচাপ তিন গ্লাস শরবত পান করে তাইজ্যিন। কিছুক্ষণের মধ্যে তার নেশা কেটে যায়। উঠে চেঞ্জ করে, ফ্রেশ হতে চলে যায়।
শার্মিলা খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। শাড়িটা চেঞ্জ করতে হবে। পাশের চেঞ্জিং রুমে গিয়ে শাড়ি ছেড়ে থ্রিপিস কায়ায় জড়িয়ে নেয়। তাইজ্যিন খাবার খাচ্ছে, শার্মিলা ফ্রেশ হয়ে আসে। এঁটো প্লেট নিয়ে দরজার সামনে যায় তাইজ্যিন। একজন সার্ভেন্টকে ডাক দিয়ে সেগুলো হাতে ধরিয়ে দেয়৷ শার্মিলা পাশ ফিরে শুয়ে আছে। তাইজ্যিন লাইট অফ করে শার্মিলার পাশে শুয়ে পড়ে। ভেতরে,ভেতরে তাকে বেশ পোড়াচ্ছে। থাপ্পড়টা বেশ জোরে পড়েছে এটা টের পেয়েছে তাইজ্যিন। ওতো জোরে দিতে চায়নি তবে জোরে পড়ে গেছে। পুরুষ মানুষের হাত শক্ত হয়।

ঘন্টাখানেকের মাঝে শার্মিলা গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে যায়। তাইজ্যিন পাশ ফিরে। শার্মিলাকে স্বযত্নে এপাশ ফেরায়। খাটের পাশের টেবিল ল্যাম্প জ্বালায়। থাপ্পড় দেওয়া গালে হাত রাখে। পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। তাইজ্যিন শার্মিলার কোমল গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। শার্মিলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শুধায়, “স্যরি সুইটহার্ট।”
অতঃপর ব্যস্ত হয়ে পড়ে শার্মিলার মুখশ্রীতে আদর মাখা স্পর্শ দিতে। থুতনির তিলটায় গাঢ় চুম্বন দেয় তাইজ্যিন। পুরো মুখের সৌন্দর্য জেনো ওই থুতনির তিলটা। তাইজ্যিন নিজের পরিবর্তন লক্ষ্য করে। এই শার্মিলার আগমনের পর তার জীবনের অনেক রুলস চেঞ্জ। অনেক খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়েছে তাইজ্যিন। এখন আর নতুন করে খু’ন করে না। ব্যাংক লুটপাট করে না।

ঘরের শত্রু বিভীষণ। কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর। তাইজ্যিন এটা কী করলো? শার্মিলাকে বিয়ে করে নিয়েছে? এই ছেলের মাথায় আছে টা কী? না,না এই শার্মিলাকে পথ থেকে সরাতে হবে। আগামী কালকে তাঁদের নতুন কোম্পানি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেটাও শহরের এক সাইডে। কোন জামেলা নেই কিছু নেই। এটা নিয়ে বেশ এক্সাইটেড তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। আগামী কালকে সেখানে যাবেন উদ্বোধন করতে। তবে শার্মিলাকে মা-রার প্লান মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার।

সকালে শার্মিলার ঘুম ভাঙে। শরীরে ব্যাথা অনুভব করে। মাথাটা জেনো ভারী হয়ে আছে। অতঃপর নিজেকে অনুভব করে শক্তপোক্ত কোন বাঁধনে। নড়েচড়ে উঠলেও তাইজ্যিনের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারেনা। এই বাঁধন ভীষণ শক্তিশালী। চাইলেও ছাড়ানো যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চেষ্টা চালানোর পর নিজেকে ছাড়াতে অক্ষম হয় শার্মিলা। চুপচাপ শুয়ে থাকে তাইজ্যিনের প্রসস্থ বুকে মাথা রেখে। কেমন নিশ্চিত লাগছে, মূহুর্তে আবার তন্দ্রা লেগে যায় চোখে।

শার্মিলার কোমল শরীরটা তাইজ্যিনের বাঁধনে। বাইরে থেকে দরজায় নক করেছে কেউ। কানে আওয়াজ আসতে উঠে তাইজ্যিন। শার্মিলাকে বুক থেকে সন্তপর্ণে রাখে। উঠে দরজা খোলতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীকে দেখে তাইজ্যিন। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী অধরে হাসি ঝুলিয়ে বলেন, “গুড মর্নিং তাইজ্যিন।”

“গুড মর্নিং পাপা।”

“আগামী কালকে আমাদের নতুন কোম্পানি চালু হবে। বারোটার দিকে রওনা হবো। উদ্বোধন করতে হবে। তুমি রেডি হয়ে থেকো।”

“অকে পাপা।”

তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী প্রস্থান করতে তাইজ্যিন দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ফ্রেশ হয়ে আসতে দেখে শার্মিলা উঠে বসেছে। দু’জনের মাঝে মৌনতা বিরাজ করছে। শার্মিলা নড়েচড়ে খাট থেকে নামতে যাবে শরীরে ব্যথায় আঁতকে উঠে। জ্বর আসবে নাকী? এখন জ্বর আসলে সমস্যা। চিন্তায় পড়ে যায় শার্মিলা। গুটিগুটি পায়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসতে তাইজ্যিন তার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার ফোন।”

শার্মিলা ফোনটা হাতে নেয়। তখন তাইজ্যিন বলে, “ব্রেকফাস্ট করব। তাড়াতাড়ি করো।”

শার্মিলা জবাব না দিয়ে রেডি হয়। তাইজ্যিনের পেছন,পেছন নিচে যায়। বাকীরা ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। শুধু তাইজ্যিন আর শার্মিলা দেরী। দু’জনে দুই প্রান্তে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।

সোফায় বসতে রিশা আসে শার্মিলার কাছে। শার্মিলার গালের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠেন তিনি। রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে সাথে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। শার্মিলা ব্যপারটা বুঝে,এড়িয়ে চলার জন্য তাড়া দেখায়। শুধায়, “আমাকে রুমে যেতে হবে। রুম গুছানো বাকী আছে।”

কথাটা শেষ করে সে প্রস্থান করে। তখন রিশা তাইজ্যিনকে জিজ্ঞেস করে, “শার্মিলার গালে কার আঙুলের ছাপ?”

“আমার।”

গম্ভীর স্বরে বলে তাইজ্যিন। পাশে থাকা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর কানেও কথাটা যায়। মনে,মনে বেশ খুশি হোন তিনি। পারলে নিজেই থাপ্রাতেন। তাইজ্যিন আর কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার আগে চলে আসে। বারোটা বাজতে বেশী দেরী নেই। রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে।

শার্মিলা রুম গুছিয়ে বসে। জ্বর তার দুয়ারে চলে এসেছে এতে সন্দেহ নেই। তাইজ্যিন যাওয়ার আগে শার্মিলাকে বলে, “লান্স করে নিও সময় মতো। আমার ফিরতে লেট হবে।”

কথাটা শেষ করে বেড়িয়ে পড়ে সে। শার্মিলা বেলকনিতে যায়। পরপর দুটো গাড়ি বেড়িয়েছে বাড়ির গেট দিয়ে। শার্মিলা গাড়ি গুলোর যাওয়ার পাণে তাকায়। রুমে এসে উদ্যত হয় নতুন কোম্পানির ডিটেইলস নিতে।
“টি আই চৌধুরী গ্রুপ অব লিমিটেড” মানে তাইজ্যিন ইশতিয়াকের নামের এই কোম্পানি। শার্মিলা আরো কিছু ডিটেইলস জানে। আজকে এই কোম্পানি উদ্বোধন হবে,আগামী কাল থেকে চালু হবে। শার্মিলা ভাবছে আগের যেই কোম্পানি থেকে ড্রাগস পাচার হয় সেগুলোতে বোম ব্লাস্ট করবে নাকী এটায়? পরক্ষণে ভালো এটা মাত্র চালু হবে। কিন্তু আগের গুলো শহরে। একটায় আগুন লাগলে আরেকটায় ও ক্ষয়ক্ষতি হবে। সেজন্য এই ভাবনা বাদ দিলো। সময় হলে তাইজ্যিনকে দিয়ে সব ঠিক করিয়ে নিবে। আপাতত এটাই সিদ্ধান্ত।

দুপুরের লান্সটা কোন রকম করে রুমে আসে শার্মিলা। কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। তাইজ্যিন কখন আসবে কে জানে। এদিকওদিক করে ঘন্টাখানেকর মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তাইজ্যিন। হাতে একগাদা ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে৷ শার্মিলা এখনো শুয়ে আছে। সীতারা চৌধুরীর থেকে খোঁজ নিয়েছে, লান্স করে রুমে চলে এসেছে শার্মিলা। তাইজ্যিন ব্যাগ গুলো রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। চেঞ্জ করে রুমে আসে। শার্মিলাকে বার কয়েক ডাক দেয় সে। জ্বরের ঘোরে কথা কানে যায় শার্মিলার। কথা বলার শক্তি তার নেই। তাইজ্যিন নিজে গিয়ে শার্মিলাকে উঠাতে উদ্যত হবে তখন গায়ে জ্বর টের পায়। কপালে হাত দিতে দেখে জ্বর এসেছে ভালোই। উঠে ডক্টরকে কল দেয়।

কিছুক্ষণের মাঝে ডক্টর আসে বাড়িতে। অসময়ে ডক্টরকে দেখে সীতারা চৌধুরী ব্রু জোড়া প্রসারিত করে। কুশল বিনিময় করে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করে, “অসময়ে?”

“আসলে ছোট স্যার ডেকেছে।”

মিষ্টি হেঁসে জবাব দেয় ডক্টর আদিত্য। তারিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিথিয়া চৌধুরী ভাবেন, খুশির খবর আছে নাকী? ডক্টরকে দেখে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর মাথায় ও এমন ভাবনা আসে।

তাদের বংশধর যদি আসে এটা শুভক্ষণ তবে শার্মিলাকে মা-রার প্লান টার কী হবে? তার ছেলে তো দেখি সব ভেস্তে দিলো। বিয়ে অব্দি ঠিক ছিলো। এখন তো নাতি-নাতনীদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের জননীর কোন ক্ষতি করতে পারবেন না।

একগাদা চিন্তা নিয়ে ডক্টর আদিত্যের পেছন,পেছন তাইজ্যিনের রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তিথিয়া চৌধুরীর মুখের দিকে তাকাতে দেখেন খুশির ঝলক। কী বলবেন,কী ভাববেন ভেবে পাচ্ছেন না তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। দেখা যাক কী হয়।

#চলবে

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১৫|
#শার্লিন_হাসান

ডক্টর আদিত্যের পেছন,পেছন সবাই রুমে উপস্থিত হয়। তিথিয়া চৌধুরী তাইজ্যিনকে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে শার্মিলার?”

“জ্বর এসেছে।”

নিরব কন্ঠে জবাব দেয় তাইজ্যিন। কেউ আর কিছু বলেনা। ডক্টর আদিত্য শার্মিলার জ্বর মাপে। কিছু মেডিসিন লিখে দেয়। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর সাথে লিভিং রুমে বসে কথা বলেন তিনি।

রুম খালি হতে তাইজ্যিন শার্মিলাকে জল পট্টি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মাথায় পানি দিতে থাকে।

সার্ভেন্টকে বলে খাবার রুমে নিয়ে আসে। শার্মিলাকে উঠিয়ে বসায়। জ্বরে একবারে চেহারার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তাইজ্যিনের দিকে তাকায় শার্মিলা। তার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। সে চিন্তিত শার্মিলার জন্য। জোর করে কিছু খাবার খাইয়ে ঔষধ খাওয়ায় শার্মিলাকে। পুনরায় শুয়ে পড়ে শার্মিলা। তাইজ্যিনের না গিফট গুলো ওইভাবেই পড়ে থাকে।

কেটে যায় তিনদিন। শার্মিলার জ্বর ভালো হয়ে গেছে। তবে শরীর অনেকটাই দুর্বল।
এরই মাঝে খবর আসে সৈয়দ ইব্রাহিম বিডি আসবে। তার সিকিউরিটি বেশ স্ট্রং রাখার জন্য তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তাইজ্যিনকে বলে দেয়। এছাড়া পরিত্যক্ত এলাকার বিশাল দালানের একটা রুমের ডিটেইলস দেয় তাইজ্যিনকে। সেখানে আইনের লোক যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাইজ্যিন যাতে সেদিকটা সামলো নেয়।

চৌধুরীর বাড়িতে এখন একাধিক সিকিউরিটি এবং সিসিক্যামরা লাগানো হয়। বাড়িতে একটা রুম সুন্দর করে গোছানো হয়। সৈয়দ ইব্রাহিম আসলে তাদের নতুন আরেকটা প্রজেক্টের ডিল হবে।

তাইজ্যিনের ব্যস্ততা একটু বেশী। শার্মিলার এসবে মাথা ব্যাথা নেই। সে নিজের মতো করেই রুমে থাকে। আপাতত তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীকে কীভাবে কী করা যায় সেই চিন্তা তার মাথায়। এখন চাইলেও হেডকোয়ার্টারের যেতে পারবে না সে। চারদিকে সিকিউরিটি। এরই মাঝে তাইজ্যিন রুমে প্রবেশ করে। বেশ কয়েকজন মেয়ে এবং দু’জন ছেলে নিয়ে। তাঁদের পোষাক একই রঙের। শার্মিলার বেশী বেগ পেতে হয়না এরা কারা। তখন তাইজ্যিন শার্মিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ওরা তোমার সিকিউরিটি।”

“আমার এসবের প্রয়োজন নেই।”

“শাট আপ!”

ধমকে উঠে তাইজ্যিন। শার্মিলা আমলে নেয়না সেসব। তাইজ্যিন জোর গলায় বলে, “আমার বউকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব তোমাদের।”

তখন শার্মিলা জবাব দেয়,
“যদি গুলিটা তুমি করো তখন কী ওরা আমায় প্রটেক্ট করার জন্য ফিরতি গুলিটা তোমায় করতে পারবে?”

কঠিন প্রশ্ন! এর উত্তর কী হবে? তাইজ্যিন চিন্তায় পড়ে যায়। শার্মিলার দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে নেয়। এই মেয়ে তো ভারী ডেঞ্জারাস। মনে ভয় বলতে কিছু নেই। তখন শার্মিলা শুধায়, “ওদের মতো হাবলারা আমায় প্রটেক্ট করার আগে আমি বরং বুলেটটা তোমায় দান করে দেব। হিসাব বরাবর হয়ে যাবে।”

তাইজ্যিন হাতের ইশারা দিতে সিকিউরিটি গার্ডরা বাইরে চলে যায়। পুনরায় চোয়াল শক্ত করে তাইজ্যিন জবাব দেয়, “তুমি এক লাইন বেশী ভাবো শার্মিলা।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। আদেশের সুরে বলে, “তারিন ডাকছে। সে আবার এক লাইন কম বুঝে! তোমার সাথে একবারে পারফেক্ট কম্বিনেশন।”

“শাট আপ! আমি তারিনকে পাত্তা দেইনা। তুমি জানো।”

“হুম! গুড। আর যদি পাত্তা দিতে যাও তাহলে…তাহলে বাইরে মুখ দেখানোর অবস্থায় রাখব না।”

“কী করবে শুনি? মা-রবে?”

“মোটেও না! ঠোঁটে কামড় দেব যাতে লজ্জায় বাইরে কারোর সামনে মুখ দেখাতে না পারো।”

★★★

কাঙ্ক্ষিত দিনে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে এসে পৌছায় সৈয়দ ইব্রাহিম। শুটবুট পড়া,চোখে কালো চশমা। দেখে মাফিয়া,মাফিয়া লাগে। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তাইজ্যিনকে পাঠায় তাকে নিয়ে আসার জন্য। তিনি গেলে সমস্যা! সবাই জানে শুধু একজন ব্যবসায়িক তিনি এর বাইরে কিছুই না। কিন্তু তাইজ্যিনের আগে তার জায়গা,অন্ধকার জগতে।

হাই সিকিউরিটি দিয়ে সৈয়দ ইব্রাহিমকে সুরক্ষিত ভাবে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সবাই বেশ আপ্যায়ন করে। শার্মিলার কানে আওয়াজ আসে সৈয়দ ইব্রাহিম এসেছে। তাকে সামনাসামনি দেখার বড্ড ইচ্ছে। সেজন্য দেরী না করে নিচের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়। দরজা পেড়িয়ে করিডোরে আসতে দেখে তাইজ্যিন রুমের দিকে আসে। সামনের রুম থেকে আবার তারিন বের হয়। ইচ্ছাকৃত ভাবে তাইজ্যিনের সাথে ধাক্কাটা খায়। তাইজ্যিন তার হাত ধরে। উঠিয়ে দাঁড় করাবে এমন সময় তারিন নিজ থেকে তাইজ্যিনের গলা জড়িয়ে ধরে। তাইজ্যিন নিজেও হতবাক হয়ে যায়। মেজাজ তার সপ্তম আসমানে উঠে যায়। তারিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রাগী স্বরে শুধায়, “তোমাকে হেল্প করাটাই আমার ভুল। পড়ে গেলেই ভালো হতো।”

“ভাইয়া তুমি চেঞ্জ হয়ে গেছ।”

“চেঞ্জ মাই ফুট!”
কথাটা বলে তাইজ্যিন তারিনকে ক্রস করে হাঁটা ধরে। মূহুর্তে দাঁড়িয়ে যায়। শার্মিলা দাঁড়িয়ে আছে। তাইজ্যিন একবার শার্মিলার দিকে তাকায় আরেকবার মেঝেতে। সে যাই হোক শার্মিলা সবটাই দেখেছে। তাইজ্যিন জড়িয়ে ধরেনি তারিন তাকে উল্টো জড়িয়ে ধরেছে। এদিকসেদিক পাত্তা না দিয়ে সোজা হাঁটা ধরে তাইজ্যিন। শার্মিলার সোজাসুজি আসতে তার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে। দরজা লক করে নিজেই বলে, “স্যরি! আমি ওকে জড়িয়ে ধরিনি ও আমায় জড়িয়ে ধরেছে।”

“আমি কী কিছু বলেছি?”

“তা না, যদি রাগ করো।”

“আমি রাগ করলে তোমার কিছু যায় আসবে না তাইজ্যিন। সো এতো প্যারা নিয়ে লাভ নেই।”

“ম্যাডাম, আজকে খুশি?”

“বারে তোমাদের গেস্ট এসেছে সবাই খুশি। আমি খুশি হবো না?”

তাইজ্যিন কথা বাড়ায়না। টায়ার্ড থাকায় ফ্রেশ হতে চলে যায়। শার্মিলা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ভাবছে কীভাবে কী করবে। তাইজ্যিন রুমে এসে শার্মিলাকে গভীর ভাবনায় তলানো দেখে। তার সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসার জন্য আজকে আর কিছু বলেনি। রেডি হয়ে শার্মিলাকে নিয়েই নিচের দিকে যায় তাইজ্যিন। তাইজ্যিন আগে শার্মিলা পেছনে।

ত্রস্ত পায়ে সৈয়দ ইব্রাহিমের সামনে উপস্থিত হয় তাইজ্যিন। একগাল হেঁসে শুধায়, “ইব্রাহিম, মিট মাই ওয়াইফ শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী।”

কথাটা শেষ হতে পেছন থেকে শার্মিলা হাসিমুখে সামনে আসে। শার্মিলাকে দেখে ইব্রাহিমের মাথায় জেনো বাজ পড়ার মতো হলো। শার্মিলাকে চিনতে তার একদমই ভুল হয়নি। তাকে প্রটেক্ট করার জন্য এতোকিছু, অথচ শত্রু তার ঘরেই এটা কী কেউ জানে না? এখন তাকে কিডন্যাপ করা বা মে-রে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ। এই শার্মিলা কী সেটা এখন কাজে লাগাবে? পরক্ষনে নিজের ভাবনা বদলে নেয় তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী থাকতে চিন্তা কিসের। শার্মিলা ইব্রাহিমের মুখশ্রী স্ক্যান করে। তখন ইব্রাহিম আগ বাড়িয়ে বলে, “হাই,মিসেস তাইজ্যিন চৌধুরী।”

“হ্যালো ইব্রাহিম।”

নাম ধরে বলায় ইব্রাহিমের গায়ে লাগে। শত্রু তার চোখের সামনে অথচ কিছু করতে পারছে না এই মূহুর্তে। বাইরে হলে এতোক্ষণ নিশ্চয়ই শার্মিলার ক-বর খোঁড়া হতো। দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে একই রকম ভাবনা ভাবছে। শার্মিলার হাত নিশপিশ করছে,ইব্রাহিমকে শ্যুট করার জন্য। আফসোস সামনে থেকেও কিছু করতে পারছে না। তার টিম কী সব ঘুমিয়ে আছে নাকী? আসার সময় ধরতে পারলো না?

শার্মিলা কৌশলে সরে আসে। রুমে এসে সৌরভকে কল লাগায়। সৌরভ সালাম দিতে শার্মিলা সালামের জবাব দিয়ে চেচিয়ে বলে, “মাথায় বুদ্ধি আছে তোমার? সৈয়দ ইব্রাহিম কীভাবে এখানে উপস্থিত হলো? তোমরা কিছু করোনি কেন?”

“ম্যাম ওনার সিকিউরিটি হাই ছিলো। আমরা উল্টো প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরতাম কীনা সেটার ও ঠিক ছিলো না।”

“তোমাদের দ্বারা কিছু হবে না। এলার্ট থেকো আমি প্লান সাজাচ্ছি।”

কথাটা বলে শার্মিলা কল কেটে দেয়। বেলকনিতে এসে বাইরে নজর দেয়। চারদিকে সিকিউরিটি আর সিকিউরিটি। আইনের লোক আসবে? সবকয়টা মরে যেতে হবে। এখানে আইন ও কিছু করতে পারছে না। পারবে না! এরা আস্ত শয়তান। কীভাবে নিজেদের অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে। ড্রাগস পাচার,নারী পাচার,শিশু পাচার কোনটাই বাদ যাচ্ছে না। পুরো একটা জেনারেশন ড্রাগসের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনার পেছনে এসব বিজন্যাস ম্যান,বড়লোকদের হাত বেশী থাকে। সে কী করবে? নিজেই তো আরেক জনের জালে আটকা পড়ে গেছে। এই তাইজ্যিনের জন্য এখন তাকে অনেক কাজে বাঁধা প্রাপ্ত হতে হবে।
শার্মিলা ভেবে পাচ্ছে না কী করবে। তখন আবার তাইজ্যিন আসে রুমে। শার্মিলাকে চিন্তিত দেখে তাইজ্যিন বলে, “এনি প্রব্লেম?”

“হ্যাঁ,হ্যাঁ প্রব্লেম! বিরাট বড় প্রব্লেম। তুমি বুঝবে না তাইজ্যিন। এই মূহুর্তে ইব্রাহিম কে মারতে পারলে আমার শান্তি লাগত।”

#চলবে